#নিশ্বাস
#পর্ব_৮
#লেখক_Mohammad_Asad
“আমি তো কাজের মেয়ে আমার কি স্বপ্ন দেখা মানায়” বাবা রুম থেকে চলে গেলে এইসব ভাবতে থাকে নিশাত। নিজের অজান্তেই চোখের মধ্যে জল চলে এসেছে।
কিছুক্ষণ পর তিন্নি ভাবি রুমে আসে অনেকটা রেগে। নিশাত খেয়াল করেনি তিন্নি ভাবি রুমে এসেছে। ভাবি যখন ডেকে উঠে তখন নিশাত চমকে উঠে। ভাবির হাতে ফোনটা দেখে ভিষণ ভয় পেয়ে যায়। বুকটা ধুক ধুক করতে থাকে। নিশাত ক্ষমা চাইতে যাবে তখন তিন্নি ভাবি নিশাতের গালে অনেকগুলো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নিশাত মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি ভাবি নিশাতকে অনেকগুলো কথা শুনায়। ফকেন্নি কাজের মেয়ে বলে গালি দিতে থাকে। নিশাত কোন উত্তর দিতে পারে না। শুধু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ায়।
ভাবি অনেক গালি দিয়ে যখন রুম থেকে চলে যায়। তখন ভিতর থেকে দরজাটা লেগে দেয় নিশাত। মুখ চেপে কান্না করতে থাকে। মেয়েটার বুকে কেন যানি খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে। বাবা-মায়ের কথা অনেক মনে পড়ছে। “কেন বাবা আমাকে কাজের মেয়ে বানালে তুমি। কেন একা চলে গেলে না ফেরার দেশে। ছোট থাকতেই তো মাকে হারিয়েছি। একটু বড় হয়ে তোমাকে হারিয়েছি। এতো কষ্ট দিলে কেন আমাকে।”
নিশাত কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাগুলো বলতে থাকে।
“রাত ৮;৩০ মিনিট, নিশাত ভাত তরকারি রান্না করছে। আজকে ভাবি একটি বারের জন্য আসেনি রান্নাঘরে। মনে হয় অনেক রেগে আছে। আর না আসায় ভালো। আসলে হয়তো অনেক কথা শুনাবে আবার।
নিশাত ভাত তরকারি টেবিলে সাজিয়ে রেখে নামাজ পড়তে যায়। নামাজ পড়ে এসে বাবা-মা ভাবি, সবাইকে ভাত বেড়ে দেয়। ভাত বেড়ে দেওয়া সময় অনেক কথা শুনায় ভাবি। নিশাত চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে। আব্বু ভাবিকে থামানোর চেষ্টা করলে আম্মু গালি দিতে থাকে আব্বুকে বলে, কাজের মেয়েটা বেশি ভালোবাসা দিতে নেই।
হাজারো অবহেলা, গালি যেন নিশাতের জীবন সঙ্গী হয়ে গেছে। এগুলো আর কিছুই মনে হয়না। নিশাত মেয়েটা অনেক সরল তাই তো সবকিছু মেনে নিতে পারে। কোথায় বা যাবে মেয়েটা এই বাড়ি ছেড়ে। কোথাও যে যাওয়ার যায়গা নেই।
রাত ৮;৩৫ মিনিট ছাদিক বাড়িতে ফিরে। রুমের মধ্যে প্রেবেশ করেই মেয়েটাকে জরীয়ে ধরে। নিশাত বলে,
-ইসস কি হয়েছে আপনার এভাবে জরীয়ে ধরলেন কেন?
-তোমার কথা ভিষণ মনে পরছিলো তাই।
“নিশাত মিস্টি হেঁসে ছেলেটাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়,।”
-হইছে এবার যান গোসল করে আসুন। শরীল থেকে ঘাঁমের গন্ধ বেড় হচ্ছে।
“ছাদিক নিশাতের ঘাঁড়ে চুমু দিয়ে বলে”
-হুম যাচ্ছি।
ছাদিক কাপড় নিয়ে গোসল করতে গেলে নিশাত মুচকি হেঁসে দেয়। ছেলেটার মুখটা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিমিষে ভুলে গেছে নিশাত।
হাজারো কষ্ট জমে ছিলো মেয়েটার মনে। তবে ছাদিক নামে ছেলেটাকে দেখে সেই কষ্ট গুলো যেন তুচ্ছ।
নিশাত গরম চা-বানাতে যায়। ছাদিক অনেক পচ্ছন্দ করে দুধ চা, সেই ছোট থেকে ছাদিক দুধ চা খেতে ভিষণ পচ্ছন্দ করে।
ছাদিক গোসল করে রুমের মধ্যে আসলে। নিশাত ছাদিকের হাতে গরম চা-দেয় ছাদিক চায়ে চুমুক দিয়ে নিশাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশাত মিস্টি হেঁসে বলে।
-কি দেখছেন এভাবে?
“ছাদিক নিশাত গাল টেনে দিয়ে বলে”
-তোমাকে দেখছি। তোমার মিস্টি হ্যাঁসিতে জাদু আছে বলতেই হবে।
“নিশাতের গালটা টেনে দিয়েছে ছাদিক। তাই মুখটা একদম গোমড়া করে দিছে নিশাত।”
-আমার গালটা টেনে দিলেন কেন? আমার ব্যাথা হয়না তাই না।
ছাদিক টেবিলের উপর চায়ের কপটা রেখে নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-তোমার অনেক ব্যাথ্যা করেছে তাই না।
-হুঁ অনেক।
ছাদিক নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে মিস্টি হেঁসে উঠে। নিশাতের গালে চুমু দিয়ে বলে।
-এবার আদর করে দিলাম ব্যাথ্যা পেয়েছো?
