হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ৩৯+৪০+শেষ

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি 💕
The_Unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-39

স্নেহার বেবি হওয়ার পর প্রীতিকে ফোন দিয়ে কথা বলার আধ ঘন্টা পর নীলা চৌধুরী নীলাভকে ফোন করে,

-হ্যালো নীলাভ, বলছি যে, প্রীতি কি হসপিটালে পৌছেছে আসলে ওর জন্য অনেক চিন্তা হচ্ছে।

নীলাভ কপাল কুচকে বলে,

-কেনো প্রীতির তো বাড়িতে যাওয়ার কথা ও যায় নি?

-কই না তো এখনো তো আসে নি।

নীলাভের ভ্রু কুচকে যায়।প্রীতি এখনো বাড়ি যায় নি মানে কি।অজানা ভয়ে মন ছেয়ে যায়।বুক টা ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগে।কাউকে কিছু না জানিয়ে ও বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে প্রীতিকে না পেয়ে নীলাভ নীলা চৌধুরীর কাছ থেকে সব ভালো করে শুনে কখন প্রীতি বেরিয়েছে গাড়ি নিয়ে গেছে কি না।

সব শুনে নীলাভের বুক টা ছেত করে উঠে।ও বেরিয়ে যায় প্রীতির খোজে।উত্তরা আর মিরপুরের অলি গলি প্রীতির বাসা সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুজে প্রীতিকে।কিন্তু খুজে পায় না।প্রীতি কে না পেয়ে নীলাভ ছন্নছাড়া হয়ে বাড়ি ফিরে।এর পরই ওর তনয়ের কথা পড়লে ও ফোন লাগায়।

_____________________________

প্রায় চার মাস পর,,,,,,

অন্ধকার রুম।রুমটা দেখে মনে হচ্ছে দিনের বেলায় ও ভিষণ ভাবে রাত হয়ে গেছে।অগোছালো হয়ে আছে সারাটা।চারিদিকে সিগারেটের পোড়া গন্ধ নাকে আসছে।আসছে মদের গন্ধ।চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অনেক কাচের বোতল।আর এক জায়গায় পড়ে আছে রক্ত।

নীলা চৌধুরী রুমে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এই চার মাস ধরে এমনই হয়ে আছে সবকিছু।বাড়িটা মরুভূমি হয়ে গেছে।প্রীতি নেই।ভাবলেই বুকটা হুহু করে কেদে উঠে।ছেলের এমন অবস্থা দেখে নির্ঘুম রাত কাটে নীলা চৌধুরীর আর তৌফিক চৌধুরীর।

নীলা চৌধুরী সারা রুমে একবার চোখ বুলিয়ে লাইট জ্বালায়।দেখে এক পাশে নীলাভ পড়ে আছে।আরেক পাশে রক্ত। নীলাভের হাত থেকে রক্ত পড়ছে।নীলা চৌধুরী আতকে উঠে।কিন্তু চিল্লায় না।কেদে উঠে তবে নিস্তব্ধে।প্রীতি যাওয়ার পর থেকে এমন সবসময় ই হয়।নীলাভ হাত পা কেটে বসে থাকে।

নীলা চৌধুরী ফার্স্ট এইড বক্স এনে নীলাভের হাতে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।

নীলাভ জেগে থেকেও যেনো জেগে নেই ওর কোনো অনুভূতি নেই।সারাক্ষন এভাবে পড়ে থাকে। একদিকে চেয়ে থাকে।কারোর কোনো কথা ওর কানে ঢুকে না।অনুভূতি হীন হয়ে পড়েছে একদম।খেতে দিলে মাঝে মাঝে খায়। কিন্তু বেশির ভাগ সময় ই মদ আর সিগারেট খেয়েই দিন কাটে তার।

নীলা চৌধুরী উঠে যেতেই নীলাভ নীলা চৌধুরীর শাড়ির আচল টেনে ধরে।নীলা চৌধুরী চমকে পেছন ফিরে তাকায়।নীলাভ তাকায় মায়ের দিকে।নীলাভের চোখে পানি।চোখ যেনো কথা বলছে তার।নীলা চৌধুরী অবাক হয়ে ছেলের পাশে বসেন।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করে না।চুপ থাকে। অনেকক্ষন নিরবতার পর নীলাভ মায়ের আচল ধরে বলে,

-দু মাস আগে আমার আর প্রীতির প্রথম বিবাহ বার্ষিকী গিয়েছে মনে ছিলো তোমার মা?

