#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 61
.
.
দুজনে একসাথে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।আমি টাওয়াল দিয়ে হাত-মুখ মুঁছে বেডে শুঁয়ে পরলাম।উনি আলমারি থেকে দুইটা শর্টস বের করে আমার সামনে ধরে বললেন,
– দেখো তো কোনটা পরবো?
উনার কান্ড দেখে আমি হতভম্ব হয়ে চোখ বড় বড় উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– দিন দিন আপনি এতো নির্লজ্জ্ব হয়ে যাচ্ছেন কেনো?
উনি আমার কথায় ভ্রুঁক্ষেপ না করে বললেন,
– রেডটা বেশি কিউট!শ্বশুরবাড়ি এটা পরেই যাবো!
– এক্সকিউজ মি,আপনি কি শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সবাইকে দেখিয়ে বেড়াবেন “দেখো সবাই আমি রেড পরেছি!”
আমার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে ইফাজ হাসতে হাসতে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,
– এক্সচুয়ালি তোমার রিয়্যাকশন দেখতে চাচ্ছিলাম!
বলেই উনি ব্ল্যাকটা আমার উপর রেখে রেডটা নিয়ে গেলেন।আলমারি থেকে স্কাই-ব্লু শার্ট,ব্ল্যাক প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।উনার মতলব কি?উনি কি এখনই শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছেন?
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে উনি শার্ট ইন করতে করতে বললেন,
– এখনো শুয়ে আছো যে?তাড়াতাড়ি ওঠো!ব্রেকফাস্ট করেই বের হবো,ফাস্ট!
– আমার লেইট হবে একটু!
– এভাবে শুঁয়ে থাকলে তো লেইট হবেই!
উনি আলমারি থেকে স্কাই-ব্লু কালার শাড়ি বের করে বললেন,
– এই শাড়িটা পরবে আজ!
– রাখুন!
উনি শাড়িটা কাধে নিয়ে আমাকে বেড থেকে নামিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে শাড়িটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
– দশমিনিট টাইম!তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করবে!
আমি বাধ্য বউয়ের মতো দশমিনিটে চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম!উনি বেল্ট লাগাতে লাগাতে বললেন,
– ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসো!আজ আমি তোমাকে সাজিয়ে দেবো!
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– সিরিয়াসলি?
– ইয়েস ম্যাডাম!
আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসতেই উনি আমার দুইকাধে হাত রেখে আয়নার ভেতর দিয়ে ঠোঁটের ইশারায় আমাকে চুঁমু খেলেন!আমি আমার কাধে উনার দুইহাতের উপর হাত রেখে উনার সাথে হেলান দিয়ে মিষ্টি হাসলাম!উনি আমার মুখটা তুলে পেছন থেকে কপালে চুঁমু খেলেন!
কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে উনি আমার সামনে এসে কাজল,আইলানার,লিপস্টিক,
হিজাব-পিন সব একসাথে আমার কোলের মধ্যে রেখে সাজাতে শুরু করলেন!ইফাজ মেক-আপ একদম পছন্দ করে না!নরমাল সাঁজ পছন্দ!
প্রথমে কাজল নিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে চোখে আলতো করে কাঁজল পরিয়ে দিলো।দেন আইলানার দিয়ে দিলো।রেড লিপস্টিক হালকা দিয়ে নিজের আঙ্গুল দিয়ে একটু ঘষে দিলো।চুলগুলো উপরে উঠিয়ে ক্লিপ দিয়ে লাগিয়ে দিলেন।হোয়াইট কালার একটা হিজাব আলমারি থেকে বের করে সুন্দর করে হিজাব-টা পরিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
– ইফাজ’স কুইন!
বলেই আমাকে হাত ধরে দাড় করিয়ে কঁপালে একটা চুঁমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– টিয়াপাখি!
আমিও উনার পিঠে হাত রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– হুম!
– ওইদিন যদি আমি অনিমের বাসায় না যেতাম,তাহলে কি হতো বলো তো?তোমাকে তো সারাজীবন সাধনা করেও পেতাম না,অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে…..
উনার কথা শুনে আমার বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো!আমি উনাকে আর বলতে দিলাম না,আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না!
