আবছায়া
writer::প্রিয়া
৪০
আইজানের পায়ের ব্যান্ডেজ খুলা হয়ছে আগের মতো স্বাভাবিকভাবে দ্রুত হাঁটাচলা করতে পারে না তবে হাঁটতে পারে।
নিজের কোম্পানিতে এসে সকল ক্লাইডের সাথে মিটিং করছে কিভাবে আগের অবস্থায় কোম্পানিকে ফিরিয়ে আনা যায়।
সে সময় জানতে পারলো পাবেলের কোম্পানি থেকে ওর সাথে আর কোনো লেনদেন করবে না।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে আইজান ভাবতে বসলো তাহলে ইনায়া ইচ্ছে করে ওর কোম্পানির সাথে ব্যবসায়ী লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে।
হা হা হা করেই হেসে উঠলো আইজান।কিছুক্ষণ পর পুলিশকে ফোন করলো।
– ইন্সপেক্টর সাহেব পাবেল সাহেবের কোম্পানিতে অবৈধ ব্যবসা হয়।
‘তার কি কোনো প্রমাণ আপনার কাছে আছে।
-অবশ্যই আছে প্রমাণ ছাড়া এতোবড় কথা আমি কি করে বলবো।
‘প্রমাণ সহ আপনি থানায় আসুন আমরা প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নিবো।
-আমি মিনিট ২০এর মধ্যে আসছি।
‘জ্বি আসুন।
ড্রাগস এর ব্যবসায়ীক সকল কাগজ বের করে আইজান থানায় গেলো।
কাগজ হাতে নিয়ে পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে গেলো আইজান।আনায়া আর পাবেলের বিয়ের কিছুদিন পর ওদের সাথে আইজানের দেখা হয় একটা শপিংমলে।
আনায়া দেখে ফিরে যেতে চাইলে আইজান ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
-আনায়া যা করে করেছে তোমার আপু করেছে তুমি আমার সাথে রাগ করছো কেনো।
‘আমি আপনাদের কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে চাই না।
-কিন্তু আমার কথা শুনো আমি তোমার ভালো চাই।
‘কি ভালো চান আপনি।
-আচ্ছা বসে কথা বলি।ইনি তোমার হাজবেন্ট পাবেল।
-হুম।
পাবেলের সাথে হ্যান্ডশেক করে কথা বলে ওরা পাশের একটা রেষ্টুরেন্টে গেলো।
আনায়ার সাথে কথা বলে বুঝলো ওরা তেমন ভালো নেই আর্থিক অবস্থা মোটামুটি।
আইজান জানে আনায়া কতোটা লোভী মেয়ে। তাই আনায়াকে হাতে নেয়ার জন্য বললো।
-আমি তোমাদের একটা উপকার করতে চাই ইনায়া বোন হয়ে বোনের জীবন নিয়ে খেললো। আমি সেটার জন্য আনায়ার পাশে দাঁড়াতে চাই।
‘কি উপকার করবেন আপনি।
-আমি তোমাদেরকে আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার বানাতে চাই।
-আমাদের তো কোনো ব্যবসা নেই।
-অল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারো আমি হেল্প করবো।
-আপনি হেল্প করবেন।
-আনায়া প্লিজ এভাবে কথা বলে আমাকে ছোট করো না।শত হোক তুমি আমার ওয়াইফের ছোট বোন। তোমার উপকারে আসতে পারলে আমার ভালোই হবে।
আনায়া আর পাবেল আলাদা কথা বলে দুজনেই রাজী হয়ে গেলো।
মায়ের গহনা বিক্রি করে আর বাবার রেখে যাওয়া টাকা দিয়ে আইজানের সাথে ব্যবসায় শরীক হয় পাবেল।
পাট শিল্প নিয়ে ওরা ছোটখাটো কোম্পানি খুলে।ভালোই চলছিলো মানুষ যতো পায় আরো চায়।তেমনি আনায়া পাবেলের লোভ বাড়তে লাগলো।
ওদের এই লোভ কে টোপ দিয়ে হিসেবে করলো আইজান।
-রাতারাতি বড়লোক হতে চাইলে একটা ছোট টিপস তোমাদের জন্য।
আইজানের কথা শুনে তো আনায়া, পাবেল খুশিতে গদগদ।
-কি কি তাড়াতাড়ি বলো।
‘দেখো সোজাসাপ্টা বলে দেয় আমি অবৈধ ব্যবসা করি।
-কি?
