আবছায়া পর্ব ৪২+৪৩

আবছায়া
writer::প্রিয়া
৪২
আইজানের ফোনে মেসেজ আসলো রূপসা মেসেজ দিয়েছে।
-জান আমি মায়ের কাছে আসছি বাবা খুব অসুস্থ তুমি চিন্তা করো না জান আমি সকালেই চলে আসবো।
তুমি সব ব্যবস্থা করে রেখো।

আইজান মেসেজ সিন করে কল দিলো রূপসা কেটে দিয়ে আবার মেসেজ করলো।

-জান আম্মু পাশে আছেন।আমি পরে কল দিবো।

‘আমি আসবো তোমার আম্মুকে দেখতে।

-না জান প্লিজ কাল আমাদের বিয়ে আজ কোনো ভেজাল হোক আমি চাই না।আমি বাবাকে বলেছি আমার এক লক্ষ টাকা লাগবে। বাবা বলেছেন কাল দিবে এই টাকা বিয়ের উপহার হিসাবে আমি তোমাকে দিবো।

-কাল কখন আসবে তুমি ঠিকানা দাও আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো।

‘বাবু আমি আসতে পারবো গাড়ি লাগবে না।
শুনো তুমি কাল সাদা পাঞ্জাবি পড়বে আর আমাদের বাসর ঘর খুব সুন্দর করে সাজাবে কেমন।

-আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলে এসো আমি অপেক্ষা করবো।

নির্ঘুম রাত কাটছে ইনায়ার তারা গুনছে আকাশের। এমন কষ্টের রাত আর কি হতে পারে নিজের বর নিজের ভালোবাসা কাল বিয়ে করছে ওর নতুন সংসার হবে।ইনায়া তো ভুল করে ও ওর জীবনে অন্যপুরুষ কল্পনা করতে পারেনা।
আইজান কেনো এমন করলো ভালোবাসা দিয়ে নাকি সব জয় করা যায়।তবে ইনায়ার ভালোবাসায় জোর নেই কেনো কেনো পারলো না আইজানকে খারাপ রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনতে।
ও তো চেষ্টা করেছিলো পারেনি হয়তো নতুন মেয়েটা পারবে।
এসব ভাবতে ভাবতে ইনায়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আর পারছিলো না বুকের ভিতর দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।কান্নার জোরে ইনায়ার ভিতর হালকা হয়।

**সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে চলে আসে অরিত্রি গেইটের ভিতর গাড়ি রেখে বাসার ভিতর যায়।
ইনায়া নাস্তা করছিলো বসে অরিত্রি আসতেই ওকে নাস্তা করতে বলে।
দুজন মিলে সকালের নাস্তা শেষ করে। ইনায়া রুমে যায় রেডি হতে।
হালকা পিংক কালারের জর্জেট শাড়ি পরে চুলগুলো খুলে দেয়।কানে দুল আর গলায় চেইন এতেই সুন্দরী ইনায়া।

বাইরে এসে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
গাড়িতে অরিত্রি আর ইনায়া দুই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে কেউ কথা বলছে না।
অরিত্রি নিজের হাতটা এনে ইনায়ার হাতের উপর রাখলো।

-ইনায়া কোথায় যাবি বল।

‘কলেজে চল বহুদিন যাই না।

গাড়ি ঘুরিয়ে ওরা কলেজের দিকে গেলো।পুরোনো ক্যাম্পাস, ক্লাসরুম সব দিকে তাকিয়ে দেখছে ওরা।অফিসে গেলো স্যারদের সাথে দেখা করার জন্য।
দুজনকে একসাথে দেখে স্যার, ম্যাডাম সবাই খুশি।ওদের বন্ধুত্বের অনেক প্রশংসা করলেন সবাই।

ঝালমুড়িওয়ালা মামার কাছ থেকে দুজন ঝালমুড়ি কিনলো আগের মতোই হেঁটে হেঁটে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরছে আর ঝালমুড়ি খাচ্ছে।
ওদের পুরোনো অভ্যাস ছিলো একজন অন্যজনের আঙুল ধরে হাটতো কখন যে সেই পুরোনো অভ্যাসে ফিরে গেছে ওরা কেউ বুঝেইনি।
দুজন দুজনের আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে একসাথে হেসে উঠলো।

