#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১৬
.
আমি উনার পিছে পিছে হাঁটছি! আমার এক বদ অভ্যাস আছে, হাঁটার সময় সামনে তাকিয়ে হাঁটি না নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটি! আজ আবারও সাদাদ ভাইয়ের পিঠের সাথে আমার কপাল, নাকমুখের সংঘর্ষ হলো। উনি এমন কোন আগাম বার্তা না দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে যা হওয়ার তাইই তো হবে!
নাক মুখ কুঁচকে উনার দিকে তাকাতেই উনি এক ঝটকায় আমার বাহু ধরে পাশের দেয়ালে ঠেকিয়ে ধরলেন। আমি আকস্মিকতায় পুরো দমে অবাক! অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বেশ ভয় পেলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি এদিকটায় কেউ নেই বললেই চলে! আমি নিচে তাকাতে তাকাতে এসেছি বলে খেয়ালই করি নি আমাকে উনি কোথায় নিয়ে এসেছেন! আমি উনার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি উনি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে! বিষয়টা আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে উনি আমার থেকে ঠিক পাঁচ আঙুল দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দুইপাশ থেকে উনি দুই হাত দিয়ে দেয়ালে ঠেক দিয়ে দাড়িয়েছেন। আমার দিক ঝুকে কিন্তু কোনরকম স্পর্শ লাগে নি। কিন্তু উনি যে আমার এতো কাছে তাতেই জান বেরিয়ে যাচ্ছে আমার। উনি অসম্ভব শান্ত গলায় আমাকে বললেন,
–তুমি কি আসলেই বুঝো না নাকি না বুঝার ভান করো?
আমি তব্দা খেয়ে গেলাম। আমি কি বুঝিনা? কি না বুঝার ভান করি? আমি আমতাআমতা করে বললাম,
–আমি কি বুঝিনা? কি না বুঝারর ভান করি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আপনি কি বুঝাতে চাইছেন ভাইয়া?
উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু থেমে আবার বললেন,
–এই যে ভাইয়া ডেকে কানের পোকা মেরে ফেলো! এটা থেকে মুক্তি চাই!
আমি বেশ ভাবলেশহীন ভাবে বললাম,
–এমা! সেকি? তাহলে আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো? আপনি তো আমার থেকে কত সিনিয়র! ইভেন আপুর থেকেও! শুধু ভাইয়ার থেকে ছোট!
সাদাদ ভাই অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকালেন। উনি পারলে এক্ষুনি নিজের কপাল দেয়ালে ঠুকতেন! উনি উনার হাত দেয়ালের সাথে আরো জোরে চেপে আমাকে বললেন,
–এডাল্ট মেয়ে হয়ে এই আজাইরা এক্সকিউজ কিভাবে দাও? কালকে যে প্রপোজ করলাম তার উত্তর দাও আমাকে! অবশ্য তুমি না করলেও তোমার সেই আমাকেই বিয়ে করতে হবে!
আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম,
–না করলে কি সিনেমার মতো তুলে নিয়ে বা জোর করে বিয়ে করবেন?
উনি বাঁকা হেসে বললেন,
–কখনোই না! জোর জবর্দস্তি রাজনীতিতে খাটে! বউয়ের ক্ষেত্রে না! এমনিতেই বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন হয়েছে বউয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নাকি স্পর্শও করা যাবে না। তাই তোমার ক্ষেত্রে নো জবর্দস্তি!
আমি সরু চোখে বললাম,
–তাহলে কিভাবে আপনি আমাকে নিজের করবেন?
উনি ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বললেন,
–ভাংচি দেবো! তোমার সবগুলো প্রপোজালে ভাংচি দিবো!
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,
–ছেলে হয়ে আপনি ভাংচি দিবেন? কি আজব!
উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
–কেন কোথায় লেখা আছে ছেলেরা ভাংচি দিতে পারবে না?
আমি উনার প্রশ্নকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে বললাম,
–আচ্ছা আপনি আমাকে প্রপোজ কখন করলেন?
উনি বললেন,
–কালকেই তো রেস্টুরেন্ট এ!
আমি অবাক হয়ে বললাম,
–ওটা প্রপোজ করা ছিল? এভাবে?
উনি আমতাআমতা করে বললেন,
–তুমি একবার রাজি হও আমি বিয়ের পর প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবে তোমাকে প্রপোজ করবো! বাট বিয়ের আগে একদম না!
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম,
–কেন? বিয়ের আগে করলে কি সমস্যা?
উনি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন,
–কারন তোমাকে প্রপোজ করলে আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হয়ে যাবো! আর তখন তোমাকে যদি কাছে পেতে ইচ্ছে করে তো নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে আর না তুমি আমাকে মানা করবে! তাই বিয়ের আগে নো প্রপোজ! আমার অনুভূতি বুঝে নাও! এরা এখন আর আমার কন্ট্রোলে নেই!
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি! হঠাৎ করে উনার ফোন আসতেই উনি এক হাত দিয়ে ফোন ধরে কথা বলতে শুরু করলেন। ওপাশ থেকে কি যেন শুনে উনি বললেন,
–গুড! আমি আসছি!
উনি আবার আমার দিকে তাকালেন। আমি এবার বেশ ইতস্তত করে বললাম,
–সরুন! আমি যাবো!
উনি বললেন,
–আগে আমার কথা শেষ হবে তার পর তুমি যেতে পারবে!
উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই উনার হাতের নিচ থেকে বেরিয়ে বেশ কিছুদূর চলে গেলাম। পিছে ফিরতেই দেখি উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
–আমার কথা শেষ হয় নি সুবাহ!
