তুমি অতঃপর তুমিই পর্ব ১০

তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব- ১০
Writer Taniya Sheikh

এ যেন নতুন প্রভাতের নতুন আলো।
এ আলোয় মুছে যায়,ঘুচে যায় জীবনের আঁধার, কালো।

ইমা নিশ্চুপ হয়েছিল ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে বসা অব্দি। তার অবসাদ কাটে পুনরায় ঘোরে পড়ে। তন্ময় হয়ে দেখছে শানকে। ব্লু টিশার্ট, থ্রি কোয়াটার প্যান্ট, ঘাড়ের একপাশে তোয়ালে ঝুলান, ফ্রাইপ্যানের হাতল ধরে অতি সুকৌশলে ডিম পোচ উল্টানোর দৃশ্য বড়োই মনোরম লাগল ইমার চোখে। রান্না করাটাও যে একটা আর্ট এই মানুষটার রান্না না দেখলে ইমা জানতোই না। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিল সেই আর্ট। রান্না বান্নায় ব বকলম ইমা। ভাত কেন সে চা ফুটাতেও পারে না। তবে ইরার সাহায্যে দু’একবার নুডুলস নেরেছিল এই যা তার অভিজ্ঞতা। দু’হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে যখন ঘুরবে শান, ইমা চট করে ঘুরে বসে। মুখটা এমনভাব করল যেন একটু আগে কিছুই হয়নি তার মধ্যে। শান্ত, থমথমে ছিল বুঝি সব। শান দু’টো প্লেট টেবিলে রেখে জুসার থেকে ওরেঞ্জ জুস ঢেলে নিল। ইমা সতর্কে চোখ উল্টে দেখছে সেসব। ওরেঞ্জ জুস গ্লাসে ভরে ফের ঘুরে রান্নাঘরে গেল শান৷ বড় বাটি ভরে স্লাইস আপেল, লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, কলা, স্পিনাজ এনে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করল। ওরেঞ্জ জুস ইমার খাবারের প্লেটে পাশে এবং দ্বিতীয়টা তার প্লেটের পাশে রাখল শান। হাত ধুয়ে ঘাড়ে ঝুলানো তোয়ালেটায় মুছে পাশে রেখে বসল চেয়ারে। স্পুন ভর্তি স্যালাড এবং ডিম পোচ মুখে পুড়ে ইমার দিকে ভ্রু তুলে চাইল একপলক। ধীরে ধীরে মুখের খাবার চর্বণ করতে করতে বললো,

” খাবে না?”

” হু!”

” খাবার পছন্দ হয়েছে?” স্যালাড কাটা চামচে বিধিঁয়ে প্রশ্ন করল শান। ইমা শানের দিকে চেয়ে বললো,

” হুম।”

শান ইমার জবাব শুনে মুচকি হাসে।
” তুমি সকালে কী খাও?” শান চোখ তুলতেই ইমা নজর নামিয়ে খেতে খেতে বলে,

” রুটি,আলু ভাজি আবার মাঝে মাঝে ভাত, তরকারীও খাই। সাথে চা, বিস্কিট তো থাকেই। একেক সময় একেক রকম। ”

” ওহো! তাহলে তো আজ তোমার ব্রেকফাস্ট ভালো হলো না। এই অল্প তেলের ডিমপোচ, রোস্ট ব্রেড, আর স্যালাড তো অখাদ্য মনে হয় তোমার জন্য। ”

” না! না ঠিক আছে।” আসলেই শানের কথা সঠিক। এসব ইমা গালে তো নিল তবে অরুচি সহকারে। শান মৃদু হেঁসে বললো,

” সত্যি? ”

” হুম।” ইমা জোর গলায় জবাব দিল। একবার শান ইমার দিকে তো আরেকবার ইমা শানের দিকে আড়চোখে তাকায়৷ তাদের এই দৃষ্টির লুকোচুরি খেলা চললো শানের খাবার শেষ হওয়া অব্দি।

শানের খাওয়া খুব দ্রুতই শেষ হলো। নিজের প্লেট, গ্লাস উঠিয়ে রান্নাঘরের গেল সে। ইমা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল আরেকবার শানকে আপাদমস্তক। এই লোক তাকে শরমে, মরমে মারবেই মারবে। এমন আকর্ষণীয় পুরুষের সান্নিধ্যে বেশিক্ষণ থাকা মানেই নিজেকে হারিয়ে ফেলা। ইমা জুসটুকু অর্ধেক শেষ করতেই ডোরবেল বেজে ওঠে। রান্না ঘর থেকে শান উঁচু গলায় বললো,

