ক্যাকটাস পর্ব ১৪+১৫

ক্যাকটাস
পর্ব-১৪
Writer Taniya Sheikh- Tanishq

রাতে ফের আর আসে নি নীরা রাফসানের সামনে। অভুক্ত শুয়ে সারারাত কেঁদেছে ভাগ্যের নির্মমতা ভেবে ভেবে। শারমিন বুঝেও চুপ রইল। সে দেরিতে হলেও বুঝেছে তখন কথাটা ওভাবে বলা অনুচিত হয়েছে।উচিত, অনুচিত জ্ঞান সবসময় ধরে রাখা যায় না। শারমিন আজকাল নিজেই অনুধাবন করছে, সে নীরার সাথে বিরূপ আচরণ করছে হঠাৎ হঠাৎ। এতো ভাবনা চিন্তার প্রেশার নিতে না পারলেই এমন হচ্ছে। নীরার পরিবারে নীরার মা’ই কেবল গোপনে তাকে কল করে। নীরাও সেটা জানে না। বোন’ঝির কাছে তিনি সর্বদা কান্নাকাটি করেন মেয়েকে দেখে রাখার কথা বলে। নীরাকে তার পরিবার মেনে নিতে পারছে না এই মুহূর্তে। নীরার আরও দু’টো বোন আছে, ছোট্ট একটা ভাই আছে। তাদের ভবিষ্যত চিন্তা করেই, নীরার বাবা নিজাম তালুকদার বড় মেয়েকে বাড়িতে তুলতে চাচ্ছে না। এসব কারনেই শারমিন খালার কান্নাকাটিতে মাঝে মাঝে রেগে যায়। দু’তিন কথাও শোনাতে কুন্ঠিত হয় না সে। নীরা নীরার মায়েরই প্রতিরূপ। সব সহ্যের চরম ক্ষমতা এদের মধ্যে বিদ্যমান। শারমিন নিজেকে শান্ত করে। এতো চাপ নিলে শেষে ব্রেন স্ট্রোক করে বসতে পারে। মনে মনে রিলাক্স, রিলাক্স আওড়ায় সে। নীরার দিকে তাকিয়ে লম্বা করে শ্বাস নেয়। লাইটের সুইচ অফ করে শুয়ে পড়ে নীরার পাশে। মনে মনে প্রার্থনা করে একদিন নীরা অনেক স্ট্রং হবে,সকল দুঃখ দুর্দশা উপেক্ষা করে সফল হবে জীবনে। শারমিনের চাওয়া পাওয়াতে পরিণত হবে কীনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দিহান সে। তবুও চাইলো। রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে তার চোখে ঘুম নেমে এলো। তলিয়ে গেল ঘুমের দেশে।
নীরার চোখে ঘুম নেই। উন্মীলিত চোখে জানালার বাইরের চাঁদের আলোয় অনুজ্জ্বল আকাশটাকে দেখছে সে। অপলক সিক্ত সে চাহনী।

পাশের রুমে শায়িত রাফসান। ঘুম তারও চোখে নেই। একটা মানুষকে ভালোলাগার অনেক কারন দাঁড় করানো যায়। কিন্তু ভালোবাসা কারন সহজে দাঁড় করানো যায় না। যদি কেউ বলে মেহেরকে তোমার কেন ভালো লাগে? সহজ উত্তর! মেহের আমারই মতো প্রাণখোলা, চটপটে বলে। বন্ধুত্বের সেরা উদাহরণ মেহের। অন্যদিকে যদি কেউ বলে নীরাকে ভালোবাসার কারণ কী? আমি নিরুত্তর হয়ে যায় বহুক্ষণ। ভাবি ভালোবাসতে কী কারণের আদৌ প্রয়োজন? ভালোবাসা তো হৃদয়ে টানে হয়। তাকে আমার হৃদয় উপলব্ধি করেছে,ভেবেছে হাজার বারন স্বত্বেও। এটা সত্যি একদিন তাকে করুনার চোখে দেখা মন আমার আজ কেবলই ভালোবাসার চোখে দেখে। এটা অনুচিত,অন্যায় হয়তো সবার চোখে। মৃত ছোট ভাইয়ের বউকে নিয়ে এসব ভাবাটাও অশোভন। কিন্তু কেউ কী জানে আমার মনের খবর? নিয়ম নীতি সে মানছে না। পৃথিবীর কতো মেয়েকেই এই দু’চোখ অবলোকন করেছে। কই মনে তো তারা বাসা বাঁধে নি। এই নীরাই কেন? কেন অন্য কেউ হলো না? মা’কে বলেছিলাম যাকে আমার মন পছন্দ করবে। বিনাবাক্য তাকে সবটা জানিয়ে আপন করে নেব। কেন পারছি না আপন করতে? কেন এতো বাধার দেয়াল? রাফসান উঠে বসে বিছানার উপর। সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে চলে আসে খোলা ব্যালকনিতে। নিস্তব্ধ শহর শুধু তার মনটাই অস্থির।

আহনাফের মৃত্যুর পর পুরো দু’টো সপ্তাহ তাকে নজরে নজরে রেখেছিলাম। হাসপাতালের বেডে মৃত রমনীর মতো পড়ে থাকতো নীরা।নির্বাক,স্থবির হয়ে পড়েছিল সে। না খেতে পারতো না বসতে।কী তীব্র যন্ত্রণা হতো এ দৃশ্য দেখে!যারা দেখেনি তারা বুঝবে না। তখনও বুঝিনি করুনার চোখে দেখা সেই মানবী আমার কতোটা দখল করে নিয়েছে। নিজের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল সে। আমাকে দেখে যখন নীরা চোখ ফিরিয়ে নিত ভীষণ কষ্ট অনুভব করতাম। ভেবেছিলাম দূরত্বে বুঝি তাকে নিয়ে ভাবনা কমবে। মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। ক্রমশ তাকে নিয়ে আকাশ পাতাল দুঃশ্চিতা হতে লাগলো। আগের চাইতেও বেশি ভাবলাম তাকে নিয়ে। বদলে যাচ্ছিলাম আমি আমারই অগোচরে। যা কিছু ঘটতে লাগলো সবকিছুর মধ্যে তারই ছায়া পড়ল। কী অদ্ভুত ছিল সেসব ভাবনা আমার। ভাবলাম মা’কে বলি। বলি মা! আমি সেই কাঙ্ক্ষিত নারীর সন্ধান পেয়েছি। পেয়েছি তাকে যাকে আমার মন এবং আমিও ভীষনভাবে ভালোবাসতে শুরু করেছি। বলার পূর্বেই জানলাম আমি তাকে যতোটা পছন্দ করি, আমার মা তাকে তারচেয়েও বেশি অপছন্দ করে। আর যাকে আমার মা পছন্দ করেছে সে আমারই প্রিয় বন্ধুটি। বান্ধবী বললাম না কারন তাকে আমি বান্ধবীর নজরে কোনোদিন দেখিনি। বন্ধুই ভেবেছি। আমার কষ্টের সীমা রইল না যখন জানলাম মেহেরও আমাকে ঠিক এমন করেই চায়, যেমন করে আমি নীরাকে চাই।
হার মানলাম। পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিকদের ধিক্কারে আমার উপর বর্ষিত হলো। আমি সফল,বাগ্মী ব্যারিস্টার হলেও সফল প্রেমিক হয়ে উঠতে পারলাম না। এই বেলায় আমার সব কথা গোলমেলে হয়ে যায়।

সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোর হতেই তৈরি হয়ে নেয় চলে যাওয়ার জন্য রাফসান। শারমিনকে কল করে জানাতেই শারমিন দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে আসে। রাফসানের চোখ মুখ দেখে ভ্রুকুটি করলো শারমিন বললো,

” রাতে ঘুমান নি ভাই?”