– আরে এতো সিরিয়াস হচ্ছো কেনো? মজা করছিলাম তো!দেখো,আমার বাম পাঁজর দিয়ে তুমি তৈরী,সো তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকতে না কেনো দিনশেষে আমার কাছেই ছুটে আসতে!
হঠাৎ তুলির কন্ঠ ভেসে এলো “আপা!ব্রেকফাস্ট রেডি,আসেন।”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তাহলে ওটা কেনো বললেন অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে….?
উনি হেসে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,
– সেই অন্য মেয়েটাও তুমিই হতে,পাগলি!
আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে একটু উঁচু হতেই উনি আমার কোমড় ধরে উপরে তুলে চুঁমু খেয়ে বললেন,
– থ্যাংকস!ব্রেকফাস্ট করানোর জন্য!
আমাকে ছেড়ে উনি ড্রেসিংটেবিলের সামনে থেকে লিপস্টিক নিয়ে আমার ঠোঁটে লাগিয়ে দিলেন!পারফিউম নিয়ে নিজের বডিতে স্প্রে করতে করতে বললেন,
– যেই শাড়িটা পরেছো এটা তোমাকে যেদিন ফার্স্ট দেখেছিলাম সেদিন কিনে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলাম!আজ বলে দিলাম কথাটা!
উনার কথা শুনে আমি হাঁ হয়ে কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে শাড়ির কুঁচি ধরে ডাইনিং-এ চলে এলাম।উনার নজরে পরার পর থেকেই তারমানে আমি উনার ভালোবাসা পাচ্ছি!!!উফ্,ভাবতেই শরীর শিঁউরে উঠছে!
.
চেয়ার টেনে বসতে বসতে তুলিকে বললাম,
– তুমিও আমাদের সাথে বসো।আমরা এখনই বেরুবো তো,তাই আরকি।
– কই যাইবেন?
আমি হেসে বললাম,
– তোমার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি!
আমার কথা শুনে তুলি ফিক করে হেসে দিলো।ইফাজকে ডাইনিং-এর দিকে আসতে দেখে তুলি হাসিমুখ বন্ধ করলো।উনি চেয়ার টেনে বসে তুলিকে বললেন,
– দাড়িয়ে আছো কেনো?বসো।আমাদের হাতে কিন্তু একদম সময় নেই।
তুলি সাত-পাঁচ না ভেবে কর্নারের একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো।
.
ব্রেকফাস্ট শেষে তুলিকে সন্ধ্যেয় আসতে মানা করলাম।রুমে এসে আমি আলমারি থেকে একটা শাল বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভালো করে নিজেকে একবার দেখে নিলাম।হাতদুটো সারাক্ষন পেটের উপর রাখলে আর বোঝা যাবে না।উনি রুমে ঢুকে আমাদের দুজনের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হ্যান্ডওয়াচ পরতে পরতে বললেন,
– চলো!
আমি জানালা-দরজা,লাইট,ফ্যান,এসি সব অফ করে উনার সাথে বেরিয়ে পরলাম।
.
.
এ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি থামতেই আমি বুকে ফুঁ দিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম!কি যে হবে!লিফ্টে থাকাকালীন পুরো সময় উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে ছিলেন!কলিংবেল চাঁপার আগে আমি উনার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম!উনি চোখের ইশারায় কলিংবেল চাঁপতে বললেন!আমি কলিংবেল চেঁপে ধরে থাকলাম,ছাড়লাম না!উনি আমার হাত চেঁপে ধরে বললেন,
– রিলেক্স টিয়াপাখি!
আমি কিছুই বললাম না।উনার সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালাম!
মেইনডোর নাফিসা খুললো!আমাকে দেখার সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো “আপু!”
বলেই জড়িয়ে ধরে সাথে সাথেই ছেড়ে দিয়ে জিভ কেটে বললো,
– ওহ্ সরি,সরি!খেয়াল ছিলো না!
আমি হেসে বললাম,
– প্রবলেম নেই,ধরতে পারিস!
নাফিসা আমার পেটের কাছ থেকে শাল সড়িয়ে পেটের দিকে তাকিয়ে বললো,
– মাই গড!!
