#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
সৌরভ সোফায় বসে দুর থেকে ঈপ্সিতা আর অভ্রর উপর নজর রাখছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে রাগে শুধুই ফুসছে। আজ বাসায় গেলে ঈপ্সিতার একটা খবর করেই ছাড়বে ও। মাঝেমধ্যে কিছু লোক এসে সৌরভের সাথে কথা বলে। সৌরভ তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বললেও এতে সে মহা বিরক্ত। কারণ ও তার জন্যে ঈপ্সিতার উপর ভালো করে নজর রাখতে পারছে না।
অভ্র আমাকে এক জায়গায় এনে দর করায়। মুচকি হেসে বলে,
” ড্রিংকস ? ”
আমি বলি,
” কোকাকোলা হলে চলবে। ”
অভ্র একটা ওয়েটার কে ডেকে আমার জন্যে কোকাকোলা আনালো। বোতলে টা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
” সবসময় একই ড্রিংকস। বিরক্ত লাগে না ? ”
আমি বোতলে চুমুক দিয়ে বলি
” ভালোলাগার জিনিসে কখনো বিরক্তি অনুভূতির জায়গা হয় না। এত আমার অনেক পছন্দের। তাই। ”
অভ্র হাসলো। আমি চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলি,
” আন্টি , আঙ্কেল আসেন নি ? ”
” না আব্বু ব্যাস্ত তাই আসে নি। আর আব্বুর জন্যে আম্মুও আসেন নি। ”
আমি কিছু বললাম না। আসলে আমার কেমন যেনো অসস্তি লাগছে। অভ্র হটাৎ বলে,
” সৌরভ তোমার উপর টর্চার করে তাই না ? ”
আমি অভ্রর কথা শুনে চমকে তার দিকে তাকাই। ও জানলো কি করে ? আমি বিষয়টাকে সামাল দিতে বলি,
” অভ্র ও আমার স্বামী। তাই প্লিজ আমাদের ব্যাপারটায় ইন্টারফেয়ার না করলেই ভালো। ”
অভ্র খানিকটা কড়া গলায় বলে,
” হুমম স্বামী। এরকম স্বামী যে তোমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে। কেনো পড়ে আছো সেই বাড়িতে ইপশি ? নিজেকে আর কত কষ্ট দিবে ? ”
আমি ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলি,
” সেটা আমার ব্যাপার। তোমাকে আমি একজন বন্ধু ভাবি তাই নিজের সীমার মধ্যে থাকো। ”
আমার কথা শুনে অভ্রর কপালে ভাঁজ পড়ল। চোখগুলো ছোটো ছোটো করে বললো,
” বন্ধু ? তুমি আমাকে কখনো কিছুই ভাবনি ইপশি। কিছুই না। আর এখন বলছো বন্ধু ভাবো। ”
” সেটা তোমার ভুল ধারণা অভ্র। ”
অভ্র আর কিছু বলল না। আমি বললাম,
” আমি আসছি। উনি একা আছেন। ”
বলেই আমি চল যেতে নিলে আমি পা পিছলে পড়ে যেতে নিলে অভ্র আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ব্যালান্স করে। তারপর আমাকে নিজের কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে। আমি নিজেকে সামলে অভ্রর কাছ থেকে সরে আসি। আমি একটু ইতস্তত বোধ করলেও বুঝতে পারছি যে এটা ও ইচ্ছে করে করে নি। এরকম না করলে আমি মুখ থুবড়ে পড়ে যেতাম। নাক মুখ ব্যাথা পেয়ে পারতাম। আমি অভ্রর দিকে ঘুরে ওকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে চলে আসি সেখান থেকে। পথিমধ্যে আপু আমার পথ আটকে দাড়ায়। আমিও আপুর সাথে কথা বলতে লেগে পরি। হটাৎ সৌরভ ভাইয়া আমার কাছে এসে গম্ভীর গলায় বলেন,
” আমি বাসায় যাবো। চলো আমার সাথে। ”
আমি উনার কথায় অবাক হয়ে বলি,
” কিন্তু মাত্র পার্টি শুরু হয়েছে। এখনই ? ”
আপুও বলে,
” সৌরভ কোনো সমস্যা হয়েছে কি ? ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
” হুমম হটাৎ করেই মনে হলো আমার কাউকে খুব বড় ধরনের শিক্ষা দেওয়া দরকার। আব.. মানে একটা ক্লাইনটকে। তোমরা এনজয় করো আমি আসছি। ”
