অস্পষ্ট সে পর্ব ৮

গল্পঃ #অস্পষ্ট_সে (৮ম পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

তাহলে চিত্রাকে তো পাবেই না, উল্টো পরিবারের কাছে জবাবদিহিতায় তাকে বাসা ছাড়তে হবে!
এবার দ্বীপ ভয়ে ঘামতে শুরু করেছে।

চিত্রা দ্বীপের দিকে তাকাচ্ছে,কিন্তু তার চোখে অথৈ এর এই কান্ডে কোনো রিয়েকশন দেখতে পাচ্ছেনা।
শেষ পর্যন্ত সে নিজেই হাত নেড়ে জিজ্ঞাসা করলো..
___ আপনার প্রেমিকাকে কিছু বলবেন না? অন্য ছেলের সাথে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

দ্বীপ সামনে তাকিয়ে নিজেকে সামলে আস্তে আস্তে বলল..
___ আমি জানি এসব। এরা সবাই তার জাস্টফ্রেন্ড।
তাকিওনা ওইদিকে।

___মানে কি? আপনি এসব জেনে রাত-বিরেতে উনার সাথে কথা বলেন? বাবু জাদু ডেকে বুঝাতে চান আপনি তাকে ভালোবাসেন? অথচ চোখের সামনে এতো বড় ঘটনা দেখেও না তাকাতে বলছেন?
আমি হলে এই মূহুর্তে কানের নিচে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বলতাম, যাহ তোর সাথে ব্রেকাপ।

___ চিত্রা যা সম্ভব না তা নিয়ে কেন মাথা ঘামাবো?
আমি অথৈকে কিছু বলতে পারবোনা। বাদ দাও।

চিত্রা চোখ কপালে তুলে বললো..
___মানে! আপনার কিসের এতো দূর্বলতা এই মেয়ের উপর? আপনি এতকিছু জানেন, তারপর আবার অন্যজনকে বিয়ে করেছেন তারপরও তাকে কিছু বলতে পারবেন না?
কি কাহিনী এর পেছনে আমি জানতে চাই? এক্ষনি জানতে চাই।

___চিত্রা রিলেক্স, আমি আস্তে আস্তে সব ক্লেয়ার করবো।

___দরকার নেই আস্তে আস্তে জানার, আপনি এখনি বলবেন ব্যস!

___ মাফ করো আমাকে, আমি পারবোনা। প্লিজ একটু স্বস্তি দাও।

চিত্রা চুপ হয়ে গেলো। আর গাড়ীর জ্যাম কেটে সেটা আবার চলতে লাগলো, এতক্ষণ চিত্রা বারবার দেখছিলো অথৈকে। সাথের ছেলেটার সাথে অথৈ এর যে কোনো সম্পর্ক আছে সেটাতে চিত্রা স্পষ্ট।
এখন যত অস্পষ্টতা, সব হলো দ্বীপকে ঘিরে। কিসের জন্য সে এমন করছে? কি কারণ থাকতে পারে?
দ্বীপের কথায় মনে হয় সে খুব চায় এই শিকল থেকে বেরুতে কিন্তু সে পারেনা, কিন্তু কেন পারেনা?
চিত্রার মাথায় আবারো সেই জট পাকিয়ে গেছে।

দ্বীপ অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিল সারা রাস্তা। আর এতকিছু নিয়ে চিত্রা গভীর চিন্তায় মগ্ন। অবশেষে তারা ৮.৩০ এর দিকে বাসায় পৌঁছালো।
বাসায় পৌঁছে দ্বীপ ভেতরে আর প্রবেশ করলো না, সেখান থেকেই চিত্রাকে নামিয়ে আবার চলে গেলো কোথাও। চিত্রা বুঝতে পারলো কাল রাতে কেউ একজন ফোন দিয়ে ৯ টার মধ্যে কোন জায়গায় থাকতে বলেছিলো। তার জন্যই এতো সকালে তারাহুরো করে চলে আসছে।

চিত্রা বাসার ভেতরে যাওয়ার সাথে তার শাশুড়ী তার শশুড়কে ডাকতে ডাকতে বললো..
___এই দেখে যাও, বউমা চলে আসছে। এই কে কোথায় আছো তারাতাড়ি আসো।

সাথে সাথে চিত্রার শশুড়বাড়ির সবাই জমাট বেঁধে গেলো। চিত্রা অবাক হয়ে গেলো, দ্বীপ তাহলে তাদেরকে জানায়নি? চিত্রা এগিয়ে সবাইকে সালাম দিলো। তার শাশুড়ী বললো..
___ বজ্জাতটা কাল প্রথমবার কোথাও থাকার জন্য বেড়াতে গেলো, ভালো লাগেনি নিশ্চয়ই, আর আমিও এটাই আঁচ করেছিলাম, সে একটু বড় হওয়ার পরে কোনো আত্নীয়দের বাসায় গেলেও সন্ধ্যার আগে বাড়িতে আসতে চিল্লাতো। তাই বলে নতুন বিয়ে করে শশুড় বাড়িতেও যে থাকতে চায়বে না ভাবিনি। তোমার আম্মু কিছু মনে করেনি তো মা?
আর দ্বীপ কোথায় দেখছিনা যে।

