জানি দেখা হবে পর্ব ১৯+২০

#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_19

– বিয়েটা অনেক পরের কথা ভাবী। আগে ওকে রাজী করানোটাই ফ্যাক্ট।
যাইহোক, আগে ভিতরে চলো। দেখি ও কি করছে।
– হুম চলো।
তারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সম্ভবত ঘুমোচ্ছে। তাই ওকে আর ডিস্টার্ব না করে আকাশ আর সীমা চলে গেলো।
ওরা চলে যেতেই তাকালো তারা। ওদের আসার শব্দ পেয়েই ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিলো ও। জানে, ওরা আসলে এখন সহজে যাবেনা। কিন্তু এখন কথা বলার একদমই মুড নেই ওর। তাই ঘুমের ভানে পরে ছিলো।
.
কয়েকটা দিন পার হলো।
তারা এখন সম্পুর্ন সুস্থ। সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে তারা। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পরছেনা। গুটি পায়ে আকাশ এগিয়ে এলো তার দিকে। তারার কোনো খেয়াল নেই সেদিকে। সে আগের মতোই দাড়িয়ে আছে। পিছন থেকে পিঠে হাত রাখলো আকাশ। চমকে গেলো তারা। ঘুরে দেখলো আকাশ দাড়িয়ে আছে পাশেই। শান্ত গলায় বললো..
– আপনি?
– হ্যাঁ, অফিস থেকে ফিরলাম মাত্র। এখানে কি করছো এই সন্ধ্যায়?
– আকাশ দেখছি। সন্ধ্যার আকাশটা খুব সুন্দর।
– তার সাথে কিন্তু আকাশের তারাগুলো ও অনেক সুন্দর।
তারা ভাবলেশহীন ভাবে বললো..
– হ্যাঁ, সুন্দর।
আকাশ কিছুক্ষন থেমে থাকলো। তারপর বললো..
– তোমাকে একটা কথা বলতাম
– বলুন.. আকাশ পানে তাকিয়েই উত্তর দিলো তারা।
আকাশ কিছুক্ষন অস্বস্তিতে থাকলো। কিভাবে বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা। তারা বললো..
– কি যেনো বলবেন বলেছেন, বলছেন না কেন?
– তুমি কি এভাবেই সারা জীবন পাড় করবে? মানে তোমারও তো একটা লাইফ আছে। একটা ভবিষ্যৎ আছে। সেখানে কেউ যদি এসে তোমায় ভালোবাসতে চায়, তোমার জীবনটাকে রাঙ্গিয়ে দিতে চায়, তবে কি খুব অন্যায় হবে? তুমি কি মেনে নিবেনা তাকে? মনে সাহস নিয়ে তারার দিকে না তাকিয়েই বললো আকাশ।
তারা মোটেও অবাক হলোনা। গভীর দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকালো ও। আকাশ যেনো তারার উত্তরের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে। তারা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো..
– জীবনটা বড়ই অদ্ভুত জানেন,,, কেউ ভালোবাসা চেয়েও পায়না, আর কেউ পেয়েও হারায়। আর যেখানে আমার নিজের স্বামীই আমাকে ভালোবাসলো না, নিজের স্বামীর ভালোবাসাই আমার কপালে জুটলো না, তার শেষ স্মৃতি টুকুও আমাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলাম না, সেখানে আপনার বলা কথাগুলো নেহাতই আমার জন্য বিলাসিতা।
– ভুল বললে তারা,, ভালোবাসা কখনো বিলাসিতা হয় না। সত্যিকারের ভালোবাসাটা ভাগ্যের জোরেই কিছু মানুষ পেয়ে থাকে।
– যে ভালোবাসা জীবন থেকে সব হাসিখুশি কেড়ে নেয় সেই ভালোবাসা আমি চাইনা। আর আমি কখনো এমনটা আশাও করিনা৷ কেউ যদি আমাকে নিয়ে কিছু ভেবে থাকে, সে যেনো আমাকে দয়া করলো। আমি চাইনা আমাকে কেউ দয়া করুক৷
– তুমি ভুল ভাবছো তারা। ভালোবাসা আর দয়া এক জিনিস না।
তারা আকাশের মুখের দিকে তাকালো৷ আকাশের চোখে তারা কিছু একটা দেখতে পেলো৷ আকাশ জড়ানো গলায় বললো…
— কেউ একজন সত্যি সত্যিই তোমায় ভালোবাসে খুব তারা। তোমাকে পাগলের মতো চায়৷ ভালোবাসতে চায় অনেক। তুমি কি কিছুই বুঝোনা তারা৷
— আমার খুব জঘন্য অতীত আছে।
— সে অতীত আমি মুছে দেবো তারা। তোমার জীবনটাকেই পাল্টে দিবো। রাঙ্গিয়ে দেবো তোমায় অফুরন্ত ভালোবাসায়। দেবে কি আমায় সে সুযোগ?