**দুপুর বারোটা আইজান সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে ড্রইংরুমের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে পায়চারি করছে বারবার বাইরে উঁকি দিচ্ছে রূপসা কেনো আসছেনা।অস্থির হয়ে বারবার ফোন দিচ্ছে ফোন সুইচড অফ।

এদিকে বাসর ঘর সাজিয়ে ছেলেগুলো টাকা নিতে আসলো টাকা দিয়ে নিজের রুমে গেলো।
সেই আগের মতোই সাজানো ছেলেগুলো কি অন্যভাবে সাজাতে পারতো না।সেদিন এই ঘরে ইনায়া এসেছিলো আজ অন্যকেউ কিন্তু সেইম সাজ দিলো কেনো ওই ছেলেগুলো।
আইজানের চোখে ভাসছে ঘোমটা দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসা ইনায়ার মুখটা।
দ্রুত ঘর ছেড়ে বাইরে এসে হাফ ছাড়লো দম বন্ধ লাগছিলো।রান্নাঘরে গিয়ে দেখে ওর মা কেঁদে কাঁদে রান্না করছেন।

-মা আজ তোমার ছেলের বিয়ে কোথায় তুমি খুশি হবে তা না বসে বসে কাঁদছো।

-তুই কি বিয়ে করে বউ আনছিস যে খুশি হবো তুই তো মহারাণী আনছিস মাকে দাসী বানাতে।

-উফফ মা তুমি না সবসময় বেশি বুঝো।
রান্না শেষ করে কাপড় পাল্টে আসো।আর বাবা কোথায়।

‘বেড়িয়ে গেছেন তোর বিয়েতে থাকবেন না।

-ধ্যাত।

আইজানের টেনশন বেড়ে যাচ্ছে রূপসার কোনো বিপদ হলো না তো।
ফোনের উপর ফোন দিয়ে যাচ্ছে ফোন অফ। এদিকে ওর ফ্রেন্ড অনেকেই এসে গেছে। সবাই প্রশ্ন করছে বউ নেই কেনো।
দুপুর পেড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো সবাই খেয়ে দেয়ে চলে যায়।
আইজান পাঞ্জাবি বদলে শার্ট-প্যান্ট পরে বেড়িয়ে গেলো গাড়ি নিয়ে।

*আইজান গেলো রূপসা যে বাসায় ছিলো সেই বাসায় ও বলেছিলো কলেজে পড়ার জন্য ভাড়া বাসায় থাকে।
সে বাসায় দারোয়ানের সাথে কথা বলে মালিকের কাছে গেলো।
উনি সোফায় বসতে বসতে আইজানকে বললেন।

-রূপসা কে হয় তোমার ।

‘আজ ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। ও কাল ফোন দিয়ে বললো ওর বাবা অসুস্থ বাবার কাছে গিয়েছে।
আপনি কি ওর বাবার বাসার এড্রেস দিতে পারবেন।

-বাবা ওর বাবা আসলো কোথা থেকে।
বাসা ভাড়া নিতে ওর প্রেমিক এসেছিলো বলেছিলো ওর মা-বাবা নেই কিছুদিনের জন্য ওকে এখানে রাখবে তারপর ওর মাকে রাজি করিয়ে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যাবে।আমি প্রথমে রাজী না হলে ভাড়া বেশি দিবে সেই লোভে রাজী হয়ে যাই।

‘ওর প্রেমিক আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছিনা।

-আমি তোমার কথা ও বুঝতে পারছিনা বাবা।রূপসাকে তো একমাস আগে ওর প্রেমিক এসে ওকে নিয়ে যায়।আমার দোয়া নিয়ে যায় ওদের নতুন জীবনের জন্য।

-রূপসা একমাস আগে থেকেই আমার বাসায় ছিলো আজ ওকে আমার বিয়ে করার কথা কিন্তু সকাল থেকে ওর ফোন অফ।

-তুমি বসো আমি ওই ছেলেকে ফোন দেই।

আইজান বসে আছে উনি লাউড স্পিকারে ফোন দিলেন ওপাশ থেকে একটা ছেলে ফোন রিসিভ করলো।

-কি খবর রুহেল বাবা রূপসা কেমন আছে।

‘ আলহামদুলিল্লাহ চাচা আমরা ভালো আছি।চাচা গুড নিউজ আছে আমি আর রূপসা আজই মালেশিয়া চলে যাচ্ছি যদি কোনোদিন দেশে আসি আপনার সাথে দেখা করবো।