‘হ্যাঁ যদি তোমরা চাও তাহলে আমার সাথে হাত মেলাতে পারো পুলিশি কোনো ঝামেলা নেই।
এই ব্যবসা হয় আমার কোম্পানির আড়ালে নাম কোম্পানির ব্যবসা অন্যকিছু।
তেমনি তোমরা পাটের ব্যবসার আড়ালে ড্রাগসের ব্যবসা করবে।
প্রথমে আনায়া পাবেল ভয় পেলেও লোভ ছিলো চোখেমুখে তাই রাজী হয়ে যায়।
চলতে থাকে ওদের মাদকের ব্যবসা বিদেশ থেকে হিরোইন,ইয়াবা এমনকি মদ নিয়ে এসে পাটের ব্যবসার আড়ালে রমরমা বিজনেস করতে থাকে।
রাতারাতি তিনটি কোম্পানির মালিক হয়ে যায় ওরা।
সেদিনের প্লেন এক্সিডেন্ট ছিলো আইজানের জন্য খারাপ খবর।আনায়া, পাবেল ইতালি গিয়েছিলো সেখানকার ড্রাগস ব্যবসায়ী ওদের একজন ক্লাইন্ট এর সাথে মিটিং করতে।
কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট ওদের জীবন কেড়ে নিলো সাথে আইজানের খুব বড় লোকসান হলো।
আনায়া,পাবেলের মৃত্যুর পর ইনায়া যে ব্যবসা সামাল দিবে ভাবেনি আইজান।ওর প্লান ছিলো সবকিছু নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার।
ঠান্ডা মাথার খুনি আইজান ওর লোকসান করে দিলো ইনায়া। নিজের ওয়াইফ এই কথা বলে হু হু করে হাসছে আইজান।
ফাইল হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো পুলিশ স্টেশনে।
পুলিশের সামনে গিয়ে পাবেলের কোম্পানির আড়ালে থাকা সকল মাদকের ব্যবসার প্রমাণ পুলিশের হাতে দিলো।
পুলিশ সেগুলো নিয়ে ছুটলো ইনায়ার কোম্পানিতে।ইনায়া,ইসহাক তখন কাজে ব্যস্ত পুলিশ দেখামাত্র ওরা ভয় পেয়ে যায়।
এসবের কিছুই ইনায়া কিংবা ইসহাক জানে না।
-আপনারা এখানে কি জন্য এসেছেন।
‘পাটের ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাবেন পুলিশ সেটা জানবে না ভাবলেন কি করে।
-কি আজেবাজে কথা বলছেন আপনি আমরা এসবের কিছুই জানি না।
‘মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়ছেন।আইজান সাহেব আমাদের প্রমাণ দিয়েছেন আপনারা ড্রাগসের ব্যবসা করেন।
ইনায়া ‘আইজান কোন আইজান।
-এই যে আমি আইজান তোমার বর।
‘তুমি।
-হুম আসলে আমি সব সময় ভালো কাজের পক্ষে থাকি তাই এতো বড় অপরাধের প্রমাণ নিয়ে পুলিশের কাছে যেতো হলো।কি করবো বলো ন্যায়ের জন্য আমি কাউকে ছাড় দেয় না।যেমন এখন নিজের বউকে ছাড় দিলাম না।
-ভূতের মুখে রাম রাম ন্যায় কে ন্যায় কে অন্যায় সেটার প্রমাণ আমার কাছে ও আছে মিঃ আইজান।
-মানে।
‘মানে কি সেটা পুলিশ জানবে।
-স্যার আপনি ভিতরে আসুন এখানে আমাদের কর্মচারী কর্মকর্তা আছে অনেকেই উনাদের সামনে কথা বলতে চাইছি না।
আইজান- ঘুষ দিয়ে কি পুলিশের মুখ বন্ধ করে দিবে ইনায়া।
