প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ৮

#প্রেমের_বৃষ্টি💦
#পার্ট_(৮)

স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি আর তাকালাম না। একটু এগুতেই নিপার দেখা মিললো শাড়ি পরে এসেছে ওকেও খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।ও আমাকে দেখেই একটা চিৎকার দিয়ে জরিয়ে ধরলো।
আমি তাড়াতাড়ি ওকে ছাড়িয়ে নিলাম নিজের থেকে কারণ ও এমন ভাবে ধরেছে যে আমার শাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে।
আমি ঠেলে ওকে সরিয়ে বললাম, ‘ দূরে থাক এভাবে জাপ্টে ধরছিস কেন? শাড়ি খুলে যাবে তো।’
নিপা আমার কথায় ঠোঁট উল্টে বলল, ‘ যা তোকে আর ধরবোই না।’ অভিমান করে।
‘আরে রাগ করছিস কেন? দেখ আমি শাড়ি সামলাতে পারি না যতবার পরেছি খুলে গেছে। এইবার ও পরতে চেয়েছিলাম না কিন্তু সবাইকে স্যার বলেছে সেখানে আমি না পরলে বেয়াদবি করা হবে এজন্য পরেছি আর সাবধানে থাকতে হচ্ছে যদি খুলে যায় কি বিপদ এ পরবো ভাব।’
অনুনয় করে বললাম।
‘আচ্ছা বাবা বুঝছি আসলে দোস্ত তোকে এভাবে দেখে কি যে খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না। তোকে কি যে সুন্দর লাগছে আমি তো চোখ সরাতে পারছি না।’
এক গাল হেসে বলে উঠলো।
ওর এমন কথায় কিছু টা লজ্জা পেলাম।আসলে কেউ আমার প্রশংসা করলে আমি খুব লজ্জা পায়।
‘ওরে কি লজ্জা?’
‘দূর চলে তো অনুষ্ঠানে শুরু হবে তো চল।’
‘হুম চল।’

দুজনে স্টেজের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। সামনের সারিতে আমরা সাত জন বসলাম। মেয়ে আর ছেলেরা নীল পাঞ্জাবি পরেছে ওরাও স্পর্শ ঠিক আমার পাশে চেয়ার বসেছে। এটা দেখে আমি উঠে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু,
‘ আরে উঠছিস কেন?’ অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল নিপা।
আমি ফিসফিসিয়ে বললাম, ‘ ওর পাশে আমি বসবো না’
তখন নিপা বুঝতে পারলো কি বুঝাতে চাইছি আমার ডান সাইটে স্পর্শ।
‘ উঠিসনা এখন উঠলে আর বসার জায়গা পাবি না।দেখ পুরো জায়গা ভড়ে গেছে কতো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আমি তোর ব্যাপারটা বুঝতে পারছে্ই কিন্তু উঠিসনা‌। একটু সহ্য করে নে।’
অনুরোধ করে বলল।
আমি পেছনে ফিরে দেখলাম সত্যি আর দাঁড়ানোর জায়গা ও নাই। তাই বাধ্য হয়ে বসলাম।
স্পর্শ এটা দেখে বাঁকা হাসলো।
স্পর্শ সামনে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
আমি অসুস্থি নিয়ে বসে আছি কিছু করতে পারছিনা‌।
স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছি আমি স্যাররা নতুন দের নিয়ে কথা বলছে বক্তব্য দিচ্ছে আমি সেই গুলো
শুনছি।
আচমকা স্পর্শ আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, বিউটিফুল।
চমকে স্পর্শের দিকে তাকালাম। স্পর্শ সামনে তাকিয়ে আছে আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি হঠাৎ স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পিট দিলো সাথে সাথে আমার কাশি উঠে গেল।
নিপা অন্যদিকে ব্যস্ত ছিলো আমার কাশির শব্দ তারাতাড়ি ফিরে তাকিয়ে বলল,,’ কি হয়েছে তোর‌?’
আমি বললাম,, ‘পানি দে।’
স্পর্শ পানি এগিয়ে দিদো কিছু না ভেবে খেয়ে নিলাম কাশি কমে আসতেই।নিপা কে বললাম,’ কি হয়নি।’
তারপর স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘স্টুপিট।’
স্পর্শ আবার আগের মতো আমার দিকে মাথা এগিয়ে এনে বলল,’ আই লাভ ইউ’

আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।
স্পর্শ ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আচমকা আমার হাত টেনে ধরে নিলো।
আমি চমকে উঠলাম, ‘ কি করছেন হাত দারুন?’
কিন্তু স্পর্শ আমার কথা কানেই নিচ্ছে না শক্ত করে ধরে রেখেছে।
আমি হাত ছারানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।পারছি না।
‘কি হলো ছারুন আমার হাত?’
ছটফট করতে করতে বললাম।
‘এমন কচ্ছপের মতো নরাচরা করছো কেন চুপচাপ বসে অনুষ্ঠান দেখো।’
‘হাত ছারুন আমার। এসব কেমন অসভ্যতামি হচ্ছে।’
রেগে বললাম।
‘ছারবো না কি করবো?’
গভীর ভাবে তাকিয়ে।
‘আপনার মতো অসভ্য খারাপ লোক আমি জীবনে দেখি নাই।’
‘দেখবে কি ভাবে স্পর্শ জাস্ট ওয়ান পিস তাকে আর কোথাও পাবে না।’
‘শয়তান একটাই থাকে।’
‘ভালোবাসি কবে বলবে বলো না আমার তো তোর স‌ইছে না। মন চাইছে এই মুহূর্তে তোমাকে কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে করে ফেলি।’
কখনো বলবো না। আপনার মতো তো অসভ্য খারাপ লোককে আমি কখনো ভালবাসবো না।
‘বাসবে খুব বাসবে। আমাকে হারিয়ে বাসবে ভালো তখন শত খুঁজেও এই স্পর্শকে খুঁজে পাবে না পাগলের মতো খুজবে আমাকে। কিন্তু স্পর্শ একবার হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায় না তাই বলছি থাকতে আমার কদর করো ভালোবাসো। তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি তার জন্য ক্ষমা চেয়েছি সেটা ভেবে আমার ভালোবাসা কে দূরে ঠেলে দিয়ো না।’
‘আপনাকে আমি খুজবো অসম্ভব কখনো না।’
‘খুঁজবে হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর‌ আমি মিলিয়ে নিয়ো।’

