#বিবর্ণ_সিঁদুর
পর্ব-০৬
#Taniya_Sheikh
তুমি হঠাৎ-হাওয়ায় ভেসে-আসা ধন
তাই হঠাৎ-পাওয়ায় চমকে ওঠে মন
স্ত্রীর দৃষ্টি অনুসরণ করে ভ্রুকুঞ্চন করে জামিল বললো,
“তা হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটা আবৃত্তি করতে ইচ্ছা করল কেন?”
” মন কী শিক্ষাবিদ না রাজনীতিবিদ?”
” কোনোটাই না”
” তবে কেন প্রশ্ন করো বার বার? মন হাজার প্রশ্নের জন্ম দেয়। কিন্তু জবাব সবটার কী দেয়? আমাদেরই খুঁজে নিতে হয়,বুঝে নিতে হয়।” জামিল স্ত্রীর কথার গভীরতা বুঝতে চাইল কিন্তু পারল না। স্বামীকে কৌতূহলি দেখে রুনা মুচকি হাসল। চা’য়ের কাপগুলো ট্রেতে সাজিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে গুন গুন করে,
” আমি বা কে? আমার মনটা বা কে?
আজও পারলাম না আমার মনকে চিনিতে।
পাগল মন রে,,মন কেন এতো কথা বলে,,,
জামিল বেশ একটা ভাবনায় ডুবে রইল বসার ঘরে বসা সৌমিত্রের দিকে চেয়ে। একটু আগে রুনা ওর দিকে তাকিয়েই কবিতা আবৃত্তি করেছে। আবার গানটাতেও মন। এই মন নিয়ে হঠাৎ পড়ল কেন রুনা। ব্যাপার কী! জামিল ভাবুক চেহারা নিয়ে বসার ঘরে গিয়ে বসল। পাশে সৌমিত্র। রুনা ভেতরের রুমে গিয়েছে। জামিল,সৌমিত্র পাশাপাশি বসা অথচ চুপ। সামনের চা ঠান্ডা হওয়ার পথে। এমনটা সাধারণত হয় না। জামিল একমনে তাকিয়ে দেখছে সৌমিত্রকে। সে আজ হার মানবে না। আজকে ঠিক উদ্ধার করবে রুনার ইঙ্গিতের রহস্য। প্রতিবারই যে কোন বিষয় নিয়ে রুনা এবং জামিলের মধ্যে এমন ইশারা ইঙ্গিতের খেলা চলে। জামিল দু’একবার কাছাকাছি গিয়েছিল কিন্তু সম্পূর্ণ কথার অর্থ খুঁজে পায়নি। আজ যে করেই হোক বের করবে মন নিয়ে গান,কবিতার বলার অর্থ কী! আর তার সাথে সৌমিত্রের কী সম্পর্ক! এ ব্যাটা তো মনের ধারের কাছেও ঘেঁষতে চাইনা এখন। মস্তিষ্কের সবটা খাটিয়ে লেগে গেল সৌমিত্রকে পর্যবেক্ষণে। তাতে কিছুটা বাঁধা পেল রুনা বসার ঘরে আসায়। জামিলের দিকে মুচকি হেঁসে বসল ওদের মুখোমুখি। আটাশ বছরের রুনা সুন্দরী, মধ্যমদেহী। বেপর্দা ঠিক বলা চলে না তাকে। যথেষ্ট ঢেকেঢুকে মার্জিত ভাবে চলে। উচ্চশিক্ষিতা,ধার্মিক নারীর ক্যাটাগরিতে অনায়াসেই ফেলা যায়। খুব প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোনো পুরুষের সম্মুখে আসে না সে। এমনকি সৌমিত্রেরও নয়৷ সৌমিত্র প্রায় আসে এ বাড়ি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সোজাসুজি চোখ তুলে রুনার দিকে তাকায় নি সে। বন্ধুর বউকে সমীহ,সম্মান দু’টোই করে সৌমিত্র। রুনা বসার কিছুক্ষণ পর অন্যদিকে তাকিয়ে সৌমিত্র বললো,
” ও কী খেয়েছে ভাবি?”
