নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-৫
তরুণ হা করে তাকিয়ে আছে ICU এর ভিতরের মাুনষটার দিকে। বিখ্যাত শিল্পপতি রওনক হাসান আদিব এর বাবা!!! এই বেটার NSI এ জব করার দরকার কি ইভেন এই শালার তো কোনো চাকরি করাই উচিত না।
আদিব তার ছোট বোন আনিয়ার সাথে কথা বলছে। ডক্টর ICU এর ভেতর কাউকে এলাউ করছে না, তাই বাইরে থেকে দেখে চলে যেতে হবে। আনিয়ার সাথে কথা বলে আশেপাশে কারো সাথে কথা না বলে বাইরে থেকে বাবাকে একনজর দেখে সোজা হাটা শুরু করে আদিব।বাধ্য হয়ে তরুণও তার পিছনে ছুট লাগাই।
হসপিটাল থেকে বের হয়ে একটা কথাও বলেনি আদিব,শুধু নিজের নতুন এপার্টমেন্টে যাবে জানাই।আদিবের নীরবতা দেখে তরুণও কিছু না বলে পৌঁছে দেয় তাকে।
রাত ১১: ৫৭ মিনিট
মুমুর বুকের মাঝে গুটিশুটি হয়ে ঘুমচ্ছে প্রয়া। মুমুর চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে বালিশে।
মুমু অস্পষ্ট ভাবে বলল” আমি বড় হয়ে গেছি, অনেক বড়”।
অতীত…….
বিয়ের সকালে আদিবের আকুতি ভরা কথা শুনে মুমুর হঠাৎ অন্যরকম অনূভুতি হয় কেমন যেন মায়া লাগে। চোখ খুলে দেখে আদিব ওর দিকে টলটলে চোখে তাকিয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে, ঠোঁট জোড়া লাল হয়ে আছে, সুর নাক, খোচাখোচা দাড়ি। আদিব ভাইয়া এতো সুন্দর কেন? মাই গড, এই সুন্দর ছেলে টা তার বর!!ভাবা যায়??
ভাবতে পারেনি, আদিব ভাইয়া উঠে তার চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করছে। মুমুও চটপট উঠে দাড়ায়, ব্যাগ কাঁধে দরজা পর্যন্ত যেয়ে হঠাৎ ফিরে এসে মুমুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মাথায় টুপ করে একটা চুমু দিয়ে সোজা বের হয়ে যায়।মুমু ঝিম ধরে দাড়িয়ে ছিল, কেমন কেমন লাগছিল,কেমন ভালো লাগা ভালো লাগা।
মিমন যাওয়ার সময় জানাই পরীক্ষার জন্য একমাস আসতে পারবে না। এই প্রথম মুমুর মন খারাপ হয়ে যায় আদিবের জন্য, একমাস আসবে না ভেবেই কেমন পঁচা মন খারাপ লাগছে তার।
আদিব রেগুলার ফোন করে বাড়ির সকলের সঙ্গে কথা বলে, মুমুর সাথেও বলেছে দুবার। কিন্তু দুবার ই স্কার্ট- টিশার্ট না পড়ার থ্রেট দিয়েছে। মুমু আচ্ছা বলে ফোন রাখলেও কথা রাখে না।তারমতে আদিব ভাইয়া তো আর সি সি ক্যামেরা লাগায় রেখে যায় নি, যে জানবে মুমু কি পড়ছে, হি হি হি।
সকাল বেলা শখের বশে লুচি ভাজতে যেয়ে তেল লেগে ডান হাতের অনেক টা পুড়ে গেছে মুমুর। অসহ্য যন্ত্রণায় জ্বর এসে গেছে তার। মা মাথায় পানি দিয়ে ঔষধ লাগিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে সন্ধ্যায়।
হঠাৎ কপালে উষ্ণ কিছুর পরশে ঘুম হালকা হয়ে যায় মুমুর, ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারে টুপটুপ করে পানি পড়ছে তার কপালে।ফট করে চোখ মেলে দেখে আদিব তার হাতে কিছু লাগিয়ে দিচ্ছে।
