#ইংলিশ_টিচার
পর্ব-৬
সুমনা হক
মিলি লাল লাল করে আছে চোখ,এই বুঝি পানি গড়িয়ে পরবে।সবাই এসে মিলির রুমে হাজির আর সবার চোখে কি হয়ছে তা জানার আগ্রহ বেশ স্পষ্ট বুঝতে পারছে মিলি।
শুভর বাবা বললো
-কি রে সবাই কে আসতে বললি কেন? কিছু হয়েছে?
-বাবা এইটা মিলির টেস্ট পরীক্ষার খাতা।আর সে কি করেছে জানেন?
-কি?
-আমি তাকে পাশ মার্ক নাম্বার দিবো সেই অপশন টা পর্যন্ত রাখেনি। বুঝতে পারছেন আপনি কি পরীক্ষা দিয়েছে?
-আচ্ছা বুঝছি, এত্ত রাগ দেখাচ্ছিস যে মেয়েটা কত ভয় পেয়ে আছে দেখছিস না।
-ও আর ভয়! হাসালে বাবা!
-শুভ থাক এবার বাদ দে। সামনের পরীক্ষা গুলো ভালো করে দিবে।
-বাবা তুমি মিলিকে বলো আমি তাকে নিয়ে কক্সবাজার কেন গিয়েছিলাম।
-কি রে মা, শুভ কক্সবাজার কেন নিয়ে গিয়েছিল?
মিলি আস্তে আস্তে বলছে “পড়াতে”।
শুভ হাসতে হাসতে বললো
-দেখেছো বাবা কি না করেছিলাম এই মেয়েটার জন্য,চেয়েছিলাম শুধু সে পাশ করে যাক ইংলিশ এ এইটুকুই।বাট সে আমাকে দাম দিলো না।
আমাদের কলেজ এ টেস্ট এ যে ফেইল করে সে তো বোর্ড পরীক্ষা দিতে পারেনা তা কি তোমরা জানো না?
এখন প্রিন্সিপাল শুধুমাত্র ওর জন্য এই নিয়ম টা এবার রাখেনি। এইটা আমার কাছে কতটা লজ্জার তোমরা কি বুঝবে বলো?
মিলি চুপ করে সব শুনছে আর চোখ গড়িয়ে পানি পরছিলো এবার আর আটকাতে পারেনি মিলি।
মিলির শাশুড়ি এবার বলছে
-আমি প্রথমেই বলছিলাম এই মেয়ে আমার ছেলের নখের যোগ্যতা ও নেই। কেউ তো শুনলো না দেখেছো এবার আমাদের পরিবার এর কি দিন দেখতে হলো।
আমার বিসিএস ক্যাডার ছেলের বউ কিনা শেষমেশ কলেজ পার করতে পারলো না।এই কথা পাড়াপড়শির মানুষ শুনলে মানসম্মত কি কিছু থাকবে?
থাকবেনা। সবায় হাসাহাসি করবে আমাদের নিয়ে।
এই মেয়ের বাবা তো আমাদের ঠকিয়ে ভালো মেয়ে দেখিয়ে পাগল মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
শুভর বাবা সবাই কে চুপ করতে বলে।
শুভ বলে –
কেন চুপ করবো কেন বাবা বলেন তো?
এই মেয়ে আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে তাও কিছু বলিনি কিন্তু আমার ও তো মান সম্মান বলে কিছু আছে তাইনা আর সেটা তো এখন থাকবেনা বাবা।
এই মেয়েটা কিভাবে এই বাসায় থাকবে বলো তো বাবা যেখানে আমার মা বিএ পাশ সেখানে সে যদি এইচ সি সি পাশ ও করতে না পারে তখন তো আর চুপ থাকা যায় না বাবা।
আমার কলিগদের সাথে কোথাও গেলে তো সে ওদের সাথে ভালো করে চোখে তাকিয়ে কথা ও বলতে পারবেনা।
শুধু নাচতে পারলেই হয় না মিলি সব ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় একটা মেয়েকে আমাদের বাসায় থাকতে গেলে আর যা তোমার বোন এর মধ্যে ছিলো।
তোমার বোন কে আমি পছন্দ করেছিলাম তোমাকে না মিলি।
এত্তদিন কিছু বলিনি তাই বলে তুমি যাচ্ছেতাই করে যাচ্ছো।
আমাদের বাসায় থাকতে হলে অবশ্যই থাকার যোগ্যতা আগে করতে হবে আর তা না হলে তোমার রাস্তা তুমি দেখো।
শুভর বাবা শুভকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় তারপর যে যার মতো তাদের রুমে চলে যায়। রুমে শুধু থাকে মিলি আর শুভ।
শুভ ও রেগে আছে তাই মিলি যে কান্নাকাটি করছে তা খেয়াল করেনি,
তার খানিকক্ষণ পর প্রথমদিনের রাতের মতো রুম ছেড়ে চলে যায়।
মিলি মুখে পানি দিয়ে তার সবকিছু নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে।
মনে অনেক না বলা কথা ছিলো মিলির যা রেখে দিয়েছিলো সঠিক সময় এ বলার জন্য কিন্তু তা আর বলা হলো না।
রাত তখন প্রায় ১২ টা যখন মিলি রাগ করে বাসা থেকে বের হলো।
যে মেয়েটা কিছুদিন আগেও জ্বিন ভূতের ভয়ে অস্থির থাকতো, আজ তার মনে বিন্দুমাত্র ভয় নাই।
আসলে মেয়েরা সব পারে,তাদের পারতে হয়, তারা বাধ্য হয়।
শুভ রুমে এসেছে, শুভ হয়তো ভেবেছে সেদিন এর মতো মিলি ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু নাহ আজ আর তা হয়নি।
মিলি কে শুভ রুম এ না দেখতে পেয়ে ওয়াশ রুম চেক করেছে কিন্তু সেখান ও মিলি নেই।
এবার শুভ ভয় পেয়ে গেছে ঠিক তখনি খাটের উপর মিলির একটা চিরকুট দেখতে পেলো।
চিরকুটে লেখা,
আমি আপনার যোগ্য না এই কথাটা সত্যি আর তাই আপনাকে মুক্ত করে দিয়ে গেলাম।আমার বাসায় দয়া করে কল দিবেন না,আর যদি দেন ও তাহলে কিন্তু আপনি নিজেই ঝামেলাতে পরে যাবেন।
কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন বিসিএস ক্যাডার দেখে আবার বিয়ে করে নিবেন।
আর তাকে খুব গর্ভ করে কলিগদের কাছে নিয়ে যাবেন,আর আপনার মা ও পাড়াপড়শিদের কাছে মুখ দেখাতে পারবে তাকে লজ্জা পেতে হবেনা।
আমি ভুল করেছি আপনার জিবনে এসে আর আমি আমার ভুল শুদ্ধি করে গেলাম।
আমাকে নিয়ে ভাববেন না।
ভালো থাকুন।
চলবে,,,,