শূন্য থেকে আসে প্রেম পর্ব ১৭+১৮

#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

পা থেকে কাঁচ টা বের করার পর এখন রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। কিছুটা কেটেও গেছে পায়ের তলা। উনি ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স এনে আমার পা ব্যান্ডেজ করে দিতে চাইলে আমি বিরক্ত হয়ে বলি,

” সামান্য কাঁচ ঢুকার জন্যে ব্যান্ডেজ লাগে না। ছাড়ুন আমি যাবো। ”

বলেই আমি পা টা উনার থেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলাম। হটাৎ উনি আমার পা টা ধরে কাটা জায়গায় নিজের আঙ্গুল চেপে ধরলেন। আর আমি ব্যাথায় “আহ্ ” করে উঠি। তখন উনি আঙ্গুল সরিয়ে নিয়ে শান্ত গলায় বলেন,

” একটা কথা বাড়তি বলবে তো এইভাবেই আঙ্গুল চেপে ধরবো। So calm down. আমাকে আমার কাজ করতে দাও। ”

আমি আর কি বলবো। রাগে কটমট দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম। কিন্তু উনি আমার চাহনির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজ মনে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে আমি বলি,

” এবার যেতে পারি ? ”

উনি আমার পা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। নিজের হাত টা ঝাড়া দিয়ে বলেন,

” দেখো হাঁটতে পারো কিনা ? কারণ কাঁচ টা ভালোই ফুটেছিল পায়ে । ”

আমি নাক মুখ কুচকে বলি,

” সামান্য কাঁচ ফুটেছে। আহামরি কিছুই হয়নি। আমি আপনার মত না যে একটু ব্যাথা পেলেই সেটা নিয়ে নাচানাচি করবো। ”

এসব বলেই আমি বিছানা থেকে উঠতে নিলে পায়ে আবার ব্যাথা পাই। তবুও নাক মুখ খিচে হাঁটতে যাই। কারণ একটু আগে বলা এত বড়বড় কথা আমি ভুল প্রমাণিত করতে চাই না। সৌরভ ভাইয়া দুর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার অবস্থা দেখছেন। দেখছেন বললে ভুল হবে মজা নিচ্ছেন। আমিও কম না। এত সহজে হারবো না। কোনোমতে পা টিপে টিপে হাঁটতে গেলাম। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি পা টা প্রচন্ড ব্যাথা করতে লাগলো। আর পারলাম না বিছানায় বসে গেলাম। উনি দূরে দাড়িয়ে থেকে বুকে দু হাত গুজে বলেন,

” কি হলো ? দম শেষ ? ”

আমি কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। উনি আমার কাছে এসে বসলেন। আমার পায়ের দিকে একনজর তাকিয়ে বলেন,

” বলছিলাম হাঁটতে পারবে না। তবুও কথার ফুলঝুরি ফুটিয়ে হাঁটতে গিয়েছিলে। এখন কি হলো ? লাগলো তো ব্যাথা । ”

আমি উনার দিকে ফিরে গম্ভীর গলায় বলি,

” শরীরের ব্যাথা টাকি মুখ্য ? মনে যে অনবরত ব্যাথা দিয়ে চলেছেন তার বেলায় ? ”

উনি আমার কথা শুনে আমার দিকে একঝলক তাকান। আবার পরপরই নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান। যাক বাবা। অন্যদিন হলে তো নানা রকম ঝাঁঝালো কথা বলতো। আজ কি হলো ?
আমি একটা বালিশ ঠিক করে বিছানায় হেলান দিলাম। সকালে উঠে এখন পর্যন্ত ফ্রেশ হয়নি ।কিরকম যেনো লাগছে। কিন্তু কথা হলো রুমে কাঁচ এলো কোথা থেকে ? কাল তো আমার রূমে কিছু ভাঙেনি। তাহলে ? কিছুসময় পর উনি শেলি কে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। আমি ভাবছি কি করতে চান উনি এখন ? শেলি আমার কাছে এসে কাচুমাচু গলায় বলে,

” ভাবী, কাইল আমি এই ঘর পরিষ্কার করত গিয়া একটা কাচের ফ্রেম ভেংগে ফালাইসি। খালাম্মা বকা দিবো দেইখা আমি তারাতারি করে কাঁচ গুলা পরিষ্কার করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমি খেয়াল করি নাই যে এখনও কিছু কাঁচ এর টুকরা বাকি ছিল। মাফ কইরা দেন ভাবী। আর এরহম ভুল হইবো না। ”

