#একটু_ভালোবাসা
#সূচনা_পর্ব
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________________
ডিসেম্বর মাস। শীতের প্রবাহ চারদিকে। হাড় কাঁপিয়ে শীত ধরে। শরীরের প্রতিটি লোম জেগে ওঠে যেন! শীতের সকালে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর মতো শান্তি আর নেই। লেপের ভেতর কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে ছিল রিশাদ। দেখে বোঝার উপায়ই নেই লেপের ভেতর যে কেউ আছে। আরামের ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। গায়ের ওপর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে শিউরে ওঠে রিশাদ। তারচেয়েও বেশি ভয় পায়। নিশ্চয়ই কোনো ভূতে ধরেছে! নড়াচড়া করতেও যেন ভুলে গেছে। একবারের জন্য মন বলল চোখমুখ খিঁচে চিৎকার দিতে। কিন্তু সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হতো সেটা নিয়ে রিশাদ নিজেই সন্দিহান। তাই আল্লাহ্’র নাম নিয়ে লাফ দিয়ে ওঠে বসে। লেপটা সরিয়ে ফেলে। কোনো ভূত নয় একটা মেয়ে আড়ষ্ট হয়ে শুয়ে আছে। ‘এই মেয়ে কি আমায় দেখেনি এখানে?’ নিজের মনেই প্রশ্ন করে রিশাদ।
বিয়ে খেতে এসে এ কোন মুসিবতে পড়ল। একবার কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। লেপটা মেয়েটার গায়ে দিয়ে চটজলদি ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রিশাদ। এমন আরামের একটা ঘুম হারাম হয়ে গেল। গরম বিছানা ছেড়ে সাতসকালে কারই বা উঠতে ইচ্ছে করে? বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় বিয়ের বন্দবস্ত করছে লোকজন। এখন এক কাপ গরম চা হলে মন্দ হতো না। কিন্তু বন্ধুবান্ধব কাউকেই তো চোখে পড়ছে না। রিশাদ গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে আশেপাশে হাঁটতে থাকে। জায়গাটা অনেকটাই গ্রামের মতো। কুয়াশায় ভেজা ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটতে মন্দ লাগছে না। বরং খুব বেশিই ভালো লাগছে। শামীমা নাসরিনের একটা কবিতার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
“ভোরের কুয়াশা যেন
ডেকে বলে আমায়
আয়!আয় না সই!
একটু জড়াই তোরে আমার চাদরে…
শিশির ভেজা ঘাস ও তাই
ওলো সই, বলছে অভিমানে
আয় না ছুটে ক্ষনিক তরে
তোর চরণ দুটি আয় না ছুঁয়ে দিই…
বলছি ওদের রাগিস নে সোনা
ভোর তো আমি কতোদিন দেখিনা
ভোরের সাথীরা হারিয়েছে কোথা
একলা তাই পথে হাঁটি না..!!”
একা থাকলে কতশত কবিতারা যে মনের ভেতর উঁকি দেয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই।কখনো কখনো ক্ষণিকের মধ্যে নিজেই কবিতা এঁটে ফেলে। কাব্যিক তো বলা যায় বটেই! কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা ছোট চায়ের দোকান দেখতে পায়। কুয়াশার চাদরে সবকিছুই ঢেকে আছে। তাই এতক্ষণ চায়ের দোকানটাকেও চোখে পড়েনি। কাছে আসার পরই সূর্যের ন্যায় জানান দিয়েছে আমি আছি। চা মানেই একরাশ ভালোবাসা রিশাদের কাছে। দেরি না করে দ্রুত পা চালায়। দোকানে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে পাশে থাকা বেঞ্চে বসে। পায়ের ওপর পা রেখে পা দুলিয়ে দুলিয়ে গুণগুণ করে গান গায়।কিছুটা দূর থেকে অনিক আর ওর খালাতো ভাই মুহিতকে দেখা যাচ্ছে। মুহিতের বিয়েতেই এসেছে রিশাদ আর অনিক। মুহিত আর অনিকও রিশাদের পাশে এসে বসে। রিশাদ আরো দুটো চায়ের অর্ডার দেয়। অনিক জিজ্ঞেস করে,
“কী বন্ধু এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলি যে আজ?”