অনুনয়ের স্বরে বললো আকাশ।
তারা কিছুক্ষন আকাশে দিকে তাকিয়ে বললো…
— না চাইতেও আমি একজনকে খুব ভালোবাসি, আর উনি হচ্ছেন আমার স্বামী। উনার জায়গা আমি কাউকেই দিতে পারবো না আকাশবাবু।
— কিন্তু সে তো তোমায়..
পরের কথা বলার সুযোগ দিলোনা তারা৷ কথার মাঝখানেই বলে উঠলো…
— তবুও আমি উনাকেই ভালোবাসি। আর সারাজীবন ভালোবাসবোও।
..
তারা চলে গেলো সেখান থেকে। আকাশ এখনো নিজের জায়গায় দাড়িয়ে আছে। তারার কথার মাথামন্ডু ও বুঝতে পারলোনা। কি চায় মেয়েটা, যে মানুষটা ওকে এতোটা আঘাত দিলো, তাকেই কিনা সে ভালোবাসে বলছে। এও কি হয়?
রাতের খাবারের টেবিলে যখন সবাই খাচ্ছিলো তখন তারা বললো..
– এ বাসায় আমি আর থাকবোনা।
সকলে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো তারার দিকে। আকাশের মা বললো..
– কেন রে মা? কি হয়েছে এ বাসায়? তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে এখানে?
– না আন্টি, তেমন কিছুই না।
– তাহলে এখানে থাকবে না কেন? পাশ থেকে সীমা বললো.।
– আপনাদের উপর আর কতো বোঝা হয়ে পরে থাকবো। অনেক তো হয়েছে। আর তাছাড়া এখন তো আমি সুস্থ। তাই নিজেই কিছু একটা করে নিজের ব্যবস্থা করবো।
– এমন ভাবে বলছিস কেন? আর নিজেকে বোঝাই বা ভাবছিস কেন? তোকে আমি আমার মেয়ের মতোই দেখি।
তারা হাসলো। বললো..
– আপনারা আমার জন্য যা করেছেন তা আমি জীবনেও ভুলতে পারবোনা আন্টি। এর জন্য আমি সারাজীবন আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। কিন্তু এইবার যে আমাকে যেতেই হবে।
.
আকাশ খাওয়া বন্ধ করে ভাতের প্লেটের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারার এই কথায় হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
মা আশ্চর্য হয়ে বললো..
– এর আবার কি হলো। এভাবে না খেয়ে চলে গেলো কেন?
কথা ঘুরাতে সীমা বললো..
– হয়তো পেট ভরে গেছে ওর। তাই চলে গেছে।
– পেট ভরে গেছে? কিন্তু ওতো কিছুই খেলোনা।
– হয়তো বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে।
মা আর কিছু বললোনা। নিজের কাজে মন দিলো। তারা ঠিক বুঝতে পারলো আকাশের না খেয়ে চলে যাবার কারণ।
..
রাতে শুতে যাবে তারা। তাই দরজাটা ভালো করে আটকে দেওয়ার জন্য দরজায় হাত দিতেই দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো আকাশ। ঢুকেই দরজাটা লাগিয়ে দিলো ও। তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশ তারাকে কিছু না বলে ওকে পাশ কাটিয়ে খাটে গিয়ে বসলো। মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে ও। তারা ওর রাগের কারণ বুঝার জন্য ওর মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। কিন্তু কিছুই বুঝলো না। তাই বললো.
– কি ব্যাপার? এতো রাতে আমার ঘরে? এভাবে তো কখনো আসেন না?
– আসিনা বলে কি, আসতে পারবোনা নাকি? আমার বাড়ি, আমার ঘর। আমি যখন খুশি আসবো, যখন খুশি যাবো। বেশ রেগে বললো আকাশ।
..