শেলি কে তো এখন বকা দিয়েও লাভ নেই। বেচারি তো আর ইচ্ছে করে করে নি এটা। তাই আমি বলি,

” ঠিক আছে। কিন্তু পরের বার থেকে একটু দেখেশুনে কাজ করবে। ঠিক আছে ? ”

শেলি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেই। তারপর সৌরভ ভাইয়ার দিকে ফিরে বলে,

” এহন যাই ? মাফ তো চাইলাম। ”

সৌরভ ভাইয়া বলেন,

” হুম যাও। নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল রাখবে। ”

শেলি চলে গেলে আমি একটু অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাই। এইটুকুর জন্যে বেচারীকে এতটা দোষী বানানোর কি ছিল ? আমি উনাকে বলি,

” আসলে না আমি ফ্রেশ হবো । তো আরকি ….”

উনি হটাৎ আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আর এতে আমি মনে হয় ৮৮০ ভোল্টের ঝটকা খেলাম। চোখ গুলা বড়বড় করে উনার দিকে তাকালাম আমি। প্রচন্ড অবাক হওয়ায় মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। উনি আমাকে ওয়াশরুমে এনে একটা টুলে বসিয়ে দিয়ে হাতে আমার ব্রাশ আর পেস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলেন,

” কোনো আবুলতাবুল ভাবার দরকার নেই। এটা জাস্ট সহানুভূতি হিসেবে ধরে নিতে পারো। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নাও । শেষ হলে আমাকে ডাক দিও। ”

বলেই উনি ওয়াশরুমে দরজা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে গেলেন। তুলে বসে ভাবছি উনি নিজেকে কি মনে করেন ? উনার কাছে মনে হয় উনার প্রেমে আমি রীতিমতো মারা যাচ্ছি ? হুঁহ এতটাও চিপ আমি না। যত্তসব।

ফ্রেশ হওয়া শেষ হলে আমি এক পায়ে শরীরের সমস্ত ভর দিয়ে উঠে দাড়াই। আর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওয়াশরুম এর দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিলাম। সাথে সাথে উনি দরজা টা খুলে দিলেন। আর আবার আমাকে কোলে তুলে নিলেন। কিন্তু আমি এবার রাগী মুখে বলি,

” আদিক্ষেতা দেখাচ্ছেন ? নামান বলছি আমাকে। যত্তসব দরদ দেখানোর দরকার নেই। আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারবো। ”

বলেই উনার বুকে আমি কিল ঘুষি দিতে লাগলাম। কিন্তু উনার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে এসবে উনার কিছুই যায় আসে না। মুখ স্বাভাবিক হয়ে আছে উনার। বিছানার কাছে এসে আমাকে বিছানায় ঠাস করে নামিয়ে দেন। আর এতে আমি হালকা কোমরে ব্যাথা পাই। কোমরে হাত দিয়ে আমি করুন দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাই। উনি ভাবলেশহীন ভাবে বলেন,

” এটা তোমার শাস্তি। এতক্ষণ আমাকে মারার জন্যে। ”

বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। উনি বেরিয়ে যাওয়ার একটু পর আন্টি আর সুরভী রুমে আসে। আন্টির হাতে একটা প্লেট আছে। প্লেটে সকালের নাস্তা রাখা। আন্টি আমার পাশে বসে আমাকে খাইয়ে দেন। আর সুরভী আমার পাশে বসে ইচ্ছামত বকবক করতে থাকে। এসব দেখে আমার কেমন যেনো সুখ সুখ লাগছিলো। মনে হচ্ছিল যেনো নিজের বাড়িতেই আছি। সামান্য পায়ে ব্যাথা। আর সেটা দেখেই ওদের মনে কত মায়া জমে গেছে আমার জন্যে ভাবতেই চোখের কোনায় জল জমা হয়ে গেলো। আমি আঙ্গুল দিয়ে জলটুকু মুছে আবার খাওয়ায় মন দিলাম।

এখন প্রায় ১২ টা বাজে। উনি সেই যে রুম থেকে বেরিয়ে গেছেন আর আসেন নি। কিন্তু তাতে আমার কি ? উনি না থাকলেই আমি আরো ভালো থাকি। হটাৎ আমার ফোনে কল এলো। আমি বালিশের কাছ থেকে ফোন টা হাতে নেই। আননউন নম্বর দেখে ফোনটা রিসিভ করে হেলো বলি। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই। এতে আমি বিরক্ত হই। রাগে বলি,

