আবছায়া
writer::প্রিয়া
৭
আইজান গাড়ি চালাচ্ছে পাশে বসে নীরবে কেঁদেই যাচ্ছে ইনায়া।
আইজান গাড়ি ব্রেক করতেই ইনায়া ভয় পেয়ে যায়।
-তোমার ন্যাকা কান্না বন্ধ করবে।
নিশ্চুপ।
-ইনায়া প্লিজ কাঁদবে না।তুমি জানোনা জান তুমি কাঁদলে আমার সহ্য হয়না।
‘সবাই এরকম করে কেনো আইজান কি অপরাধ করেছি বলো তো।
-সবাই আমার জন্য এরকম করছে তুমি দেখো জান সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাকে নিয়ে যাদের এতো সমস্যা সবাই একদিন ভুল প্রমাণিত হবে।আমাদের ভালোবাসাটাই জয়ী হবে।
-তাই যেনো হয়।
আইজান একহাত দিয়ে ইনায়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।অন্যহাতে গাড়ি চালায়।
শপিংমহলের সামনে এসে গাড়ি থামলো।
ইনায়া চোখ মুছে বাইরে বের হলো।পাশেই একটা রেষ্টুরেন্ট।
-কিছু খাওনি নিশ্চয়।
‘না তুমি ও তো খাওনি।
-চলো আগে কিছু খেয়ে নেই।
-হুম।
ইনায়া আর আইজান দুজনেই একটা রেষ্টুরেন্টে গেলো।
নাস্তা করে নিলো দুজনেই।
-মন কি ফ্রেশ হয়ছে।
‘হুম।
-আর কখনো কাঁদবে না মনে থাকবে।
-হুম।
দুজনেই শপিং করতে গেলো।
আইজান দামি দামি লেহেঙ্গা শাড়ি দেখাচ্ছে ইনায়ারা সেদিকে চোখ নেই।
-কি তোমার কি এগুলো ভালো লাগছে না তাহলে চলো অন্য দোকান দেখি।
‘আইজান এই শাড়িটা কেমন।
-কি বলছো কাতান শাড়ি এতো দামি জিনিস রেখে তোমার এই সস্তা কাতান শাড়ি ভালো লাগছে।
‘তুমি খেয়াল করে দেখো কত সুন্দর পদ্ম ফুলে ডিজাইন মাঝেমাঝে কয়েকটা স্টোন দেয়া।
কি অপরূপ শাড়ি।
-ধ্যাত আজগুবি কথা রাখো।
এই শাড়ি পছন্দ হলে নাও তবে বিয়ের জন্য অন্যকিছু দেখো।
-আমি বিয়েতে এই শাড়িই পড়বো।
‘ইনয়া রাগ হচ্ছে কিন্তু।
-প্লিজ জান এই শাড়ি নেই।
‘এই যে ভাই এই শাড়ির প্রাইজ কত।
-৫হাজার টাকা।
‘ইনয়া কাম অন বেবি এই শাড়ি মাত্র ৫হাজার টাকা তুমি কি বুঝতে পারছো আইজানের বউ বিয়েতে মাত্র ৫হাজার টাকা দামের শাড়ি পড়বে।
-তোমার বউকে যদি ৫হাজার টাকা দামের শাড়িতেই সুন্দর লাগে তাহলে ক্ষতি কি।
‘ওকে ওকে যা খুশি কিনো।
ইনায়া শাড়িটা কিনে নিলো।
শাড়ির সাথে উড়না না থাকায় আলাদা বিয়ের উড়না কিনলো।আইজান একটা কথা ও বলেনি এতোক্ষণ।
আরো অল্প কিছু কেনাকাটা করে দুজনেই বেড়িয়ে গেলো।
আইজান রাগে গাড়ি চালাচ্ছে ইনায়া মনে মনে ভাবছে।
-তোমার নিজের রোজগারের টাকায় যদি দামি শাড়ি কেনার কথা বলতে আমি গর্ব করে কিনে নিতাম।
কিন্তু অন্য কারো টাকায় আমি বিয়েতে দামি শাড়ি পড়তে চাইনা আইজান।
সরি তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য।
জানালার বাইরে মুখ বের করে আছে ইনায়া বাতাসের সাথে চুলগুলো খেলা করছে।
আইজান একটা ফুচকার দোকানের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করালে।
-খাবে
‘হুম।
-চলো।
আইজান ইনায়া বাইরে বের হয়।
-মামা ফুচকা দিন তো।দুই প্লেট দিন।
‘বসেন মামা দিচ্ছি।
দুটো চেয়ারে দুজন বসলো।
-রাগ কমেছে।
‘কিসের রাগ আমার রাগের কি কোনো মূল্য আছে না কি।
-এতো রাগ করতে হবে না গো। খাইয়ে দাও।
আইজান ইনায়াকে খাইয়ে দিলো।অনেকক্ষণ নদীর পাড় দিয়ে হাঁটলো তারপর দুজন বাসায় ফিরলো।
