হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ৩৭+৩৮

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-37

তুমি রবে নিরবে
রিদয়ে মম
তুমি রবে নিরবে
নিবিড় নিবৃত পূর্নিমা
নিশিথীনি সম (ii)

মম জীবন ও যৌবন ও
মম অখীল ভূবন ও……
তুমি ভরিবে গৌরবে
নিশীথিনী সম

তুমি রবে নিরবে
রিদয়ে মম
তুমি রবে নিরবে

জাগিবে একাকী
তব করুন ও আখি
তব অঞ্চল ও ছায়া
মোরে রহিবে ঢাকি….

মম দুঃখ বেদন ও
মম সফল স্বপনও……
তুমি ভরিবে সৌরভে
নিশীথিনী সম

তুমি রবে নিরবে
রিদয়ে মম
তুমি রবে নিরবে
নিবিড় নিবৃত পূর্নিমা
নিশীথিনী সম………

গান শেষ করতেই চারিদিকে করতালিতে মুখর পরিবেশ।প্রীতি চোখ বন্ধ করে এক মনে গান গেয়ে উঠলো ।ও যখন গান গায় তখন আশেপাশের কোনো কিছুর খোজ রাখে না।আপন মনে গান গেয়ে যায়।ওর গান শুরু হলে চারিদিকে স্তব্দ হয়ে সবাই গান শুনে।পাখিরাও উড়ে উড়ে আসে মনে হয় ওর গান শুনতে।

প্রীতি মুচকি হেসে সবার দিকে তাকালো।ভার্সিটির হল রুমে বসে আছে ও আর লিনা।প্রীতি আগে থেকেই অনেক ভালো গান গায়।চারিদিকে সুনাম প্রীতির গানের।ওর গানের জন্য ওকে ভারসিটির সবাই চিনে।আগে ভারসিটিতে সব সময় গাইতো। কিন্তু বিয়ের পর আর ওইভাবে ভারসিটি আসাই হয় নি তার।আজ প্রায় দীর্ঘ দুই মাস পর ভারসিটিতে পা রাখলো।তাই ক্লাস বাদ দিয়ে সবাই ঝেকে বসেছিলো প্রীতিকে ঘিরে।তারা সবাই গান শুনবে।অগ্যতা প্রীতি হাজার বারন করলেও কেউ শুনে নি।এদিকে তার শরীর টাও টানছিলো না।তবুও জোর করে গাইতে হলো।

লিনা তাহসিনের বিয়ের দু মাস হয়ে গেছে।এতোদিন ওরা কেউ ই ভারসিটি আসে নি।কিছুদিন পরে পরীক্ষা। তাই আজ আসতে বাধ্য হয়েছে।নীলাভ প্রীতিকে কোনো মতেই আসতে দিতে চায় নি।কারন প্রীতির শরীর তেমন ভালো না।শরীর দুর্বল।

প্রীতি উঠে দাড়ালো। আজ আর ক্লাস করবে না।শরীর মন কোনোটাই টানছে না।গা গুলিয়ে আসতে চাইছে বার বার ওর।মাথা ব্যাথা করছে। গান টাও অনেক কষ্টে গেয়েছে।চোখ মুখে বার বার অন্ধকার দিয়ে আসছিলো।

প্রীতি লিনাকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে লাগলো।এক পা এগোনোর আগেই প্রীতির দুনিয়া ঘুরতে শুরু করলো।মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নেয়।আরেক পা এগোনোর শক্তি ই পাচ্ছে না প্রীতি। অনেক কষ্টে আরেক পা এগোনোর আগেই প্রীতি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

লিনা চিল্লিয়ে প্রীতিকে গিয়ে ধরে।আশেপাশে হৈ পড়ে গেছে।মুহুর্তের মধ্যে সবার মাখে আতংক ছড়িয়ে গেছে।সবাই ছোটাছুটি করছে।কেউ পানি আনতে গেছে তো কেউ প্রীতিকে ঘিরে আছে।আবার কেউ ডাক্তার কে ফোন লাগাচ্ছে।কেউ এম্বুলেন্স ডাকছে।যতই হোক প্রীতি শত তরুনের ক্রাশ।এভাবে প্রীতির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ভেঙেছে অনেকের ই মন।

