#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 54
.
.
ইয়াশকে ডেকে তুলে খাইয়ে দিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিলাম।দশ’টা বাঁজে।উনি এখনো আসেন নি।টেনশনে আমার মাথা ঘুরাচ্ছে।একবার পায়চারী করছি তো একবার রকিং চেয়ারে বসে বসে উনার কথা ভাবছি।আমার কান কলিংবেলের শব্দ শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে এগারোটা বাঁজিয়ে দিলো।উনার আসার নাম নেই।আমি বেডে যেয়ে ইয়াশের পাশে শুঁয়ে পরলাম।কান্না পাচ্ছে খুব!আমি একটুও কাঁদবো না!চোখ বন্ধ করলাম।
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো তবুও উনার আসার নাম নেই!আমি চোখ না খুলে পাশফিরে শুঁয়ে পরলাম!চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে!হঠাৎ কেউ গুনগুন করে গান গেয়ে উঠলো,
তোর বর্ষা চোখে
ঝরতে দেবো না বৃষ্টি;
তুই জাগবি সারারাত
আমি আসবো হঠাৎ;
তোর শুকনো ঠোঁটে
ফোঁটাবো প্রেমের হাসি;
তোকে প্রানের চেয়ে বড়
বেশি ভালোবাসি;
তোর বুকের গভীরে
দেবো আজ আলতো ছোঁয়া;
ভালোবাসবি জনম-ভোর
হৃদয়ে অনেক মায়া;
তোর শুকনো ঠোঁটে
ফোটাবো প্রেমের হাসি;
তোকে প্রানের চেয়ে বড়
বেশি ভালোবাসি;
.
উনার কন্ঠ!উনি গান গাচ্ছেন! ইমোশোনাল ব্র্যাকমেইল!!!আমি চোখ মেলে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলাম।উনি পাশে বসে আছেন!আমি খুলবো না চোখ।হুহ্…এতক্ষণে আসার সময় হলো উনার!বারবার বলেছি আমি টেনশনে আছি তারপরও এতো লেইট!আমি আমার গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম!উনি আবার গালে হাত দিয়ে ঠোঁটে একটা চুঁমু দিয়ে বললেন,
– কাল সকাল থেকে যেনো মেইড আসে সেই ব্যবস্থা করে এলাম!ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে পরামর্শ নিতে!আসার সময় এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো,জোর করে ইমন বাসায় নিয়ে ইচ্ছামতো খাওয়ালো!মানা করা সত্ত্বেও থামে নি!ওর কোন বোনের যেনো মেয়ে হয়েছে সেখানে নিয়ে গেলো!বাবুটাকে দেখে আসলাম!ভীষন মিষ্টি হয়েছে দেখতে!
আমি চোখ না খুলেই বললাম,
– হয়েছে!হয়েছে!কৈফিয়ত দিতে হবে না!দুনিয়া উদ্ধার করে এসেছেন,পেট পুড়ে খেয়ে এসেছেন!সব কাজ তো শেষ!যান…এখন শুঁয়ে পড়ুন!আমার কাছে কেনো এসে….
উনি আর বলতে দিলেন না!হুট্ করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন!আমি চিৎকার দিতে যেয়েও দিলাম না,উনার কাধের শার্ট আকঁড়ে ধরলাম!উনি আমাকে অনেকটা উপরে তুলে আমার গলায় উনার দাড়িওয়ালা গাল ভীষন জোরে জোরে স্লাইড করলেন!আমি উনার পিঠের শার্ট খামঁচে ধরে বললাম,
– ব্যাথা পাচ্ছি তো!ছাড়ুন…
– আগে মাফ করে দাও!
– দিলাম…দিলাম মাফ করে!এবার ছাড়ুন…
উনি আমাকে না ছেড়ে ডাইনিং-এ নিয়ে আসলেন!ডাইনিং টেবিলের উপর বসিয়ে খাবারের প্যাকেট খুলে খাওয়ানো শুরু করলেন।নামতে দিলেন না টেবিল থেকে!খাওয়া শেষে একইভাবে কোলে করে রুমের বারান্দায় নিয়ে এলেন!আমাকে কোলে নিয়েই দোলনায় বসে পরলেন!আমি উনার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম!উনি বললেন,
– ঘুম পেয়েছে?
– উহু!
– তাহলে?
– এমনি….
– ঘুম পেলে ঘুমোতে পারো!
– আজ আপনাকে খুব কঠিন একটা পানিশম্যান্ট দেওয়া উচিৎ ছিলো!
আমার কথা শুনে উনি হেসে উঠলেন!হাসতে হাসতে বললেন,
– তো দাও না….আমি রেডি!
– উহুম!আপনাকে পানিশম্যান্ট দিতে গিয়ে উল্টো আমি নিজেই কষ্ট পাবো!দরকার নেই!
আমার কথা শুনে উনি হেসে বললেন,
– এমন একটা পানিশম্যান্ট দাও যেটাতে আমি ব্যাথা পাবো কিন্তু তোমার-আমার কারোর-ই কষ্ট হবে না!
উনার কথা শুনে আমি ভ্রুঁ কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন?
উনি ভ্রুঁ নাঁচিয়ে বললেন,
– গেস করো!
আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম!উনার কথাটা তবুও ধরতে পারলাম না!আমি আর কোনোকিছু না ভেবে উনার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বললাম,
– ঘুম পাচ্ছে আমার!ঘুমাবো….
– সামান্য একটা কথা-ই ধরতে পারলে না?