নীলা চৌধুরী ছেলের আরো কাছে বসলেন।ছেলের মাথায় হাত রেখে বলেন,

-হম মনে ছিলো।তোর মনে ছিলো বাবা?সেদিন তো তুই একবারের জন্যও দেখা দিস নি।সকালে কোথায় যেনো গেলি তার পর থেকে ঘর বন্ধি তুই।

নীলাভ অন্য দিকে ফিরে তাকায়।কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে,

-আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী আর আমার মনে থাকিবে না?সেইদিন সকালে কেক আনতে গিয়েছিলাম আমি, মা।কেক এনে আমি একাই কেটেছি জানো মা। একাই।তোমাকেও বলি নি বাবাকেও বলি নি।একাই কেটেছি একাই খেয়েছি।আর আমার প্রীতিকে খাইয়েছি।আমার বাচ্চাকে খাইয়েছি।আমি ওদের অনুভব করি,মা।আমার খুব কাছে থাকে ওরা।খুব কাছে।

নীলাভ থামে।নীলা চৌধুরী ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কেমন শুকিয়ে গেছে তার ছেলেটা। তার সবল স্বাস্থ্যবান ছেলেটা কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে।নীলা চৌধুরী আচলের কোনা দিয়ে নিজের চোখ মুছলেন।নীলাভ শান্ত স্বরে বলে উঠে,

-কি হতো মা যদি আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীটা আমরা এক সাথে কাটাতে পারতাম এক সাথে কেক কাটতে পারতাম।

-দু মাস আগের কথা এখন কেনো তুলছিস বাপ?

-আজ প্রীতিকে খুব মনে পড়ছে খুব….. জানো মা।বুকে মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে কেউ আঘাত করছে বারবার।আঘাতের উপরে আবারো আঘাত করছে।এতো আঘাত আমি নিতে পারছি না, মা।অন্যসব আঘাত নিতে পারলেও এই আঘাত টা নিতে পারছি না।

নীলা চৌধুরী ছেলের মুখে হাত বুলালেন। নীলাভ আবার বলে উঠে,

-কোথায় কোথায় খুজি নি ওকে বলো তো।কিছু বাইরের দেশেও লোক লাগিয়ে দিয়েছি।দেশেও খুজেছি তাও ওকে কেনো পাচ্ছি না, মা।বলো না মা আমার প্রীতি কোথায়?

নীলাভ আবার ওর মায়ের হাত ধরে অস্থির হয়ে বলে,

-আমার বাচ্চাটা কতটুকু হয়েছে মা?প্রীতির পেট এখন অনেক বড় হয়ে গেছে না মা?প্রীতি বোধ হয় এখন অনেক কষ্ট পায়।প্রীতি তো কিচ্ছু খায় না।খেতেই চায় না।কতো বাছগোছ করে খায় ও।আমার বাচ্চাটাও মনে হয় ওর জন্য খেতে পায় না।আচ্ছা মা ওরা কি প্রীতিকে ঠিক মতো খেতে দেয়?আমার বাচ্চাটাকে কি ওরা খেতে দেয় বলো না মা বলো না।আমি কি কখনো আমার বাচ্চাটাকে দেখতে পারবো না, মা।

নীলাভ কেদে উঠে।নীলা চৌধুরী ছেলের কান্না দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না।চোখের পানি ছেড়ে দেন।নীলাভ উঠে দাঁড়ায়।হাত দিয়ে বিছানা দেখিয়ে বলে,

-এই বিছানায় ঠিক এই পাশ টায় প্রীতি ঘুমাতো জানো মা।তাই আমি বিছানায় ঘুমাই না।কারন এখনো ওর ছোয়া লেগে আছে এতে। আমি এখানে শুলে তো ওর ছোয়াটা চলে যাবে।তারপর, তারপর… এই আলমারি। এই আলমারি রোজ সকালে প্রীতি গোছাতো আর আমাকে বকতো।কেনো আমি ঠিক মতো সব গোছগাছ করে রাখি না।প্রীতি প্রতিদিন এই ডেসিন টেবিলে দাঁড়িয়ে চুল মুছতো।আনাচে কানাচে সব জায়গায় আমার প্রীতি, মা।আমি পারছি না আমি আর পারছি না, মা।আমার কষ্টে বুক টা ফেটে যায়, মা। ফেটে যায়।এনে দেও আমার প্রীতিকে। এনে দেও।

নীলাভ মায়ের আচল ধরে পাগলের মতো হাউমাউ করে কেদে উঠে। নীলা চৌধুরী শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।নিজের ছেলে কষ্টে তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।তিনি একটা দোয়াই করেন আল্লাহ যাতে তাড়াতাড়ি প্রীতিকে ফিরিয়ে দেয়।