” আরে কে ভাই তুমি ? কথা বলতে যেহেতু ফোন দিয়েছ কথা বলে রেখে দাও। খামোকা আমাকে কেনো ডিস্টার্ব করছো। কিজন্য ফোন দিয়েছ তা বলবে না আমি ফোন রেখে দিবো । যত্তসব। ”

ওপাশ থেকে কেউ কান্নাভেজা গলায় বলে উঠে,

” আমি তোমায় মিস করছি ইপশী । খুব বেশি মিস করছি। খুব বেশি। ”

বলেই ওপাশের মানুষটা ডুকরে কেদে উঠল। আমি অবাক। এতদিনে তো আমি অভ্রর কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হটাৎ ও ফোন দেওয়ায় আমার কেমন যেনো অসস্তি লাগছে। তবুও আমি নিজেকে সামলে বলি,

” কেমন আছো অভ্র ? ”

অভ্র নাকটা টেনে বলে,

” ভালো নেই। একদম ভালো নেই আমি। খুব করে মনে পড়ছে তোমাকে। ”

বলেই আবার নাক টানে সে। আমি কি বলবো ওকে। ওর পরিস্থিতিটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এতে আমার কি করার আছে ? আমি চুপ করে থাকায় অভ্র বলে,

” আমি তোমাকে ফোন দিয়ে অসস্তিতে ফেলে দিলাম তাইনা ইপশি? ”

আমি এতে ইতস্তত গলায় বলি,

” আরে নানা। ঠিকাছে। আমি কিছু মনে করিনি। ”

” ঈপ্সি , আমি তোমাকে ভুলতে পারছিনা । জানো আমি আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি তোমাকে ভুলার। কিন্তু আমার দ্বারা হচ্ছে না। এতদিন তোমাকে ভুলার জন্যে কত কিনা করেছি আমি। কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারছিনা। মাঝরাতে নিকোটিনের ধোঁয়াও তোমার নেশা কাটাতে পারছে না। কেনো বলতে পারো ইপশি ? ”

আমি ওর কথা শুনে কষ্ট পেলাম। ছেলেটা আসলেই আমাকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু আমার হাতে যে কিছু করার ছিল না। আমি বলি,

” শান্ত হও অভ্র। আর চেষ্টা করো। একদিন নিশ্চই পারবে। ”

অভ্র নিশব্দে হাসলো। কিন্তু এই হাসির কারণ কি ? আমি আবার বলি,

” বিয়ে করে নাও অভ্র। এরকম তো আর দিন চলে না। ”

অভ্র কঠোর গলায় বলে

” কেনো ? আমাকে ভালোবাসো না জানি। কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে বাঁধা দেওয়া তোমার সাজে না ইপশি। একদমই না। ”

আমি আর কিছু বললাম না। কারণ এখন কিছু বললে অভ্র রেগে উঠবে। অভ্র বলে,

” সংসার কিরকম চলছে তোমার ? ”

ওর কথায় আমি থতমত খেয়ে গেলাম। হটাৎ আমার সংসার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে কেনো ? অভ্র আবার বলে,

” ওকে । বাদ দেও। আমি তোমাকে জোর করবো না বলার জন্যে। শুধু এইটুক জানতে ফোন দিয়েছে ইপশি আমি কি তোমার মনের কোনো একটা কোণায় কখনো ছিলাম না ? সবসময়ই কি একজন তৃতীয়জন হিসেবে ছিলাম তোমার জন্যে ? আজ প্লিজ উত্তর টা দিও। অনেক জানতে ইচ্ছা করছে। হয়তো মনের তৃপ্তির জন্যে । ”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। সত্যিটা কি আদৌ ওর ভালো লাগবে ? আমি আমতা আমতা গলায় কিছু বলতে নিলে অভ্র আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে

” আজ অন্তত মিথ্যা বলো না। তোমার মিথ্যার ভার আমি আর নিতে পারবো না। জানো অনেক কষ্ট হয় তখন। অনেক কষ্ট। ”

আমি ওর কথা শুনে ভাবি একটা ছেলেকে আমি ভেংগে গুড়িয়ে দিয়েছি। তার আমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন গুলা ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছি আমি। এতটা স্বার্থপর আমি। এতটা। আমি খানিকটা সময় নিয়ে বলি,

