#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 62
.
.
নাফিসা আমার পেটে মাথা রেখে পেটে হাত বুলিয়ে বললো,
– আপু!ওরা হওয়ার পর আমাকে দিয়ে দিও।ওদেরকে আমি পালবো।আমার বিয়ের পর আবার নিয়ে নিও।
নাফিসার কথা শুনে বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো!স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেলো!আমি দ্রুত শোঁয়া থেকে উঠে বসলাম!বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই দেখলাম গ্লাস নেই।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
– পানির গ্লাস রাখিস না কেনো?
– আমার দরকার হয়না।আনবো?
– থাক,লাগবে না!আমার হিজাবটা খুলে দে তো!
নাফিসা মাথার কাছে দাড়িয়ে হিজাব খুলে দিলো।খোলা শেষে আবার আমার কোমড়ের কাছে শুয়ে পেটে হাত রেখে বললো,
– তোমাদের বেবিগুলো যে কি কিউট হবে আপু!আমি তো ভাবছি ভাইয়ার মতো সুন্দর হবে নাকি তোমার মতো কিউট হবে!তোমরা দুইটাই তো হ্যান্ডসাম আর কিউটের ডিব্বা!
আমি নরমাল হয়ে বললাম,
– ছেলে হলে যেনো আমার মতো হয় আর মেয়ে হলে উনার মতো!
নাফিসা হাসতে হাসতে বললো,
– কারোর মতোই হওয়া লাগবে না!বেবিগুলো তাদের খালামনির মতো হলেই চলবে!
বলেই পেটে চুঁমু খেলো!সেইমুহূর্তে ইফাজ রুমে ঢুকে পরলো!নাফিসার কান্ড দেখে উনি বললেন,
– চুঁমু খেতে খেতে মেরে ফেলছো নাকি আমার বউটাকে?
নাফিসা চঁমকে উঠে উনার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই হেসে বললো,
– মাত্রই শুরু করলাম!একটামাত্র দিলাম!
উনি ব্যঙ্গ করে বললেন,
– মাত্র একটা!তোমাকে দিয়ে দেখছি কিচ্ছু হবে না।
নাফিসা হাসলো কিছু বললো না।উনি বেডে বসতেই নাফিসা উঠে চলে গেলো।যাওয়ার সময় দরজা হালকা লাগিয়ে গেলো।উনি আমার পেটের একটু উপরে শুঁয়ে পেটে হাত রেখে বললেন,
– বাবুসোনারা যে কবে আসবে আমার টিয়াপাখির কোল জুড়ে,উফ্!
– শুধু আমার কেনো?
উনি চুঁমু খেয়ে বললেন,
– তোমার কোলজুড়ে আসা মানেই তো আমার কোল ভরিয়ে দেওয়া!বুঝো না কেনো?
বলেই উনি উঠে শার্টের ইন খুলতে খুলতে বললেন,
– মা-বাবার সাথে যে দেখা করলে টের পেলেন না উনারা?
– উহুম!সাবধানে ছিলাম!একটা কথা ছিলো?
– বলো!
– আজ থেকে যাই,প্লিজ?
– পারমিশন নেওয়ার কি আছে?তুমি থাকতে চাইলে আমারই ভালো লাগবে!এইসময় সব মেয়েরই বাবা-মায়ের কাছে থাকার ইচ্ছা জাগে!
উনি শার্ট খুলে ব্যাগ থেকে একটা ট্রাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে প্যান্ট বদলে ট্রাওজার পরে নিলেন।টি-শার্ট হাতে নিলেন ঠিকই কিন্তু পরলেন না।দরজা লক করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুঁয়ে পরলেন।আমার একহাত উনার মাথায় রেখে বললেন,
– চুল টেনে দাও!
আমি চুল টানতে টানতে বললাম,
– অনিম ভাইয়ার সাথে একবার দেখা করে আসলে ভালো হতো না?
– ওহ্ হো ওর কথা তো ভুলেই গেছি!এখন থাক….বিকেলের দিকে দেখা করবো!
– ভাইয়ার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?