নীলাভ কেদে হেচকি তুলতে তুলতে আবার বলে উঠে,

-আমি নামাজ পড়ি মা।পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। তবুও কেনো আল্লাহ আমার প্রীতিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে না।কেনো মা?স্নেহার ছেলেটাকে যখন দেখি না মা আমার ভিষণ কষ্ট হয় মা।ভিষন কষ্ট।আমি প্রীতিকে বলেছিলাম যে স্নেহার ছেলে হবে সেটা মিলেও গেলো।কিন্তু আমার মেয়ে হবে কি না সেটা কি দেখতে পাবো মা।বলো না পাবো কি?ভালোবাসা এতো কেনো নিষ্ঠুর?এতো কষ্ট কেনো ভালোবাসায় মা?”ভালোবাসা বারবার এসেও হারিয়ে যায়।”আমার তো কষ্ট হয় মা।অনেক কষ্ট হয়।

নীলা চৌধুরী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

-প্রীতি এসে পড়বে বাবা দেখিস এসে পড়বে।

নীলাভ চোখ মুছে আবার বলে,

-অনেক শখ ছিলো আমি নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের বেড়ে উঠা দেখবো।একটু একটু করে প্রীতির পেট বড় হবে। আমার সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করবো।আমার একটা অংশ ওর কাছে রয়েছে মা।আমি কীভাবে ভালো থাকতে পারি?আমার কলিজা টা প্রীতি ছিলো মা।ও আমার কলিজা আমার রিদয় সব নিয়ে চলে গেছে।শুধু আমার দেহটাই এখানে পড়ে আছে।

নীলাভ থামে আবার বলে,

-প্রীতি আমাকে কি বলতো জানো মা।ও আমাকে শাসিয়ে বলতো, “শুনেন আর কিছুদিন পর হয়তো আমার মুড সুয়িং হবে অনেক।এখন ই তো হয়।কিছুদিন পর আরো বেশি হতে পারে।যেমন আমার রাত ভিড়েতে ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছা জাগতে পারে।হলে গিয়ে ‘সাহসী হিরোআলম’ এই ছবি দেখতে ইচ্ছা করতে পারে।রাত ভিড়েতে বাইরে বের হতে ইচ্ছা করবে।হুটহাট রেগে যেতে পারি আমি। আপনি কিন্তু তখন একটু ও রাগ দেখাবেন না আমার সাথে একটু ও বিরক্ত হবে না।তাহলে কিন্তু আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো।”

নীলাভ কথাটা বলে হাসে।নীলা চৌধুরী জানেন কতটা কষ্ট তার ছেলের এই হাসির পেছনে।নীলা চৌধুরীর কলিজা টা যেনো কেউ ছিড়ে নিচ্ছে।নীলাভ নিশ্চুপ মেরে যায়। শান্ত গলায় আবার বলে,

-কই মা এগুলা তো হলো না।কিচ্ছু হলো না।কিচ্ছু না।আমি জানি আমি অনেক রাগী কিন্তু মা বিশ্বাস করো আমি একটু ও রাগ দেখাতাম না। আর কখনো প্রীতির সাথে রাগ দেখাবো ও না।তবুও আসতে বলো ওকে মা।’ভালোবেসে আমাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েও কেনো নিঃস্ব করে দিয়ে গেলো।’ কেনো? কেনো?

নীলাভ ফ্লোরে বারি মারে। আবার বলে,

-এই বুকে কত কষ্ট হয় ও কি জানে না মা?জানে না ও?আমি যে ওকে ভয়ানক ভাবে ভালোবাসি তা কি ও জানে না মা?আমি যে আমার সন্তানটাকে নিজের চোখের সামনে দেখতে চাই তা কি ও জানে না মা?আমি ওকে অনুভব করি মা।মনে হয় আমার আশেপাশেই ও আছে।আর একটার পর একটা ঝামেলা করছে।জানো মা আমাকে কেউ এখন আর ‘গোমড়ামুখো’ বলে ডাকে না।ও আমাকে কি বলেছিলো জানো,যে আমার মেয়েটার সাথে না কি ও স্নেহার ছেলের বিয়ে দিবে।দেখো তো মা, আমার মেয়েটা এখনো পৃথিবীটাতেই আসে নি।আর ও বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।কি আজব একটা মেয়ে।

নীলাভ হাসে।সটাং হয়ে এই ঠান্ডার মধ্যে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।নীলা চৌধুরী আটকাতে চায়।নীলাভ না করে।নীলাভ উপরে দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষন।ওর চোখ বেয়ে পানি পরে অঝোর ধারায়।কিছুক্ষন নিরব থেকে নীলাভ বলে উঠে,

-আমার কি সত্যি মেয়ে হবে মা?ছেলেও তো হতে পারে?কিন্তু প্রীতি বিশ্বাস করে ওর মেয়ে হবে কারন আমি যে বলেছিলাম।” প্রীতি আমাকে এতোটাই বিশ্বাস করে মা যে আমি আন্দাজ করে কিছু বললেও সেটা সত্যি করার ক্ষমতা রাখে “।এতোটা ভালো মেয়ের সাথে কেউ কীভাবে এমন করতে পারে।

