আবছায়া
Writer::প্রিয়া
৩৯
মেঘ জমেছে মনের রাজ্যে
আকাশ ভীষণ একলা
নেই সেখানে তারার মেলা
মনে স্বপ্ন ভাঙ্গার যন্ত্রণা।
ডাইরির পাতা খুলে মনের যন্ত্রণা লিখতে বসেছে ইনায়া।কলমে শক্তি নেই লেখার। ডাইরি বন্ধ করে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে সত্যি সত্যি আকাশে মেঘ জমেছে।
মারজান ঘুমিয়ে আছে ছাদে চলে গেলো ইনায়া এই একটা জায়গা যেখানে কিছুক্ষণ নিরিবিলি বসা যায়।
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে বাসার পিছনের খোলা মাঠ বাচ্চারা খেলা করছে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।।
কারো ফিসফিস শব্দ শুনে চারিদিকে তাকায় ইনায়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
হঠাৎ চোখ গেলো ওদের পাশের ছাদের সেই চিলকুটের ঘরটায়।
স্পষ্ট একটা ছেলে একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসছে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো একজোড়া কাপল রোমান্সে ব্যস্ত।
ছেলেটা মেয়েটার কোমর জড়িয়ে আছে।
মেয়েটাকে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে হয়তো কোথাও দেখেছিলো।
কিন্তু ইনায়ার অবাক লাগছে রুম ছেড়ে কেউ এই গরমে ছিলকোঠার ঘরে রোমান্স করতে আসছে কেনো।
ওরা কি প্রেমিক প্রেমিকা হয়তো সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানে এসেছে।
মেয়েটা কত বোকা কত সহজে একটা ছেলেকে বিশ্বাস করে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছি কি পরিণতি হবে সেটা ক বুঝতে পারছেনা।
ইনায়া ফোন বের করে জোরে জোরে কথা বলে এগিয়ে যাচ্ছে যাতে ওরা শুনতে পায়।
ইনায়ার কথা বলার শব্দ শুনে মেয়েটা দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।
পিছন থেকে ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠলো রূপস আস্তে যাও।
মেয়েটা চলে যেতেই ছেলেটা বাইরে আসলো। হালকা পিংক রঙের টিশার্ট কালো জিন্স পরা ছেলেটা দেখতে অনেক স্মার্ট কিন্তু মোটেও ভদ্র না আইজানের মতো শয়তান মনে হচ্ছে।
-এই যে মিস আসার আর সময় পেলেন না।
‘ঠিক বুঝলাম না আমার ছাদে আমি কখন আসবো সেটা কি টাইমটেবল মেনটেইন করে আসতে হবে।
-সেটা বলছি না বলছি আমার কাজে বাঁধা দিলেন।
‘কি এমন মহৎ কাজ করছিলেন বলুন তো আমি আসায় বাঁধা পড়লো।একটা মেয়ে দৌড়ে চলে গেলো কেনো।
এই ছিলকোঠের ঘরে মেয়েটা কি করছিলো।
-সেটাই তো আপনি আসায় রূপ্স চলে গেলো।
‘কে হয় আপনার।
-বউ হয়।
‘রিয়েলি বউ হয় তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে এসব কেনো।
-সেটা আপনার না জানলে চলবে নেক্সট আমাদের দেখলে ছাদে আসবেন না।
‘ওহ রিয়েলি আমার ছাদে আমি আসবো কখন আসবে কখন যাবো সেটা আমার পারসোনাল ব্যাপার নিজেরা সংযত হও।
-দূর তবে বলে রাখি ভালো চাইলে আসবে না।
কথাগুলো বলে ছেলেটা চলে গেলো।
ইনায়া আবার ভাবছে কতোটা নির্লজ্জ অভদ্র ছেলে।কিন্তু মেয়েটা কে রূপ্স নামটা কেমন জানি লাগছে।
এসব ভাবতে ভাবতে ইনায়া নিচে চলে গেলো মারজানের উঠার সময় হয়ে গেছে।
**ব্যস্ততার জন্য আইজানের ফুফু এতোদিন কল দিতে পারেননি অনেকদিন পর আজ উনি কল দিয়েছেন।
আইজান বড্ড চিন্তায় আছে কল ধরে ইনায়ার কথা জানতে চাইলে কি বলবে।
ফোন হাতে নিয়ে ওর মায়ের রুমে গেলো।
-মা ফুফি ফোন দিচ্ছেন।
‘কথা বল।
-ইনায়ার কথা জানতে চাইলে কি বলবো।
‘তুই কি বলবি সেটা আমি কি করে জানবো।
-তুমি কথা বলো।
‘আমি কি বলবো।
-তুমি বলবে ইনায়া একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে মারজানকে নিয়ে।
‘এতো বড় মিথ্যা কথা বলবো।
-মনে হচ্ছে জীবনে কোনদিন মিথা বলোনি।এই কথা না বলবে রুটি বন্ধ হয়ে যাবে।ভাবতে পারছো সত্যি জানলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবেন।
আইজানের মা ফোন রিসিভ করলেন কুশল বিনিময় করার পর হুট করেই কান্না শুরু করলেন।
ফোনের অপর পাশ থেকে আইজানের ফুফি কান্নার কারণ জানতে চাইছেন।
-আপা কি বলবো এতো ভালো মেয়ে জেনে আইজান ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো।শেষ পর্যন্ত আমার ছেলের সাথে এতো বড় প্রতারণা করলো।
‘কি করেছে তুমি ইনায়ার কথা বলছো।
-ছেলেটা লজ্জায় তোমার ফোন রিসিভ করেনি কোন মুখে কথা বলবে।
‘দেখো যা বলার সোজাসাপ্টা বলো হেয়ালি ভালো লাগছেনা।
-আপা ইনায়া পালিয়ে গেছে।
‘কি?
