যে গল্পের নাম ছিলো না পর্ব ২৪+২৫

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা

– Farhina Jannat

২৪.
সদর দরজার দিকে ছুটে গেল রাইয়্যান। যেভাবে লাগিয়ে রেখেছি, সেভাবেই তো আছে! আর ও বাইরে কিভাবে যাবে, ওর কাছে তো চাবিই নেই। খালার কাছে যে চাবিটা থাকে, সেটা পেয়ে যায়নি তো কোনভাবে? কথাটা মনে হতেই খালার ঘরের দিকে ছুটল রাইয়্যান। দরজাটা ঠেলতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ভেতর থেকে দরজা আটকানো, তার মানে সিদ্রা এখানেই আছে। প্রথমে আস্তে আস্তে আর তারপর জোরে জোরে নক করেও ভেতর থেকে কোন সাড়া না পেয়ে দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো রাইয়্যান।

ভয়াবহ আতংক পেয়ে বসলো ওকে। কয়েক মাস আগের সেই দিনটার যেন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, আতংকে শরীর অবশ হয়ে আসতে চাইলো ওর। চোখের সামনে যেন ফাস্ট ফরোয়ার্ড হয়ে গেল সবকিছু, দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখতে পাচ্ছে বিছানায় পড়ে আছে সিদ্রার নিথর ঠান্ডা মৃতদেহ!

না…………হৃদয়বিদারক একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো রাইয়্যানের বুক চিরে। পা দুটো যেন থেকেও নাই হয়ে গেলো, বসে পড়লো ও দরজার সামনে। চোখের সামনে থেকে সিদ্রার মৃতদেহের দৃশ্যটা কিছুতেই সরছেনা। দুচোখ বুজে পাগলের মতো না না করতে লাগলো রাইয়্যান। কিছুক্ষণ সময় লাগলো ওর ধাতস্থ হতে। দরজার ওপারে যাই থাকুক, সত্যের মুখোমুখি তো এক সময় না এক সময় হতেই হবে। বরং তাড়াতাড়ি করলে হয়তো বাঁচানোর একটা সুযোগ পাওয়া যাবে, এই চিন্তাই শক্তি যোগাল ওকে। কাঁধ দিয়ে জোরে জোরে ধাক্কা মারতে লাগলো ও দরজার গায়ে। এক পর্যায়ে ছিটকিনির স্ক্রু আর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ক্ষান্ত দিল, খুলে পড়ে গেল নিচে আর সাথে খুলে গেল দরজাটাও।

দিশেহারা রাইয়্যান বিদ্যুৎবেগে ঘরে প্রবেশ করলো। আলো জ্বেলে সামনে তাকাতেই জমে গেলো ও। বিছানা ফাঁকা, বাথরুমের সামনে পড়ে আছে সিদ্রা, চোখ দুটো বোজা। তবে কি আমার আশংকাই ঠিক হল? ধক করে উঠলো বুকের ভেতরটা, হৃৎপিন্ডটা যেন লাফ দিয়ে চলে এলো গলার কাছে। কোনমতে সাহস আর শক্তি সঞ্চয় করে টলতে টলতে সিদ্রার কাছে পৌঁছল ও। থরথর কম্পমান হাতটা সিদ্রার হাতে ছোঁয়াতেই যেন আগুনের উত্তাপ টের পেল রাইয়্যান।

আর সেই মুহূর্তে, ঠিক সেই মুহূর্তে রাইয়্যানের ভেতরে কি যেন ঘটে গেল। নিদারুণ এক প্রলয়ে ওলটপালট হয়ে গেলো ওর সমস্ত সত্তা। সিদ্রার জ্বরের প্রকোপে জ্ঞান হারানো তপ্ত দেহটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো রাইয়্যান। দেহমনে ছড়িয়ে পড়া অচেনা অনুভূতি জানান দিল ওকে, ওর জীবনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক দুর্বলতা, যার নাম সিদ্রাতুল মুনতাহা। অনুভব করলো, কিছুদিন আগে পর্যন্ত যাকে সবথেকে বেশি ঘৃণা করতো, আজ পৃথিবীর সকল কিছুর বিনিময়েও তাকে হারাতে চায়না ও।

সিদ্রার শরীরের তাপ যখন সহ্য করা অসম্ভব হয়ে উঠলো, তখন সম্বিত ফিরল রাইয়্যানের। তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল সিদ্রাকে। মগে করে পানি এনে অবিরাম ছিটাতে থাকলো মুখে, যতক্ষণ না সিদ্রার চোখের পাঁপড়ি নড়ে উঠলো।