আমি কিছু বললাম না!হঠাৎ উনি আমার গলায় আর গালে কামড় দিয়ে একটা চুঁমু খেয়ে বললেন,
– গুড নাইট!
আমি “আহ্” বলে গালে হাত দিলাম!উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার মাথা উনার কাঁধে রেখে বললেন,
– ঘুম পেয়েছে না তোমার?ঘুমাও….
– এভাবে কেউ কামড় দেয়?
– এটাকে কামড় বলে না পাগলি!এটাকে লাভ বাইট বলে!
– ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু আমি!
– ব্যাথা পেয়েছো কষ্ট তো পাও নি!
বলেই উনি চোখ টিঁপ দিলেন!সাথে সাথেই আমার পানিশম্যান্টের কথাটা মনে পরলো!উনি ঠোঁটে দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন!আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকালাম!উনি বললেন,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?তাড়াতাড়ি পানিশম্যান্ট দাও!নাও…
বলেই উনি গাল বাড়িয়ে দিলেন!আমি লজ্জায় উনার ঘাড়ে মুখ গুঁজে বললাম,
– অসভ্য একটা!
আমার কথা শুনে উনি আমার কঁপালে একটা চুঁমু খেয়ে বললেন,
– থাক….পানিশম্যান্ট দিতে হবে না!ওইদিনের মতো মিষ্টি খাওয়াও – থাক….পানিশম্যান্ট দিতে হবে না!ওইদিনের মতো মিষ্টি খাওয়াও তো একটা!
উনার বুকে একটা কিল দিয়ে বললাম,
– আমার ঘুম পেয়েছে….চুপ করুন!
– যাষ্ট একটা….প্লিজ!
– এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।দয়া করে রিপিট করে আর লজ্জা দিবেন না!
আমার কথা শুনে উনার চেহারার কি রিয়েকশান হলো দেখতে পেলাম না!চোখ খুলে উনার দিকে তাকাতেও ইচ্ছা করছে না!লজ্জায় ঘুম পাচ্ছে আমার….এখন চোখ না খোলাই ভালো!
.
.
সকালে চোখ মেলে তাকাতেই পাশে ইয়াশকে দেখতে পেলাম!রাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম খেয়াল-ই করিনি!পাশের দেয়ালে চোখ পরতেই দেখলাম ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাঁজে।আমি তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে ইয়াশকে ডেকে তুললাম।ইয়াশ হাই তুলতে তুলতে উঠে আমার সাথে হেলান দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলো!দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখনো ঘুম কাটে নি।আমি ইয়াশের বাহু ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললাম,
– সাড়ে আটটা বাঁজে কিন্তু!লেইট হলে স্কুলে আর ঢুকতে দেবে না!তাড়াতাড়ি উঠো….
ইয়াশ অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো!আমি কিচেনের দিকে পা বাড়ালাম!কিচেনে ঢুকতেই আমি মনির বয়সী একটা মেয়েকে দেখতে পেলাম!সাথে সাথেই আমি ভয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে বুকে থুঁথুঁ দিলাম!এই মেয়ে কে?এখানে কেনো?ভেতরে ঢুকলো কিভাবে?আমি দ্রুত পাশের রুমে চলে গেলাম উনাকে ডাকতে!রুমের ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম উনি রুমে নেই!ওহ্ মাই গড!আমি পেছন ঘুরে রুম থেকে বের হতে যাবো সেইমুহূর্তে মেয়েটার সাথে ধাক্কা খেলাম!মেয়েটা সাথে সাথেই বলে উঠলো,
– ওহ্ সরি..সরি আপা!ভাই তো একটু আগে বাড়াইয়া গেছে!
আমি ভ্রুঁ কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কে তুমি?
– কাজের মাইয়া!
মেয়েটার কথা শুনে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম!মেয়েটার দিকে সামান্য এগিয়ে গিয়ে বললাম,
– নাম কি তোমার?
– তুলি!
– তোমার ভাই কোথায় গিয়েছে?কিছু বলেছে তোমাকে?
– হ্…..ব্রেকফাস্ট আনতে গেছে!আর আপনি উঠলে আপনারে জানাইতে কইছে!
– ওহ্।কিচেনে কি রান্না করছিলে?কিচেনে তো রান্না করার মতো কিছুই নেই!
আমার কথা শুনে মেয়েটা হেসে বললো,
– ভাই যাওয়ার সময় ডাইনিং আর কিচেন পরিষ্কার করতে কইলো।দাড়াইয়া দাড়াইয়া হেইডাই করতেছিলাম।
হঠাৎ ইয়াশ হাতে স্কুলড্রেস নিয়ে টাঁই গলার সাথে ঝুলিয়ে রুমে ঢুকলো।আমার দিকে এগিয়ে এসে স্কুলড্রেস আমার হাতে ধরিয়ে আঙ্গুল দিয়ে তুলিকে দেখিয়ে বললো,
– উনি কে?
আমি ইয়াশকে বেডের উপর দাড় করিয়ে বললাম,
– আপু হয় তোমার!ওর নাম তুলি!এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে!
তুলি এগিয়ে এসে ইয়াশের গাল টেনে বললো,
– নাম কি তোমার?
– ইয়াশ!
তুলি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আপনের ছে….
– না…না!আমার দেবর!
আমি দ্রুত ইয়াশের পরিচয় দিলাম!আমার কথা শুনে তুলি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো!আমি সেদিকে…..