পর্ব ১৭+১৮ & শেষ
#ইংলিশ_টিচার
©Sumana Haque
চারপাশে বিয়েবাড়ি আমেজ, কত মজা করছে সবাই।শুভকে দেখে একজন বলে “আপনি ছেলের বাড়ির লোক নাকি মেয়ের বাড়িরর”
শুভ বেচারা চুপ করে আছে,শুভর জেনো গলাভারী হয়ে আসছে। কি বলবে আসলে সে,এরিমধ্যে মিলি এসে শুভর হাত ধরে বলে “উনি আমাদের পক্ষের লোক।”
শুভ মিলির দিকে তাকিয়ে দেখে মিলি বধূ সেজে আছে।
লাল টকটকে শাড়ি সাথে লাল রঙের লিপস্টিক আর কপালে লাল টিপ,চুল গুলা বাধা আছে বেলিফুলের মালা দিয়ে।
মিলিকে দেখে শুভর আরো খারাপ লাগছে এবার,মিলি শুভকে ছেড়ে আবার বিয়ে করে ফেলবে ভাবতেই পারছেনা শুভ।মিলির সামনেই চোখ থেকে টুপটুপ পানি পরছে। শুভ এবার আর পানিগুলো আটকাচ্ছে না।
শুভ প্রায় মিলির পায়ে ধরে ফেলবে এমন অবস্থা হয়ে গেছে ঠিক তখনি মিলি শুভকে বলছে
-কি করছেন কি আপনি?
-প্লিজ মিলি আমাকে ছেড়ে যাবেনা।প্লিজ আমি এত্ত দিন অপেক্ষা করে এখন তোমাকে ছেড়ে যেতে পারবোনা।
-এখন এসব বলার সময়? পরে বলবেন।
-কখন বলবো তাহলে তোমার বিয়ের পরে? ডিভোর্স টা হয়ে গেলে? কি বলছো তুমি মিলি।
-একটু অপেক্ষা করুন।
এরিমধ্যে কাজী চলে আসছে আর বিয়ের জন্য আকাশ ও প্রস্তুত। কাজী সাহেব মেয়েপক্ষের দিকে গিয়ে বিয়ে পড়াচ্ছে।
কাজী সাহেব কবুল বলতে বললো মেয়েকে তখনি শুভ বলে বসে ডিভোর্স তো হয়নি বিয়ে কিসের?
আর সাথে সাথে মিলি এসে শুভর মুখ চিপটে ধরে রেখেছে।
সবাই তো হা করে আছে। তখন মিলি সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করলো এটা বলে শুভ মজা করছিলো।
এবার মিলি শুভর হাত ধরে টান দিতে দিতে অনেকটা দূরে নিয়ে গেলো।
শুভ বললো
-কি হলো এমন করলে কেন মিলি? আমি তো খারাপ কিছু বলছিলাম না।
-আপনাকে না আমি অপেক্ষা করতে বলেছিলাম?
-অপেক্ষা আর কত বিয়ে টা তো এখনি হয়ে যেতো।
-হলে হতো আপনার কি?
-আমার কি মানে আমার স্ত্রীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
-আচ্ছা তাই এবার একটু সামনে তাকান তো।
শুভ সামনের দিকে তাকাতেই দেখে রিমি আর আকাশ মিলির আম্মুকে সালাম করছে।
বেচারা শুভ আবার কেঁদে দিয়েছে তবে এবার আর কষ্টের কান্না না এটা সুখের কান্না।
মিলিকে শুভ টাইট জড়িয়ে ধরে বলে
-এখনো স্বভাব পরিবর্তন হলো না তাইনা?
-কিসের স্বভাব?
-মজা নেওয়ার
-আমি কই মজা নিলাম?
-রিমির বিয়ে যে এটা বললে না কেন?
-বিয়ের কার্ডটা তো দিয়েছিলাম দেখার জন্য, যদি কেউ না দেখে তবে কি আর করার।
-অহ সরি! আসলে এত্ত রাগ হচ্ছিলো আমার তাই আর বিয়ের কার্ড দেখিনি।
-জ্বী আপনার রাগ বরাবর একটু বেশি।
-আচ্ছা তুমি করে আমাকে রাগাচ্ছিলে তাই না?
-কি জানি।শ্বশুর আংকেল মনে হয় এদিকে কোথাও আপনাকে দেখে লুকিয়ে আছে। তাকে কল দিচ্ছি আপনি একটু অপেক্ষা করেন।
-শ্বশুর আংকেল মানে বাবা?? কি সব বলছো! বাবা এখানে কি করে?
-সে আমার বাবা, সো সে তো থাকবেই।
-এই সব কিছু বাবা জানতো?