বলেই উনি আমার হাতের কবজি খুব জোড়ে ধরেন। এতে আমি একটু ব্যাথা পাই। কিন্তু কিছু বলি না। উনি আমাকে রীতিমতো টেনেটুনে বাইরে নিয়ে এলেন। আমাকে জোড়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি অনেক রেগে আছেন। কিন্তু কেনো ? আমি কি কিছু করেছি ? উনি ধীরে ধীরে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিতে লাগলেন। এতে আমি ভয় পেয়ে উত্তেজিত গলায় বলে উঠি,
” আরে আস্তে গাড়ি চালান। অ্যাকসিডেন্ট করবে তাহলে। কি হলো আপনি শুনতে পাননি। অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যাবে তো। ”
উনি আমার কথা না শুনে আরো জোরে গাড়ি চালাতে লাগলেন। আমি রীতিমতো ভয়ে পেয়ে জড়সড় হয়ে আছি। উনার দিকে তাকাতেও আমার ভয় করছে। চোখ মুখ একদম লাল হয়ে আছে। রাগে ফেঁটে যাচ্ছেন একেবারে। কিন্তু কিসের এত রাগ উনার ?
উনার বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলেন। আমি যেনো এতক্ষণে সস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ভয়ে পেয়ে গেছিলাম। এত জোড়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন যেকোন সময় অ্যাকসিডেন্ট হতে পারত। উনি আমাকে জোড়ে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবারও টেনে ঘরের ভিতর নিয়ে যান। রুমে এনে আমাকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে রাগে কাপতে কাপতে বলেন,
” খুব শখ না পরকীয়া করার। উফফ আমিও না ভুলে যাই। রক্ত বলেও তো একটা কথা আছে। ”
আমি উনার কথার মনে কিছুতেই বুঝতে পারছি না। পরকীয়া মানে ? আমি কড়া গলায় বলি,
” কিসব বলছেন ? ঠিক করে কথা বলুন। ”
উনি আমার কাছে এসে আমার গালটা শক্ত করে চেপে ধরেন। শক্ত গলায় বলেন,
” আমি ঠিক করে কথা বলতে পারিনা তাই জন্যে ওই অভ্রর কাছে গিয়েছিলি না ? কিসের এত দেমাগ তোর ? বল। ”
আমি হালকা আন্দাজ করতে পারছি উনি কিসের কথা বলছেন। কিন্তু ওটাতো আর ইচ্ছেকৃত হয়নি। একটা অ্যাকসিডেন্ট ছিল। আমি তারপরও বলি,
” নিজের মাইন্ড কে ঠিক করুন। অভ্র আমায় ইচ্ছা করে ধরে নি। আমি পড়ে যাচ্ছিলাম তাই ধরেছে। ”
উনি আমার গালটা আরো শক্ত করে চেপে ধরেন। আমি এতে ব্যাথায় চোখ বুঝে ফেলি। উনি রাগী গলায় বলেন,
” অভ্র কে জড়িয়ে ধরবি বলেই এত ছল !! পরে যাওয়ার নাটক করা হচ্ছিল তখন। নাটক !! ”
আমি অবাক হয়ে বলি,
” মানে ? আমি কেনো নাটক করতে যাবো ? আমি আমার কথা বলে দিয়েছি। আপনার বিশ্বাস করতে হলে করুন নাহলে না করুন। আমার কিছু যায় আসে না তাতে। ”
উনি আমার কথা শুনে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আরো জোড়ে গালটা চেপে ধরেন। আমি এতে অনেক রেগে যাই। বলি,
” আমার গাল ছাড়ুন। ”
উনি আমার গাল না ছেড়ে আরো জোরে চেপে ধরলেন। আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে জড়াজড়ি করতে লাগলাম। উনি হটাৎ আমার গাল ছেড়ে দিতে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দেন। নিজের গলাকে চড়াও করে বলেন,
” তুই একদম তোর মার মত হয়েছিস। একদম। তোর মাও আমার বাবাকে বিবাহিত জানার পরেও ফুসলিয়েছে। আর তুইও অভ্রকে নিজের জালে ফাঁসাতে চাইছিস। ”
আমি উনার কথা শুনে অনেক বড় ঝটকা খেলাম। আমার মা কি করে উনার বাবাকে ফুসলিয়েছে ? আমি বললাম,