লিনা ব্যাগ থেকে তাড়াতাড়ি ফোন বের করলো।হাত পা কাপছে লিনার।গলা টা বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে। লিনা তাড়াতাড়ি ফোন লাগালো নীলাভের নাম্বারে।

নীলাভ মিটিং রুমে।ফোন সাইলেন্ট করা।ফোন বেজে যাচ্ছে নীলাভ ধরছে না।

লিনা পর পর তিন বার চেষ্টা করলো।নাহ…ধরছে না।

নীলাভ মিটিং রুমে নিজের প্রেজেন্টেশন টা শেষ করে সামনে তাকাতেই ফোনের আলো দেখতে পেলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো লিনার নাম্বার থেকে অনেক গুলো কল।মিটিং হোল্ড করে ও বাইরে তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করলো।

-হ্যা লিনা বলো।আমি মিটিং রুমে ছিলাম।
-ভাইয়া আপনি তাড়াতাড়ি ভারসিটি তে আসুন।
-কেনো?
-ভাইয়া প্রীতি প্রীতি……

লিনার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।এদিকে নীলাভের শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম। নীলাভ অস্থির কন্ঠে বলে,

-প্রীতি? কি হয়েছে প্রীতির? লিনা বলো

-ভাইয়া প্রীতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে।আপনি তাড়াতাড়ি আসুন ভাইয়া।

নীলাভের এ কথা শুনার সাথে সাথে দুনিয়া টা থমকে গেলো।প্রীতি ভারসিটি গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।নীলাভ ফোন টা ছুড়ে মেরে আর কিছু না ভেবে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো।

,

নীলাভ এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে আরেক হাত দিয়ে নিজের ঘাম মুছছে।রাস্তা টাও যেনো আজ বেশ বড় হয়ে গেছে।শেষই হচ্ছে না।নীলাভের কান্না আসতে চাইছে। ও স্টেয়ারিং এ বারি মেরে বলে,

-আমি কেনো আজ প্রীতিকে ভারসিটি যেতে দিলাম।আমি আগেই ওকে ভারসিটি যেতে না করেছিলাম।জেদ করে গেলো মেয়েটা।

,

নীলাভ ভারসিটির সামনে এসে তাড়াতাড়ি নামলো।কোনো মতে দৌড়ে ও ভারসিটির ভেতরে গেলো।

লিনা কোলের উপর প্রীতির মাথা নিয়ে বসে আছে।আর অঝোর ধারায় কাদছে।প্রীতির মুখে পানি ছিটে দেওয়া হয়েছে তাও জ্ঞান ফিরছে না।

নীলাভ চটপট দৌড়ে এসে প্রীতির মাথাটা নিজের কোলে নিলো।এরপর প্রীতিকে কোলে তুলে নিয়ে লিনার উদ্দেশ্যে বলে,

-লিনা তুমি বাড়ি যাও।আর কাউকে কিছু বলো না।সবাই চিন্তা করবে।আমি প্রীতিকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি।

লিনা না করলো।নীলাভ আবার রেগে আবার বলাতে সে রাজি হয়ে গেলো।বাড়ি চলে গেলো।

______________________________

প্রীতি টিপটিপ করে চোখ খুলছে।ভালো মতো চোখ খুলতেই সে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে বেশ অবাক হলো।পাশেই নীলাভ প্রীতির হাত ধরে বসে আছে।

নীলাভের মুখ থমথমে। প্রীতি আস্তে করে উঠে বসলো।নীলাভের থমথমে মুখ দেখে ওর গালে হাত রেখে প্রীতি জিজ্ঞেস করলো,

-কি হয়েছে?

নীলাভ মুচকি হেসে প্রীতির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

-কি চাই তোমার বলো তো?