চেষ্টা করেও হাত ছারাতে ব্যর্থ হয়ে স্পর্শের দিকে রেগে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে ছিলাম।
আধা ঘন্টার মতো অসহ্য হয়ে বসে থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আর ঝাটকা মেরে হাত ছুটিয়ে নিপা কে নিয়ে ঠেলে বেরিয়ে এলাম।
স্পর্শ হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
নিপা মাঠে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কিরে এমন করে আমাকে টেনে বেরিয়ে এলাম কেন?’
নিপাকে স্পর্শের করা সব কিছু বললাম, ও সব কিছু শুনে কিছু ক্ষন থ মেরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
‘এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’
‘আমার মনে হয় স্পর্শ তোকে সত্যি ভালোবাসে।’
‘কি এটা অসম্ভব ও কি বলেছিলো তোর মনে নাই।আমার মতো আনস্মার্ট খ্যেত মেয়েকে ও কখনো ভালবাসেনা। কতো কিছু করেছিল আমার সাথে।আমার কি মনে হয় জানিস ও আবার কোন বাজি ধরেছে।’
‘হতে পারে।’ মুখটা মলিন করে বলল।
‘এটাই।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম।
ওই দিকটায় আর গেলাম না।আমরা দুজন গাছের নিচে এসে বসে র‌ইলাম।
তারপর উঠে দূর থেকে অনুষ্ঠান দেখতে লাগলাম।
এখন নাচ হচ্ছে।
এইটা শেষ হলেই বিরতি বারোটা বাজে।
সারে বারোটায় বিরতি দেওয়া হলো।
অনুষ্ঠান আবার শুরু হবে দেরটায়। দুইটায় বিশেষ অতিথি আসবে সে জন্য আমরা কান্টিনে খাবার খেয়েছি। ভার্সিটিতে থেকে খাবার দেওয়া হয়েছে।বিরানী।
খাবার শেষ করে আমরা মেয়েরা ফুল দিয়ে রাস্তা সাজাতে লাগলাম।আর ফুলের মালা রজনীগন্ধা ফুল, গাঁদা ফুলের মালা,গোলাপের তোরা, গোলাপের পাপড়ি নিয়ে এলাম এখন এমপি ও সেই বিশেষ অতিথি আসবে। তারা ভার্সিটিতে অনেক টাকা দিয়েছে নতুন বিল্ডিং করার জন্য।
আমার হাতে গোলাপের তোরা আর গাদা ফুলের মালা আমরা সাতজন আর ছেলে আটজন দাড়িয়ে পরলো।আমার মুখোমুখি স্পর্শ দাড়িয়েছে।
ও দাড়িয়েই আমাকে ফুল দিয়ে বরন করেই যাচ্ছে।
ওর হাতের মুঠোয় গোলাপের পাপড়ি ও গুলো অতিথি দের জন্য আনছে কিন্তু উনি আমাকে দিচ্ছে একটু পর পর রেগে তাকাচ্ছি আর এতেই ওনি মাথা নিচু করে আমাকে মালা পরাতে ইশারা করছে ফাজিল লোক।

বিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু তাদের আশায় নাম নাই‌। এজন্য আমার এসব করতে ভালো লাগে না। স্পর্শরা কতোবার চলে গেল একটু পর পর এটা ওটা কিনে এনে খাচ্ছে তো আমাকে সাধছে।
পাক্কা পঁচিশ মিনিট পর গাড়ি আসলো এমপি আগে এসেছে আরেকজন সে আসে নাই এমপি কে খুব অ্যাপায়ন করে ভেতরে নিয়ে স্টেজে নিয়ে বসানো হলো। এমপির সাথে এসেছে তিনটা মাইক্রো।
তারপর এলো আরো দুটো গাড়ি আমরা তারাতাড়ি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম এবার গাড়ি থেকে যাকে বের হতে দেখলাম তাকে দেখেই আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম এই তো সেই লোক এনিই তাহলে বিশেষ অতিথি।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে সে গাড়ি থেকে নামতেই ড্রাইভার দরজা অফ করে দিলো আর সে সানগ্লাস পরে এগিয়ে স্যারদের সাথে হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে এলো।
আমার কাছাকাছি আসতেই একবার ঘুরে আমার দিকে তাকালো সাথে সাথে চমকালো।
সানগ্লাস খুলে অবাক হয়ে তাকালো।
তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে র‌ইলো আমি বুঝতে পেরে মালাটা পরিয়ে দিলাম উনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে চলে গেল।
হঠাৎ আমার চোখ সামনে গেল স্পর্শ রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে আমাকে।
স্পর্শের থেকে চোখ সরিয়ে ওই লোকটার দিকে তাকালাম সে পেছনে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
লোকটার সাথে দুইদিন দেখা হয়েছে তার নামটাই জানা হয় নাই‌।
এখানে উনার সাথে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি।
#চলবে

লেখা:- #Sinthiya_Sara

(কালকে একটা ভুল করেছিলাম।৮/৯ দিয়েছিলাম আয়োজন করার লোক ওইটা হবে ৭/৮হবে ক্ষমা করবেন ভুলের জন্য।আইডিতে সমস্যা হয়েছে এজন্য গল্প দিতে লেট হলো। এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন ইনশাআল্লাহ। )

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here