” ইমা দেখো তো কে এসেছে।”

” জি।” ইমা চেয়ার ছেড়ে দরজা খোলে। সামনে দাঁড়ানো ডেলিভারী বয়। ইমাকে দেখামাত্রই একটা প্যাকেট এগিয়ে কাগজে সাইন করতে বলে। ইমা ইতস্তত করতে করতে সরে এসে উঁকি দিয়ে শানকে বললো,

” শুনছেন ডেলিভারী বয় এসেছে।”

” নিয়ে নাও প্যাকেটটা।”

” আমি।”

শান জবাব দেয় না সে’কথার৷ ইমা ঠোঁট সরু করে ঘুরে দাঁড়ায়। ডেলিভারী বয়ের উৎসুক চাহনী দেখে অনিচ্ছা পূর্বক হেঁসে সাইন করে প্যাকেটরা নিল। দরজা বন্ধ করে টেবিলের উপর প্যাকেটটা রেখে রুমে যেতেই পেছনে শানের গলার আওয়াজে থেমে গেল।

” প্যাকেটটা নিয়ে যাও।”

ইমা ফিরে তাকাতেই শান হাত মুছে ফের বললো,

” তোমার জন্য ড্রেস অর্ডার করেছিলাম। ইরা অবশ্য মোবাইলে তোমার ড্রেসের সাইজ বলে দিয়েছে। তবুও পরে দেখো ঠিকঠাক আছে কিনা।”

” আপনি আমার কাপড়ের সাইজ জেনেছেন?” ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ইমা।

” হ্যাঁ! সমস্যা কী তাতে? এমনভাবে রিয়েক্ট করছ যেন কাপড়ের সাইজ নয় অন্যকিছুর সাইজ জেনে গেছি। যাও কাপড় পরে নাও বেরোব আমরা।”

ইমার হাতে কাপড় ধরিয়ে রুমে চলে গেল শান। ইমা হাঁ করে রইল শানের জবাব শুনে। এই লোক ওকে চুপ করাতে পাকা। মনে মনে একশটা বকা দিল ইরাকে। প্যাকেট উল্টে, পাল্টে দেখে আনপ্যাক করতেই চক্ষু চড়কগাছ। দু’হাতে কাপড় মেলে দেখল নীল রঙের স্ট্রিচ থ্রি-পিচ। ততক্ষণে শান রুম ছেড়ে মোবাইল স্ক্রল করতে করতে বেরিয়ে সোফায় বসল। ইমা সামনে দু’কদম এগিয়ে বললো,

” এসব কাপড় আমি পরি না।”

” এসব কাপড়ে সমস্যা কী?” নির্লিপ্ত ভঙ্গি শানের।

” এতো কিছু বলতে পারব না। ব্যস পরি না তো পরি না। আমাকে সুই, সুতা থাকলে দিন। শার্ট সিলাই করে পরব আমি।”

” এই ড্রেসই পরবে তুমি।”

” আপনার কথায় সব হবে নাকি? আমার লাইফ, আমার রুলস।” ইমা কাপড় শানের পাশে ছুঁড়তেই যাবে তখনই তড়াক করে হাতের মোবাইল সোফায় ছুঁড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে শান৷ দু’কদম আবার পিছিয়ে কাপড়গুলো বুকে জাপটে ধরে ইমা ভয়ার্ত স্বরে বলে,

” দেখুন যা পরি না, তা জোর করে পরাতে পারবেন না আপনি।”

” রিয়েলি? তুমি ভাবলে কী করে সামান্য একটা কাপড় পরাতে শান তোমাকে জোর করবে। রিডিকুলাস।” তীক্ষ্ণ চোখের চাহনী শানের। ইমা ঢোক গিলে বলে,

” মানে।”

” আমাকে কী ডিকশনারি বা শব্দকোষ মনে হয় তোমার? কথায় কথায় মানে মানে করছ। শোনো মেয়ে! সব মানের জবাব শান দেবে না,দেয় না। চুপচাপ ড্রেস পরে আসো নয়ত।”

” নয়ত কী?”

শান গম্ভীরমুখে সোফায় বসল। মোবাইল হাতে মুখ নুয়ে বললো,

” বাসায় যেতে পারবে না।”

” আপনি আমাকে আঁটকে রাখার থ্রেট দিচ্ছেন? শুনুন,,, ”

ইমাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বিরক্তের সুরে বলে শান,
” রিলাক্স! শান থ্রেট নয় সোজা অ্যাকশনে বিশ্বাসী। তুমি যদি তোমার ছেঁড়া কাপড়ে যেতে পারো তো যাও। আমার তাতে আপত্তি থাকবে কেন?”