-রূপসার কাছে ফোন দাও তো।

– আসসালামু আলাইকুম চাচা।

‘কি রে আজ না তোর বিয়ে আইজানের সাথে তুই মালেশিয়া যাচ্ছিস এসব কি।

উনার কাছ থেকে টান দিয়ে ফোন কেড়ে নিলো আইজান।

-হেই বেঈমান,তুই কার সাথে মালেশিয়া যাচ্ছিস প্রতারক আমি তোকে খুন করবো।

‘তুই তো নিজেও প্রতারক। রাখ ফোন আমাদের ফ্লাইট ৫মিনিট পর আর আমাদের পেলে না খুন করবি।
আর শোন তোর টাকায় কিন্তু মালেশিয়া যাচ্ছি তোর ব্যাংক এখন ফাঁকা।
আমি কে জানিস আমি কলির ছোট বোন যাকে বিয়ে করার কথা বলে পালিয়ে নিয়ে একরাত ইউজ করে ছেড়ে গেছিস।প্রতিশোধ নিতে তোর সাথে খেলা করলাম।

ফোন কেটে দিলো রূপসা আইজান চিৎকার করছে।গাড়ি নিয়ে ছুটে চলছে ব্যাংকে কোনো টাকা নেই।

**দুই প্লেট ফুচকা খেয়ে ইনায়া অরিত্রির প্লেট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে খাচ্ছে।প্রাণোচ্ছল ইনায়া আগের মতোই হয়ে গেছে।
অরিত্রি আর ইনায়া পার্কের বেঞ্চে বসে আছে।

-জানিস আরু আজ আইজানের বিয়ে কাল আমায় নিমন্ত্রণ করেছে।

‘কি বলছিস।

-হ্যাঁ।

‘ইনু আমি তোকে একটা রিকুয়েষ্ট করবো রাখবি।

-রাখার মতো হলে রাখবো।

‘তোকে রাখতে হবে ইনু।

-আচ্ছা বল।

‘আমি আবেগকে ডিভোর্স দিচ্ছি সব কাগজপত্র রেডি হয়ে গেছে।আমি চাই তুই আর আবেগ নিজেদের জীবন গুছিয়ে নে।
আবেগ তোকে প্রচন্ড ভালোবাসে তুই আবেগের কাছে ভালো থাকবি। আবেগ বড্ড ভালো ওর মতো ছেলে হয় না।
প্লিজ ইনু তুই আমার রিকুয়েষ্ট রাখ প্লিজ।

ইনায়া দাঁড়িয়ে যায় কি বলছে এসব আরু।
ইনায়ার পায়ের কাছে বসে আরু চিল্লিয়ে বলছে।

‘আমি তোদের জীবন নষ্ট করে দিয়েছি তোরা এক হলে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।মারজান বাবা পাবে তুই সংসার পাবি।ইনায়া প্লিজ রাজি হয়ে যা প্লিজ।আমি ডিভোর্স দিয়ে অনেকদূর চলে যাবো তোদের জীবনে আর আসবো না।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
৪৩
অরিত্রির বাহু ধরে টেনে ওকে দাঁড় করিয়ে জোরে জোরে দুটি থাপ্পর বসিয়ে দিলো ওর গালে।
অরিত্রি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে ও ইনায়া রাগে থরথর করে কাঁপছে।
চিল্লিয়ে বলছে
তোদের সবার কি মনে হয় আমি খেলার পুতুল সবাই মিলে যখন খুশি খেলবি যখন খুশি ফেলে দিবি।আমি খেলার পুতুল না আমি বাঁচতে শিখে গেছি কোনো পুরুষের আমার প্রয়োজন নেই আমি একা বাঁচতে পারবো।

পার্কের বেঞ্চে বসে ইনায়া জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে রাগ কন্ট্রোল করার জন্য।অরিত্রি আবার ইনায়ার পাশে আসলো ওর হাঁটুতে হাত রেখে বললো।

-মাত্র দুটো থাপ্পড় আরো মারতে পারলি না।

ইনায়া অরিত্রিকে বুকে টেনে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো দুজনেই কাঁদছে।
চোখমুখ মুছে ইনায়া অরিত্রির হাত ধরে বলছে।

