#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-২০
_____________________
– মীরার মাথা টা আবারো ঝিমঝিম করতে শুরু করলো।
মীরা আর ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে না থেকে মাথা টা চেপে রেখে রুমে চলে আসলো।
রুমে এসে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরলো।
কিছুক্ষণের মধ্যে মীরা ঘুম জগতে পাড়ি দিলো।
– দু’জন হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে মীরা কে বুকে নেওয়ার জন্য।
কিন্তু মীরা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে আছে।
হঠাৎ কেউ পেছন থেকে ছুরি মারতে আসলো কিন্তু ব্যার্থ হলো, মীরা পেছন ফিরে যাকে দেখলো তাঁর চেহারা বড্ড চেনা চেনা লাগছে মীরার।আগে কোথাও যেনো তাকে দেখেছে বলে মনে হচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎ মীরার শরীর টা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।
ঠিক তখুনি মীরা নেকড়ে টার লেজ ধরে দূরে ছুঁড়ে মারলো।
মীরা চোখ মেলে তাকিয়ে চমকে উঠলো।
তাঁর মানে এতোক্ষণ মীরা স্বপ্ন দেখছিলো।
ভয়ে মীরা গায়ে থুঃথুঃ ছিটালো।
মীরা বাহিরে চোখ মেলে তাকালো।
রাত এখনো পুরোপুরি বাকি।
চোখ গুলো ঘষতে ঘষতে মীরা আবার শুয়ে পরলো চোখে গভীর তন্দ্রা লেগে গেলো।
________________________
– সকাল সকাল আজ শরীর টা কেমন জানি মেজমেজ করছে মীরার।
সব যেনো এলোমেলো লাগছে।
মনটা যেনো আগের কার রাতের মতো বিষন্ন হয়ে আছে।
– সান্ড্রা আজ নিজ হাতে মীরার সব পছন্দের খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়েছে।
– মীরা ছলছল চোখে সান্ড্রার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খাবার টেবিলে বসলো।
মীরা সান্ড্রা কে অনেক করে বললো মীরার সাথে খেতে বসতে।
কিন্তু সান্ড্রা কিছু না কিছু বলে পাশ কাটিয়ে গেলো। মীরা কিছু একটা ভেবে আর জোর করলো না।
মীরা আজ অনেকদিন পর বেশ ভালো করে খেলো।
– সান্ড্রা মীরা কে অনেক বার নিষেধ করেছে আজ যেনো বাহিরে না বের হয়।
কিন্তু মীরা সান্ড্রার কথা শুনলো না। না শুনে
ভার্সিটিতে চলে আসলো।
ভার্সিটিতে এসে প্রথমেই সানা কে খুঁজতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।
কিন্তু সানা কে কোথাও পাওয়া গেলো না।
সানা আজ ভার্সিটিতে আসেনি।
– হঠাৎ কারো সামনে এসে মীরা থমকে দাঁড়ালো।
– কেবিন ক্রুজ মীরার পানে কেমন কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে।
এ তাকানোর ভঙ্গি মীরা কে অনেক কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কেবিন ক্রুজ কে মীরার কাছে প্রথম থেকেই কেনো জানি খুব সন্দেহ লাগছে।
আজ পুরোপুরি ভাবেই মনে হচ্ছে কেবিন ক্রুজ খুব একটা সুবিধাজনক নয়।
মীরার কেমন যেনো ভয় হতে লাগলো।
– কেবিন ক্রুজ মীরার পানে আস্তে করে এগুচ্ছে আর মীরা একটু একটু পিছচ্ছে।
হঠাৎ মীরার পিঠ দেয়ালে লেগে থেমে গেল।
– কেবিন ক্রুজ উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে ইংলিশে বললো, মীরা তুমি কি আমায় ভয় পাচ্ছো?
– মীরা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো ক্রুজ মীরার একদম গাঘেঁষা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মীরা ক্রুজের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো ক্রুজের চোখ কিছু একটা মীরা কে ইশারা করছে।
মীরা ক্রুজ থেকে সরে দাঁড়ালো এবং স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো নাহ, আমি কেন ই বা আপনাকে ভয় পেতে যাবো।
– ক্রুজ মীরার দিকে কেমন নেশা ভরা আকুতি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
ক্রুজ হঠাৎ মীরার কানে ফিসফিসিয়ে বললো, সত্যি তো ভয় পাচ্ছো না তো?