ইমা দাঁত পিষে ভাবছে।

” ভাব কী দেখো! ইঙ্গিতে থ্রেট দিচ্ছে আবার ভাব দেখাচ্ছে তিনি সাধু সন্যাসী গোছের। আমি এখন কী করব? আমার মোবাইল টাও নিয়ে গেছে ঐ ইরা বলদি।” ইমা নাক ফুলিয়ে মনে মনে ফুঁসতে লাগল। শানকে ভাবলেশহীন দেখে ওর যেন আরও রাগ হচ্ছে। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে শানকে বললো,

” আপনার মোবাইলটা দিন?”

” কেন?”

” ইরাকে কল করব।”

” আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নাই।”

” মিথ্যা কথা।”

শান ইমার দিকে মোবাইল ছুড়তেই ইমা দু’হাতে লুফে নেয়। শান স্থির চোখে ইমার দিকে চেয়ে বললো,

” তাহলে সত্যিটা কী প্রমাণ করো।”

ইমা চেক করে দেখল সত্যি মোবাইলে ব্যালেন্স নেই। রাগে ফের ছুঁড়ল শানের দিকে মোবাইল। শান কৌশলে এক হাতে মুঠোবন্দি করতেই ইমা ক্ষোভ ঝরা গলায় বললো,

” এতো বড়লোক অথচ মোবাইলে ব্যালেন্স ফাঁকা। আমি জানি আপনি ইচ্ছা করে এসব করছেন। ”

” যা ভাবো তাই। তোমার ভাবনার উপর তো আর আমার কথা থাকতে পারে না।” মোবাইলে পুনরায় মগ্ন হয় শান।

” আমি পরব না এই ড্রেস।” ইমা নাকে কেঁদে।

” না পরো। আমি কী জোর করছি?”

শান ঠোঁট কামড়ে মোবাইলে গেমস খেলায় ব্যস্ত। ইমার চিন্তাগ্রস্থ মুখটা আড়চোখে দেখে মুচকি হাসছে সে। ইমা কটমট চোখে চেয়ে আছে শানের দিকে। অনেকক্ষণের ভাবনা আর পায়চারি শেষে মনে মনে হাসল। তারপর মুখটায় গম্ভীর ভাব এনে বললো,

” আপনার শার্ট দিন।”

” আলমারিতে আছে নিয়ে নাও।” ইমা ভ্রুকুটি করল শান এতো সহজে মানল বলে। মুখ ভেংচে ভাবল,

” হার না মেনে যাবি কই? আমার বুদ্ধির সাথে পেরে ওঠা এতো সহজ না।”

ইমার মুখের উপর থেকে মেঘ সরলো কিছুটা। হেঁটে গেল রুমে। পুরো আলমারির শার্ট, টিশার্ট গায়ে পরেও ফিট হলো না। ঢুলা ঢুলা সব। এমন ঢুলা শার্ট, টিশার্ট পরে রাস্তায় বেরোনো যায়? ইমা থ্রি-পিচ মুচরাতে লাগল।

” আমি জানি এই লোক ইচ্ছা করে এসব করছে। উফ! আমি পরব না,পরব না৷ তাহলে কী পরব?” ইমা দু’হাতে চুল মুঠ করে লাফাতে লাগল একপ্রকার। হায়রে তার ঘটের বুদ্ধি!

বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর শান রুমের দরজা খোলার শব্দে মুচকি হাসল। চোখ তুলতেই বিমুগ্ধ চোখে দাঁড়িয়ে গেল সে। সামনে সালোয়ার কামিজে মোহিনী রুপে দাঁড়ানো তার বধূটি। এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল শান। ইমা মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শানকে ওভাবে নেশাচ্ছন্ন দৃষ্টি এগোতে দেখে দরজার সাথে মিশে কামিজ মুঠ করে আছে। শান যতো এগোচ্ছে ততোই তার মনের রাগ,ক্ষোভ ম্লান হয়ে সেখানে উদয় হচ্ছে লজ্জা আর লজ্জা। লজ্জাবতী গাছ ভাবছে নিজেকে। এই বুঝি শান তাকে ছুঁয়ে দেবে আর সে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাবে। একদম মিশে যাবে।

