#মনের_গহীনে
১০ম পর্ব
লেখনীতে:নাদিয়া হোসাইন
প্রাচুর্য নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে লজ্জায় পরে গেলো। এতোক্ষণ কীভাবে সে প্রিয়কে জরিয়ে ধরে এতো বড় অন্যায়টা করে ফেললো। প্রিয় তো শুধু তার কাছে নিজেকে গুছিয়ে দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলো। জরিয়ে ধরার অধিকার তো দেয় নি। প্রাচুর্য খুব লজ্জার মধ্যে পরে গেলো। এই লজ্জায় কান্নাটা আরো প্রখর বেগে বেড়ে গেলো। হুট করেই প্রিয়কে ছেড়ে দিলো।
প্রিয় বুঝতে পারলো, প্রাচুর্য বেশ লজ্জা পেয়েছে। তার ও যে লজ্জা হচ্ছে না, তা না! তাও প্রাচুর্যের লজ্জা কাটাতে বললো, __ইট’স ওকে প্রাচুর্য। টেক ইট ইজি। এখন বলো, দিবে আমায় একটা সুযোগ নতুন করে বেঁচে থাকার?
প্রাচুর্য নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,__আমি জানি না, আমার জন্য এই পাওয়াটা কখনো ছিলো কি-না। আপনি আমার কাছে আমার এক না পাওয়া স্বপ্ন ছিলেন। ইনফেক্ট বলেও বুঝাতে পারবো না, কতোটা খুশি হয়েছি আমি। সব সময় চাইতাম, আপনার চাওয়া যেনো পূরণ হয়। আর আজ আপনি আমাকে চাইছেন! এই অনুভূতি আমার কাছে কতোটা দামি সেটা আমার মন জানে। আমি আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনার হয়ে থাকবো। আপনাকে নিজের মতো করে মানিয়ে নিবো ও আপনার মনের মতো নিজেকে গড়ে তুলবো। আপনি আমাকে একটু খানি ভালোবাসা দিলে, আমার শেষ সময় অব্দি আপনার কাছেই থেকে যাবো।
প্রিয় মুচকি একটা হাসি দিলো। তাকে কেউ এভাবে ভালোবাসতে পারে, তা তার জানা ছিলো না! ছেলেরা সব সময়-ই চায়, তার নিজের একটা মানুষ থাকুক। যে তাকে জীবনের শেষ সময় অব্দি নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে যাবে। প্রিয়র জীবনও আজ আরো সুন্দর হতে পারতো, যদি সে সামায়ার একটু ছায়াও নিজের জীবনে পেতো। কিন্তু তা যখন হওয়ারই নয়, তখন যে মেয়েটা তাকে ভালোবাসে। তার ভালোবাসায়ই নিজের জীবন পূর্ণ করুক।প্রিয় প্রাচুর্যকে বললো,__থ্যাংকস প্রাচুর্য! আমি জানি না তোমায় কতোটা খুশি করতে পারবো। কিন্তু আমার বেস্ট টা দিয়ে ট্রাই করবো তোমাকে ভালো রাখার।
প্রিয় প্রাচুর্যকে নিয়ে একটা বেঞ্চে এসে বসলো। প্রাচুর্য যতই প্রিয়কে ভালোবাসুক না কেনো, এখন প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে। আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারছে না। পারবেই বা কি করে, এখন যে তারা নতুন এক সম্পর্কে জরিয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পর প্রিয় বললো, আজ তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে এতো সকালে নিয়ে আসলাম। জানি না কেউ এমনটা করে না-কি। কিন্তু আমি কিছুটা চটপটে। ধৈর্য শক্তি নেই বললেই চলে। তাই তোমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আনলাম। আই থিংক তোমার খিদে পেয়েছে। এখন দশটা বাজে। আমারো পেয়েছে, সরি, তোমাকে এতোক্ষণ না খাইয়ে বসিয়ে রাখার জন্য।
আরেহ না ভাইয়া, ব্যাপার না।
প্রিয় হেসে দিলো। প্রাচুর্যকে উদ্যেশ্য করে বললো, __ এখন আর ভাইয়া বলার দরকার নেই। তোমাকে বোনের নজরে দেখতে তো আর হবে না এখন। তাই এখন থেকে প্রিয় বলেই ডেকো।
প্রাচুর্য অনেকটা লজ্জা পেয়ে গেলো৷ লজ্জায় গাল আর নাক অনেকটা লাল হয়ে গেছে৷ যাদের গায়ের রঙ ফর্সা, তারা রাগ করলে, কান্না করলে বা লজ্জা পেলে কীভাবে যেনো মুখ মন্ডলের কিছু অংশ লাল হয়ে যায়। প্রিয় এই প্রথম প্রাচুর্যের দিকে তাকালো ভালো করে। প্রাচুর্য আর সামায়ার মুখের আদলে অনেকটা মিল পাওয়া যায়। দুজনের চোখ, নাক আর ঠোঁটটাই ভিন্ন। প্রাচুর্যের ভ্রু জোরা, আর চোখ কিছুটা ছোট। সামায়ার চোখ বড়। সামায়ার নাকটা বোচা, কিন্তু তাতেও সামায়ার সৌন্দর্য একটুও কমেনি। প্রাচুর্যের নাক কিছুটা খাড়া । দু’জনই অসম্ভব মায়াবী । কিছুক্ষণ পরই প্রিয়র হুস ফিরে এলো। পরক্ষনেই নিজেকে ধিক্কার জানালো। ছি.. এসব আমি কি ভাবছি। তারা দু’জন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ৷ আমার মোটেও ঠিক না, তাদের মধ্যে তুলনা করা। আমার যে করেই হোক সামায়াকে ভুলতে হবে। প্রাচুর্যকে নিজের জীবনে প্রবেশ করিয়েছি৷ এখন ওকে সম্পূর্ণরূপে ভালোবাসার চেষ্টা করতে হবে। প্রিয় এসব ভাবছিলো। যখন ঠিক করলো, এখান থেকে উঠে প্রাচুর্যকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে যাবে। তখন প্রাচুর্যের ফোনে কল এলো।