-আমাদের পাশের বাসার একটা ছেলের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো আইজান হাতেনাতে ধরে ওদের।আমার ভালো ছেলেটা সব জেনে ও মাফ করে দেয়।
কিছুদিন পর ঘুম থেকে উঠে আর মেয়েটাকে পাওয়া যায় না।আমাদের বুকের মানিক মারজানকে নিয়ে ওই ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।
এতো বড় শকড উনি সহ্য করতে পারেননি উনার হাত থেকে ফোন পরে যায়।
ফিসফিস করে শুধুই এই কথা বলছেন ইনায়া এই কাজ করতে পারেনা।
আইজান ফোন কেটে দিলো মায়ের নাটকে অনেক খুশি হলো আইজান।
মা ছেলের কাছে ইবলিশ শয়তান হার মানতে বাধ্য।
কিছুক্ষণ পরেই রূপসা চলে আসলো একগাদা শপিংব্যাগ হাতে নিয়ে।
আইজান তখন হুইল চেয়ারে বসে কাপড় গুছিয়ে রাখছিলো।ব্যাগগুলো এনে খাটের উপর রেখে একপাশে শুইয়ে পড়লো রূপসা।
-অনেক টায়ার্ড লাগছে আজকে। তুমি খেয়েছো আইজান।
‘হুম খেয়েছি কি কি শপিং করলে।
-অনেক সুন্দর সুন্দর ড্রেস এনেছি দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি।
এক এক করে অনেকগুলো ড্রেস দেখালো রূপসা।
-শুধু নিজের জন্য কিনলে আমার জন্য কিছু না।
‘তোমার লাগবে আগে বলবে না আমি কি করে জানবো তোমার কি লাগবে।
-আমি তো অনেকদিন বাইরে যায় না তাই কেনা হয় না।
‘আচ্ছা ঠিক আছে অন্যদিন গিয়ে নিয়ে আসবে।
আইজানের খারাপ লাগলে ও সেটা রূপসাকে বুঝতে দিলো না।
-তুমি কফি খাবে আইজান।
‘হুম খেতে পারি।
রূপসা দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার করে আইজানের মাকে বলছে।
-আন্টি আমাদের জন্য দু কাফ কফি দিয়ে যাও।
আইজান রূপসার দিকে তাকিয়ে আছে।
-মাকে বলছো কফি বানানোর কথা নিজে বানিয়ে নিতে।
‘দু কাফ কফি বানাতে তোমার মায়ের হাত ভেঙ্গে যাবে না আইজান।এই গরমে বাইরে থেকে এসে আবার কফি বানাবো কি ভাবছো আমি মানুষ না।
-উফফ বাবা রেগে যাচ্ছো কেনো।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো মা কফি আনছেন একসাথে খাবো।
রূপসা ওয়াসরুমে চলে গেলো আইজান মনে মনে ভাবছে।
তোর বাবার এতো বড় প্রোপার্টি আর তার একমাত্র উত্তরসূরি তুই তাই তোকে এতো প্রশ্রয় দিচ্ছি আগে সব হাতিয়ে নেয় তারপর মজা বুঝবে।
দু কাফ কফি এনে ছেলের সামনে রেখে ছেলের মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলেন আইজানের মা।
**অরিত্রি শ্বশুর শাশুড়ীকে নিয়ে ভালোই আছে আবেগ ফোন দিয়ে মা-বাবার সাথে কথা বলে আড়ালে দাঁড়িয়ে কেবল আবেগের কথা শুনে অরিত্রি।
একবারের জন্য ভুল করে ও আবেগ অরিত্রির কথা জানতে চায় না।কষ্ট হলেও আশায় বুক বেঁধে আছে অরিত্রি। পাপের যদি ক্ষমা থাকে তবে ক্ষমা করে একদিন আবেগ ফিরে আসবে।
**ছয় মাসের মারজান খিলখিল হাসে হাটুতে ভর দিয়ে পুরো ঘর ছুটে বেড়ায়।
নানা-নানির এই বয়সে খেলার সঙ্গী হয়েছে মারজান।তিনজন বুড়ো বুড়ি সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে মারজান কে।