বলেই পেটে হাত বুলিয়ে দিলো।এই মেয়ের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের আজ ভেতরে ঢোকা হবে না।আমি নাফিসাকে সাইড করে উনাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।নাফিসা মেইনডোর লাগিয়ে আমাদের পেছন পেছন আসলো।আমি উনাকে সোফায় বসতে বলে আম্মুর রুমের দিকে পা বাড়ালাম।আব্বু শুঁয়ে ছিলো কিন্তু চোখ খোলা।আমি কাছে গিয়ে আব্বুর কানের কাছে চিৎকার দিয়ে বললাম “আব্বু!”
চিৎকার শুনে আব্বু একলাফে বেডের অন্যসাইডে চলে গেলো।হায়!হায়!আব্বু এতো ভয় পাবে,ভাবতেই পারি নি।আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
– আমার বড় মা এসেছে দেখছি!
বলেই হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।এই চিৎকারটা যদি বিয়ের আগে দিতাম নির্ঘাত এখন একটা ঝাড়ি খেতাম।আমি আব্বুর হাত ধরে একসাইড থেকে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– কেমন আছো?
– আছি ভালো।তুই কেমন আছিস?
– ভালো!
– জামাই কই?
– ড্রইংরুমে,চলো।আম্মু কোথায়?
– কিচেনে।
আব্বু বেড থেকে নেমে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো।আমি আব্বুকে বলে কিচেনে আম্মুর কাছে চলে এলাম।আম্মুকে একইভাবে কানের কাছে চিৎকার দিয়ে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম,চিৎকার দিলাম ঠিকই কিন্তু আম্মু ভয় পেলো না।আমাকে দেখেই আম্মুর চোখ ছলছল করে উঠলো।জড়িয়ে ধরে বললো,
– কখন এলি?
– মাত্র!
– কেমন আছিস?
– খুব ভালো।তুমি?
– আছি….নাফিসার টেনশনে তো দিনদিন জীবন যায় যায় অবস্থা!
– কেনো?ও আবার কি করলো?
– এখানে ভর্তি করানোর পর থেকে ওর পড়াশোনা পুরো গোল্লায় গেছে।তোর আব্বু তো ইদানিং আমাকে বকতে বকতে শেষ।আমি নাকি ভালোভাবে গাইড দিচ্ছি না,বেশি আদর করছি ইদানিং।কিন্তু তিনি যে এই তিনদিন মেয়েকে নিয়ে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে,সেটা কিছুই না।
আম্মুর কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
– আব্বু তো ওরকমই।এখন তো আবার আমি নেই।সব আদর নাফিসাকেই দিচ্ছে।
– ইদানিং তোর কথা বলতেই তোর আব্বুর চোখে পানি চলে আসে।মাঝে মাঝে তো এও বলে “ইশ্!মেয়েটাকে এতো কম বয়সেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় দিয়ে দিলাম!”
– আরে!তুমি আবার কাঁদছো কেনো?দেখি চোখ মুছো!এইসব আলোচনা বাদ!উনি ড্রইংরুমে বসে আছেন,দেখা করবে চলো!
আম্মু হেসে বললো “চল।”
.
আম্মু আর আমি ড্রইংরুমে চলে এলাম!আম্মুকে দেখে উনি দাড়িয়ে সালাম দিয়ে বসলেন।আমি নাফিসাকে নিয়ে রুমে চলে এলাম।শালটা বেডে রেখে চিৎ হয়ে শুঁয়ে পরলাম!নাফিসা আমার পাশে বসে আমার পেটে হাত রেখে বললো,
– আপু!আমি তো ভাবতেই পারছি না,তুমি প্রেগন্যান্ট!!!
নাফিসার কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
– আমাকে কেমন লাগছে দেখতে?
– একদম মা মা লাগছে!আগের থেকে বেশি কিউট হয়ে গেছো!
নাফিসার কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
– মানুষ মন থেকে কোনোকিছু চাইলে নাকি সেটাই হয়!তোর ভাইয়া তো মন থেকে টুইন্স বেবি চাচ্ছে!ভেতরে যে কয়টা আছে কে জানে!
নাফিসা চোখ বড় বড় করে উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বললো,
– ওয়াও!টুইন্স বেবি!
.
.
(চলবে)