চিত্রা শাশুড়ীর কথায় আরো তাজ্জব হলো, কি থেকে কি ভেবে ফেললেন তিনি। আর দ্বীপ জানালো না কেন তাদের? অতঃপর চিত্রা এসব চিন্তা বাদ দিয়ে বিনয়ী সুরে বললো..
___ আরে না না মা, আপনার ছেলের অফিসে জরুরি কাজ তাই এতো সকালে আসছে। আম্মুকেও ম্যনেজ করেছে। আমরা যে গাড়ী নিয়ে আসলাম, সেই গাড়ীতেই আমাকে নামিয়ে দিয়ে সোজা অফিসে চলে গেলো।

চিত্রার শশুড় পেছনে থেকে বললো..
___ ওর এখন কিসের অফিস? সেতো এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে। তার উপর ওর অফিস তো সাড়ে ১০ টায় শুরু হয়। আর হোক অফিস টফিস যা কিছু, তাই বলে এতো সকালে ঠান্ডার মধ্যে বউমাকে নিয়ে আসবে কেন? আসছে তো আসছে সে রুমে এসে দিয়ে গেলো না কেন? দেখোতো ব্যাগগুলোও বউকে দিয়ে চলে গেছে। আজকে আসুক দ্বীপ। বিয়ে করেছে এখনো কোথায় কিভাবে ব্যবহার করতে হয় শিখেনি।

চিত্রা হেসে বললো..
___ উনি ভীষণ তাড়ার মধ্যে ছিল, আমি কিছু মনে করিনি বাবা।

চিত্রার ননদ তোড়া এসে ব্যাগটা এগিয়ে নিতে চাইলো, চিত্রা ছোট ব্যাগটা তার কাছে দিয়ে দুজন রুমে এসে তারপর বসলো।
তোড়া এসেই বলতে লাগলো,
___আগে ভাইয়ার রুমে আসলে চারপাশে তাকানোর অবস্থা ছিল না, অগুছালো আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ঘর্মাক্ত কাপড়ের গন্ধ। কয়েক সপ্তাহ পরে পরে আমি কিংবা আম্মু গুছিয়ে দিতো, কিন্তু পরেরদিনই আবার সেই আগের মতো। তবে এখন আমার আর আম্মুর চিন্তা কমলো, শুনো ভাবী ভাইয়াকে আচ্ছামত বকা দিবা জিনিস এলোমেলো করে রাখলে।

চিত্রা তোড়ার কথায় হাসতে হাসতে বললো..
___ এলোমেলো করুক না, আমি তো আছিই এখন। আর তোমার ভাই তো শুধু যে ঘর এলোমেলো করে তা কিন্তু না, মানুষের মাথাও অল্প সময়ে একদম ঘুটঘুটে আউলা বানায় দেয়।

তোড়া অবাক ভঙ্গিতে বললো..
___ এটা একটা চরম সত্যি কথা, তবে তোমার সাথে এই দুইদিনে কিছু করেছে?

___ নাহ তেমন কিছু না। কথাবার্তা বুঝি না মাঝে মাঝে এই আর কি।

___ ওহহ তাই বলো, কিন্তু শুনো যদি উল্টা পাল্টা করে সোজা আমাকে বলবে,, আমি আব্বুকে বলে দিবো। ভাইয়া আব্বুকে ভীষণ ভয় পায়।

___ হাহাহাহা আচ্ছা কিছু করলে বলবো।

তারপর তাদের আরো অনেক্ষণ কথা হলো। তোড়া যখন চলে গেলো। চিত্রা একটু শুয়ে থাকলো।
প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে তখন, চিত্রা বিছানা থেকে উঠে এই রুমটাকে ভালো করে দেখতে লাগলো, কীভাবে কোনটা রাখলে সুন্দর দেখাবে।
চিত্রা ভাবলো গোসলে যাওয়ার আগে রুমটা একটু গুছিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

তারপর সবগুলো ফার্নিচার একে একে পরিষ্কার করলো, শুধু বাকি রইলো আলমারি। সেটার সামনের ড্রয়ার খুলে দেখলো চাবি রাখা আছে।
তারপর আস্তে করে আলমারি খুললো, এবং দেখলো সেখানে কোনোকিছুই ঠিক করে রাখা নেই। সবগুলো একদম এলোমেলো একটার উপর একটা পড়ে আছে।
তারপর আবার এর আশেপাশে প্রচুর ধূলা পড়ে আছে।

চিত্রা একটা কাপড় এনে সেটাকে পরিষ্কার করতে লাগলো। হঠাৎ সেখানে একটা গোপন ড্রয়ার দেখে চিত্রা অবাক হলো। কারণ সেটাও ধূলাময়লা পড়ে সাদা হয়ে গেছে। চিত্রা প্রথমে পরিষ্কার করলো এরপর হাত দিয়ে টানার সাথে সাথে সেটা খুলে গেলো।
ভেতরে কিছু শুধু কয়েকটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই।
সে একটু ঘেঁটে দেখতে গিয়ে হঠাৎ সে থেমে গেলো, একটা কাগজে অথৈ এর ছবি+ আরো কিন্তু তথ্যসামগ্রী। এরপরের কাগজটা দেখে চিত্রা আরো অবাক হলো, এবং বুঝতে পারলো এটা কোনো কিছুর দলিল সংক্রান্ত কাগজের ফটোকপি!
কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারলো না। অনেক ভেবে সে চিন্তা করলো এগুলো তার শশুড়কে দেখালে নিশ্চিত বুঝবে। তাই এখানের সবগুলো কাগজপত্র এক করে সেগুলো নিয়ে সে রওয়ানা দিলো
কিন্তু দরজায় যেতেই সে আচমকা লাফিয়ে উঠলো, ভয়ে সে তারাতাড়ি কাগজগুলো লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করেও পারলো না।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here