রুনা বললো,
” জি না।”
রুনার নেতিবাচক জবাবে সৌমিত্রের চোয়াল ফুলে ওঠে। ভরাট গলায় বলে,
” আমি কী ভেতরে যেতে পারব?”
রুনার ভেতরের ক্ষোভটা বের হয়ে গেল সৌমিত্রের হাবভাবে। এতোদিন যার সাথে প্রয়োজন ব্যতিরেকে একটা কথাও বলেনি। আজ সেই সৌমিত্রকে কটাক্ষ করে জবাব দিল,
” গিয়ে কী করবেন? মারবেন?”
” আপনার মনে হয় এমনটা আমি করতে পারি?” মনঃক্ষুন্ন গলায় জবাব সৌমিত্রের। রুনা মৃদু হেঁসে বললো,
” মনের কথা নাই বা বলি ভাই। আমি তো এও কোনোদিন ভাবি নি আপনি কারো সিঁদুর মুছে দিতে পারেন, কারো শ্রদ্ধা, সম্মান,বিশ্বাসে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করতে পারেন। আপনার কাছে অন্তত এসব আশা করি নি আমি।”
সৌমিত্র মাথা নুয়ে আছে। জামিলের চোখদুটো এবার চকচকে হয়ে ওঠে। সে পেরেছে আজ। পেরেছে স্ত্রীর ইঙ্গিত বুঝতে। রুনা স্বামীর মুখে বিজয়ীর হাসি দেখে মৃদু হেঁসে চোখ রাঙিয়ে সৌমিত্রকে দেখায়। সঙ্গে সঙ্গে জামিলের মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে যায়। রজনীর সাথে ওমন আচরনে বন্ধুর প্রতি আক্ষেপ ছিল তার। সে বুঝতেই পারেনি সৌমিত্রের মনের দুর্যোগ। সবার মনের মতো সৌমিত্রের মনের সবটা বিন্যস্ত না। মায়ার কারনে বহুবছর আগেই পরিত্যক্ত মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে সৌমিত্রের মন। সেখানে হঠাৎ করেই বসতি গড়বে এমন সাধ্য কার? মরুভূমির রুক্ষ বালুচরে আবাদি গড়াটা বহু সাধনার। রজনীর মতো বাচ্চা মেয়ের জন্য সে সাধনা সবে শুরু অথবা মেয়েটার জীবন এই কারনেই হয়ে যাবে ট্রাজেডিক। এই যে সৌমিত্রের করুনা,দয়া,কঠোরতা। এখানেই সেই সাধনার বীজ সুপ্ত আছে। যদি রজনী বুঝতে পারে তো! পুরুষ কবে নিজেকে চিনেছে ? এক নারীই, যে পুরুষের আঁধার পথে আলো জ্বেলেছে। তার সম্মুখের বন্ধুর পথ, ভগ্ন গৃহ করেছে মেরামত, এনেছে কোলাহল। দর্পন হয়ে ভেঙেছে মনের দোলাচল।
জামিল নিরবতা ভেঙে বললো
” তুই আরেক বার ভাব সোম। আমার মনে হয় মেয়েটাকে এভাবে ছেড়ে দেওয়া তোর উচিত হবে না। একজনের পাপের শাস্তি অন্যকে দেওয়াও তো পাপই হলো।”
গত কিছুদিনের শারীরিক, মানসিক ধকলে সৌমিত্র বিপর্যস্ত ভেতরে ভেতরে। সোজা কথাও তার কাছে তিক্ত লাগছে। জামিলের কথাটাও লাগল।
” জামিল, তোর মনে হয় গতকাল থেকে এ পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি এসব শুনব বলে। আমি এসব শুনতে চাচ্ছি না। তুই বলেছিস ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে হোস্টেলে রাখবি। আমি তাতেই রাজি হয়েছি এবং এটাই ফাইনাল। তোর ইচ্ছা হলে হেল্প করবি না হলে করবি না।”
সৌমিত্রের কড়া কথার জবাব জামিল কড়া ভাবেই দিতে চেয়েছিল। কিন্তু স্ত্রীর ইশারায় তাকে চুপ থাকতে হয়। রুনা হেঁসে বললো,