– আপনার বাসায় আপনি যা খুশি তা করতে পারেন, কিন্তু আমিতো যা খুশি তা করতে পারবোনা। তাহলে আপনিই বলে দেন, আমি কোথায় যাবো এখন? আপনি তো আমার খাট দখল করে বসে আছেন। আমার এখন ঘুমানোর প্রয়োজন।
আকাশ রেগে গিয়ে তাকালো তারার দিকে। আচমকাই তারাকে দুহাতে চেপে ধরে দেয়ালের সাথে নিয়ে ঠেকালো। তারা ঘাবড়ে গিয়ে বললো
– কি করছেন কি আপনি? ছাড়ুন আমাকে। ছাড়ুন বলছি।
– কেন ছাড়বো? আমার বাসায় আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। তোমার কথায় আমি ছাড়বো কেন?
– প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। খুব লাগছে আমার।
আকাশ তারার চোখের দিকে তাকালো। চোখদুটো ওর ছলছল করছে। তাই ওকে ছেড়ে দিয়ে আবারও খাটে গিয়ে বসলো আকাশ। তারা কিছু বুঝতে পারছেনা আকাশ এমন কেন করছে। এ বাসায় আসার পর থেকে কখনো এমন করেন নি উনি। তবে আজ কেন এমন করছে। মুহুর্তেই যেনো আকাশের চোখদুটো পানিতে ভরে গেলো। করুন চোখে তারার দিকে তাকালো আকাশ। তারাকে খুব শান্ত গলায় বললো..
– এখানে বসোনা প্লিজ।
তারা বসলোনা। আগের জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে। আকাশ আবারও রেগে গেলো। উঠে তারাকে দুহাতে বন্দি করে বললো..
– বসবে না তো? না বসলে না বসো। আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ফের যদি বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেছোনা, খুন করে ফেলব আমি তোমাকে। তারা ওর বাহুডোরে থেকেই কপাল কুঁচকে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ আবারও বললো..
– ভালোবাসা কোনো ছেলেখেলা না বুঝলা? আমাকে ভালোবাসার জালে ফেলে তুমি এখন চলে যেতে চাইছো আমাকে ছেড়ে। এত্তো সহজ। আমি তোমাকে যেতে দিচ্ছিনা। আকাশের বুক থেকে তারা কখনো ঝরে পরেনি আর কোনোদিন পরবেওনা।
তারা অবাক হয়ে শুনছে আকাশের কথা। আকাশ বললো..
– কথা বলছোনা কেন হু? আরেকবার যাওয়ার নাম নাওনা খালি..
– কেউ যদি এসে আমাকে নিয়ে যায়?
– খুন করে দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখবো ওকে হুহ। আকাশের কথায় তারা হাসবে কি কাদবে বুঝতে পারছেনা। তারা আবারও বললো..
– যদি আমি নিজেই চলে যাই, তাহলে?
– আগে তোমাকে মারবো তারপর আমি নিজে মরবো। তবুও তোমাকে যেতে দিবোনা কোথাও।
..
তারা নিরব হয়ে গেলো আকাশের কথায়। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বোধ হয়। আকাশ অঝোরে কাঁদছে আর বলছে
– আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ। তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি আমি। মরেই যাবো তুমি চলে গেলে। তুমি যা বলবে তাই করবো আমি। দরকার হলে সারাক্ষণ তোমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখবো। তোমাকে ভুলেও স্পর্শ করবোনা,, অধিকার খাটাবোনা কখনো তোমার উপর। তবুও তুমি যেওনা আমাকে ছেড়ে প্লিজ।
তারা অবাক হয়ে শুনছে আকাশের কথা। ওর করা পাগলামো গুলো তারার বুকে যেনো তীরের মতো বিধছে। কতোটা ভালোবাসলে এইরকম করা যায় সেটা ভাবতেও পারছেনা তারা।
..
– কতো করে বলেছি তুমি আমাকে আর কখনো ফোন করবেনা। কেন বিরক্ত করছো আমাকে বারবার?
নিজের কেবিনে বসে চিল্লিয়ে ফোনে কথাগুলো বলছিলো ধ্রুব। অনেক্ষণ এভাবে রাগারাগি করে কথা বলার পর ফোনটা নিজেই কেটে দিলো ধ্রুব। রেগে শরীরটা ফেটে যাচ্ছে ওর। কি পেয়েছে কি মেয়েটা? এতোকিছুর পর কোন সাহসে আমাকে আবারও ফোন দেয় ও? আবার কি মতলব এটেছে ওর মনে? এইসব কথা যতোই ভাবছে ততোই রাগে চোখদুটো লাল হয়ে যাচ্ছে ধ্রুবর। নাহ, আর না। অনেক হয়েছে। এবার এর একটা বিহিত করতেই হবে।
ধ্রুব আর বসে থাকলো না। ব্লেজার টা চেয়ারের মাথা থেকে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
..