-বিয়ে কোনো পুতুল খেলা নয় আরু যখন খুশি ভেঙ্গে দিবি।
আবেগকে কখনো আমি আমার করে চাইনি ওকে আমি বন্ধু ভেবেছি হয়তো সেই সময় সবকিছু জানলে ওকে ফিরিয়ে দিতাম নয়তো গ্রহণ করতাম।
এমন কি কোনো গ্যারান্টি আছে আবেগ আমার হলেই আমি সুখী হতাম। আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।

-আবেগ কোনোদিন আমায় ক্ষমা করবে না আমি না চাইলে কি হবে ও একদিন আমায় ডিভোর্স দিয়েই দিবে।

‘কেনো ডিভোর্স দিবে ডিভোর্স কি মুখের কথা তুই ভুল করেছিস ক্ষমা চেয়েছিস ওর উচিত তোকে ক্ষমা করে দেয়া।

-ও কখনোই আমাকে ক্ষমা করবে না ওর ভালোবাসা নিয়ে আমি খেলা করেছি কি করে ক্ষমা করতে পারবে।

‘তুই যা করেছিস সেটা অন্যায় কিন্তু তুই যা করেছিস নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য।
কিছু কিছু ভুল না একসাথে কয়েকটা জীবন নষ্ট করে দেয়।আমি চাই না তুই কিংবা আবেগের জীবন নষ্ট হোক।

-আমার পাপের শাস্তি পেতেই হবে।

‘তোর পাপের শাস্তি হলো আবেগকে ভালোবাসা আবেগকে ভালো রাখা।
দেখ অরিত্রি তুই কিংবা আবেগ কেউই চাইলে আমি পারবো না আবেগের সাথে নতুন জীবন শুরু করতে।তাহলে যে আমি আইজানের থেকে ও নিচু মনের হয়ে যাবো।আবেগ আমার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড সারাজীবন সেটাই থাকবে।

-আমি কি করবো বলতে পারিস।

‘তোর জানাশুনা কেউ ইতালি থাকে।

-আমার মামা থাকেন।

‘তোর পাসপোর্ট আছে।

-হ্যাঁ।

-শুন সামনের মাসে আমাদের কোম্পানি থেকে আমি আর ছোট ভাইয়ার জরুরি মিটিং আছে ইতালি তে।
আমি যাবো না বরং তুই আমি সেজে যেতে পারিস।আমার না গেলে ও চলবে ছোট ভাইয়া সামলে নিবে।

‘আমি যাবো।

-তুই তোর মামাকে বলে আবেগের বাসার ঠিকানা বের কর যা করার আমি করবো।

-কিন্তু ইনায়া তোর মিটিং।

‘ভাইয়া সামলে নিবে নো টেনশন।

অরিত্রি ইনায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।

-তুই এতো ভালো কেনো রে।

**ব্যাংক থেকে পাগলের মতো বাসায় ছুটে যায় আইজান।
বাসায় গিয়ে ওয়ারড্রব খুলে কোথাও কেস টাকা কিংবা ইনায়ার সোনার বক্স খুঁজে পায় না।
পুরো ঘর জুড়ে কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আইজানের মা-বাবা ওর ঘরে আসলেন।

-ঘরের কি হাল করছিস তুই কি হয়েছে।

‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে আমি পথের ফকির হয়ে গেছি।

-কি হয়েছে বলবি তো।

‘রূপসা আমার সাথে প্রতারণা করেছে রূপসা আমার সব টাকা- ইনায়ার গহনা সব নিয়ে ও অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে মালেশিয়া চলে গেছে।

-কি বলছিস তুই এসব।

‘হ্যা মা এমনকি আমার ব্যাংকের সমস্ত টাকা নিয়ে গেছে।

বাবা–হা হা দেখলি পাপ করলে কিভাবে শাস্তি পেতে হয়।নিরীহ মেয়েটা কত শান্ত, ভদ্র ছিলো তোকে পাগলের মতো ভালোবাসতো তুই সেই মেয়েটার সাথে প্রতারণা করেছিলি কিভাবে ঠকিয়ে ছিলি মেয়েটাকে কত নির্যাতন করেছিলি আর এই তো সেদিন মেয়েটাকে জেলের ভাত পর্যন্ত খাওয়ালি।আল্লাহ কাউকে ছাড়েন না উনি সব দেখেন ধীরস্থিরে উনি ঠিক শাস্তি দেন।