নীলাভ হঠাৎ করে উঠে বসে। হিংস্র ভাবে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-আমি কখনো ছাড়ব না ওই তনয়কে।আমি আমার প্রীতিকে ঠিক আমার কাছে নিয়ে আসবো।ওই তনয়ের কলিজা ছিড়ে ফেলবো আমি।শুধু একবার হাতে পাই ওকে।

নীলা চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষন থেকে কথা শুনছে নিস্তব্ধে। এবার তিনি বলেন,

-তনয়ের ক্ষতি করবি।যদি তুই প্রীতিকেই না পাস।যদি ওই শয়তানরা প্রীতির সাথে তোর অনাগত বাচ্চাটাকে মেরে ফেলে তখন।

নীলা চৌধুরী কথাটা বলে নিজেই চমকে যান।নীলাভ ভয়ানক ভাবে তাকায় মায়ের দিকে।নীলাভের চোখে হাজারো ভয়েরা ঘিরে ধরেছে।নীলাভের শরীর শিরশির করে উঠছে।ভয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শরীরের রগ ফুলে ফেপে উঠেছে।

নীলাভ উপরের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে চোখ বন্ধ করে বলে,

-তাহলে আমি ও থাকবো না মা।

নীলা চৌধুরী এই কথা শুনার সাথে সাথে বুকে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদে।নীলাভ ও মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” আমি এখন ও আশায় আছি মা।আমি প্রীতিকে খুজে পাবো।তাই আমি এখনো মরে যায় নি।কিন্তু এভাবে ওর শূন্যতায় ই একদিন মারা পড়বো আমি।”
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_Unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-40

নীলা চৌধুরী মুখে আচল গুজে কাদে।ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।নীলাভ হাউমাউ করে কাদছে।

নীলাভের ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। নীলাভ চোখ মুছে ঢোক গিলে।ফোন টা রিসিব করে কানে ধরে ‘হ্যালো’ বলে।অপরপাশ থেকে কেউ বলে উঠে,

-হ্যালো স্যার।স্যার, আমি এই মাত্র ম্যাডাম কে দেখলাম।

নীলাভ চট করে দাঁড়িয়ে যায়।অস্থির হয়ে উঠে।।কেপে উঠে সারা শরীর।জড়িয়ে যাওয়া গলায় বলে,

-কোকোকোথায় দেখেছো?

উত্তেজনায় নীলাভের শরীর কাপছে।নীলাভের গলা শুকিয়ে গেছে।ছেলেটা ঠিকানা দিলে নীলাভ নীলা চৌধুরীকে শুধু বলে ‘মা আমি প্রীতিকে আনিতে যাচ্ছি দোয়া করো’।নীলাভ বেরিয়ে পড়ে।

,

প্রীতির নয় মাসে পড়েছে।পেট টা অনেক বড় হয়ে গেছে।ডাক্তার ডেট দিয়ে দিয়েছে আর মাত্র দশদিন পর সিজার করতে বলেছে।তা না হয় প্রেসেন্ট মারা যেতে পারে।কারন প্রেসেন্টের নিজের বাচার ইচ্ছা নেই।

প্রীতির শরীর খারাপ করেছিলো। আজ শ্বাসকষ্ট উঠেছিলো।তাই তনয় ওকে চেকাপ করাতে নিয়ে আসে হসপিটালে।তনয় নিয়ে আসতে চায় নি কিন্তু প্রীতির অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে উঠেছিল।

প্রীতি থমথমে হয়ে আছে।গত পনেরো দিন থেকে প্রীতি একটা কথাও বলে না।একদিকে তাকিয়ে থাকে।কোথাও যায় না।ঘরে শুধু ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকে।একটা বুয়া এসে প্রীতিকে প্রতিদিন খাইয়ে দিয়ে যায়।প্রীতি একটা কথাও বলে না।চুপচাপ খেয়ে নেয়।বুয়াই গোসল করিয়ে দেয় প্রীতি চুপচাপ থাকে।প্রীতিকে ধরে যেদিকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রীতি রোবটের মতো সেদিকেই যায়।অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছে ও।

ওরা এখন আবার সেই বাড়িটায় ফিরে যাচ্ছে।তনয় গাড়ির সামনের সিটে বসে আছে। প্রীতি পেছনে একাই।এখন ওরা যেখানে আছে সেখানে জ্যাম লেগেছে একটু তাই গাড়ি থেমেছে।এই জ্যাম টুকু পাড় হলেই সামনে ফাকা রাস্তা।ধু ধু করে রাস্তাটা মিনিটে মনে হয় একটা গাড়ি যায় এমন।আসার সময় প্রীতি এমন ই দেখেছিলো।