রাফসান কথাটা শুনে অপ্রস্তুত হাসল। প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো,

” সকাল সকাল বিরক্ত করলাম তোমাকে। কিছু মনে করো না। আসি তাহলে।”

” নাস্তা করে যেতেন। আমি নীরাকে ডেকে তুলছি।”

” আরে না! না! ওকে ঘুম থেকে তোলার প্রয়োজন নেই। আমার ইমার্জেন্সি কাজ আছে।সো যেতেই হবে এখন। ভালো থেকো।” কথা বলতে বলতে দু’জন দরজার কাছে চলে আসে। রাফসান সতর্কে একবার নীরার রুমের দরজার দিকে তাকায়। একবার দেখতে ইচ্ছা করছে আবার ইচ্ছেটাকে নিষ্ঠুরভাবে দমিয়ে নিচ্ছে সে। শারমিন পাংশু মুখে বললো,

” আবার আসবেন কিন্তু। ভালো করে আপ্যায়ন করতে পারলাম না। রাতে তো খেলেনই না। সকালের নাস্তা টাও খেয়ে গেলেন না।”

” পাগলি তুমি। আমি কী খাওয়ার জন্য আসছি এখানে? যথেষ্ট আপ্যায়ন করেছ। বরং আমার কারনে অযথায় তোমাদের কষ্ট হলো।”

” আরে কী বলেন এগুলা? আপনি আমাদের জন্য কী আর বলতে হবে মুখে? আমার বোনটা আজ স্বনির্ভর সে আপনারই জন্য। ওর ঐসময়ের চিকিৎসার খরচ,পড়ালেখার খরচ আপনিই বহন করেছেন। আপনি পাশে না থাকলে ওকে বাঁচাতে পারতাম না সে সময়। আজ ও যা সব আপনার আর মেহেরের বদৌলতে।”

” শারমিন! কতোবার বলেছি এসব মুখে আনবে না। সবই আল্লাহ বদৌলতে হয়েছে। আমি এবং মেহের মাধ্যম মাত্র। ”

” কেন ভাই? নীরার কী জানার দরকার নেই আপনি কী কী করেছেন ওর জন্য।”

” না প্রয়োজন নেই। আশা করবো এমন কথা নেক্সট টাইম তুমি মুখে আনবে না। আর হ্যাঁ ও বিধবা হোক আর যাহোক কোনোদিন এভাবে বলবে না। ওর স্থানে তুমি আমি নেই শারমিন। আমরা বুঝব না ওর কষ্টটা। যা বুঝব না তা বোঝার ভান করে ওর কষ্ট বাড়িয়ে দেওয়াটা অন্যায়। এমনটা তুমি করবে না আর আশা করি।” রাফসান রাগত স্বরে বলে।

” স্যরি ভাই।” শারমিন বললো

” আচ্ছা আসি। মেহেরের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। ওর কল আসলে বলো আমি চলে গেছি। আর হ্যাঁ নীরার জন্যে ভালো জবের ব্যবস্থা আমি করে দেব। এসব নিয়ে খামোখা চিন্তা করো না তুমি।”

” জি ভাই।” শারমিনের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল। স্বস্তি পেল মনে সে। রাফসান তৃষ্ণিত নজরে নেমে এলো নিচে। গাড়িতে বসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ড্রাইভ করে ছুটে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। গাড়ি চলছে ঢাকা হাইকোর্টের উদ্দেশ্যে। জরুরি কাজ আছে সেখানে। সেটা শেষ করে উঠবে হোটেলে। রাতে চেক আউট শেষে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবে রাফসান। পেছনে রেখে যাবে মূল্যবান সম্পদটাকে।

রাফসান হোটেলে ফিরল বিকেলে। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো সে। সারাদিন তেমন কিছু খাওয়া হয়নি ওর। শুকনো হয়ে আছে মুখটা। খাওয়ার মাঝেই মায়ের কল আসলো। রাফসান রিসিভ করতেই ওপাশে অস্থির কন্ঠে রাহেলা বললো,

” বাবু তুই কী রওনা দিয়েছিস?”

” না মা। একটু পর রওনা দেব। কেন বলো তো?”

রাহেলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এ পাশে সে শব্দ স্পষ্ট শুনতে পায় রাফসান। তাতেই বেশ অবাক হয়ে সে। রাহেলা ছেলেকে হাসি হাসি স্বরে বলে,

” ভয় পেলি নাকি?”

” না তবে অবাক হয়েছি।”

” আরে অবাক হওয়ার মতো কিছু নাই। কাল সকালে আমিও ঢাকায় আসছি। জিজ্ঞেস করবি না কিন্তু কেন। বলবো না এখন। অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কাজ আছে বুঝলি? সেটা অবশ্য তোর সম্বন্ধেই। সারপ্রাইজ দেব তোকে বুঝলি বাবু? আচ্ছা রাখি।” রাফসান কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই রাহেলা কল কেটে দেয়। মায়ের রহস্যময় হাসি,কথা এবং হঠাৎ ঢাকায় আসার অর্থ কী দাঁড়ায়? রাফসানের দম বন্ধ হয়ে আসছে অজানা আশঙ্কায়। যদিও সে জানে যা ঘটুক মেনে নেওয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। সে তার মায়ের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। তার চেয়েও বড় কথা নীরা তাকে মেনে নেবে না। নীরার চোখের এই টুকু ভাষা তো পড়তে পেরেছে রাফসান। তার মনের কথা প্রকাশে এলোমেলো হয়ে যাবে সবার জীবন। নীরা বহুকষ্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাকে এসবের মুখোমুখি করে অপমানিত,লাঞ্ছিত করতে চায় না রাফসান। বুকের পাশটায় চেপে বসা যন্ত্রণাটাকে কিছুতেই কমাতে পারছে না সে। ব্যর্থ প্রেমিক হওয়ার মতো কষ্ট পৃথিবীতে আর নেই। কেন প্রেমিক হতে গেলাম? কেনোই ঐ প্রহেলিকার মায়ায় মন হারালাম?

গতকালের মতো আজও নীরা কর্মচাঞ্চল্য দেখাচ্ছে। কোনো রকম জড়তা প্রকাশ পাচ্ছে না তার কথা,আচরণে। মিতালি গতকাল থেকে বিষয়টা লক্ষ্য করে জ্বলছে। নীরার সহকর্মী মিতালি। নাম মিতালি হলেও মিল তার কারো সঙ্গেই হয় না। আশেপাশের মানুষকে ছোট করা,হেয় করা তার অন্যতম কাজ। নীরার কাজে ভুল ধরে সে পৈশাচিক আনন্দ পায়। ম্যানেজার নীরাকে পছন্দ করে না তার অন্যতম কারনও হলো এই মিতালি। সহজ,সরল, অদক্ষ নীরাকে কী করে ছোট করতে হয় কিংবা তার মন মানসিকতা কী করে ভাঙতে হয় তা খুব জানে মিতালি। নতুন নতুন সবাই অনভিজ্ঞ থাকে৷ মিতালি নিজেও একসময় ছিল। তবুও অন্যের সমস্যা সে মজা ভেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। নীরাকেও কম করে নি। ম্যানেজারকে বুঝিয়েছে নীরা এ’কাজে অযোগ্য। মার্কেটিংএ একবিন্দু জ্ঞান তার নেই। আসলেই ছিল না নীরার। এটা ম্যানেজার জেনেই তাকে জব দিয়েছে। ভেবেছিল ধীরে ধীরে শিখে যাবে। নীরা শিখছে, ভুল ত্রুটি সংশোধনের জন্য সিনিয়র ভেবে মিতালির সাহায্য চেয়েছিল একসময়। সাহায্য করা তো দূরের কথা ঝাড়ি আর অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই মেলে নি তার কাছে। এসব দেখে আরমান এবং শিলা নীরাকে গোপনে সাবধান করেছে মিতালির বিষয়ে। সেই থেকে নীরা মিতালির থেকে দূরুত্ব বজায়ে চলে। নীরা অন্য সবার মতোই মার্কেটিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। এ যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে মিতালির। নীরাকে ছোট করার মানসে লোক দেখানো হাসি হেঁসে নীরাকে বলে,

” সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয় না বুঝলি তো?”

” চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? আজ না হলে কাল হবে।” নীরা মুখে উপর জবাব দিয়ে দেয়। মনে মনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেও বাহিরে হাসতে হাসতে বলে,

” তাই! কর চেষ্টা। দেখি কতোদূর তোর ভাঙা নৌকা ভাসে। চাপার জোর বাড়ালেই হয় না। আরও কিছু জানতে হয়।” মুখ ভেংচে চলে যায় মিতালি। নীরা ম্লান হাসে মিতালির দিকে চেয়ে। এই টুকু জীবনে কতো কিসিমের মানুষ সে দেখলো। মিতালির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কাজে মনোযোগী হয় নীরা। কাস্টমার সামলাইতে তার দিন কেটে যায়।

ডিউটি শেষে সবাই বাইরের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। নীরা ব্যাগ থেকে চাদর বের করে গায়ে জড়িয়ে নিল। শীত করছে ওর। পাশে দাঁড়ানো আরমানের গম্ভির মুখ দেখে খারাপ লাগে ওর। আরমানকে গতকালের জন্য অনেক কথা শোনানোর পর থেকে তেমন কথা বলছে না সে নীরার সাথে। আরমানের মলিন মুখটা দেখে নীরার খারাপ লাগলেও মনে মনে চেপে গেল। ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো নীরা। আগে একা বাসে উঠতে ভয় করত। এখন তেমন করে না। অভ্যাস হয়ে গেছে প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে করতে।

বাসায় এসে নীলা শুনলো মেহের এবং রাফসানের এনগেজমেন্ট ঠিক হয়েছে একটু আগে। কাল সন্ধ্যায় আংটি বদল হবে দু’পরিবারের উপস্থিতিতে। সে’কারনে মেহের আজও আসবে না। বরং ওদের দু’জনকেই কাল যেতে হবে মেহেরের ওখানে। নীরা হিজাবের পিন একটা একটা করে খুলতে খুলতে বললো,

” কাল তো ছুটি নাই আমার।”

” আরে হ্যাঁ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোর ছুটি রবিবার হয়। এখন কী হবে তাহলে? ছুটি নিতে পারবি না একদিন?”

