Unexpected_lover
part_17
#Rimy_Islam
আমি থমকিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। অতঃপর বলি,
” এসব কি চলছে অনিব? আপু তুমি এখানে? ”
অনিব আর শিলা আপু বেশ ঘাবড়ে গেছে। আমি আসবো এটা তো কারো জানার কথাও না। হঠাৎ আমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি ওদের মাঝে। আজ অনেকগুলো উত্তর পাওনা রয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর আমার চাই। হয় অনিব দিবে, নয়তো আপু।
আমি ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আপু ভয়ে অনিবের কলার ছেড়ে দেয়। আমি তাচ্ছিল্য হেসে বলি,
” কি করছ আপু? কলার ছাড়তে হবে না। তোমার পুরনো প্রমিকের উপর তোমার পুরো অধিকার আছে। ”
শিলা আপু কপালের ঘাম মুছে বললো,
” কি বলছিস তুই? কে কার পুরনো প্রেমিক?”
” তুমি ভালোমতোই বুঝতে পারছো কার কথা বলছি। আমি সব জেনে গেছি, অনিবের সাথে তোমার সম্পর্ক ছিল। কেন তোমরা আমাকে শাস্তি দিলে? নিজের প্রেমিকের দোষে বিয়ে ভেঙেছিলে তুমি। কেন সেটা জানি না। কিন্তু সেই ফল ভোগ করছি আমি। এসবে আমার কি দোষ আপু?”
শিলা আপু নিশ্চুপ। অনিব মাথা নত করে রয়েছে। তারপর হঠাৎ অনিব বললেন,
” বাসায় চলো বর্ষা। ”
আমি রাগে কটকট করে বলি,
” কিসের বাসা, কার বাসা? যে বাসায় আমি নামেমাত্র আপনার বউ সে বাসা! যেখানে দিন শেষে একটা ভরসার হাত খুঁজতে গেলে শুধুই নিরাশা পাই সেই বাসা! যেখানে চার দেয়ালের মাঝে আমি বন্দিনী, আমার কথা বা আর্তনাদ শোনার মানুষ কেউ নেই সেই বাসা! একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে এত বাহানা কেন দিচ্ছেন আপনারা? সোজা বলতে পারছেন না কি করেছি আমি? কেন বিয়ে করলেন আমাকে?”
অনিব টেবিলের উপর সজোরে হাতের আঘাত করে তাকালো আমার দিকে। সেই রক্তলাল চোখ যেনো আমাকে গিলে খাবে। ভয়ে সরে এলাম কিছুটা। অনিব টগবগে মস্তিষ্কে বললেন,
” জানতে চাও কি করেছ তুমি? ”
আমি এক বাক্যে বলি,
” অবশ্যই চাই।”
শিলা আপু থতমত খেয়ে বললো,
” অনিব কি করছ? চুপ করে থাকো। একটা শব্দ বলবে না।”
অনিব তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
” না। অনেক হয়েছে চোর পুলিশের খেলা।আমিও ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। বর্ষা হয়তো সব ভুলে গেছে কিংবা ভুলে যাওয়ার নাটক করছে। একটু মনে করিয়ে দেই।”
আমি প্রচন্ড আহত হই। কি ভুলে গেছি আমি? প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়েই থাকতে দেখে অনিব ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বললো,
” একটু ভেবে নিই কোথা থেকে শুরু করবো।”
তারপর তিনি আবারো বলতে শুরু করলেন,
” শিলা তখন বোধ হয় অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ত। আর আমি সবে পড়াশোনা শেষ করে একটা ভালো জবের আশায় চাকরীর ইন্টারভিউ দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত জীবন কাটাচ্ছি।হয়তো ভাবতে পারো, বাবার এত টাকা থাকা সত্ত্বেও চাকরী কেন খুঁজছি? বলে রাখা ভালো, আমি কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং পড়া শেষে ব্যবসা করার মুডে ছিলাম না। এত কষ্ট করে যার উপর পড়াশোনা করেছি,সে বিষয়ে চাকরী আমি করবই। যদি ভবিষ্যতে ভালো না লাগে হাল ছেড়ে বাবার ব্যবসা দেখার অন্য অপশন তো আছেই। যাই হোক,আমি সেদিন যে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছি,সেখানে শিলাও ছিল আমার মতোই একজন ক্যানডিডেট। প্রথম পরিচয়েই কেমন এক অদ্ভূত আকর্ষণ অনুভব করি।