Unexpected_lover part_10

0
2129

Unexpected_lover
part_10
#Rimy_Islam

এদিকে বিকেল গড়িয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ পরেই ধরনীর বুকে আঁধার নামবে। অথচ আমার থাকার কোনো ঠাঁই নেই। রাস্তায় বসে পড়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম।

আশেপাশে লোকজনের চোখে আস্ত বিনোদন আমি। অনেকে অসহায়ভাবে আমাকে তাকিয়ে দেখছে। অনেকে মজা লুফে নিচ্ছে। রাস্তায় পড়ে কান্নারত মেয়ে দেখতে মজা তো লাগাটাই স্বাভাবিক। অনিবের সাথে ভালো বনিবনা নেই।কাজেই আমার কাছে যথেষ্ট টাকার অভাব। হাতের ছোট্ট পার্সটা খুঁজে এক হাজার টাকার একটা নোট পেলাম। এই টাকাটা আমার শাশুড়ীর দেয়া। প্রথমদিন বউকে নেক হিসেবে দিয়েছিলেন। এটা দিয়ে ক’বেলার খাবার জুটলেও থাকার জায়গা জুটবে না।
প্রচন্ড ক্ষিদে পেটে ভালো হোটেলে গিয়ে খেয়ে নিলাম। খাবার শেষে রাস্তায় বেরোতে মাগরিবের আজান পড়লো। মাথায় ছাদ নেই কোনো। একা মেয়ে রাতে কোথায় ঘুরবো? মাথার কর্মক্ষমতা হারিয়ে গেছে।
” গাড়িতে ওঠো।”
আচমকা অনিবের গলা পেয়ে প্রাণ ফিরে পেলাম। পেছনে ফিরে অনিবকে দেখে দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরি। এক অদ্ভুত শান্তি এসেছে বুকে। মনে জোর ফিরেছে তাৎক্ষণিক। বাঁধ ভেঙে কান্না করতে করতে বলি,
” এভাবে রেখে কেউ যায়? যদি হারিয়ে যেতাম কিংবা মরে যেতাম? কেউ তুলে নিয়ে যেত?”

আমার হাত দুটো সরিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে বললেন,
” দূরে থেকে কথা বলো। নিজেকে এত সুন্দর ভেবো না। কার কাজ নেই এই আপদকে তুলে নিয়ে যাবে!”

আজ তাঁর তীব্র কটু কথাও খারাপ লাগলো না। তিনি ফিরে এসেছেন এই যথেষ্ট। যেখানে ভেবেই নিয়েছিলাম, হয়তো পথে পথেই কেটে যাবে বহুদিন। আমি বললাম,
” হোটেল রুম কেন ছাড়লেন?”

অনিব চোখ বড় করে রেগে তাকালো। মুহূর্তে কথা বন্ধ হয়ে গেল আমার। একবার রাগিয়ে জোরালো ভুগেছি। আর সাহস নেই। গুটি গুটি পায়ে গাড়িতে গিয়ে বসি। গাড়ি চলতে চলতে এক জায়গা থাকতে বুঝে নিলাম এখানে নামতে হবে। অনিব গাড়ি থেকে নেমে আমায় ইশারা করতে নেমে পড়ি। এবার মুগ্ধ হবার পালা। সামনে একচালা রিসোর্ট।ডানে উঁচু পাহাড় যা সন্ধ্যার হালকা আলোয় নীল রঙে সেজেছে।বা’দিক থেকে ঝর্ণার পানি পড়ার শব্দ ভেসে আসছে। আমি খুশিতে থৈথৈ করে বললাম,
” কি সুন্দর জায়গা! পাশে কোথাও ঝর্ণাও আছে নাকি?”