প্রীতি আশেপাশে তাকালো।ভালোই জ্যাম লেগেছে।প্রীতি আবার সামনে তাকালো।তনয় ফোনে কি যেনো করছে আর ড্রাইভার সামনে তাকিয়ে আছে।

প্রীতি আস্তে করে গাড়ির লক খুলে। আশেপাশে কোন জায়গায় অনেক জোরে গান বাজছে।এর জন্য শব্দ টা তনয়ের কানে যায় নি।প্রীতি আস্তে করে গাড়ির দরজা খুলে।এরপর আস্তে করে গাড়ি থেকে নামে।

ভারী পেটে অনেক কষ্ট হয় প্রীতির।তবুও নিঃশব্দে আস্তে করে নেমে দাঁড়ায়।গাড়ির দরজা খুলা রেখেই প্রীতি ভারী পেট নিয়ে যতটুকু পারছে দৌড়ে যাচ্ছে।

জ্যাম এখনো ছাড়ে নি।বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে। গাড়ির ড্রাইভার লুকিং গ্লাসে দেখে গাড়ির দরজা খোলা।ড্রাইভার তাড়াতাড়ি পেছনে ঘুরে।চমকে উঠে বলে,

-স্যার ম্যাডাম পালাইছে।

তনয় চমকে যায়।হকচকিয়ে পেছনে তাকায়।না…নেই। প্রীতি নেই। তনয় মাথায় হাত দিয়ে বলে,

-ওহ মাই গড।আমার ই ভুল হয়েছে।আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা ভারসাম্য হারিয়েছে। কিন্তু এটা তো ‘কেউটে সাপ’ আমার মাথায় রাখার উচিত ছিলো।

তনয় দাতে দাত চাপে।চোখ বন্ধ করে ।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলতেই চোখের সামনে ড্রাইভারের মুখটা দেখে সে ড্রাইভারটাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,

-এখনো এখানে কি করছিস হারামজাদা। একটু খেয়াল রাখতে পারিস নি।এতো টাকা মাইনে দিয়ে কি এমনি এমনি পুষছি।বের হয়ে খোজ মেয়েটা।

তনয়ের চিতকারে পুরো গাড়ি ঝনঝনিয়ে কেপে উঠলো। তনয় গাড়ির দরজা খুলে তাড়াতাড়ি বের হলো।জ্যামের মধ্যে ও দৌড়ে দৌড়ে প্রীতিকে খুজছে।

প্রীতি বেশ খানিক টা এগিয়ে এসেছে।ও খালি রাস্তাটায় এসে দাড়িয়েছে।পেটে ব্যাথা করছে ।অসহনীয় ব্যাথা।প্রীতি দাতে দাত চেপে রইল। অনেক কষ্টে একটা গাছের কাছে গিয়ে প্রীতি বসে পড়লো পা ছড়িয়ে।এতো ব্যাথা!এতো কষ্ট!প্রীতি পেট কোমড় ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।প্রীতি খামচে নিজের পেট ধরলো।গলা শুকিয়ে আসছে ওর।প্রীতি এদিক ওদিক তাকিয়ে পানি খুজতে লাগলো। না…এখানে পানি নেই।প্রীতি শরীর থেকে যেনো আত্মা বেরিয়ে পড়বে এমন অবস্থা।

প্রীতির চোখ নিভে নিভে আসছে। চোখ টেনে খুলে রাখলো।অসহ্যকর ব্যাথায় ও ঠায় বসে রইল।মাতৃত্বের সাধ পাওয়া এতটা কঠিন!প্রীতি সামনে তাকালেই নীলাভের মতো কাউকে গাড়ি দিয়ে যেতে দেখলো।প্রীতি চমকে তাকালো সেদিকে।অনেক কষ্টে গাছটাকে ধরে উঠে দাড়ালো ও।শরীরে শক্তি নেই।ও চিতকার করে নীলাভ কে ডাকতেও পারছে না।গলা দিয়ে স্বর বেরিয়ে আসতে চাইছে না।

প্রীতি অনেক কষ্টে হালকা জোরে বলে উঠে,

-নীলাভ……

নীলাভের গাড়ি থেমে যায়।প্রীতির মুখে হাসি ফুটে উঠে।

প্রীতি আরেকবার ডাকতে যাবে তার আগেই কেউ ওর মুখ চেপে ধরে।প্রীতি হাত পা ছুড়তে লাগে।কষ্ট হচ্ছে ওর ভিষণ কষ্ট। মরন যন্ত্রণা হচ্ছে।তনয় এদিক দিয়ে যেতেই প্রীতিকে দেখে সাথে নীলাভকে দেখে তনয় আতকে উঠে।কলিজা কাপতে লাগে ওর।আর এদিকে প্রীতিকে চিল্লাতে দেখে তনয়ের আত্মা শুকিয়ে যায়।ও তারাতাড়ি এসে প্রীতির মুখ চেপে ধরে।

