Unexpected_lover part_11

0
1909

Unexpected_lover
part_11
#Rimy_Islam

সত্যি সত্যি দরজা ঠেলে এগিয়ে আসছেন অনিব। সয়ং অনিব! এখন আমি কি করবো, কোথায় লুকাবো? পালাতেও তো পারবো না! ভয়ে হাত-পা থরথর করে কাঁপছে।

অনিব আমার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললেন,
” এত রাগ কেউ করে? ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছিল। এক সময় মনে হয়েছিল, তোমাকে আর খুঁজে পাবো না। দুই রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি জানো তুমি?”
কথাটা শেষ করেই আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলেন। এত শক্ত হাতে ধরেছেন যে আমার শ্বাস রোধ হবার উপক্রম। হাঁপাতে শুরু করলাম। এ কি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নাকি শাস্তি! আমার মনে হলো অনিব ইচ্ছে করে আরো চেপে ধরছেন আমাকে। নিহা সেই মুহূর্তে বাঁচিয়ে দিলো।
বললো,
” ভাইয়া কিছু মনে করবেন না। বর্ষাকে এখন যেতে দিচ্ছি না।”

অনিব আমাকে ছেড়ে বললো,
” আমিও বর্ষাকে নিয়ে যাচ্ছি না। তুমি ওর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বলে কথা। আমরা ক’দিন থেকে তবে ফিরবো। আশেপাশে একটু ঘুরেও দেখা হবে।”

নিহা হেসে সরল মনে বললো,
” তাহলে তো খুব ভালো হয় ভাইয়া। তিনজন মিলে খুব ঘুরবো, মজা করবো।”

আমি এদিকে মরি মরি অবস্থায় আছি। নিহা বুঝতে না পারলেও অনিবকে আমার চেয়ে বেশি কেউ চিনে না। সামান্য গাড়িতে উঠতে রাজি না হলে যে মানুষ নিজের বউকে মাঝ পথে একা ফেলে যেতে পারেন, সেখানে বউ পালিয়ে এলে যে কি করবেন আল্লাহ জানে। কিছু একটা ষড়যন্ত্র তো করেছেন।

আমার হাতের দিকে তাকিয়ে এঁঠো হাত দেখে বললেন,
” এখনো নাস্তা করোনি?”

নিহা বললো,
” না ভাইয়া। গতরাতে মাঝরাত পর্যন্ত মুভি দেখে ঘুমিয়েছিলাম। তাই একটু উঠতে বেলা হয়েছে। নাস্তা করতেই বসেছিলাম।”

” তাইতো বলি, আমার বউকে এতো শুকনা লাগে কেন! দুইদিন ধরে বান্ধবীকে বেশি কিছু খাওয়াওনি দেখছি।”
বলেই অনিব আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলেন। নিহার নজর এড়ালো না। সেও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে যাচ্ছে। অনিবকে কতই না ভালো ভাবছে নিহা। কিন্তু মানুষটা যে আস্ত একটা শয়তান!
নিহা অনিবের উদ্দেশ্যে বললো,
” আপনি ওই ঘরটায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। ”

অনিব চলে গেলে নিহা আমার কাছে এসে বললো,
” তোর বর দেখি দারুণ রোমান্টিক। আমার বরটাও যদি এমন হতো!”

” তুই ওর রোমান্টিক-এর কি দেখেছিস? আমিই জানি উনি কোনো ধানের চাল বুঝলি?”

” যাই বলিস, তোর বর্ণনার সাথে ভাইয়া একদম যায় না। ভালো কথা, আজ রাতে আমার উনিও ফিরবেন। কাল সকালে সবাই একসাথে ঘুরতে যাবো।”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে খেতে বসি। খাওয়া শুরু করতেই অনিব এসে পাশের চেয়ার দখল করে বসলো। তারপর বললো,
” আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ”

আমার হাত থেকে রুটির টুকরাটা ছোঁ মেরে নিয়ে মুখে তুলে খাওয়াতে লাগবেন। পাশে নিহা তো পুরো মূর্তির মতো বসে হা করে দেখছে। মাঝে মাঝে আমায় ইশারায় চোখ পাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। নাস্তা শেষে অনিব আমাকে হাত ধরে রুমে আনলো। আগেই জানতাম, থমথমে আবহাওয়া বৃষ্টি নামার পূর্বাভাস। অনিব যে কোনো সময় রাগ ঝেড়ে দিবেন।
বিছানায় খুব আরাম করে বসলেন। আমার দিকে একবার তাকিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লেন। আমি রীতিমতো চমকে গেছি। মানুষটার হলোটা কি!
ভয়ে ভয়ে সারারাত ঘুম-জাগরণের মাঝে পার করলাম। সকাল হতে ফ্রেশ হয়ে সবাই ঘুরতে বেরোই। নিহার হাজবেন্ড দিপ্ত আহমেদ আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন। গতরাতেই তিনি এসেছেন। তবে উনার উপস্থিতিতে অনিব যে খুব একটা সাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না, তা খুব বুঝতে পারছি। কেমন মুখটা ভার করে রেখেছেন।হাঁটতে হাঁটতে আমি দিপ্ত সাহেবের দিকে সরে গেলে অনিব দ্রুত আমাকে নিজের কাছে টেনে নেন। আবার তো মজাই লাগছে উনাকে জ্বলাতে। ওদের বাড়ি থেকে চা বাগান হেঁটে যেতে আধাঘন্টা সময় লাগলো। কিছুক্ষণ ওখানে বসে জমলো আড্ডা। বেশি সময় আমি,নিহা এবং দিপ্ত আহমেদ কথা বলেছেন। অনিব মাঝে মাঝে আচ্ছা, হ্যাঁ,ওহ, এমন ছোট ছোট হুটহাট উত্তরেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন।