” মুখ সামলে কথা বলুন। উনি মা হয় আমার। ”
উনি পাশে থাকা একটা চেয়ারকে পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। তারপর জোড়ে বলেন,
” ওই মহিলার মা হওয়ার যোগ্যতা নেই। একেবারে নেই। আর তোর দোষ হচ্ছে তুই ওই নিকৃষ্ট মহিলার মেয়ে। তাও সেই মেয়ে যেই মেয়ে জন্মের সময় আমার বাবা আমার মাকে ডেলিভারি পেইন থাকা অবস্থায় একা ফেলে চলে গেছিলো। তুই সেই মেয়ে যেই মেয়ের জন্মের সময় আমার মা একটা ভরসার হাত পায়নি। বুক ভরা কষ্ট নিয়ে সুরভীকে জন্ম দিয়েছে। আর যখন মা বাবার কাছ থেকে এই নিয়ে কৈফিয়ত চাইলো তখন আমার বাবা আমার মায়ের উপর হাত উঠিয়েছিল। তোকে মাধ্যম বানিয়ে তোর মা আমার বাবাকে হাত করতে চেয়েছিলো।পড়ে বয়স হওয়ার সাথে সাথে তোর মায়ের এই বুদ্ধি জন্মেছে যে বাবাকে আর হাত করতে পারবে না। তাই নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর এসবের মূল হচ্ছিস তুই। সব তোদের মা বেটির কাজকারবার। ”
আমি উনার কথা শুনে খুব বেশি অবাক হলাম। মা তো আমার জন্মের সময় মৃত্যুর সাথে লড়ছিল। তাই আঙ্কেল মাকে সাপোর্ট দিয়েছিল ওইদিন। তাও বাবা আঙ্কেল কে ডেকেছিল। মা তো কিছুই বলে নি আঙ্কেল কে। ইনফ্যাক্ট মার জ্ঞান ছিল না সারাদিন। ব্যাথায় মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিল। উনি আবার আমার গেল শক্ত করে চেপে ধরে বলেন,
” তোর মত মেয়ের আমার বাড়িতে কোনো জায়গা নেই। নাহলে আমার বাড়ির সকল শান্তি তুই নষ্ট করে দিবি। তোর মার উদ্দেশ্য আমি সফল হতে দিবো না । এক্ষুনি তুই আমার বাড়ী থেকে চলে যাবি। ডিভোর্স লেটার খুব জলদি পৌঁছে যাবে তোর কাছে। ”
বলেই আমাকে হাত ধরে মেইন দরজার বাইরে বের করে দেন। আমি উনার দিকে ফিরে শুধু এই কথাই বলেছি,
” কোনোদিন যদি আপনি আপনার এই কাজের জন্যে পস্তান তাহলে ভুলেও আমার মুখোমুখি হবেন না। একদিন আপনি আমাকে বলেছিলেন না আপনি আমাকে ঘৃনা করেন আজ আমি বলছি আপনি আমার দেখা সবচাইতে নিকৃষ্ট পুরুষ। যাকে ঘৃনা করতে পারলেও কখনো ভালোবাসা যায়না। ভালোবাসা কি আপনিতো কারো মায়ারও যোগ্য নন। ”
উনি আমার কথা উত্তরে আমার মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আজ আমার চোখ দিয়ে একফোটা জল বের হয়নি। কেনো যেনো এই লোকটার জন্যে আমার কাদতে ইচ্ছে হয়না। শুধুই ঘৃনা করতে ইচ্ছে হয়।আমি ক্লান্ত শরীরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিজের বাসায় যাওয়া যাবে না। নাহলে বাবা কথা শুনাবে। হটাৎ মনে হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড পৃথা হোস্টেলে একা থাকে। তাই আর কোনদিক চিন্তা না করে ওর হোস্টেলের ছিল গেলাম। মাথায় অনেক কথা ঘুরছে।
পৃথা আমাকে এই অবস্থায় দেখে অনেক অবাক হলো। অস্থির গলায় বলে,
” এই কি হয়েছে তোর ? এরকম লাগছে কেনো তোকে ? সৌরভ ভাইয়া কই ? একা এসেছিস ? ”
আমি কিছু না বলে হুট করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কাপা কাপ গলায় বললাম,
” আমাকে একটু জায়গা দিবি তোর ঘরে। চিন্তা নেই আমি তোর পয়সায় খাব না। একটা পার্ট টাইম জব খুঁজব। প্লিজ দোস্ত। দয়া কর আমার উপর। ”
পৃথা বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। তাই ও আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