চোখ মেলল সিদ্রা, আধাখোলা চোখে ঘোরলাগা দৃষ্টি। মুখ দিয়ে কেমন একটা আওয়াজ করলো, ঠিক বুঝতে পারলোনা রাইয়্যান। নিজের ওপর চরম রাগ উঠলো ওর, খালা সাবধান করে দেবার পরেও এভাবে মরার মত ঘুমানোর জন্য। মাথা যেন কাজ করছেনা ওর, কি করবে না করবে কিছু বুঝতে পারছেনা। তখনি ওর চোখ পড়লো সিদ্রা খালাকে যেসব দিয়ে জলপট্টি দিয়েছিলো, সেসবের ওপর। সাথে সাথে উঠে গিয়ে পানিটা বদলে আনলো ও।

বুঝতে পারলো, এত জ্বর যখন, শুধু কপালে জলপটি দিয়ে কাজ হবেনা। প্রথমে ভাল করে মুখ, গলা আর ঘাড় মুছিয়ে দিল। তারপর হাত উঠাতেই দেখল সিদ্রার জামার হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য অজু করতে গিয়েছিল। আশ্চর্য মেয়ে, এই শরীরেও তাহাজ্জুদ পড়তে হবে ওকে! অজু করে বাথরুম থেকে বের হতে গিয়েই জ্ঞান হারিয়েছে, বুঝলো রাইয়্যান। হাত, পা মুছে দেয়ার পর কপালে জলপট্টি রেখে সিদ্রার ঘরে গিয়ে থার্মোমিটার আর ঔষধ নিয়ে এলো।

মেপে দেখল জ্বর ১০২ এরও উপরে! ইশ!! কখন থেকে জানি জ্বরে পুড়ছে মেয়েটা!!! জলপট্টিটা পালটে দিয়ে রান্নাঘরে দৌড়াল রাইয়্যান। স্যুপ রান্না করে নিয়ে এলো সিদ্রার জন্য। এদিকে সিদ্রার কোন হুঁশ নেই, বিড়বিড় করে কিসব বলে যাচ্ছে। এর ভেতরেই কয়েক চামচ স্যুপ খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিল রাইয়্যান ওকে। তারপর বেডসাইড টেবিলটা কাছে টেনে বসে সিদ্রার কপালে জলপট্টি দেয়া শুরু করল। প্রায় আধঘণ্টা পর আবার মেপে দেখল জ্বর একটুও কমেনি। চিন্তায় পড়ে গেল ও, বুবুকে ফোন দিবে কিনা ভাবল একবার। তখনই খাটের পাশে রাখা বালতিটা চোখে পড়লো, সাথে সাথে মাথায় পানি ঢালার কথা মনে হল রাইয়্যানের।

যেই ভাবা সেই কাজ, প্রথমে সিদ্রাকে ধরে বিছানার কিনারে আনলো। এরপর বালতিতে করে পানি এনে মাথায় ঢালা শুরু করলো। ততক্ষণে সিদ্রা প্রলাপ বকতে শুরু করেছে। কিছু বোঝা যাচ্ছে, কিছু যাচ্ছেনা। কয়েকবার আম্মু আর মুনিরাকে ডাকতে শুনল রাইয়্যান। চোখের কোণ বেয়ে দুফোটা পানিও গড়িয়ে পড়লো। আলতো হাতে পানিটুকু মুছে তপ্ত কপালটাতে ভেজা হাত রাখলো রাইয়্যান। প্রায় সাথে সাথে কাতরে উঠলো সিদ্রা, “আম্মু, শীত করছে”, আর তারপরেই হু হু করে কাঁপতে লাগলো সিদ্রা। সাথে সাথে রাইয়্যান উঠে কম্বলটা ভাল করে ওর গায়ে জড়িয়ে দিল।

কম্বলের নিচ থেকে বেরোনো লাঠিটার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো রাইয়্যান। খালা কি বিছানায় লাঠি নিয়ে ঘুমায় নাকি! আর এই মেয়ে কেন মাঝরাতে নিজের ঘর ছেড়ে খালার ঘরে আসতে গেলো, সেটাও তো বুঝতে পারছিনা। যাকগে, আগে তো জ্বরটা কমুক, তখন না হয় জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়া যাবে। আপাতত পানি ঢালা বন্ধ করে মাথাটা ভাল করে মুছিয়ে দিয়ে সোজা করে দিলো ওকে রাইয়্যান।

তাপ একটু কমেছে, আবার কপালে জলপট্টি দেয়া শুরু করলো রাইয়্যান আর সেইসাথে নিজের বোকামোর কথা ভেবে হাসি পেলো ওর। আমি কি ভেবে চিন্তা করলাম যে, ও সুইসাইড করবে! অসুস্থ মানুষ, জ্ঞান হারাতেই পারে, এই সহজ সম্ভাবনাটা মাথায় এলোনা আমার!! সত্যি, মানুষ ভয় আর আতংকে যে কতদূর পর্যন্ত ভেবে ফেলতে পারে, আজকে উপলব্ধি করলাম!!!