মা-বাবার আর ইসহাকের কথায় আবার অনার্স থার্ড ইয়ারে ভর্তি হয়েছে ইনায়া।
পুরোনো ক্ষত গুলো শুকাচ্ছে ধীরেধীরে।
ইসহাক আর ইনায়া দুজনেই নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।অফিসে দৌড়ঝাঁপ অনেক ঝামেলা কুলাতে হচ্ছে দুজনকে।
সরকারি প্রজেক্ট এর মাধ্যমে অনেক দুস্ত মহিলা,বিধবা,ডিভোর্সি সকলের অনেক উন্নতি সম্ভব।এই কাজের জন্য দিনরাত করে যাচ্ছে ইসহাক, ইনায়া।
অনেক কর্মী দরকার তাই নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ওরা। আজ ইন্টারভিউ আছে সকাল সকাল নাস্তা করে ভাই-বোন বেড়িয়ে গেলো
ইন্টারভিউ বোর্ডে ওরা তিনজন বসে আছে এক এক করে অনেকের ইন্টারভিউ নেয়ার পর যে মানুষটা ইন্টারভিউ দিতে আসলে সে আর কেউ না ওদেরই বড় ভাই ইকরাম।
ইনায়া আর ইসহাককে এখানে দেখার জন্য ইকরাম মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
ইসহাক ইন্টারভিউ না নিয়ে বের করে দিতে চাইলে ইনায়া উনাকে বসতে বলে।
অনেক প্রশ্নের ভীড়ে ইনায়া জানতে চাইলো।
-এতো সব সম্পত্তি বিজনেস থাকা সত্ত্বেও চাকরির প্রয়োজন কেনো।
ইকরাম মাথা নিচু করে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে উত্তর দিলো।
– অন্তস্বত্তা স্ত্রীর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরেছে প্রতি সপ্তাহে নতুন রক্ত দিতে হচ্ছে ক্যামোথ্যারাপি দিতে হচ্ছে বাড়ি ছাড়া প্রায় সবকিছু শেষের পথে স্ত্রী,সন্তানকে বাঁচানোর জন্য চাকরির প্রয়োজন।
ইকরাম কথাগুলো বলে চোখের কোণে জল নিয়ে বেড়িয়ে গেলো হয়তো অনুশোচনা নয়তো চাকরি হবেনা এই ভেবে।
ইসহাক রাগের দৃষ্টিতে তাকালে ও ইনায়া বড় ভাইয়ের কষ্টে কিছুটা আপ্লূত হয়ে পরে।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
৪০
ইনায়া বাসায় ফিরে ইকরামের দুরবস্থার কথা জানায়।ইসহাক চায় না ইকরাম ওদের কোম্পানিতে চাকরি করুক।
যতোই হোক মায়ের মন ছেলের বিপদের কথা শুনেই কান্না জুড়ে দিয়েছেন।ইনায়ার বাবা কিছু না বলে উঠে চলে গেলেন।
পুরোরাত ইনায়া ঘুমাতে পারেনি ভাবছে পাপের শাস্তি অনেক ভয়ানক। তাহলে আইজান শাস্তি পাবে হয়তো এর চাইতে ভয়ানক শাস্তি অপেক্ষা করছে।
মারজান কেঁদে উঠলো ইনায়া মারজান কে কোলে নিয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে।
এক সময় শান্ত হয়ে ছেলেটা ঘুমিয়ে গেলো। মারজানের পাশে ইনায়া ঘুমাচ্ছিলো তখনি ওর মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে জেগে উঠলো।
তাকিয়ে দেখে ওর মা মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছেন আর আকুল নয়নে তাকিয়ে আছেন।
-মা তুমি ঘুমাওনি।
‘না ঘুম আসছিলো না রে তাই ভাবলাম তোর সাথে গল্প করি।
-বাবা ঘুমিয়ে গেছেন।
‘হ্যা
-আচ্ছা তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসি ভালো লাগবে।
‘না চা খাবো না। তোকে একটা অনুরোধ করবো মা।