” আচ্ছা ঠিক আছে ভাই। আপনার কথায় থাকবে। কিন্তু একটা অনুরোধ আছে আমার।”
সৌমিত্র নিচু গলায় বলে,
” বলুন।”
” আপনি হোস্টেলে না রেখে ওকে আমার কাছে রেখে যান। আমার মা নেই। বাবা থেকেও না থাকার মতো৷ জামিলের বিষয় তো জানেনই। সে মাসের অর্ধেক সময় বাড়ির বাইরে থাকে। আমার শাশুড়িও মেয়ে বাড়িতে গেছেন। এসময় আমার একজন মানুষের খুব প্রয়োজন ছিল। আপনি বরং ওকে আমার কাছে রেখে যান। সময় সুযোগ বুঝে আমিই ভালো হোস্টেলে রেখে আসব পরে।”
সৌমিত্র ভ্রুকুটি করে জামিলের দিকে তাকায়। সে এমন সমাধান আশা করে নি। মেয়েটি থেকে একেবারে নিস্কৃতি চাচ্ছিল। এখানে থাকলে তাতে ব্যত্যয় ঘটতে পারে। এদিকে রুনার অনুরোধ সরাসরি ফেলতেও পারছে না। জামিলকে চোখের ইশারায় না বলতে গেলেই জামিল মোবাইলে কল এসেছে এমন ভান করে উঠে গেল। সৌমিত্র হাত মুঠ করে রেগে তাকিয়ে আছে সেদিকে। রুনা বিমর্ষ গলায় আবার বললো,
” আপনাকে তো ভাই মানি অথচ দেখুন আমার ভাগ্য। আপনিও আমার কষ্ট বুঝলেন না। বিয়ের পাঁচ বছর পর একটা সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য দেবে আল্লাহ। কিন্তু কেন যেন মাঝে মাঝে ভয় করে। একা থাকি তো তাই। আজ যদি সত্যি একটা ভাই থাকত আমা,,,,”
রুনার কথা শেষ না হতেই উঠে দাঁড়ায় সৌমিত্র। গম্ভীরমুখে বলে,
” আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু ওকে বুঝিয়ে দিয়েন, আমাকে নিয়ে যেন কোনরকমের ভ্রমে না থাকে। আর হ্যাঁ। ওর যা খরচ হয় আমিই মাসে মাসে দিয়ে দেব। আর একটা কথা, যদি ভালো কোনো হিন্দু ছেলে পান আমাকে জানাবেন। জেনে করি আর না জেনে করি, অন্যায় তো করেইছি। এর প্রায়শ্চিত্তও আমিই করব ওকে বিয়ে দিয়ে। চলি।”
সৌমিত্র আর একদন্ড সেখানে দাঁড়াল না।হনহন করে সামনের দরজা খুলে বাইরে চলে গেল। জামিল ভেতরের রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেল ওর পিছু পিছু। রুনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল খোলা দরজার দিকে চেয়ে।
জামিলের পৈতৃক বাড়ি রজনীদের জেলাতেই। সেই সুবাদে সে রজনীকে দেশী বোন বলে ডাকতে লাগল। এটা কিছুটা মজা করেও। রুনা বিরক্ত হলেও কিছু বললো না। জামিল সৌমিত্রের পুরোপুরি উল্টো। সৌমিত্র যতোটা গম্ভীর, জামিল ততোটাই খোশমেজাজী। জামিল রুনা দম্পতীর অর্থের অভাব নেই আর না আছে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার। শুধু একটা শূন্যতা ছিল, সন্তানের। সেটাও আল্লাহর রহমতে পূরণ হবে আর ছয় মাস পরে। ওদের এই বাড়িটা তিনতলা। দোতলায় ওরা থাকে বাকিগুলো ভাড়া দেয়। দোতলায় মোট চারটে শোবার ঘর। সেখানের একটাতে রজনীর থাকার ব্যবস্থা করা হলো।