– মীরা ক্রুজের দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়লো এবং লম্বা একটা ঢোক গিললো ।
– ক্রুজ মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো তাহলে চলো তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় ঘুরতে যাবো।
– ক্রুজের কথা শুনে মীরার ভয় হতে লাগলো। ক্রুজ কে কেমন যেনো আজ বড্ড বেশি অচেনা মনে হচ্ছে মীরার কাছে।
ক্রুজ সামনে এগিয়ে আবার মীরার কাছে ফিরে আসলো।
মীরার হাত ধরে নিজের গাড়িতে নিয়ে বসালো।
– এদিকে এ-ই দৃশ্য দেখে কেউ রাগে কটমট করে ফুলতে শুরু করলো।
– মীরা ক্রুজের সাথে গাড়ির সামনের সিটে বসে আছে।
মীরার গলা টা শুকিয়ে আসছে ভয়ে।
মীরা কি করবে কিছুই যেনো বুঝতে পারছেনা।
– ক্রুজ মীরার কাছে এসে সিট বেল্ট বেঁধে দিতে দিতে কেমন যেনো রহস্যময় হাসি হাসলো।
ক্রুজ খুব স্পীডে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
– ভয়ে মীরা চোখ বন্ধ করে ফেললো।
মীরার কাছে এমনই মনে হচ্ছে যেনো মীরা আকাশে ভাসতে ভাসতে কোথাও যাচ্ছে।
গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে মীরা চোখ খুলে তাকালো।
চোখ মেলে তাকিয়ে মীরা ভীষণ অবাক হলো। এটা তো সেই প্যালেস টা যেটা মীরা এন্ড্রে মেথিসের সাথে করে সবাইসহ দেখতে এসেছিলো।
মীরা গাড়ি থেকে নেমে আরো বেশি চরম অবাক। তাঁর কারণ হলো, ঐদিন মীরা এই প্যালেসের উপরে দেখেছিলো দু’টো বাদুড়ের মূর্তি সংরক্ষিত।
কিন্তু আজ তো তা দেখছে না, আজ মীরা দেখছে প্যালেসের উপরে বড়ো করে একটা কুকুরের ন্যায় মূর্তি রাখা। মূর্তিটার চোখগুলো ভীষণ লাল দেখাচ্ছিলো।
ভয় পেয়ে মীরা ঢোক গিললো।
ক্রুজ মীরার সামনে এসে বললো চলো তোমাকে ভেতরে নিয়ে যা-ই।
– মীরা ক্রুজের দিকে তাকিয়ে বললো, স্যার আমি একবার গিয়েছি।
– ক্রুজ মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো, তা তো জানি কিন্তু ঐ দিন তো আর আমি তোমাকে নিয়ে যাইনি।
চলো গিয়ে দেখো তোমার ভালো লাগবে।
____________________
মীরাও আর কথা না বাড়িয়ে প্যালেস টার ভেতর প্রবেশ করলো।
ভেতরে গিয়ে চরম এক ঝটকা খেলো।
তাঁর কারণ ঐ দিন মীরা যেমন টা দেখেছিলো প্যালেস টা এখন আর তেমন নেই।
মীরার মনে আছে এখনো ছবিগুলো মীরা কোথায় কোথায় দেখেছিলো।
মীরা দৌঁড়ে সেই জায়গায় গেলো যেখানে কালো হুডি পরিহিত দু’টো অর্ধ মানবের ছবি ছিলো।
মুহুর্তেই মীরা অবাক হলো ছবি দু’টো আর নেই সেখানে।
কিন্তু শুধু মেয়ে ভ্যাম্পায়ার টার ছবি রাখা। মীরা পুরুষ ভ্যাম্পায়ারের ছবিটা খুঁজে দেখলো কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।
মীরা আবার দৌঁড়ে গিয়ে থেমে গেলো সেই রাজা- রানীর ছবিটার জায়গায় গিয়ে।
মীরা কে কেনো জানি এক চাপা কষ্ট এসে ঘিরে ফেললো কারণ ঐ ছবিটাও আর নেই।
ওখানে একটা কুকুরের মতো হিংস্র প্রাণীর ছবি রাখা।
রাজা- রানীর ছবিগুলো না দেখতে পেয়ে মীরার যেমন খারাপ লাগলো ঠিক তেমনি হিংস্র প্রানীটা কে দেখে মীরার গা ঘুলিয়ে আসলো।
