দায়িত্ব পর্ব শেষ

#দায়িত্ব
#পর্ব_১৪এবং শেষ পর্ব
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই

শ্রেয়ানের অফিস বিন্দুর পড়াশুনা আর সংসার সামলাতে সামলাতেই কেটে গেল পনেরদিন… এই পনের দিন শ্রেয়ানের অফিসে কিছুটা কাজের চাপ ছিল..তাই আর শায়েরির সাথে স্পেশাল ভাবে টাইম স্পেন্ড করতে পারেনি এমনকি মনের কথাটাও জানাতে পারেনি…. শায়েরি স্বামী সংসার আর মা হওয়ার দায়িত্ব পালন করতে করতে কখন যে নিজের স্বপ্ন পূরনের প্রচেষ্টা থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে সেটা বুঝতে পারেনি….!

.
.
আজ শ্রেয়ান অফিস থেকে লাঞ্চ এর পরেই চলে এসেছে… কারন অফিস থেকে তিনদিন এর ছুটি পেয়েছে.. এই তিনদিন শুধু শায়েরি আর বিন্দুর সাথে কাটাবে…তাই শ্রেয়ান ঠিক করেছে তিনজন মিলে বেড়াতে যাবে… শ্রেয়ান বাড়ি ফেরার সময় শপিং করে নিয়ে এসেছে শায়েরি আর বিন্দুর জন‍্য… শায়েরির জন‍্য লাইট ব্লো কালারের শাড়ি সাথে হালকা কিছু অর্নামেন্টস..আর বিন্দুর জন‍্য কয়েকটা স্কার্ট আর ফ্রোক সাথে জুতো ও কিনেছে..কারন বিন্দুর সব থেকে প্রিয় হচ্ছে জুতো….


শায়েরি ভিজা চুল ছেড়ে দিয়ে করিডোরের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে…. মৃদু বাতাসে চুল গুলো উড়ছে আর শায়েরি বার বার কানের পিঠে চুল গুলো গুজে দিচ্ছে…চুল গুলো বড্ডো অবাদ্ধ… রুমে এসেই শ্রেয়ানের চোখ যাই করিডোরে… আর পিছন থেকে শায়েরিকে দেখেই চোখ আটকে যায় শায়েরির চুলে… কোমড় অবদি চুল একেবারে কালো মিচমিচে নয়… কিছুটা সোনালী আবাস আছে চুলের উপর… দেখে মনে হয়…হয়তো কালার করা হয়েছে চুল…!

শ্রেয়ান হাত থেকে ব‍্যাগ রেখে… শায়েরির পিছন গিয়ে দাড়ালো… আর শায়েরির চুলে কাছে মুখটা নিয়ে শায়েরির চুলের স্মেল নিতে লাগলো…. শায়েরির গাড়ে গরম কিছু অনুভব হতেই শায়েরি চিৎকার করে পিছনে ঘুরে দাড়ালো…
শায়েরি পিছনে ঘুরে শ্রেয়ানকে দেখে দুপা পিছিয়ে গিয়ে…
” আপনি এখন..?
“হুমমম আমিই তো.. পিছিয়ে গেলে কেনো.?
“তো পিছাবো না..! আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি না.?এভাবে কেউ পিছনে এসে দাড়ায়.?
” দাড়ায় না… তবে পিছন থেকে কেশবতি কন্যাকে দেখে চুলের স্মেল নেয়ার লোভটা সামলাতে পারলাম না…!
“আজাইরা ঢং এর কথা… চুলের আবার স্মেল আছে নাকি..?
“হুমম আছে তো.. মাতাল করা স্মেল..!
” চুলের কোনো নিজস্ব স্মেল নেই… যা আছে সেটা শ‍্যাম্পু কিংবা তৈল এর বুঝেছেন.?
“সেটার স্মেল আরো এট্রাক্টিভ হয় যখন তোমার চুলের সাথে মিশে যাই…
” আচ্ছা আজ এতো তাড়াতাড়ি আসলেন যে..?
” কেনো খুশি হওনি..?
” হুমম… খেয়েছেন.?
” হ‍্যা লাঞ্চ করেই বেড়িয়েছিলাম..!
“বললেন না তো… আজকে এতো আগেই চলে এসেছেন যে…
” সারপ্রাইজ আছে…বলো তো কি..?
” হেয়ালি না করে সোজাসুজি বলেন তো….
“ওকে… আমাদের হানিমুন এর জন‍্য তিনদিন ছুটি দিয়েছে.. ঝটফট বলে ফেলো তো কোথায় যাবে…!
“মাথা খারাপ নাকি.? আমি কোথাও যাবো না.. আপনার যাওয়ার হলে আপনি অন‍্য কাউকে নিয়ে যান..!
“হোয়াটটটট.?
“না মানে আপনি একাই যান….
“আর ইউ ক্রেজি..? হানিমুন এ কেউ একা যাই..?
“যাই না তো কি হয়েছে আপনি যাবেন…আর আপনাকে দিয়েই নিয়মটা চালু হবে…! এখানে এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো…ফ্রেস হতে যান..!