আমি বেশ জোরেই বললাম,
–আপনাকে না সাদিয়া আপু ডেকেছে! ভুলে গেছেন?
.
সাদিয়ার রুমে আসতেই সাদাদ বিছানায় বসে পড়লো। সাদিয়া ড্রেসিংটেবিলে বসে সাজুগুজু করছিলো। সাদাদকে দেখে হেসে দিল। সাদাদ তার দিকে তাকাতেই দেখে সাদাদের মুখটা বাচ্চাদের মতো ফুলিয়ে রেখেছে। সাদিয়া হেসে বলল,
-কি হইছে ভাইজান? এইরাম মুখ ফুলাইয়া রাখছোস ক্যা?
সাদাদ আরো বিরক্ত হলো। বোনকে বলল,
–দি! তুই এই কি ভাষায় কথা বলছিস? তোকে মানা করছি না?
সাদিয়া হেসে বলল,
–আমি তো ইচ্ছে করেই বলি! আচ্ছা বল এবার কি কারনে এভাবে মুখ ফুলিয়ে রাখছিস?
সাদাদ অসহায়ভাবে বলল,
–দি! ও এতো দুষ্টু কেন?
সাদিয়া অবাক হয়ে বলল,
-কে?
সাদাদ আড়চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
–আমার একজনই উনি আছে! তাকে সামলাতেই জান যায়!
সাদিয়া এবার ভালোমতো বুঝলো সাদাদের ও কে! আবার হেসে বলল,
-কারন সে তোর হবু বউ! তোর একটু ধাচও যদি না থাকে তাহলে কি হয় নাকি?
সাদাদ অসহায় ভাবে তাকালো! যা দেখে সাদিয়া আবার হেসে দিল।
.
বউভাতের জন্য সবাই সেন্টারে পৌছে গেছে। রাত পর্যন্ত এখানে অনুষ্ঠান চলবে! আমি আপুর সাথেই সাজুগুজু করে চলে এসেছি! এসে সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম কারন আজ আমি একটা রয়াল ব্লু কালারের লেহেঙ্গা পড়েছি আর সাদাদ সাহেব! উনিও রয়াল ব্লু কালারের একটা পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়েছেন। উনার এই উজ্জ্বল শ্যামা গায়ের রংএ পাঞ্জাবিটা বেশ মানিয়েছে। উনাকে ফর্সা বলা চলে কিন্তু ধবধবে নয়। তাই বেশিই এট্রেক্টিভ লাগে দেখতে! নায়কদের মতো সিক্স প্যাক নেই তবুও যা দেখতে মাশাল্লাহ! আসলে উনার এটিটিউট দেখেই মেয়েরা ফিদা! আর অপ্রিয় হলেও সত্য উনি আমার উপর ফিদা! হ্যাঁ কখনো নিজের মুখে বলেননি কিন্তু তার প্রতিটা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। আর এটাও সত্য আমি উনাকে বেশ পছন্দ করি যদিও মুখে হয়তো কোনকালেই আমি বলতে পারবো না। উনার থেকে ভয়টা কেমন যে চলে গেল।
নাহ! এই লোকটাকে আমি কিছুতেই ইগনোর করতে পারবো না। আজ তাকে বলেই দেবো।
অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়! সবাই আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত! কিন্তু শান্তি নেই রুবায়েত এর মনে ও কিছুতেই সাদিয়ার পাশে আসিফকে মেনে নিতে পারছে না। শুধু শুধু চিপকাচ্ছে সে। সাদিয়া ওকে কিছু বলছে না দেখে আরো বেশি ক্ষেপে গেলো ও। হঠাৎ খেয়াল করলো আসিফ সাদিয়াকে নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে! রুবায়েত তার পাশে থাকা মানুষগুলোকে সাইড কাটিয়ে সাদিয়ার পিছু চলল। কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা বিপদ ঘটবে!
.
কতক্ষন ধরে এই সাদাদকে খুঁজে চলেছি কিন্তু মশাইয়ের দেখা নেই! আজব! যখন পাত্তা দেই না তখন ঠিই ধেই ধেই করে সামনে হাজির হয় কিন্তু এখন তার দেখাও পাওয়া যাচ্ছে না। খুঁজতে খুঁজতে স্টেজের বিপরীত দিকে যাচ্ছি হঠাৎই পিছনে থেকে বলে উঠলো,
–আমাকে খুঁজছো সুবাহ?
আচমকা কথা বলায় বেশ ভয় পেলাম। পিছনে ফিরে দুই কদম পিছিয়ে এলাম। এই সাদাদ নামক ব্যাক্তিটা থেকে আমি যতই ভয় কমাতে চাই না কেন মনের মাঝে উনিই সবচেয়ে বড় ভয়! এতক্ষন মনে মনে কত ঠিক করছিলাম যে উনাকে বলে দিবো যে আমিও উনাকে পছন্দ করি কিন্তু উনি সামনে আসায় পেটের কথা গলায় আটকে আছে! কি করি।
–আসলে…আমি..আপ..নাকে খুঁজছিলাম!
উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
–কেন?
আমি একটা ঢোক গিলে বললাম,
–আপনাকে কিছু বলার ছিলো!
উনি এবার মুচকি হাসলেন। হাসি মুখেই বললেন,
–তো বলো!
আমি অসহায়ের মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি! আসলে ভাবছি কথাটা বলব কিভাবে?
,
,
,
চলবে……………..❤️
(আজ দুইটা পর্ব দিলাম। কালকে সময় পেলে দিয়ে দিবো নয়তো পরশু। আমার ক্লাস চলে তাই চাইলেই প্রতিদিন গল্প দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তার জন্য দুঃক্ষিত।)