” তোর যতদিন ইচ্ছা থাক। আর পয়সার ব্যাপারে চিন্তা করিস না। আমি দেখে নিবো ব্যাপারটা। ”
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ২০ [ বোনাস পার্ট ]
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
পৃথা আমাকে ধরে ঘরে নিয়ে যায়। আমাকেবিছনায় বসিয়ে একগ্লাস পানি আমার সামনে ধরে বলে,
” নে ধর। খা তারপর আর শান্ত হয়ে বল কি হয়েছে ? ”
আমি ওর হাত থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে একঢুকে সমস্ত পানি শেষ করে ওর হাতে দেই। ও পানির গ্লাস টা নিয়ে টি টেবিলের উপর রেখে আমার পাশে এসে বসে। বলে,
” এখন বল কি হয়েছে ? ”
আমি ওকে এক এক করে সমস্ত কাহিনী বলি। বলতে বলতে কখন যে আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল খেয়ালই করলাম না। আমার কথা গুলা শুনে পৃথা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। হয়তো সৌরভ ভাইয়া এসব করতে পারে তা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। পৃথা অবাক গলায় বলে,
” কিসব বলছিস তুই ? সৌরভ ভাইয়া এসব করেছে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। ”
আমি এক তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলি,
” বাইরের রূপটা দেখে বিচার না করে ভিতরের রূপ টা দেখে বিচার করা শিখ। আর একজনের সম্পর্কে গভীর ভাবে জানতে হলে তার সাথে থাকতে হয় , ট্রাভেল করতে হয় তার সাথে। তাহলেই সেই মানুষটার ভিতরের রূপটা সামনে এসে পড়ে। ”
পৃথা রীতিমতো অবাক হয়ে আছে। আমি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
” আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”
বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলাম আমি। সাওয়ার টা ছেড়ে দিয়ে মাটিতে বসে পড়লাম। এতক্ষণ কান্না আটকিয়ে রাখলেও এখন আমার মন খুলে কাদতে ইচ্ছা করছে। মনে হচ্ছে বুকে ১০ কেজি ওজনের পাথর রাখা। আর তার ভারে আমি মারা পড়বো। আমি চোখের জলগুলো ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে কাদতে লাগলাম। চুলগুলো ছিড়ে ফেলতে লাগলাম। মনে হচ্ছে এই কষ্টগুলো আমার দূর করা বড্ড প্রয়োজন। এই লোকটাকে আমি কখনো ক্ষমা করবি না। কক্ষনো না। আমার জীবন পুরো মিষ্টি করে দিয়েছে এই অমানুষটা। আমি ঘৃনা করি তোমাকে মিস্টার চৌধুরী। শুধুই এবং শুধুই ঘৃনা করি। শুনেছেন আপনি। আমি আপনাকে ঘৃনা করি।
সৌরভ বিছানায় বসে আছে। মুখটা থমথমে হয়ে আছে। মনে চাচ্ছে সবকিছু তছনছ করে দিতে। আর পারলো না সামনে থাকা ল্যাম্পপোস্ট টা ধাক্কা মেরে ভেংগে দিলো। তবুও রাগ কমছে না। রীতিমতো রাগে
থরথর করে কাপছে সে।
” ও খালাম্মা দেখো ভাইজান কি করছে । রুমের পুরো গুড়িয়ে দিলো খালাম্মা। ”
বলেই দরজার সামনে মুখে হাত চেপে বললো শেলি। ওরা একটু আগেই ঘরে এসেছে। আর উপরে আওয়াজ হচ্ছে দেখে শেলি উপরে আসলে এসব লক্ষ করে। সৌরভ শেলীর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। শেলি এতে ভরকে গিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুসময় পর সৌরভের মা বাবা ঘরে আসে। রুমের এই অবস্থা দেখে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। তাদের ছেলে যে এসব করতে পারে তা তারা vbate পারছেন না। সৌরভ তার বাবাকে দেখে করে বলে উঠে,
