ইংলিশ টিচার পর্ব ১৪,১৫

ইংলিশ টিচার
পর্ব_১৪_১৫
Sumana Haque

মিলি এসএস সি তে যদি প্লাস পায় তাহলে মিলি ফেইল কেন করলো কলেজে সেটাই ভাবছে শুভ।

শুভ আর তার মায়ের সাথে বেশি কথা না বলে ব্যাগ রেখে সে কলেজে চলে যায় যেখানে শুভ চাকরি করতো।

সবাই শুভকে দেখে অবাক,শুভকে জড়িয়ে ধরে কেমন আছে তাই অনেকে জিজ্ঞেস করছে।

শুভ তাদের উত্তর না দিয়ে কলেজের কাগজপত্র যেখানে রাখে সেটা চেক করতে বললো এক অফিস সহায়কে।

মিলিদের ব্যাচ এর কাগজ পত্র খুঁজতে গিয়ে লাস্ট পর্যায় মিলির এসএসসির রেজাল্ট এর কপি খুঁজে পায়।

কলেজের এক টিচার বলতে শুরু করলো,

-আরে শুভ তুমি কি মিলির এই কাগজ খুঁজতে এসেছো?
তাহলে আমাদের সাথে দেখা করতে আসো নি।

-না এমনটা না,আজকেই দেশে ফিরলাম আর মা বললো মিলি মেডিকেলে চ্যান্স পাইছে।ও তো এত্ত ভালো স্টুডেন্ট ও না তাহলে কিভাবে সম্ভব। আর মা বললো ওর এসএসসি তে প্লাস ছিলো। প্লাস পাওয়া মেয়ে কিভাবে ফেইল করে আমার তাই বোধগম্য হচ্ছে না।
আর এটা আসলেই সত্যি কিনা তাই জানতে এখানে আসা।

-এই ব্যাপার টা আমি ও ঠিক বুঝতাম না।মিলি কিন্তু এত্ত খারাপ স্টুডেন্ট ছিলো না।ও কিভাবে যেন এমন হয়ে গেছিল।

-হুম।

-মিলির কি অবস্থা? যোগাযোগ হয়?

-না, তবে আশা করি খুব তাড়াতাড়ি হবে।

এই কথা বলে শুভ বাসায় চলে আসলো।
শুভ বাসায় এসে তার মাকে কথাগুলো বলে, আর তখনি শুভর মা বলে,

-এই মেয়েটার সাথে কত খারাপ ব্যবহার করেছি আর মেয়েটা তখনো কিছু বলেনি।

শুভ কটাক্ষ করে বলে,

-এখন কি তোমার মিলির জন্য মায়া হচ্ছে?
তোমার কি আফসোস হচ্ছে?

-আফসোস কেন হবে?

-এই যে ডাক্তার বউ পেয়েও হারালে।

-তোর জন্যই তো এমন হয়েছে।আমি শাশুড়ি মানুষ কিছু কথা বলতেই পারি তাই বলে তুই ও বলবি?

-মা শাশুড়ি বলেই এভাবে বলবে না।আচ্ছা থাক ভুল আমিও করেছি আর তুমিও করেছো, যদিও আরো একজন ও ছিলো আমাদের সহযোগী।
-কার কথা বলছিস?
-মিলি।
-মিলি কেন?
-কারণ সে ও তো রিমি সাথে আমার বিয়েটা হতে দেয়নি আর তার জন্যই এখন এত্ত কিছু হচ্ছে।যদিও এখন মিলির এই কাজ টা তেমন খারাপ মনে হয় না।
-আচ্ছা মিলির সাথে যোগাযোগ কিভাবে করবি? আমি তোর কোনো সাহায্য করতে পারি?
-একটা কমিউনিটি সেন্টার থেকে নাম্বার নিয়ে আসছি যদিও এটা মিলির বাসার নাম্বার। জানো মা, মিলির বিয়ে ঠিক হয়েছে।
-সেকি!! এখন তাহলে তুই কিভাবে আটকাবি?
-আমার সাথে ডিভোর্স হয়নি আবার কিসের বিয়ে? যদি একান্তভাবে আমার সাথে না থাকতে চায় তবে সেদিন ডিভোর্স দিয়ে আমাকে পরে আকাশকে বিয়ে করতে হবে।

