#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 65
.
.
ভিডিও কলে কিছুক্ষণ উনার সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।উনি সত্যি সত্যিই থাইল্যান্ড চলে গেছেন।আমি কান্না আটকে রাখতে পারছি-ই না।বারবার চোখ মুছতে মুছতে চোখ পোড়াচ্ছে।ব্যাথাও করছে খুব।নাফিসা একগ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত এনে দিলো।আমি খেলাম না।ডক্টর আঙ্কেল চেকআপ করে চলে গেলেন।অনিম ভাইয়া চুপচাপ সোফায় বসে আছেন।মলি আপু চুপচাপ পাশে বসে আমাকে শান্ত্বনা দিচ্ছেন।নাফিসা নিরব হয়ে বসে আছে।তুলি ফ্লোর পরিষ্কার করছে।আমি বেড থেকে নেমে আমার আর উনার ভেঙ্গে যাওয়া ছবির ফ্রেমটা তুলে আলমারিতে রেখে ওয়াশরুমে চলে এলাম।ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কান্না করে ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে এলাম।জীবন কি এভাবেই হুট করে এলোমেলো হয়ে যায়?এতো বড় একটা কথা চেঁপে উনি দুদিন ধরে কি সুন্দর নরমাল বিহেভ করলেন।আমি একটুও টের পেলাম না!
.
আমি ডাইনিং-এ এসে প্রতিদিনের মতো ব্রেকফাস্ট করলাম।কাল এইসময় উনি পাশে ছিলেন,কিন্তু আজ নেই!আবার চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসছে।নাফিসাকে ডেকে বললাম আমার ফোনটা নিয়ে আসতে।নাফিসা ফোনটা টেবিলে রেখে চলে গেলো।আমি আন্টির নাম্বার বের করে আন্টিকে কল দিলাম।সাথে সাথেই আন্টি রিসিভ করে বললেন,
– হ্যালো…
– আসসালাম আলাইকুম,মা!
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ্!আপনি কেমন আছেন?
– ভালো।
– ইয়াশ কোথায়?
– এইতো পাশেই।কথা বলবে?
– জ্বী!
– আচ্ছা,দিচ্ছি।
.
– ভাবি….
– কেমন আছো?
– ভালো।তুমি কেমন আছো?
– ভালো না।তুমি কবে আসবে?
– বাড়ি যেয়ে ওখান থেকে সরাসরি ড্রাইভার আঙ্কেলের সাথে তোমার ওখানে যাবো।
– আচ্ছা,তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু!
– ওকে।
– মা’কে দাও।
ইয়াশ আন্টিকে ফোন দিলেন।আন্টির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।ডাইনিং টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম।উনার দুষ্টু দুষ্টু চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে।এইমুহূর্তে উনি আমার পাশে থাকলে কি করতেন?মাথায় কারোর স্পর্শ পেতেই আমি চোখ খুলে তাকালাম।মলি আপু আমার মাথায় হাত রেখে পাশে দাড়িয়ে আছেন।আমি টেবিল থেকে মাথা তুললাম না।আপু আমার পাশের চেয়ার টেনে বসে সেইম আমার মতো টেবিলে মাথা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– লাইফটাই এরকম!অলওয়েজ সারপ্রাইজ!কিছু সারপ্রাইজ আমাদের আনন্দ দেয়,কিছু সারপ্রাইজ দেয় কষ্ট!তুমি যেভাবে আজ কান্না করেছো,ইফাজ অনিমকে জড়িয়ে ধরে ঠিক সেভাবেই কান্না করেছিলো।যাওয়ার সময় বারবার বলেছিলো দেখে রাখবি কিন্তু আমার জানটাকে!ও কান্না করলে একদম কান্না করতে দিবিনা!প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে অনিম তোমার পিক তুলে ইফাজকে সেন্ড করছে!এই যে আমি তুমি এখানে এভাবে টেবিলের উপর শুঁয়ে আছি,দেখো গিয়ে এটাও সেন্ড করেছে!প্লিজ,নো কান্নাকাটি!