” তুমি আমার দেখা সবচেয়ে বিশুদ্ধ প্রেমিক এবং বেস্ট এক পুরুষ। আজ যদি আমার বিয়ে তোমার সাথে হতো তাহলে হয়তো পৃথিবীর সব সুখগুলো আমার পায়ে নিমিষেই ধরা দিতো। কিন্তু আমি মনে হয় তাতে খুব একটা পুলোকিত হতে পারতাম না। কারণটা এই মন। আমি কখনোই তোমাকে ভালোবাসি নি। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল বিয়ের পর হয়তো তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটু হলেও জন্মাবে। তাই এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু নিয়তি হয়তো তাতে সহায় ছিল না। তাই আজ দুজন দুই পথে আছি। ”

অভ্র আমার কথা শুনে হালকা হাসলো। বললো,

” উত্তরটা আমি পেয়ে গেছি। ভালো থেকো। আর নিজের বিবাহিত জীবনে সুখী হও। ”

বলেই অভ্র ফোন কেটে দিলো। আমি ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বিছানার উপর রাখলাম। কিছুসময় ভাবলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ভাবনার কোনো সমাধান পেলাম না। ব্যার্থ আমি। আজ আমার জন্যেই অভ্রর মত অতি ভদ্র ও বিশুদ্ধ প্রেমিক কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু আমার ওর জন্যে শুধুই সহানুভূতি জন্মাচ্ছে। কিন্তু সেরকম কোনো কষ্ট হচ্ছে না। হয়তো অভ্র কে ভালোবাসতে পারিনি বলে।
#শূন্য_থেকে_আসে_প্রেম
#পর্ব – ১৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

কিছুদিন পর

আজ বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী। প্রত্যেক বছর এই দিনটা আমাদের বাড়িতে খুব বড় করে অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে মায়ের এবং বাবার পক্ষ থেকে অনেকেই আসে। আর মা বাবার পক্ষ থেকে স্পেশাল দাওয়াত পান আঙ্কেল এর পরিবার। মানে সৌরভ ভাইয়ারা। আজও এই বাড়িতে সকাল থেকে সবাই রেডী হচ্ছেন আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্যে। আর আমিতো খুশিতে মনে মনে নাগিন ডান্স দিচ্ছি। এবার গিয়ে আমি অনেকদিন থাকবো ও বাড়িতে। সেবার থাকতে পারিনি সেই আফসোস এবার মিটাবো। সকালে উঠে সম্পূর্ণ ঘর গুছিয়ে আমি রেডী হতে রুমে চলে এলাম। এসে দেখি উনি এখনো ঘুমাচ্ছেন। উফফ একটু পর সবাই যাওয়ার জন্যে তাড়া দিবে আর উনি এখনো ঘুমাচ্ছেন। উনার জন্যে ত আবার যেতে দেরি হয়ে যাবে। আর আমি তা একেবারে হতে দিবো না। একেবারেই না। আমি উনার পাশে গিয়ে কানের কাছে জোড়ে বলি,

” উঠুননন…”

আমার ডাক শুনে উনি ঘুমের মধ্যে ভরকে গেলেন। চোখটা আধো খুলে আমার দিকে তাকালেন। তারপর বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে অপরপাশে ফিরে আবার ঘুমিয়ে গেলেন। উফফ কি মসিবত রে বাবা। অন্যদিন তো এতটা ঘুমকাতুরে হয়না। তাহলে আজ কি হলো ? আমি গিয়ে উনার ওপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে দেই। উনি ঠাণ্ডায় আবার চোখ মেলে তাকালেন। আমি কোমরে দু হাত দিয়ে বলি,

” আপনি উঠবেন , না আমি আন্টিকে ডাক দিবো ? আজ আমাদের বারি যেতে হবে জানেন না ? উঠুন বলছি। আপনার জন্যে দেরি হয়ে যাবে যেতে। ”

উনি একটা হাই তুলে বললেন,

” আমি যাবো না। তোমরা যাও। ”

বলেই আমার হাত থেকে কম্বল টা টেনে আনা ঘুমিয়ে গেলেন। আমি এতে চরম রাগে আন্টির রুমে গেলাম। আন্টি রেডী হচ্ছিলেন। আমি উনার কাছে গিয়ে নাক ফুলিয়ে বলি,

” আন্টি উনি রেডী হচ্ছেন না। তাহলে তো দেরি হয়ে যাবে যেতে। এতক্ষণে তো মনে হয় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। ”

আন্টি কানে দুলটা পড়ে আমার দিকে ফিরে তাকান। হেসে বলেন,

” তোমার কি মনে হয় মরিয়ম [ আমার মা ] তোমার শ্বশুর না গেলে অনুষ্ঠান শুরু করবে ? ”