“নিশাত লজ্জায় মুখটা লাগ করে দিছে।”
-আপনি না খুব খারাপ
-হুম যানি তো। আমি খুব খারাপ।
“নিশাত মাথাটা নিঁচু করে নিয়েছে।”
-নিশাত
-হুঁ
-এভাবেই কি দাঁড়িয়ে থাকবে! না আমাকে খেতে দিবে।
-ইসস স্যরি, আপনার খুব খিদে পেয়েছে তাই না।
-হুম অনেক খিদে পেয়েছে।
-আচ্ছা আপনি বিছানায় একটু বসুন। আমি এই ভাত তরকারি নিয়ে আসছি।
-আচ্ছা নিয়ে এসো।
নিশাত রান্নাঘর থেকে ছেলেটার জন্য ভাত তরকারি রুমে নিয়ে আসে। রুমে এসে মেঝেতে খাবার গুলো সাজিয়ে রেখে বলে।
-এই নিচে এসে বসুন।
ছাদিক মেঝেতে বসে নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশাত ছাদিকের প্লেটে ভাত বেড়ে দেয়। ছাদিক এক দৃষ্টিতে নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশাত বুঝতে পেরে একটু লজ্জা পেয়ে যায়।
-এই আপনি এভাবে কি দেখছেন? ভাত দিয়েছি তো। তাড়াতাড়ি খেয়ে নেন। সারারাত পরে আছে আমাকে দেখার জন্য।
“ছাদিক মুচকি হেঁসে উঠে”
-তাই
-হুঁ তাই এবার ভাত খেয়ে নেন।
“নিশাতের জন্য একটা ফোন নিয়ে এসেছে ছাদিক মনে পড়তেই বলে উঠে।
-উঁহু আমি না অনেক মন ভোলা।
-কেন, কি হয়েছে!
-তোমার জন্য একটা ফোন এনেছি।
“ফোনের কথা মনে পড়তেই নিশাতের মুখটা ছোট হয়ে যায়। আজকে নিশাত ভাবির ফোনটা নষ্ট করে দিছে।
-নিশাত কি হয়েছে তোমার, চুপ করে আছো কেন?
-এমনি”!
-কোনকিছু নিয়ে মন খারাপ তোমার?
-নাহ্
ছাদিক মুখে ভাত তুলে নিশাতের দিকে তাকায়। মেয়েটার মুখটা কেমন যানি শুঁকনো শুঁকনো লাগছে আজ।
-নিশাত তুমি ভাত খেয়েছো?
-নাহ্
-আচ্ছা মুখটা খুলো।
ছাদিক নিশাতের মুখে ভাত তুলে দেয়। ভাত খাওয়া শেষ হলে। ছাদিক নিশাতের হাতে নতুন ফোনটা দেয়।
-এই আপনি, ফোন কিনছেন কেন?
-আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই। এই ফোন দিয়ে আমাকে ফোন করবে তুমি। বলবে ঠিক মতো পৌচ্ছায়ছো কিনা। ঠিক মতো খেয়েছো কিনা।
“ছেলেটার মিস্টি মিস্টি কথাগুলো শুনে নিশাত লজ্জায় পরে যায়। তবুও মুখটা গোমড়া করে বলে”
-ফোনটার দাম অনেক তাই না!
-হুম অনেক, তো কি হয়েছে।
-আমি তো বড় ফোন কখনো ব্যবহার করেনি তাই বলছি।
-ওহ আচ্ছা, আমি শিখিয়ে দিবো তোমাকে।
রাত ১১;০২ মিনিট, তিন্নি ভাবি ডাইনিং রুমে বসে বসে টিভি দেখছে। রাইসুর ভাইয়া যতক্ষণ পযন্তু না বাড়িতে আসে ততক্ষণ পযন্তু তিন্নি ভাবি ডাইনিং রুমে বসে টিভি দেখে।
রাইসুল ভাইয়া, কলিংবেল বাজালে তিন্নি ভাবি দরজাটা খুলে দেয়।
রুমে এসে নিশাতের নামে অনেক অভিযোগ করতে থাকে তিন্নি ভাবি।
-রাইসুর যানো, নিশাত আমার ফোনটা নষ্ট করে দিছে।
রাইসুল ভাইয়া নিশাত মেয়েটাকে ভালো করেই চিনে। নিশাত কক্ষনো নিজের ইচ্ছেতে তিন্নির ফোনটা নষ্ট করতে যাবেনা, তা ভালো করেই যানে রাইসুর ভাইয়া।
-কই দেখি তোমার ফোনটা।
তিন্নি ভাবি ফোনটা টেবিল থেকে নিয়ে এসে রাইসুলের হাতে দেয়। রাইসুর ভাইয়া দেখে উপরের গাল্স প্যাপারটা ভেঙে গেছে। ফোনের কিছু হয়নি। ফোনটা মেঝেতে পরে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। রাইসুর ভাইয়া ফোনটা চালু করে বলে।
-আরে ফোনের কিছু হয়নি তো।
-মানে!
-হ্যাঁ কিছু হয়নি। উপরের গাল্স প্যাপারটা শুধু ভেঙে গেছে।
-ইসসস
-কি হলো আবার।
-মেয়েটাকে আমি থাপ্পড় দিয়েছি।
-কোন মেয়েটাকে।
-নিশাত মেয়েটাকে,
-মানে, কেন মেরেছো।
“রাত ১২;০৪ মিনিট নিশাত ছাদিক দুজনে বিছানায় সুয়ে পরেছে। নিশাত নতুন ফোনটা টিপছে। আর ছাদিক পিছন থেকে মেয়েটাকে জরীয়ে ধরে আছে। শিখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে ফোনটা ব্যাবহার করতে হয়।
“চলবে?”