ঋণশোধ পর্ব ১

” “যাও টয়লেট পরিস্কার করো”
কথাটা শুনে অথৈ অবাক হয়ে চমকে তাকালো।

ডিসেম্বরের আজ প্রথম শুক্রবার। প্রতি শুক্রবারই কোনো না কোনো নতুন দম্পতি তাদের সংসার শুরু করে। এই শুক্রবারটাও তার ব্যাতিক্রম নয়। এই শুক্রবারেও এক নব দম্পতির বিবাহ হয়েছে। সব তোড়জোড় শেষে যখন বাসর ঘরে পাঠানো হলো তখন বরবেশে আবেগ রুমে ঢুকেই প্রথম যে কথা টা বললো সেটা ছিলো, “যাও টয়লেট পরিস্কার করো”

বাসর ঘরে কোনো বউকে তার বর যে টয়লেট পরিস্কার এর কথা বলবে এটা কোনো বউ ই কল্পনায় আনবে না। অথৈএর অবাক চাওনি দেখে আবেগ বুঝতে পেরে বললো,
“ওভাবে তাকানোর কি আছে? যা বলছি সেটা করো।”

“বাসররাতে নতুন বউ টয়লেট পরিস্কার করে শুনেছেন কোথাও?”

“শুনে তারপর করতে হবে?”

“জানি না আমি”

“জানলে জানো, না জানলে না জানো তাতে আমার দরকার নেই। আমার দরকার একটা পরিস্কার টয়লেটের, যাও এক্ষুনি পরিস্কার করো”

“ছিঃ ইয়াক! আমি পারবো না, আপনার টয়লেট আপনি পরিস্কার করুন। আর না পারলে অন্যকাউকে দিয়ে করান। আমি পারবো না.. আমি আপনার টয়লেট পরিস্কার করতে আসিনি”।

অথৈ বাসর ঘরের বিছানায় বসে ছিলো আর আবেগ ঘরে এসেই রুমের দরজা আটকে এই কথা টা বললো। কাজেই কথাগুলো আবেগ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলছিলো। যখন অথৈ বললো ও টয়লেট পরিস্কার করতে আসেনি। তখন আবেগ ওকে বিছানা থেকে টেনে নামায়..। জোরে হাত ধরে টানতে টানতে বাথরুমের দিকে নিতে নিতে বললো, “আমি তো তোমাকে আমার কাজ করতে ই এনেছি”।

এটা বলে ওকে বাথরুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো। আর চেঁচিয়ে বললো পরিস্কার না করা অব্দি ওকে বাথরুমের ভিতর থেকে বের হতে দিবে না। অথৈ জোরে জোরে কয়েকবার দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলো। আবেগ কে দরজা খুলে দিতে বললো। কিন্তু আবেগ সেটার পাত্তা না দিয়ে বিছানায় শুয়ে মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে লাগলো।

অথৈএর একটু সমস্যা আছে। বাথরুম বা টয়লেট পরিস্কার এর বিষয় এ ওর এলার্জি। সুতরাং ওকে বাথরুমে আটকে রাখায় ও সেখানেই বেহুশ হয়ে গেলো। আবেগ ভেবেছিলো এক দুই ঘন্টা পর দরজা খুলে দিবে। কিন্তু ও দরজা খুলে দিলেও অথৈ সেখান থেকে বের হয়না। আর বের যে হচ্ছে না।
সেটা দেখার আর সুযোগ হয়না কারণ তার আগেই ও ঘুমিয়ে যায়।

হঠাৎ করে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল তখন চারপাশে তাকিয়ে দেখলো কোথাও অথৈ নেই। তখন উঠে বাথরুমে গিয়ে দেখলো ও বেহুশ হয়ে পরে আছে। তারাতাড়ি ওকে তুলে নিয়ে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলো। জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো। যদিও ওর জানা ছিলো অথৈএর ফোবিয়া আছে কিন্তু ও আশা করে নি এতখানি হবে। তাই বাধ্য হয়ে অত রাতে ডাক্তার ডাকতে হলো।

ডাক্তার এসে চেক করে ইঞ্জেকশন দিয়ে জানালো ভয় পেয়ে বেহুশ হয়ে গেছে। আর সারাদিনের ধকলে শরীরও দুর্বল ছিলো। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। ডক্টর চলে গেলে আবেগের মা আবেগের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ডক্টর ডাকার জন্য বাসায় সবাই জেগে গিয়েছে।

আবেগের মা ছেলের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন তার ছেলে কি করতে চাইছে। কেনো এই মেয়েকে বিয়ে করেছে আর কেনোই বা এমন করছে। মেয়েটা যে এমনি এমনি বেহুশ হয়ে যায় নি এটা উনি বেশ বুঝতে পারছিলেন। আবেগও যেনো তার মায়ের দৃষ্টি বুঝে ফেললো তাই কৈফিয়ত দিয়েই বললো,
“আমি কিছু করিনি মা, কিভাবে বেহুশ হয়েছে জানিনা। আমি তো ঘুমে ছিলাম।”
আবেগের মা মনোয়ারা বেগম ছেলের কথা যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে গেলেন। উনি এই মেয়েকে ঠিক পছন্দ করতে পারছিলেন না। এই সেই মেয়ে যার জন্য ওনার ছেলের জীবন টা বরবাদ হয়ে গেছে।