প্রীতি কপাল খানিক টা কুচকে বলে,

-কি চাই মানে?কি চাইবো আমআপনি তো সব ই দিয়েছেন আমায়।

নীলাভ প্রীতির কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলে,

-তুমি তার চেয়েও অনেক বড় উপহার আমায় দিয়েছো।আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখ।

প্রীতি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো নীলাভের দিকে।নীলাভ নিচু হয়ে প্রীতির পেটে চুমু দিলো।প্রীতি খামচে নীলাভের চুল ধরলো।কাপা কাপা বলায় প্রীতি বলে উঠে,

-কি করছেন কি?কেউ দেখে ফেলবে তো এটা হসপিটাল।আর তাছাড়া আমি হসপিটালে কেনো?আপনি ই বা কোথা থেকে এলেন?আমি তো ভারসিটি ছিলাম।

নীলাভ প্রীতিকে পানি খাওয়ালো আর একটা ওষুধ দিতে দিতে বলে,

-এই ওষুধ টা খাও। তোমার লো প্রেসারের ওষুধ। তোমার প্রেসার এখনো যে কেনো ঠিক হচ্ছে না বুঝলাম না।বাড়িতে চলো একবার এরপর থেকে সব খেতে হবে।

প্রীতি ওষুধ টা খেয়ে বলে,

-বললেন না আপনি কিসের শ্রেষ্ঠ উপহার পেয়েছেন আমার থেকে?

নীলাভ প্রীতির দিকে গভীর ভাবে তাকালো।প্রীতি চোখ নিচে নামিয়ে ফেলল।এই চোখে সে তাকাতে পারবে না।কখনো না।কত মায়া,নেশা,ভালোবাসা এই চোখে।নীলাভ প্রীতির হাত খুব শক্ত করে ধরলো।প্রীতি কেপে উঠলো।নীলাভের দিকে তাকাতেই প্রীতি নীলাভের চোখের পানি দেখতে পেলো।চিকচিক করছে নীলাভের চোখে পানি।প্রীতির আত্মা কেপে উঠলো।প্রীতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীলাভ ঝাপটে প্রীতিকে জড়িয়ে ধরলো।

প্রীতি তাজ্জব বনে গেলো।কি হয়েছে বুঝতে পারছে না ।নীলাভ প্রীতিকে আরো শক্ত করে ধরে বলে,

-আমি বাবা হবো প্রীতি। তুমি মা হবে। ভাবতে পারছো প্রীতি আমাদের ঘরে ছোট একটা বাবু আসবে।আমিও বাবা হবো?কেউ আমাকেও বাবা বাবা বলে সারা ঘর ময় মাতিয়ে তুলবে। ছোটো ছোটো হাত পা ছুড়বে। খেলবে।বাবা হওয়া এতোটা সুখ প্রীতি? এতোটা!

প্রীতি থম মেরে বসে আছে।নড়ছেও না।রোবট হয়ে গেছে একদম।ওর কানে বারবার একটা কথা বাজছে, ‘আমি বাবা হবো প্রীতি তুমি মা হবে’।

প্রীতি নীলাভ থেকে সরে এলো।কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে হঠাৎ চেচিয়ে বলে,

-আমার পেটে বাবু আছে?আমি মা হবো? আর আপনি এতোক্ষন পরে এ কথাটা বলছেন?এতোক্ষন ধরে কথাটা আটকে রেখেছিলেন?

নীলাভ মুচকি হেসে বলে,

-আরে আমি তো বলছিলাম ই।আর এ সময় এতো চেচামেচি করা ঠিক না।আস্তে আস্তে কথা বলতে হয়।তা না হলে বাবু ও তোমার মতো দজ্জাল ঝগড়ুটে হবে।

প্রীতি নাক ফুলিয়ে তাকালো নীলাভের দিকে।নীলাভ প্রীতিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।প্রীতিও হেসে নীলাভ কে জড়িয়ে ধরে। নীলাভ বলে,

-বাবা মাকে খবর টা জানানোর পর থেকে ওরা পারে না তো ফোনের মধ্যেই তোমাকে মাথায় নিয়ে নাচতে।ওদের প্রথম নাতী/ নাতনী আসবে।ওরা কি করবে না করবে দিশা কিনারা পাচ্ছে না।মা তো সবাইকে ফোন করে বলছে আর তোমার পছন্দের সব খাবার রান্না করছে।আর বাবা তো ছোটো খাটো একটা অনুষ্ঠান ই রেখেছে বিকালে।এতোক্ষনে বাড়ি ডেকোরেশন ও বোধ হয় হয়ে গেছে।ভাবতে পারছো সবাই কত খুশি।

প্রীতি মুচকি হেসে নীলাভের বুকে মুখ গুজলো।নীলাভ প্রীতিকে বুকের মাঝে নিয়ে বলে,

-কবে আসবে গো আমাদের বাচ্চাটা।

-খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়বে।

নীলাভ চোখ বন্ধ করে বাবুকে ভাবতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর প্রীতি বলে,

-শুনেন,

-হমম বলো।

-আমাদের ছেলে হলে নাম রাখবো নীল আর মেয়ে হলে রাখবো প্রীনি।আমাদের সাথে মিলিয়ে সুন্দর হয়েছে না?

