real love পর্ব ৫৬

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 56
.
.
উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্য উনি আমাকে অনেকক্ষণ বকাবকি করে নিজে থেকেই আবার আদর শুরু করে দিয়ে আমাকে নিয়ে শুঁয়ে পরলেন!
.
.
রাতে আমি ইয়াশকে হোমওয়ার্ক করতে দিয়ে ফোন নিয়ে কিচেনে এসে আম্মুর নাম্বারে ডায়াল করলাম।রিং হচ্ছে।কিছুক্ষণ পর একাই কেটে গেলো কেউ ধরলো না।আমি আবার কল দিলাম।কল রিসিভ করেই ওপাশ থেকে আব্বু বলে উঠলো,
– হ্যালো… কে?
আব্বুর এই “কে” শব্দটা শুনেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো!কে কল করলো সেটা না দেখেই কল রিসিভ করে!আমি কোনোরকমে বললাম,
– আব্বু আমি!
আমার কন্ঠ শুনে আব্বু উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বললো,
– আরে…হিয়া মা যে!এতোদিন পর বাবার কথা মনে পড়লো?
– আব্বু আমার সবসময়ই তোমার কথা মনে পড়ে!
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি!আমি ব্যস্ত মানুষ ফোন করার সুযোগ-ই পাই না!তুই তো আর ব্যস্ত না….
– কেমন আছো?
– হাহ্….আছি ভালো!তুই ভালো আছিস তো?
– হুম!
– পড়াশোনার কি অবস্থা?শোনো…আমি কিন্তু রেজাল্ট…
– আব্বু আমি একবছর ড্রপ দিতে চাচ্ছি!এইবছর কোনো ভার্সিটির ফর্ম তুলবো না!
আমার কথা শুনে আব্বু নির্লিপ্তভাবে বললো,
– তোমার আম্মুর কাছ থেকে তো সব শুনলাম।শুধু শুধু একবছর ড্রপ দেওয়ার কোনো কারন তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না!এই নিয়ে তোমার মা’কে প্রচন্ড বকাবকি করেছি।সেই বোকাগুলো এইমুহূর্তে তোমাকে দিতে চাচ্ছি না।এমনিতেই আমাদের ছেড়ে দূরে থাকো।তাই বলে ভেবো না তুমি নিজের মতো স্বাধীনভাবে চলবে!আমি কিন্তু তোমাকে স্বাধীনভাবে চলতে মানা করছি না!তুমি তোমার মতো চলবে কিন্তু লিমিটেশন রেখে!এই যে একবছর ড্রপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছো যেটা আমার কাছে এইমুহূর্তে মনে হচ্ছে তুমি নিজের লিমিট ক্রস করে ফাউল একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছো!তুমি এখন আমার সামনে থাকলে বলো তো কি করতাম?
– চড় মারতে!
– ইয়েস….ছয়মাসও গেলো না তুমি নিজেকে খুব বড় মনে করছো!আসলে কিন্তু তুমি ওতটাও বড় হও নি!সেটা তুমি আরো একবার প্রমান করে দিলে এই ইয়ার ড্রপ দেওয়ার ডিসিশান নিয়ে!এটা কি আদৌও তোমার ডিসিশান নাকি তোমার শ্বশুরবাড়ির…..
আমি আব্বুকে থামিয়ে বললাম,
– আব্বু ডিসিশান-টা আমার!আমি নিজে নিয়েছি ডিসিশানটা,উনারা যাষ্ট তোমাকে জানিয়েছেন!এখানে উনাদের কোনো দোষ নেই!মা-বাবা আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছেন!এই সিদ্ধান্তটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিলো!এমনকি ইফাজও শুনে রাগ করেছিলো!আমি অনেকভাবে ম্যানেজ করে উনাকে রাজি করিয়েছি!
আব্বু হঠাৎ ধমক দিয়ে বললো,
– ইফাজ মানে?তুমি ইফাজকে নাম ধরে ডাকো নাকি?
– নো…নো…আব্বু তুমি ভুল বুঝছো আমাকে!আমি তো যাস্ট তোমার সামনে নাম ধরে সম্বোধন করলাম তোমার বোঝার সুবিধার্থে!
– গুড…এই কাজটা কোনোদিনও করবে না!
– ওকে!
– আচ্ছা যা হবার হয়েছে!আমিও জানি উনারা যথেষ্ট ভালো মানুষ!তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে আসি….একবছর ড্রপ দিবে মানে এই নয় যে একেবারে পড়াশোনা অফ!আশেপাশে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যায় সেগুলো এনে পড়তে পারো!এতে তোমার ওই অকেজো ব্রেইনে একটু হলেও বুদ্ধি আসবে!সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকবে,মুখস্ত হবে তাড়াতাড়ি!