ইমার অতি সন্নিকটে গিয়ে দাঁড়ায় শান।শানের বুক ইমার নাকে লাগো লাগো। দু’হাতে ইমার গায়ের ওড়না টেনে মাথায় পড়ায়। ইমা চোখ তুলতেই ঘোর কাটল শানের। চট করে সরে দাঁড়িয়ে রুমে ঢুকে গেল। ইমা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। কী হলো কিছুই বুঝল না। বন্ধ দরজা খুলে অনেক্ষণ পর শান বেরিয়ে এলো। গায়ে ব্লাক হোয়াইট ফরমাল ড্রেস। ইমার সাথে চোখাচোখি হতেই শান চোখ নামিয়ে বললো,

” চলো বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।”

” হুম।”

দুজনে নেমে এলো নিচে। গাড়িতে চড়ে বসল পাশাপাশি। শান ড্রাইভ করছে। ইমা চুপচাপ বসে আছে বাইরে চোখ রেখে৷ পুরোটা পথ দু’জনই চুপ রইল। গাড়ি ওদের এলাকার গলির সামনে আসতেই ইমা থামতে বলে। শান গাড়ি থামায়। ইমা চাইনা কেউ ওদের একসাথে দেখুক। কেন চাইনা সে জানে না।

শান দেখল ইমা গাড়ির দরজা খুলতে পারছে না। ইমার দিকে ঝুঁকে দরজা আনলক করার চেষ্টা করছে শান। শানের মুখ একদম ইমার মুখের কাছে। ইমার গালে এসে লাগছে শানের দাড়ির খোঁচা। দু’হাতে সিট খামচে দমবন্ধ করে বসে আছে ইমা। শানের শরীরের সুগন্ধে তার তনুমন শিহরিত হচ্ছে। ঠোঁট কাঁপছে,চোখের পাতা নড়ছে। শব্দ করে ঢোক গিলতেই শান ঘুরে তাকায় ওর দিকে।

দু’জোড়া চোখে লেগেছে ফাগুন দোল। দোলে দোলে হৃদয় দোলে,ভুবন দোলে। মিলন ভাবনা দেহমনে সুর তোলে। কী আছে, কে আছে সবই ভোলে, মন সবই ভোলে।

শানের ঠোঁট যখন প্রায় ইমার ঠোঁটের কাছে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ইমা। উষ্ণ নিঃশ্বাস, শানের ঠোটের হালকা স্পর্শ ঠোঁটে লাগতেই শিওরে ওঠে। গাড়ির হর্ণে তৎক্ষনাৎ চেতনা ফেরে ইমার। পেছনে দাঁড়ানো গাড়িটি অনবরত হর্ণ দিয়ে যাচ্ছে। ইমা মুখ ঘুরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ে। ঠোঁট কামড়ে সোজা হয়ে সিটে বসে শান। দরজা ততোক্ষণে আনলক, ইমা তাড়াহুড়ো করে নেমে হনহন করে হেঁটে চলে যায় গলির ভেতর। শান এক ধ্যানে চেয়ে রয় সেদিকে। হাত কাঁপছে শানের। পেছনের গাড়ির হর্ণ আর চেচাঁমেচিতে শান গাড়ি ঘুরিয়ে ইমার এলাকা ছাড়ে।

একটিবারের জন্যেও পেছন ফিরে নি ইমা। পায়ের নিচে মাটি নেই, মাথার উপর আকাশ নেই। শূন্যে ভাসছে মনে হলো। মনে হচ্ছে হাঁটছে না দুলছে সে। এক ছুটে সিঁড়ি মাড়িয়ে রুমে এসে উবু হয়ে পড়ে খাটে উপর। ঠোঁট ওড়নায় ঠেসে নিরবে কাঁদছে ইমা। কান্নার তোড়ে শরীর কেঁপে ওঠে। ইমাকে মেয়েলি ড্রেসে দেখে বাড়িতে শোরগোল শুরু হয়। বাইরে যারা দেখেছে তারাও কানাকানি করছে এ নিয়ে। সাবিহা তো ইনিয়ে বিনিয়ে বিভাকে নানা শ্রবনকটু বাক্য শুনাতে লাগল। সে ইমাকে ওমন করে ছুটতে দেখেই এসব বলছে। ইমা সেদিন ঘরবন্দী হয়ে রইল। সবাইকে ইরা সামলে নেয় কথার প্যাঁচে। সবার মাথা থেকে সরলেও সাবিহার সন্দেহ এখনও ইমার হঠাৎ ড্রেস পরিবর্তনে। তার উপর সে সকালেই শুনেছে গতকাল ইমা বাসায় ছিল না। আর কে পায় সাবিহাকে। প্রতিবেশী যাকে পেল তার কাছে রঙচঙ লাগিয়ে কথাটা শোনাল সে। বাড়িতে এবং আশেপাশে ইমার নামে চাপা বদনাম রটে গেল। বিভা শুনেও সেসব কানে তুললো না। এ তো আর নতুন নয়। তার মেয়েকে নিয়ে এরা সবসময়ই এমন করে। করুক! বিভা জানে তার ইমাকে। যাই করুক চরিত্র নষ্ট করা মেয়ে তার নয়।