অনেক ফর্মালিটির কম্প্লিট করার পর ধ্রুব নিজে উপস্থিত থেকে পেপার্সগুলো পাঠিয়ে বাসায় এসেছে। বাসায় ঢুকেই দেখলো মা সোফায় বসে থেকে কি যেনো ভাবছে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো ধ্রুব। মনের মধ্যে তার ঝর বয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই থামছেনা সে ঝর। অনেক্ষণ পর বাইরে এলো ধ্রুব। মা এখনো বসে আছে আগের জায়গায়। ধ্রুব মায়ের পাশে বসে বললো..
– কি ভাবছো মা?
মা কিছু বলছে না। আগের মতোই বসে আছে। ধ্রুব মাকে ধরে একটু নাড়া দিয়ে বললো.
– কি হলো মা? এতো কি ভাবছো?
নাড়া পেয়ে মা হুশ ফিরে পেলো। ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো..
– কখন এলি তুই?
– অনেক্ষণ আগেই এসেছি। তোমার সামনে দিয়েই তো গেলাম।
– ওহ, খেয়াল করিনি। দরজা কে খোলে দিয়েছে?
– দরজাটা তো খোলাই ছিলো।
ধ্রুব কিছুক্ষন মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো মা যেনো কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত। তাই বললো..
– কিছু হয়েছে মা?
– ভাবছি, তোর বাবার কথা।
– কেন? বাবার কি হয়েছে?
– তোর বাবার কোন ক্লায়েন্টের সাথে নাকি দেখা করার কথা।
– তো? এতে হয়েছে কি
– ওদের মিটিং টা সিলেটে হবে। উনার বয়স হয়েছে। কিভাবে যে কি করবে।
– ওহ মা, এতো ভেবোনা তো। বাবার কিচ্ছু হবেনা। দরকার হলে বাবার সাথে আমিও যাবো।
– আচ্ছা।
– মিটিং কবে?
– আরো সপ্তাহ খানেক পর বোধহয়। আনমনা হয়ে বললো মা।
.
ধ্রুব ভালো করে খেয়াল করলো মা এখনো চিন্তিত। তাই আবার বললো..
– কি নিয়ে এতো ভাবছো মা?
– তুরিনের সাথে তোর কথা হয় বাবা?
মায়ের মুখে তুরিনের নাম শুনে অবাক হয় ধ্রুব। বললো..
– কেন মা? হটাৎ ওর কথা বলছো কেন?
– মেয়েটা আজ এসেছিলো বাবা। মুখটা একদম শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে।
ধ্রুব রেগে গেলো। বললো..
– ও এখানে এসেছিলো? এতো বড় সাহস ওর? ওকেতো আমি বলেই উঠতে যাবে তখনই মা ওর হাত ধরে ফেললো। বললো..
– এই রাতের বেলা ঝামেলা করবিনা। মেয়েটা এসেছিলো ঠিকই আবার চলেও গেছে।
– কেন এসেছিলো ও ? কি বলেছে?
….#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni
#Part_20

– এই রাতের বেলা ঝামেলা করবিনা। মেয়েটা এসেছিলো ঠিকই আবার চলেও গেছে।
– কেন এসেছিলো ও ? কি বলেছে?
ধ্রুবর মা কিছুক্ষন নিরব রইলো। মায়ের নিরবতা দেখে ধ্রুব বললো..
– কি হয়েছে মা? কিছু বলছোনা কেন?
– মেয়েটাকে দেখে খুব দুর্বল মনে হলো। মুখটা শুকনা ছিল খুব।
ধ্রুব মায়ের কথা শুনে গম্ভীর গলায় বললো..
– তো আমি কি করবো?
– দেখ বাবা, আমি ভালো করেই জানি ও কেমন মেয়ে ছিলো। যেখানে আমি নিজেই ওকে পছন্দ করতাম না, সেখানে আজ ওকে দেখে, ওর অবস্থা দেখে আমিই আজ ওর প্রতি দুর্বল হয়ে গেছি। মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করিছিলো। ওকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আর তাছাড়া।।।। .
– তাছাড়া কি? ভ্রু কুঁচকে বললো ধ্রুব।
– ওর পেটে নাকি তোর বাচ্চা।
– তুরিন প্রেগন্যান্ট??? অবাক হয়ে বললো ধ্রুব।
– হ্যাঁ বাবা। সেটাই তো বলল। আর তা নিয়েই আমি দুশ্চিন্তায় আছি। ওর পেটে যদি তোর বাচ্চা থাকে তাহলে সেটা তো আমাদের বংশের বাতি। তাই বলছিলাম কি… কতোটুকু বলে ছেলের মুখের দিকে তাকালো মা।
ধ্রুবর মুখটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।। তুরিনের প্রেগন্যান্সির কথাটা শুনে কেমন যেনো কু ডাকলো ওর মনে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলোনা। কিছু না বলেই চলে গেলো নিজের ঘরে।
মা পিছু পিছু ডাকতে ডাকতে বললো..
– এখন রুমে যাচ্ছিস কেন, খেয়ে যা। অনেক রাত হয়ে গেছে।
– আমি খাবোনা। বলেই রুমের দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো ধ্রুব।
..
ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করতে লাগলো তুরিন। আঁতকে উঠলো ওর মা। সাথে বাবাও। দৌড়ে এলো মেয়ের রুমে।
– কি হয়েছে মা? এমন করছিস কেন? বল মা আমাকে কি হয়েছে?
– মা ও আমার জন্য দেখো কি পাঠিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে ডিভোর্স পেপারটা মায়ের সামনে ধরলো তুরিন। মা বললো.
– সমস্যা কি মা? ভালোই তো হয়েছে। তুইও ডিভোর্স দিয়ে দে। আর তুই তো তুষারকে ভালোবাসিস।
– মা!!! চিৎকার দিয়ে উঠলো তুরিন।
মেয়ের চিৎকারে অবাক হয়ে মা বললো..
– তুই ডিভোর্স টা চাস না?
– না মা। আমি এইটা চাইনা। আমি ধ্রুবকে চাই। আমার স্বামী ধ্রুবকে চাই। আমার বাচ্চার বাবা ধ্রুবকে চাই। অঝোর কাঁদছে তুরিন। বাচ্চার কথা শুনে বাবা মা দুজনই অবাক হয়ে গেলো। কারণ এটা তাদের অজানা। আর মেয়ের এই রুপটাও খুব অচেনা। মা কিছু বলছেনা। তুরিনকে সহ্য করতে না পারলেও এই মুহুর্তে বাবার মনে কেমন একটা টান অনুভব হচ্ছে। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন..
– তোর বেবী হবে?
– হ্যাঁ বাবা। আমি মা হতে যাচ্ছি। ধ্রবর বাচ্চার মা।
বাবা বললেন..
– সেতো খুব ভালো কথা। কিন্তু ধ্রুব কি বিষয়টা মানবে? যেহেতু ওর সাথে তুই অন্যায় করেছিস।
– আমি জানিনা বাবা, আমি কিচ্ছু জানিনা। আমি ওকে চাই। ওর সাথে সংসার করতে চাই।
মা বললেন..
– কিন্তু তুষার ..!!
– ওর কথা ভুলেও উচ্চারণ করবে না মা। ওর জন্যই আমার আজ এই অবস্থা। ওর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে আজ আমি স্বামী হারা। সংসার হারা।
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন..
– হারিয়ে ধন খোজলে কোনো লাভ নেই মা। তবুও তুই চেষ্টা করে দেখি কি হয়। এক মেয়েকে হারিয়েছি আমি। তোর জীবনটাও দুঃখে কাটুক সেটা আমি চাইনা।
বাবা চলে গেলেন। ফ্লোরে বসে কাঁদছে তুরিন। মা মেয়ের পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তুরিন সামনে রাখা ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করলো। আচমকাই তুরিন একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে মাকে বললো
— বাবাকে কেমন দিলাম মা?
মা একটা শয়তানি হাসি হেসে বললেন..
— একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস রে৷
— দেখলে তো মা, কিভাবে বাবাকে ম্যানেজ করলাম? একদিকে বাবার মনটা জয় করলাম অন্যদিকে তুষারের বাচ্চাটাকে ধ্রুবর বাচ্চা বলে চালিয়ে দিলাম। এইবার বাছাধন আমাকে না মেনে যাবে কোথায়। আমাকে চিনেনা ওই ধ্রুব। ওর সম্পত্তিতে যখন একবার আমার চোখ গেছে তখন সেটা আমি যেকোনো মুল্যেই নিজের করে নিবো।
এইপর মা মেয়ে মিলে আবারও গগনবিদারী পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো।
.