আমি আব্বুর কথা কেড়ে নিয়ে বললাম,
– তখন রেজাল্টও আপনাআপনি ভালো হবে,তাইনা?
আমার কথা শুনে আব্বু হেসে ফেললো।আমি বললাম,
– আম্মুকে দাও!
– ভালো লাগছে না আমার সাথে বকবক করতে?
– নাহ্!আম্মুকে দাও!
আব্বু হেসে বললো,
– হ্যা…দিচ্ছি!
আমি পা উঠিয়ে ক্যাবিনেটের উপর বসলাম।ফোনের ওপাশ থেকে আম্মু বললো,
– শুনলাম আমার বড় মেয়ে নাকি ফোন করে আমাকে চেয়েছে?
আম্মুর কথা শুনে আমি ঢং করে বললাম,
– কই নাতো!
আম্মু হেসে বললো,
– কেমন আছিস?
– ভালো….তুমি কেমন আছো?কি করছিলে?
– আছি ভালো!তোর আব্বুর সাথে মারামারি করছিলাম এতক্ষণ!
– সিরিয়াসলি?
– হুম…দেখ তোর আব্বু আমার চুল ধরে টানছে!
– সবসময় মজা,তাই না?আব্বু কখনোই এইকাজ করবে না!শোনো না আম্মু…
– হুম বল!
– নাফিসা কেমন আছে?
– ভালো।নাফিসা মনে হয় রুমে পড়ছে।ডাক দিবো?কথা বলবি?
– না..না!থাক!আসলে আম্মু….
– কি?
– আব্বু চিটাগাং আর যাবে না?
– হুম…কয়েকদিনের ছুটিতে এসেছে!আবার যাবে!
আম্মুর কথা শুনে আমি শুধু “ওহ্” বললাম।আসল কথাটা মুখ দিয়ে বের করতেই পারছি না।আম্মু বললো,
– ইফাজকে নিয়ে একদিন আয়।তোর আব্বুও আছে।তোর আব্বুর তো তোর শ্বশুরের সাথে প্রতিদিন দেখা হয়।তোর আব্বু প্রতিদিন বাসায় এসে বলবে “কি ভালো মানুষ,দেখেছো সামিনা?মেয়েটার কপাল আছে বলতে হবে।”
আমি অবাক কন্ঠে বললাম,
– আব্বুর সাথে প্রতিদিন দেখা হয়?
– হুম!তোর শ্বাশুড়ির সাথে কয়েকদিন আগে কথা হলো!এতো ভালো মানুষ হয়?
– তোমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সবাই অনেক ভালো!তোমার জামাইকে তো কঁপাল করে পেয়েছি আমি!মা-বাবার মতোই হয়েছে!আমার কোনো প্রবলেম হলে উনি দুনিয়ার সবার কথা ভুলে আমাকে নিয়ে পড়ে থাকে!হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে সুস্থ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে!
আমি মনে মনে বললাম “উনি অনেক ভালো আম্মু,অনেক ভালো!”
আম্মু বললো,
– ওরকম সবার হাজবেন্ড-ই করে।
– জানি আম্মু!তারপরও আমার বলতে ভালো লাগে!
আমি চোখের পানি মুঁছে আম্মুকে বললাম,
– আম্মু তোমার বয়স কত?
হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করাতে আম্মু ঘাঁবড়ে গেলো।
– এটা আবার কেমন প্রশ্ন?
– এমনি জিজ্ঞেস করেছি।না বলতে চাইলে থাক!
আমি একটু কেঁশে বললাম,
– আম্মু,আমি তোমার পেটে এসেছিলাম কবে?
প্রশ্নটা করেই আমি চোখমুখ বন্ধ করে ফেললাম!ধমক দিবে নাতো?
– অনার্স ফাইনাল ইয়ারে…মনে হয়!
আম্মু হেসে হেসে বললো!
যাক….বোকা দিলো না আম্মু!নরমালি আন্সারটা দিলো!কথাটা ধরতেও পারে নি!এই নিয়ে আর বেশি কথা না বলাই ভালো!মায়ের মন…ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল!আমি আম্মুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম!চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম….আম্মু বিয়ের দুইবছর পর বেবি নিয়েছে!আম্মুর বিয়ে হয়েছে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াকালীন,সেখানে আমার ইন্টারের পর!আম্মু ফার্স্ট কনসিভ করেছিলো অনার্স কমপ্লিট করে সেখানে তার মেয়ে কনসিভ করেছে অনার্সে পা রাখার আগেই!কত্ত তফাৎ!যেখানে আম্মু বিয়ের দু’বছর পর কনসিভ করেছিলো সেখানে আমি?কথাটা একদম আম্মুকে জানানো যাবে না…অসম্ভব!যা দেখা করার আমাকে এই কয়েকদিনেই সবার সাথে দেখা করতে হবে সবার নজরে পড়ার আগেই!
