Unexpected_lover part_09

0
2337

Unexpected_lover
part_09
#Rimy_Islam

আমি থমকে গেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি শিলা আপু তার হাজবেন্ড নিয়ে হেঁটে আসছে এদিকেই।

আমি আবারো অনিব দিকে তাকালাম। তাঁর চেহারা ভাবলেশহীন। ঠিক আগে যেভাবে বসে ছিল, সেভাবেই রয়েছে। তবে চেহারায় নতুন করে যোগ হয়েছে উৎকন্ঠা আর রাগ। তিনি সোজা গাড়ি থেকে নামলেন। ভয়ে ভয়ে আমিও নেমে পড়ি। সামনে তাকিয়ে দেখি হঠাৎ শিলা আপু আমাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছে। পাশে দুলাভাই জনাব রোহান সাহেব বিরক্ত মুখে তাকিয়ে আছেন। অনিব শিলা আপুর দিকে এগোতে থাকেন, সাথে আমিও। জানি না কি হতে চলেছে। অনেকটা সামনে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অনিব প্রথমে কথা বললেন,
” শিলা ভালো আছো?”
আমি হতবাক। বাড়ি থেকে আমি পালালাম, এতদিন পর বোনের সাথে দেখা। কোথায় কথা পর্ব শুরু করবো আমি, তা না হয়ে অনিব কোথ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। কিচিৎ বিরক্ত নিয়ে বলি,
” বোন আমার। আমি কথা বলে তারপর আপনাকে সুযোগ দেয়া হবে।”

অনিব প্রচন্ড রেগে এক হাত তুলে চড় দেয়ার জন্য এগিয়ে এসে বললেন,
” একটা চড় মেরে গাল ফুলিয়ে দেবো। বেহায়া মেয়ে! বড়দের মাঝে কথা বলতে আসছে! একটা কথাও বলবে না। ”

” কেনো? এমন করছেন কেনো আপনি?”

অনিব এবার আমার হাত ধরে রাস্তার একপাশের খাদের কাছে নিয়ে আসে।এরপর বলে,
” আর একটা কথা বললে সোজা ওই খাদে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো। ”

এতক্ষণে শিলা আপু তেড়ে এলেন।
” আহ অনিব! কি করছ কি? মেয়েটাকে এত কষ্ট দিচ্ছ কোন অধিকারে? ও আমার বোন। ভুলে যেওনা।”

অনিব তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
” তোমার বোন আমার বউ। ”

শিলা আপু চমকে উঠলো। গভীর, ঘন শ্বাস নিতে লাগলো। কাঁপা গলায় বললো,
” তুমি বিয়ে করেছ? আগেই জানতাম এমন কিছু হয়েছে। যখন বর্ষা বাড়ি থেকে পালালো, ওইদিনই সন্দেহ হয়েছিল। আজ নিশ্চিত হয়ে গেলাম। বাবাকে বলে দেব, তোমার মেয়ে পালিয়ে তার বড় বোনের জন্য দেখা সেই ছেলের সাথে বিয়ে করেছে। কি সুন্দর! ”

অনিব বললো,
” তুমি প্রত্যাখ্যান করবে বলে আজীবন চোখের জল ফেলবো, অপেক্ষা করবো? এমনটা ভেবে থাকলে ভুল করেছো। আমাকে ঠিকমতো চেনোনি।”

আমি এসবে নিরব দর্শক। কথা বলার অধিকার পূর্বেই আমার থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। সুতরাং, চুপ করে দেখা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই।
তবুও ধীর স্বরে বললাম,
” আমি কি জানতে পারি কি হচ্ছে? ”

অনিব মাথার চুল খামচে ধরে বললো,
” তোমার বোন বিয়ে ভেঙেছিল। আজ তারই ছোট বোনকে আমার বউ করেছি। এর চেয়ে বড় শাস্তি ওর জন্য কিছু হয় না। ”

আমি অশ্রুভেজা গলায় বললাম,
” এতে আমার দোষটা কোথায়? শাস্তি তো আমিও পাচ্ছি। ”

” তোমার দোষ তুমি শিলার বোন। আর…..”