রুনা জীবনে কষ্ট দেখেনি তা নয়। সেও খুব কষ্ট করেছে জীবনে। মা’কে দেখেছে স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে আত্মীয় স্বজনের দ্বারে দ্বারে নিগৃহীতা হতে। তবুও হার মানে নি রুনার মা। ছোট্ট রুনাকে নিয়ে বাসায় বাসায় কাজ করেছে। রুনা যখন একটু বড় হলো তখন গার্মেন্টসে চাকরী নিল ওর মা। কতোই বা বয়স ছিল মায়ের। বিয়ের প্রস্তাব দিত অনেকেই কিন্তু তার মা দ্বিতীয়বার আর ওপথে হাঁটে নি। মেয়েকে শিক্ষিত করতে, নিরাপদ জীবন দেবে বলে দিনরাত এক করেছে। রুনার এখনও মায়ের সবসময়ই বলা কথাটা মনে পড়ে। ওর মা আক্ষেপ করে বলতো,
” আজ যদি একটা পাস দিতাম তাইলে মনে হয় আরও কিছু করতে পারতাম। তোর ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো কিছু করার সাধটা পূরণ হইত।”
রুনার মা শুধু পার্থিব জীবনের চিন্তা করেননি। তিনি এক রাকাত নামাজ কখনো ছাড়তেন না। মেয়েকে নিজ হাতে গড়েছেন। নিজে যে কষ্ট দেখেছেন সেই কষ্টে মেয়েকে দেখতে চাননি। দিনরাত তার দুয়ায় মেয়ের মঙ্গল কামনাই ছিল। মায়ের দুয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। রুনার মায়েরও হয়নি। রোগশোকে তিনি রুনার বিয়ের দু’বছর আগেই মরে গেলেন। সম্পদের লোভেই হোক আর রক্তের টানেই হোক রুনার বাবা মেয়েকে কাছে নিয়ে যান৷ রুনাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খুঁজতে থাকে। পাত্র পেয়েও যায় কিন্তু সেখানে রুনার বিয়ে হয় না। ঐ বিয়ে না হওয়ার কারন রুনার ফুপু। শহর থেকে গ্রামে গিয়েছিলেন বেড়াতে। সেখানে রুনাকে দেখেই তার মনে ধরে। পু্ত্রের জন্য উপযু্ক্ত পাত্রী পেয়ে ক্ষনকাল দেরি না করে পুত্রকে ধরে এনে বিয়ে পড়িয়ে দেন তিনি। জামিল রুনার ফুপাত ভাই। জামিল রুনার দাম্পত্য সম্পর্ক বিয়ের প্রথম প্রথম মোটেও স্বাভাবিক ছিল না কিন্তু তাই বলে দূরে ঠেলতে পারেনি কোনোদিন রুনাকে সে। মায়ের বাধ্য ছেলে জামিল। মায়ের অবাধ্য হওয়ার সাহস তার কোনোদিন ছিল না, আজও নেই। নয়ত আজ তারও পরিনতি রজনীর মতোই হতো। রজনীর কষ্ট তাই রুনা যেন বেশিই অনুভব করল। আপন বোনের মতো রজনীকে নিজের জীবনে জায়গা দিল সে। রজনী ক্লাস টেনের ছাত্রী। রুনা জামিলকে দিয়ে রজনীর বই খাতা কিনে আনে। ঠিক করে মাধ্যমিক পরীক্ষা যে করেই হোক দেওয়াবে ওকে দিয়ে। কিন্তু সেটাও সহজ নয় রুনার জন্য। রজনী পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। দিনরাতের হুশ ওর নেই। রুনার জোর করাই কোনোরকমে মুখে কিছু দিলেও কথা খুব একটা বলে না কারো সাথে। রুনা সব বোঝে। কষ্ট হয় ওর। আজকাল স্বপ্নে মাকে দেখে রুনা। মাঝে মাঝে রজনীর চেহারাতেও মায়ের ছায়া পায়। কী এক ভীষণ রকমের টান অনুভব করে মেয়েটার প্রতি। এই টানে কখনো ধর্ম, আচার বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। রজনীকে নিয়ে স্ত্রীর চিন্তা দেখে, জামিল