আবছায়া
writer::প্রিয়া
১৯
আবেগের কান্না অরিত্রি সহ্য করতে পারছে না।তাই সেখান থেকে উঠে চলে গেলো।
আবেগ অনেকক্ষণ বসে রইলো নদীর পাড়ে। তারপর উঠে বাসার জন্য পা বাড়ায়।
আইজান ইনায়াকে বলছে ওর বাবার সাথে আবেগ আর আনায়ার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে।
-আমি তো আনায়ার সাথে কথা বলিনি ওর সাথে কথা না বলে বাবার সাথে কথা বলা কি ঠিক হবে।
‘আবেগ তো নিজের মুখে বলছে ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।
‘না আবেগ শুধু ওর কথা বলছে।
-উফ তুমি এতো বুঝো কেনো।
চলো চলো আমরা যাওয়ার আগে বাবার সাথে কথা বলে যাই।
‘তুমি যখন বলছো তাহলে চলো।
ওরা দুজন বাইরে এসে দেখে বাবা, মা,বড় ভাইয়া আর আনায়া ড্রইংরুমে বসা।
আইজান ইনায়ার কানের কাছে গিয়ে বলছে।
-সবাই আছে এখুনি সুযোগ বলে ফেলো।
‘আমার কেমন জানি লাগছে ভয় ভয় করছে।
-নিজের বিয়ের সময় তো ভয় পাওনি।
‘উফফ।
বাবা আমার কিছু কথা ছিলো।
-বসে বল কি বলবি।
আইজান ইনায়া সোফায় বসে। সবাই সবার দিকে তাকাচ্ছে।
-বাবা আমি আনায়ার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চাইছিলাম।
কথাটা শুনা মাত্রই সবার চোখে আগুন।বিশেষ করে আনায়া আর বড় ভাইয়ার চোখে।
ইকরাম-তুই তোর নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিস এবার কি আনায়াকে তোর ইচ্ছাতে ও বিয়ে দিতে হবে।এখন আর তুই এই পরিবারের কেউ না তাই তোকে আনায়া কে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।
আনায়া-হ্যা রে আপু তোর কি বিয়ে ছাড়া মাথায় কিছু আসেনা সবসময়ই বিয়ে বিয়ে করিস।লাইফ কি শুধু বিয়েতে সীমাবদ্ধ।
আমাকে নিয়ে তোর না ভাবলে ও চলবে।
ওরা দুজনের কথা শুনে ইনায়ার চোখ ছলছল করে উঠলো।
তখনি ইনায়ার বাবা বলে উঠলেন।
-ইনায়া তোর মাথায় হুট করে আনায়ার বিয়ের চিন্তা আসলো কেনো।
‘বাবা তুমি তো আবেগ কে চিনো ওর মতো হাজারে ও পাবেনা আমি আবেগের সাথে আনায়ার বিয়ের কথা ভাবছিলাম।।
-আবেগ ছেলে হিসেবে ভালো ওর বাবা নামকরা বিজনেসম্যান।
আমার আপত্তি নেই তবে আনায়ার পড়াশোনা ও সবে মাত্র ইন্টারের ছাত্রী।
‘বাবা বড় ভাইয়া আর আনায়ার যেহেতু মত নেই আমি আর এ বিষয়ে কথা বলছিনা আমার বুঝা উচিত ছিলো আনায়া কে নিয়ে কথা বলার আমি কেউ না।
আনায়া”আপু প্লিজ এভাবে বলিস না তুই তো আমার বড় বোন আমার ভালোমন্দ তুই ভালো বুঝবি।
বাবা তোমার যা ভালো মনে হয় আমার আপত্তি নেই।
ইকরাম -তুই ও কি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস না কি এক মিনিটে কথার ধরণ বদলে গেলো।
অবশ্য আবেগ হলে আমার ও আপত্তি নেই।
আইজান -সকলের যখন মত আছে তাহলে বিয়ের কথাবার্তা এগিয়ে নেয়া যাক।
ইনায়া তুমি আবেগকে বলো ও ওর মা বাবা কে নিয়ে আসার জন্য।
ঠিক আছে আমি আজ রাতে কথা বলবো।
বাবা-তোমরা আজ চলে যাবে।
‘জ্বি বাবা।
-আচ্ছা যা ভালো বুঝো।