আমি ভাবলাম কথাটা তো ঠিক। প্রত্যেক বছর আঙ্কেল গেলেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। তাও আগে গেলে তো ক্ষতি নেই। আমি আবার বলি,

” তো উনি যাবেন না ? ”

আন্টি ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলেন,

” মনে হয় না। তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললেই সৌরভ না করে দেয়। কেনো জানিনা। বলেনি কখনো। ”

আমি আর কিছু না বলে আন্টির কাছ থেকে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি উনি খুব আরামসে ঘুমাচ্ছেন। না গেলে নাই। আমার কি তাতে
বরং উনি না গেলে আমি আরো ভালো থাকবো। আমি ওয়াশরুম থেকে একটা হালকা গোলাপি কালারের ড্রেস পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাড়ালাম। চুড়ি , কানের দুল আর গলায় একটা ছোট্ট চেইন পড়ে নিলাম। হটাৎ আমার ফোন কল এলো। ফোনটা বিছানার পাশে ছিল।
ঈপ্সিতার ফোনের রিংটোন শুনে সৌরভের ঘুম ভেঙে গেলো। ও বিরক্তি নিয়ে ইপ্সিতার ফোনের দিকে তাকালো। ফোনের স্ক্রিনে অভ্র নাম দেখে সৌরভের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। অভ্র কেনো ঈপ্সিতা কে ফোন দিয়েছে। কি দরকার ওর ঈপ্সিতার সাথে।
ফোন বাজতে দেখে আমি জলদি ফোনটা রিসিভ করলাম। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে অভ্র বলে,

” কখন আসছো তোমরা ? এতক্ষণ হয়ে গেছে। ”

আমি হেসে বলি,

” আরে আসছি। আর কিছুসময়। ”

” হুম তারাতারি আসো। আমি না মানে সবাই অপেক্ষা করছে। ”

” এইতো রেডী হচ্ছি। চলে আসবো। ”

বলেই ফোন কেটে দিলাম আমি। সৌরভ এতক্ষণ ঈপ্সিতার দিকে তাকিয়ে ছিল। অভ্রর সাথে এত কিসের কথা ওর। কই সৌরভের সাথে তো কখনো হেসে কথা বলে না ও। তাহলে অভ্রর জন্যে এত। দরদ কিভাবে ? সৌরভ ঈপ্সিতার দিকে তাকিয়ে বলে,

” অভ্র আসছে পার্টিতে ? ”

আমি ঠোঁটে লিপস্টিক টা দিয়ে বলি,

” হুম। ”

ঈপ্সিতার কথা শুনে সৌরভের বড্ড রাগ লাগছে। তাই জন্যেই কি এত সাজুগুজু ? না ইপ্সিতা কে একা ছাড়া যাবে না। ও নিজে পাহারা দিবে ওকে। ভাবতেই সৌরভ বিছানা থেকে উঠে গেলো। সৌরভ ভাইয়াকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে আমি অবাক হয়ে বলি,

” আপনি যাবেন ? ”

উনি ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলেন,

” হুম। ”

আমি উনার কথা শুনে অনকে বেশি বিস্মিত হলাম। কি চলছে উনার মনে। একবার বলে যাবে তো আরেকবার বলে যাবে না। এই লোকটা এত বেশি রহস্যময় কেনো ? উনার রেডী হওয়া শেষে আমি বলি,

” শেষ ? চলি ? ”

উনি কলার টা একটু ঝাকিয়ে বলেন,

” কিরকম লাগছে আমাকে ? ”

আমি একটু তাকালাম উনার দিকে। লোকটা আসলেই ক্রাশ খাওয়ার মত। কিন্তু আমার কাছে একেবারে অসহ্য লাগে এই মানুষটাকে। আমি বলি,

” আগে মন কে সুন্দর করুন তারপর না হয় শরীর এর দিকে নজর দিবেন। ”

আমার কথা মনে হয় উনার হজম হয়নি। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলেন,

” এদিকে আসো। ”

আমি উনার কথা বলি,

” মানে ? ”

উনি কিছু না বলে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি আমার জায়গায় শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। উনি আমার কাছে এসে আমার চোখ থেকে নিজের আঙ্গুল দিয়ে কিছু কাজল নিয়ে কানের পিছনে লাগিয়ে দিয়ে বলেন,

” উম রেশ..

আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বিরক্ত গলায় বলি,

” জানি জানি। আর বিবরণ দিয়ে হবে না। এতদিন এই রেশ আমার নজরে পড়ে নি শুধু আপনিই দেখেছেন। চলুন এখন। ”

আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পর মা আর বাবা দুজনে এস আমাদের ঘরে ঢুকিয়েছেন। আজ মা বাবা দুজনই অনেক খুশি যা তাদের চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে। মা আংকেলের কাছে এসে গেল ফুলিয়ে বলেন,

” এত দেরি করলি যে ? জানিস সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি। সবসময় তোর লেট। ”

আঙ্কেল হেসে বলেন,

” এটা সাবিনাকে[ আন্টি ] জিজ্ঞেস কর। মেয়ে মানুষ বুঝিস তো কত লেট হয় রেডী হতে। ”

আন্টি আংকেলের কথা শুনে বলেন,

” হ্যা হ্যা এখন যত দোষ নন্দঘোষ। তুমিই তো দেরি করলে অফিসের ফাইল চেক করেছিলে সেজন্যে। আর এখন মেয়ে মানুষের দেরি নিয়ে কথা বলছো। ”

” সরি বাবা ভুল হয়ে গেছে আমার। মাফ কর। ”

আংকেলের কথা শুনে আন্টি হেসে দিলেন। মা আমাকে বলেন,

” সৌরভ এসেছে না ? ওর কাছে যা একা বসে আছে। খারাপ লাগবে । ”

আমি আর কি করবো। অনিচ্ছা সত্বেও উনার কাছে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালাম। উনার কাছে গিয়ে দেখি আপু আর রিফাত ভাইয়া উনার পাশে বসে আছেন। আমি মাথা নিচু করে ওদের কাছে গিয়ে বসি। আপু এসে আমকে জড়িয়ে ধরে হালচাল জিজ্ঞেস করে। আমিও হালকা হেসে তার জবাব দেই। রিফাত ভাইয়া বলে উঠেন,

” তো সৌরভ বিয়ের এতদিন হয়ে গেল হানিমুনে যাবি না ? আমরা তো গিয়েছি। ”

সৌরভ ভাইয়া আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার রিফাত ভাইয়ার দিএক তাকান।বলেন,

” দেখি কবে যেতে পারি। ”

আপু বলেন,

” দেখি মানে ? আরে নিউ কাপল তোমরা। যাওয়া উচিত তোমাদের। তাহলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব টা একটু হলেও কমবে। ”

সৌরভ ভাইয়া কিছু বললেন না শুধু আমার দিকে তাকালেন। আমি বলে উঠি,

” আরে আপু থামো না। আঙ্কেল অসুস্থ একটু। পরে নাহয় ভেবে দেখবো আমরা। ”

আপু আমার কথার উত্তরে আর কিছু বললেন না। হটাৎ অভ্র ওদের কাছে এসে বসলো। আর তাকে দেখি সৌরভের মুখটা লাল হয়ে গেল। এই ছেলেটা আবার কেনো এসেছে ? অভ্র সৌরভের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,

” হাই , আমি অভ্র। ”

সৌরভ অভ্রর বাড়ানো হতে দিয়েও একবার তাকায়। আর ভদ্রতার খাতিরে ওর সাথে হ্যান্ডসেক করে বলে,

” আমি সৌরভ। Nice to meet you. ”

অভ্র হালকা হাসলো। তারপর ঈপ্সিতার দিকে তাকিয়ে বলে,

” তোমার সাথে কথা আছে। একটু সময় দেওয়া যাবে কি ? ”

আমি অভ্রর কথা শুনে ইতস্ততঃ বোধ করলাম। তবুও ওকে বলি,

” হ্যা। বলো। ”

অভ্র চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলে,

” এখানে না। আলাদা সময় দেওয়া যাবে ? ”

আমি জোরপূর্বক হেসে বলি,

” চলো। ”

বলেই অভ্র আমাকে সেখান থেকে নিয়ে গেলো। আর সৌরভ তাদের যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। অভ্র বললেই কি ঈপ্সিতার যাওয়া দরকার ছিল। মানা করতে পারতো না ও। রাগ রীতিমতো সবকিছু গুড়িয়ে দেওয়ার মন চাচ্ছে সৌরভের।

চলবে…

[ রহস্য খুলার পথে…]
চলবে…

[[ অনেক বড় করে দিয়েছি।

হ্যাপী রিডিং😊 ]]

@আভা ইসলাম রাত্রি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here