নীলাভ প্রীতির কপালে চুমু দিয়ে বলে,

-অনেক সুন্দর হয়েছে।কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের মেয়ে হবে।

-সিউর আপনি?

-না।আমার আন্দাজ ঠিক হয়।

-সত্যি?

-হম

-তাহলে স্নেহার কি হবে বলেন তো?

-স্নেহার মেবি ছেলে হবে। আমার মনে হচ্ছে।

-স্নেহার ছেলে হলে স্নেহার ছেলের নাম রেখে দিবো নীল।আর আমার মেয়ের নাম রাখবো প্রীনি।ওদের মধ্যেই আমরা বেচে থাকবো তাই না বলেন।

-হমম সব ঠিক আছে কিন্তু ওদের মধ্যে আমরা কীভাবে বেচে থাকবো?

-আমার মেয়ে আর স্নেহার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিবো।দেখেন আমাদের সাথে নামের ও মিল থাকবে।ভালো না?

-আমার মেয়েটা কেবল পেটে আসছে।আর তুমি তার বিয়েও ঠিক করে দিলা।

প্রীতি হেসে উত্তর দেয়,

-হমম।আফটাল অল আমি সবসময় এডভান্স। আপনি বলতেন।

-ঠিক ই বলতাম।

কথাটা বলেই নীলাভ প্রীতিকে কোলে তুলে নিলো।সারা হসপিটালময় প্রীতিকে নিয়ে ঘুরলো।আর প্রীতি লজ্জায় কুকড়ে নীলাভ বুকের মাঝখানে ঢুকে যাচ্ছে।কত মানুষ হাসপাতালে।সবাই কেমন করে তাকিয়ে দেখছে।এই লোকটা এতো পাগল কেনো?বেশ কিছু মানুষ মুচকি মুচকি হাসছে।আবার কিছু মানুষ কংগ্রাচুলেশন জানাচ্ছে।আবার কিছু কিছু মানুষ বলছে, ‘ঢং দেখে আর বাচি না, আদিখ্যেতা। মনে হচ্ছে বাচ্চা শুধু তার বউয়ের পেটে একাই এসেছে।’

এসব শুনে প্রীতি মন খারাপ করলে নীলাভ ফিসফিসিয়ে প্রীতির কানে বলে,

-আসলে এতো সুন্দরী বউয়ের বাচ্চার বাবা আমি একাই হবো তো তাই ওদের হিংসা হচ্ছে।

প্রীতি ফিক করে হেসে দেয়।নীলাভ হেসে সবার সামনে প্রীতির কপালে চুমু দিয়ে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,

-সব সময় সব জায়গায় সব মানুষের কথায় কান দিতে নেই।পাচ টা জিনিসের মধ্যে একটা খারাপ থাকবেই।তুমি সেই খারাপ টা নিয়ে মন খারাপ কখনোই করবে না।বরং ভালো টা আকড়ে ধরবে।

প্রীতি মুগ্ধ নয়নে নীলাভের কথা শুনে। এরপর শক্ত করে নীলাভের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

-এই যে আকড়ে ধরলাম❤️
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_Unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-38

প্রীতির চার মাস চলছে।পেট টা হালকা একটু উচু হয়েছে ওর।শাড়ি জামার উপর দিয়ে পেট বুঝা যায়।প্রীতিকে বাড়ির কোনো কাজ ই করতে দেয় না।নীলাভের তো কড়া নিষেধ।

সকাল এগারোটা বাজে।নীলাভ একটু আগেই অফিসের জন্য বেরিয়েছে।ইদানিং ওর অফিসে যেতেই ইচ্ছা করে না।মন টা টানেই না।আজ ও যেতে চায় নি।কিন্তু ইম্পোর্টেন্ড কাজ থাকায় বাধ্য হয়ে ওর যেতে হয়েছে।

প্রীতি বারান্দায় বিন ব্যাগে বসে আছে। মৃদু বাতাস এসে বারবার চুল উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কপালে কুচকে একবার চুল আরেকবার শাড়ির আচল ঠিক করছে ও।চুপ চাপ বসে প্রীতি নিজের পেটে হাত রেখে একা একাই বলে,

-মাম্মাম আমার।কি করো তুমি?তুমি কবে আসবে বলো তো?তোমার আরেকটা ভাই/বোন আসার সময় হয়ে গেলো তুমি কবে আসবে মাম্মাম?