-ছেলের নাম বুঝি আকাশ।
-হুম।
-কি করে?
-এত্ত কিছু আমরা জেনে কি করবো, বাদ দাও।
শুভ এবার রেগে গেলো। আকাশ এর নামটাই শুভর শুনতে ভালো লাগছে না।
শুভ হঠাৎ তার মাকে বললো,
-মা তুমি বরং মিলির বাসার নাম্বারে কল দেও আর বলবে তুমি তুলি নামের এক মিলির বান্ধবীর মা।
আর মিলি কোথায় তাও জিজ্ঞেস করবে।
-তোর জন্য এখন আমাকে এই দুষ্টামি টা করতে হবে।
শুভ কল দিলো আর সাথে সাথেই মিলির আম্মু কল রিসিভ করলো,
-হ্যালো
-হ্যালো ভাবি,কেমন আছেন?
-ভালো, আপনি কে বলছিলেন?
-জ্বী আমি তুলির আম্মু,আসলে তুলি কি আপনাদের বাসায়? সেই সকালে বের হয়ছে এখনো আসেনি।
-অহ আচ্ছা ভাবি,তুলি তো আজকে আসেনি। আর মিলি ও তার নাচের স্কুলে।
-মিলি কি নাচের ক্লাস ও নেয়?
-কি বলেন ভাবি এসব,আপনাকে কি তুলি কিছুই বলেনি? ওরা সব বন্ধুরা মিলেই তো এই স্কুলটা করলো।তুলিও তো এই স্কুলের প্রথম থেকে ছিলো।
-না ভাবি ও তো কিছু বলেনি। মিলি সময় কখন পায়? ও তো মেডিকালের স্টুডেন্ট।
-ভাবি শুক্রবার আর শনিবার সময় করে ক্লাস নেয়।
আর আপনি মাঝেমধ্যে কল দিয়েন, তা না হলে কি করে হবে? আজ কত কিছু জানলেন নতুন করে। এসব তো আপনি কিছুই জানতেন না।
-হ্যাঁ ভাবি দিবো, আচ্ছা কিছু ব্যক্তিগত কথা জিজ্ঞেস করবো?
শুভ তার মাকে না না বলে ইশারা দিচ্ছে।
শুভর মা শুভর কথা পাত্তা না দিয়ে বললো
-আচ্ছা ভাবি মিলির না বিয়ে হয়েছিল?
তারপর কি হলো যে আর শ্বশুর বাড়ি গেলো না?
-আর বলবেন না ভাবি,কপাল খারাপ হলে যা হয়।লোভী পরিবার এর মতো আচরণ ছিলো তাদের। আমার মেয়ে ইংলিশে ফেইল করাতে তাকে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করেছে।এখন আমার মেয়ে মেডিকেল এর স্টুডেন্ট। মিলির শাশুড়িটা ছিলো আরো খারাপ।পাজি মহিলা।

শুভর মা অনেক লজ্জা পেতে লাগলো, তার আর কথা বলার মতো মুড নাই তাই আর কিছু না বলে কল কেটে দিবে এমন সময় শুভ তার মাকে ইশারা করে বলতে “মিলির নাচের স্কুলটা কোথায় ”
শুভর মায়ের অনিচ্ছা হলেও জিজ্ঞেস করতে হয়েছে তাকে।
মিলি মা সেখানকার এড্রেস দিয়ে দেয়।

শুভ হেসে তার মাকে বলে,
-কেমন প্রশংসা করলো তোমার?
শুভর মা রেগে বলে যা এখান থেকে।
শুভ এড্রেস নিয়ে মিলির নাচের স্কুলের সামনে চলে আসলো।
শুভ একটু সামনে যেতেই গান এর শব্দ শুনতে পেলো।
গান টা ঠিক ভালভাবে শুনা যাচ্ছেনা, আরেকটু কাছে যেতেই শুভ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে এবার শুভ বুঝে গেলো মিলি তার খুব কাছেই আছে তখনি শুভ মিলিকে দেখতে পেলো।
এই চার বছরে কত পরিবর্তন হয়েছে মিলির।
মিলির চুল গুলো কত বড় হয়েছে, খোলা চুল গুলো মিলির নাচার সময় বাতাসে উড়ছে। হলুদ রঙের লং ফ্রগ পড়ে আছে, সাথে সাদা উড়না টা কোমরে পেছানো।কপালে একটা লাল টিপ।
এত্ত কাছ থেকে নিখুত ভাবে শুভ মিলিকে আর কখনো খেয়াল করেনি।