” মা এই লোককে বলো এখন থেকে চলে যেতে। নাহলে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো। চলে যেতে বলো এই লোককে। উনার জন্যেই আজ আমার এই অবস্থা। শুধুমাত্র উনার জন্যেই। ”
সৌরভের মা ছেলের এই রূপ দেখে যারপরনাই বিস্মিত হলেন। ছেলের এই হতবিহ্বল রূপটা তার কাছে অনেক অপরিচিত। তিনি ছেলের কাছে গিয়ে বলেন,
” সৌরভ শান্ত হও। কি হয়েছে আমাকে বলো। ”
সৌরভ জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে,
” এই লোকটা আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন। উনার নারীর আসক্তি আমাদের পরিবারের শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে। ”
বলার সাথে সাথে সৌরভের মা ওকে ঠাস করে গালে চর দিলো। রাগী গলায় বললো,
” মুখ সামলে কথা বলো সৌরভ। উনি তোমার বাবা হন। ”
সৌরভ গালে হাত দিয়ে মার দিকে তাকায়। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে বলে,
” যে লোকের জন্যে তোমার এত দরদ। তুমি জানো এই লোকটা তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে। উনার ঈপ্সিতার মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। এত তুমি জানো ? ”
সৌরভের বাবা সৌরভের দিকে এগিয়ে এসে ঠাস করে তাকে থাপ্পর দিয়ে কড়া গলায় বলেন,
” মুখ সামলে কথা বলো সৌরভ। আর নিজের বউয়ের মাকে রেসপেক্ট করতে শিখ। ”
সৌরভ কিছু না বলে বাবার দিকে তাকায়। সৌরভের মা অবাক হয়ে বলেন,
” সৌরভ তুমি কোথা থেকে জানলে এসব ? ”
সৌরভ তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
” উনার স্টাডি রুমে থাকা ডায়েরি থেকে। যেখানে উনার এসব কীর্তি লেখা আছে। ”
এবার সৌরভের বাবা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন যে কি হয়েছে । উনি সৌরভের হাতটা ধরে বলেন,
” আমার সাথে চলো। ”
সৌরভ না করলেও ওর বাবা শুনে না। জোড় করে স্টাডি রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেন উনি। সেলফে রাখা ডায়েরি বের করে সেটা থেকে ধুলোবালি পরিস্কার করে সৌরভের দিকে এগিয়ে বলেন,
” তুমি এই ডায়েরি পড়েছিলে , না ? ”
সৌরভ মিহি গলায় বলে,
” হুম। ”
এবার উনি উনার ড্রয়ার রাখা আরেক ডায়েরি বের করে বলেন,
” তা এই ডায়েরি পড়েছিলে তুমি ? ”
সৌরভ ডায়েরিটার দিকে তাকিয়ে বলে,
” এটা কিসের ডায়েরি ? ”
এবার সৌরভের বাবা ছেলের গালে থাপ্পর দিয়ে বলেন,
” এই থাপ্পড়টা তোমার প্রাপ্য ছিল তোমার নিচু মানুষিকতার জন্যে। এবার আমায় বলবো আর তুমি শুনবে। আর কোনো কথা বলবে না। ”
সৌরভ অবাক হয় বাবার দিকে তাকায়। সৌরভের বাবা বলতে থাকেন,
” আমি আর মরিয়ম সেই স্কুল লাইফ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। সারাক্ষণ ক্লাসে কথা বলা , বিকেলে একসাথে পড়তে যাওয়া , অনুষ্ঠানে আড্ডা দেওয়া সবকিছু আমাদের একসাথে চলত। মরিয়ম সবসময় আমাকে একজন বন্ধু ভাবলেও আমার মনে তার জন্যে আলাদা অনুভুতি ছিল। আর এটা আমি বুঝতে পারি ভার্সিটি উঠে। মরিয়ম আর আমি একই ভার্সিটিতে পড়তাম। আমি অনেক চেষ্টা করেছি মরিয়ম কে আমার মনে কথা বলার। আমার ভালোবাসার অনুভতির সাথে পরিচয় করানোর। কিন্তু পারিনি। সবসময় এই ভয় করতো যে না জানি মরিয়ম আমার এত বছরের বন্ধুত্ব না ভুলে যায়। একদিন আমি সাহস করে সিদ্ধান্ত নেই যে আজ মরিয়ম কে আমি বলবো আমার মনের কথা। সেদিন আমায় একেবারে রেডী হয়ে ভার্সিটি যায়। ওইদিন মরিয়ম আমার আমাকে বলে যে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এটা শুনে আমার মাথায় যেনো বাজ পড়লো। আমি কাপা কাপা গলায় বলি,
” তুই এই বিয়েতে রাজি ? ”
মরিয়ম হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে,
” হুমম। মানুষটাকে আগে থেকেই চিনি আমি।অনেক ভালো জানিস। ”
আমি মরিয়ম এর সম্মতি শুনে আমার প্রেমের দুয়ারে তালা দিয়ে দেই। খুব খুশি হওয়ার ভান করে বলি
” তা কবে বিয়ে ? নিমন্ত্রণ পাবো তো ? ”
মরিয়ম হেসে বলে,
” নিমন্ত্রণ তোকে দিবো না তো কাকে দিবো। ”
সেদিন আমি ঘরে এসে সারাদিন কান্না করেছি। খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম আমি সেদিন। তারপর আর কি। মরিয়মের বিয়ে হয়ে যায়। আর আমিও পরিস্থিতির চাপে পড়ে তোর মাকে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের পর আমার মরিয়মের সাথে এক বন্ধু সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক ছিল না। ঈপ্সিতার জন্মের সময় মরিয়ম মৃত্যুর সাথে লড়ছিল। সেদিন ঈপ্সিতার বাবা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলে হসপিটাল যেতে। আমি তোর মাকে একথা বললে সে যাওয়ার জন্যে বলে। আমি সেখানে যাওয়ার পর তোর মায়ের ডেলিভারি পেইন উঠে। কিন্তু আমি তোর মা কাছে ফিরে আসতে পারছিলাম না কারণ ডক্টর বলেছিল হয় মরিয়ম কে বাঁচানো যাবে নয় ঈপ্সিতা কে। ঈপ্সিতার বাবা অনেক ভেংগে পড়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে দুজনকেই বাঁচানো গিয়েছে। ”
সৌরভ বাবার কথা মন দিয়ে শুনে। বলে,
” তাহলে মায়ের গায়ে হাত উঠিয়েছিলে কেনো ? প্রত্যেক বছর ঘরবন্ধি বিষয়টা কি ? ”
” মানুষের মন মেজাজ সবসময় ঠিক থাকে না। নিজের ভালোবাসার মানুষকে মরার সাথে পাঞ্জা লড়তে দেখে আমার দিলটা পুরো চুরমার হয়ে গিয়েছিল। আর তোর মা বারবার জিজ্ঞেস করেছিল আমি কেনো ওর সময় থাকি নি। তাই রাগের মাথায় ওরকম কাজ করে ফেলেছি। আর ঘর বন্দী বিষয়টা মরিয়মের জন্যে হলেও সেই পর্যন্ত এই ব্যাপারে অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। আর এই সমস্ত কাহিনী তোর মা খুব ভালো করে জানে। এবং সে আমার অনুভতির সম্মানও করে। শুধু তুই করিস নি। আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে যে তোর মনে এই ধরনের ভাবনা ছিল আমাকে নিয়ে। একবার আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতি। তাহলে আজ এইদিন দেখতে হতো না। আর বাবা ছেলের সম্পর্কও নষ্ট হতো না। ”
বলেই সৌরভের বাবা নিজের চোখের জলটা মুছে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলেন। আরসৌরভের চারিদিক অন্ধকার লাগছে। কি করে ফেলেছে ও। এভাবেই কাউকে কীকরে অবিশ্বাস করতে পারলো সে। এখন এই ভুলের মাসুল কীভাবে গুনবে সে। আর ঈপ্সিতা ? ও কি তাকে ক্ষমা করবে ? নানা। ও যা করেছে তাতে ক্ষমার কোনো প্রশ্নই আসে না। সৌরভ মাটিতে বসে পড়লো। চিৎকার দিয়ে বললো,
” এই দোষের কোনো ক্ষমা হয়ে না ইপ্সিতা। কোনো ক্ষমা হয়ে নানানানানানা…….”
চলবে..
[