তখনো প্রলাপ বকছে সিদ্রা, সবসময় যেসব চিন্তা ঘোরে ওর মাথায় সেগুলোই এখন প্রলাপ হয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই কথাগুলো একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলো রাইয়্যান, আর সেগুলোই টনক নড়িয়ে দিল ওর।

***
নিজের ঘরে পায়চারী করছে রাইয়্যান, গভীর চিন্তায় মগ্ন ও।

“মুনিরা, তুই কি করলি এটা?”
“মুনিরা রে, তুই বোন হয়ে এমন করতে পারলি”
“মুনিরা, তুই এমন কেন করলি?”
“আল্লাহ্‌, মুনিরা বুঝতে পারেনি আল্লাহ্‌, ওকে ক্ষমা করে দাও তুমি আল্লাহ্‌”

অনেক কিছুর মধ্যে এই কয়েকটা কথা বারবার নানা রকম ভাবে বলছিল সিদ্রা। ওর বোন হয়তো খারাপ কিছ করেছে যেটার কথা মনে পড়ছে ওর, অথবা এগুলো শুধুই জ্বরের প্রলাপ, এমনটাই ভাবছিল রাইয়্যান। কিন্তু বারবার একই কথা শুনতে শুনতে ওর মনে পড়ে সিদ্রার আগেরবারের জ্বরের কথা। তখনও তো ও অনেক প্রলাপ বকেছে, কিন্তু এসব তো বলতে শুনিনি।

মনকে মানাতে না পেরে হাসাপাতালে ছুটে যায় ও। খালাকে জিজ্ঞেস করে, ওই সময় এমন কিছু বলতে খালা শুনেছে কিনা। খালাও যখন বলে যে এমন কিছু শুনেনি, সন্দেহ ঘনীভূত হয় ওর।
হঠাৎ করে মুনিরাকে নিয়ে প্রলাপ বকার কারণ কি? সেটা কি আমি ওকে মুনিরাকে নিয়ে ভয় দেখাচ্ছি বলে? সেই মানসিক চাপ থেকেই কি? নাহ! তাহলে ও এসব কেন বলবে!! নিশ্চয় কোন রহস্য আছে এর পেছনে। সেটা কি হতে পারে? নতুন কিছু কি ঘটেছে এর মধ্যে, যেটা আমার চোখ এড়িয়ে গেছে?

ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ বিদ্যুতচমকের মত বন্ধুর বিয়ের দিন ফেলে যাওয়া চাবি নিতে এসে সিদ্রার মন্থর গতি আর বুকফাটা কান্নার কথা মনে পড়ে গেল রাইয়্যানের। তবে কি সেদিন ঘরে ঢুকেছিল সিদ্রা? ওই ফাইলটা তো টেবিলের উপরেই রাখা ছিল, সেটা কি দেখেছিল ও? নিজের কুকীর্তির প্রমাণ দেখতে পেয়েই কি ওভাবে কাঁদছিল? নাকি………? চমকে উঠলো রাইয়্যান, পরিষ্কার হয়ে গেছে সব ধোঁয়াশা, বুঝে গেছে আসল রহস্যটা কি!

সমস্ত ভাবনা এবার চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো রাইয়্যানের মাথায়। আমি যতবার ওকে একিউজ করেছি সবসময় কঠোর প্রতিবাদ করেছে, বলেছে ও কিছু করেনি, ও কিছু জানেনা। আর ওই চ্যাট হিস্ট্রি পড়ে আমার যে ধারণা হয়েছিল ওর সম্পর্কে, তার সাথে এতগুলো দিন ধরে কোন মিলই খুঁজে পাইনি আমি। এমনটা তো হতেই পারে, অন্য কেউ করেছে কাজটা অথচ ওর নাম দিয়েছে? হ্যাঁ, এই সম্ভাবনার কথা বহু আগেই মাথায় এসেছে আমার, কিন্তু সেটা ধোপে টিকেনি ছবিগুলোর জন্য।

সিদ্রার ছবিগুলো না পেলে ওর ব্যবহারে হয়তো বহু আগেই কনভিন্স হয়ে যেতাম যে ও নির্দোষ। কিন্তু এখন যদি সেই অন্য কেউ এর যায়গার মুনিরাকে বসানো যায়, তাহলেই তো দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে যায়। ইয়েস! দু আঙুলে তুড়ি বাজালো রাইয়্যান। মুনিরার পক্ষেই তো সম্ভব, নিজের দোষ অনায়াসে বোনের ঘাড়ে চাপানো। ওই বদমাশ মেয়ে সিদ্রার নামের সাথে ওর ছবিগুলোও ব্যবহার করেছে। হ্যাঁ, শুধু তাহলেই মিলছে সকল ধাঁধাঁ, পাওয়া যাচ্ছে সকল রহস্যের সমাধান!