.
..
.
রাতে শ্রেয়ান ব‍্যাগ প‍্যাক করে নিয়েছে… বউ বাচ্চা সহ নিজের সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেই প‍্যাক করে নিয়েছে… পরেরদিন ভোরে রওনা দিবে…সে জন‍্য রাতে একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পরেছে..বেড়াতে যাওয়া নিয়ে সব থেকে এক্সাইটেড শ্রেয়ান…এতোদিন যে কথাটা শায়েরিকে বলার বলার জন‍্য মনটা ব‍্যাকুল হয়ে আছে…ফাইনালি সেই সুযোগ টা পাচ্ছে শ্রেয়ান….।

পরেরদিন সকালে বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে… উদ্দেশ্যে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরি..যদিও শ্রেয়ান এর ইচ্ছে ছিল কক্সবাজার যাওয়ার কিন্তু বিন্দুর জন‍্য সেটা বাতিল হয়েছে… কারন বিন্দুর ইচ্ছে ও দিনাজপুরের স্বপ্নপুরি যাবে… ব‍্যাসসস মেয়ের ইচ্ছেই এখন মায়ের ইচ্ছে… মা মেয়ের ইচ্ছে মিলেমিশে শ্রেয়ানের ইচ্ছে ভ‍্যালো লেস হয়ে গেছে… প্রায় অর্ধেক রাস্তা বিন্দু ঘুমিয়ে এসেছে… গাড়ি এসে থেমেছে লাভ ক‍্যাফ নামের একটা রিসোর্ট এর নিচে…যেখানে অনলাইনে রুম বুক করে রেখেছে শ্রেয়ান… বিন্দুকে কোলে করে রুমে এনে শুইয়ে দিয়েছে শ্রেয়ান… আর সব জিনিস ড্রাইভার রুমে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে…. শায়েরি আর শ্রেয়ান ও ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরলো… বিকেলে ঘুরতে বেড়োবে..জার্নি করে অনেকটাই ক্লান্ত লাগছে… রিফ্রেশমেন্ট এর ও একটা ব‍্যাপার আছে…
.
.
.
দুপুরের খাবার খেয়ে রেডি হতে হতে বিকেল চারটে বেজে গেলো….
অবশেষে ওরা স্বপ্নপুরির ভিতর প্রবেশ করলো…বিন্দুর খুশি দেখে কে..? ও তো লাফিয়ে লাফিয়ে এখান থেকে ওখানে যাচ্ছে… বিন্দুর বায়না ও রিডাড়ে উঠবে.. সাথে শায়েরিকে নিয়ে… দুজনে পাশাপাশি বসে দুজন দুজনের হাত ধরে রিডাড়ে বসে পরলো… আর শ্রেয়ান এক সাইটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো আর মোমেন্টস গুলো ক‍্যাপচার করতে লাগলো… তিনজন মিলে ঘোড়ার গাড়িতে উঠে ঘুরেছে… ঝর্ণার পানি উপর থেকে নিচে যেখানে এসে পরছে তার পাশের পাথরের উপর বসে পানিতে পা ভিজাতে লাগলো তিনজন মিলে… শায়েরি তো দুষ্টুমি করে দু একবার শ্রেয়ানকে পানি ছিটিয়ে দিয়েছে…

সারাটা বিকেল তিনজন মিলে অনেক মজা করে কাটিয়েছে….

পরেরদিন… শ্রেয়ান ডেকোরেটরের লোক দিয়ে পুরো রুমটা শুধু গোলাপ দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছে… আর শায়েরিকে নিজের পছন্দ করা শাড়ি পরিয়ে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছে… রাতে তিনজন মিলে একসাথে ডিনার করে নিল..আর বিন্দু রোজকার মতো নয়টার দিকেই ঘুমিয়ে পরেছে…. শ্রেয়ান এর ইচ্ছে ঠিক বারোটায় শায়েরিকে প্রোপোজ করবে… শায়েরি বার বার চেন্জ করতে চাইছে… কিন্তু নানা কথা বলে আটকে রেখেছে শায়েরিকে… দুজন মিলে গল্প করতে করতে পাচ মিনিট কম বারোটা বাজতে চললো… শ্রেয়ান ফোন বের করে কাকে যেনো এসএমএস করে… শায়েরির চোখ বেধে দিলো….
শায়েরি….
” একি চোখ বাধলেন কেনো…?
“তোমাকে পাহাড় থেকে ফেলে দিবো তাই…

শ্রেয়ান এর কথা শুনে শায়েরি হেসে…
“তাহলে তো আর কোনো প্রশ্নই চলেনা… আমি যেতে রাজি…!

শ্রেয়ান মুচকি হেসে শায়েরি হাত ধরে ডেকোরেট করা রমে নিয়ে দাড় করিয়ে দিলো..
” দুমিনিট দাড়াও…

শ্রেয়ান খুব দ্রুত মোমবাতি গুলো জ্বালিয়ে নিলো…সারা রুমে শুধু মোমবাতির আলো আর ফুলের গন্ধ….

শ্রেয়ান শায়েরির চোখের বাধন খুলে দিতেই… শায়েরি স্টাচো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে… চোখের পলক পরছে না তো পরছেই না…
” কি হলো.. পছন্দ হয়েছে..?
” হুমম খুববব খুবব…

শায়েরি পুরো রুম ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো… আর ফুল গুলো পরম যত্নে ছুয়ে দিতে লাগলো…ঘুরতে ঘুরতে সামনে হাটু গেড়ে বসা অবস্থায় শ্রেয়ানকে দেখতে লাগলো…আর সেখানেই থেমে গেলো…

শ্রেয়ান শায়েরির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো… শায়েরি শ্রেয়ানের হাতের উপর হাত রাখতেই শ্রেয়ান শায়েরির হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিলো…. শায়েরির হাসি হাসি লজ্জা মাখা মুখটা এক নিমিষেই চুপসে গেলো… শায়েরি কি থেকে কি ভেবেছিল… হয়তো শ্রেয়ান ফুল কিংবা রিং দিয়ে প্রোপোজ করবে তা না… কিসের একটা খাম দিল… শায়েরিকে খাম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রেয়ান…
” কি হলো খুলে দেখবে তো কি আছে নাকি..!
“কি আছে এতে..?
“ওফফফ খুলে দেখলেই তো জানতে পারবে কি আছে…

শায়েরি বিরবির করে খামটা খুলে নিল… ভিতরে কাগজটা দেখে চোখে প্রায় পানি চলে এলো..আর মুখে হাসি ফুটে উঠলো… খুশিতে শ্রেয়ানকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো… কারন শায়েরির এই স্বপ্নের বা ইচ্ছের কথাটা শুধু ডায়েরি পযর্ন্তই সিমাবদ্ধ ছিলো… আর সেই স্বপ্নটা আর শ্রেয়ানের জন‍্য বাস্তবে রুপ নিয়েছে…. শায়েরির ইচ্ছে ছিল সমাজের যে সব বাচ্চারা টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারেনা তাদের পাশে দাড়াতে.. তাদের সাহায্য করতে.. কিন্তু শায়েরি এটা কখনো ভাবেনি যে তার সব দায়িত্ব শায়েরির পালন করতে হবে..সে নিজেই তার ওনার হয়ে কাজ করবে.. যদিও ফিনান্সিয়াল সব সাপোর্ট শ্রেয়ানই করবে তবুও….

শ্রেয়ান….
“তুমি খুশি তো…?
” হ‍্যা অনেক… এজন্যই তো আপনাকে এতো এত্তো ভালোবাসি…
“আমি তো তার থেকেও বেশি ভালোবাসি….
“আচ্ছা আপনি জানলেন কি করে আমার এই ইচ্ছের কথা…
” বারে সব দায়িত্ব কি শুধু তোমার নাকি..? কিছু দায়িত্ব তো স্বামী হিসেবে আমাকেও পালন করতে হবে নাকি…. শুধু স্বামী সংসার আর মেয়ের দায়িত্ব পালন করে নিজের ইচ্ছে টাকে কেনো মাটি চাপা দিবে… এখন শুধু একটা দায়িত্ব না.. অনেক গুলো বাচ্চার দায়িত্ব তোমায় পালন করতে হবে..আর তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার.. আর প্রথম প্রথম ছোট থেকেই ওপেনিং করো তোমার স্বপ্নটা… ইনশাআল্লাহ একদিন অনেক বড় হবে তোমার স্বপ্নের প্রতিষ্টান….
“এসব সামলিয়ে আমি ঠিকভাবে মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবো তো..?
” তোমার উপর আমার পুরো ভরসা আছে… তুমি ঠিক পারবে… আর বিন্দু যখন বড় হবে তখন ওকেও তোমার পাশে পাবে…
” এই আপনি কোথায় নিয়ে এসেছেন..?বিন্দু একা একা রুমে আছে… জাগনা পেয়ে যদি দেখে আমরা নেই তাহলে তো ভয় পাবে…
” আরে পাবেনা… আমরা তো পাশের রুমেই আছি..আসলে আমি দুটো রুম বুক করেছিলাম…
“কেনো..?
” কেনো আবার…রোমান্স করার জন‍্য… যেই জন্যই তো….

শ্রেয়ান এতোটুকু বলতেই শায়েরি লজ্জায় সেখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো… আর ওমনিই শ্রেয়ান শায়েরির হাত ধরে কোলে তুলে নিলো…..🙈🙈🙈🙈

_________সমাপ্ত________

[রিচেক দিতে পারিনি বানান ভুল ক্ষমা করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here