চা এসে পড়েছে। রিশাদ চায়ে চুমুক দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে কী বলবে! মেয়েটার কথা বলা কি ঠিক হবে? অনিক কিছু না ভাবলেও যদি মুহিত উল্টাপাল্টা কিছু ভাবে? তাই মিথ্যেই বলল।
“এমনিই। আজ ঘুম ভেঙে গেল।”
অনিক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“বিয়ে বাড়িতে আসছিস কাউকে পছন্দ হলে কিন্তু জানাবি। মুহিতের শালিকার অভাব নাই।”
অনিকের কথা শুনে রিশাদ হাসে। হাসিতে যোগ দেয় মুহিত আর অনিকও। রিশাদ হেসে বলে,
“শালিকাদের সাথে ভাব জমাতে আপত্তি নেই। তবে প্রেম-ভালোবাসা এসব আমার দ্বারা হবে না।”
“তা তো বটে! না হলে এতদিনে যে তোর কতগুলো গার্লফ্রেন্ড থাকত কে জানে।” বলে অনিক।
রিশাদ ছেলেটা চঞ্চল। সঙ্গে বেশ রসিকও। রিশাদের রসিকতায় যেকোনো গম্ভীর মানুষও হাসতে বাধ্য। এজন্যই যেকোনো আড্ডায় রিশাদের উপস্থিতি সকলেরই চাই-ই চাই। কিন্তু ভালোবাসার প্রতি অনিহা রয়েছে তার।
চা খাওয়া শেষ হলে তিনজনে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। মোবাইলে সময় দেখে সকাল দশটা বেজে গেছে। কিন্তু সূর্য মামাকে আজ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিনের তুলনায় আজ শীতের পরিমাণ অনেক বেশি।
বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড় দেখে ওরা এগিয়ে যায়। রিশাদ একটু চমকেই যায়। একজন মহিলা একটা মেয়ের চুলের মুঠি ধরে মারছে। সকালের সেই মেয়েটা! এক সময় তিনি মেয়েটার চুলের মুঠি ধরেই টানতে টানতে নিয়ে যায়। রিশাদ এগিয়ে যেতে চাইলে মুহিত রিশাদকে আটকিয়ে বলে,
“যেও না ভাই। এই মহিলা প্রচুর খারাপ।”
“কী বলো কী? সবার সামনে এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলছে। আর তুমি কিছু বলতে বারণ করছ?”
মুহিত কিছু বলার আগে অনিকের কথা কানে ভেসে আসে। অনিক ঐ মহিলাটির সামনে গিয়ে বলছে,
“এটা কেমন ব্যবহার? সবার সামনে মারছেন কেন?”
“তুমি কেডা? তোমারে কইয়া মারন লাগব?”
“না। আমায় বলতে হবে না। কিন্তু ওর গায়ে হাত তুলছেন কেন?”
“তোমারে কৈফিয়ত দিমু ক্যান?”
দ্বিগুণ ক্ষেপে বলেন আলেয়া বেগম। এরপর মেয়েটার চুলের মুঠি আরো শক্ত করে ধরে বলেন,
“কীরে বান্দি এত প্রেম ক্যান তোর জন্য এই পোলার? এই পোলার লেইগা সাতসকালে এই বাড়িতে আসছিস?”
এতক্ষণ পর মেয়েটা মুখ খোলে। এতটা সময় শুধু নিঃশব্দেই কেঁদেছিল। ঘনপল্লব আখিদ্বয় অশ্রুতে টইটুম্বুর। ঠোঁটজোড়া কাঁপছে অনবরত। লম্বা চুলগুলো মহিলার হাতের মুঠিতে। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বলে,
“আমি উনাকে চিনি না!”