প্রীতি পেটে হাত বুলিয়ে সামনে তাকালো।ইদানীং স্নেহার জন্য বেশ চিন্তা হয় ওর।মেয়েটা বেশ দুর্বল। ওর প্রেগ্ন্যাসির সারা টা সময় ও বমি করেছে।প্রীতি প্রথম প্রথম বমি করলেও।এখন বেশ কমে এসেছে।স্নেহার ডেলিভারির টাইম ও হয়ে এসেছে।

প্রীতি আবার নিজের পেটে হাত বুলালো।এর মধ্যেই ওর ফোন বেজে উঠলো।প্রীতি পেট ধরে আস্তে করে উঠে ফোন টা হাতে নিলো।বাড়ির নাম্বার থেকে কল!প্রীতির কপাল খানিক কুচকে গেলো।হঠাৎ বাড়ির নাম্বার থেকে কেনো ফোন।

প্রীতি ফোন টা রিসিব করতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো।প্রীতির সারা শরীর ঝনঝনিয়ে উঠলো মায়ের এমন কান্নার সুরে।প্রীতি অস্থির হয়ে বলে,

-মা,কি হয়েছে মা।

রাফিয়া আহসান কেদে বলেন,

-প্রীতি স্নেহার পেইন উঠেছে।হাসপাতালে এনেছি ওকে আমরা।তুই…….

প্রীতির হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।রাফিয়া আজসান কে থামিয়ে প্রীতি বলে,

-আমি এক্ষুনি আসছি মা।

_________________________________

প্রীতি ক্যাব নিয়ে যাচ্ছে।কারন বাড়ির গাড়ি একটা তৌফিক চৌধুরী নিয়ে গেছে আর একটা নীলাভ আর একটা গ্যারেজে সারাতে দেওয়া হয়েছে একটু নষ্ট হয়েছে।

প্রীতি ব্যাগে ফোন বাজলে প্রীতি রিসিব করে কানে ধরলো।তখনি নীলাভ উৎকন্ঠা কন্ঠে বলে,

-প্রীতি তুমি কি বাড়ি থেকে বের হয়েছো?মা আমাকে ফোন করেছিলো।আমি এসেছি হসপিটালে।স্নেহার একটা ছেলে হয়েছে।তুমি চিন্তা করো না।আর হসপিটালেও তুমি এসো না।

প্রীতি হাফ ছেড়ে বাচলো।উথাল পাথাল মন টা শান্ত হলো।ও ফুফি হয়ে গেছে।আনন্দে মনটা নেচে উঠলো।প্রীতি ফোন কানে ধরে বলে,

-আমি তো অলরেডি ক্যাবে উঠে রৌনা ও দিয়ে দিয়েছি।

নীলাভ রাগান্বিত স্বরে বলে,

-তোমাকে এতো পাকনামো কে করতে বলেছে? এক্ষুনি বাড়ি ফিরে যাও।এই শরীর নিয়ে তুমি কোন সাহসে হসপিটালে আসছো?এক্ষুনি বাড়ি যাবে।

ধমক দিয়ে নীলাভ ফোন কেটে দিলো।প্রীতি ফোন সামনে নিয়ে মুখ গোমড়া করে ফেলল।একবার ডাইভার কে বলতে চায় গাড়ি ঘুরাতে।আবার ভাবে, না থাক, এতোটুকু যেহেতু এসে পড়েছি তখন বাচ্চাটাকে একটু দেখেই যাই।

এই বলে প্রীতি আর গাড়ি ঘুরাতে বলে না।

,

বেশকিছুক্ষন যাওয়ার পর প্রীতি বাইরে তাকালে অবাক হয়ে যায়।ও আশেপাশে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ডাইভার এর উদ্দেশ্যে বলে,

-কি ব্যাপার এটা কোন রাস্তা?এটা তো হসপিটালের রাস্তা না।আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে।

ডাইভার টা মুচকি হাসলো।প্রীতি লুকিং গ্লাসে দেখেই আতকে উঠলো।এটা তো তনয়।প্রীতির আত্মা ধুকপুক করেছে।ও ভয়ে কাপা কাপা গলায় বলে,

-আআআপনি?আপনি এখানে কেনো?কি করছেন এখানে? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?