– হুম,আছে!ওয়েট…
বলেই উনি ফোন বের করে লক খুলে গ্যালারিতে ঢুকলেন!ফ্রেন্ডসদের ফোল্ডারে ঢুকে অনিম ভাইয়া আর আপুর অনেকগুলো পিক দেখিয়ে বললেন,
– কেমন দেখতে?
– মানিয়েছে দুজনকে!ফ্যামিলি জানে?
– হুম!নেক্সট ইয়ার বিয়ে!আমাদের বিয়ের সময় তো এসেছিলো মলি!তোমাকে দেখে তো আমাকে পিঞ্চ করে বলেছিলো “ইফাজ,তুই এতো লুচু কেনো?এইটুকুন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছিস!দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছিলো?” ওর এই কথা শুনে সেদিন ওর মাথায় গাড্ডি মেরে বলেছিলাম “তুই আর মানুষ হইলি নারে!নিচের মতো সবাইরে ভাবিস,ফালতু মাইয়া!”
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
– ছিঃ,আপু বলেছে এই কথা?
– হুম!আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু ছিলো ও!
– সেইম এইজ নাকি?
– হুম!তুমি মনে হয় মলিকে একবার দেখেছিলে!ওই যে এ্যানগেইজম্যান্ট ডিনারে আমাদের সামনের চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটা তোমাকে বোকা বানাতে টেবিলের নিচে তোমার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে একবার মজা নিতে চেয়েছিলো,মনে আছে?ওটাই এই মলি!
– ও হ্যা!মনে পরেছে!আপুটা কি সাংঘাতিক ছিলো!আর একটু হলেই তো আমি ধরা পরে যেতাম!
.
আমাদের এ্যানগেইজম্যান্ট ডিনারে আমি চুপচাপ বসে স্পুন দিয়ে খাবার খাচ্ছিলাম!উনি আগে থেকেই আমার পায়ের উপর পা তুলে ছিলেন।মাঝখান থেকে হুট করে আরেকটা পায়ের স্পর্শ পেলাম।আমি ভেবেছিলাম উনার অন্য একটা পা!ওই পা’টা আস্তে আস্তে উপরে উঠছিলো!কাজটা উনি করছেন ভেবে আমি বামহাত দিয়ে উনার প্যান্ট আঁকড়ে ধরে আস্তে করে বললাম “আর একইঞ্চি উপরে তুললে বাসররাত ক্যান্সেল,বলে দিলাম!” উনি ভ্রুঁ কুচঁকে সেদিন আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় “কি হয়েছে?” জিজ্ঞেস করেছিলেন!আমি দাঁতে দাঁত চেঁপে বলেছিলাম “আর না,প্লিজ!”
উনি বলেছিলেন “কি বিড়বিড় করছো?”
– পা কেনো উপরে উঠাচ্ছেন?
– মানে?
– একদম নাটক করবেন না।অলরেডি হাঁটু অব্দি তুলেছেন!
হঠাৎ উনি আমার পায়ের উপর থেকে পা সড়িয়ে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে আমাদের সামনে বসা মলি আপুর চুল টেনে বলেছিলেন “আর কখনো করবি এরকম?”
মলি আপু চিৎকার দিয়ে বলেছিলো “ভুল হয়ে গেছে ভাই!মাফ করে দে!ব্যাথা পাচ্ছি,ছাড়!”
“মনে থাকে যেনো!” বলেই উনি ছেড়ে দিয়ে আবার ব্যাক করেছিলেন।
.
ওইদিনের কাহিনীটা মনে পরতেই আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুচঁকে বললেন,
– হাসছো কেনো?
– এমনি!সরি…
আমি আবার উনার চুল টানতে লাগলাম।
.
জোহরের সময় উনি আব্বুর সাথে নামাজ পড়তে চলে গেলেন।আম্মু কাজে ব্যস্ত ছিলো।সেই ফাঁকে আমি নাফিসাকে ডেকে খাবার দিতে বললাম।লাঞ্চ টাইমে সবার সাথে বসে খাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব!কালরাতের মতো যদি বমি করে দেই,সর্বনাশ!