সকালে অথৈএর ঘুম ভাঙলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা অনুভব করে। বিছানা থেকে শরীর তুলতেই যেন ওর যুদ্ধ করতে হলো। তারউপর বিয়ের ভারি ড্রেস।
অথৈ মনে মনে ভাবছে এমন মাথা ব্যাথা তো ওর কখনো হয়না হঠাৎ আজকে কেনো হচ্ছে। আর জায়গাটাও অচেনা। তারপর আস্তে আস্তে মনে পড়লো সব। মনে পড়লো গতরাতে ওর বিয়ে হয়েছে। তারপর মনে পড়লো গতরাতের আবেগের করা কাজের কথা, আর মনে পড়তেই গা গুলিয়ে উঠলো।

মনে পড়লো তখন পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে বলে এমন লাগছে। সব কিছু ভেবে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ও বিয়ে করতে চায়নি.. জোর করে দিয়েছে। আর কত ভালো ভালো কথা বলেছে বলে ওকে ফাঁদে ফেলে বিয়েটা দিয়েছে। ওর বড় বোন কি সুন্দর কাহিনি করে বলেছে,
” বিয়ের পর একজন ভালো বন্ধু পাবি, জীবনসঙ্গী পাবি। দেখবি এখনকার জীবনের চেয়ে তখনকার জীবন টা বেশি সুন্দর হবে”।
এসব মনে করে ওর মেজাজ আরও খারাপ হলো মনে মনে বললো,
“ছাই হবে! কোনো মেয়ের স্বামী কি তাকে বিয়ের রাতে এভাবে টয়লেট পরিস্কার করতে বলে নাকি, প্রথম দিন ই এই অবস্থা এরপর না জানি কি দশা হবে”। এসব ভাবনার মধ্যে ই খুট করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো..

অথৈয়ের ভাবনার ঘোর কাটলে তাকিয়ে দেখে আবেগ রুমে ঢুকেছে। মনে মনে অথৈ আবেগকে একটা গালি দিলো। আবেগ ওর দিকেই এগিয়ে এসে বিছানায় ওর পাশে বসলো। আর দরজা থেকে বিছানা অব্দি আসার সময় অব্দি অথৈয়ের দিকে তাকিয়েই ছিলো। অথৈয়ের দৃষ্টিও আবেগের দিকে নিবদ্ধ ছিল পাশে বসেই চোখে চোখ রেখে কঠিন দৃষ্টিতে বলে উঠলো, ” টয়লেট পরিস্কার করতে বলেছিলাম সেটা না করে ঘুমিয়ে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার নাটক করেছো”

কথা টা শুনে অথৈ আবার অবাক হয়ে গেলো। ও কিছু বুঝতে পারছিলো না। কি মতলব এই লোকটার, কেনো বিয়ে করে এনেছে ওকে। ওর আপু ছেলেটার সম্পর্কে যা যা বলেছে তার বিন্দুমাত্রও ও ছেলেটার মধ্যে দেখতে পাচ্ছে না।
ওর আপু বলেছিলো ছেলেটা ওকে ভালোবাসে.। কিন্তু ছেলেটার চাওনিতে স্পষ্ট ঘৃণা প্রকাশ পাচ্ছে.।
আর তার প্রয়োগও ওর উপরে করে ফেলেছে অলরেডি।

অথৈ কোনো ভনিতা না করে সরাসরি প্রশ্ন করলো,

“আপনি কি চাইছেন বলুন তো! আমার ফ্যামিলিকে বুঝিয়েছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আর আপনার ভালোবাসার গভীরতা দেখে আমার মা- বোন আমার পিছনে উঠে পড়ে
লেগে আপনার সাথে আমার বিয়েটা দিলো। আর বিয়ে করে এনে সেদিনই আপনি আমাকে বলছেন টয়লেট পরিস্কার করতে..। টয়লেট পরেও পরিস্কার করতে পারবেন আগে আমাকে পরিস্কার বলুন তো এত কাহিনি করেছেন কেনো? এত নাটক করে আমাকে বিয়ে টা করলেন কেনো!। যেই বাবা আমাকে কিছু বলে না কোনো কিছু তে জোর করে না, সে পর্যন্ত এসে আমাকে বলেছে যেন আমি আপনাকে বিয়ে টা করি। ওদের কথা শুনে আমিও ভেবেছিলাম হয়তো সত্যিই বলছে। আমার বাবা কখনও মানুষ চিনতে ভুল করেন না। কিন্তু আপনি তো দেখছি পাক্কা অভিনেতা। আমার বিচক্ষণ বাবাকে অব্দি ঘোল খাইছে ছেড়েছেন।”

অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ হেসে দিলো.. বললো,

“নিজেই ভাবো না, কি এমন পাপ করেছ। যার ফল এখন আমার বউ হয়ে ভোগ করতে হবে”
কথা টা বলেই উঠে রুম থেকে চলে গেলো।

চলবে

#ঋনশোধ
পর্ব ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here