চা বাগানের মাঝ দিয়ে সরু মাটির রাস্তা। শুনেছি চা বাগানে প্রচুর সাপ দেখা যায়। আর ওই জিনিসে আমার প্রচুর ভয়,সাথে ঘেন্নাও করে। তাই চারপাশে চোখ রেখে সাবধানে এগোচ্ছি। হঠাৎ ওই মারাত্মক জিনিসটা চোখে পড়ে যায়। রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে পার হচ্ছে সাপটা। বেশ বড় আর মোট সাইজ।দুঃখের বিষয় অনিবরা তিনজন আমার থেকে কিছুটা পেছনে আসছেন। সামনে একা আমি।
সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি।’ অনিব দেখুন কত বড় সাপ! অনিব…. ভয় লাগছে।’ বলে চেঁচাতে থাকি। পাশে কারো উপস্থিতি বুঝে সামনের দিকে চোখ রেখেই পাশের মানুষটার হাত চেপে ধরি। তারপর পাশে তাকিয়েই আমার মুখটা শুকিয়ো গেল। অনিব ভেবে যাঁর ধরেছি তিনি নিহার বর দিপ্ত।
একবার করুন চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখতে পাই অনিব পুরো আগুনের গোলা হয়ে গেছেন। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমার কাছে এসে হাতটা ছাড়িয়ে নিলেন।

দাঁতে দাঁত পিষে বললেন,
” সাপ চলে গেছে। ”

তারপর নিহার দিকে তাকিয়ে বললেন,
” আমরা আজই ফিরে যাচ্ছি। জরুরী কাজ পড়েছে। কিছু মনে নিও না।”

নিহা বললো,
” সেকি! এত তাড়াতাড়ি! আবার আসবেন তো বেড়াতে? ”

” হ্যাঁ, সে তো আসবোই। এখন নিরুপায় হয়ে চলে যেতে হচ্ছে। এখনো তো হানিমুনের এক আনাও হয়নি। কিন্তু কি আর করা!”

কথাটা শুনে নিহারা হেসে উঠলো। আমি তখন ভাবনার জগতে বিরাজ করছি। জানি না নতুন আবার কি হতে চলেছে।
.
.
.
.
.
.
.
অনিব আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলেছেন।সাথে বলে যাচ্ছেন,
” তুমি কি ভেবেছিলে, খুঁজে পাবো না তোমাকে? দেখলে তো আমি কি কি পারি? এখনো পুরোদমে চিনতে পারোনি, আজ চিনতে পারবে।আর জীবনে ছেড়ে যেতে পারবে না। পর পুরুষের হাত ধরতেও জান কাঁপবে।”

” অনিব কি করতে চলেছেন আপনি?”

আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। পুনরায় বললেন,
” রাস্তায় তোমার ছবি দেখিয়ে একজন যখন বললো তুমি এ রাস্তায় দিয়ে একটা মেয়ের সাথে হেঁটে গেছো, তখনি সন্দেহ হয়। আরেকটু ক্লিয়ার হতে তোমার বোনকে ফোন করি। জানতে চাই তোমার কোনো বান্ধবী এখানে আছে কিনা! শিলা বললো এখানে তেমন কেউ নেই।
লোকের মুখে শুনে তোমার বান্ধবীর যে বর্ণনা পেয়েছিলাম, সেটা শিলাকে বলি। তখন ও বললো, এমন একটা ফ্রেন্ড তোমার ছিল। ওর নাম নিহা। পরে নিহার নাম ধরে খোঁজ করে পৌঁছে যাই তোমার কাছে।”

আমি অবাক। উনি এই ঘটনা শিলা আপুকে জানাতেও ছাড়েননি? এত কিসের পিরিত শিলা আপুর সাথে? মনে মনে রাগে ফুঁসতে থাকি।
টেনে হিঁচড়ে আমাকে রিসোর্টে এনে দ্রুত লাগেজ প্যাক করলেন। তারপর বললেন,
” জানতে চাওনা কি করেছি আমি? তোমাকে চিরস্থায়ী বেঁধে রাখার জন্য?”

আমি হা হয়ে দেখছি। কিছু বলতে যেয়েও পারছি না। অনিব আমাকে ধরে বিছানায় বসালেন।
এরপর নিজেও পাশে বসে বললেন,
” তুমি আর শিলা দুইজনই এতো বোকা! আমার হোটেলে তোমার বোন আর দুলাভাই উঠেছে। যদিও তারা জানে না যে মালিক কে। কিন্তু এখানেই তো বোকামি করে ফেলেছে। ”

আমার বুক দুরুদুরু করছে। কি করেছেন অনিব ওদের সাথে? কিডন্যাপ বা আটকে রেখেছেন? কোনোভাবে হ্যানস্তা করেছেন কি? কি করেছেন উনি? পুরো মাথা অচল হয়ে যাচ্ছে। আর নিজের হোটেল রেখে উনি আমাকে নিয়ে অন্য হোটেল, রিসোর্টে কেন উঠে বেড়াচ্ছেন? কি আশ্চর্য কুচক্রী লোক!

চলবে……….3!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here