” না আপু পারব না। আমি না গেলেই বোধহয় ভালো হবে।”

” এটা কী বলিস? মেহের কতো কষ্ট পাবে তোকে না দেখলে।”

” তুমি বুঝছ না আপু। সেখানে রাফসান ভাইয়ের মা থাকবে সাথে উনাদের আরও আত্মীয় স্বজন,,,! ” নীরা মুখ নামিয়ে হাতের হিজাবটা মোচরায়। শারমিন নীরার কথাটা নিয়ে ভাবলো। চিন্তিত হয়ে বললো,

” ঠিক বলেছিস। আমারই ভুল হয়েছে রে। ভুলেই গেছিলাম ওদের এনগেজমেন্টের খুশিতে। আচ্ছা তাহলে তোর যাওয়ার দরকার নেই। মেহেরকে আমি বুঝিয়ে বলবো।

” হুমম।”

” মন খারাপ করেছিস?”

” না!” নীরা মৃদু হাসল।

” যা ফ্রেশ হয়ে নে। খাবার গরম করছি একসাথে খাব দু’জন। ”

” আচ্ছা! ”

শারমিন উঠে রান্না ঘরে চলে যায়। নীরা কাপড় হাতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। কাপড় পাল্টে খাবার খেতে বসে দু’বোন। অনেক কথায় হয় দু’জনের। নীরার কাজের কথা, শারমিনের হবু বরের কথা। তবে সবচেয়ে বেশি শারমিন বলে মেহের আর রাফসান সম্পর্কে। তার কথায় নীরা টের পায় রাফসান এবং মেহেরের পূর্ব রিলেশন ছিল। শারমিনকে বেশ উৎফুল্ল মনে হলো ওদের এক হওয়ায়। নীরার উৎফুল্ল, হতাশা কিছুই নেই। সবাই খুশি হোক,ভালো থাকুক এই দোয়ায় সে করবে। তার জীবনে যা হয়েছে অন্য কারো জীবনে যেন তার ছিটেফোটাও না পড়ুক। খাওয়া শেষে শারমিন মেহেরকে কল করে। বান্ধবীদের মধ্যে বেশ হাস্যকৌতুক শুনতে পেল রান্নাঘর থেকে নীরা। সেও মাঝে মাঝে মৃদু হাসছে সেসব শুনে। পরের সুখে সুখী হয়েও একধরণের আনন্দ উপলব্ধি করা যায়। সবাই তা বোঝে না।

মেহেরের মনে হচ্ছে সে কৈশোরে পা দেওয়া এক তরুনী। মনের মানুষ পাওয়ার আনন্দে তার মন সমুদ্র উত্তাল আজ। অযথায় হাসছে, বকবক করছে। মেহেরকে এতোটা উদ্বেলিত হতে আগে কখনো কেউ দেখি নি। পরিবারের লোকের কাছে যথেষ্ট বদমেজাজি ছিল সে। আজ যেন সম্পূর্ণ নতুন এক মেহেরকে দেখছে সবাই। মাসুদ সাহেব মেয়েকে পাশ বসিয়ে বললেন,

” তুই সত্যিই খুশি হয়েছিস মেহু?”

” আব্বু!” মেহের লজ্জা মুখ নুয়ে ফেলে। মাসুদ সাহেব হাসেন মেয়ের দিকে তাকিয়ে। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে,

” অনেক অন্যায় করেছি জীবনে। শাস্তিও পেয়েছি তবে তার তুলনায় কম। ভেবেছিলাম তুই বুঝি আমাকে কোনোদিন আর আব্বু বলে ডাকবি না?” মাসুদ সাহেবের কন্ঠস্বর বিগলিত হয়। মেহের বাবার মাথায় হাত রেখে ধমকের সুরে বলে,

” আব্বু তুমি আবার এসব শুরু করলে? ডাক্তার বলেছে টেনশন না করতে।”

মাসুদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে বলে,

” রাগ না করলে একটা কথা বলি মেহু?”

” বলো?”

” রাগ করবি না বল?”

” করবো না বলো।” মেহের হাসে

” শোয়েব কিন্তু খারাপ ছেলে না রে মা। আমার মতো তো একদমই না। যৌতুকের বিষয়টা তুই যেমন জানতি না ও নিজেও জানত না। আমাদের দোষে ছেলেটা শাস্তি পেল। ওর বাবা সেদিন হাতে ধরে ক্ষমা চেয়ে গেছে। তার ছেলেটা তার সাথে কথা বলে না। একেবারে নাকি বিদেশ চলে যাবে আগামী মাসে শোয়েব। তুই ভাবিস না তোকে শোয়েবকে বিয়ে করতে বলছি আমি। শুধু চাচ্ছি ওর সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখিস না মনে।” মাসুদ সাহেব মেয়ের গম্ভীর হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে চেয়ে আছেন। তিনি কথাটা বলে ঠিক করলেন না ভুল ঠাহর করতে পারছেন না এই মুহূর্তে। তার মন বলছিল কথাটা মেহেরকে না বললেই নয়। ঝোঁকের বসে তাই বলেই ফেলেছেন। মাসুদ সাহেব আবার বললেন,

” রাগ করলি মা?”

” না আব্বু!” মেহের একচিলতে হাসল। পাঁচটা বছর ধরে যেই দোষী মানবমূর্তিকে সে মনে গড়েছে। তা এক মুহূর্তে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল? সে দোষী নয়! দোষ তবে কার? মেহেরের?

” না! না! সব তারই দোষ। সে দোষী আমি নই!” মেহেরের মন বিদ্রোহ করলো নিজেকে দোষী মানতে। শোয়েব তারই দেওয়া শাস্তি বিনা অপরাধে বয়ে চলেছে। এ’কথা মেহের কিছুতেই মানতে পারছে না। অজানা এক কষ্ট এসে চেপে ধরেছে তার ভেতরটা।

” কেন বললে আব্বু? কেন শোয়েবের অপরাধী মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলে?” মেহের স্থির দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ রেখেছে। মাসুদ সাহেব মেহের মানসিক অবস্থা আন্দাজ করে চুপ করে রইলেন। বাবা মেয়ে চুপচাপ হাসপাতালের কেবিনে বসে আশে পাশাপাশি।
তাদের নিরবতা ভঙ্গ হলো মেহেরের মোবাইলের রিংটোনে। গতকালকের ঘটনার পর মেহের মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রাখে না । স্থির চোখে দেখে নিল মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ব্যারিস্টার শব্দটা। বাবার পাশ ছেড়ে মেহের উঠে বাইরে বেরিয়ে এলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে রিসিভ করলো কল। দু’পাশে দু’জনই চুপ। একজন লজ্জায়, অন্যজন সঙ্কোচে। মেহেরই প্রথম কথা বললো মৌনতা ভেঙে।
সলজ্জিত কন্ঠে বললো,

” বোবা হয়ে গেলে যে?”

” মেহের তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল। আসতে পারবে এখানে?” রসহীন কন্ঠে বললো রাফসান।

” এখনই?” মেহের জিজ্ঞেস করে

” হ্যাঁ! ”

” ঠিক আছে আসছি।” রাফসান কথা বাড়াল না। কল কেটে দিল সাথে সাথে। মেহের মোবাইলে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে ভাবছে,

” জনাবের এতো তাড়াহুড়োর কারণ কী হুমম?” মেহের হাসল। বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো রাফসানের অবস্থানরত হোটেলে। নিরিবিলি একটা পরিবেশ। রাফসান হোটেলের পাশের খোলা জায়গাটার ছাউনির নিচে বসা ছিল। আশেপাশে তেমন কেউ নেই এসময়। হোটেলটা ভিআইপি বলা চলে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মেহের এসে বসতেই রাফসান একপলক দেখি নিল তাকে। উজ্জ্বল মুখচ্ছবিখানি একটু পরই হয়তো কালো মেঘে ঢেকে মলিন হয়ে যাবে। তাই বলে তো তাকে রাফসান ধোঁকা দিতে পারবে না। সত্যিটা জানা মেহেরের দরকার৷ অনেক বেশিই দরকার৷ রাফসান নাক টেনে নিঃশ্বাস নিল। মেহের আজই প্রথম খুব বেশি লজ্জা পাচ্ছে রাফসানের মুখোমুখি বসে। আড়চোখে দু’একবার তাকিয়ে বুঝতে চাইল রাফসানের হাবভাব। তার বোঝার আগেই রাফসান মৃদু শব্দে গলা ঝেড়ে বললো,

” তোমাকে আজ একটা কথা বলতে চাই আমি মেহের। জানি না কথাটা শুনে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে আমার প্রতি। নিজের সাথে অনেক লড়াই করে এখানে এসেছি আমি মেহের। শুধু তোমাকে কথাটা বলবো বলে। জানি না এর পর কী হবে? তবুও বলব। কেন বলব জানো?”