-কি গো তুমি ছেলেটার এভাবে কথা বলছো এই বিপদে ওর পাশে থাকা উচিত।

‘এই তুমি ছেলেটাকে নষ্ট করেছো।রূপসা মেয়েটাই পারতো তোমাকে শায়েস্তা করতে।
এবার কি করবে কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে আপা টাকা দিচ্ছেন না ফোন পর্যন্ত করেন না।কি খেয়ে বাঁচবে আমি কি ঠেলাগাড়ি চালাবো।

-না বাবা আমি ঠেলাগাড়ি চালাবো দরকার হলে অনেক করেছো বাবা আমাদের জন্য এবার আমি না হয় কিছু করবো।

**দেখতে দেখতে অরিত্রির ইতালি যাওয়ার সময় চলে আসলো ইনায়া অরিত্রির হাতে একটা চিঠি দিলো।
আর কিছু পরামর্শ দিলো আবেগকে বুঝানোর জন্য।

অরিত্রি প্রথমে ওর মামার বাসায় গিয়ে উঠে একদিন সেখানে থাকার পর অরিত্রির মামা কৌশলে আবেগের বাসার চাবি আনেন।

পরেরদিন আবেগ কাজে যেতেই অরিত্রি ওর বাসায় আসে।চারিদিকে শুধু জঞ্জাল এ বাসায় কি মানুষ থাকে নাকি কোনো জঙ্গি।
উফফ কোমর বেঁধে অরিত্রি কাজে লাগে সারাদিনে ঘর পরিস্কার করে তারপর ফ্রিজ খুলে দেখে রান্না করার মতো কিছু আছে কি না।
ফ্রিজ আছে ঠিক কিন্তু তার ভিতরে কিছুই নেই।
মামাকে ফোন দিয়ে কিছু বাজার করে দিতে বলে।উনি মাছ-মাংস শাক এনে দিলেন।

অরিত্রি রান্না করতে গেলো চিকেল ঝাল ফ্রাই বানিয়েছে।চিংড়ী দিয়ে পুঁইশাক ভাজি করেছে ভাত রান্না করে রুমে গিয়ে শুইয়ে রইলো আবেগ আসলে একসাথে খাবে।

রাত হতেই আবেগ বাসায় আসলো ঘরের ভিতর ডুকে চমকে যায় জঙ্গল পরিস্কার করলো কে এতো সাজিয়ে গুজিয়ে রাখা সবকিছু। রান্নাঘর থেকে কি মিষ্টি স্মেইল আসছে।
সোজা রান্না ঘরে গেলো সেখানে গিয়ে হাড়ি পাতিল দেখে তো আরো অবাক কে রান্না করেছে ভাবতে ভাবতে রুমে গিয়ে দেখে কেউ যখন জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

আবেগ এবার বুঝতে পারে ও ভুল করে অন্য কারো বাসায় ডুকে গেছে ফিরে যেতে চাইলে টেবিলে রাখা ওর আর অরত্রির ছবি দেখে বুঝে না নিজের রুমই তো।

-কে আপনি এখানে কি করছেন।

আবেগের চিৎকার শুনে হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে অরিত্রি।
-তুমি এখানে কি জন্য এসেছো বেড়িয়ে যাও এতো সাহস কোথায় পেলে এখানে আসার।

অরিত্রি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।আবেগ আবার চিৎকার করতেই অরিত্রি কেঁপে উঠে।

-ইনায়া একটা চিঠি দিয়েছে।
টেবিলের উপর চিঠি রেখে অরিত্রি ছুটে অন্যরুমে চলে যায়।
আবেগ ইনায়ার দেয়া চিঠি সেই খুশিতে হাতে নিয়ে খুলে পড়তে শুরু করলো।