– ঘুষ দিবো নাকি আসল ক্রিমিনাল বের করবো সেটা সময় হলে দেখা যাবে।
ইনায়ার কথায় বেশ রহস্য খুঁজে পায় আইজান কি করতে চাইছে ইনায়া।
‘ইনায়া, ইসহাক ভিতরে চলে নিলে ইকরাম ওর ডেস্কের দিকে যায়।
ছোট করে ইনায়া বলে উঠে বড় ভাইয়া আমাদের সাথে ভিতরে চলো।
আনন্দে চোখে জল চলে আসে ইকরামের, অনেকদিন পর বড় ভাইয়া ডাক শুনতে পেয়েছে।
ইনায়া,ইসহাক ওরা নিজেদের কক্ষে চলে যেতেই আইজান পুলিশকে আড়ালে নিয়ে মোটা অংকের চেক সাইন করে দিলো।
পুলিশ অফিসার ইনায়া কিংবা ইসহাকের কোনো কথায় না শুনে ওদের এরেস্ট করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে ইকরাম পরেছে বিপদে কি করবে বুঝতে পারছে না।দুজনের মধ্যে কেউ একজন থাকলে হয়তো সামাল দিতে পারতো।
আজই জয়েন করে কোনো কিছুর আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা ইকরাম।
অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে সোজা বাসায় চলে যায় মা-বাবার সাথে কথা বলতে হবে।
বাসার নিচে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছে ইকরাম সাহস হচ্ছে না মা-বাবার মুখোমুখি দাঁড়ানোর ।
কলিংবেল বাজতেই ইনায়ার মা এসে দরজা খুললেন।বড় ছেলেকে দেখে থমকে গেলেন।
-মা।
ছেলের মুখে এতোদিন পর মা ডাক শুনে তৃপ্তি পেলে ও কাছে টেনে নিতে পারছেন না পিছন থেকে ইনায়ার বাবা জানতে চাইলেন কে এসেছে।
উনি সড়ে যেতেই ইকরাম ভিতরে আসে।ওর বাবা ও ছেলেকে দেখে চমকে উঠেন মুখ ফিরিয়ে নেন।
-বাবা
কথা নেই কারো মুখে।ফুফু ড্রইংরুমে আসতেই ইকরাম এগিয়ে যায়।
-ফুফুজান কেমন আছো।
‘হতছাড়া ছেলে তুই কেনো এসেছিস আমার বাড়িতে বেড়িয়ে যায়।নিজের মা-বাবার সাথে তুই প্রতারণা করেছিস তোর মতো ছেলের দরকার নেই।
-ফুফুজান মাফ চাওয়ার মুখ নেই আমার।আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
-দাঁড়িয়ে আছিস কোন মুখে মা-বাবার পায়ে পর না হয় বেড়িয়ে যা।
ইকরাম যেনো সাহস পেলো মূহুর্তের মধ্যেই বাবার পায়ে পরে গেলো।
ওর বাবা তাকাচ্ছেন না ইকরাম পা ছাড়ছেনা।
-ও বাবা মাফ করে দাও বাবা ছোটবেলায় কত অপরাধ করেছি মেরে শাসন করতে।
এখন কেনো মারতে পারলে না বাবা।তুমি কেটে,মেরে আমাকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে।
-ছোট ছেলেমেয়ে দের মেরে শাসন করা যায় বড়দের না।বউ আপন হয়ে যায় আর মা-বাবা পর।তুই কি করে পারলি তোর ভাই-বোনদের হক মেরে নিজের রাস্তা পরিস্কার করতে।
