দায়িত্ব পর্ব ১১

#দায়িত্ব
#পর্ব_১১
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই

গাড়িতে সারা রাস্তা শায়েরি আর বিন্দু কথা বলতে বলতে এসেছে… শ্রেয়ান একটা কথাও বলেনি… শুধু দু তিনবার লুকিং গ্লাসে শায়েরির দিকে তাকিয়েছে…. শায়েরি বেশ বুঝতে পারছে শ্রেয়ান রাগ করেছে… কিন্তু তাতে শায়েরির মাথা ব্যাথা নেই..শায়েরি তো ব্যস্ত তার মেয়েকে নিয়ে…।

,
,
শায়েরি বাড়িতে ঢোকার সময় খুব সাবধানে হাতটা ঢেকে নিয়েছে..যাতে কেউ দেখতে না পাই.. কিন্তু কপাল ডাকবে কি করে… সেটা তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে….শায়েরি চুল গুলো খুলে কপালের সামনে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলো যাতে কিছুটা সেইভ হয়… যদি শায়েরির মা কিংবা বাবা ব্যানডেজ দেখতে পাই হাজারটা প্রশ্ন করবে তার হাজার উত্তর দিতে হবে তাই….কিন্তু তাতে কি শেষ রক্ষা হবে…??

শায়েরি বাড়ি এসেই সোজা নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো… পিছন থেকে শায়েরির মা ডেকে….
” কিরে এসেই রুমে চলে যাচ্ছিস…? সারা দিন কি কি করলি বলবি না…?
” পরে বলি হ্যাঁ…? এখন খুবব ট্রায়ার্ড…
“গেছিলি তো বেড়াতে.. আর এসেছিস তো গাড়িতে বসে.. এতো ট্রায়ার্ড হলি কিভাবে…?
“ওফফফ মা এতো প্রশ্ন কর…
শায়েরিকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে শায়েরির মা…
“এই এক মিনিট দাড়া.. চুল খুলে এমন পেত্নির মতো সেজেছিস কেনো….?
” কেনো আবার আমি পেত্নি তাই… হয়েছে এবার খুশি…?
” যা বাবা কি এমন বললাম…।

শ্রেয়ান আর বিন্দু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল প্লাস শুনছিল আর মিটিমিটি হাসছিল..শায়েরি তো বিন্দুকে শিখিয়েই নিয়ে এসেছে যাতে ও কিছু না বলে… আর শ্রেয়ানকে তো অফিস মিস হওয়ার ভয় দেখিয়েছে.. তাই সেও কিছু বলবেনা….!

শায়েরি কোনো মতে নিজের মাকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলো…রুমে চলে এসে বড় বড় করে নিশ্বাস নিয়ে পিছনে ঘুরতেই শ্রেয়ানের মুখোমুখি…শ্রেয়ানকে দেখে শায়েরি…
” এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে রইলেন কেনো..? সরেন ওয়াস রুমে যাবো..
” তো যাও না..কে ধরে রেখেছে…?
” এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে যাবো কেমনে…?
“যত্তোসব আজাইরা… ওয়াস রুম তো ওই দিকে…
” আপনি আজাইরা আপনার ঢং আজাইরা… সরেন হুহহহ….!


রাতে বাধলো আরেক বিপত্তি শায়েরির জন্য… শায়েরির মা খাবার জন্য ডেকে গেছে..যদিও শায়েরি বলেছে খাবেনা..কিন্তু সেটা কি আর শায়েরির মা শুনবে… তিনি শ্রেয়ান আর বিন্দুকে দায়িত্ব দিয়ে গেছে খাবার টেবিলে যেনো শায়েরিকে নিয়ে যায়…. শায়েরি খুব ভালো করে জানে খেতে না যাওয়া অবদি তার মা ডাকতেই থাকবে… তাই বাধ্য হয়ে এই রাতের বেলায় ও চুল গুলো খুলে আবার কপালের সামনে এনে রাখলো…

খাবার টেবিলে শায়েরির মা..
“তুই খেতে এসেছিস তাও চুল গুলো খুলে…?

শায়েরি কে রাগানোর জন্য শ্রেয়ান…
” চুল খুলে না রাখলে তো পেত্নি পেত্নি মনে হবেনা তাই…
“একদম বাজে কথা বলবেন না…
” তাহলে ভালো কথা বলবো….??
” আপনাকে কথাই বলতে হবেনা… চুপচাপ খান কেমন…!