সন্ধ্যের সময় ইনায়া রেডি হয়ে রুম থেকে বের হওয়ার আগেই আনায়া এসে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে।
ইনায়া বেশ অবাক হয়। কোনদিন আনায়া ইনায়াকে জড়িয়ে ধরেনি।
ইনায়া আনায়াকে আদর করতে চাইলে ও আনায়া ইনায়াকে সহ্য করতে পারতো না।
-কি রে পাগলি খুব খুশি লাগছে।
‘আপু থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।
-ওকে ওকে বোনটি তোর সুখে আমি খুশি।
আইজান ইনায়াকে ডাক দিতে ইনায়া বেড়িয়ে যায়।আবার পিছন থেকে ইনায়াকে ডাক দেয় আনায়া।
-আপু একটা কথা ছিলো।
‘হ্যা বল।
-তুই কি ওই ডাইরি পড়েছিলি।
‘না রে তুই তো বললি মন খারাপ হলে পড়তে।
-তাহলে প্লিজ৷ পড়িস না।
‘কেনো রে।
-প্লিজ পড়িস না।
‘আচ্ছা।
আইজান ইনায়া বেড়িয়ে যায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।
আইজান গাড়ি চালাচ্ছে।আর এক হাত দিয়ে ইনায়াকে জড়িয়ে আছে।
-আমি কি গাড়ি থেকে পরে যাবো না কি।
‘আমার বেবি বউ পরে গেলে আমার কি হবে তার চাইতে আগলে রাখাই ভালো।
ইনায়া হেসে আইজানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
দু দিন পার হয়ে গেলো আবেগ ইনায়ার ফোন তুলছে না।তাই বাধ্য হয়ে ইনায়া অরিত্রি কে ফোন করলো।
অরিত্রি বললো ও কিছুই জানে না আবেগের ব্যাপারে। আবেগ আনায়ার সাথে দেখা করতে গেলো ওর কলেজে।
আনায়া আবেগ কে দেখে খুশিতে পাগল। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
আবেগ ওকে গাড়িতে উঠতে বললো।আনায়া ও উঠে গেলো।
পার্কের বেঞ্চে বসে আছে ওরা।
-তুমি সব জেনে ও এরকম কেনো করলে।
‘আমি কিচ্ছু করিনি আবেগ বিশ্বাস করো। আপু কিভাবে জেনে গেছে।
-খুব কি দরকার ছিলো আমার ছবি বইয়ের ভিতরে রাখার। আমার তো মনে হয় তুমি ইচ্ছে করে ইনায়াকে দেখানোর জন্য আমার ছবি বইয়ে রেখেছিলে।
‘আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আবেগ।তুমি বুঝার চেষ্টা করো আমি সেই ছোটবেলা থেকেই তোমায় ভালোবাসি।
-আমি বাসি না আমি শুধু ইনায়াকে ভালোবাসি।
‘ইনায়া ইনায়া ইনায়া সবার ভালোবাসা ইনায়া বাবা,মা,ভাইদের সবার ভালোবাসা একাই ওই ইনায়া পেয়েছে। আমি কম কিসে এই আবেগ তাকিয়ে দেখো তোমার ইনায়ার চাইতে আমি হাজার গুণ সুন্দরী। কিসে কমতি আমার কিসে কমতি।
‘চিল্লিয়ে কথা বলো না এইটা পাবলিক প্লেস।আমি তোমাকে শুধু জানিয়ে গেলাম আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবো না।
ইনায়া ছাড়া কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না।
আনায়া আবেগের শার্টের কলার চেপে ধরে।
-ইনায়ার জন্য এতো পাগল কেনো তুই বল ওকি তোর সাথে বেডে গিয়েছিলো। বেড পার্টনার হিসাবে ও কি খুব ভালো।
এবার আর আবেগ মাথা ঠিক রাখতে পারেনি তিন-চারটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় আনায়ার গালে।
সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
আনায়া চোখের জল মুছে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলছে।