মেহের মাথা নাড়ায় ভ্রুকুটি করে। রাফসানের কন্ঠস্বরে সে এমন কিছুর সংকেত পাচ্ছে যা সে মানতে পারবে না। মেহেরের বুক ধড়ফড় করছে। দু’চোখের পাতা কাঁপছে। রাফসান তার চোখে চোখ রেখেই বললো,

” আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে ধোঁকা দিতে চাই না বলে। মেহের আমি অন্য কাওকে ভালোবাসি। সেই অন্য কেউ তুমি নও।”

মেহেরের কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। ক্রমাগত ঢোক গিলছে সে। বিস্ফোরিত চোখদুটোর কোনা দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। বাকরুদ্ধ মেহের বসে আছে হাত মুঠ করে । মাটির উপর বসে আছে তবুও মনে হচ্ছে ভাসছে সে, মহাশূন্যে ভাসছে। রাফসান চোখ সরিয়ে নিল। তার কন্ঠস্বর কাঁপছে। রাফসান আবার বললো,

” তুমি যদি চাও আমি তোমাকে,,,!” মেহের হাত উঁচু করে রাফসানকে থামিয়ে দেয়। কান্না গলা অব্দি চলে এসে মেহেরের। সেটা ঠেলে গলা উঁচু করে কঠিন স্বরে বলে,

” আমাকে আগে বলো নি কেন?”

” প্রয়োজন কী ছিল আগে বলার?”

মেহের বিদ্যুত গতিতে ছুটে গিয়ে কলার চেপে ধরে রাফসানের। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

” ছিল না প্রয়োজন? বলো ছিল না? তুমি জানতে না আমি তোমাকে পছন্দ করি, ভালোবাসি?”

” তুমি কী জানতে না আমি তোমাকে বন্ধু ছাড়া ভিন্ন কিছুই ভাবিনি?” রাফসান অন্যদিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো

” কেন ভাবো নি বলো? কেন ভাবো নি ভিন্ন কিছু?”

মেহের এলোপাথাড়ি রাফসানের বুকে কিল চড় দিতে দিতে হাঁটু ভর করে বসে পড়ে নিচে। করতলে মুখ ঢেকে কাঁদছে মেহের। এক নিমিষে সব কিছু শেষ হয়ে গেল তার। রাফসান অশ্রুটলমল চোখে স্থির তাকিয়ে ভরাট স্বরে বলে,

” আ’ম স্যরি মেহের। আমি চাইনি তুমি ধোকার মধ্যে সুখ খোঁজো। আমার অবস্থানটা যদি আমি বোঝাতে পারতাম তোমাকে?”

” স্টপ ইট রাফসান। জাস্ট স্টপ ইট। আমার সামনে থেকে চলে যাও তুমি। যাও বলছি।”

” মেহের!”

” যাও,,,! মেহের নত মুখ চিৎকার করে ওঠে।

রাফসান প্রস্থান করতেই শব্দ করে কেঁদে ওঠে দু’হাটুতে কপাল ঠেকিয়ে মেহের।সত্যি তো বলেছে রাফসান। সে তো জানত রাফসান তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু কাকে ভালোবাসে রাফসান? কে সে যে মেহেরের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে উঠল হঠাৎ রাফসানের? মেহের দাঁত কামড়ে কাঁদছে।

” বিনা দোষে ভালোবাসার মানুষটির কাছে প্রত্যাখ্যাত হলে খুব কষ্ট লাগে তাই না মেহের?”

মেহের চমকে মুখ তোলে। কান্নাসিক্ত স্বরে বলে

” শোয়েব আপনি?” শোয়েব মৃদু হেঁসে এক হাত বাড়িয়ে দেয় মেহেরের দিকে। মেহের সেদিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসে ওঠে। শোয়েবের হাত অগ্রাহ্য করে উঠে দাঁড়ায়। চড়া গলায় বলে,

” শান্তি পেয়েছেন আমাকে এই অবস্থায় দেখে? খুশি হয়েছেন খুব তাই তো? আপনার জ্ঞাতার্থে বলি আমি আপনাকে বিনা দোষে শাস্তি দেই নি।”

” প্রথম কথা শান্তি আমি পায় নি তোমাকে কাঁদতে দেখে। দ্বিতীয় কথা, তোমারও বোঝা উচিত রাফসানও বিনা দোষে শাস্তি তোমাকে দেয় নি।”

” আপনি রাফসানের সাথে আমাকে তুলনা করছেন? আপনি কী জানেন? কিছুই জানেন না। ওকে তো আমি ছাড়বো না। কাকে ভালোবাসে আমিও দেখে নেব। খুন করে ফেলবো তাকে আমি।”

শোয়েব ঘুরে দাঁড়ায়। সামনে হাঁটতেই মেহের রেগে বলে,

” কী হলো যাচ্ছেন কোথায়? মজা দেখা শেষ আপনার শোয়েব ইব্রাহীম? ”

শোয়েব তড়িৎ বেগে ছুটে এসে মেহেরের বাহুদুখানি ধরে একদম নিজের মুখোমুখি নিয়ে আসে। চোয়াল শক্ত করে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে বলে,

” কতোবার বলবো তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আনন্দিত নই আমি। সব জানি আমি তোমার বিষয়ে। তুমি রাফসানের ভালোবাসাকে মারতে চাচ্ছ। তাহলে আমারও তো উচিত রাফসানকে মেরে ফেলা তাই না? পাঁচ টা বছর মেহের। পাঁচটা বছর তোমার প্রত্যাখ্যানের আগুনে জ্বলছি আমি। বিনা দোষে শাস্তি দিয়েছ আমাকে তুমি। একটি অনুযোগও করি নি আমি। আমি চেয়েছি তুমি ভালো থাকো। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ভুল করেছিলাম সেদিন৷ তোমার মতো ভাবা উচিত ছিল আমার। আমার ভালোবাসাকে যে কেড়ে নিল তাকে মারবো না ভাবছো? তোমাকে কষ্ট দিয়েছে ও। ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে।”

শোয়েব মেহেরকে ছেড়ে সামনে এগোতে থাকে। মেহের হাফাচ্ছে। শোয়েবকে এমন রূপে কোনোদিন দেখবে কল্পনাও করেনি সে। যে এতোকাল চুপ ছিল আজ কেন এলো? কেন বুঝিয়ে দিল মেহের দোষী। শোয়েবের সকল ব্যথার কাছে তার ব্যথা ক্ষুদ্র মনে হলো। শোয়েবকে হোটেলের দিকে যেতে দেখে ছুটে যায় মেহের। হাত টেনে ধরে নত মুখে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বলে,

” আ’ম স্যরি শোয়েব। প্লীজ ক্ষমা করে দিন আমাকে। আমার ভুল হয়েছে। আপনি আমাকে শাস্তি দিন। মেরে ফেলুন৷”

শোয়েব দু’হাতে মেহেরের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,

” আমি তোমার কোনো ক্ষতি চাইনা মেহের। ভালোবেসেছি আমি তোমাকে। সারাজীবন এভাবেই বেসে যাবো। আমি যা পাই নি তোমাকেও তা পেতে দেব না এমন ভাবনা আমার নেই। তুমি সুখী হও সেটাই মনেপ্রাণে চাই আমি। রাফসানকে বোঝাব আমি৷ চলো আমার সাথে।” শোয়েব মেহেরের হাতটা নিজের হাতে নেয়। মেহের বিস্ময়ে দেখছে শোয়েবকে। এতোটাও উদার কেউ হয়? পরক্ষনেই তীব্র রাগ হলো ওর। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে কড়া স্বরে বললো,

” ভালোবাসেন না ছাই। ভালোই যদি বাসতেন তবে এভাবে টেনে ধরে অন্যের সাথে মেলাতে নিয়ে যেতেন না। এতোকাল চুপ থেকে এখন কেন এসেছেন? কাওয়ার্ড একটা।” মেহের চোখ মুছে রাগ গজগজ করতে করতে গেটের দিকে হাঁটতে থাকে। শোয়েব মুচকি হাসে আর বলে,

” হায়রে নারী! এ’পথে গেলেও বারি, ও’পথে গেলেও আড়ি।”
ক্যাকটাস
পর্ব-১৫
Writer Taniya Sheikh -Tanishq