‘কত বড় ভুল করেছিলাম আমি জানি বাবা।তাই তো ইনায়া আর ইসহাকের ভাগের সম্পত্তি আমি ওদের নামে করে দিয়েছি।আমি ওদের অংশ বিক্রি করিনি বাবা।
নিজের ভাগের সব বিক্রি করে রাহেলার চিকিৎসা করাচ্ছি।তোমার বাসা তোমার নামে করে দিয়েছি বাবা।
-তোর মায়ের কাছে মাফ চা।
ইকরাম ছুটে মায়ের কাছে যায়।মায়ের পা ধরার আগেই উনি ইকরামকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
– নিশ্চয় ইনায়া তোকে পাঠিয়েছে।
‘আসল কথায় ভুলে গেছি এখানে এসে তোমাদের দেখে।
অফিসে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে ইকরাম।সব শুনে ওরা সবাই ভেঙে পরে।
ইনায়ার ফুফু কাঁদছেন।
-শেষ পর্যন্ত অমানুষ ছেলের পাপের শাস্তি আমার সহজ সরল ইনায়া আর ইসহাক পাবে কেনো।
‘ আনায়া এতো খারাপ কি করে হতে পারলো ছোট থেকেই মেয়েটা নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝলো না।
ওদের কথার মাঝেই অরিত্রি চলে আসে।সবার এমন অবস্থা দেখে সব জানতে চায়।সব শুনে অরিত্রি।
‘আইজান কি মেয়েটাকে কিছুতেই শান্তি দিবে না।না এবার আইজানকে শাস্তি পেতে হবে আমি ইনায়ার পাশে দাঁড়াবো যা যা করার সব করবো।
বড় ভাইয়া আমাকে নিয়ে থানায় চলুন আমি আমার পরিচিত উকিলকে ফোন দিচ্ছি।
ইনায়ার বাবা ও থানায় যেতে চাইলেন।উনি, ইকরাম,অরিত্রি সবাই মিলে থানার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলো।
**ইনায়া, ইসহাককে লোকাপে রাখা হয়ছে পুলিশ ওদের কথা শুনতেই চাইছেনা।
আইজান ইনায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
-তোমার রাগ আর তেজ দেখে না আমার প্রেমে পরতে মন চাইছে।ঠিক তোমার রাগের কারণে আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।তেজি মেয়ে আমার ভীষণ প্রিয়।
‘ বেড়িয়ে আসবো আমি তোকে মাফ করে দিয়েছিলাম তোর জীবন থেকে সড়ে এসেছিলাম কোনো ক্ষতি করতে চাইনি।চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারতাম কিন্তু কিছুই করিনি এবার তোর শাস্তি পেতেই হবে।
-উফফ কথার কি ঝাঁঝ পাগল হয়ে যাবো।শোনো তোমাকে ফ্রি-তে একটা উপকারের কথা বলি।
সব কিছু আগের মতোই হয়ে যাবে যদি তুমি রাজি থাকো।
প্লিজ ইনায়া আমার কাছে ফিরে আসো বড্ড মিস করি তোমায়।
আমরা আগের মতোই সংসার করবো।
-থুঁ।
এই আশা জীবনে ও করবি না।
-তাহলে আমার ছেলেকে আমি নিয়ে নিবো দরকার হলে আইনের মাধ্যমে আমি তোমার কাছ থেকে মারজানকে ছিনিয়ে নিবো।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
৪১
