#নিশ্বাস
#পর্ব_১৩
#লেখক_Mohammad_Asad
নিশাত ছাদিক দুজনে রিকশায় বসে আছে। নিশাত চুপটি করে মাথাটা নিঁচু করে আছে। মনে হয় একটু লজ্জা পেয়েছে। কখনো নীল শাড়ী পড়ে একটা ছেলের সঙ্গে রিকশায় বসেনি নিশাত। ছাদিক নিশাতের হাতে হাত দেয়, শক্ত করে জরীয়ে ধরে নিশাতের কমল হাতটাকে।
-এই যে পেত্নী চুপ করে আছো কেন?
“নিশাত মাথাটা নিঁচু করেই বসে আছে কিছু বলছে না। ছাদিক মিস্টি হেঁসে যাচ্ছে পাগলীটার কান্ড দেখে।”
নিশাত মেয়েটা কেমন যানি কখনো একটু বেশিই অভিমানী। নিশাতের “নিশ্বাস” বন্ধ হয়ে আসছে ছেলেটার পার্শে বসে থাকতে। কেমন যানি লজ্জা লজ্জা ভাব।
এভাবে প্রায় অনেকক্ষণ দুজনে চুপটি করে বসে আছে। একটা খোলামেলা রাস্তায় ছাদিক দাঁড় করায় রিকশাটাকে। ভাড়া দিয়ে বিদায় দেয় চাচাকে।
একটা খোলামেলা মাটির রাস্তা। ছাদিক ইচ্ছে করেই পাকা রাস্তা ছেড়ে এই মাটির রাস্তাতে এসেছে। ধুলোময় একটা রাস্তা। নীল শাড়ীতে মেয়েটাকে বেশ মানিয়েছে।
-এই যে আমার নীলপরী চুপ করে আছো যে।
“নিশাত চুপটি করে মাথাটা নিঁচু করে ছিলো। এবার ছাদিকের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধির কন্ঠে বলে”
-এই আপনি আমাকে নীল পরী বললেন কেন?
-তবে কি বলবো, বউ পরী?
“নিশাত লজ্জায় মুখটা দুই হাত দিয়ে ঢেকে নেয়। ছাদিক মিস্টি হেঁসে নিশাত দুইহাতের মাঝে নিজের হাত দিয়, নিশাতের মুখ থেকে ওর হাতগুলো সরিয়ে নেয়।
-ইসস রে, আমার বউ পরীটা দেখছি অনেক লজ্জা পেয়েছে।
-উঁহু না,
-লজ্জা পাও নি,
-হুঁ
-আচ্ছা দেখাচ্ছি তোমাকে লজ্জা পাও কিনা।
ছাদিক নিশাতের কোমড় ধরে পাজোকলা করে কোলে তুলে নেয়। নিশাত এবার লজ্জায় মুখটা ছাদিকের বুকে লেগে দিয়েছে।
ছাদিকের বুকের ভিতর থেকে বলে নিশাত।
-এই আপনার কি একটুও লজ্জা নেই।
-নাতো নেই একটুও লজ্জা নেই।
-কেউ যদি দেখে ফেলে,
-তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। এখানে কেউ আসবে না। আমি মাঝে মধ্যেই এই মাটির রাস্তায় এসে গল্প করি নিজের মাঝে। এখানে কোন গাড়ীর আওয়াজ নেই। না আছে মানুষের ঢল।
-আচ্ছা আমাকে এবার কোল থেকে নামান।
-আগে বলো লজ্জা পেয়েছো কিনা?
-নাহহ্ পাইনি একটুও।
-তাই,
-হুঁ তাই,
-তাহলে তো কোল থেকে নামাচ্ছি না। সামনে একটা পুকুর আছে দেখেছো?
-কই দেখিনি তো।
-কেমন করে দেখবে, আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আছো যে। ওই পুকুরে তোমাকে ফেলে দিয়ে আসবো। বলো লজ্জা পেয়েছো কিনা?