-আমি জানি মা তুমি কি বলবে।কিন্তু মা ছোট ভাইয়া আর বাবার অনুমতি ছাড়া আমি বড় ভাইয়াকে চাকরি দিবো কি করে।
‘ওরা পাষাণ ওরা মায়ের মন বুঝবে না আমার ছেলে কত কষ্টে আছে ওর চাকরি দরকার।
-মা ভাইয়া কি তোমাদের কষ্ট বুঝেছিলেন।
‘সন্তানেরা এতো বুঝেনা তাই বলে কি মা-বাবা সন্তানের কষ্ট বুঝবে না।
-মা আমি সকালে ছোট ভাইয়ার সাথে কথা বলবো তুমি চিন্তা করো না।
‘তোর ছোট ভাইয়া এতোকিছু বুঝবে না।তুই কথা দে আমার ছেলেকে চাকরি দিবি।
-মা।
‘ওহ তুই তো সবার মতোই কি বুঝবি।
ইকরাম আমার বড় ছেলে কত আদর,যত্ন করে ওকে বড় করেছি।
‘মা রাগ করছো কেনো।
‘ঘুমিয়ে থাক আমি যাচ্ছি।
-মা শুনো আমি ভাইয়ার চাকরির ব্যবস্থা করে দিবো এবার খুশি তো।
‘সত্যি।
‘সত্যি মা।
-আয় আমার কোলে ঘুমা আমি তোর মাথায় হাত ভুলিয়ে দেই।
‘লাগবে না মা তুমি ঘুমাও গিয়ে প্রেশার বেড়ে যাবে না হয়।
-তুই ঘুমানোর পর আমি ঘুমাবো।
ইনায়া আর কিছু বলেনা চুপটি করে মায়ের কোলে শুইয়ে থাকে। দরজার আড়াল থেকে সড়ে গেলেন ইনায়ার বাবা এতোক্ষণ মা মেয়ের সব কথা শুনেছিলেন।
রুমে গিয়ে চশমাটা খুলে ঝাপসা চোখ মুছে নিলেন।
ইকরাম যখন খুব ছোট তিন চার মাস বয়স তখন পুরোরাত কান্না করতো আর দিনে ঘুমিয়ে থাকতো।
পুরোদিন কাজ করে ছেলেকে পুরোরাত কোলে নিয়ে হাটাহাটি করতেন ইনায়ার মা।
একবার খেলতে গিয়ে ইকরামের পা ভেঙে যায় কত রাত কত দিন যে ঘুমাতে পারেনি ওর মা-বাবা।
বাবার হাতের আঙ্গুল ধরে গুটিগুটি পায়ে স্কুলে যেত ইকরাম।কখনো আইসক্রিম তো কখনো চকলেট বায়না ধরতো টাকা না থাকলে ধার করে এনে দিতেন।
পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সবার চাইতে বেশি যত্ন ইকরাম পেয়েছিলো।
সেই ছেলে মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে প্রতারণা করলো।
এক মেয়েকে হারিয়ে ভিতরটা ফাঁকা হয়ে আছে আবার অন্যছেলের বিপদ শুনে ওর সব অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন মনে মনে।
ভাবতে ভাবতে জল মুছে শুইয়ে পড়লেন ইনায়ার বাবা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইনায়ার মা নাস্তা বানিয়ে দিলেন ছেলেমেয়ে খেয়ে অফিসে যাবে।
নাস্তা খেয়ে উঠে যাওয়ার সময় আড়ালে ডেকে নিয়ে ইনায়াকে মনে করিয়ে দিলেন যাতে ইকরামকে চাকরিটা দেয়।
ইনায়া অফিসে গিয়ে ইসহাকের ডেস্কে গেলো।
-ছোট ভাইয়া তোকে কিছু বলার ছিলো।
‘ জয়েনিং লেটার পাঠিয়ে দে।
-সত্যি।
‘হুম কাল রাতে বাবা গিয়েছিলেন আমার কাছে অনুরোধ করলেন যাতে উনার বড় ছেলের চাকরিব হয়।
-মা গিয়েছিলেন আমার কাছে।
-তাই, তার মানে মা-বাবা ভাইয়াকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
‘ছোট ভাইয়া সত্যি বলতে সন্তান যতোই অপরাধ করুক না কেনো মা-বাবা সে সব মনে রাখেন না।
এজন্যই তো মা-বাবার স্থান সবার উপরে।
-আমি মনে মনে ডিসিশন নিতে পারছিলাম না কি করবো।