” আর কি?”

” আর আমার ঘরের বউ।”

শিলা আপুর হাজবেন্ড এবার কথা বলে উঠলেন। রোহান সাহেব বললেন,
” আপনি অনিব কায়সার চৌধুরী? শিলা আমাকে বলেছিল আপনার সম্পর্কে। ”

” ওহ তাই! ”

” জ্বী। দেখুন, পুরনো স্মৃতি ঝেড়ে যাকে বিয়ে করেছেন তাকে নিয়ে সুখে থাকুন।আর আমাদেরও থাকতে দিন।”

এরপর তিনি শিলা আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
” শিলা চলো যাওয়া যাক। অযথা সময় নষ্ট করছি।”

আমি আপুর হাত খামচে ধরে বলি,
” আপু আমাকে সাথে নিয়ে যাও প্লিজ?”
শিলা আপু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
” পালানোর সময়, বিয়ে করার সময় হুঁশ ছিল না? নাকি অজ্ঞানে বিয়ে করেছিলি? এখন মর পঁচে পঁচে।”

শিলা আপুরা যেমনটা অনাগত অতিথি হয়ে এসেছিল, তেমনই আবার চলে গেল। নিজের বোনের আচরণে আমি নির্বাক, স্তব্ধ।
এক পা নড়বার ক্ষমতা আমার নেই। অনিব হাত ধরে আমাকে গাড়িতে নিতে চাইলেও আমি অনড় দাঁড়িয়ে থাকি। অনিব রাগ চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে।
অনিব চিৎকার করে বললো,
” কোমর ভেঙেছ, এখন কি হাত-পা ভাঙতে চাইছো? চলো বলছি!”

” যাবো না।”- কাঠ গলায় বলি।

” কি বললে? আচ্ছা, এখানেই পড়ে থাকো।ভেবো না কোলে তুলে নিয়ে যাবো।”

অনিব সত্যি সত্যি আমাকে একা রেখে গাড়িতে উঠে পড়ে। এরপর সেখান থেকে চলে যায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। সকাল গড়িয়ে দুপুর এলো। অনিব ফিরে এলো না। গাড়িতে করে কতদূর এসেছি জানি না। এখান থেকে কোনদিকে যাবো সেটাও জানি না। যেহেতু আমরা সামনে এগোচ্ছিলাম। কাজেই হোটেলে ফিরতে পেছনের দিকে যেতে হবে। হাঁটতে শুরু করি সে পথে। অনিব আসবে না বেশ বুঝে নিয়েছি। এক সময় হোটেলের কাছে এসে পৌঁছতে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। হোটেল রিসেশনে গিয়ে রুমের চাবি চাইলাম,
” এক্সকিউজমি! রুম নাম্বার ১০৪ এর চাবিটা প্লিজ।”

” সরি ম্যাম, আপনি কি মি. অনিব চৌধুরীর ওয়াইফ?”

” জ্বী!”

” উনি চেক আউট করে দিয়ে চলে গেলেন কিছুক্ষণ আগে।”

” আচ্ছা, উনি দুইটা রুম বুকড করেছিলেন। ১০৪ এবং ১০৫। তাহলে ১০৫ এর চাবি দিন।”

” সো সরি ম্যাম। উনি দুটো রুমই ছেড়ে দিয়েছেন। আপনি চাইলে উনাকে ফোন করে কনফার্ম হতে পারেন। ”

আমি ভীষণ বিপদে পড়ি।আমি খুব চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে। তবে চালাক নয়। চঞ্চল এক আর চালাক এক। আমি পুরো বোকা সেজে গেছি। কোথায় যাবো, কোথায় রাতে থাকবো, পরবর্তীতে কোথায় যাবো কিছু জানি না। মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো। আমি দ্রুত হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। পুরো দিন পেটে কিছু পড়েনি। এদিকে বিকেল গড়িয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ পরেই ধরনীর বুকে আঁধার নামবে। অথচ আমার থাকার কোনো ঠাঁই নেই। রাস্তায় বসে পড়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম।

( রিভিশনের সময় পাইনি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here