আইজান ছেলের কাস্টোরি চাইছে ইনায়া সেটা শুনে মোটেও ভয় পায়নি।যুদ্ধে নেমে ইনায়া বুঝে গেছে দূর্বলের উপর আঘাত করতে সহজ হয়।তাই যতো বেশি মনোবল থাকবে ততো বেশি শত্রুর মোকাবেলা করা যাবে।
ইনায়া সাহস নিয়ে বললো।
-আমার কাছে ও যথেষ্ঠ প্রমাণ আছে তোমার সব অপরাধের।
‘তাই বুঝি তাহলে হয়ে যাক যুদ্ধ স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ।
-না মিঃ আইজান ছেলের জন্য মায়ের যুদ্ধ।
‘বড্ড বুলি ফুটেছে ভাল লাগছে খুব লাভ ইউ।
-থুঁ।
অরিত্রি, ইকরাম,আর ওদের বাবা এসেছেন থানায় পুলিশের সাথে কথা বলছেন।
আইজান কে দেখা মাত্রই ইকরাম ওকে মারার জন্য এগিয়ে গেলো।
কিন্তু ওর বাবা বাঁধা দিলেন।আইজান অরিত্রি কে বারবার ইশারা করছে আলাদা যাওয়ার জন্য।
সবার থেকে একটু আলাদা গিয়ে দাঁড়ালো অরিত্রি আইজান।
ইনায়া ওদের দুজনের দিকে ঘৃণার চোখে তাকাচ্ছে।
-অরিত্রি তুমি তো আবেগকে পেয়ে গেলে ইনায়ার সাথে বেঈমানী করে।এবার আরেকটা কাজ করে দাও।
“কি কাজ।
-তেমন কিছু না আমি মারজানকে চাই তুমি কেবল আদালতে আমার পক্ষে একটা স্বীকারোক্তি দিবে।বিনিময়ে যা চাইবে তাই পাবে।
-কি স্বীকারোক্তি।
‘তুমি শুধু বলবে ইনায়া দুশ্চরিততা মেয়ে আমার ছেলে ওর কাছে ভালো থাকবেনা।
-ব্যাস এতোটুকু।
‘চাইলে আরো কিছু বলতে পারো এই যেমন বিয়ের আগেও বাইরে ছেলেদের সাথে রাত কাটিয়েছে।
ঠাসস ঠাসস শব্দে সবাই কেঁপে উঠে থানায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি অরিত্রি আইজানের দিকে।
অরিত্রি দুটি থাপ্পর বসিয়ে দেয় আইজানের গালে।
আইজান গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি হলো এগুলো।
অরিত্রি ছুটে পুলিশের সামনে যায়।
– ইন্সপেক্টর এই ছেলে থানায় দাঁড়িয়ে আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিচ্ছে।
‘কি বলছে।
-ও আমার সাথে অনৈতিক কাজ করতে চাইছে কি বলছে সেটা আমি মুখে নিতে পারছিনা।
আইজান -মিথ্যা কথা আমি এসব ওকে বলিনি।
-স্যার আপনিই তো দেখেছেন ও আমাকে আলাদা কথা বলতে নিয়ে গেছিলো।
” আমি অন্য কথা বলেছি।
-স্যার আপনি জিজ্ঞাসা করেন কি বলেছিলো।
“” আপনি কি বলেছেন উনাকে।
-ইটস মাই পার্সোনাল আমি বলতে পারবো না।
‘স্যার আপনি উনাকে এরেস্ট করুন আমি ইভটিজিং মামলা করবো।
-দেখুন ম্যাম বাদ দিন না।
-আপনি এরেস্ট না করলে আমি বাইরে গিয়ে চিৎকার করে লোক জড়ো করে বলবো পুলিশ স্টেশনে মহিলার সাথে অশালীন আচরণ করেছে যুবক পুলিশ ওই যুবককে এরেস্ট করেনি।
বুঝতেই পারছেন মিডিয়া এমন খবরের অপেক্ষায় থাকে।
পুলিশ ওর কন্সটেবলকে বললো আইজানকে এরেস্ট করার জন্য।
ইভটিজিং মামলা করে অরিত্রি।