আদিবঃ তোকে বড় হতে বলেছিলাম, কেকা ফেরদৌসী নই। (গম্ভীরভাবে মুমুর হাতে মলম লাগাতে লাগাতে)
মুমু ভাবছে আদিব ভাইয়া এখানে কি করছে তার তো একমাস পর আসার কথা, সে কি ভুল দেখছে।
আদিবঃ তুই তো পণ করেছিস যেন আমার পরীক্ষা খারাপ হয়। পরশু পরীক্ষা আমার, কালই চলে যাব। তোকে ভয়ানক শাস্তি দিতে এসেছি, একেতো আমার কথা রাখিস নি তার উপর কেকা ফেরদৌসী হয়ে হাত পুড়িয়েছিস।
আদিবের কথা শুনে মুমু পট করে উঠে, দৌড় দেবে ভেবে।কিন্তু তার ভাবনাতে এক বালতি পানি ঢেলে মুমুর কোমর ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নেয় আদিব।
মুমু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আদিব ভাইয়া এবারের মতো ছেড়ে দিন, আর করবো না।”
আদিব মুমুর কাঁধে থুতনি রেখে কানের পাশে চুমু খেয়ে বলল, “ছেড়ে দিব যদি আমাকে ভাইয়া বলা বন্ধ করে তুমি বলিস”
সেই রাতে তুমি বলার পরে ছাড়া পেয়েছিল মুমু,পরের দিন নিয়ম মাফিক দম বন্ধ চুমু ও জড়িয়ে ধরে চলে যায় আদিব।
এভাবেই আদিবের দমবন্ধ ভালোবাসাতে একসময় মুমুও প্রচন্ড ভালোবাসতে শিখে যায়। তার জন্য নুপুর,তার পছন্দের বেলি ফুল,পছন্দের জিলাপি সকল ছোট ছোট চাওয়া গুলো পূর্ণ করতো আদিব।মুমুও আদিবের মনের মতো চলার চেষ্টা করতো।
হঠাৎ একদিন আদিব মুমুর জন্য একটা লাল টুকটুকে শাড়ি নিয়ে এসে বলে পরে আসতে, মুমুও লাফাতে লাফাতে কাকির কাছ থেকে শাড়ি পরে গুটি গুটি পায়ে রুমে এসে দাঁড়ায়। মুমুর ভীষণ লজ্জা লাগাই মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।
আদিব তখন মুমুর জন্য কেনা মাজার বিছাটা ব্যাগ থেকে বের করছিল।পিছনে ঘুরে দেখে মুমু শাড়ি পরে লাজুকলতা হয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু শাড়ির সাথে বাচ্চাদের মতো দুই বেণি দেখে ফিক করে হেসে দেয় আদিব।
হাসির শব্দে সামনে তাকিয়ে দেখে আদিব ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। মুমুর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়, তবে কি শাড়িতে তাকে পচা লাগছে। মুখ গোমড়া করে আদিবের সামনে যেয়ে দাড়ায় মুমু।
আদিব মুমুকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বলল, “কি ব্যাপার আমার বাচ্চা বউটার মন খারাপ কেন?”
মুমু মুখ গোমড়া করে বলল,”আমাকে কি ভীষণ পচা লাগছে”
আদিব মুমুর গালে গাল লাগিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,” বর শাড়ি পরতে বলেছ কোথায় পেট বের করে হট হয়ে সামনে আসবি,তা না বাচ্চাদের মতো ঝুটি বেধে এসেছিস।তাই তো বাচ্চাদের মতো আদর দিচ্ছি। ”
মুমু লাজুকলতা হয়ে বলল,” আমি মোটেও বাচ্চা নই”
চলবে
গল্প টা অনেকটা মিস্ট্রিয়াসলি লেখা হয়েছে, দয়া করে পেশনস রাখুন হয়তো ভালো লাগবে।