তনয় বাকা হেসে বলে,

-এতো অস্থির হলে চলে বলো তো।আস্তে আস্তেই দেখবে আমি তোমাকে কোথাই নিয়ে যাই।

প্রীতির শরীর ঘামছে।পেট ব্যাথা করছে।চিন্তায় শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে।গা গুলিয়ে আসছে।বমিও পাচ্ছে।

প্রীতি অনেক কষ্টে বলে,

-প্লিজ আমাকে বাড়িতে ছেড়ে আসুন আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

তনয় হঠাৎই হিংস্ররূপে বলে,

-এইটুকুতেই এতো কষ্ট হচ্ছে?আর বিয়ের সময় যখন ভরা বাড়িতে আমাকে রিজেক্ট করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে তখন আমার কেমন লেগেছে?

প্রীতি অসহায় ভাবে বলে,

-আমি আপনাকে ভালোবাসতাম না।আপনি বুঝতে পারছেন না কেনো?আর তাছাড়া আপনি আমাকে এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

তনয়ের চোখ লাল হয়ে উঠেছে।মুখে ফুটে উঠেছে শয়তানি হাসি।তনয় ভয়ানক ভাবে বলে,

-দেখো কোথায় নিয়ে যাই তোমাকে।

পরমুহূর্তেই আবার হিংস্রভাবে তনয় বলে,

-নীলাভ আমার অনেক ক্ষতি করেছে।সব সময় আমার আগে থেকেছে।যেখানে তোমাকে আমার পাওয়ার কথা ছিলো সেখানে ও আমার থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নিয়েছে।এখন ওর বাচ্চা তোমার পেটে।এই বাচ্চা আমি আজ ই শেষ করবো এর পর তোমাকে আমার করে নিবো।

প্রীতি তনয়ের কথা শুনে ব্যাথা ভুলে গেলো।ভয়ে কাপতে কাপতে গাড়ির কর্ণারে চলে গেলো।চেপে ধরলো নিজের পেট।মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,

-আমার বাচ্চা!

বলেই প্রীতি সিটে ঢলে পড়লো।

তনয় একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে বাকা হাসলো।মন টা শান্তি লাগছে তার।প্রতিশোধ নিতে পেরেছে সে। এর চেয়ে শান্তি আর কি হতে পারে।প্রীতির অজ্ঞান হয়ে গেছে এতে তনয়ের ই লাভ।তাহলে প্রীতি আর রাস্তা টা দেখবে না। চিনতেও পারবে না।আর জানতেও পারবে না তাকে কোথায় রাখা হয়েছে।

তনয় গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। প্ল্যান চেঞ্জ তার।নাহ…চেঞ্জ না।সে ভেবেছে শুধু বাড়িটা চেঞ্জ করবে। অন্য বাড়িতে প্রীতিকে রাখবে যে বাড়ির রাস্তা প্রীতি একবিন্দু ও চিনতেও পারবে না।

,

অনেক বছরের পুরোনো ধুলোয় জমে যাওয়া এক বাড়িতে প্রীতিকে নিয়ে এসেছে তনয়।বাড়ির আসবাবপত্র গুলো বেশ পুরোনো।মাকড়সার জ্বালে চারিদিকে ছেয়ে গেছে।তনয় তার চেলা পেলা ডেকে প্রীতি যেই রুমে থাকবে সে রুম পরিষ্কার করতে বলল।এরপর প্রীতিকে বিছানায় শুইয়ে আটকিয়ে রাখলো সেই রুমে।প্রীতির জ্ঞান এখনো ফিরে নি।