প্রিয় আবেগ,
বরাবরের মতো তুই এখনো আমার প্রিয় আমার সবচেয়ে কাছের ভালো বন্ধু।তোর মতো বন্ধু কিংবা ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমি সারাজীবন তোকে বন্ধু ভেবে এসেছি তোর কাছে আমি নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করতাম।তোকে আমি কখনো প্রেমিক ভাবিনি সেটা কোনো দুঃস্বপ্ন কিংবা কল্পনাতে ও না।
তুই আমাকে ভালোবাসতি, অরিত্রি ভালোবাসতো তোকে।তুই আমাকে পাওয়ার জন্য পাগল ছিলি আর অরিত্রি তোকে পাওয়ার জন্য।
তোর ভালোবাসা পাওয়ার লোভে অরিত্রি অন্ধ হয়ে যায়।জানিস তো অন্ধ মানুষ কোন রাস্তা ঠিক আর কোন রাস্তা ভুল সেটা পর্যবেক্ষণ করতে পারেনা।তেমনি অরিত্রি তোকে পাওয়ার তীব্র বাসনায় ভুল রাস্তায় এগিয়ে যায়।ওর ভুলের জন্য শাস্তি আমি পেয়েছি কিন্তু ও তোকে পেয়েছে।আর তুই ও ওর ভালোবাসায় সাড়া দিয়েছিস তোর সব খারাপ সময়ে ও তোর পাশে ছিলো। আরু মেয়েটা খারাপ না হয়তো আবেগের বসে ভুল করে ফেলেছে।
দেখ আবেগ আরু যদি ভুল না করতো তা ও আমি হয়তো তোকে ভালোবাসতাম না আমি তোকে শুধুই বন্ধু ভেবেছি।
আমি জানি তুই এখন আরুকে প্রচন্ড ভালোবাসিস কারণ আরু তোর বৈধ স্ত্রী তোর অর্ধাঙ্গিনী।
প্লিজ আবেগ আরুকে ক্ষমা করে দিস তোর ভালোবাসা না পেলে মেয়েটা মরেই যাবে।তুই কি চাস আরু তোর জীবন থেকে হারিয়ে যাক।ক্ষমা মহৎ গুন আমি জানি তুই অনেক মহৎ।
এবার কিন্তু শেষ কথা বলে দেই দুজন রাগারাগি মিটমাট করে আমার জন্য রাজকুমারী নিয়ে দেশে চলে আয় আমার রাজকুমার আর তোদের রাজকুমারী দুজনের বিয়ে দিবো।
ইতি তোদের বন্ধু
ইনায়া
ইনায়ার চিঠি পড়তে পড়তে আবেগের অশ্রু গড়িয়ে পরে।আড়ালে থেকে অরিত্রি ও কান্না করে।
কিছুক্ষণ পর টেবিলে খাবার সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরিত্রি আবেগ খাচ্ছে।
-কি হলো খেতে বসো।

অন্য প্লেটে ভাত নিয়ে চোখের জল মুছে খাওয়া শুরু করলো অরিত্রি।

**ইকরামের বউয়ের ডেলিভারি ডেট আজকে সিজার করতে হচ্ছে ওকে দেখতে ইনায়া ওর মা-বাবা গিয়েছেন।
সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় রাহেলা এই অপারেশন থিয়েটার থেকে ওর ফেরার সম্ভাবনা নেই বাচ্চা জন্মের পর ক্যান্সার অপারেশন হবে মৃত্যু নিশ্চিত।

ইনায়ার হাত মুঠো করে ধরে রাহেলা।

-একটা কথা রাখবে বোন।

‘কি কথা ভাবি বলো।

-আমি তো আমার সন্তানের মুখ দেখতে পারবো কি না জানিনা তুই আমার সন্তানকে মানুষ করবি কথা দে।

‘ভেঙ্গে পড়ো না ভাবি সব ভালো হবে।

-তুই কথা দে বোন আমার সন্তানকে দেখে রাখবি।

‘আমার মারজানের মতো করে ওকে মানুষ করবো আমি।

অপারেশনে ওর মেয়ে বাচ্চা হয় তিনদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রাহেলা মারা যায়।
সবাই অনেক ভেঙ্গে পড়ে রাহেলার মেয়েকে নিজের বুকেই আশ্রয় দেয় ইনায়া।

**কাছের সকল বন্ধুবান্ধব কুকর্মের সকল পার্টনার কারো কাছেই সাহায্য পায়নি আইজান।একটা চাকরি যোগাড় করতে কতজনের হাতে পায়ে ধরেছে শেষমেশ বাঁচার জন্য সি,এন,জি চালক হলো।
এখন আর মেয়েরা লাইন ধরে না টাকার অভাবে আইজান এখন মেয়েদের কাছে যায় না।বিপদে কেউ কারো না আইজান বুঝতে পারছে। ইনায়া কি ছিলো ওর জীবনে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

বেশ কয়েকদিন ধরে ইনায়া লক্ষ্য করছে আইজান ওর বাসার সামনে ঘুরঘুর করে গেইটের ভিতর পা রেখে আবার চলে যা ভিতরে আসার সাহস হয়তো নেই।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here