আপু আমার চোখের পানি মুঁছে দিয়ে বললো,
– কান্না করা একদম বারণ।এতো কান্নাকাটি করলে মাথাব্যাথা করবে।এটার এফেক্ট বাবুর উপরও পড়তে পারে।আঙ্কেল কিন্তু এইসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
আপু একনাগাড়ে এক একটা কথা বলেই যাচ্ছেন।আপুর কথাগুলো আমার কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে ঠিকই কিন্ত ব্রেইনে ঢুকছে না।কিছুক্ষণ পর নাফিসা এসে মলি আপুর চেয়ার ধরে পেছনে দাড়ালো।আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।আমি নাফিসার দৃষ্টি উপেক্ষা করে চোখ বন্ধ করলাম।আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ ওভাবেই ছিলাম।আপু আমাকে তুলে বেডরুমে নিয়ে এসে শুঁয়ে থাকতে বললেন।আমি বেডে শুঁতেই আপু একটা কম্বল দিয়ে মাথা থেকে পা অব্দি সমস্ত শরীর ঢেকে দিলেন।আপু নিশ্চয় আমাকে কান্না করার সুযোগ করে দিলেন।সবাই আমাকে এতো কেনো বুঝে?
.
বিকেলের দিকে কিচেনে ঢুকতেই দেখলাম ছয়টা ছোট ছোট আচারের বয়াম সারিবদ্ধভাবে সাজানো!দেখেই সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো!এইপর্যন্ত কয়েকবার উনার সাথে কথা বলেছি কিন্তু উনি একবারও এগুলোর কথা বলেননি!আমি সবগুলো বয়াম বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে কেঁদে দিলাম!একটা খুলে খেতে শুরু করলাম!নাফিসা দরজার পাশ থেকে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে সেটা আমার চোখের আড়াল হলো না!আমি পেটে হাত রেখে মনে মনে বললাম “তোদের খালামনি তোদের মা’য়ের বিরহের কান্না লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে রে!”
অর্ধেক আচার শেষ করে হাত ধুঁয়ে একটা বয়াম সাথে নিয়ে রুমে চলে এলাম।মলি আপু আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকার সুযোগ করে দিয়ে অনিম ভাইয়াকে নিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলেন!
আমি আলমারির দিকে পা বাড়ালাম।উনার কয়েকটা শার্ট রেখে বাকি সবগুলোই নিয়ে গেছেন।আমি নিজের হাতে উনার লাগেজ গুছিয়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হতো?আঙ্গুলের ছোঁয়া পর্যন্ত দিতে পারিনি!আমি সবগুলো শার্ট-প্যান্ট,
টি-শার্ট বের করে বেডের উপর রাখলাম।আমি কম্বলের ভেতর ঢুকে শার্ট-প্যান্টগুলো জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম।
হঠাৎ কেউ পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে কপালে চুঁমু দিলো।সাথে সাথেই বলে উঠলো “ভাবি!”
ইয়াশের দিকে তাকাতেই দেখলাম ওর চোখেমুখে আনন্দের ছাঁপ!কতদিন পর ভাবিকে দেখলো সে!ইয়াশ জুতো খুলে কম্বলের ভেতর ঢুকে শুঁয়ে পড়লো।আমি ইয়াশের চুলগুলো পেছনের দিকে ব্রাশ করতে করতে বললাম,
– ঠান্ডা কমেছে?
– হুম!
– আসতে এতো লেইট হলো কেনো?
– আম্মুর সাজুগুজু করতে করতে লেইট হয়ে গেছে।
আমার বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো।
– মা এসেছে তোমার সাথে?
– হুম।ড্রইংরুমে।
আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম।ইয়াশও উঠে বসলো।হামাগুড়ি দিয়ে পায়ের কাছ থেকে আচারের বয়াম এনে আমার সামনে ধরে বললো,
– আচার?
– হুম।খাও তুমি?
– উহুম!
– ওহ্।
ইয়াশ আচার সাইড টেবিলে রেখে দিলো।আমি বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকে চোখেমুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে বের হলাম।উনার শার্ট-প্যান্ট আলামারির ভেতর রেখে একটা শাল বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।ইয়াশকে নিয়ে ড্রইংরুমে চলে এলাম।আন্টি অনিম ভাইয়া, মলি আপু, নাফিসার সাথে বসে বসে গল্প করছিলেন।আমাকে দেখতে পেয়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ইশ্!চেহারার কি অবস্থা করেছো!এতো ভালোবাসা আমার ছেলে রাখবে কই?
আন্টি আমার থুতনী ধরে আবার বললেন,
– ও চলে আসবে!তোমার বাবা তো ওর সাথে আছেই!একদম টেনশন করো না!কিচ্ছু হবে না!
আমি ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম!আমার চোখে পানি টলমল করছে!চোখ বন্ধ করলেই টুপ করে পানি পড়বে!চোখ খোলা রাখা সত্ত্বেও গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো!আন্টি আমাকে একটানে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– মেয়ের কান্ড দেখো!চলে আসবে তো ও!আচ্ছা, তোমার বাবাকে বলে ইফাজকে তাড়াতাড়ি দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি!