প্রীতিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েই তনয় লোভাতুর দৃষ্টিতে একবার প্রীতির দিকে তাকালো।আর একটুর জন্য… একটুর জন্য এ মেয়েটা তার হাত থেকে ফসকে গেছিলো।একটুর জন্য মেয়েটার সাথে নীলাভের বিয়ে হয়েছে।ভেবেই তনয়ের চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠলো।রাগ লাগছে তনয়ের।কপালটাকে হাত দিয়ে ঘষে তনয় একটু আগের ঘটনা ভাবতে লাগলো।

অজ্ঞানরত প্রীতিকে তনয় নিয়ে গিয়েছিলো ডাক্তারের কাছে।কিন্তু প্রীতিকে দেখে ডাক্তার সাফ জানিয়ে দেয় সে এবোর্শন করতে পারবে না।তনয় কোনো কথা না বলেই ডাক্তারের মাথায় বন্দুক ধরলো।ডাক্তার ভয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।হাত দুটো উচু করে কাপা কাপা তোতলানো গলায় বলে উঠলো,

-প্রেসেন্টের এখন চার মাস চলে কিছুদিন পর পাচ মাসে পড়বে।আর এই অবস্থায় আপনি যদি এবোর্শন করেন তাহলে প্রেসেন্ট মারা যেতে পারে।এমনিতেই প্রেসেন্টের শরীর দূর্বল।এবোর্শন করলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ।

তনয় ডাক্তারের মাথা থেকে বন্দুক টা নামায়।সামনের সোফায় গিয়ে বসে। এক দৃষ্টিতে বন্দুক টার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে, ” যদি প্রীতি বেচেই না থাকে তাহলে তনয়ের এতো কিছু করে কি লাভ।তাহলে তো ও নিজেও প্রীতিকে পেলো না।যতই হোক প্রীতিকে একবার নিজের করের পাওয়ার বেশ ইচ্ছা তনয়ের।আর এটাই হবে নীলাভের জন্য সবচেয়ে বড় হার।

অনেক চিন্তা ভাবনা করে তনয়ের ঠোঁটে শয়তানি হাসি ফুটায়।ও ভাবে,

-আপাতত প্রীতির গায়ে সে হাত লাগাবে না।প্রীতিকে বন্দী করে রেখে দিবে।আর তো মাত্র চার পাচ মাস তারপর প্রীতির বাচ্চা হয়ে গেলে সেই বাচ্চাকে হয় তনয় মেরে ফেলবে নয়তো কোথাও বিক্রি করে দিবে।তারপর প্রীতিকে সে নিজের কাছে রেখে ভোগ করে ছেড়ে দিবে।আর নীলাভ ও তখন প্রীতিকে দূর দুর করে তাড়িয়ে দিবে।আর সেটাই হবে প্রীতির শাস্তি।বিয়ের আসরে নীলাভকে ভালোবাসি বলার শাস্তি। বিয়ে ভাঙার শাস্তি।ভরা বাড়িতে আমাকে অপমান করার শাস্তি।

তনয় উঠে দাড়ালো। প্রীতিকে কোলে নিয়ে তনয় হেটে গাড়িতে তুলে চলে এসেছিলো।

ভাবনার জগত থেকে ফিরে তনয় উঠে প্রীতির কাছে গেলো।প্রীতি গালে একবার বাজে ভাবে স্পর্শ করলো।শরীরে হাত দিতে গিয়েও দিলো না।তনয় বলে উঠলো,

-না এখন না।তোমাকে একদম পুরোপুরি ভোগ করবো।

তনয় লোভাতুর ভাবে হাসলো।প্রীতিকে ডাক্তার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে বলে প্রীতির এখনো জ্ঞান ফিরেনি।

তনয়ের ফোনে সে সময় ই কল আসলো।প্রীতির দিকে দৃষ্টি রেখেই কল টা কে করেছে তা না দেখে তনয় কল টা রিসিব করলো।প্রায় সাথে সাথে কেউ চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

-কুত্তার বাচ্চা।আমার প্রীতি কই?শুয়োরের বাচ্চা আমার প্রীতিকে কোথায় রেখেছিস?

আকস্মিক এমন কথায় তনয় হকচকিয়ে গেলো।ফোন টা সামনে এনে চেক করতেই দেখলো নীলাভের নাম্বার থেকে ফোন।তনয় বাকা হাসে।ফোন টা আবার কানে ধরে নাটক করে বলে,

-আরে বন্ধু, কেমন আছিস?