মীরার হঠাৎ কেমন জানি লাগছে, তাই মীরা আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে ক্রুজ কে বলে বাসায় চলে আসলো।
_________________
মীরা রুমে বসে বসে সেই রাজা -রানী আর পুরুষ ভ্যাম্পায়ার টার ছবি নিয়ে ভাবছে। আরো ভাবছে মেয়ে ভ্যাম্পায়ার টার ছবিটাই বা রেখেছে কেনো তাঁর মানে এখানেও কোন ঘোর লাগা রহস্য লুকায়িত আছে।
হঠাৎ মীরার শরীর টা কেমন জানি লাগছে।
সান্ড্রা দরজার বাহির থেকে মীরা কে দেখছে আর চোখের জল ফেলছে।
– মীরা মনে মনে ভাবছে হয়তো আজ জ্বর আসবে।
শরীর টা কেমন যেনো গরম গরম লাগছে।
মীরা তাই আর দেরি না করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে শুয়ে পরলো।
– দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে।
মীরার শরীরের অবস্থা খুব গুরুতর খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে।
হঠাৎ মীরা উঠে বসলো।
মীরার দাঁত কেমন গিজগিজ করছে, শরীর টা মেজমেজ করছে, কপালের রগ ফুলে উঠেছে, চুলগুলো নিজের হাত দিয়ে এলোমেলো করে ফেলছে।
এমন অস্থিরতা মীরার আগে তেমন হয়নি।
হঠাৎ মীরার মনে পরলো গতরাতে ভ্যাম্পায়ারের বলা কথাগুলো।
হঠাৎ মীরা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
নিজেকে নিজে দেখে আঁতকে উঠল।
এ কি দেখছে নিজেকে মীরা যেনো নিজের চোখ দুটিকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
মীরার দু’চোখ লাল বর্ন ধারণ করে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে, মীরার চোয়ালের দু’পাশে দু’টো তীক্ষ্ণ দাঁত বের হয়েছে, কপালের রগ ফুলে উঠেছে , নিজের এই অবস্থা দেখে মীরা নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে লাগলো।
হঠাৎ মীরার শরীরে এক অদ্ভুত অনূভুতির সৃষ্টি হলো।
মীরার শক্তি যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।
মীরা হাত দিয়ে জোরে আঘাত করলো আয়নায় । মুহুর্তেই আয়না টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ফ্লোরে পড়তে লাগলো।
মীরার হাত কেটে গড়গড় করে রক্ত বের হতে লাগলো।
– মীরার রক্ত গুলোর দিকে বেশ মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইলো।
মীরার গলা টা কেমন শুকিয়ে আসছে, ইচ্ছে হচ্ছে পৃথিবীর সব পানি পান করে হলেও এই তৃষ্ণা মেটাতে।
মীরা তৃষ্ণায় এতোটাই কাতর ছিলো যে, সব ভুলে নিজের হাতের রক্ত গুলো চুষে খেতে লাগলো।
রক্তের স্বাদ মীরার কাছে আজ অমৃতের মতো লাগছে।
-নিজের রক্ত খেয়ে মীরার তৃষ্ণা যেনো আরো বেশি বেড়ে গেছে।
মীরা রুমের সবকিছু ভেঙে ছুড় মা’র করে দিচ্ছে আর রক্ত খুঁজে বেড়াচ্ছে।
– হঠাৎ মীরা কাউকে দেখে রহস্যময় হাসি হাসলো।
সান্ড্রার কাছে এগিয়ে গেলো।
ফ্লোরের কাঁচের টুকরো গুলোর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা কাঁচের টুকরো তুলে সান্ড্রার হাতে কাঁচের টুকরো টা দিয়ে একটান মারলো।
মূহুর্তেই সান্ড্রার হাত থেকে গড়গড় করে রক্ত বের হতে শুরু করলো ।
#চলবে——-
বিদ্রঃ আজকের পর্ব খুব চিন্তা করে লিখতে হয়েছে, আমার তো এমনই মনে হচ্ছিল আজ আমি নিজেই মীরা🙄🙄