সিদ্রা নির্দোষ! রাইয়্যানের মনে হল এক অনাবিল আনন্দের স্রোত এসে ভরিয়ে দিল ওর মনটা। দিনে দিনে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে সিদ্রাকে দোষী ভাবতে আর কষ্ট দিতে ওর নিজেরই প্রচণ্ড খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। শুধু মৃত ভাইয়ের কাছে করা প্রতিজ্ঞার জন্য মনের আরেকটা দিককে জোর করে এতদিন ইগ্নোর করেছে ও, যেটা আজ এই কিছুক্ষণ আগে ধরা পড়ে গেছে ওর নিজের কাছে। এবার সব বাঁধ যেন ভেঙে গেল, ছুটে গেল ও সিদ্রার কাছে।

ঘুমন্ত সিদ্রার নিস্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে ধপ করে কার্পেটের উপর বসে পড়ল রাইয়্যান। আমি এতবড় ভুল করলাম! তোমার মত একটা মেয়েকে এতদিন ধরে বিনাদোষে এত কষ্ট দিলাম। ছিঃ এই নাকি আমি সফল ব্যবসায়ী! ব্যবসার নির্ভুল ডিসিশন নিতে নিতে এতবড় একটা ভুল ডিসিশন নিয়ে ফেললাম!! একটা মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে ফেললাম আমি!! কিন্তু এসবই তো সিদ্রার প্রলাপের উপর ভিত্তি করে করা প্রেডিকশন। যদিও সমগ্র সত্তা চিৎকার করে বলছে, আজকের এই প্রেডিকশন একশত ভাগ নির্ভুল। তবু, তবুও এবার আর কোন ভুল করবোনা আমি। আর ধারণা নয়, এবার নিশ্চিত হতে হবে আমাকে। কিন্তু সেটা কিভাবে করবো সেটা নিয়েই ভাবতে হবে এখন, দৃঢ় মুখে উঠে দাঁড়াল রাইয়্যান।
#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা

– Farhina Jannat

২৫.
সিদ্রার পছন্দের ইজিচেয়ারটাতে শুয়ে আছে মুনিরা। বুকের ভেতরটা কান্নায় হুহু করছে, মাঝে মাঝে অবাধ্য কিছু ফোটা চোখ দিয়ে বাইরেও বেরিয়ে আসছে, সাথে সাথে মুছে ফেলছে ও। সিদ্রার জন্য ভেবে ভেবে এভাবেই প্রতিদিন চোখের পানি ফেলে মুনিরা। সিদ্রাকে যে ও এতো ভালবাসে, সিদ্রা নিখোঁজ না হলে হয়তো কোনদিন বুঝতেও পারতোনা।

নিজাম সাহেব আদর করে দুই জমজ মেয়ের নাম রেখেছিলেন সিদ্রাতুল মুনতাহা আর সিরাজাম মুনিরা। জমজ হলে কি হবে, ছোটবেলা থেকেই সিদ্রা আর মুনিরা যেন উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু। আর বড় হওয়ার সাথে সাথে এই পার্থক্য শুধুই বেড়েছে। মুনিরা সদা প্রাণোচ্ছল, চঞ্চল, চটপটে, যাকে বলে এক্সট্রোভার্ট আর সিদ্রা ঠিক তার উল্টো। অতিরিক্ত শান্তশিষ্ট আর এতো বেশি ভদ্র বলে সিদ্রার ওপর প্রচণ্ড বিরক্তবোধ করে মুনিরা। ওর কাছে সিদ্রা একদম মরা মরা, ছিঁচকাঁদুনে টাইপ মেয়ে।

“দারুণ একটা মুভি ডাউনলোড করেছি, দেখবি আমার সাথে?” “নারে, আমি এখন বই পড়বো!”;
“জানিস আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে না……… ” “থাক, আর বলতে হবেনা, গীবত করা ভালো না মুনিরা!”;
“আয় দুজনে কয়টা সেলফি তুলি” “অপ্রয়োজনে এত ছবি তুলতে হয়না, জানিস তো, তাও এমন করিস কেন তুই!”;

সবসময় এমনতরো উত্তর শুনতে কার না রাগ লাগে! তারওপর সারাক্ষণ কুরআন পড়, হাদীস পড়, গান শুনিসনা, মুভি দেখিসনা, ফেসবুক না গুতিয়ে একটু ইসলামিক বই পড় এসব কানের কাছে রেডিওর মত বাজাতে থাকে। আরে বাবা, সকালে তো প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও তো পড়ছি সময়মত, ভোররাতে তাহাজ্জুদ না পড়লে কি হয় এমন! সিদ্রা ওর জীবনের একটা ঝামেলা, এমনটাই ভাবতো মুনিরা।