নাফিসা পানির গ্লাসটা পাশে রেখে প্লেটটা আমার হাতে দিয়ে বললো,
– একসাথে লাঞ্চ করলেই পারতে!
– পেট না থাকলে পারতাম।আব্বু-আম্মুর সামনে যদি একবার ওয়াক করি,আমি নিশ্চিত সেইমুহূর্তেই আব্বু-আম্মু টের পেয়ে যাবে।দরকার কি এতো রিস্ক নেওয়ার।
– বমি কি রেগুলার নাকি ব্রেক?
– মাঝে মাঝে!কালরাতে তোর ভাইয়া দুইপ্লেট ভাত একসাথে খাইয়ে দিয়েছেন,ওয়াশরুমে ঢুকেই সব বের করে দিয়েছি!তোর ভাইয়া জানে না,জানলে ওইমুহূর্তেই আবার খাওয়ানো শুরু করতেন।
আমি ফ্লোরে হাত ধুঁয়ে খাওয়া শুরু করলাম।আমি প্রেগন্যান্ট না হলে নাফিসা এতক্ষণে আম্মুকে ডেকে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিতো,কেনো আমি ফ্লোরে পানি ফেলে হাত ধুলাম!কিন্তু আজ ও কিছুই বললো না।হাসিমুখে টিস্যুবক্স থেকে একগাদা টিস্যু বের করে ফ্লোরের পানিটুকু মুঁছে ফেললো।শুধু শুধু টিস্যুপেপার নষ্ট করলো!
.
খাওয়া শেষ হতেই নাফিসাকে তাড়াতাড়ি লেবু আনতে বললাম।নাফিসা একদৌড়ে ফ্রিজ থেকে লেবু এনে সেটা গ্লাসের মধ্যে চিঁপে রস বানিয়ে দিলো।আমি খেয়েই শুঁয়ে পরলাম।গাঁ গুলাচ্ছে খুব!নাফিসা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
– তোর অনেক কষ্ট হয়,তাই না আপু?
আমি চোখ বন্ধ রেখে হেসে বললাম,
– কিসের কষ্ট?
– এই যে তুই মা হবি,সেটা খুশিমনে আব্বু-আম্মুকে বলতে পারছিস না!
– আমি তো বাবু আসার অপেক্ষায় আছি!সেদিন আমার এইসব কষ্টের ফল পাবো!দেখবি আব্বু-আম্মু কত্ত খুশি হয়!
– ইশ্!ওইদিনের কথা ভাবতেই আমার চোখ চিঁকচিঁক করছে!আব্বু-আম্মুর ফার্স্ট নাতি-নাতনী!যখন কোলে নিবে বাবুকে,ভাবতে পারছিস কত্ত খুশি হবে!!!আব্বু তো মাথায় তুলে রাখবে!কান্না করে না দিলে হয়!
– ওই খুশিটা যদি এখন শুনে হতো,ভালোই হতো!কিন্তু সেটা তো অসম্ভব!খুশি না হয়ে উল্টো উনাকে কথা শোনাবেন,উনার উপর রাগ দেখাবেন!যেটা সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাসে!
– উফ্!এইসব মন-খারাপের কথা বাদ দে!জানিস আমি কি ভেবে রেখেছি?
– কি?
– বাবু যেদিন হবে,সেদিন আমি সবাইকে ক্যামেরাবন্দী করবো!তোর শ্বশুর-শ্বাশুরি থেকে শুরু করে আব্বু-আম্মু,ভাইয়া সবাইকে!কাউকে বাদ রাখবো না!
নাফিসা আমার চোখের পানি মুঁছে দিয়ে বললো,
– একদম কাঁদবি না,আপু!অলওয়েজ বাবুর কথা ভাব!এদের কারোর কথা ভাবতে হবে না তোর!
নাফিসা আমার কপালে চুঁমু খেয়ে বললো,
– আই লাভ ইউ,আপু!খুব ভালোবাসি রে তোকে,খুব!
.
.
(চলবে)