নীরাসহ সকল কর্মচারীদের ম্যানেজারের কক্ষে ডাকা হয়েছে। সকলে পাশাপাশি সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। ম্যানেজারের পাশে বসা এই কোম্পানির বড় কর্মকর্তা সহ বাকি সিনিয়ররা। বড় কর্মকর্তাটিকে নীরা এর আগেও একবার দেখেছে। ম্যানেজারের থেকে বছর পাঁচেক বেশি বয়সের হবেন তিনি। বেশ গুরুগম্ভীর চেহারা বড় কর্মকর্তার। সকলে উৎসুক চাহনীতে তাকিয়ে আছে বড় কর্মকর্তার দিকে। ম্যানেজার বড় কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে হালকা কেঁশে বললো,

” আগামী সপ্তাহে কক্সবাজারে একটি মেলা হতে যাচ্ছে। শীতকালীন বাণিজ্য মেলার মতোই। কিছু ব্যবসাীদের উদ্যোগে উক্ত মেলার আয়োজন করা হবে। আমাদের চেয়ারম্যান স্যারও সেখানে অংশীদার। তো বলাবাহুল্য সেখানে আমাদের স্টল থাকবেই। আপনারা জানেন বিভিন্ন দেশি বিদেশী পণ্যের সাথে আমরা আমাদের নিজস্ব পণ্যেরও মার্কেটিং করি। ওখানে আমাদের নিজস্ব ব্রান্ডের মার্কেটিং হবে। অনেকে যেহেতু নিউ জয়েন করেছেন। তাদের সুবিধার্থে বিষয়টা আরেকবার জানানো হলো। এবার দুটো স্টল পাব আমরা। চার থেকে ছয়জন সেলসম্যান এবং সেলসগার্ল নেওয়ার চিন্তা ভাবনা আছে আমাদের। পুরাতন যারা আছে তাদের নেওয়াটাই আমি উপযুক্ত মনে করি। তবে নতুনদের হতাশ হবার কিছুই নেই। নতুন যারা জয়েন করেছেন তাদের মধ্য থেকে দুইজনকে আমি সিলেক্ট করবো। এ দায়িত্ব চেয়ারম্যান স্যার আমাকে দিয়েছেন। নতুনদের মধ্যে আমি আরমান এবং নীরা কে সিলেক্ট করেছি। আপনারা ছুটির পর আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আর হ্যাঁ পুরাতন যারা যাবেন। তাদের সবার লিষ্ট ছুটির আগেই পেয়ে যাবেন৷ এখন আপনারা কাজে যেতে পারেন৷” এতোক্ষণের চাপা নিরবতা ফিসফাস শব্দে মুখরিত হলো। ম্যানেজারের কক্ষ থেকে বের হতেই উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেল সবার মধ্যে । নীরার দিকে সবারই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। নীরা সিলেক্ট হয়েছে এ যেন বিশ্বাসযোগ্য নয় কারো কাছে। কেউ কেউ নীরাকে উদ্দেশ্যে করে অশালীন মন্তব্য করতেও কুন্ঠিত হচ্ছে না। নীরার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে এসব দেখে। সে নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে চলতে চায়। কিন্তু বার বারই বাঁধা এসে হুমড়ে পড়ছে তার সম্মুখে। নীরা সবার হিংসাত্মক চাহনী এড়িয়ে শিলার কাছে এলো। শিলা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে। নীরাকে আসতে দেখে অনিচ্ছা পূর্বক হাসল সে। নীরা এ হাসির অর্থ ঠিক বুঝল। তাতেই যেন মন খারাপ হলো নীরার। আরমান গতকালের মান অভিমান ভুলে ছুটে এসে শিলার গলা একহাতে জড়িয়ে হাসি মুখে বললো,

” এতো তাড়াতাড়ি এমন চান্স পাব ভাবতেই পারি নি। তোর তো কপাল খুলে যাবে নীরা।”

” মানে?” নীরা ভ্রুকুঞ্চন করল।

” আরে এ দেখি কিছুই জানে না। কক্সবাজার যে মেলাটা হতে যাচ্ছে সেখানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানি আসবে, নিজেদের পণ্য মার্কেটিং করতে। আমরা যদি ভালো সেল করতে পারি। এমডি স্যার আমাদের বেতন বাড়িয়ে তো দেবেনই সাথে সাথে প্রমোশনের সুযোগ আছে। সবচেয়ে বড় কথা দারুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবো সেখানে। ট্রেনিং এর মতো অনেকটা।”

” ওওও!”

” ওও আবার কী? তুই হ্যাপি হোস নাই?” আরমান চোখ ছোট করে।

” আমি যাব না। অতোদূর একা যাওয়ার সাহস আমার নেই।” নিরস গলায় বললো নীরা

” পাগল নাকি এইডা? আরে ছাগলী! এতো বড় অপরচুনিটি কেউ ছাড়ে? প্রমোশন মানে বুঝেছিস? এখান থেকে রামপুরা হেড অফিস জয়েন করতে পারবি। তোর লাইফ সেট হয়ে যাবে। একমাস ইন্ডিয়া ট্রেনিং শেষে পুরোদস্তুর কর্মচারী হয়ে যাবি হেড অফিসের। এর পর এই জব ছাড়লেও সমস্যা নাই। তোর অভিজ্ঞতা দেখলে যে কোনো জায়গায় জব হয়ে যাবে। সো মাথা ঝাড়া দে। না করার কথা দ্বিতীয় বার মুখে আনিস না। নয়ত যেখানে আছিস ফের আর উপরে উঠতে পারবি না সহজে। তোর লাকই তোকে এই অপরচুনিটি দিয়েছে। কে জানে দ্বিতীয় সুযোগও পেয়ে যেতে পারিস। তাই না শিলা?” আরমান শিলার দিকে তাকাতেই চোখ ছোট করে ফেললো। নীরা সেদিকে তাকিয়ে রইল চুপচাপ। আরমান একবার নীরার দিকে আরেকবার শিলার দিকে তাকিয়ে বললো,

” কী সমস্যা তোদের?”

” কিছু না!” শিলা গম্ভীরমুখে চলে গেল কাজের স্থানে। নীরা সেদিকে তাকিয়ে মলিন মুখে বললো,

” আমি বরং ম্যানেজার স্যারকে আমার বদলে শিলার কথা বলি?”

” চটকানি চিনিস? নীরা তুই এতো বোকা কেন? নাকি ইচ্ছা করে বোকামি করিস? ইচ্ছা করে বোকামি করে লাভ টা কী বলবি আমাকে?” আরমান রেগে যায়

” কোনো লাভ নেই। আমি চাইনা আমার কারনে কেউ কষ্ট পাক,মন খারাপ করে থাকুক।” নীরা বললো

” এ কী বলে এসব? ঐ পুরো পৃথিবীর মানুষকে তুই ভালো রাখতে পারবি? মানুষের নেচার সম্পর্কে কোনো ধারণ আছে তোর? মানুষ এমনই এক প্রজাতি যাদের যতো দিবি ততই চাহিদা বাড়বে। একসাথে সবাইকে খুশি রাখতে পারবি না তুই। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গই পারেন নাই। তুই কোন ক্ষেতে মুলা? যতোটুকু জ্ঞান আছে ততোটুকুই কাজে লাগা। এক্সট্রা বুঝবি না বুঝেছিস? যা কাজে যা।” ধমকের সুরে বলে আরমান। নীরা তাতে কষ্ট পায় না। ওর যতো কষ্ট শিলার মন খারাপের জন্য। মলিন মুখে বলে নীরা,

” শিলা মন খারাপ করেছে রে?”

” করুক মন খারাপ। বাচ্চা নাকি ও? আর শোন! শিলার জন্যে আমি আছি। ওকে সামলে নেব আমি। তুই নিজের কথা ভাব। তোর নীরা কেউ নাই আল্লাহ ছাড়া। আল্লাহ তোকে যে সুযোগ দিয়েছে বোকামি করে সে সুযোগ হারাস না প্লীজ।”

আরমান কথাটা বলে নিশ্চুপ কিছুক্ষণ চেয়ে দেখে নীরাকে। এই মেয়েটার সামনে এতো বড় সুযোগ অথচ কেমন বোকামি চিন্তা মনে ধারণ করে রেখেছে। আরমান ঘার ঘুরিয়ে শিলাকে দেখে নিল। ওদের দু’জনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে রয়েছে অদূরে শিলা। আরমান ঘুরে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে গিয়ে দাঁড়ায় শিলার সামনে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সতর্ক দৃষ্টিতে সবার চোখের আড়ালে শিলার গালে হালকা চুমু দেয়। অভিমানি গলায় বলে,

” আমাকে বিশ্বাস করিস না তুই? ”

” আমার ভয় করছে তোমাকে একা ছাড়তে। আমাকে যদি ভুলে যাও ঐকদিনে?” সহকর্মী, বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যখন ভালোবাসার সম্পর্কে ধরা দেয়। তখনই তুই থেকে তুমি সম্বোধন করে ওরা।

” এই তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিলাম। কোনোদিন তোমাকে ভুলব না। আগামী বছর দুজন বিয়ে করবো কথা দিয়েছি না? বিশ্বাস রাখো প্লীজ!”
শিলা নত মুখে ফুঁপিয়ে ওঠে৷ আরমান টেনে শিলাকে আড়ালে নিয়ে দুবাহুর বাধনে বেঁধে বলে,

” নীরার বিষয়ে তো সব জানো। তবুও এমন করবে? ওকে চেনো না? তোমার মন খারাপ দেখে এখন ও যেতে চাচ্ছে না। ফ্রেন্ডস হিসেবে এমন কী করা উচিত আমাদের?”