*তারপর উকিল পুলিশের সাথে কথা বলে ইনায়ার ব্যাপারে।কেইস কোর্টে উঠবে তিন দিন পর তখন ইনায়া আর ইসহাককে জামিন করানো লাগবে।
ইনায়ার সাথে দেখা করে সবাই চলে যাচ্ছিলো তখনি ইনায়া অরিত্রিকে ডাক দিলো।
-অরিত্রি থ্যাংকস।
‘থ্যাংকস কেনো রে।
-আমি জানি আইজান অন্যকিছু বলছিলো।
তুই ইচ্ছে করে ওকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিস।
‘ও জেলে না থাকলে তোকে বের করতে পারবো না।ওর চেনা পরিচিত অনেক বড় বড় লোক আছে।
-আমার ছেলেটাকে দেখিস।
আইজানের মা-বাবা খবর পেয়ে ছুটে থানায় আসে রূপসা আসেনি।
ওর নাকি প্রেস্ট্রিজ চলে যাবে থানায় আসলে।
পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে অরিত্রি মামলা তুলে নিলে আইজান মুক্তি পাবে।নয়তো কোর্টে মামলা গেলে ৬মাসের জেল হয়ে যেতে পারে।
**দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে গেলো। আজ ইনায়াদের আদালতে তোলা হবে।
মামলার সকল কার্যক্রম সামলেছে ইকরাম আর অরিত্রি।
আদালতের রায় অনুযায়ী ইনায়া, ইসহাক দোষী না সব দোষ পাবেলের।মৃত মানুষের উপর মামলা হয় না।
কিন্তু ওদের কোম্পানি চালু করতে হলে নতুন করে শুরু করতে হবে। আদালতের দেয়া রায় অনুযায়ী ওদের কোম্পানিকে বড় অংকের জরিমানা পোহাতে হয়।
**জামিন পেয়ে বাসায় যায় ইনায়া,ইসহাক তিনদিন পর ছেলেকে পেয়ে আত্মহারা ইনায়া।
হাজার চুমু খাচ্ছে ছেলের গালে। ছেলের আহ্লাদের ও শেষ নেই মাকে পেয়েই কান্না শুরু করে দিয়েছে।
দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ করে অরিত্রি চলে যাচ্ছিলো।অরিত্রি যেতে নিলেই মারজান কান্না করছে।
*ইনায়ার মা ইনায়াকে জানায় এই তিনদিন অরিত্রি মারজানকে একবারের জন্য চোখের আড়াল করেনি।রাতে বাসায় পর্যন্ত যায়নি তাই মারজান অরিত্রি যেতে দেখে কান্না করছে।
অরিত্রির প্রতি ইনায়ার রাগ কমে গেছে মানুষ মাত্রই ভুল ভুলের ক্ষমা করে দেয়া মহৎ কাজ।
ইনায়া ছুটে গিয়ে অরিত্রিকে জড়িয়ে ধরে।
-তুই আমার জন্য আমার ছেলের জন্য যা করেছিস সে ঋণ শোধ হবেনা।
‘আমি তোর যা ক্ষতি করেছি তা জীবন দিয়ে ও পূরণ হবে না।
অরিত্রি চোখে জল নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেলো।
ইনায়া ভাবছে কতো প্রিয় কাছের মানুষ ছিলো অরিত্রি ওর এখন দুজনের মধ্যে কত যোজন যোজন দূরত্ব ।
কিছুদিন পর আইজান ছাড়া পায় বাড়িতে ফিরে রূপসাকে পায় না। রূপসা বেড়িয়ে গেছে বিকেলে রূপসা বাড়ি ফিরে।
-তুমি জানো আজ আমি বাড়ি ফিরবো তা ও কোথায় গিয়েছিলে।