তনয় প্রীতিকে গাছের আড়ালে নিয়ে যায়।তখনি নীলাভ পেছন ফিরে তাকায়।কেউ নেই।ধু ধু করছে রাস্তা।একটা প্রানী ও নেই।নীলাভ আশাহীন হয়ে পড়ে। সামনে তাকিয়ে ও বিরবির করে বলে,

-কেনো মনে হলো আমাকে প্রীতি ডাকছে?প্রীতি কি এখানে আছে?আমার বুকটা এমন করছে কেনো?

নীলাভ গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকায়।না নেই কেউ…।নীলাভ ভাবে,এভাবে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।ও আবার গাড়িতে উঠে চলে যায়।

প্রীতি হাত পা ছুড়াছুড়ি করছে।চিতকার করে নীলাভকে ডাকতে চাইছে।কিন্তু তনয় প্রীতির মুখ এমন ভাবে চেপে আছে যে উমমম..ছাড়া আর কোনো শব্দ আসছে না।

নীলাভ যেতেই তনয় হাফ ছেড়ে বাচে।এরপর প্রীতির দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায়।প্রীতির চুলের মুঠি খামচে ধরে।হিরহির করে টানতে টানতে তনয় বলে উঠে,

-শালী। কুত্তার লেজ কখনো সোজা হয় না কি?তুই জীবনে ঠিক হবি না কি?হারামজাদি। ভেবেছিলাম পাগলা হয়ে গেছোস তুই।কেউটে।

আরো বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি গালি দেয় তনয় প্রীতিকে। প্রীতির মরে যেতে ইচ্ছে করছে।ঘেন্নায় গা ঘুলিয়ে আসছে।প্রীতি চোখ উলটে আসছে।এমনিতে পেটের ব্যাথা তার মধ্যে তনয় এভাবে প্রীতির চুল খামচে ধরেছে।প্রীতি এক হাত দিয়ে পেছনের চুলে ধরে আছে।প্রীতির ঘেন্না লাগছে যে এমন একটা ছেলের সাথে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।

প্রীতি ঘেন্নায় রাগে তনয়ের মুখে থু থু ছিটিয়ে দেয়।তনয় মুখ ঘুরিয়ে ফেলে।মুখ মুছে ও রক্তবর্ণ চোখে প্রীতির দিকে তাকায়।রাগে শরীর কাপছে তনয়ের।তনয় ঝড়ের বেগে গিয়ে প্রীতির গাল চেপে ধরে।প্রীতি এক হাত দিয়ে চুলে আরেক হাত দিয়ে গালে তনয়ের হাত ধরে আছে।তনয় দাতে দাত চেপে বলে,

-আজ ই তোরে ভোগ করে এরপর তোরে শেষ করবো সাথে তোর বাচ্চারেও শেষ করবো আমি।তোরে আর খাইয়ে দাইয়ে আমি নিজের পয়সা নষ্ট করবো না।

প্রীতি অনেক কষ্টে বলে,

-বেজন্মা।

তনয় রাগে চোখ বড় বড় করে তাকায়।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ও।এদিকে প্রীতির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।চোখ উলটে যাচ্ছে।প্রীতি এখনি মারা পরে যাবে এমন অবস্থা।তনয় হাত উঠায় প্রীতিকে চর মারার জন্য।প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।কিন্তু চর তার গালে লাগে না।

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে।প্রীতি চোখ মুখ কুচকে আছে।প্রীতি এবার আস্তে করে চোখ খুলে তাকায়।ভারী হয়ে আসছে ওর চোখ।সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে।সামনে নীলাভ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রীতি চমকে উঠে।প্রীতির জীবন ফিরে আসে যেনো।শরীরে বল ফিরে পায়।

নীলাভ প্রীতির দিকে তাকায়।প্রীতি চুলে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে আছে তনয়।নীলাভ রক্তলাল চোখ দিয়ে তনয়ের দিকে তাকায়।এরপর তনয়ের গলা চেপে ধরে।নীলাভ এমন ভাবে তনয়ের গলা চেপে ধরেছে যে তনয় প্রীতির চুল ছেড়ে দেয়।তনয়ের জিহবা বের হয়ে এসেছে।চোখ উল্টে গেছে।নীলাভ এক হাত দিয়ে তনয়ে গলা চেপে ধরে অন্যহাত দিয়ে প্রীতিকে আকড়ে ধরে।