” আমি ওকে স্যরি বলে বুঝাব। ও অবশ্যই যাবে।”

আরমান শিলার থুতনি ধরে মুখ তোলে। শিলার চোখজোড়া অশ্রুসিক্ত। আরমান নিজ হাতে সেই নেত্রজল মুছে বলে,

” এই না হলে আমার বউ। আমি রোজ তোমাকে কল করবো। একদম মন খারাপ করবা না জান ওকে?”

” হুমম!” শিলা অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়। কারো পায়ের আওয়াজে দু’জনে দূরে সরে দাঁড়ায়। ওদেরই এক সহকর্মী এসেছিল এদিকে। শিলা এবং আরমানকে দেখে ভ্রুকুটি করে হাসল মেয়েটি। বিউটি প্রডাক্টের বাক্সটা হাতে করে নিয়ে কী যেন ভাবতে ভাবতে চলে যায়। মেয়েটি যেতেই শিলা বলে,

” আমি নীরাকে স্যরি বলে আসি।”

আরমান শিলার হাত টেনে ধরে বলে,

” এখন না। যা বোঝানোর বুঝিয়েছি আমি। বাকিটা দু’জনে মিলে ছুটির পর বুঝাব। এখন কাজে মনোযোগ দাও তুমি।”

” আচ্ছা! ” শিলা কিছুদূর এগিয়ে আবার ফিরে আসে। আরমানকে দু’হাতে জাপটে ধরে বলে,

” আই লাভ ইউ আরমান!”

” আই লাভ ইউ টু বউ।” দুটি হৃদয় একই ধারায় বহমান। সাময়িক বিচ্ছেদ আশঙ্কায় তাই ভয় বাসা বেঁধেছিল ক্ষনিকের জন্য।

নীরা কাজে মনোযোগ দিয়েছে। কাজ করতে করতেই হঠাৎ ভাবনায় এলো আজ তো মেহেরের এনগেজমেন্ট। নীরা অবসর পেয়ে চট করে শারমিনকে একটা কল করে। দু’একবার রিং হতেই ওপাশ থেকে শারমিন রিসিভ করে উত্তেজিত কন্ঠে বলে,

” নীরা মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে বুঝলি?”

” কী হয়েছে আপু? মেহের আপুর আব্বু ঠিক আছেন তো?” নীরা আতঙ্কিত হয়ে বলে

” আরে আঙ্কেলের কোনো সমস্যা হয় নি। সমস্যা হয়েছে মেহেরকে নিয়ে। শালি তো গায়েব!” অতিরিক্ত চিন্তা কিংবা রাগের বশে গালমন্দ করা শারমিনের স্বভাব।

” গায়েব মানে?” উত্তেজনায় নীরার কন্ঠস্বর উঁচু শোনালো। আশেপাশে সবাই ঘুরে তাকাতেই নীরা মুচকি হেঁসে পুনরায় আস্তে করে বললো,

” গায়েব মানে! কী বলছ?”

” আরে তুই গায়েব মানে বুঝোস না? গায়েব মানে হাওয়া।”

” বলো কী? কিন্তু কেন?”

” আমি কী জানি কেন? এখানে চিন্তায় সবার মরমর অবস্থা। এক কাজ কর তুই। ডিউটি শেষে সোজা এখানে চলে আয়।”

” কিন্তু!

” তোর কিন্তু পরন্তু পরে বলিস। আগে আয়। আমার অবস্থা বেশি সুবিধার না। মাথা টাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারি। তুই পাশে থাকলে ভরসা পাব। চলে আসিস।”

শারমিন হাঁসফাঁস করতে করতে কল কেটে দেয়। নীরা কক্সবাজারের ব্যাপারটা একদম ভুলে গেল মেহেরের গায়েব হওয়ার চিন্তায়। অফিস ছুটি শেষে আরমান এবং শিলার সাথে কথা হলো নীরার। ম্যানেজার তাকে এবং আরমানকে ডিটেইলসে সব বুঝিয়েছে। নীরার গত কিছুদিনের কাজে ম্যানেজার সন্তুষ্ট হয়েছে কিছুটা। তাছাড়া মেহেরের পরিচিত বলেই সুযোগটা নীরাকে স্পেশালি দিয়েছেন তিনি। নীরাকে এও বলেছেন তার মান নীরা এবং আরমানের হাতে। ভালো কাজ দেখাতে পারলেই তিনি খুশি হবেন৷ নয়ত ওখান থেকে আসার পরই তাকে ছাঁটাই করা হবে। যারা যাবে তাদের থাকা খাওয়া সম্পূর্ণ অফিস কতৃপক্ষ দেখবে। তিনজনে ম্যানেজারের বলা কথাগুলো আলোচনা করছে রাস্তার এককোনে দাঁড়িয়ে। আরমান এবং শিলা নীরাকে উৎসাহ দেয় সেখানে যাওয়ার জন্য। নীরা চট করে জবাব দিতে পারে না। সে জানায় আগামীকাল শারমিনের সাথে ভাবনা চিন্তা করে সিওর হয়ে জানাবে। মেহেরের কথা মনে পড়তেই নীরা ওদের দু’জনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠে বসে। মোবাইল অন করে শারমিনকে জিজ্ঞেস করে নেয় মেহেরের বাসার ঠিকানা। আরমান এবং শিলা আজ কিছু সময় একান্তে কাটাতে চাইছে। দু’জনে হাতে হাত রেখে রিক্সায় চড়ে বসলো। গন্তব্য জানা নেই। ধ্যানে, জ্ঞানে কেবলই প্রিয়জনের একটু সান্নিধ্য পাবার ব্যাকুলতা।

মাসুদ সাহেব হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। আজ তার আদরের মেয়েটার এনগেজমেন্ট অথচ মেয়েটা লাপাত্তা। ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণ রয়েছেন তিনি। এই মাত্র ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে তাকে। মেহেরের মা, ভাই পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশ দেখছে বলে আশ্বস্ত করেছে মেহেরের পরিবারকে। প্রচন্ড চিন্তা আর টেনশনে রয়েছে উপস্থিত দু’বাড়ির লোকেরা। যেহেতু আংটি বদল দ্বিতীয় বার হচ্ছে মেহেরের তাই তেমন কাউকে জানানো হয় নি। রাফসানের পরিবার থেকে রাফসান, তার বোন, মা, বড় মামা এবং চাচা এসেছেন। মেয়ে গায়েব শুনে রাফসানের মেঝ চাচা এবং বড় মামা বিব্রতবোধ করছেন। দুজনই বসে আছেন মেহেরের বাবার কেবিনের এককোনে। এদিকে রাহেলা বানু এই শীতেও ঘামছেন৷ হবু বেয়াইয়ের বেডের সম্মুখের খালি কেবিনের বেডটটায় পা ছড়িয়ে বসে আছেন তিনি। বুকের মধ্যে শূন্যতা অনুভব করছেন খুব। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছেন আর মাঝে মাঝে ছেলের চুপসে থাকা মুখটা দেখে কপাল কুচকাচ্ছেন৷ মাথার উপর ফুল স্প্রিডে বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে,তবুও টুসি শক্ত মতো একটা কাগজ দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে রাহেলার পাশে দাঁড়িয়ে। রাহেলার ভাবছে মেহেরের হঠাৎ লাপাত্তা হওয়ার খবর শুনেও এমন নিশ্চল কেন তার ছেলে? ঘটনা কী? রাফসানকে এই মুহূর্তে কিছু জিজ্ঞেস করা বৃথা। একটা জবাবও সে দেবে না তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই রাহেলার। কতো আশা নিয়ে এখানে এসেছিলেন তিনি।

“হায়রে মেহের! কই তুই মা আমার? ওমা! চলে আয় মা। আর যে সহ্য হয় না। বুকটা টিপটিপ করে কাঁপছে। তোকে পুত্রবধূ না বানিয়ে যে শান্তি নাই আমার।” রাহেলা বিরবির করে বিলাপ করছে। তা দেখে টুসি ঝুঁকে বললো,

” আম্মা কষ্ট হচ্ছে তোমার? কই কষ্ট হচ্ছে? ডাক্তার ডাকমু? ও আম্মা! আম্মা!”