তোর দূর্বলতা ইনায়াকে দিয়ে তোকে আমি আমার করে ছাড়বো।
ইটস মাই প্রমিজ মিঃ আবেগ।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
২০
আনায়া কেঁদে কেঁদে ইনায়াকে ফোন করলো।
‘আপু রে এই আপু আমি তোর কি ক্ষতি করেছিলাম রে।তুই কেনো এমন করলি আমার সবকিছু শেষ করে দিলি।
-আনায়া আমি কি করেছি বোন প্লিজ বল।
‘তুই আমাকে স্বপ্ন দেখালি আবেগের সাথে বিয়ে দিবি।
-হ্যা আবেগ তোকে বিয়ে করবে তো।
‘আবেগ আমায় বিয়ে করবে না রে আপু।আমি সুইসাইড করবো বিশ্বাস কর আমি আবেগ কে না পেলে মরে যাবো।
-আবেগ তোকে ভালোবাসে তাহলে বিয়ে করবে না কেনো।
‘জানিনা আমি কিচ্ছু জানিনা।আমি মরে গেলো মা,বাবা কে দেখে রাখিস।
-পাগলের মতো প্রলাপ বকিস না।আমি দেখছি কি করা যায়।
বাসায় যা আমি ও দেখবো আবেগ তোকে বিয়ে না করে কোথায় যায়।
‘আপু রে আমি জীবনে তোর কাছে কিচ্ছু চাইনি মা,বাবা, ভাই সবার ভালোবাসা একাই তুই পেয়েছিস প্লিজ আপু আমায় আবেগকে দিয়ে দে।
-কান্না থামা আমি দেখছি।
‘প্রমিজ কর আবেগের সাথে আমার বিয়ে দিবে।
-প্রমিজ।
ফোন রেখে ইয়াহু বলে চিৎকার করে উঠলো আনায়া।মূহুর্তে মাথায় আরেকটা শয়তানি আসলো।
ফোন বের করে আইজান কে কল দিলো।
-ভাইয়া আপনি এই মুহুর্তে আমার সাথে দেখা করুন।
‘কোথায়।
লোকেশন বলে পার্কের বেঞ্চে বসে রইলো আনায়া।
মিনিট পনেরো পরে আইজান চলে আসলো।
-তা কি এমন জরুরি তলব শ্যালিকা।
‘জরুরি তলব বলেই তো ডেকে আনলাম।
-তাহলে শুনি বলুন।
আনায়া উঠে একটা মাটির ঢিলা হাতে নিলো হেটে হেটে লেকের সামনে গিয়ে ঢিল ছুড়ে মারলো।
আইজান ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
-আপনি তো আপুকে অনেক ভালোবাসেন তাই না।
‘হ্যা অনেক ভালোবাসি।
-যদি আপু আপনার জীবন থেকে চলে যায় কি করবেন।
‘কি আবুলতাবুল কথা বলছো।ওকে আমি কখনো যেতে দিবো না।
-তাহলে যে আমার কথা শুনতে হবে।
‘তোমার কথা আমি কেনো শুনবো।
-তাহলে তো আপনার মুখোশ আপুর সামনে খুলে দিতে হয়।
‘আমার মুখোশ মানে।
-আমি সব জানি দুলাভাই আবেগের দেয়া চিঠি নিজের নামে চালানো,আবেগের রক্ত নিজের বলে চালানো আর নারী দের প্রতি আপনার যে দূর্বলতা সেগুলো প্রমাণ সহ আমার কাছে আছে। একবার যদি এগুলো আপনার ওয়াইফ জানতে পারে কি হবে ভেবে দেখছেন।
‘ত ত তুমি এসব কি বলছো।
-ইনায়ার কিন্তু অনেক জেদ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে কারো ক্ষমতা নেই ওকে ফিরিয়ে আনার।
‘কি করতে হবে বল।
-আবেগ আমার আবেগ চাই।
‘আমি কি করতে পারি।
তেমন কিছু না যা করার আপু করবো শুধুমাত্র আপুকে হেল্প করতে হবে। ঠিক ক আছে আমি হেল্প করবো।প্লিজ ইনায়া কে কিছু বলো না আমি ওকে খুব ভালোবাসি।
‘আমার কাজ হয়ে গেলে কিছুই বলবো না।
*পুরোদিন অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে ইনায়া।আবেগের কোনো খবর নেই।এদিকে টেনশনে ইনায়ার অবস্থা খারাপ আনায়া যদি খারাপ কিছু করে বসে।