-হুম সবকিছু জানতো।
-আমাকে একটু সবটা বলো প্রথম থেকে।
তখনি মিলি তার শ্বশুর আংকেল কে কল দেয় আসতে, যথারীতি শ্বশুর আংকেল আসে।এসে শুভকে বলে
-সেদিন মিলি যখন ব্যাগ গুছিয়ে বাহিরে যাচ্ছিলো আমি ভাগ্যক্রমে দেখি ফেলি আর তখন মিলিকে আটকায় কিন্তু মিলি তখন বলে সে তার সম্মান নিয়ে বাঁচতে চায়।
আর আমিও বুঝে গিয়েছিলাম তুই আর তোর মা মিলে মিলিকে যা অপমান করেছিস তার সাজা পাওয়া উচিত তোদের। তাই সেদিন আমার বন্ধুর ছেলে আকাশ যে কিনা কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে এসেছে তাকে বলেছি মিলিকে বাসায় দিয়ে আসতে।
শুভ বললো এই আকাশ কি তোমার বন্ধুর ছেলে?
-হ্যাঁ
-তুমি তার কথায় বলতে মাঝেমধ্যে এই সে?
-হুম
-বাবা তুমি আমাদের এসব বলোনি কেন?
-বলিনি কারন তোদের ভাবনাচিন্তা পরিবর্তন করা জরুরি ছিলো।
কিন্তু তোদের পরিবর্তন করতে গিয়ে মিলি আর রিমি তাদের বাবাকে হারিয়েছে।সেদিন মিলিকে আকাশ যখন বাসায় দিয়ে আসলো মিলির এলাকার এক মস্তান টাইপ ছেলে দেখেছিলো আর তখন মিলির বাবাকে অনেক অপমান করেছে। আর সেদিনি মিলির বাবা স্টোক করে মারা যায়।
ভেবে দেখ কত কিছু হয়ে গেছে,তারপর ও রিমি আমাদের বাসায় যায় কারণ রিমির মনে হচ্ছিল তুই মিলিকে ঠিক মেনে নিবে আর মিলিকে পছন্দ করিস কিন্তু তোর ইগোর জন্য রিমিকে তুই বলতে পারলিনা যে মিলিকেই তুই পছন্দ করিস।
এরপর এলাকাবাসীর নানান কথায় আর দুই বোনকে আমি তাদের বাসায় রাখতে পারিনি।
বাড়িটা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। মিলির বাবা মারা যাওয়ার পর আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি তাদের দুই বোনকে বাবার আদর দেওয়ার যদিও এটা সম্ভব না, আমি কখনই তাদের বাবার জায়গা নিতে পারবো না।
শুভর বাবা এবার মিলির দিকে তাকিয়ে বললো,
-মিলিকে বলছি ভালো করে শুনো, তোমাদের কে আমি যায় একটু আধটু সাহায্য করেছি এই কথা ভেবে তুমি শুভকে মেনে নিও না।
তোমার যদি সত্যিই মনে হয় তুমি শুভকে মাফ করতে পেরেছ আর শুভর সাথে সংসার করবে তখনি তুমি শুভকে মেনে নিবে স্বামী হিসেবে এর আগে না।
সিদ্ধান্ত তোমার একার মিলি।
চলবে
#শেষ পর্ব
ইংলিশ টিচার
Sumana Haque
মিলির দিকে তাকিয়ে শুভ বললো
-আচ্ছা মিলি তোমার মন যা বলে তাই করো,নিজের মনের উপর জোর দিয়ে কিছু করা যায় না।তোমার যা সিদ্ধান্ত আমি তাই মেনে নিবো, কারণ আমার ভুলেই আজ এত্ত কিছু হয়ে গেছে।
মিলি চুপ করে আছে, কিছুই বলছেনা।
এবার শুভ বললো
-আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি, আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি চাচ্ছো। আচ্ছা মিলি ভালো থাকো আর ডিভোর্স পেপারটাই আমি সাইন করে দিচ্ছি।
শুভ যখনি ডিভোর্স পেপারটা সাইন করবে তখনি মিলি বলে উঠলো
-অই অই অই কি শুরু করছো??
-মানে?
-বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছাই করছি আর ডিভোর্স টা আমার ইচ্ছেই হবে।
-এইটা তো তোমারি ইচ্ছা তাইনা।
-না এটা আমার ইচ্ছা না।
-তাহলে এই সাইন কার??
-সাইন আমারি কিন্তু তোমাকে সোজা করতে এই কাজ করতে হয়ছে।
-এত্ত দিন আমি বাঁকা ছিলাম?
-হুম।
-এখন?
-একদম সোজা।
-তার মানে মিলি আমাকে মাফ করে দিয়েছে?
-জ্বী।
শুভ এই কথা শুনে এত্ত খুশি হয়েছে যে সে এটা ভুলে গেলো তার পাশে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে আর সে তার বাবার সামনেই মিলিকে জড়িয়ে ধরে আছে।যখন বুঝতে পারলো তখন তাড়াতাড়ি করে মিলিকে ছেড়ে দেয়।
শুভ বাবা তখন আর কিছু না বলে চলে গেলো।
শুভ তখন মিলিয়ে বললো,
-সরি সরি বেশি খুশি হয়ে গেছিলাম তাই খেয়াল ছিলোনা।
-হুম।
-শুধু হুম?