কিন্তু এ কয়দিনে হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছে, সিদ্রা ওর কাছে কতটা কি ছিল। এইতো সেদিন, মাথা ব্যথা করছিলো, অভ্যাসবশত বলেই ফেললো, “সিদ্রা, একটু কফি বানিয়ে দে না” তারপরেই মনে পড়লো, সিদ্রা তো নাই! নিজে উঠে কফি বানাতে গিয়ে বুঝতে পারলো, ও আসলে কফি বানাতে জানেইনা, কোনদিন দরকারই হয়নি, সিদ্রাই বানিয়ে দিয়েছে সবসময়। তারপর থেকে আর কফি খেতে ইচ্ছেই হয়নি ওর। এটা তো শুধু একটা উদাহরণ, এভাবেই প্রতি মুহূর্তে ও উপলব্ধি করছে সিদ্রার অভাব। ওয়ার্ডরোবে সিদ্রার জামাকাপড় আর আলমারিতে সিদ্রার বোরকা দেখলেই চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে ওর। রাতেরবেলা ঘুম আসেনা, বিছানার শূন্য পাশটা ওর দিকে তাকিয়ে যেন বিদ্রূপ করে। রাত কেটে যায় সেই শূন্য বিছানার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে, জানেনা কোথায় কিভাবে আছে ওর এত ভালো বোনটা।

একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে সিদ্রা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে। মাঝেমাঝেই সিদ্রাকে স্বপ্নে দেখে ও, ব্যথিত চোখে তাকিয়ে থাকে সিদ্রা ওর দিকে, চোখদুটো যেন বলতে চায় ও কোন বড় অন্যায় করেছে সিদ্রার সাথে। প্রথমদিন স্বপ্নটা দেখার পর ও ভেবে দেখেছে, আসলেই তো, সিদ্রার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করেছে, বিরক্ত হয়ে কথা বলেছে, কিন্তু সিদ্রা কোনদিন খারাপ ব্যবহার করেনি। এমনকি ও যে গান শুনে, মুভি দেখে, ছেলেদের সাথে কথা বলে, ভার্সিটিতে ছেলে ফ্রেন্ডও জুটিয়ে ফেলেছে, এসব আব্বু আম্মু জানলে ওর খবর করবে, তবু সিদ্রা কোনদিন বিচার দেয়নি ওর নামে, নিজেই সবসময় বোঝানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু সিদ্রার কোন কথার গুরুত্ব দিতোনা ও, প্রতিটা কথা এককান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিতো। অথচ এখন, সিদ্রা ওকে যা যা করতে বলতো আর যা যা করতে নিষেধ করতো, সব মেনে চলার চেষ্টা করছে মুনিরা। যেন সিদ্রাকে বলতে চাইছে, “দেখ, তুই যেমনটা চাইতি, আমি তেমনটা হয়ে গেছি, শুধু তুই ফিরে আয়”

যেই সিদ্রা ওকে প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য ডাকতো বলে ও বিরক্ত হতো, এখন তার ফিরে আসার জন্যই ও দোয়া করে প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ পড়ে। আল্লাহকে বলে, “শুধু একবার আমার বোনটাকে সহি-সালামতে ফিরিয়ে দাও, আমি ওর সাথে আর কোনদিন কোন দুর্ব্যবহার করবোনা” শুধু আব্বু আম্মুর সামনে স্ট্রং থাকার চেষ্টা করে মুনিরা, যাতে উনারা ওকে শক্ত থাকতে দেখে নিজেরাও কিছুটা সান্ত্বনা পান। এখানেও ওরা দুইবোন আলাদা, সিদ্রার মনের অবস্থা সহজেই ওর মুখে ফুটে উঠে, নিজের অভিব্যক্তি লুকাতে পারেনা ও। আর মুনিরা, ওর ভেতরে ভুমিকম্প-সিডর ঘটে গেলেও, ও না চাইলে কেউ বুঝতে পারবেনা।

এইতো কয়েক মাস আগে, একটা ছেলের সাথে মিথ্যামিথ্যি ফেসবুকে প্রেম করতে গিয়ে সত্যি সত্যি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যদিও ছেলেটা দুর্বল হয়েছিল ওর থেকে অনেক বেশি। সেই সিলেট থেকে ঢাকা চলে এসেছিল ওর সাথে দেখা করতে। তখনি টনক নড়ে ওর, ছেলেটা এত বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে, আর বেশিদূর এগোন যাবেনা। একেতো প্রেম করছে জানতে পারলেই আব্বু জ্যান্ত কবর দিবে তার ওপর এমন একটা ছেলে, যার মধ্যে নামটা বাদে মুসলমানের আর কোন চিহ্ন নেই। আব্বু আম্মু যতই ভালবাসুক ওকে, এমন একটা ছেলেকে জামাই হিসেবে কখনোই মেনে নিবেনা। তাই আস্তে আস্তে সরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ছেলেটা এত ডেস্পারেট হয়ে যায়, বাধ্য হয়ে সব যোগাযোগ অফ করে দেয় ও। ছয়মাস ধরে গড়ে ওঠা একটা সম্পর্ক, ভুলে যাওয়া কি চাট্টিখানি কথা! কম কষ্ট কি হয়েছে? প্রতিরাতে বালিশ ভিজিয়েছে ও। কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি ওর মনের অবস্থা, এমনকি পাশে শুয়ে থাকা সিদ্রাও না।