তনয় নীলাভের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু পারছে না।তনয়ের শ্বাস আটকে আসছে।নীলাভ আরো জোড়ে তনয়ের গলা চেপে ধরে।তনয় বার বার বলার চেষ্টা করছে কিছু।কিন্তু বলতে পারছে না। ও বার বার হাত জোড় করে দেখাচ্ছে কিন্তু নীলাভ কিচ্ছু শুনছে না।ও আরো জোরে তনয়ের গলা চেপে ধরে।তনয়ের নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করলো এখন।ও জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো তনয় কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।নীলাভ তখনি চিল্লিয়ে বলে উঠে,

-তোর জান আজ শেষ করে দিবো আমি।মেরে ফেলবো তোকে আমি।বাচার একটা সুযোগ ও পাবি না তুই।আমি তখনি প্রীতিকে দেখেছিলাম।আমি যখন গাড়ি থেকে নেমেছি তখন প্রীতির শাড়ির আচল গাছের পাশ দিয়ে দেখেছি।কিন্তু তোরা যাতে বুঝতে না পারিস এর জন্য গাড়ি দিয়ে ঘুরে এসেছি।প্রীতির নিঃশ্বাসের শব্দ আমি দশ মেইল দূর থেকেও শুনতে পাই রে।

প্রীতি নীলাভের শার্ট খামচে নীলাভের বুকে মুখ গুজে আছে চোখ মুখ খিচে।নীলাভ তনয়ের গলা আরো জোরে চেপে ধরে বলে,

-আমি ভালোবাসি প্রীতিকে। এতোদিন ধরে ওকে আমার থেকে দূরে রাখার শাস্তি তোর জীবন দিয়ে দিতে হবে।

তনয় শক্তি পাচ্ছে না।তনয় হাত দিয়ে নীলাভকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু এখন হাল ছেড়ে দিছে।ওর শরীরে একটু ও শক্তি নেই।চোখ মুখ উল্টো হয়ে গেছে।নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।তনয় আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়।শ্বাস যায় যায় অবস্থা ওর।নীলাভ আরেকটু জোরে চেপে ধরতেই তনয়ের শ্বাস আটকে যায়। হাত পা ছোড়াছুড়ি করে ও একদম নিস্তেজ হয়ে যায়।নীলাভ ছেড়ে দেয়।

তনয় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।দুবার গুঙ্গিয়ে উঠে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।তখনি পুলিশ আসে।প্রীতি আতকে উঠে।আত্মা ছমছম করে উঠে ওর।পুলিশ এসে নীলাভকে হ্যান্ডকাফ পড়াতে চাইলে নীলাভ প্রীতিকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে চোখ লাল করে তাকায় পুলিশের দিকে।

নীলাভের চোখ দেখেই পুলিশ কাপতে শুরু করে কাপা কাপা হাতে পুলিশটা নীলাভের হাতে হ্যান্ডকাফ ও পড়াতে পারে না।নীলাভ গম্ভীর কন্ঠে চোখ বন্ধ করে বলে,

-আমার হাত ছাড়।

পুলিশ টা ছেড়ে দেয়।নীলাভ বলে,’আমি নীলাভ চৌধুরী’।সব পুলিশ থেমে যায়।নীলাভকে সবাই এক নামে চিনে।চৌধুরি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক হিসেবে ওকে সবাই চিনে।

নীলাভ প্রীতিকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগোতে এগোতে বলে,

-লাশটাকে মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে দেন।

সব অফিসার মাথা নাড়ায়।

প্রীতি এতোক্ষন দাতে দাত চেপে ব্যাথা সহ্য করছিলো।কিন্তু এখন যেনো ব্যাথা টা বেড়েছে।নীলাভ প্রীতির কপালে চুমু দেয়।প্রীতিকে গাড়িতে বসায় নীলাভ।প্রীতি ব্যাথা সরিয়ে ঠোঁটে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে গাড়িতে বসে।নীলাভ গাড়িতে উঠে আবার প্রীতির কপালে চুমু দেয়।প্রীতি চোখ বন্ধ করে।নীলাভ প্রীতির ঠোটে একটা চুমু দিয়ে প্রীতিকে জড়িয়ে ধরে।প্রীতিও নীলাভকে জড়িয়ে ধরে।

নীলাভ প্রীতির গাল দু হাত দিয়ে ধরলো।ধরা গলায় নীলাভ বলে,

-কতটা ভালোবাসি জানো না তুমি?আমার এক একটা দিন কীভাবে কেটেছে তুমি জানো?এক একটা দিন গেছে আর আমার কাছে এক এক যুগ লেগেছে।তোমাকে ছাড়া আমি কখনো ভালো থাকতে পারি না।