মা-বাবা টেনশন কমিয়ে দিলেন যাক ভালোই হলো ভাইয়া আমাদের কাছেই থাকবেন বিপদে উনার পাশে থাকতে পারবো।
ভাইয়া তো খুব ভালো ছিলেন রে যখন যা চেয়েছি যে করেই হোক এনে দিতেন।
আমাদের সেই ভাইয়া এতো বদলে গেলেন ভাবি আসার পর থেকেই।
-মেয়েরা চাইলে একটা সংসার সামলাতে পারে আবার ধ্বংস করতে পারে।আমি কত চেষ্টা করলাম সংসার করার কিন্তু পারলাম না।
আমি ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি
ইনায়া ফোন করে ইকরাম কে চাকরি হওয়ার সংবাদ জানালো।
ইকরাম ছোট করে ধন্যবাদ ছাড়া কিছুই বলতে পারলোনা লজ্জায়।
ইনায়ার কাছে থেকে ফোন রেখে ওর বউ রাহেলার কাছে গেলো।
আগের সুন্দরী রাহেলার সেই সৌন্দর্য নেই চুল পরে গেছে আট মাসের প্রেগন্যান্ট পেট ফুলে গেছে চোখের নিচে কালি সারা শরীরে পানি।
ইকরাম জুসের গ্লাস রাহেলার হাতে দিয়ে বললো।
-পরিবার ছাড়া এ জগতে আর কেউ আপন না রাহেলা।যে মা-বাবা, ভাই-বোনকে ঠকালাম আজ তাড়াই আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
‘চাকরি হয়ে গেছে না তোমার।আমার জন্য আজ তোমার ভাই-বোনের কাছে নত হতে হলো তোমাকে।
-তুমি মৃত্যু শয্যাশায়ী রাহেলা এখনো তোমার ভিতর হিংসে দূর হলো না।
তোমার কথামতো আমার মা-বাবাকে ঠকিয়ে ছিলাম।
তুমি কি এখনো বুঝতে পারছো না তুমি পাপের শাস্তি পাচ্ছো।
‘ইকরাম তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে আমি তো আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বলেছিলাম।
-সব টাকা যখন তোমার ডাক্তারি করাতে গিয়ে শেষ হয়ে গেলো কোথায় তখন তোমার বাপ-ভাই তো একটা পয়সা দিয়ে হেল্প করলো না।
আর যাদের সব শেষ করে আমি নিঃস্ব করে দিয়েছিলাম তারা পাশে থাকলো।
মা-বাবার সামনে দাঁড়ানোর মুখ নেই আমার তবুও যদি ও ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাই উনাদের পায়ের নিচে মাথা টুকে মরবো।
রাহেলা আর কিচ্ছু বললো ইকরাম কান্না করতে করতে উঠে গেলো।
*পরেরদিন ভোরে রাহেলাকে নাস্তা খাইয়ে বুয়ার কাছে রেখে অফিসে গেলো।
ইনায়া, ইসহাক তখন ডেস্কে কাজ করছিলো।
-ভিতরে আসতে পারি।
বড় ভাইয়াকে দেখে ইনায়া, ইসহাক দুজনেই দাঁড়িয়ে যায়।
অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ইকরাম ওদের কক্ষে গেলো।
বড় ভাইয়ার মাথা নত দেখে চোখ ঝাপ্সা হয়ে যায় ওদের দুজনের।
-আপনার যদি আমার কাজ বুঝিয়ে দিতেন আমি কাজ শুরু করতাম।
ইসহাক-ইনায়া তুই উনাকে কাজ বুঝিয়ে দে।
ইসহাক এক মিনিট ও দাঁড়ালো না বেড়িয়ে গেলো।ইনায়ার খুব আনইজি লাগছে যে ভাইয়ার সামনে মাথা তুলে তাকাতে ভয় পেতো সেই ভাইয়া আজ ওদের সামনে মাথা নিচু করে আছে।
**আইজান জানতে পারলো পাবেলের অফিস,বিজনেস সব ইনায়া দেখাশুনা করছে এই খবর পেয়ে যেনো আইজান খুশিতে আত্মহারা।
মনে মনে শয়তানের মতো ফন্দি বের করছে এবার ইনায়াকে খুব বড় শাস্তি দিয়ে ছাড়বে প্লান করে অট্রহাসি দিলো আইজান।
চলবে
চলবে