এভাবে দু দিন পেরিয়ে গেলো ইনায়া আনায়াকে বারবার বুঝাচ্ছে আনায়া খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।রাতে ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে না।
আনায়ার চিন্তায় ইনায়া অস্থির।
আইজান ইনায়াকে ক টেনে পাশে বসালো।
-আমার মিষ্টি বউয়ের এই অবস্থা কেনো চুল এলোমেলো মুখে চিন্তার ছাপ কি হয়েছে বাবুই আমাকে বলো।
-আইজান, আবেগ না কি আনায়াকে বিয়ে করবে না।এদিকে আনায়া সুইসাইডের প্লান করছে।
‘কি আবেগ বিয়ে করবে না তাহলে প্রেম করছিলো কেনো
-সেটাই বুঝতে পারছিনা।আমার ফোন রিসিভ করছে না আইজান আমি কি করবো। বাড়িতে বাবার সাথে কথা বলছি এবার মুখ দেখাবো কি করে।
‘চলো।
-কোথায়।
‘আবেগের বাড়িতে।
-কি।
‘হ্যা বাড়িতে গেলে ওকে পাবে।কোনো জিনিস নিয়ে আমার বউ টেনশন করবে আমি তা হতে দিবো না।
আর এদিকে আনায়া আমার ছোট বোনের মতো ওর জীবন শেষ হতে আমি দিবো না।
-আইজান থ্যাঙ্কিউ।
‘দূর পাগলি চলো।
ইনায়া আর আইজান দুজন মিলে আবেগের বাড়িতে গেলো।ড্রইংরুমে বসে ওরা গল্প করছে আবেগের মা,বাবার সাথে।
আবেগ রুমে ঘুমাচ্ছে।কাজের মেয়েকে দিয়ে ওকে ডেকে পাঠানো হলো।
কিছুক্ষণ পর আবেগ ড্রইংরুমে এসে ইনায়াকে দেখে চমকে উঠলো।
-সরি আংকেল আন্টি আমার কিছু জরুরি কথা আছে আবেগের সাথে আমি কি ভিতরে যেতে পারি।
‘আরে মেয়ে যাও।
*আবেগ রুমে গিয়ে খাটে বসে রইলো।ইনায়া এসে ওর পাশে বসলো।
-এসব কি হচ্ছে আবেগ।
‘কি সব।
-তুই নাকি আনায়াকে বিয়ে করবি না তাহলে ভালোবেসেছিলে কেনো।
‘তুই কিছুই জানিস না।
-ঝগড়া করেছিস ওর সাথে।দেখ রিলেশনে ঝগড়া হতেই পারে।তাই বলে হুট করে এরকম ডিসিশন নেয়ে উচিত না।
আনায়া তোকে ভীষণ ভালোবাসে।
-এসব কথা আমি শুনতে চাইছি না আর আমি আনায়াকে ভালোবাসি না।
‘প্লিজ দোস্ত বুঝার চেষ্টা কর আনায়া তোকে না পেলে মরে যাবে।
‘প্লিজ ইনায়া তুই এখন যেতে পারিস।
ইনায়া হাতজোড় করে আবেগের সামনে বসে পড়লো।
-আবেগ আমি তোর কাছে মিনতি করছি।তোর পায়ে ধরে বলছি এভাবে আমার বোনকে মরার পথে এগিয়ে দিস না।
‘ইনায়া।
-প্লিজ আবেগ প্লিজ।
আবেগ তাকিয়ে দেখে ইনায়া হাতজোড় করে ফ্লোরে বসে কান্না করছে।
ওকে এভাবে দেখে আবেগের ভিতর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
-তুই খুশি হবি আমি আনায়াকে বিয়ে করলে
খুব খুশি হবো খুব।
-তাহলে কালই বিয়ে করবো।
তুই বাড়িতে গিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা কর।
‘থ্যাংকস আবেগ।
ইনায়া খুশিতে ছুটে বাইরে এসে আইজানকে বললো। আবেগ ওর মা,বাবার সাথে কথা বলছে রুমে।
ওর মা,বাবা ও রাজী হয়ে যায়।
অরিত্রি কে আবেগ ফোন দিলো।
-হেই দোস্ত কাল আমার বলি তোরা যেভাবে পাটাবলি দেস সেইভাবে ইনায়া আমাকে বলি দিবে রে।
‘কি বলছিস।
-হ্যা রে কাল আনায়ার সাথে আমার বিয়ে।
এই কথা শুনা মাত্র অরিত্রির কানে বাজ পড়লো।চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়তে শুরু করলো।কাঁপাকাঁপা কন্ঠে অরিত্রি বলে উঠলো।
-কংগ্রেস।
চলবে
চলবে