ভালো লেগে যায় ওকে খুব। নরম ব্যবহার, সরল চেহারা। মিষ্টি হাসি। আর কি লাগে একটা মেয়ের! সেদিন কথার ছলে ফোন নাম্বার আদান-প্রদান করি দু’জনে। এরপর থেকে প্রায় ফোনালাপ হতে থাকে আমাদের। সেই প্রায় আলাপ থেকে প্রতিদিন কথা বলা শুরু করি। কিন্তু আমি এর মধ্যে শিলার সম্পর্কে সব খবর নিয়ে নিই। তবে শিলা তেমন কিছুই জানতো না আমার সম্পর্কে। সে ভেবেছিল আর দশটা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মতো আমিও পড়া শেষে চাকরীর খোঁজ করছি। আমাদের প্রেম যখন একে অপরকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব, এমন অবস্থায় পৌঁছে। তখন আমার বাবা মারা যান। চাকরীর আশা, মায়া ত্যাগ করে বিজনেসের হাল ধরতে বাধ্য হই। তখন আমাদের রিলেশনের প্রায় এক বছর। এই এক বছর বেকার ছিলাম। হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে স্বকার হয়ে গেলাম। শিলা এসবের কিছুই জানে না। ভেবেছিলাম বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে একেবারে সব জানাবো। নতুন বিজনেস, ক’দিন খুব বিজি থাকলাম। কিন্তু আমাদের দু’জনের মাঝে তৃতীয় এক পক্ষ এলো। আর সেই পক্ষটা বর্ষা তুমি।”
আমি চমকে উঠলাম। এসবে আমার নাম আসছে কেন? অনিবের সাথে আপুর সম্পর্কের ব্যাপারে আমি ছিলাম পূর্ণ অজানা।
অনিব আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেন না। আবার বলতে লাগলেন,
” শিলার পরিবার সম্পর্কে কিছু কিছু ধারণা আমার ছিল। ওর পরিবার খুব রক্ষণশীল ধরনের। শিলাকে গোপনে একটা সিম আর ফোন কিনে দিই। ওই ফোনে কেবল আমার দেয়া সিমটা পুরা থাকবে। আর একটা নাম্বার সেভ থাকবে।সেটা হলো আমার। ”
শিলা আপু অনিবকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
” বাকিটা আমি বলছি। অনিবের দেয়া ফোনটা একদিন ভুলে বিছানায় ফেলে রেখেছি। হঠাৎ বর্ষা তুই এসে আমাকে বললি, ‘ আপু নতুন ফোন কিনলে কবে?’ আমি তোকে বাহানা দিয়েছিলাম ওটা বান্ধবী এ্যানির ফোন বলে। সেদিন থেকে তুই আমার ফোন অনেক সময় ব্যবহার করতি। আমি গুরুত্ব দেইনি। তবে পরে একদিন দেখি অনিব এমন কিছু কথা, বিশেষ সময়ের কথা বলছে যেসময়টা আমি ফোনের কাছেই ছিলাম না। একদিন অনিব বললো,
‘ তুমি করলা খাওনা। আমার এখানে আসলে কোনোদিন করলা কিনবো না। যেটা তুমি খাবেনা,সেটা আমিও খাবো না।”
আমার সন্দেহ হলো, আমি তো করলা খুব খাই। কিন্তু বর্ষার খুব অপছন্দ। তবুও পাত্তা দেইনি। ভুল মানুষের হতেই পারে। এরপর মাঝে মাঝে এমন অনেক অজানা কথা বলতো। একদিন যে কথা শুনলাম তাতে আমার রীতিমতো ঘাম ঝরা অবস্থা।
অনিব বললো, ” তোমার কোমরের ডানদিকের তিলটা কতই না সুন্দর! না দেখেও প্রতিদিন আমার চোখের সামনে ভাসে।”
আমি সেদিন থমকে যাই। মনে পড়ে তোকে শাড়ি পরাতে যেয়ে একদিন তোর কোমরের তিল আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। আমি অনিবের সাথে খোলামেলা আলাপে কখনো যায়নি। পরে বুঝেছি ওটা তুই ছিলি বর্ষা। তখন প্রচন্ড রাগ হলো। তোকে চুলের মুঠি ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিলে শান্তি পাবো এমন মনে হলো। কিন্তু লোক জানাজানির ভয়ে চুপ থাকি। আর ভেবেই নিয়েছিলাম, এক হাতে তো আর তালি বাজে না। তোর যেমন দোষ আছে।অনিবেরও সমান দোষ।
অনিবকেও কিছু বলিনি। এমন সময় অনিব আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। তখন নতুন এক গোপন তথ্য সামনে আসে। অনিবকে আমি যেখানে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ভাবছিলাম।সেখানে ও নবাব ঘরের ছেলে। ধনীর একমাত্র দুলাল। অনিবের কাছে থেকে সত্য কোনো কিছুর আশা করতেও ভয় হতো। ভেঙে দিলাম বিয়ে। তারপর সিমটা দিয়ে দিই ফ্রেন্ড তন্বীকে। আমার অন্যখানে বিয়ে হওয়ার পর এইতো কিছুদিন আগে জানতে পারি অনিব আমাকে ভেবে তোর সাথে মেসেজ বিনিময় করতো। অনিবের সাথে হঠাৎ দেখায় আমাদের মাঝের ভুল বোঝাবুঝি ভাঙে। বুঝতে পারি, সব কারসাজি আমার নিজের বোনের।এখন বল বর্ষা, এবারো বলবি তোর দোষ নেই?”
আমি ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ি। আমার সেই অজানা প্রমিক তাহলে আর কেউ নয়, অনিব!
মুখ দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছে না। কিছু বলতে গিয়েও কথা গিলে ফেলছি। নির্বোধের মতো ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে ভাসাচ্ছি। যে কান্না এখানে অবস্থিত দুই ব্যক্তির কারোর যায় আসে না।
চলবে………….