“চিনস নাকি চিনস না বাসায় গিয়ে বুঝামু। চল।”
তিনি টানতে টানতে নিয়ে যান। অনিক আরো কিছু বলতে যাবে মুবিন এসে থামায়। রাগে দপদপ করে মাথার রগ কাঁপছে।
————————————–
বাড়ির উঠোনে পেতে রাখা ছোট্ট জলচৌকিতে বসে সিগারেট টানছেন মনসুর আলী। ঐ সময়েই আলেয়া বেগম প্রিয়তাকে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে আসে। মা মরা প্রিয়তা মানুষ হয় সৎ মায়ের ঘরেই। সৎ মায়ের আগের ঘরে দুটো সন্তান আছে। দুজনই প্রিয়তার বড়। আমিন এবং আশা। আলেয়া বেগম মনসুর আলীর উদ্দেশ্যে বলেন,
“তোমার মাইয়া তো মিনাগো বাড়িতে গিয়ে নাগর জুটাইছে। আমার লগে তর্ক করে ঐ পোলা।”
মনসুর আলী একবার ক্রন্দনরত প্রিয়তার দিকে তাকায়। এক সময় এই মেয়েটা তার কলিজার টুকরা ছিল। ফুলের টোকাও লাগতে দিত না। আদর করে ডাকতো প্রিয়ু আম্মা। সেই থেকে প্রিয়তাকে সবাই ছোট্ট করে প্রিয়ু ডাকে। সকালে কাজে যাওয়ার আগে মেয়ের ঘুমন্ত মুখ দেখে যেতেন। না হলে নাকি তার দিন শুভ হতো না। এখন অবশ্য এসব দিন অতীত। মায়া-মহব্বত এখন আর কাজ করে না। মনেই হয় না এই মেয়ের জন্মদাতা পিতা শয়ং মনসুর আলী-ই। তিনি তার মতো আবারও সিগারেট খাওয়া শুরু করেন।
প্রিয়তা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমি তাকে চিনি না। কারো সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
প্রিয়তার কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে আলেয়া বেগম। বারান্দায় থেকে লাকড়ি নিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। নিষ্ঠুর মনসুর আলীর মনে মায়া হয় না একটুও। তিনি তখনও সিগারেট খাওয়ায় ব্যস্ত। সিগারেট শেষ হলে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে একটা ডলা দেন। আগুন নিভে যায়। দড়ির ওপর থাকা লুঙ্গি নিয়ে গোসলখানায় চলে যান গোসল করতে। বাড়ির আশেপাশে মানুষের কানেও যায় প্রিয়তার আর্তনাদ। কিন্তু কেউই আসে না। মারধোর, অত্যাচার এখন সবার কাছেই নিত্যদিনের খবর। আলেয়া বেগম এই বাড়িতে আসার পর থেকেই চলছে এই অত্যাচার। অথচ কতই না সুখের সংসার ছিল ওদের!
প্রিয়তার কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙে আশার। হুড়মুড় করে বিছানা ছেড়ে দৌঁড়ে আসে বাহিরে। আলেয়া বেগমের হাত থেকে লাকড়িটা টেনে নিয়ে ফেলে দেয়। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
“আজও তুমি প্রিয়ুকে মারছ!”
“মারব না কী করব? ওর লেইগা তোর এত জ্বলে ক্যান? ও তোর কে হয়? সৎ বইন।”
আশা কথা বাড়ায় না। প্রতিদিন মায়ের অহেতুক এসব কথা ভালো লাগে না আশার। প্রিয়ুকে ধরে ঘরে নিয়ে যায়। ব্যথার জায়গায় মলম লাগিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে,
“আজ কী দোষ ধরে মারল?”
প্রিয়তা নিরবে কাঁদে।
“প্রিয়ু!”
“হু।”
“তুই কোথাও কেন চলে যাস না বোন? এই জাহান্নামে কেন থাকিস এত অত্যাচার সহ্য করে?”