‘তোমার ভাব এমন যেনো মহারাষ্ট্র জয় করে এসেছে।আসছো তো জেল থেকে তা ও ইভটিজিং এর মামলা।লজ্জা শরমের বালাই নেই।
-স্টুপিড ননসেন্স। তোমার মা-বাবার সাথে কথা বলো কাল আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
‘আমি বিয়ে করতে পারবো না।
-আমার সাথে ঘুমাতে ভালো লাগে ইনজয় করতে ভালো লাগে আর বিয়ে ভালো লাগে না।
‘বিয়ে করবে তো এজন্যই সব যখন পাচ্ছো তাহলে বিয়ে করার কি দরকার।
-তুই কি রাস্তার পতিতা এরকম ভাষায় কথা বলছিস।
‘আইজান আমি তোমার ইনায়া না যেরকম খুশি ব্যবহার করবে।
-তোর বাপের জন্মে ইনায়ার মতো হতে পারবি না।
রূপসা বড্ড চালাক মেয়ে দু মিনিট নীরব থেকে আইজানকে জড়িয়ে ধরলো।
-আই এম সরি আইজান আসলে বিয়ের গভীরতা সম্পর্কে আমি বুঝিনি।আমি তোমাকে কালই বিয়ে করবো।
-সত্যি।
‘হ্যা সত্যি।
-আমি ইনায়াকে দেখিয়ে দিবো বিয়ে করে।
হুট করেই ওয়ারড্রব থেকে শাড়ী বের করতে শুরু করলো রূপসা।
-জান দেখো তো কাল বিয়েতে আমি কি শাড়ী পড়বো।
‘পুরোনো শাড়ী কেনো পড়বে নতুন কিনে নিয়ে আসো যাও।
আমি চেক সাইন করে দিচ্ছি যতো খুশি শপিং করো।
আইজানের বুকের মধ্যে মাথা রেখে রূপসা বলছে।
-তুমি এতো ভালো কেনো জান আমি তোমাকে পেয়ে অনেক খুশি।
চেক সাইন করে দিতেই রূপসা বেড়িয়ে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে আইজান ফোন করলো ইনায়াকে।
ইনায়া আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করে।
-কাল আমার বিয়ে মিসেস ইনায়া।
‘ কংগ্রাচুলেশনস। কার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাইছো।
-জীবন নষ্ট হবেনা জীবন সাজাবো ওকে নিয়ে।
ডিভোর্স পাঠিয়ে দিবো সই করে দিও।
‘আচ্ছা।
-লাস্ট চান্স আমার কাছে ফিরে আসো সব ঠিক হয়ে যাবে।
‘মরে গেলে ও তোর কাছে ফিরবো না।
-ওকে তাহলে কাল বিয়েতে এসো।
ইনায়া ফোন রেখে হাউমাউ করে কাঁদছে আইজান বিয়ে করছে এজন্য না।কাঁদছে আইজান কেনো আর দশটা ছেলের মতো ভালো হলো না।
ও তো সংসার ছাড়তে চায়নি সমাজের কাছে স্বামী পরিত্যক্ত নারী হয়ে বাঁচতে চায়নি। তবু কেনো এমন হলো ওর সাথে।
ফোনের মেসেজ টোন বাজতেই দেখে অরিত্রি মেসেজ দিয়েছে।
-ইনায়া আমাকে একটা দিন দিবি ঠিক আগের মতোই। আমরা যেমন কলেজে সারাদিন আড্ডা দিতাম বাঁধনহারা পাখির মতো, ঘুরে বেড়াতাম,ফুচকা খেতাম, ঝালমুড়ি মামার দোকানের কথা মনে আছে তোর।
দিবি ইনায়া আরেকটা সুযোগ তোর প্রিয় বান্ধবী হয়ে উঠার।তুই আসবি?
মেসেজ দেখে ইনায়ার মন ফ্রেশ হয়ে যায়।মেসেজের রিপ্লে করে হ্যাঁ আসবো লিখে।
চলবে
চলবে