অনিব কথা বললো না। ম্যানেজারের কাছ থেকে সমস্ত বুঝে নিয়ে রিসোর্টের দিকে পা বাড়ায়। রুমে ঢুকে চারিদিকে পরিপাটি দেখে বেশ ভালো লাগলো। তবে আজকের পুরো দিনে শরীরে, মনে খুব ধকল গেছে। শিলা আপুর আচরণে রীতিমতো টনক নড়ে গেছে আমার। এমন তো আমার বোন ছিল না! যেন ঘোর অন্যায় করে ফেলেছি! হয়তো বাড়ি ছেড়ে পালানো, অনিবের সাথে আমার বিয়ের খবর কোনটায় খুশি হয়নি সে। তাই বলে এতদিন বাদে দেখা, একদন্ত কথা বলার সময় কি তার ছিল না?
অনিব ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরোতে আমি ঢুকলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখি তিনি আধশোয়া হয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছেন।
উসখুস করতে করতে বললাম,
” রাতে কিছু খাবেন না?”

” না।”

” তাহলে আমি কি করব? না খেয়ে থাকবো?”

” খেতে চাইলে বাইরে যেতে খেয়ে আসো, নয়তো খাবার নিয়ে আসো।”

আমি পড়ি দুর্বিপাকে। রাতে একা বাইরে যাবো কিভাবে? খাবার প্ল্যান বাতিল করে অনিবের পাশে গিয়ে দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ি। এই ছেলে খুব কেমন! হঠাৎ ভালো তো হঠাৎ খারাপ। এক বোনের শাস্তি দিচ্ছে আরেক বোনকে।
আমি হালকা কেশে বলি,
” শিলা আপুর সাথে তো আপনার এমন কোনো সম্পর্ক না যে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় এতো রাগ। তার রেশ ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। একটু বেশি বাড়াবাড়ি করেছেন।”

” আমি কারো মত জানতে চাচ্ছি না। ”

” আপনি এমন কেন? একটু বউয়ের অধিকার কি দেয়া যায় না?”

অনিব হঠাৎ রেগে আমার গায়ের উপর উঠে আমায় চেপে ধরে বললো,
” ঠিক আছে, বউয়ের অধিকার দিচ্ছি। ”

“কি করছেন অনিব?”

অনিবের সেদিকে কান নেই। আমার গায়ের উপর উঠে পুরো অধিকার ফলিয়ে যাচ্ছেন। হাতে, গলায়, বুকে, পেটে প্রতিটা জায়গায় আঁচড় কাটছেন তিনি। তীব্র ঘৃণাভরা অত্যাচার চলছে আমার উপর। এদিকে আমি লজ্জায়, ব্যাথায় কুঁকড়ে রয়েছি। এভাবেই তিনি অধিকার ফলিয়ে চলেছেন। বউ মানে কেবল কি এতেই সীমিত জীবনটা?আর কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে না? কি মনে করেন নিজেকে উনি? এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পাশে শুয়ে পড়লেন। এক সময় ঘুমিয়েও গেলেন। কিন্তু আমার রাত কাটে নিদ্রাহীণ হয়ে। মনে মনে শপথ করি, মরি- বাঁচি কিন্তু এই লোকের সাথে একটা দিন কাটাবো না। ভোর হতেই লাগেজ নিয়ে বেরোবার পথে থমকে দাঁড়ায়। কোথায় একবেলা থাকতে,খেতে টাকা প্রয়োজন। অনিবের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে পুরোটা হাতলে নিই। ক্রেডিট কার্ডটা উনার জন্য রেখে দিয়ে সমস্ত ক্যাশ নিয়ে চলে আসি। কোথায় যাবো জানি না। সামান্য ফোন পর্যন্ত আমার নেই। রিসোর্ট থেকে খানিক দূরে পাঁকা রাস্তা। রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করি। এভাবে পুরো এক ঘন্টা হেঁটে ক্লান্ত শরীরে একটা দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসি।
” আরে এ যে বর্ষা! কেমন আছিস?”
আমি চমকে তাকিয়ে দেখি নিহা। আমার স্কুল জীবনের বান্ধবী। কিন্তু ওর বাসা তো ঢাকা আর সে এখানে কি করছে? আবার ভাবি, হয়তো সেও ঘুরতে এসছে বর অথবা পরিবারের সাথে।
তবুও বললাম,
” তুই এখানে?”

” সেই প্রশ্ন তো আমার। তুই এখানে কি করিস?”