কাঁদতে কাঁদতেই হাসে প্রিয়ু। মিথ্যে হাসির আড়ালে কষ্টগুলোকে লুকানোর বৃথা চেষ্টা। বসা থেকে ওঠে গিয়ে জানালা খুলে দেয় প্রিয়ু।
“মাকে ছেড়ে কোথায় যাব আমি? গেলে তো অনেক আগেই চলে যেতাম।” কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কবরটির দিকে তাকিয়ে বলে প্রিয়ু। এটা প্রিয়ুর মায়ের কবর। মমতা বেগম প্রিয়ুকে ছেড়ে ঐ অন্ধকার ঘরে থাকে দিবারাত্রি। মায়ের এই কবরই প্রিয়ুর কাছে শান্তির শেষ আশ্রয়স্থল। শুধুমাত্র এই কারণেই শত অন্যায়, অত্যাচার সহ্য করে এখানেই পড়ে থাকে। আশা প্রিয়ুকে বুকে জড়িয়ে নেয়। সৎ বোন হলেও আশা কখনোই অন্য চোখে দেখেনি প্রিয়ুকে। নিজের বোনের মতোই ভালোবেসেছে। বোনের এই কষ্ট আশার সহ্য হয় না। প্রিয়ুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“জানিস আমি খুব করে চাই, কেউ তোকে এই অন্ধকার জীবন থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাক। আল্লাহ্ এমন কাউকে যেন তোর জীবনে পাঠিয়ে দেয়।”
আচ্ছা সত্যিই কি আসবে কেউ প্রিয়ুকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্ত করতে?
.
.
মনসুর আলী, আলেয়া বেগম গেছেন আলেয়া বেগমের বোনের বাড়ি। সেখানে জমি কেনার চেষ্টা চালাচ্ছেন আলেয়া বেগম। মনসুর আলীরও কোনো আপত্তি নেই। আলেয়া বেগম যা বলবেন তাই সই। আজ রাতে আর আসবেন না। আমিন বন্ধুবান্ধবের সাথে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। আজ আর আসবে বলে মনে হয় না। আর আসলেও নিজের মনে চুপ করে ঘুমিয়ে থাকবে। মদ, গাঁজা খাওয়ার অভ্যাস আছে। বিছানায় এক কোণায় শুয়ে আছে প্রিয়ু। আশা এসে বলে,
“আজ তো কেউ বাড়িতে নেই। চল মিনাদের বাড়িতে যাই?”
“না। ভালো লাগছে না। তুমি যাও।”
“তোকে একা রেখে যাব নাকি? তুইও চল।”
জোর করেই প্রিয়ুকে নিয়ে মিনার ভাইর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যায় আশা। আশা আর প্রিয়ুকে দেখে মিনা দৌঁড়ে আসে।
“তোমরা এসেছ! আমি তো ভেবেছিলাম আন্টি বোধ হয় আর আসতেই দেবে না।”
আশা বলে,
“বাড়িতে কেউ নেই। তাই চলে এসেছি।”
“ভালো করেছ। চলো ভেতরে চলো।”
দুজনকে ভেতরে নিয়ে যায়। মিনার মা ওদের দুজনকে দেখে খুব খুশি হন। দুজনকেই খুব স্নেহ করেন তিনি। সৎ বোনদের মধ্যে এত মিল এর আগে কখনো দেখেননি তিনি। দুটো হলুদ শাড়ি এগিয়ে দেয় মিনার মা বলেন,
“সব মেয়ের জন্যই হলুদ শাড়ি এনেছিলাম। তোদের দুজনের জন্যও এনেছি। নে তাড়াতাড়ি পড়ে নে।”
“আমরা তো শাড়ি পরতে পারি না।” বলে আশা।
মিনার মা হাসেন। নিজ হাতেই দুজনকে শাড়ি পরিয়ে দেন। প্রিয়ু আসার পর থেকেই চুপচাপ। গলায়, হাতে, গালে মারের দাগ। যে কেউ দেখলেই মায়া হবে খুব। মমতা বেগমের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল মিনার মায়ের। ছোটবেলায় পুতুলের মতো ছিল প্রিয়ু আর ওর বোন পিংকি। পিংকির বিয়ে হয়েছে আরো অনেক আগে। সৎ মায়ের ঘরে পড়ে রয়েছে প্রিয়ু। পুতুলের মতো মেয়েটার গায়ে এখন মারের অসংখ্য দাগ। তিনি প্রিয়ু গালে হাত রেখে বলেন,
“তুই হতভাগী আমার গর্ভে হতে পারলি না?”