শায়েরির বাবা..
” সত্যিই তো খাবার সময় চুল গুলো খুলে রেখেছিস কেনো.. যদি খাবারে আসে…
” বাবা তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে… আমার চুল গুলো উড়তে জানে..উড়ে উড়ে তোমাদের খাবারে চলে যাবে.. আর যদি যায়ো তাতে কি… শ্যাম্পু করা ক্লিন ক্লিয়ার চুল যাবে…
” মারবো একটা… এখনো সেই বাচ্চামো…

শায়েরি ভালো ভাবে খেতেও পারছেনা.. বারবার চুল গুলো মুখের উপর এসে পরছে… না খাবার মুখে দেয়ার সময় চুল ও খাবারের সাথে মুখের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে.. শায়েরির মা বিষয়টি লক্ষ্য করে কিছু না বলেই টুপ করে শায়েরির চুল খোপা করে দিলো… শায়েরি একটু চেচিয়ে…
” এটা কি করলে মা…??

ওমনিই সবার নজর শায়েরির দিকে গেলো… শায়েরির কপালে ব্যানডেজ দেখে শায়েরির বাবা মা কিছুটা ঘাবরে যায়…শায়েরি বাবা…
” কি করে হলো এটা..? ডক্টর দেখিয়েছিস মেডিসিন খেয়েছিস…?
“ওফফ বাবা রিলাক্স… তেমন কিছু না..আমি একদম ঠিক আছি…

শায়েরির মা…
“তোর কথা শুনে ঠাস করে থাপ্পড় মাড়তে ইচ্ছে করছে… কি করে রিলাক্স হবো.. কোথায় কখন এসব হয়েছে বলার প্রয়োজনবোধ করলি না..?
” আসলে একটু লেগেছে তাই বলিনি.. শুধু শুধু চিন্তা করবে তাই….

শ্রেয়ান মাঝে ফোড়ন কেটে…
” আসলে আম্মু হয়েছে কি আমি বলি…

শ্রেয়ানের কথা শুনে শায়েরি চোখ বড় বড় করে শ্রেয়ানের তাকায়.. শায়েরির মা…
” এই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো ওর দিকে…?
তুমি বলো তো বাবা কি হয়েছে…
” আসলে আমরা তো বেড়াতে গিয়েছিলাম গ্রিনহাউজ এ.. তার পাশেই ছোট্ট একটা গার্ডেন আছে..বাগানে অনেক ফুল আর ফল গাছ ছিল… সেখানে একটা পিয়ারা গাছও ছিল..আর পিয়ারা গুলো গোলাপি কালারের ছিল..ব্যসসস বায়না ধরে বসলো ওই পেয়ারা গুলো ওর চাই.. আমাকে পেরে দিতে বলেছিল… আমি দেইনি… এটা যদি বিন্দু বায়না করতো তাহলে ভেবে দেখতাম.. সেখানে বিন্দুর মা এমন অদ্ভুত বায়না ধরে বসলো… আমার সাথে জেদ করে নিজেই পেয়ারা গাছে উঠতে গিয়েছিল.. তখন পেয়ারা গাছের একটা ডালের সাথে কপালে লেগে কপাল কিছুটা ছিলে যায়… চিন্তার কোনো কারন নেই আম্মু.. জায়গাটা আমি পরিস্কার করে ব্যানডেজ লাগিয়ে দিয়েছি…..।

শায়েরির বাবাকে উদ্দেশ্য করে শায়েরির মা…
” দেখেছো এখনো সেই আগের মতোই বাচ্চামো রয়ে গেছে… বিয়ে হয়ে একটা মেয়ের মা হয়ে উঠার দায়িত্ব নিয়েছে..আর তার নিজেরই এখনো ছেলে মানুষই গেলো না….

শ্রেয়ান তো সেই খুশি… শুধু শুধু কি সব বানিয়ে বানিয়ে বলে দিলো… আর তাতেই শায়েরির মা শুরু করে দিয়েছে শায়েরির ব্যান্ড বাজানো… শায়েরি না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে…।