মিলির বাচ্চাদের নাচ দেখানো শেষ হতেই শুভ তাদের কাছে যায়।

পর্ব ১৫
ধারাবাহিক গল্পঃ #ইংলিশ_টিচার

শুভ ভাবছে মিলি শুভকে দেখলে কি রিয়েকশন দিবে, এত্ত গুলো দিন চলে গেছে তাদের যোগাযোগ ছিলনা।
শুভ এবার খুব চিন্তায় পরে গেছে, কিভাবে এন্ট্রি নিবে? সিনেমাতে নায়ক যেমন অনেক বছর পর নায়িকার কাছে গেলে নেয় সেভাবে? কই লালালালাহ লালালালাহ মিউজিক তো বাজছেন না।

ঠিক তখনি শুভ খেয়াল করলো এত্ত ঝামেলার মধ্যে শুভ নিজের যে কি হাল হয়েছে তাই খেয়াল করেনি।
মিলি আগের চেয়ে কত কিউট হয়ে গেছে তাই মিলির সামনে এভাবে যাওয়া টা ঠিক হবে না।

তখনি শুভর পাশদিয়ে টপস আর জিন্স পড়া এক মেয়ে চলে যাচ্ছে।শুভ আর সময় না নিয়ে অনেকটা বোকার মতো বলে বসলো,
-এইযে মিস শুনছেন?
মেয়েটার বড় বড় চোখ গুলোকে আরো বড় করে তাকিয়ে শুভকে বললো,
-কি ব্যাপার? আর হ্যাঁ আমি মিস না আমি ডাঃ মিসেস হাসান।

-আচ্ছা সরি ডাঃ মিসেস হাসান।আচ্ছা আপনি ডাক্তার? আমি যা অনুমান করছিলাম তাহলে তা আর হলো না।আচ্ছা সরি ডিস্টার্ব করলাম।

-আমি ডাক্তার কেন হব? আমার স্বামী ডাক্তার।
শুভর এবার বেশ হাসি পাচ্ছে। এই মেয়েটা তার স্বামীর পরিচয় দিতে কত অহংকার করছে আর মিলি যে কিনা তার স্বামী তার কলেজের টিচার তা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র অহংকার ছিলোনা বরং এইটা সে লুকাতে চাইতো।
শুভ মনে মনে ভাবছে আচ্ছা তার কি মিলিকে নিয়ে অহংকার হচ্ছে?

শুভ এবার এসব ভাবা বাদ দিয়ে মেয়েটিকে বললো,
আসলে আপনাকে দেখে আমি বুঝিনি আপনি মিসেস।
-এটা অবশ্য ঠিক, আমাকে দেখে অনেকেই বুঝেনা আমি মিস নাকি মিসেস।

শুভর এবার আরো হাসি পাচ্ছে,আচ্ছা দেখতে ছোট লাগছে এটা বললে সব মেয়েরা কি খুশি হয়?
মনে হয়না, মিলিকে বললে তো উল্টো রেগে যেতো।
শুভ এবার আর কিছু ভাবতে চায়না। সবকিছুতেই মিলিকে টেনে নিয়ে আসছে শুভর অবচেতন মন যা এই সময় একদম ঠিক হচ্ছেনা।এখন প্রত্যেক টা মিনিট অনেক দামি।

শুভ এবার নিজের কাজের উপর ফুল ফোকাস করে বললো,
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি খুব সাজগোজ করতে পছন্দ করেন।আপনি এসব ব্যাপারে খুব সচেতন। আপনার এই ব্যাগে অনেক কিছু আছে যেমন ধরেন আয়না, চিরুনি আর যা যা লাগে সবকিছু।

মেয়েটা এবার তার বড়বড় চোখগেলো আরো বড়বড় করে বললো,
-আপনি কিভাবে বুঝলেন? বেশ বুদ্ধিমান তো? হুম আমি সব সময় এসব সাথে রাখি।

-তাহলে আমাকে এখন আয়না আর চিরুনি দিয়ে একটু সাহায্য করুন।চুলের অবস্থা দেখুন,ঘেমে কি অবস্থা হয়ে আছি।আমার স্ত্রী রাগ করে আছে, আমাদের মাঝে একটু প্রবলেম চলছে যার জন্য ৪ বছর যোগাযোগ ছিলোনা। এখন যদি এই অবস্থায় যায় কেমন না ব্যাপার টা?
মেয়েটা দুই মিনিট ভেবে ব্যাগ থেকে আয়না আর চিরুনি বের করে দিলো আর সাথে একটা বডি স্প্রে।
শুভ বললো,
-মেয়েদের টা ব্যবহার করবো?