আমি হতাশ হয়ে বলি,
” লম্বা কাহিনি। তুই তোরটা বল।”

নিহা লাজুক হেসে বললো,
” এখানে আমার বরের বাড়ি। তাই এখানেই থাকি। ওইতো পাশেই আমার বাসা।”

মাথায় বুদ্ধি এলো। সাথে আশ্রয়ের একটা আশা। লজ্জা ভুলে বলেই ফেলি,
” তোর বাসায় ক’টাদিন থাকতে দিবি? বাসার লোকজন কিছু বলবে না তো?”

নিহা হেসে বললো,
” আরে না পাগলি। আমি আর আমার শাশুড়ী ছাড়া আর কেউ নেই। আমার হাজবেন্ড, মানে তোর দুলাভাই চাকরীর সুবাদে থাকে ঢাকা। ”

নিহার সাথে ওর বাসায় এসে উঠি। তিন রুমের ছোটখাটো একটা ফ্ল্যাট বাড়ি। বাড়ির কোণায় কানায় ঝকঝকে। একটা ঘর দেখিয়ে চলে গেল নিহা। আজ থেকে কিছুদিনের জন্য এই ঘরটা আমার। একটা অদ্ভুত শান্তির সাথে ভয় কাজ করছে। ঘুম ভেঙে অনিব যখন দেখবেন পাশে খালি। বাথরুম, রিসোর্টের আশপাশ কোথাও আমি নেই। তখন তোলপাড় করে ফেলবেন।কিংবা আপদ বিদায় হয়েছে ভেবে মনে মনে স্বস্তিবোধ করবেন।কে জানে!
.
.
.
.
.
.
.
দুটো দিন হেসে খেলে পার করে দিলাম। অনিবের ভীতি মন থেকে অনেকটা ঝেড়ে ফেলেছি।
অন্যদিকে অনিক হন্যে হয়ে বর্ষাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কোথাও না পেয়ে পাগল হয়ে পড়েছে। মেয়েটার রাতারাতি এত সাহস এলো কোথ থেকে তা কিছুতেই ও ভেবে পেলো না। একটু দূরে যেয়ে যেয়ে প্রত্যেক স্থায়ী দোকানে বর্ষার ছবি দেখাচ্ছে। দুই একজন দু’দিন আগে মেয়েটাকে এ পথে হেঁটে যেতে দেখেছিল। সে অনুযায়ী অনিবকে দিক নির্দেশনা দিতেই প্রবল আক্রোশে ফেটে পড়ল অনিব।
এদিকে আমি মনের সুখে নিহার সাথে বসে গল্প করছি। দু’দিনে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছু নিহাকে বলেছি।
” শোন বর্ষা, তুই যতদিন মনে করবি, এখানে থাকবি। কোনো সংকোচ করবি না। যদি তোর বর খুঁজে খুঁজে এখানে এসেও যায়।আমি তাকে আটকাবো। কেমন সাহস তোকে নিয়ে যাবে তাই দেখবো।”

” তুই চিনিস না উনাকে। কি থেকে কি করবেন তার কোনো ভরসা নেই। খুব ভয়ে থাকি রে। ”

” একটা মানুষকে এত ভয় পাওয়া কি আছে?”

” হুম।”

সকালের নাস্তা করতে আমি আর নিহা সবেমাত্র শুরু করেছি। এক দানাও মুখে দেইনি।নিহার শাশুড়ী মা খুব ভালো মহিলা। তিনি খেয়ে উঠে গেছেন।আমরা খোশগল্প করছি। এমন সময় দরজায় কড়া পড়লো। আমি রুটির টুকরো মুখে পুরেছি। নিহা দরজা খুলে এসে বললো,
” বর্ষা! একটা লোক এসে বলছে তোকে খুঁজছে। পরিচয় দিচ্ছে তোর বর বলে। ”

আমি খাওয়া ভুলে দরজার দিকে তাকাই। ডাইনিং স্পেস থেকে ওখানটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সত্যি সত্যি দরজা ঠেলে এগিয়ে আসছেন অনিব। সয়ং অনিব! এখন আমি কি করবো, কোথায় লুকাবো? পালাতেও তো পারবো না! ভয়ে হাত-পা থরথর করে কাঁপছে।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here