ইনায়ার বিয়ের শাড়ি কারোর পছন্দ হলো না।
আনায়া-এই শাড়ি কিনলি তা শপিংমলে যাওয়ার দরকার কি ফুটপাত থেকে কিনে আনলে পারতি।
ভাবি- কি চয়েজ বাবা তুই এই শাড়ি চয়েজ করলি না কি বরের টাকা বাঁচানোর জন্য।
ইনায়া কোনো উত্তর দিলো না।আজকাল বড্ড নির্লজ্জ হয়ে গেছে কারো কথা যেনো গাঁয়ে লাগে না।প্রতিউত্তর হিসাবে একটা মুচকি হাসি দিলো।
রুমে এসে ফ্যান ছেড়ে দিলো খোলা চুল নিয়ে ভাবতে লাগলো।
-আমি কি আইজান কে বিয়ে করতে চেয়ে ভুল করছি।
ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা যে আমি সহ্য করতে পারবো না।তাহলে ভুল কি করলাম সবাই এমন করে কেনো।
মায়েরা কত খুশী থাকে মেয়ের বিয়ের সময়।নিজ হাতে সবকিছু শিখিয়ে দেয় কত দোয়া করে মেয়ের ভবিষ্যৎ এর জন্য। আমার বেলা সব উল্টে যাচ্ছে সবাই গালি দেয়া ছাড়া কোনো দোয়ায় দিচ্ছে না।
ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলো।
ঝরঝর করে পানি এসে শরীর ভিজিয়ে যাচ্ছে।ভিতরের ও যন্ত্রণা কমে যাচ্ছে।
অনেকক্ষণ পর ইনায়া বাইরে আসলো।
এসে দেখে ডক্টর নিয়াজ ড্রইংরুমে বসা বড় ভাইয়ার সাথে গল্প করছে।
ইনায়াকে দেখা মাত্র উঠে দাঁড়ালেন।
-ইনু তোমার শরীর এখন কেমন।
‘জ্বি ভাইয়া ভালো।আপনি ভালো আছেন।
-হ্যাঁ ভালো।এই নাও কার্ড আগামী বুধবার আমার বিয়ে তোমার বিয়ের দু দিন আগে অবশ্যই আসবে কিন্তু।
‘ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো।তা ভাবি কি করেন।
-এই আমার মতোই ডাক্তার।
‘খুশী হলাম।
ইনায়া নিজ হাতে তিন কাপ কফি বানিয়ে দু কাপ নিয়াজ আরর ইকরামকে দিলোম
আর নিজের জন্য এক কাপ ছাদে নিয়ে গেলো।
ছাদে ফুল বাগানে লাল গোলাপ ফুটেছে শুভাস ছড়াচ্ছে চারিদিকে।
হঠাৎ করেই ইনায়ার ফোন বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার দেখে ফোন রিসিভ করছে না দু তিনবার ফোন দিচ্ছে তাই বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলো ইনায়া।
-হ্যালো কে বলছেন।
‘কংগ্রাচুলেশনস মুটকি তোর না কি বিয়ে।
-ওরে ইতর তুই এতোদিন পর কোথা থেকে।
‘বিদেশে ছিলাম।
-কিন্তু তুই বিয়ের খবর কি করে জানলি।
‘অরিত্রি বললো।
-তুই আমার সাথে যোগাযোগ না করে অরিত্রির সাথে যোগাযোগ করলি।তুই না আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলি।
‘আরে বাবা রাগ করছিস কেনো।রাস্তায় অরিত্রির সাথে দেখা তখন জানলাম তোর বিয়ে ওর কাছ থেকেই তোর নাম্বার নিয়েছি।
-আচ্ছা আবেগ সত্যি করে একটা কথা বল।তুই হঠাৎ এভাবে উধাও হলি কেনো।
‘বনবাসে গিয়েছিলাম সব ছেড়ে। বিদেশে চলে গেছিলাম।
-আবেগ আমি জানতে চাইছি কেনো গিয়েছিলি।
আর যোগাযোগ বন্ধ করলি কেনো।
‘এসব থাক।তোর বিয়েতে আসবো কিন্তু।
-না আসলে তোর হাড় ভেঙ্গে দিবো।
-আচ্ছা।
‘আবেগ শোন।
ওপাশ থেকে আবেগ ফোন কেটে দিলো।
পুরো দেড় বছর পর আবেগ ওকে ফোন দিয়েছে।এক সময় আবেগ ছিলো ইনায়ার কলিজার টুকরো ফ্রেন্ড।আইজানের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই আবেগের সাথে দুরুত্ব বাড়ে একসময় দুরুত্ব খুব বেশিই হয়ে যায়।
চলবে।