– ভাবি!ভাইয়া চলে আসবে!কান্না করো না!
ইয়াশ আমার হাতের আঙ্গুল ঝাঁকিয়ে কথাটা বললো!ইয়াশের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো!আমি সবার অগোচড়ে ইয়াশের হাত শক্ত করে ধরলাম!ইয়াশও আমার হাত শক্ত করে ধরলো!আন্টি আমার কপালে চুঁমু দিয়ে বললেন,
– আমি তোমার বাবাকে বলে সব ব্যবস্থা করছি!আর কান্নাকাটি করা চলবে না।দেখি এখন একটু হাসো।
আমি ঠোঁট প্রসারিত করলাম!
অনিম ভাইয়া আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– নাও,কথা বলো!
আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন!আমি অনিম ভাইয়ার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে রুমে চলে এলাম!উনি বললেন,
– কতবার কল দিলাম!ধরলে না কেনো?
– শুনিনি!
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন!কিছুক্ষণ চুঁপ থেকে বললেন,
– রাগ কমে নি?
– আসবেন কবে?
– কাজ শেষ হলে!
– আমি নির্দিষ্ট টাইম জানতে চেয়েছি!
– ওভাবে বলতে পারবো না!
– …..
– প্লিজ….একটু নরমালি কথা বলো না!কষ্ট হচ্ছে আমার!
আমি বিছানার চাঁদর আঁকড়ে ধরে নিজেকে কান্না থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলাম!উনি বললেন,
– আপনি নাকি আমাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করছেন?
– শাস্তিটা তো আপনি জীবনেও মানবেন না!প্ল্যান করে লাভ কি!
– আমারও তাই মনে হয়!ক্যান্সেল করে নতুন কোনো শাস্তির কথা ভাবো!
– মলি আপু সাজেস্ট করলো একবছর আমাকে টাচ্ করার পারমিশন না দেওয়া!ওটার থেকে এটা বেটার,তাই না?
– একবছর!!!
– হুঁ….কম হয়ে গেলো?
– হুম!আর একটু বাড়াও!
– দশমাস?
উনি হাসলেন!বললেন,
– উহু!আর একটু বাড়াও!
– সাতমাস?
এবার উনি উচ্চস্বরে হেসে বললেন,
– তুমি থাকতে পারবে তো?
– মানে?শাস্তিটা আপনার,আমার না!
– বাহ্ তুমি আমাকে যা খুশি তাই করতে পারবে বাট আমি তোমাকে টাচ্ পর্যন্ত করতে পারবো না?
– হুঁ!
– ওকে,মেনে নিলাম শাস্তি!সিসি ক্যামেরার হদিস্ পেয়েছো?
– হুম!অনিম ভাইয়া!
– মন কি এখনো খারাপ নাকি কথা বলে একটু ভালো লাগছে?
– আপনি দেখে যান!
– আমি জানি ভালো লাগছে এন্ড তোমার আরো কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে!
– হুট্ করে কাটবেন নাতো ফোন?
– হুট্ করে কেনো কাটবো!তোমাকে বলেই কাটবো!
আমি ফ্লোরে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল ঘঁষতে ঘঁষতে বললাম,
– আমি যে প্রেগন্যান্ট এটা অনিম ভাইয়া আর মলি আপুকে কখন বলেছেন?
– আসার সময়!
– উনারা কাউকে বলে দিবেন নাতো?
– আমি জেনেশুনেই ওদেরকে জানিয়েছি!সব ধরনের হেল্প পাবে ওদের কাছ থেকে!আর নাফিসা তো আছেই!
– যতদিন আপনি না আসবেন ততদিনই কি ওরা বসে বসে আমাকে পাহারা দেবে?
– ইয়েস ম্যাডাম!নাফিসা তোমার ওখান থেকেই কলেজ করবে আর মলি ফ্রি একটা মেয়ে!ওর লাইফে অলওয়েজ ফ্রাইডে চলে!
– ইফাজ,প্লিজ কাম!
হঠাৎ আঙ্কেল উনাকে ডাকলেন।আঙ্কেল কি উনার আশেপাশেই আছে?
উনি বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুম,বুঝতে পেরেছি।রাখছি।
আমি কাটলাম না।উনিও কাটলেন না।কয়েক সেকেন্ড পর উনি বললেন,
– প্লিজ…
– হুম,আসসালাম আলাইকুম!
– ওয়ালাইকুম আসসালাম!
আমি সাথে সাথেই কেটে দিলাম!
.
.
(চলবে)