প্রিয়ু মৃদু হেসে বলে,
“তোমার বান্ধবী মমতা, আমার মাকে আমি ভালোবাসি। আমি গর্ববোধও করি আমার মায়ের জন্য। কিন্তু মায়ের ওপর আমার অভিমান হয় খুব। কেন ছেড়ে চলে গেল?”
তার কান্না চলে আসে প্রিয়ুর অভিযোগে। তাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। মিনা জোর করে প্রিয়ুকে সাজিয়ে দেয়। বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায় তিনজন। অনিক ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছিল। হঠাৎ চোখ যায় প্রিয়ুর দিকে। নিরব পাথর-মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো কখনো আবার মিনার কথা শুনে হাসছেও। তবে হাসিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনিচ্ছাকৃতভাবে হাসছে। হয়তো সকালের সেই কাণ্ডের জন্যই মন খারাপ। তবুও মেয়েটাকে হাসিতে ভালো লাগছে। মেয়েটার মধ্যে মায়া আছে যেটা সকালে খেয়াল হয়নি। এখন চেহারায় প্রচণ্ড মায়া ফুঁটে ওঠেছে। মেয়েটার সত্যিকারের হাসি দেখতেই হবে। প্রাণ খুলে হাসলে নিশ্চয়ই আরো বেশি সুন্দর লাগবে। এজন্য রিশাদকে প্রয়োজন। রিশাদই পারবে ওর মুখে হাসি ফোঁটাতে।
গান-বাজনা ভালো লাগছে না প্রিয়ুর। তাই বাড়ির ভেতরে চলে যায়। সদর দরজায় গিয়ে আচমকা ধাক্কা খায় রিশাদের সাথে। রিশাদ সঙ্গে সঙ্গে বলে,
“স্যরি, স্যরি। আমি দেখিনি।”
প্রিয়ু মাথা নাড়িয়ে বলে,
“ঠিক আছে।”
রিশাদ ভালো করে লক্ষ করে দেখে প্রিয়তাকে। পরে চিনতে পারে সকালের মেয়েটা। সকালে মিনা আর মুবিনের কাছে প্রিয়ুর পরিবার সম্পর্কে সব শুনেছে। তারপর থেকেই প্রিয়ুর জন্য খারাপ লাগে রিশাদের। মনটা যে ভীষণ নরম! তবে রিশাদের রাগ হয়। কেন সব অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করবে? প্রতিবাদ করতে জানে না নাকি?
“আপনি যে বিয়েতে এসেছেন আপনার মা কিছু বলবে না?” জিজ্ঞেস করে রিশাদ।
উত্তরে প্রিয়ু বলে,
“মা বাড়িতে নেই।”
“আচ্ছা। একটা কথা বলি?”
“হু।”
“আপনি যথেষ্ট বড় হয়েছেন। ভালো-মন্দ সবই বুঝেন। আপনার পরিবার সম্পর্কে আমি সব শুনেছি। আপনার ওপর করা অত্যাচারের জন্য একাংশে আপনিও দায়ী।”
প্রিয়ু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। রিশাদ বলে,
“হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আপনি যদি শুরু থেকেই প্রতিবাদ করতেন তাহলে তারা এত অত্যাচার করতে পারতো না। প্রতিবাদ করতে না পারেন অন্তত জবাব তো দিতে পারেন? মনে রাখবেন,অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনই সমান অপরাধী। আমি কী বলতে চেয়েছি আশা করি বুঝতে পেরেছেন।”
বাহির থেকে রিশাদের ডাক আসে। অনিক ডাকছে। রিশাদ একবার প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে চওড়া হাসি দিয়ে চলে যায়। প্রিয়ু তাকিয়ে থাকে রিশাদের চলে যাওয়ার পথে।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
ছবি আর্টঃ Mehjabin Oysee Umi