-আরে মিয়া মেয়েদের আয়না আর চিরুনি ব্যবহার করতে পেরেছেন আর বডি স্প্রে পারবেননা?আপনি এত্ত কথা না পেঁচিয়ে প্রথমেই বলতে পারতেন যে আপনার চিরুনি আর আয়না দরকার। আর হ্যাঁ বডি স্প্রে টা আমার স্বামীর। এখন হয়তো প্রশ্ন করবেন কেন আমি ছেলের বডি স্প্রে সাথে রাখি,তাই আমিই বলে দেয় আসলে আমার স্বামী এত্ত কাজে ব্যস্ত থাকে যে তার অবস্থা আপনার মতোই হয়ে যায়, ধরেন আমার সাথে শপিং যাবে তখন তার সাথে কথা বলার মতো অবস্থা আর থাকেনা তখন ব্যাগ থেকে এই বডি স্প্রে টা আগে হাতে ধরাই দেই।

শুভ মেয়েটার বুদ্ধিকে প্রশংসা করতে করতে চুল ঠিক করে, টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছে বডি স্প্রে দেয়।
শুভ মেয়েটাকে অনেকবার ধন্যবাদ জানায়।

মেয়েটা শুভকে অল দ্যা বেষ্ট বলে বিদায় নেয়।

শুভ এবার বেশ কনফিডেন্স। একটু একটু করে মিলির কাছে চলেই আসলো আর শুভর হার্টবিট কম্পিত হতে লাগলো,মিলি দাঁড়িয়ে আছে আর বাচ্চাগুলো নিজেরা নিজেরা নাচছে।

শুভ মিলিকে গিয়ে আস্তে করে বললো
-মিলি
কিন্তু মিলি পিছনে ফিরছেই না।হয়তো মিউজিক এত্ত বেশি তাই শুনতে পাচ্ছেনা,শুভ এবার বেশ শব্দ করে ডাক দিলো মিলি বলে।বাচ্চাগুলা পর্যন্ত নাচ থেমে দাঁড়িয়ে গেলো, মিলি মিউজিক অফ করলো। পরিবেশ বেশ থমথমে হয়ে গেছে। শুভ এতটাও আওয়াজ করতে চায় নি।

শুভ চুপ করে আছে তাই মিলি বললো
-জ্বী মিস্টার শুভ মিলি শুনছে,আপনি বলতে পারেন।
শুভ আমতাআমতা করছে কিছু বলতে পারছেনা।
-কি হলো মিস্টার শুভ?
শুভ এবার অনেক চেষ্টা করে মুখ দিয়ে শব্দ বের করলো,
-বলছি ওয়েট, তুমি মিউজিক দেও মিলি বাচ্চারা নাচুক। তারা তাকিয়ে আছে।

-আরে আরে আপনি কি এমন কথা বলবেন যে বাচ্চারা শুনলে প্রবলেম হয়ে যাবে?
-আচ্ছা ওকে বলছি। বাচ্চারা মনোযোগ দিয়ে শুনো।
কিন্তু বাচ্চাকাচ্চা গুলো মনোযোগ দিলো না বরং চিল্লানো শুরু করলো।

এই বাচ্চা গুলো কেমন শত্রুতা শুরু করলো,
শুভ মিলিকে বললো,
-মিলি আমাকে ১ ঘন্টা সময় দিবে প্লিজ?
-আমি আপনাকে সময় কেন দিবো?
-কারণ অনেককিছু তোমাকে বলা হয়নি এখনো।
-সরি,এখন আমি বাসায় যাবো।
-প্লিজ প্লিজ শুধু ১ ঘন্টা দাও আমাকে, একটা রিকশা নিবো ১ ঘন্টার জন্য।

-আচ্ছা এক ঘণ্টা সময় আমি দিতে রাজি আছি তবে আমার একটা শর্ত রয়েছে।
-কিসের শর্ত?

চলবে,,,,
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here