” চুপ থাক বেয়াক্কল,বেয়াকুব। কথা বলবি না। চুপ!” রাহেলার অপ্রত্যাশিত ধমকে টুসি চমকে ওঠে। ঠোঁট উল্টে বলে,

” ভাইয়াকে তো পারবা না বকতে।খালি আমার সাথে রাগ দেখাও। হুদাই বকো। পোলার চোপার উপরে কয়টা দিয়া জিগাও তার হবু বউ কই পলাইছে? আমারে বকলে হবু ভাবি রে খুঁজে পাইবা? পাইলে বকো। আগে একটু কাইন্দা আহি খাড়াও। তারপর আবার বইকো।” টুসি মুখে ওড়না ঠেসে ফুঁপাতে ফুঁপাতে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। রাহেলা কটমট করে দরজার দিকে তাকিয়ে উঁচু স্বরে বলে,

” রাফসান! এই রাফসান!”
রাহেলার চিৎকারে দরজার সামনে উপস্থিত সবাই কিছুটা বিরক্ত বিব্রত হয়। রাফসান গম্ভীরমুখে এসে মায়ের পাশে দাঁড়ায়।

” বলো মা!”

” বলো আবার কী? মেহের কই?”

” শুনলেই তো পাওয়া যাচ্ছে না ওকে। তবুও কেন প্রশ্ন করছ?” বিরক্তি প্রকাশ পায় রাফসানের কন্ঠে

” প্রশ্ন করব না বলছিস? এই তোর হবু বউ গায়েব আর তুই লইট্টা শুটকির মুখের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছিস।” রাহেলা চেঁচিয়ে ওঠে

” তো কী করব আমি?” রাফসান রেগে মৃদু স্বরে জবাব দিল

” কী করবি তার আমি কী জানি? আমারে মেহের এনে দে। তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় ওকে।” রাহেলার উঁচু গলার স্বর মুহূর্তে বাচ্চা শিশুর মতো কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।

” এমন ভাবে চাইছ যেন ও পুতুল আর আমি এখনি গিয়ে কিনে এনে দেব তোমাকে।”

” কথা বাড়াবি না তুই। সব দোষ তোর। হ্যাঁ তোর দোষ৷” রাহেলা কান্না ভেজা গলায় বলে

” মা এসব ফালতু প্যাঁচাল বন্ধ করো। এমনিতেও সবাই স্ট্রেসে আছে। প্লীজ নতুন করে ঝামেলা করো না আর। ভালো লাগছে না।” রাফসান হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। রাহেলা দাঁত পিষে জ্বলন্ত চোখে ছেলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে টুসিকে ডাকে। টুসি ফিরে এসে রাফসানকে যেতে দেখে চুপচাপ রাহেলার পাশে দাঁড়ায়। বলে,

” এই বার আবার বকো আম্মা।”

রাহেলার জ্বলন্ত চোখ শান্ত হয় টুসির মুখটার দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা শ্যামলা হলেও মায়াবি। বড় বড় চোখের পাঁপড়ি দেখলে ঠাহর করা যায় না আসল না নকল। গায়ের রংটা ছাড়া সবই সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা হলে মারাত্নক সুন্দরী হতো মেয়েটি৷ ভালো হয়েছে মারাত্মক সুন্দরী হয় নাই। মারাত্মক সুন্দরীদের পালা কষ্ট। সেদিক বিবেচনায় টুসিকে পালতে তেমন কষ্ট হয়নি রাহেলার। রাহেলা তেমন করে কখনো ওর গায়ে হাত তোলে নি৷ এক ভাবনার মধ্যে অন্য ভাবনা আসায় রাগটা আরও বেড়ে গেল রাহেলার। টুসিকে হাতের ইশারায় ঝুঁকতে বললে টুসি ঝোঁকে। রাহেলা চটাস করে চড় বসিয়ে দেন টুসির গালে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে ওঠে টুসির। কান্নাসিক্ত গলায় বলে,

” তুমি বলেছিলে বকবা। তুমি অনেক মিথ্যুক হয়ে গেছ আম্মা। যাও কথা নাই তোমার সাথে।” টুসি একপ্রকার কাঁদতে কাঁদতে আবার ছুটে যায় ওয়াশরুমে। রাহেলা যে হাতে মেরেছিল সে হাত মুঠ করে বেডের উপর আঘাত করছে। খারাপ লাগছে টুসিকে মেরে। এতোক্ষনের আটকে রাখা চোখের পানি অবাধে ছেড়ে দিলেন।

রাফসানকে নিচে নামতে দেখে সিঁড়ির পাশে দাঁড়ানো শারমিন এগিয়ে আসে। চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে,

” ভাই খোঁজ পেলেন মেহেরের?”

” না!” গম্ভীর জবাব রাফসানের। মনে মনে প্রচন্ড ভয় হচ্ছে, রাগের মাথায় কিছু না করে বসে মেহের। শারমিন বেশ বুঝল রাফসানের দুশ্চিন্তা। মুখ দেখেই প্রকাশ পাচ্ছে। শারমিন ইতস্তত করে বললো,

” আপনাদের মধ্যে কী কোনো ঝামেলা হয়েছিল ভাই?”

” আসলে,,,! রাফসান চেয়েছিল বিষয়টা কাউকে বলবে। কিন্তু কাকে,কিভাবে বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে। তারউপর একথা শুনলে সবাই জানতে চাইবে তার ভালোবাসার নাম, পরিচয়। যা বলা মানেই ঝড় ওঠা। না! অনেক অস্থির হয়েছে সে আর নয়। কাউকে কিছু বলবে না। মেহের যদি বলে বলুক। সে বলবে না। নীরা কী ভাববে সব জানলে? তাকে নিশ্চয় ঘৃণা করবে? প্রচন্ড ঘৃণা জন্মাবে রাফসান নামক মানুষটার উপর।

” উফ! তার চোখে ঝরা ঘৃণার বিচ্ছুরন আমি কী করে সইব? সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমার বিন্যস্ত জীবন অবিন্যস্ত হয়ে যাচ্ছে তোমাকে ভালোবাসার দায়ে। কঠিন শাস্তি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজ আমি নীরা! ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন নীরা?কেন তোমাকে ভালোবেসে এক মুহূর্তে সুখী আবার পরমুহূর্তে ভয়ে থাকি। এতোটা ভীত তো কোনোকালেই ছিলাম না আমি।”

“নীরা!” শারমিনেট কন্ঠে এ নাম শুনে চমকে ওঠে রাফসান।

” নীরা! কোথায় নীরা? তাকে বলো সে যেন আমার সম্মুখে না আসে আর। আমার ভেতরটা না অশান্ত করে আর!”

রাফসান যখন মনে মনে ছটফট করে ভাবছিল। তখনই তার পেছনে এসে নীরা দাঁড়ায়। রাফসান চোখ বন্ধ করলো ঘাড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের অস্থির মনটাকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করতে ব্যস্ত হলো সে। পাশে দাঁড়ানো শারমিন নীরাকে আপাদমস্তক দেখে বললো,

” এভাবেই এসেছিস?”

” হুমম!” রাফসানের সামনে শারমিনের এ ধরনের কথায় নীরা লজ্জিত হয়।

” তোকে নিয়ে আর পারি না। এখন যদি মেহের ফিরে আসে সাথে এনগেজমেন্টও শুরু হয়। তখন তোর লজ্জা করবে না এভাবে নরমাল ড্রেসে আসায়। বেক্কল!”

নীরা আড়চোখে ঘাড় উচু করে রাফসানকে দেখলো একবার। সে সিঁড়ি সাথের ছোট্ট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। নীরা কটমট করে শারমিনের দিকে তাকিয়ে নাক ফুলায়। ভাবছে এখানে না আসায় ভালো ছিল। নীরাকে চুপচাপ দাঁড়ানো দেখে শারমিন চাপা স্বরে বলে,

” সালাম দ্যাস না কেন ভাইকে? সালাম দে!”