-তাহলে আর কি বলবো?
-তুমি তো আগে সবকিছুতেই বলতা আমি তোমার বাবার মতো আজ বললে না কেন?
-এখন তো তুমি আমার স্যার নাহ তাই।
-বাহ বাহ।
তখনি শুভর ফোনে শুভর বাবা কল দেয় আর শুভর বাবা বলে সে জেনো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে আর অবশ্যই মিলিকে সাথে নিয়ে আসে।
মিলি আর শুভ বাসায় যায় আর এবার তার শাশুড়ি খুব আনন্দে বরণ করে তাদের।
রাত হয়ে গেছে আজ মিলি আর শুভর দ্বিতীয় বাসর।
শুভ যখন রুমে আসলো আগেরবারের মতো এবার ও দেখে লাইট অফ।
লাইট অন করে দেখে মিলি রুমে নেই।
কি আশ্চর্য মিলি কোথায় এই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই মিলি ওয়াশরুম থেকে আসলো,দেখে বুঝা যাচ্ছে সে গোসল করে আসছে।শুভ ভাবছে মিলিকে আবার জ্বীনে ধরলো নাকি।
মিলি হাসি দিয়ে বললো,
-এখন আমি যে কথাগুলো বলবো তার জন্য প্রচুর সাহস দরকার আর তাই একটা গোসল দিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলাম।
-কেন কি বলবে?
-বলবো বলবো
-আচ্ছা আমি অপেক্ষা করছি ইচ্ছে হলেই বলো।
-তুমি যেদিন আপুকে দেখতে আসলে সেদিন তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি রুম বন্ধ করে কান্নাকাটি করছিলাম, আমি চাইনি কেউ দেখুক আমার কান্না। কিন্তু আপু আমাদের রুমের ওয়াশরুমে ছিলো আর সে সাউন্ড পেয়ে বের হয়ে দেখে আমি কান্না করছি।
-কান্নাকাটি করছিলে কেন?
-আমি সব বলি পরে তুমি বলবে কথা ওকে?
-ওকে
-আপু অনেক জোরাজোরি করে কিন্তু আমি বলতে চাইনি। আপু তার মাথায় আমার হাত দিয়ে বলে সত্যিটা বলতে আমার কি হয়েছে,তাই আমি সব বলে দেয়।
-কি বলে দেও?
-বলছিনা চুপ করে শুনবে।
-হুম
-আপুকে বলি আমি তোমাকে প্রথমবার দেখাতেই পছন্দ করে ফেলেছি। নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তোমার লাল পাঞ্জাবী আর হাতে কালো ঘড়ির, কি যে সুন্দর লাগছিলো তোমাকে যদিও আমি জানতাম না তুমি আমাদের স্যার।
-অহ এর জন্যিই ক্লাসে গেলে খালি চেয়ে থাকতে কার বাহানা দিয়ে দিয়ে কথা বলতে চাইতে।
-চুপ আমি বলছি সব।
-হুম
-আপু শুনে বললো সে নাকি এই বিয়েটা করবেনা। কিন্তু তাতে কি আপু বিয়ে না করলেও তোমার পরিবার তো অন্য জায়গায় ঠিকি বিয়ে দিয়ে দিতো, দেশে তো আর মেয়ে কম নেই।
আর আমার সাথে বিয়ে সম্ভব না কারণ এত্ত ছোট মেয়েকে তুমি বিয়ে করবেনা আর আমাকে এমনিতেও বেশি পছন্দ করতেনা।তাই আপু প্লেন করে বিয়ের দিন সে ছাঁদে লুকিয়ে থাকবে তারপর সবাই উপায় না দেখে বিয়েটা আমার সাথে দিয়ে দিবে।
-তাহলে ডং করে আবার রাজি হচ্ছিলেনা কেন?
-এসব একটু করতে হয়।
-ফেইল কেন করতে?
-আমি সারাক্ষণ তোমার সাথে কানেকশান রাখতেই নানাভাবে তোমাকে ডিস্টার্ব করা।
ক্লাসে তো পড়তাম না শুধু তোমার দিকে চেয়ে থাকতাম তো ফেইল তো করবো স্বাভাবিক।
-বুঝছি শয়তান মেয়ে।এত্ত কিছু করে ফেলেছে আমার জন্য আমার কিন্তু ভাবতে খারাপ লাগছেনা।
-কিন্তু আমার একটা ভুলের জন্য বাবাকে এত্ত কথা শুনতে হবে আমি ভাবতে পারিনি।
মিলির চোখের পানি গুলো এবার শুভ মুছতে মুছতে বললো
-আরে দোষ তো আমারো ছিলো আমি যদি সেদিন খারাপ ব্যবহার না করতাম এত কিছু হতো না।
-আজ বাবা নিশ্চয় সব জানতে পারছে আর আমাদের এক সাথে দেখে খুশিও হয়েছে।
-হ্যাঁ।
মিলি আর শুভ নফল নামাজ পড়েছে।
,
,
,