পরামর্শ দিল রজনীকে পাশের কোচিংটাই ভর্তি করিয়ে দিতে। সমবয়সীদের সাথে মিশলে হয়ত ওর মানসিক অবস্থা কিছুটা ভালো হবে। রুনার মনে ধরল কথাটা। তার শরীর ইদানিং ভালো না। কোনোকিছুর তীব্র গন্ধ সহ্য করতে পারে না সে। কোনো খাবার মুখে রোচে না। সে নিজে চেয়েছিল রজনীকে নিয়ে যাবে ভর্তি করাতে। জামিল যেতে দিল না। নিজেই নিয়ে গেল রজনীকে। কোচিং-এ ভর্তি করিয়ে ফিরতি পথে হেঁটে রওনা দিল। রজনী এই ব্যস্ত পথে হাঁটতে পারছে না। মানুষের ভীরে এর গায়ের ধাক্কা ওর গায়ের ধাক্কায় এক পা এগোয় তো দু’পা পিছিয়ে যায়। জামিল ততোক্ষণে দূরে চলে এসেছে হাঁটতে হাঁটতে। সেখান থেকে রজনীর অবস্থা লক্ষ্য করে নিজেকে পাশের দেয়ালের পেছনে আড়াল করে নিল । রজনী এককোনে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত চোখে জামিলকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও তার দেখা নেই। চোখের সামনে সব অচেনা -অজানা মানুষ। রজনী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কেঁদে অস্ফুটে ডাকল,
” জামিল ভাই!”
জামিল নিজেকে বহুকষ্টে আড়াল করে রেখেছে। তবে তার সতর্ক দৃষ্টি রজনীর উপর। আশেপাশে তাকাল রজনী। সবাই কেমন কৌতুহল নিয়ে তাকে দেখছে। কয়েকজন লোক ইচ্ছা করে ওর গা ঘেঁষতে চাইল। রজনী দেয়ালের সাথে আরও মিশে দাঁড়ায়। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন জামিল এলো না, রজনী এতো মানুষের কৌতূহল নিতে পারল না আর। নিজের মনে সাহস সঞ্চার করল। ওড়না মুঠ করে ধীর পায়ে এগিয়ে চললো মানুষের ধাক্কা এড়িয়ে। অবশেষে ভীর ঠেলে ফাঁকা জায়গায় এসে দম ছাড়ে রজনী। ভীরু চোখে পেছনে তাকায় একবার। এই ভীর তার কাছে প্রতিকূল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার সমতুল্য ছিল।
” কোথায় ছিলে তুমি? ”
জামিলের গলার স্বর শুনে চোখ ভিজে আসে রজনীর। স্বস্তি ফিরে পায় মনে। ঘুরে দাঁড়িয়ে মুখ নামিয়ে থাকে। জামিল নিজেকে স্বাভাবিক রেখে মৃদু হেঁসে এগিয়ে আসে রজনীর সামনে। রজনীর মাথায় হাত রেখে বলে,
” একটু আগে যা করেছ এখন থেকে প্রতিদিন সেটাই করতে হবে। এই তোমার জীবন। ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে এগোতে পারবে না বরং মানুষের তামাশা আর দয়ার কারন হবে। আশা করব এর বেশি তোমাকে বোঝানো লাগবে না।”
জামিল একপলক রজনীর দিকে তাকিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরল। রজনী চুপচাপ দাঁড়িয়ে জামিলের বলা কথা ভাবছে। চোখের জল মুছে যখন ঘুরল তখন জামিল অনেকদূর চলে গেছে। রজনী লম্বা শ্বাস নিল। জামিলের যাওয়ার পথে চেয়ে বিড়বিড় করে বললো,
” আমি একাই চলব জামিল ভাই। আমার কাওকে প্রয়োজন নেই। কাওকে না। এই পথ কেবল আমার। হ্যাঁ কেবল আমার।”
চলবে,,,