প্রীতি কেদে উঠলো। নীলাভকে আকড়ে ধরে থাকলো।কেদে কেদে প্রীতি বলে,

-এতো শুকিয়ে গেছেন কেনো?চোখের নিচেও তো কালি পড়েছে।

নীলাভ বলে উঠে,

-আর তুমি?নিজের কি অবস্থা করেছো দেখেছো?আরো শুকিয়ে গেছো।শুধু পেট টাই দেখা যাচ্ছে।

প্রীতি হেসে ফেলে। নীলাভ মাথা নিচু করে।পর পর দুবার প্রীতির পেটে চুমু দেয় নীলাভ।পেটে হাত বুলিয়ে নীলাভ অনেক কথা বলে।তখনি প্রীতি কেদে উঠে।আর্তনাদ করে উঠে।

নীলাভ ভয় পেয়ে যায়।প্রীতি ব্যাথা সহ্য করতে পারে না।রীতিমতো চিল্লাতে থাকে। নীলাভ তাড়াতাড়ি গাড়িটা হাসপাতালের দিকে ঘুরায়।

___________________

ওটির বাইরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।প্রীতির কন্ডিশন ভালো না।প্রেগ্ন্যাসির্ সময় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে নি।ডাক্তারের কথা শুনে নীলাভের প্রান যায় যায় অবস্থা।

একটু পর একটা ডক্টর ফুটফুটে একটা মেয়ে এনে নীলাভের হাতে তুলে দিলো।নীলাভের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। তৃপ্ততার হাসি!নীলাভ অস্ফুটস্বরে বলে,

-এতো ছোটো বাচ্চা!

সবাই হেসে উঠে।নীলাভের কাছে মনে হচ্ছে হাতের ফাক দিয়ে বাচ্চা পড়ে যাবে।নীলাভ ডক্টরকে প্রীতির কথা জিজ্ঞাসা করলে ডক্টর জানায় প্রীতি ভালো আছে।নীলাভ মেয়েকে নিয়ে প্রীতির কাছে যায়।প্রীতির জ্ঞান ফিরেছে।নীলাভ মেয়েকে নিয়ে প্রীতির কাছে গিয়ে হেসে বলে,

-দেখো আমাদের প্রীনি।

প্রীতি মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

-আমাদের ভালোবাসা।

নীলাভ প্রীতিকে এক হাত জড়িয়ে ধরে বলে,

-হমম।

,

প্রীনি কে ঘুম পাড়িয়ে নীলাভ আর প্রীতি বারান্দায় বসে রয়েছে।প্রীতি নীলাভের কাধে মাথা রেখে নীলাভের হাতে হাত গুজে দিলো।নীলাভ মুচকি হেসে প্রীতিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

-আজ আমি পরিপূর্ণ। সকল সুখ দিয়েছে আল্লাহ আমার ঘরে।

বলেই প্রীতির কপালে চুমু দিলো।প্রীতি ও নীলাভের গালে চুমু দিলো।নীলাভ বলে উঠলো,

-সেকেন্ড টাইম।

প্রীতি হেসে দেয়।নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলে,

– হঠাৎ দেখা হঠাৎ ঝগড়া হঠাৎ মায়া হঠাৎ ভালোলাগা হঠাৎ প্রেম আর হঠাৎ ভালোবাসা।তুমি আমার সেই হঠাৎ মানুষ যাকে কখনো ভুলতে চাই না আমি।মৃত্যুর পর আল্লাহর দরবারেও তোমাকেই চাই।হঠাৎ ভালোবেসে সারাজীবন থাকতে চাই।আমাদের এই গল্পটা স্মৃতির পাতায় #হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি হিসেবে লিখে রেখে যেতে চাই।

প্রীতি নীলাভের বুকে মুখ গুজে বলে,

-#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি।

নীলাভ ও প্রীতিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলে,

-তুমি আমার রক্তে মিশে আছো।এক দিন ও এক যুগ মনে হয় তোমার ছাড়া।ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি।

প্রীতি ও নীলাভ কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতেই নীলাভ একটু দূরে সরে মজা করে বলে,

-একদম কাছে আসার চেষ্টা করবা না।

প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে বলে,

-আপনি ও একদম এডভান্টেজ নিবেন না।

-ঝামেলা।

-গোমড়ামুখো।

নীলাভ প্রীতি আড়চোখে একবার দুজন দুজনের দিকে তাকালো।বেশ কিছুক্ষন পর দুজনে স্বজোরে একসাথে হেসে উঠে ।ওদের হাসিতে আজ যেনো ফুল ফুটছে পাখি উড়ছে নদীতে ঢেউ বইছে বাতাসে গন্ধ ছড়াচ্ছে।বার বার একটাই কথা বলছে ভালোবেসে ফেলেছি।

★★★সমাপ্ত★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here