নীরা মাথা ঝাকায় সে সালাম দেবে না। তার লজ্জা লাগছে। শারমিন চোখ পাকিয়ে ইশারায় জোর করে নীরাকে। নিরুপায় নীরা মৃদু স্বরে বলে,

” আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাই।”

রাফসানের মনে হলো জটিল প্যাঁচে ফেঁসে গেছে সে। একবার ভেবেছিল এদের পাশ কাটিয়ে নিচে নেমে যাবে। সেটাও পারে নি রাফসান। নীরার সালাম শুনে কিছুটা চকিত হলো সে। ভাই ডাক যেন সীসা হয়ে কর্ণপর্দা গলিয়ে দিচ্ছে,জ্বালিয়ে দিচ্ছে হৃদয়। মুহূর্তে প্রচন্ড রাগ হলো কেন যেন রাফসানের। মুখটা শক্ত করে সামনে তাকিয়ে নীরার অন্য দিকে ফেরানো মুখ চেয়ে কাঠখোট্টা জবাব দিল

” ভালো।” জবাব দিয়ে এক সেকেন্ড সেখানে স্থায়ী হলো না সে। দ্রুত পদে নেমে এলো নিচে। নিচে তার জন্য আরও বড় চমক ওয়েট করছিল। নববধূর সাজে মেহের এবং তার পাশে একজন সুপুরুষ হাত ধরাধরি করে এদিকেই আসছে। রাফসান নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে সে৷ কিছুক্ষণ আগের অজানা কারনের সৃষ্টি হওয়া রাগটা তখনও তার মুখমন্ডলে বিদ্যমান। মেহের তাকে দেখামাত্র মুখ চোখ কঠিন করে তুললো। পাশ কাটিয়ে যেতেই রাফসান উঁচু গলায় বললো,

” এমনই করার যখন ইচ্ছা ছিল তখন এসব নাটক কেন করলে?”

” আমার নাটক সিনেমা করতে ভালো লাগে বলে। কেন তোমার ভালো লাগে না?” মেহের রাগী চোখে ঠোঁট চেঁপে ব্যাঙ্গাত্মক হাসল। রাফসান মেজাজ দেখিয়ে বললো,

” সবাইকে এভাবে অপমান না করলেও পারতে তুমি মেহের আহমেদ।”

” অপমান করতে বাধ্য তুমিই কিন্তু করেছ আমাকে। ভেবেছিলে কী তুমি? ভেবেছিলে লোকলজ্জার ভয়ে মেহের সব জেনেও তোমাকে বিয়ে করতে চাইবে? চুপচাপ এনগেজমেন্টটা করেও নেবে তাই না? আর তুমি, তুমি আমাকে প্রতিনিয়ত বোঝাবে করুনা করেছ আমাকে বিয়ে করে তাই তো?”

মেহের রাফসানে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জোর গলায় চিৎকার করে। রাফসান নির্বাক হয়ে চেয়ে রয় মেহেরের অশ্রুটলমল চোখের দিকে। মেহেরের বেশভূষায় এমনিতেও আশেপাশের লোকজনের চোখে কৌতূহল। চিৎকার শুনে কেউ কেউ এগিয়েও এসেছে এদিকে। মেহেরের গলা শুনে শারমিন এবং নীরাও দৌড়ে নেমেছে নিচে। শোয়েবকে শারমিন আগে থেকেই চেনে। মেহেরের গত এনগেজমেন্টে সে উপস্থিত ছিল। আজ এতোবছর বাদে হঠাৎ উডবি বদল হওয়ার কারন কী? শারমিন বিচলিত এসব চিন্তায়। নীরার কৌতূহলের সীমা রইল না মেহেরকে দেখে। ভেবেছিল জটিল বুঝি তারই জীবন। এখন দেখছে ভিন্ন দৃশ্যপট। প্রতিটি মানুষের জীবনই সময় সময় জটিল থেকে জটিলতর রূপ নেয়।

শোয়েব মেহেরের হাতটা টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দু’হাতে মুখটা তুলে বলে,

” মেহের!”

” আপনি আমাকে নীতিকথার গল্প শুনাবেন না এখন প্লীজ! বলতে দিন আমাকে।” মেহের নাক টেনে টেনে বলে

” সবাই দেখছে। ওর সাথে এমন করার হক তোমার নেই। তাছাড়া ও তোমার,,,! শোয়েবকে থামিয়ে দেয় মেহের। বলে,

” তাছাড়া ও আমার কিছুই হয় না। বুঝেছেন আপনি? আমার যা এখন সব আপনি এবং আপনি!” শেষের কথাটুকু রাফসানের চোখে চোখ রেখে বললো মেহের। রাফসান মৃদু হাসল। তাতেই যেন ফুঁসে উঠল মেহের। রাফসানের হাত টেনে ধরে পাশের ওয়েটিং রুমে নিয়ে গেল সে। সেখানে যে দু’একজন ছিল। তাদের হাত জোর করে সবিনয়ে অনুরোধ করলো কিছুসময়ের জন্য বাইরে যেতে। উপস্থিত যারা ছিল তারা মেহেরের কথা রাখল। চুপচাপ বেরিয়ে এলো সেখান থেকে বাইরে। মেহের দরজা বন্ধ করে রাফসানের কলার চেপে ধরে বললো,

” খুশি হয়েছ তাই না? খুব খুশি হয়েছ আমাকে দেখে?”

” তুমি এতোটাকাল ভুলের মধ্যে বসবাস করছিলে।আজও তাই করছ।” রাফসান শীতল গলায় বললো

” ও রিয়েলি!” মেহের কলার ছেড়ে এক পা পিছিয়ে গেল। নিশ্চুপ রইল রাফসান। বৃষ্টির পূর্বলগ্নের আকাশের মতো থমথমে রাফসানের মুখটা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠল মেহের। দু’হাতে জড়িয়ে ধরে রাফসানের বুকে মাথা রেখে বললো,

” বড় ইচ্ছা ছিল ভালোবেসে এভাবে তোমাকে জড়িয়ে ধরব। কে জানত সেই ভাবনা এতোটা নিষ্ঠুর হবে। জড়িয়ে তো ধরলাম তবে তোমার হলাম না। কেন এমন করলে তুমি? তুমি তো বলেছিলে কাউকে ভালোবাসো না তবে হঠাৎ করে সে এলো কোথা থেকে? নাকি আমাকে চাওনা বলে মিথ্যা বলেছ?”

রাফসান মেহেরকে বুক থেকে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করায়। নিজ হাতে মেহেরের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,

” একথা তুমি ছাড়া কেউ জানে না মেহের। যাকে ভালোবাসি সেও নয়। আমি কোনোদিন কাউকে বলতে চাইনি। শুধু তোমাকে ধোঁকা দেব না বলে বড় সাহস নিয়ে জানিয়েছি। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি নিজেও জানতাম না কখন কিভাবে ঘটে গেলো এসব আমার সাথে। আমারই সব দোষ। তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এ আমারই দায়। আমাকে তুমি যা ইচ্ছা পারো শাস্তি দাও। সবার সম্মুখে অপমানিত করো,অপদস্থ করো। আমি তোমাকে তবুও দোষ দেব না। এসব যে সব আমার প্রাপ্য।”

রাফসান ঘুরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালে আঘাত করছে। বার বার বলছে,

” আমাকে ক্ষমা করো মেহের, আমাকে ক্ষমা করো।”

এতোক্ষন যেই প্রবল ঘৃণা আর রাগ মেহের রাফসানের জন্য পুষে রেখেছিল তার সবটাই ক্রমশ বিলীন হচ্ছে। ভ্রুকুটি করে কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে কাঁপা গলায় বললো,

” এ কেমন বিষ ধারণ করেছ তুমি বুকে রাফসান? ভালোবাসো অথচ বলতে পারো নি। আমি জানি জিজ্ঞেস করলে তুমি নামটা আমাকে বলবে না। বুঝেছি তোমার কথায় সেটা আমি। আমি ভেবেছিল একা আমিই পুড়ব আর তুমি সুখে থাকবে। এখন দেখছি সবটাই আমার ভুল।” মেহের শব্দ করে হাসল। এ হাসির অন্তরালে কতোটা বেদনা লুকায়িত তা যে কেবল ব্যর্থ প্রেমিক,প্রেমিকায় জানে। মেহের এগিয়ে গিয়ে রাফসানের পাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। রাফসানের দেয়ালে ঝুকানো মুখটা দেখে প্রশস্ত হাসি হেঁসে বললো,

” কী বিষম যন্ত্রণা যে না করিয়াছে পিরীতি বুঝিবে কেমনে? মরমে মরেছি প্রিয় মোরা। আজ তুমি নও মোর। না আমি তোমার কিংবা সে নেই তব বক্ষ বাসরে।”

মেহেরের ঠোঁটে অকারনের হাসি, ধারাপাতের জলে মুখশ্রীর বধূসাজ মলিন। সে চেয়ে আছে রাফসানের অশ্রুবিসর্জিত চোখ,মুখে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে৷ তাতে চোখের জল তার আরও বাড়ছে । নিয়তি এমন কেন হয়? যাকে আমরা চাই সে অন্য কাউকে চায়। কেন সব জেনেও নিজ হস্তে দুঃখকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরি আমরা। ভাবি এই তো ভালোবাসা! এই তো ভালোবাসা! না হোক পাওয়া তবুও সেই আমার চাওয়া। পরম আকাঙ্ক্ষিত চাওয়া।

চলবে,,,
চলবে,,.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here