নীলাভ রেগে তার চেয়েও দ্বিগুন চিতকারে বলে,

-আমার প্রীতি কোথায় হারামির বাচ্চা?আধ ঘন্টার মধ্যে তুই আমার প্রীতিকে আমার কাছে এনে দিবি তা না হলে তোর এমন অবস্থা করবো…

নীলাভকে আর বলতে না দিয়েই তনয় পৈশাচিক হেসে উঠলো।নীলাভ থেমে গেলো।ভ্রু কুচকালো।তনয় চেয়ারে বসে সামনের দিকে ঝুকে ভয়ানক ভাবে বলে,

-মানতেই হবে।তুই শালা বহুত চালাক।এক মিনিটেই ধরে ফেললি যে আমি তোর বউকে তুলে নিয়ে এসেছি।আর আধ ঘন্টার মধ্যে ফেরত?হাহা..হাসালি তুই আমায়।

তনয় তার থেকেও হিংস্র ভাবে বলে উঠে,

-তোর বউকে আমি ভোগ করে তারপর ফেরত দিবো।তোর বাচ্চাটা আগে হোক।তোর বাচ্চাটাকে প্রথমে মারবো।তারপর তোর বউকে ভোগ করে হয় মেরে ফেলবো আর তা না হয় দয়া করে তোর কাছে পাঠিয়ে দিবো।আমি আবার বহুত দয়ালু।

নীলাভের চোখ লাল হয়ে উঠলো।হাতের সামনে একটা কাচের গ্লাস ফেলে দিয়ে নীলাভ চিল্লিয়ে বলে,

-কুত্তার বাচ্চা।তোর জন্মের ই ঠিক নাই।বেজন্মা তুই।তা না হলে এতো খারাপ মন মানসিকতা এতো খারাপ তুই জীবনেও হতি না।তোর বাপের ও ঠিক নাই তোর মায়ের ও ঠিক নাই।

তনয় তৎক্ষনাৎ চিল্লিয়ে বলে উঠে,

-এই নীলাভ মুখ সামলে কথা বল।তোর বউ কিন্তু আমার কাছে মনে রাখিস।

নীলাভ থামে।শ্বাস নেয় জোরে।এরপর নরম সুরে বলে,

-দেখ ভাই তোর শত্রুতা আমার সাথে।তুই প্লিজ প্রীতিকে ছেড়ে দে।ও আমার ভালোবাসা ভাই।ছেড়ে দে প্লিজ।আমি মরে যাবো ওকে ছাড়া।

তনয় বেশ আয়েশ করে বসে।ফোনে কান ধরেই শয়তানি ভাবে হেসে বলে,

-আমি এতোদিন ধরে ঠিক এই দিনটার ই অপেক্ষা করছিলাম। যেদিন তুই আমাকে এভাবে অনুরোধ করবি।মনে আছে চার বছর আগের কথা যখন আমি একটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করেছিলাম আর তুই আমাকে মেরেছিলি।সেদিন আমিও তোকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম।আর না মারতে।তোর মনে আছে তুই ভারসিটির সবার সামনে তোর পা ধরে আমাকে মাফ চাইয়েছিলি।তোর মনে আছে বিয়ের দিন তোর বউ তুই সবার সামনে আমাকে অপমান করে বের করে দিয়ে নিজে বিয়ে করেছিস।আজ এসব কিছুর শোধ তুলবো আমি।আজ আমার দিন।আমার…..

বলেই তনয় বিকট ভাবে হেসে কল টা কেটে সিম ফেলে দেয়।

নীলাভ হ্যালো হ্যালো করে কিন্তু কোনো লাভ হয় না।নীলাভ ওই নাম্বারে পর পর বেশ কিছুবার ফোন করে কিন্তু বন্ধ দেখায়।

নীলাভের মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম।ও কি করবে কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না।পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।মাথার চুল দু হাত দিয়ে খামচে ধরে।নীলাভ অনেক জায়গায় খুজেছে প্রীতিকে।লোক ও লাগিয়ে দিয়েছে সব জায়গায়।কিন্তু এতে বিশেষ কোনো লাভ হয় নি।প্রীতির কোনো দিশা মেলে নি।

চলবে💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here