“ছাদিকের বুকে গিল ঘুশি দিয়ে বলে নিশাত”
-এইইই না না, প্লিজ আমাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে আসবেন না।
-তবে বলো লজ্জা পেয়েছো কিনা?
-উঁহু না একটুও লজ্জা পাইনাই।
-তাই,
-হুঁ তাই,
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ছাদিক মেয়েটাকে নিয়ে একটা ছোট পুকুরে পার্শে নিয়ে আসে। নিশাত চোখটা ব্যাঁকা করে দেখে সত্যি তো পুকুর আছে এখানে।
-এইইই সত্যি আমাকে পুকুরে ফেলে দিবেন নাকি?
-হ্যাঁ
-আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চান।
-ইসস আমার বউটাকে মেরে ফেলতে যাবো কেন? আগে বলো লজ্জা পেয়েছো কিনা। তাহলে কোল থেকে নেমে দিবো।
-হুঁ লজ্জা পেয়েছি অনেকটা। এবার কোল থেকে নামিয়ে দিন প্লিজ।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ছাদিক কোল থেকে নেমে দেয় মেয়েটাকে।
নিশাত এবার রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ছাদিকের দিকে।
-আপনি না খুব খারাপ,
নিশাত পিছন ফিরে হেঁটে যেতে থাকে।
ছাদিক হ্যাঁ হ্যাঁ করে হেঁসে বলতে থাকে।
-এই যে নীল পরী কোথায় যাচ্ছো? আরেকটু সামনে যাও দেখবে একটা সিংহ দাঁড়িয়ে আছে। তাছাড়া তুমি হেঁটে বাড়ি যেতে পারবে না। কতটা দূর এসেছি আমরা তুমি নিজেই যানো না।
সিংহের নাম শুনে নিশাত দৌড়ে আবার ছাদিকের কাছে আসে। নিশাত ছেলেটাকে জরীয়ে ধরে বলতে থাকে।
-আপনি এমন কেন বলেন তো?
-কেন আমি কেমন?
-আপনি আমাকে সুন্দরবন নিয়ে আসছেন তাই না।
“ছাদিক এবার হেঁসে যাচ্ছে পাগলীটার কথা শুনে।”
-এই আপনি হ্যাঁসছেন কেন?
-ইচ্ছে করেই হ্যাঁসছি।
-মানে,
-তুমি এতোটা বোকা কেন বলতো।
-এই আমি বোকা না।
-তাই,
-হুঁ তাই,
-এটা সুন্দর বন হতে যাবে কেন শুনি? এটা আমাদের রাজশাহী। এখানে সুন্দরবন কোথা থেকে পেলে।
-হুঁ তাই তো।
আসলে হয়েছেটা কি নিশাত কোনোদিন বাড়ি থেকে বের হয়নি। তাই হয়তো এরকম খোলামেলা পরিবেশ কখনো উপভোগ করতে পারেনি। এটা কোন জায়গায় আছে নিশাত, ভুলেই গেছে হয়তো!
ছাদিক আর নিশাত দুজনে একটা ছোট পুকুরের পার্শে বসে আছে। নিশাত ছাদিকের কাঁধে মাথা দিয়ে আছে।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, ছাদিক মেয়েটার হাতে হাত দিয়ে বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্য আবার হেঁটে যেতে শুরু করে। নিশাত পায়ের জুতো গুলো খুলে হাতে দেয়। ডুবে দেয় দুটি প্যাঁ এই ধুলোময় রাস্তায়।
বাজারে এসে একটা ছোট রেস্টুরেন্টে ঢুকে ছাদিক। দুজনে বসে আছে, নিশাত চুপটি করে বসে আছে চেয়ারে। তবুও একটু মুখ ফুটে বলে নিশাত।
-এই আপনি এখানে নিয়ে আসলেন কেন, বাইরের খাবার খেতে নেই।
.
.
খাবার খাওয়া শেষে নিশাত ছাদিক দুজনে বাড়ি ফিরে আসে। এসে দেখে বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।
রাত ৭;১৫ মিনিট বেজে গেছে, ছাদিক কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে কেউ দরজা খুলছে না।
“চলবে?”