.
উফ্!সব অসহ্য লাগছে!চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে!কাজটা করার আগে একবার উনার পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ছিলো….কেনো একা একা সব করতে গেলাম?প্রেগন্যান্টের কথা জানতে পারলে তো সবাই উনাকে দোষ দিবে!উনি তো তখন একটুও মুখ খুলবেন না!
“এটা আমার দোষ না!হিয়ার নিজের দোষ!” কথাটা কখনোই কাউকে বলবেন না!মুখ বুঁজে সব সহ্য করবেন!
.
রুমে চলে এলাম।ইয়াশের পাশে বসে আন্টিকে কল দিলাম।আন্টি রিসিভ করতেই আমি সালাম দিয়ে বললাম,
– কেমন আছেন,মা?
– আলহামদুলিল্লাহ্!তুমি কেমন আছো?
– জ্বী ভালো!বাবা কেমন আছে?
– তোমার বাবা তো সবসময়-ই ভালো থাকেন।ইয়াশ কি বেশি দুষ্টুমি করছে?
আন্টির কথা শুনে আমি হেসে ইয়াশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
– আমি চায় ও আমার সাথে দুষ্টুমি করুক!কিন্তু আপনার ছেলে আমার কাছে আসলেই ইনোসেন্ট হয়ে যায়! দুষ্টুমি করা তো দূরের কথা বাধ্য ছেলের মতো আমার সব কথা শোনে!দো’আ করবেন ইয়াশের মতো যেনো আপনার বড় ছেলেরও একটা ছেলে হয়!
আমার কথা শুনে আন্টি শব্দ করে হাসলেন!হেসে আমার কথাটা উড়িয়ে দিলেন!কিন্তু আমি আমার দ্বিতীয় মা’য়ের কাছে সত্যি সত্যিই দো’আ চেয়েছি!এইমুহূর্তে সবার দো’আ আমার ভীষন প্রয়োজন!
আমি ভাঙ্গা গলায় আন্টিকে বললাম,
– হাসছেন যে?
আন্টি হাসি থামিয়ে বললেন,
– বিয়ে হতে না হতেই মা হওয়ার চিন্তা মাথায় ঢুকেছে,তাই না?এইসব দো’আ নেওয়ার অনেক টাইম আছে!তোমার আব্বুর কাছে কথা দিয়ে তোমাকে নিয়ে এসেছি,উনি যদি জানতে পারে তুমি এতো তাড়াতাড়ি আমার কাছে নাতি-নাতনির জন্য দো’আ চাচ্ছো!বুঝতে পারছো তো কি হবে?
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
– হুম!তখন এমনি কথা উঠলো তাই একটু দো’আ চেয়ে নিলাম!
– আমরা সবসময় তোমাদের জন্য দো’আ করি!এভাবে চেয়ে চেয়ে দো’আ নিতে হবে না!ইয়াশ কি করে?
আমি ভাবলেশহীনভাবে বললাম,
– হোমওয়ার্ক করে!
– ওহ্….আর ইফাজ?
– উনি একটু বাহিরে গেছেন!
আরো কিছুক্ষণ আন্টির সাথে কথা বলে ফোন কেটে দিলাম!
.
ইয়াশ খাতা এগিয়ে দিয়ে বললো,
– ভাবি শেষ!
আমি খাতা চেক করে ইয়াশকে কয়েকটা অংক করতে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পেটে হাত রেখে কান্না করে দিলাম!কেনো করলাম কাজটা?খুব কি প্রয়োজন ছিলো?এভাবে আর কতদিন?এইমুহূর্তে তোমাদের আমার ভীষন প্রয়োজন আব্বু-আম্মু,মা-বাবা!পারছি না থাকতে!তোমাদের ছেলে বাবা হবে….তোমাদের মেয়ে মা হবে!একটু আসো না আমার কাছে!একটু আমার পেটে মাথা রেখে আদর করে যাও!তোমাদের নাতি-নাতনি আসবে!একটু ওদের জন্য দো’আ করে যাও না,প্লিজ….
আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম!ইয়াশ ওয়াশরুমের দরজায় নক করছে!
– ভাবি,কি হয়েছে?কাঁদছো কেনো?আমি ভয় পাচ্ছি… দরজা খুলো!
আমি দরজা খুলেই ইয়াশকে জড়িয়ে ধরলাম!ইয়াশ ভয়ে কাঁপছে!ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
– ভাবি কান্না করছো কেনো?ভয় পাচ্ছি তো…..
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here