শান গাড়ি নিয়ে সোজা গেল মাহিবের গোপন ফ্লাটে। খান ম্যানশনের চেয়ে এখানেই মাহিবের সময় কাটে বেশি। শান দরজায় নক করতেই একজন তরুণী দরজা খুলে বলে,

” কাকে চাই?” শান মেয়েটিকে অগ্রাহ্য করে দরজা সজোরে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। তরুণীটি ভয়ে সরে দাঁড়ায় এককোনে। শান সোজা চলে আসে মাহিবের রুমে। বিবস্ত্র মাহিব এক খানি চাদর কোমর অব্দি টেনে শুয়েছিল। শান হাত মুঠ করে ওর মুখ বরাবর ঘুষি মারে। চিৎকার করে আতঙ্ক নিয়ে উঠে বসে মাহিব। চুল ধরে হেঁচড়ে নগ্ন মাহিবকে ফ্লোরে ফেলে ইচ্ছা মতো লাথি মারতে থাকে শান। শামীম পাশের রুম থেকে ছুটে এসে দু’হাতে জাপটে ধরে শানকে। শামীম নিজেও নেশায় ধুন্ধ। শানের এক ঝটকায় দূরে গিয়ে পড়ে সে। মাহিবকে টেনে বিছানায় বসিয়ে গায়ে কাপড় টেনে বলে,

” ইচ্ছা করছিল পুরো পৃথিবীর সামনে তোকে এভাবে মারি। বাট ভাই তো তাই না? পালিত হই আর যাই হই ভাই মানি আমি তোকে। এই প্রথম এবং শেষবার বলছি, ঐ মেয়ের একশগজের কাছেও যেন তোকে না দেখি আমি। যদি দেখি কী হবে জানিস?” মাহিবের রক্তাক্ত গাল দু’হাতে ঠেসে ধরে বলে,

” ভুলে যাব আমি কে, তুই কে। তুমি থেকে তুই তে যেমন নামতে আমার বাঁধে নি। তোমাকে শেষ করতেও আমার বাঁধবে না। ভাই!” শান “ভাই” ডাকটা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে। মাহিব নেশার ঘোরে ঢুলছে। শান ওয়াশরুম থেকে বালতি ভরে পানি এনে ঢেলে দেয় মাহিবের গায়ে। মাহিবের ক্ষত ঠোঁট, শরীর জ্বলতে লাগল ভীষন রকম। আর্তচিৎকার করে উঠল সে। শান দরজার কাছে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,

” আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিও না তুমি। ঐ মেয়ে আমার জীবনের চেয়েও বেশি কিছু। ওর কিছু হলে পাগল হয়ে যাব আমি ভাই।
পাগলের কোনো ন্যায়-নীতি, আপন পর থাকে না জানো তো? সময় আছে ভালো হয়ে যাও। অসময় তোমাকে ফের ভালো হওয়ার সুযোগ দেবে না।”

শান যে গতিতে এসেছিল সেই গতিতেই চলে যায়। মাহিব স্থির রক্ত চক্ষে সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁটের রক্ত আঙুলে মুছে হাসল। শামীম কপাল কুঁচকে মাহিবের পাগলাটে হাসি দেখছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো শামীমের। এই পশুর পশুত্ব সম্পর্কে সে ভালোভাবেই অবগত। মাহিব ঘাড় বাকিয়ে দাঁত বের করে হাসে,

” ঠিক বলেছিস, পাগলের কোনো ন্যায়-নীতি, আপন -পর থাকে না। আর দু’টো জিনিস থাকে না। সেটা কী জানিস? ভয়! হ্যাঁ ভয়! ভয় থাকে না, সীমা থাকে না।” দাঁতে দাঁত চেপে উন্মাদের মতো চাহনীতে হাসছে মাহিব।

চলবে,,

গল্প আজ আমি অবশ্যই দিতাম। তখনকার পোস্টটা করেছিলাম, কারন আমি আমার মূল পাঠক কতোজন সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম। দেখা শেষ। ও হ্যাঁ ভেবেছিলাম এই কয়দিন গল্প দিতে সমস্যা হবে কিন্তু মজার ব্যাপার নির্বিঘ্নে আছি আপাতত। সামনেও যে এমন থাকব তার কিন্তু গ্যারান্টি নাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here