আর এখনো, সিদ্রার জন্য যে ওর কত কষ্ট হচ্ছে, কেউ বুঝতে পারেনা। কেউ দেখলে হয়তো ভাববে বোনের জন্য কোন চিন্তাই নেই ওর। কিন্তু ওকে স্ট্রং থাকতে হচ্ছে আব্বু-আম্মুর জন্য। সিদ্রা নিখোঁজ হবার পর থেকে ওদের বাসাটা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। হাসির আওয়াজ তো দূরের কথা, জোরে কথাও বলেনা কেউ। কাঁদতে কাঁদতে আম্মুর চোখের জল শুকিয়ে গেছে বহু আগেই। সারাদিন বসার ঘরে বসে সিদ্রার জন্য অপেক্ষা করা এখন তার একমাত্র কাজ। বাসার সকল কাজ এখন মুনিরাকে করতে হয়। রান্নাবান্না, ঘরের কাজ, এসবে কখনোই আগ্রহ ছিলোনা ওর। দুই বোন জমজ হলেও সিদ্রা ওর থেকে কয়েক মিনিটের বড়। তাই ছোট হওয়ার সুবিধাটা সারাজীবন কড়ায় গন্ডায় উপভোগ করেছে ও। সিদ্রাই সবসময় ঘরের কাজে আম্মুকে সাহায্য করতো, ওকে কিছু করতেই হয়নি কখনো। আর এখন করছে, যা পারছে। ওর আনাড়ি হাতের বিস্বাদ রান্না বিনাবাক্যব্যয়ে কয়েক লোকমা মুখে তুলে উঠে যায় আব্বু। আর আম্মুকে খাওয়ানো তো অসাধ্য ব্যাপার, চিন্তা করে আর না খেয়েদেয়ে শুকিয়ে কাঠি হয়ে গেছে একদম।

কিন্তু সিদ্রার হলটা কি! বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, হাসপাতাল, মর্গ, কোনকিছুই বাকি রাখা হয়নি ওকে খুঁজতে। কিন্তু এতদিন ধরেও পুলিশ কিছুই বের করতে পারেনি, অবশ্য ওরা যে আদৌ খুঁজে দেখেছে তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে। সিদ্রা যেদিন নিখোঁজ হল, সেদিন ডায়েরী করাতে গিয়ে আব্বুকে ওরা সিদ্রাকে নিয়ে এত বাজে কথা শুনিয়েছিল যে বাসায় আসার পর আব্বুর মাথায় পানি ঢালতে হয়েছিল, পুরো একটাদিন আব্বু বিছানায় শুয়ে চোখের পানি ফেলেছে। সিদ্রা নাকি কোন ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেছে, আরো রাজ্যের সব অকথ্য কথাবার্তা। তাও আব্বু কয়েকদিন পর পর থানায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসে, কিন্তু ওরা কোন আশার বাণী শোনাতে পারেনা। সিদ্রা যেন জাস্ট হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। বাড়িতে বসে থাকলে তো আর সংসার চলবেনা, রোবটের মত তাই প্রতিদিন অফিস করছে আব্বু।

মুনিরাও কয়েকদিন অনবরত কান্নাকাটির পর ভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছে, যদি তাতে একটু মানসিক চাপ কমে। কিন্তু যাওয়ার পরে আরো বেশি খারাপ লাগে, আম্মুর জন্য চিন্তা হয়, দু একটা ক্লাস করেই ফিরে আসে বেশিরভাগ দিন। সবথেকে বিরক্তিকর হল আত্মীয়স্বজনদের উথলে ওঠা দরদ! সবাই ফোন দেয়, কিন্তু সান্ত্বনা দিতে না, খোঁচা দিতে। সবাই ধরেই নিয়েছে, কারো সাথে প্রেম করে পালিয়েছে সিদ্রা। এমন একটা মেয়ে তলেতলে এতকিছু ঘটাবে, কেউ ভাবতেই পারেনি, আরো কত কি! বিরক্ত হয়ে মুনিরা সবার ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

ফোনের রিংটোন শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল মুনিরার। সেই সকাল থেকে শুরু করেছে এই নাম্বারটা। প্রথমবার রিসিভ করে ছেলের গলা শুনেই কেটে দিয়েছে, তাও করেই যাচ্ছে। আরে বাবা, রিসিভ করছিনা দেখে বুঝতে পারছিসনা যে আমি কথা বলতে চাচ্ছিনা। নাছোড়বান্দার মত লেগে আছে। কিন্তু এতবার করে ফোন করছে, যদি কোন ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার হয়। আচ্ছা আরেকবার ধরে দেখি।

“আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?”

“ওয়ালাইকুমুসসালাম। আপনি কি সিরাজাম মুনিরা বলছেন?”

“আপনি কে বলছেন?”

“আমার পরিচয় দেয়ার আগে আমি ঠিক মানুষের কাছে পরিচয় দিচ্ছি কিনা সেটা আমাকে জানতে হবে”

“সেটা তো আমার ক্ষেত্রেও খাটে, তাইনা?”

“আচ্ছা আমি ধরে নিচ্ছি আপনিই সিরাজাম মুনিরা। কারণ এটা উনারই নাম্বার”

“আপনি কে না বললে কিন্তু আমি কল কেটে দিব”

“না প্লিজ, সেটা করবেননা। আপনার সাথে কথা বলা আমার খুবই প্রয়োজন। আসলে সামনাসামনি বললেই ভাল হতো, কিন্তু সেটা রিস্কি হয়ে যাবে বলে ফোনেই বলতে হচ্ছে”

“রিস্কি! আপনি কি নাম বলবেন না আমি কাটবো?”

“নাম বললে তো আপনি চিনবেননা, বরং পরিচয়টা বলি। আমি একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর। আপনার বাবা আপনার নিখোঁজ বোনকে খুঁজে দেয়ার জন্য আমাকে এপয়েন্ট করেছেন”

“কি? প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর? কই আমি তো এমন কিছু শুনিনি”

“আসলে উনি এটা আপনাদের থেকে গোপন রাখতে চাচ্ছেন। প্লিজ আপনি আবার উনাকে বলে দিবেননা যে আমি আপনাকে কল করেছি। উনি আমাকে আপনাদের সাথে যোগাযোগ করতে স্ট্রিক্টলি নিষেধ করেছেন। কিন্তু আমি কানাগলিতে আটকে গেছি, কোন ক্লু পাচ্ছিনা। তাই নিরুপায় হয়ে আপনার সাথে কন্টাক্ট করছি”

“কিন্তু বাবা সিদ্রাকে খুঁজছে সেটা আমাদের কেন জানাবেনা? আপনার কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা”

“উনি বলেছেন, পুলিশের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে উনার ওয়াইফ মানে আপনার মাদার নাকি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন নতুন করে আর আশা জাগাতে চাচ্ছেননা, ইন কেস যদি আমি সফল না হই আর কি, তাহলে তো আরো বড় শক পাবেন”

“হুম, সেটা ঠিক, কিন্তু আমি জানলে কি হবে?”

“সেটা তো আমি বলতে পারবো না। সেটা বরং আপনি আপনার বোনকে খুঁজে দেবার পর আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করে নিয়েন। অবশ্য যদি সেটা আপনি চান আর কি”

“কিসব আবোলতাবোল বলছেন, আমি চাইবোনা কেন? আর খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কেন করতে যাবো, আমি আজকেই জিজ্ঞেস করব”

“এজন্যই তো বললাম, যদি আপনি চান। আপনি যদি আপনার বাবাকে বলেন যে আমি উনার শর্ত ভেঙে আপনার সাথে যোগাযোগ করেছি, তাহলে কি আমার কাজটা থাকবে? তখন আমি আপনার বোনকে কিভাবে খুঁজে দিব?”

“ও আচ্ছা, বুঝেছি। কিন্তু আপনি এমনভাবে বলছেন যেন আপনি জানেন সিদ্রা কোথায় আছে” আল্লাহ, লোকটা যেন সত্যিই জানে সিদ্রা কোথায় আছে, মনে মনে দোয়া করল মুনিরা।

“এক্সাক্টলি কোথায় আছে না জানলেও কার সাথে আছে জানি। এখন আপনি আমাকে শুধু তার নাম আর পরিচয়টা বলবেন”

“কার সাথে আছে সিদ্রা?”

“জ্বী উনার হাজবেন্ড এর সাথে, আপনার বোন পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছেন”

“জুতা চিনেন?” রাগের চোটে দাঁড়িয়ে গেল মুনিরা।

“স্যরি!?”

“বলছি জুতা চিনেন? আপনি যদি এই মুহূর্তে আমার সামনে থাকতেন না, জুতার বাড়ি মেরে আপনার দফারফা করে ফেলতাম আমি!”

ওইপাশের লোকটা যেন থতমত খেয়ে গেল, কথাগুলো হজম করতে সময় নিল খানিকটা, তারপর বলল,
“আমি বুঝতে পারছি আপনার কাছে ব্যাপারটা শকিং। কিন্তু আমার কাছে পাকা খবর আছে, উনাকে মাদ্রাসায় যাবার পথে একটা হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে গাড়িতে উঠতে দেখা গেছে”

“এর থেকে যদি আপনি বলতেন, পৃথিবী উলটে গেছে কিংবা শেখ হাসিনা আর খালেদাজিয়ার ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে, আমি বরং সেটা বিশ্বাস করে নিতাম। কিন্তু সিদ্রা একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে এটা জাস্ট অসম্ভব! আপনি যে কোন লেভেলের গোয়েন্দা আমার বুঝা হয়ে গেছে। আমিই আব্বুকে বলছি যেন উনি আপনাকে ঝাটা মেরে বিদায় করে দেন”

“আমার কাছে প্রমাণ আছে”

“আপনার প্রমাণ আপনি গলায় ঝুলিয়ে কটকটি খান। সিদ্রা স্বয়ং আমার সামনে দাঁড়িয়ে একথা বললেও আমি বিশ্বাস করবনা। আমার বোন কেমন সেটা আমি খুব ভাল করে জানি। যে মেয়ে রাস্তার একপাশে ছেলেদের দেখলে রাস্তার আরেকপাশে চলে যায়, অপ্রয়োজনে কোন ছেলের সাথে কথা পর্যন্ত বলেনা, আপনি আমাকে তার প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করার গল্প শোনাচ্ছেন!”

“সামনাসামনি কথা বলা আর চ্যাট করা তো আর এক হয়না। হয়ত ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে, আপনি তো আর উনার ফেসবুক ঘেটে দেখেননি!”

“না ভাই, আমার ওর ফেসবুক দেখার দরকার নাই, কারণ আমি স্বয়ং সিদ্রাকেই দেখেছি। ওর ফেসবুক একাউন্ট না, আমি খুলে দিয়েছি। ফ্রেন্ডদের সাথে প্রয়োজনে মেসেঞ্জারে মেসেজ আদান প্রদান ছাড়া আর কোন কাজে লাগাতে দেখিনি আজ পর্যন্ত। সারাদিন কুরআন, হাদীস, ইসলামিক বই, গল্পের বই পড়ে সময় কুলোতে পারেনা আর ও করবে ফেসবুকে প্রেম!”

“আচ্ছা, আপনিও কি উনার মতই? ফেসবুক চালাননা আপনি? ছেলেদের সাথে কথা বলেননা?”

“আমি কি করি না করি তা দিয়ে আপনি কি করবেন?”

“আহা, আগে উত্তর দেন, তারপর বলছি”

“হ্যাঁ, আমি ফেসবুক চালাই, ছেলেদের সাথে কথাও বলি, তাতে কি হয়েছে?”

“এই যে, আপনি যদি এসব করতে পারেন, তবে আপনার বোন কেন নয়? এমনও তো হতে পারে আপনার কাছে থেকে উনি গোপন করেছেন বিষয়টা”

“না, আমি করতে পারলেও আমার বোন পারেনা। সেটা আপনি না জানলেও আমি খুব ভাল করে জানি। আর আমার কোন কথা হয়ত সিদ্রার থেকে গোপন থাকতে পারে, কিন্তু সিদ্রার কোন কথা আমার থেকে গোপন নেই। কিন্তু আপনার সাথে আমি এসব প্যাচাল পাড়ছি কেন? আপনি এসব করে যে কি খুঁজে বের করবেন, আমি বুঝে গেছি। আমি এখনি আব্বুকে কল করছি। আর কোন মেয়ে নিখোঁজ হওয়া মানেই যে সে কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে, দয়া করে আপনাদের এই পার্সপেক্টিভটা চেঞ্জ করুন। মেয়েটার যে কোন বিপদও হতে পারে সেটাও প্লিজ একটু ভেবে দেখবেন”

“আর একটা প্রশ্ন ছিল”

“ঘোড়ার আন্ডা ছিল, গোয়েন্দা না ছাই, পাগল ছাগল কোথাকার!”

কল কেটে রাগের চোটে মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুড়ে মারলো মুনিরা। যত্তসব আজাইড়া কথাবার্তা! সবার মুখে এক কথা, অসহ্য!! যেখানে সিদ্রার মত মেয়ে এমন কাজ করতে পারে এটা কেউ বিশ্বাস করবেনা বলে আমি মাঝেমাঝে ওর নাম দিয়ে ছেলেদের সাথে চ্যাট করি, ফারহানের সাথেও তো ওর নাম দিয়েই প্রেম করেছি, সেখানে ওর প্রেম করার কাহিনী আমাকেই শুনাতে আসছে, হুহ!

এসময় কলিংবেল বাজলো, পড়িমরি করে ছুটল মুনিরা, আম্মুকে গেট খুলতে দেয়া যাবেনা। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। গেট খুলে ফেলেছেন জাহানারা বেগম আর বাইরে সিদ্রার বদলে ময়লাওয়ালাকে দেখে সবসময়ের মত শকড হয়ে গেছেন। মুনিরা দরজার কাছে যাওয়ার আগেই পড়ে গেলেন তিনি, দরজার চৌকাঠে ঠক করে বাড়ি খেল মাথাটা।

দেরি হওয়ার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত 😞
মুনিরাকে কেমন লাগলো জানাবেন। ওকে ঠিকঠাকভাবে ফুটাতে পারলাম কিনা জানা দরকার 😊
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here