অফিসে কিছুতেই মন বসছেনা আকাশের। অস্থির অস্থির লাগছে। এই অস্থিরতার কারণ জানেনা সে নিজেও। বাসায় সীমার নাম্বারে কল করলো আকাশ। ফোনটা রিসিভ করতেই আকাশ বললো..
– তারা কোথায় ভাবী?
– বাব্বাহ, এতো মোহাব্বত? আগে জানতাম না তো। ফোন ধরে hi hello না করেই ডিরেক্ট তারা কোথায়?.
– ভাবী, বলোনা ও কোথায়? কি করছে?
– নিজের রুমেই আছে। কি করছে জানিনা।
– একটু দেখে আসোনা প্লিজ।
– পারবোনা।
– প্লিজ ভাবী প্লিজ।
– Ok Ok দেখছি,
সীমা এগিয়ে গেলো তারার রুমে। দরজাটা হালকা ভিড়ানো। সীমা নক না করেই ভিতরে ঢুকলো। তারা একটা ব্যাগে নিজের কাপড় গুছাচ্ছে। এমন সময় ওর কাপড় গোছানো দেখে আকাশ যে ফোনে আছে সেটা ভুলে গেলো সীমা। তারাকে বললো..
– কি ব্যাপার তারা? এভাবে কাপড় গোছাচ্ছো কেন?
তারা হাসলো। বললো..
– আর কতোদিন আপনাদের উপর বোঝা হয়ে থাকবো। তাই চলে যাবো।
– তুমি আমাদের বোঝা? এটা তুমি ভাবলে কি করে তারা?
তারা বিছানা থেকে উঠে এলো সীমার কাছে। সীমাকে বিছানায় বসিয়ে নিজেও বসলো ওর পাশে। বললো..
– আমি এভাবে বলতে চাইনি ভাবি। মন খারাপ করোনা প্লিজ। তোমরা আমাকে আশ্রয় না দিলে আমার যে কি হতো। এতো দিনে হয়তো লাশটাও কেউ খোঁজে পেতোনা। পচে যেতাম আমি।
.
– হায়াত থাকতে কারো মৃত্যু হয়না তারা। সে যাইহোক, তুমি বাড়ি ছাড়তে চাইছো কেন?
– শুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগছেনা। ওদিন বাইরে হাটতে গিয়েছিলাম না, তখন একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। মেয়েটা আমার বয়সেরই।
– তো? এর সাথে বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার কি সম্পর্ক?
তারা মুচকি হাসলো। বললো.
– এক কথায় দুকথায় মেয়েটার সাথে আমার ভালো ভাব জমে যায়। জানতে পারি, মেয়েটা গার্মেন্টস এ জব করে। অপারেটর বোধয়। কথায় কথায় আমি বলেছিলাম আমাকে একটা ব্যবস্থা করে দিতে। ওর ফোন নাম্বার ও এনেছিলাম। গতরাতে ফোন দিয়ে জানিয়েছে ওদের অফিসে কোয়ালিটি নিচ্ছে।
– তুমি গার্মেন্টস এ চাকরী করবে? ভ্রু কুঁচকে বললো সীমা।
– সমস্যা কোথায়। অনেকেই তো করছে।
সীমা আর কিছু বললো না। রেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো।
তারা সেদিক প্রান্তে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
.
অফিস থেকে বের হয়ে তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো আকাশ। চোখে তার আগুন ঝরছে। ইচ্ছা করছে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে ওর। কত্তো বড় সাহস ওর। এমনভাবে মানা করা স্বত্বেও বাসা ছেড়ে চলে যেতে চাইছে।
বাসার ঢুকেই হনহন করে তারার রুমের দিকে যেতে লাগলো আকাশ। দরজার কাছে গিয়েই দেখলো মা আর সীমা ওর রুমে। হয়তো তারার যাওয়া নিয়ে কথা বলছে বা বুঝাচ্ছে। তাই সেদিকে না এগিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো আকাশ। ওকে পরে দেখে নিবে ও।
..
তারা দুটানায় পরে গেছে। কি করবে বুঝতে পারছেনা ও। সীমা আর মা খুব রেগে আছে ওর উপর। শুধুমাত্র বাসা ছেড়ে চলে যাবে বলে। তারা যখন চিন্তায় মগ্ন তখনই আকাশের আগমন ঘটলো।
.
To be Continued ………
To be Continued ……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here