শায়েরি খাবার টেবিলে তার মা বাবার এতো এতো ভাষন শুনে কোনো মতে রুমে চলে আসলো… শ্রেয়ান এর উপর রাগ হচ্ছে খুব রাগ হচ্ছে শায়েরির…বিন্দু রুমে এসে দেখে শায়েরি পায়চারী করছে… বিন্দু..
” মা তুমি এমন ঘুরছো কেনো…?
” ভাবছি তোমার পাপাকে কি শাস্তি দেয়া যায়….
” কেনো পাপাকে কেনো শাস্তি দিবে…?
“বারে তোমার পাপার এতো গুলো মিথ্যা কথার জন্যই তো.. আমাকে এতো গুলো বকা শুনতে হলো…
“তুমিই তো আমাদের সত্যি টা বলতে বারন করেছিলে.. তার জন্যই তো পাপাকে এসব বলতে হয়েছে…
” বাহহহ কি সুন্দর এখন পাপাকে সাপোর্ট করা হচ্ছে…?
“এএএএ না..না.. আমি কাউকেই সাপোর্ট করছিনা… এটা তোমাদের ব্যপার তোমরা সামলাও… কিন্তু আমার খুববব ঘুম পাচ্ছে…
“হুমম ঘুমাও…
“তুমিও এসো আমার সাথে ঘুমাবে…

বিন্দু শায়েরিকে টেনে নিয়ে বেডে গেলো… বিন্দু শুয়ে শায়েরিকে আগলে ধরে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরলো… অনেক ভেবে চিন্তে শায়েরি একটা বুদ্ধি বের করেছে শ্রেয়ানকে শাস্তি দেয়ার… শাস্তিটা হলো আজ শ্রেয়ানকে বেডে শুতে দিবেনা… তাই বিন্দুর হাত পা চার দিকে ছড়িয়ে দিয়ে রেখেছে..নিজের হাত পা ও চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে রেখেছে.. পুরো বেডটা দুজনে মিলে দখল করে রেখেছে..যাতে শ্রেয়ান বেডে শুতে না পারে..শায়েরি এমন একটা ভাব করে অছে যেনো বিভরে ঘুমাচ্ছে….।
শ্রেয়ান রুমে এসে তো প্রায় বেহুশ… হঠাৎ আজ হলো কি দুজনেই সেইম অবস্থায় শুয়ে আছে.. তাও পুরো বেড দখল করে… শ্রেয়ানের রুমে আসতে লেট হয়েছে কারন ও শশুর শাশুড়ির সাথে গল্প করছিলো… এই দুদিনে খুব ইজিলি তাদের সাথে মিশে গিয়েছে…
শ্রেয়ান এর খুব ঘুম পাচ্ছে.. বিন্দুকে একটু সরিয়ে দিতেই বিন্দু ফের আগের অবস্থায় হাত পা মেলেই শুয়ে পরলো.. আর বিন্দু তো মাত্র কিছু জায়গা জুরে শুয়ে আছে.. ছোট মানুষ কতো টুকু জায়গায় আর লেগেছে… কিন্তুু শায়েরি তো হাত পা চারটা চার দিকে দিয়ে রেখেছে..বিন্দুকে আর সরানোর চেষ্টা না করে..আস্তে আস্তে শায়েরিকে সরাতে নিলেই শায়েরি আরো শক্ত হয়ে গেলো… শ্রেয়ান ও বুজে গেলো শায়েরি ঘুমাইনি জেগে আছে.. আর এসব ইচ্ছে করেই করছে… শ্রেয়ান দুষ্টুমি করে শায়েরির উপর গা এলিয়ে দিলো…আর তাতেই শায়েরি চেচিয়ে উঠে…
” আহহহ.. সরেন.. আপনার কমন সেন্স বলতে কিছু নেই না..? আপনার মতো হাতি আমার উপর থাকলে থম আটকে মারা যাবো…
” এই টুকুতেই নাকি মারা যাবে ঢং…
“এই টুকুতেই মানে..? মনে হয় ইন ফিউচার আপনার থেকে বাড়ি কাছু নিয়ে ঘুরবো..?
“এই টুকু মানে.. এই টুকু সময়ের কথা বলেছি…
“কিহহহ…
“বুঝবেনা…
বলেই মাথাটা তুলে শায়েরির দিকে তাকিয়ে রইলো শ্রেয়ান… আর শায়েরির তো কেমন যেনো লাগছে শ্রেয়ান এতো কাছে আসাতে.. নিশ্বাস খুব দ্রুত চলছে… শায়েরি একটু অস্পষ্ট করে..
” প্লিজ সরেন…

শ্রেয়ান মুচকি হেসে শায়েরির গালে এক খান চুম্মা দিয়ে…
“ওকে ওকে রিলাক্স….

চলবে…..

[ আর দুই বা তিন পর্বেই গল্পের ইতি টানবো ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here