প্রাচুর্য ব্যাকপ্যাক থেকে ফোন বেড় করে দেখলো প্রাচুর্যের মা কিয়ারা ফোন দিয়েছে। তারাহুরো করে ফোনটা রিসিভ করে নিলো।
হ্যালো!প্রাচুর্য, তুই এই সকাল সকাল কই গেছোস। তাও আবার বলে যাওয়ারও দরকার মনে করছ নাই।
সরি আম্মু! একটু কলেজে আসছি। সামনেই তো পরীক্ষা, আর আমার রেজিষ্ট্রেশনের কিছু ইনফরমেশন ভুল হইছে, তাই ঠিক করতে আসছি। কাল তো সবাই অনেক রাত করে ঘুমাইছিলা। তাই আর ডেকে ডিস্টার্ব করিনি।
ওহ তাহলে কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসিস। নাহলে আবার চিন্তা হবে।
প্রাচুর্য ফোন কেটে ব্যাগপ্যাকে ফোনটা রাখতে যাচ্ছিলো, তখন প্রিয় বললো,__বাহ এতো দ্রুত মিথ্যা বলে দিলে।
প্রাচুর্য লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো,__মাঝে মাঝে খানিকটা বলতে হয়। যদি না বলতাম, তাহলে এখন বাসায় বসে থাকতে হতো। আর আমাকে বাসা থেকে এতো বেড় হতে দেয় না, তাই যতোটুকু বেড় হই তা কলেজের নাম করেই হই।
আহারে কি কষ্ট। ব্যাপার না, অনেক যায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবো তুমাকে।
প্রাচুর্য কিছু বললো না। তার বহু দিনের ইচ্ছে ছিলো, প্রিয়র সাথে এভাবে সময় কাটানোর। আজ এভাবে পূরণ হবে ভাবে নি। আল্লাহ দেরিতে হলেও কিছু মঙ্গলময় কাজ করে।
প্রিয় প্রাচুর্যকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে দুজন মিলে খেয়ে নিলো৷ প্রিয় পরোটা, ডিম ভাজি খেলো আর
প্রাচুর্য আইসক্রিম, ফ্রেন্সফ্রাই খেলো। ঢাকা শহরে সকাল দশটার আগে খুব কমই রেস্টুরেন্টে খোলা থাকে। তাই এর চেয়ে ভালো খাবার আর পাওয়া গেলো না।
রমনা থেকে বেড় হয়ে প্রাচুর্যর ইচ্ছে হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার। প্রিয়কে প্রাচুর্য সে কথা বললো না। প্রিয় সামনের দিকে হাটা ধরলো, প্রাচুর্য প্রিয়র সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটার চেষ্টা করলো। কিন্তু প্রিয় অনেক দ্রুত হাটছে, সেই জন্য প্রাচুর্য প্রিয়র সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটতে পারছে না। প্রাচুর্যের ইচ্ছে হলো দৌড়ে গিয়ে টুপ করে প্রিয়র হাত ধরে হাটতে৷ কি করবে সেটা ভেবে দোটানায় পরে গেলো প্রাচুর্য। প্রিয় তখন পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো, প্রাচুর্য অনেকটা পিছনে পরে গেছে। সে প্রাচুর্যের উদ্যেশ্যে বললো,__ এই প্রাচুর্য , এতো আস্তে হাটছো কেনো৷ দ্রুত আসো।
প্রাচুর্য এক দৌড়ে প্রিয়র কাছে চলে আসলো। আর প্রিয়কে বললো, __কি করবো বলুন। আপনি অনেক দ্রুত হাটছেন। আমি তো না দৌড়ে আপনার নাগাল পাবো না। ছোট বেলা বাবা আর ভাইয়াদের সাথে কোথাও গেলে রিতীমত হাটার বদলে দৌড়াতে হতো। আর আজ আপনিও অনেক দ্রুত হাটছিলেন।
প্রাচুর্যের করুন চাহনি দেখে প্রিয় হেসে দিলো।- আচ্ছা বাবা সরি। এখন থেকে আস্তে হাটবো।
ইয়ে.. মানে… যদি কিছু মনে না করেন,আপনার হাত ধরে হাটতে পারি?
প্রিয় তার হাতটা এগিয়ে দিলো প্রাচুর্যের দিকে।প্রাচুর্য খুশি মনে প্রিয়র হাতের ভাজে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিলো। প্রাচুর্যর জীবনটা খুব রঙিন মনে হচ্ছে। দেরিতে হলেও এটা তার অনেক বড় এক প্রাপ্তি৷ প্রাচুর্য প্রিয়র সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটছে আর ভাবছে, ইস.. আজকের মতো যদি একটি রাত প্রিয়র সাথে চাঁদের আলোয় হাটতে পারতাম! এই সপ্ন যখন পূরণ হয়েছে, বাকি স্বপ্ন গুলোও হয়তো বিধাতা চাইলে পূরন হবে!
চলবে,
৯ম পর্ব: