#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৩
.
.অন্ধকার আলো আধারি রুমের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেলা। চোখ সামনের দিকে স্থির হয়ে আছে। এক হাত সাঁঝ এর হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে বেলা। চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে পুরো । সাঁঝ বেলার মুখ আর রিয়্যাকশান দেখে ওখানে থাকা গার্ড কে লাইট অন করতে বলে যাতে বেলার এই রকম অদ্ভূত না লাগে। সাঁঝ ইশারা হতে পুরো রুমে লাইট অন হয়ে যায়। লাইট অন হতে বেলা সাঁঝ এর হাত খুব জোরে চেপে ধরে। সাঁঝ এক হাত বাড়িয়ে বেলার কোমর জড়িয়ে নেয় বেলার স্তব্ধ মন কে ঘুরিয়ে নিতে। বেলা চমকে গিয়ে সাঁঝ এর দিকে তাকায়। তারপর আবারো সামনে তাকায়।
.
.দেয়ালের এক কোণে ঘেঁষে বসে আছে দিশা। মাথার চুল গুলো পুরো আউলে ঝাউলে আছে। ড্রেস টা ও ঠিক ঠাক নেই। কাঁধের দিকে অনেকাংশে ছিড়ে গেছে। হাতের ওপর প্রচুর আচড় ও নখের দাগ হয়ে আছে। পায়ের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে গেছে। ফেটে ফেটে রক্ত পড়ছে। পায়ের তলায় কাঁচ ফুটে আছে। হাঁটু মুড়ে দু হাত ভিতরে রেখে মাথা টা হাঁটু তে রেখে আছে দিশা। মুখটা ও এখনও দেখতে পাই নি বেলা দিশার। কিন্তু দিশা কে এই অবস্থায় দেখে বেলার কোনো কিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এই টুকু দেখেই বেলা স্তব্ধ হয়ে গেছে।
.
. বেলার চিৎকার করাতে দিশা মাথা তুলে বসে। আর দিশা মাথা তুলতেই বেলা সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরে। কোনো কথা বলতে পারে না। সাঁঝ বেলা কে নিয়ে পাশে থাকা চেয়ারে বসে। তারপর বেলা কেও নিজের কোলের ওপর তুলে বসিয়ে নেয় সাঁঝ। বেলা এখনও সাঁঝ এর বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে আছে। সাঁঝ বেলা কে জড়িয়ে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর এদিকে তাদের এই দৃশ্য দেখছে আগুন চোখ নিয়ে দিশা।
.
–“হুস বেবি সামনে দেখো। ভয় কিসের আমি আছি না তোমার সাথে। কিচ্ছু হবে না। আর আমি কিছু হতে ও দেবো না। যারা যারা তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাদের হাল এইরকম হবে। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
. বেলা চমকে তাকায় বুক থেকে মাথা তুলে। সাঁঝ এর মুখের দিকে প্রশ্ন নিয়ে দেখে সাঁঝ বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বেলার ঠোঁটের ওপর আলতো করে চুমু খায়। তারপর সামনে দিকে ইশারা করে তাকানোর জন্য। সাঁঝ দিশার দিকে তাকিয়ে হিংস্র ভাবে বাঁকা হেসে জিজ্ঞেস করে।
.
–“তো কেমন লাগছে এখন দি…শা।
.
. বেলা কিচ্ছু বুঝতে না পেরে সাঁঝ এর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ সে দিশার দিকে তাকাতে পারছিল না। দিশার মুখের এক সাইট পুরো পুড়ে গেছে। ঘা গুলো দগ দগে হয়ে আছ। অন্য দিকের থেকে মুখে পাঁচ আঙুল এর দাগ বসে আছে। ঠোঁটের কোন ফেটে রক্ত পড়ছে। মাথা ফেটে আছে। কোল বেয়ে রক্ত শুকিয়ে আছে। হাত দুটো মোটা কাঁটা শিকল দিয়ে বাঁধা। যার জন্য হাতে ফুটে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে।
.
–“তো ভাল্লাগছে তো নাকি? তুই বেলা কে পুড়িয়ে মারতে চেয়ে ছিলই। তো আমি ভাবলাম সেই অনুভূতিটা কেমন হয় তুই ও একবার টেস্ট করে দেখ। কি তাই না? নিশ্চয়ই খুব ইনজয় করছিস? সাঁঝ বাঁকা হেসে বলে ওঠে।
.
–” মানে? কি বলছো? আমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়ে ছিল মানে? বেলা আতকে উঠে সাঁঝ কে জিজ্ঞেস করে।
.
–” হুম ।সেদিন ইউনিভার্সিটিতে তুমি এমনি এমনি আটকে যাওনি। তোমাকে আটকে রাখা হয়ে ছিল। এবং এটা করেছে এই যে দিশা। তোমাকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে চেয়ে ছিল। সাঁঝ হিংস্র ভাবে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
.
. বেলা এটুকু শুনে ভয়ে সাঁঝ কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। সাঁঝ ও দু হাত দিয়ে আগলে নেয় বেলা কে। বেলা চোখ বন্ধ করলেই সেই দৃশ্য মনে উঠলে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায়। ওগুলো ভাবতে ও ভয় হয়।
.
–” আরো অনেক কিছু আছে জান। এটা তো এবারে করেছে। তোমাকে কষ্ট দিতে ও আরও অনেক কিছু করে গেছে। বেলা চোখ তুলে সাঁঝ এর দিকে তাকায়। সাঁঝ আবারও বলতে থাকে।
.
–” তোমার মনে আছে চার বছর আগে প্রোগ্রাম এর দিন গ্রীনরুমে তোমার কাছে একটা মেসেজ যায়। যেখানে আমার সাথে দিশার কিছু ক্লোজ ছবি ছিল?
. বেলা মাথা নাড়া দিতে সাঁঝ আবারো বলে ওঠে।
.
–” ওই গুলো দিশা পাঠিয়ে ছিল। তবে ওটা যেমন উদ্দেশ্য তোলা হয়েছে ওটা তেমন কিছু ছিল না। তারপরও তুমি আমাকে বিশ্বাস করে আমাকে প্রোপজ করলে মনে আছে? তুমি আমাকে একটা গোলাপের বুকে দিয়েছিলে মনে আছে?
.
.বেলা এবার চোখে পানি নিয়ে সাঁঝ এর দিকে তাকায় চোখে ফুটে আছে একরাশ অভিমান। সাঁঝ বেলার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে বেলার ঠোঁটে আবারো চুমু খায়। মুচকি হেসে আবারো বলে ওঠে।
.
–“ওই দিন আমার কিছু কারণ ছিল যার জন্য আমি তোমাকে তখন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। যেটা কিন্তু একদিকে যেমন সত্যি আবার মিথ্যা। কারণ আমি তোমাকে সামনে থেকে সরিয়ে দিলে ও মন থেকে পারিনি। বুকে হাজারো যন্ত্রণা কষ্ট নিয়ে তোমাকে আমি ওই দিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম এর কারণ আমি তোমাকে পরে বলবো। ওই দিন তোমার দেয়া বুকে থেকে আমি একটা গোলাপ নিয়ে গিয়েছিলাম। নিজের সাথে করে। তুমি তখন পিছন মুড়ে ছিলে তাই তুমি জানতে পারনি। তুমি কি সেই গোলাপ টা আমাদের বাড়ির কোথাও দেখনি? সাঁঝ আবারো প্রশ্ন করে বেলা কে।
.
. বেলা চোখ মুছে মনে করার চেষ্টা করে। হ্যাঁ হ্যাঁ সে তো দেখেছে একটা শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ। হ্যাঁ মনে পড়েছে বেলার। সাঁঝ এর সেই সিক্রেট ওয়াডরবে ছিল গোলাপ টা। বেলা মাথা নাড়া দিতে সাঁঝ মুচকি হেসে আবারো বলে।
.
–“ওই দিন বুকে আমি পা দিয়ে পিষে যায় নি।
.
. বেলা এবার যেনো আরো বেশি করে চমকে গেছে। একবার দিশা কে দেখে সামনে তাকিয়ে আবারো। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–” আমি ওখানে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর দিশার লোক গিয়ে ওটা পা দিয়ে পিষে দেয়। ওরা আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাদের ওপর নজর রেখেছিলো। দিশা আগের থেকেই তোমার করা পাগলামি গুলো জানতে পেরে ছিল আর তাই তোমাকে আমার থেকে দূরে সরানোর জন্য তোমার মনে বিষ ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য প্ল্যান করে।
.
–“তাহলে ওই মেসেজ গুলো কি ছিল সাঁঝ? বেলা বলে ওঠে।
.
–” ওইদিন আমার একটা মিটিং ছিল তাই আমি অফিসে গিয়ে আমার কেবিনেই আমি আমার মোবাইল রেখে মিটিং রুমে চলে যাই। ওইদিন আকাশ ও অন্য একটা আরজেন্ট কাজে গেছিলো তাই আমাকে ফোন রেখে যেতে হয়েছিল। আর সেই সুযোগ টাই কাজে লাগায় দিশা। আমার ফোন থেকে তোমাকে এসএমএস করে ডিলিট করে দেয়। যাতে আমি কিছু জানতে না পারি। সাঁঝ এটুকু বলেই থেমে যায়।
.
. সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে দেখে বেলার চোখ মুখ পুরো রাগে লাল হয়ে গেছে। রাগী চোখে দিশা কে দেখছেন। যে এই মুহূর্তে তাদের মাথা বাকিয়ে মুখে শয়তানি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
.
–“এরপর ও তোমাকে অনেক ভাবে মারতে চেয়েছে। তোমার মনে আছে যেদিন আমি তোমাকে তুলে বিয়ে করি? ওই দিন ও তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলো। তোমার পিছনে লোক লাগিয়ে দিয়েছিলো। সেদিন আমি সময় মত পৌঁছে তোমাকে তুলে নেই। আমি আর এক মুহুর্ত তোমাকে একা ছাড়তে চাইনি তাই তোমাকে বিয়ে করে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলাম। ওইদিন যদি আমি এক মুহূর্ত দেরি করে পৌঁছতাম তাহলে ভাবতে ও পারছি না। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–“হা হা হা তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছি কতবার কিন্তু তুই মরিসনি। তোকে ওই দিন তুলে নিয়ে গিয়ে ওরা তোকে রেপ করত তার পর তোকে মেরে ফেলত হা হা। আরো একটা সিক্রেট জানিস কি তোর বাবা মা ও আমার জন্য আমার বাবার হাতে মরেছে। হা হা হা বলেই বিশ্রী ভাবে হেসে ওঠে দিশা।
.
. এটা শুনেই যেনো বেলার মাথায় রক্ত চেপে বসে। বেলা সাঁঝ এর কোলে থেকে উঠে গিয়ে দিশার গায়ের জোরে একটা পান্চ করে। দিশা ছিটকে দূরে পরে নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে। বেলার চোখে থেকে আগুন ঠিকরে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। দিশা হাসতে হাসতে উঠে বসে। নাকে থেকে গালে থেকে রক্ত পড়ছে।
.
–“তোকে মারার জন্য আমি রনির সাথে ও হাত মিলিয়ে ছিলাম কিন্ত ওই বিচ টা তোকে ভালোবেসে ফেললো। তাই তোকে পাওয়ার জন্য তোর মামী কে টাকা দিয়ে কিনে নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সাঁঝ তার আগেই তোকে বিয়ে করে ফেলে। হা হা হা তোকে তোলার জন্য আমার ভাই কে তোর পিছনে লাগিয়ে ছিলাম কিন্তু আমার ভাই কে এই সাঁঝ মেরে ফেলেছে। মনে আছে ম্যাডি।
.
–“ম্যাডি ।বেলা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
.
–” হ্যাঁ ম্যাডি আমার ভাই ছিল আমার ভাই। কিন্তু আমি তাকে হারিয়ে ফেলেছি তাই তোকে পুরো মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু এই সাঁঝ তোকে বাঁচিয়ে নিয়ে ছিল আবারো। তোকে মারার জন্য আমি স্পেশাল গুণস নিয়ে ছিলাম যে তোকে এক টার্গেটেই শুট করে দিত। কিন্তু আফসোস। দিশা মুখ দিয়ে আওয়াজ করে আবারও বিশ্রী ভাবে হেসে ওঠে।
.
. বেলা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তার মনে পড়ে সেদিন বারান্দায় ও দাঁড়িয়ে ছিল তার কিছু পরে সাঁঝ এসে তাকে টেনে নিয়েছিল আর সাথে সাথে একটা গুলি ওদের পাশ কেটে বেরিয়ে গেছিলো। ভাবতে যেনো এবার বেলার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
.
–“তুই জানিস তোর বাবা মা কে কেনো মরতে হয়েছে। হা হা হা শুধু আমার জন্য। তোর বাবা তোকে একটা বড় ডল কিনে দিয়েছিল না। ওটা আমিও পছন্দ করেছিলাম কিন্তু তোর বাবা তোর জন্য নিয়ে চলে যায়। আমার খুব রাগ লেগে ছিল। তারপরেই একদিন আমি স্কুল থেকে ফেরার সময়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখি তোর বাবা আর মা রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই আবারো আমার মাথায় রাগ উঠে যায়। তোর বাবা কে দেখেই আমি একটা পাথর ছুড়ে ছিলাম কিন্তু সেটা তোর বাবার লাগে নি। তাই আমি নিজেই হাতে একটা পাথরের টুকরো নিয়ে রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই একটা গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা মারে। যার জন্য আমার পা ভেঙে গেছিলো। মাথা ফেটে গেছিলো । তোর বাবা তখন এসে আমাকে তুলে ওখান থেকে আমার ড্রাইভার আমাকে বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু আমার মনে রাগ টা থেকে যায়। তাই বাড়িতে গিয়ে বলি তোর বাবা আমাকে গাড়ি নিয়ে ধাক্কা দিয়েছে। আর সেটা শুনতেই আর আমার কান্না আর কষ্ট দেখেই আমার বাপি খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে তোর বাবা আর আমার বাবার একমাত্র শত্রু। তারপরেই আমার বাবা প্ল্যান করে তোর বাবার গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করায়। একদিকে ছিল আমার কষ্ট আর অন্য দিকে ছিল বিজনেস শত্রু। তোদের কে মেরে আমার বাবা ওপরে উঠে গেলো। আর তোর বাবা হাওয়া একদম ফুস হয়ে গেছে। বলেই হেসে ওঠে দিশা।
.
. এগুলো শুনতেই বেলার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বেলা পাশে টেবিল থাকা লাঠি তুলে নেয়। সেটা নিয়ে বেলা দিশা কে গায়ের জোরে পেটাতে থাকে। বেলার কোনো দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে শুধু এখন দিশা কে শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। বেলা এক নাগাড়ে পিটিয়ে যাচ্ছে। দিশা মাথা মুখ হাত পা ফেটে রক্ত পড়ছে। বেলার মারার জন্য। দিশা শেষে অজ্ঞান হয়ে যায় মাটিতে হেলে পড়ে। তবুও বেলা পিটিয়ে যাচ্ছে। সাঁঝ উঠে এসে বেলা কে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে সরিয়ে নেয়। বেলা এখনও হাত পা ছুড়ছে। সাঁঝ বেলা কে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। বেলার হাতে থেকে লাঠি টা ফেলে দেয়। বেলা সাঁঝ কে ধরে কান্নায় ফেটে পড়ে। এক বুক হাহাকার ফুটে আছে বেলার এই কান্নার সাথে। সাঁঝ বেলা কে জড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায়। গার্ড কে ইশারা করে অর্ডার দিয়ে যায় দিশার চ্যাপ্টা ক্লোজ করতে।
.
.#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৪
.
–“উইল ইউ ম্যারি মি আলিয়া। আকাশ হাঁটু গেড়ে আলিয়ার সামনে বসে বলে ওঠে।
.
. সামনে দাঁড়ানো আলিয়া যেনো অবাক এর সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কি রিয়্যাকশান দেবে বুঝতে পারছে না। হটাৎ করেই সব কিছু তার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সে বেলার সাথে দেখা করতে এ বাড়িতে এসেছিল প্রতিদিন এর মত । কিন্তু হঠাৎ করেই সব কটা তাকে ধরে নিয়ে আসে রুফটফে। তারপরেই সব কটা কোনো না কোনো বাহনা দিয়ে কেটে পড়ে। আলিয়া এক মনে দূরের আকাশ দেখছিল শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে। হটাৎ পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করে। পিছন মুড়ে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। তার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে আছে আকাশ।
.
–“উইল ইউ বি মাইন আলিয়া ফরএভার? উইল ইউ হোল্ড মাই হান্ড আন্টিল ডাই? আকাশ আলিয়ার অবাক হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
.
–” আমি জানি আমাদের মধ্যে তেমন কোনো ব্যাপার নেই। তবুও এটুকু আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। তোমার সাথে হয়তো আমার দেখাটা ও তেমন হয়নি। তবে তোমাকে যেটুকু দেখেছি তাতেই আমার তোমাকে ভালো লেগে গেছে। সব সময়ে তোমার মুখ টা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি এটা এড়িয়ে যেতে চেয়েছি কিন্তু আমি এটা করে উঠতে পারিনি। এটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই অনুভূতি টা কে কি বলে আমি জানি না। তবে এটুকু জানি তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত ঠিক থাকবো না। তোমাকে আমার সঙ্গে চাই সারাজীবন এর জন্য। তোমাকে পাশে পেতে চাই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।
.
–“দেখো আমি জানি এটা কেমন একটা ব্যাপার হয়ে গেলো যে দেখা হল মাত্র কয়েকদিন আর তারপরেই তোমাকে বিয়ের জন্য প্রোপোজ করা। যদিও এটা কোনো প্রপার প্রোপোজ হয়ে ওঠেনি। না তোমাকে ভালোবাসি বলেছি না বলেছি ডেটে যাওয়ার জন্য। আমি জানি না ভালোবাসা কি।কিন্তু আমি জানতে চাই তোমার সাথে থেকে তোমাকে ভালোবেসে আমি জানতে চাই। ভালোবাসা আসলে কি আর কতটা নেশাগ্রস্ত কতটা আসক্তিময়। আমি বিয়ের পর তোমার সাথে জমিয়ে প্রেম করতে চাই। সবাই বিয়ের আগে প্রেম করে কিন্তু আমি চাই উল্টো। যেখানে থাকবে না কোনো লুকাছুপি কোনো পিছু টান। আমি আমার সাধ্য মতো তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করতে চাই। তোমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তোমার সাথে তোমার মত করে পথ চলতে চাই। যেখানে থাকবে না কোনো লোক দেখানো কোনো কিছু। যা থাকবে সেটা শুধু অন্তরের অন্তর স্থলের ভালোবাসা। দেখো আমি এর আগে কখনো প্রেম ভালোবাসা প্রোপোজ এই সব নিয়ে ভাবিনি তাই আমি জানি না যে কি ভাবে প্রোপোজ করতে হয়। আমি কোনো ফিল্মি ডায়লগ জানি না। আমি শুধু আমার মনের কথাটা তোমাকে জানালাম।
.
. আকাশ মাথা তুলে আলিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে যে এখন মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে যায়। আরো এক পা এগিয়ে যায় আলিয়ার দিকে।
.
–“দেখো সম্পর্কের বয়স টা আসল নয়। কারোর প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয়ে যায় আবার কারোর এক বছর লেগে যায়। পাঁচ বছরের সম্পর্কে ও বিচ্ছেদ হয়। আবার একমাস এর সম্পর্কেও বিয়ে হয়। তাই সম্পর্কের বয়স টা কখন ও আসল নয় এটা কখনো বড় হতে পারেনা । একে অপরের প্রতি গুরুত্ব টাই আসল। একটা সম্পর্কের মধ্যে যতো ভালোবাসা থাক না সেটা যতো পুরোনো হোক না কেনো। সেখানে যদি গুরুত্ব না থাকে একে অপরের প্রতি যদি কোনো কেয়ার না থাকে। তাহলে নিত্য দিনের অবহেলায় ভালোবাসার সম্পর্কে ও আসতে আসতে ভাটা পড়তে থাকে আর সেটা হয় যায় বিচ্ছেদ। তাই আমি সব সময় মনে করি একটা সম্পর্কের মধ্যে গুরুত্ব টাই আসল। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য বিশ্বাস ভালোবাসা এইগুলো প্রয়োজন হয় না সময় সীমা। তাই আমি আমাদের সম্পর্ক টা কে সারাজীবন এর জন্য বাঁচিয়ে রাখতে চাই মৃত্যু পর্যন্ত। তাই তুমি কি আমার হাতটা ধরবে?
.
. আকাশ এর বলতে দেরি কিন্তু আলিয়ার আকাশের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি নেই। আকাশ কে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে আলিয়া। আকাশ ও দু হাত দিয়ে শক্ত করে আলিয়া কে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। আকাশ এর চোখের কোণে পানি চিক চিক করে ওঠে। আর মুখে ফুটে ওঠে একটা অনাবিল হাসির রেখা। যেটা পৃথিবীর সব থেকে অমূল্য কোনো জিনিস পেয়ে যাওয়ার খুশি। আলিয়া আকাশ কে ছেড়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। চোখের কোণে পানি আর মুখে রয়েছে একঝাক খুশির হাসি। আকাশ ও মুচকি হেসে আলিয়ার বাড়িয়ে দেয়া হাতে পরিয়ে দেয় নিজের নামের রিং। আবারও একে অপরের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়।
.
–“ওয়ে হয়ে। আবতো লেড়কি ভি মান গেয়ি। তো আব শুরু হো যায়ে সাদি কি তাইয়ারি। বেদ পিছন থেকে বলে ওঠে।
.
–” পে.. পে প্যা প্যা পে। হোহো সাদি স্যানহায়ি আব গুনজে গি চারোও ওর। ওম লাফিয়ে লাফিয়ে বলে ওঠে।
.
. সব গুলো পিছন থেকে হইহই করতে করতে বেরিয়ে আসে। আলিয়া আকাশ কে ছেড়ে দাঁড়ায় মুখে রয়েছে হাসি চোখে রয়েছে লজ্জা। আকাশ সবার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। সব গুলো এসে ওদের দুজন কে জড়িয়ে ধরে বাধাই দিতে থাকে। সব গুলো হইচই শুরু করে দেয় আনন্দে।
————
–“টুসুন বেবি এবার আমাদের ও বিয়ে করে নেওয়া উচিত কি বলো। আর কত দিন এই ভাবে দূরে দূরে থাকবো। আর তো আমার দিয়ে এই দূর বরদাস্ত হচ্ছে না। নিশান শান্তা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ রেখে বলে ওঠে।
.
. শান্তা নিশান এর এই নেশাময় আওয়াজ শুনে কেঁপে ওঠে। জোরে নিশ্বাস টেনে নিয়ে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তোলে।
.
–“কিন্তু আমি তো বিয়ে করতে চাই না। শান্তা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে।
.
–” মানে? নিশান শান্তা কে ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।
.
–“মানে আমার এখন বিয়ে করার তো কোনো ইচ্ছেই নেই। বিয়ে করলে তখন এটা করোনা ওটা করোনা এখানে যেও না ওই করো না। না বাবা না আমি এখন কোনো ভাবেই বিয়ে করছি না। শান্তা বলে ওঠে।
.
–“আরে বেবি আব ইতনা ভি মাত তাড়পায়ো ইয়ার। আমি এমন কিছুই করব না। তুমি যা খুশি করতে পারো যেখানে খুশি যেতে পারো। ব্যাস বিয়ে করে নাও না বেবি প্লিজ। নিশান কাঁদো কাঁদো ভাবে বলে ওঠে।
.
–” পাক্কা প্রমিস। শান্তা চোখ উল্টে জিজ্ঞেস করে।
.
–“আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। পাক্কা প্রমিস। গড প্রমিস। তোমার প্রমিস ।নিশান তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।
.
–“ওকে তো ফির চালো শাদি কারলেতে হে। চোখ বড় বড় করে শান্তা বলে ওঠে।
.
–” হ্যা। নিশান যেনো অবাক হয়ে গেছে।
.
–“আরে বিয়ে। করবেনা? ঠিক আছে। করতে হবে না। শান্তা বলে ওঠে।
.
–” এই না না। বিয়ে করব তো। নিশান শান্তার কাছে এসে বলে ওঠে।
.
. শান্তা নিশান এর এমন করতে দেখে হেসে ফেলে আর নিশান সাথে সাথে শান্তা কে কোলে উঠিয়ে নিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। নিজের মুখের সমান করে নিয়ে শান্তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
—————
–” এই তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবাসো নাকি বলোতো? সারা চোখ মটকে জিজ্ঞেস করে ওঠে বেদ কে।
.
–” হ্যাঁ সোনা ভালোবাসি তো তোমাকে। বেদ সারার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে।
.
–“এই এই দূরে থাকো। একদম কাছে আসবে না। একদম কোনো লুতুপুতু নয়। ভালোবাসে? হু। সারা মুখ বেকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“আরে সারু আমি ভালোবাসি তো তোমাকে। বেদ বলে ওঠে।
.
–” ভালোবাসা না ছাই । ভালোবাসো যখন তাহলে ভাই এর কাছে আমাকে চেয়ে নিতে পারছ না কেনো বল? সারা রেগে বেদ এর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে ওঠে।
.
–“আরে বলবো তো। জিজ এর কাছে আমাদের কথা বলবো তুমি রাগ করছো কেনো। বেদ সারা কে শান্ত করতে বলে ওঠে।
.
–“প্রেম করতে পারো অথচ হাত চাইতে পারো না। হাত চেয়ে নিতে যতো আমতা আমতা ভাব না। সারা বেদ এর কলার ধরে বলে ওঠে।
.
–“না না একদমই না। বেদ সারার কোমর ধরে বলে ওঠে।
.
–“তোমাকে আমি আজকে সময় দিলাম যদি বলতে পেরেছ তো ভালো কথা না হলে আমি ভাই কে বলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবো। সারা বেদ এর হাত কোমর থেকে সরিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে। বেদ এর দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে বের হয়ে যায়।
.
–“আরে বেবি শোনো তো। আমি তো বলবো। শোনো না। পিছন থেকে বেদ সারা কে ডাকতে থাকে।
.
. সারা চলে যেতেই বেদ মুখ ফুলিয়ে নেয়। কোমরে এক হাত আর এক হাত মাথায় চুলকাতে থাকে। আরে ইয়ার পৃথিবী তে মেয়ে গুলোই কেনো এমন হ্যাঁ কেমন একটা আজিব প্রাণী মাইরি। বেদ মনে মনে ভাবতে থাকে।
—————
.
. ড্রইং রুমে বসে সবাই গল্পে মত্ত। এখন সবাই এর গল্পের মেইন টপিক হল আলিয়া ও আকাশ কে নিয়ে। এখানে সব কটা জোড়া সারি সারি বসে আছে। শুধু মাত্র সাঁঝ ছাড়া। এতে যদি বেলার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। বরং আরো বেশি বেশি করে সবার প্রেম কাহিনীর মধ্যে ঢুকে পড়ে গল্প শুনতে আছে। সারা বেদ এর থেকে দূরে বসে আছে। তাকিয়ে ও দেখছে না বেদ বারবার ইশারা করছে সারা কে তাতেও তার কোনো হেলদোল নেই। অন্য দিকে শান্তা কে সবার আড়ালে কোমরে জড়িয়ে ধরে বসে আছে নিশান। সবার চোখের আড়ালে কয়েকবার চুমু ও খেয়ে ফেলেছে। বেলা আলিয়া কে জড়িয়ে বসে আছে। আর আকাশ একটু দূরে বসে ওদের সাথে কথা বলছে। এখানে সাঁঝ থাকলে বরং আকাশ চুপচাপ থাকতো বস বলে কথা। ওম জাকিয়া দুজন দুজনের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে একে অপরের হাত জড়িয়ে নিয়ে। এদের কোনো ব্যাপার নেই এখন না ওদের দুজনের মধ্যে কোনো ভাব আছে বিয়ে করার প্রোপোজ করতে হবে বা বাড়িতে বলতে। তারা দুজন তো বরং মস্তিতে আছে।যদি বলা হয় চল তোদের এক্ষুনি বিয়ে দিয়ে দেবো। তো মনে হয় ওরা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাবে বিয়ে করতে। তবে এদের সবার থেকে একটু আলাদা ভাবে এক জোড়া বসে বসে তাদের প্রেম আলাপ করছে। দূরে দুজন এক টেবিলের সামনাসামনি বসে একে অপরের সাথে চোখে চোখে ইশারায় কথা বলছে। টেবিলের ওপরে হাতে হাত রেখে। আর টেবিলের তলায় থেকে একে অপরের পায়ের ওপর পা দিয়ে স্লাইড করছে। রুহি মাঝে মাঝে সারিফ এর দুষ্টু মিষ্টি ইশারায় লজ্জায় লাল হয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
.
. সাঁঝ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে নিজের চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ড্রইং রুমে হতে থাকা বৈচিত্র্যময় দৃশ্য দেখতে থাকে। চারিদিকে যেনো প্রেমের পসরা জমে আছে। একে অপরের প্রেমে যেনো ডুবে আছে। তারপরেই চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পায় তার পাগলিটাকে। যেনো তার খুশি দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। সে সবার সাথে মিশে গল্পে মশগুল হয়ে আছে। আর কথায় কথায় খিল খিল করে হেসে উঠছে যার জন্য গালে ডিম্পল পড়ছে আর সাইট এর গজ দাঁত দেখা যাচ্ছে যার জন্য তার পাগলিটাকে আরো সুন্দরী লাগছে। এটা দেখে সাঁঝ এর চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি খেলে যায়। কিন্তু এটা চিরস্থায়ী হয় না বেশি ক্ষণ ।
.
–“বেলা মা।
.
. পিছন থেকে কারোর ডাকে সবার হুস ফেরে। সবাই নিজেদের গল্প থামিয়ে পিছন মুড়ে তাকায়। আর সাথে সাথে সবার চোখ মুখের চিত্র টাই পাল্টে যায়। এতক্ষণে হাসি খুশি থাকা মুখ গুলো রাগে বিরক্তি ভরা হয়ে যায়। আর সাঁঝ সিড়ির ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে যায়। হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়। মাথার রগ গুলো ও যেনো ফুলে ফুলে উঠেছে। সামনে দাঁড়ানো আর কেউ নয় বেলার মু বলা মা।
.
–“সোনামা । হুইল চেয়ারে বসা এক ব্যাক্তি ভিতরে প্রবেশ করে।
.
.বেলা পিছনের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। প্রথমে তার মা কে দেখে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছিল। কিন্তু পিছন থেকে হঠাৎ করেই তার বাবাকে হুইল চেয়ার বসে আসতে দেখে বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে। তার ভাই তার বাবা কে ভিতরে নিয়ে আসছে। বেলা একটুও দেরি না করে ছুটে যায় সেদিকে।
.
–“বাবাই তোমার এমন হল কি করে হ্যাঁ।তুমি হুইল চেয়ারে বসে কেনো। বল না কি হয়েছে তোমার। বেলা তার বাবাই আবিদ মজুমদার কে জড়িয়ে রেখে কান্না করতে করতে বলে ওঠে অস্থির হয়ে।
.
–” সিনু বাবাই এর এই অবস্থা কি করে হলো বল। কিরে কি করে হয়েছে? বেলা তার ভাই কে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
.
. বেলার নিজের বাবা মা মরে যাওয়ার পর এই একটাই মানুষ ছিল যে তাঁকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। এটা তার নিজের বাবা মা নয় এটা নিজের আপন মামা। বাবা মরে যাওয়ার পর থেকে মামা কে বাবাই বলে ডাকত। আর মামী কে শুধু মা। বেলার অনেক ছোটো বেলায় বাবা মা কে হারায় তখন ও আলিয়া কে মা বলতে দেখে দেখে নিজেও মা বলে ডাকত। কিন্তু এই মহিলা কখনো মা হওয়ার কাজ করেনি তার থেকেও জঘন্য ব্যবহার করেছে সব সময়ে বেলার সাথে। বেলার বাড়ি এসেই থাকতো তার বাবার বিজনেস নিয়ে তাদের সংসার চালাতে আর বেলা কে দিয়ে কাজ করাত আসতে আসতে বেলার সব কিছু নিয়ে নেয়। ওই বাড়িতে থাকতে একমাত্র তার বাবাই আর তার দিয়া আলিয়া তাকে দেখে রাখত সব সময় আর সোনু ও তো ছোটো তাদের বরং তাকে দেখে রাখতে হতো।
.
–“বেলা কান্না বন্ধ কর বাবা ঠিক আছে। বাবার পায়ে চোট লেগেছে পড়ে গিয়ে তাই। আলিয়া উঠে এসে বেলা কে চুপ করাতে বলে ওঠে।
.
–” দিয়া তুই আমাকে বলিসনি কেনো হ্যাঁ ।বাবাই এর অবস্থার কথা আমাকে তুই আগে কেনো জানাসনি । বেলা বলে ওঠে।
.
–“আরে সোনা মা তুই শুধু শুধু চিন্তা করবি তাই আমি বারণ করেছিলাম। বেলার বাবাই বলে ওঠে।
.
. বেলা আর কোনো কথা না বলে তার বাবাই কে নিয়ে ভিতরে দিকে হাঁটা দেয়। পিছন থেকে আবারো ডাক আসতে বেলা থেমে যায়। কিন্তু পিছন ঘুরে না।
.
–” বেলা মা। তোর বাবাই খুব অসুস্থ। আর এখন আমাদের বাড়িটা ও আমাদের নেই। আর বিজনেস টা ও বিক্রি হয়ে গেছে। এখন তুই একমাত্র সাহারা। মা তুই তোর এই বুড়ো বাবা মা কে দেখবি তো। বলেই বেলার মা এগিয়ে আসতে থাকে বেলার দিকে।
.
–” ওখানেই দাঁড়ান। আর এক পা ও এগোবে না। সাঁঝ দমদার তীক্ষ্ণ আওয়াজে বলে ওঠে।
.
. সবাই পিছনে মুড়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রাখা সাঁঝ এর দিকে দেখতে থাকে। এখন কেউ সাঁঝ এর কঠিন রাগী মুখ দেখে থমকে যাবে। বেলা চোখে পানি নিয়ে সাঁঝ এর দিকে তাকায়। সাঁঝ আসতে আসতে নেমে এসে বেলার কাছে গিয়ে বেলার চোখের পানি মুছে দিয়ে ইশারায় চোখের পানি ফেলতে বারণ করে।
.
–“আপনার সাহস হলো কি করে এই বাড়িতে পা রাখার। আর মা কোথায় পেয়েছেন বেলা আপনার কেউ হয়না। কোন সাহসে এখানে এসেছেন। সাঁঝ চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর চিৎকারে ওখানে থাকা বাকি সবাই চমকে ওঠে। বেলা তাকিয়ে আছে সাঁঝ এর দিকে। আর বাকিরা ও একবার সাঁঝ ও একবার ভয়ে কুকড়ে থাকা বেলার মায়ের মুখের দিকে তাকায় সবাই।
.
–“বাবা এমন করে বলতে নেই বেলা আমার মেয়ে হয়। ছোটো থেকে ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। বেলার মা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে ওঠে।
.
–” হ্যাঁ কোলে পিঠে নয় খাটিয়ে বড় করেছো যাতে বড় করে বিক্রি করতে পারো টাকার লোভে সাঁঝ তীক্ষ্ণ গলায় চিৎকার করে বলে।
.
. ওখানে থাকা সবাই সাঁঝ এর এমন কথায় চমকে ওঠে। আলিয়া সোনু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তারা জানে তাদের মায়ের কীর্তি। বেলা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। বেলা আগে হলে সে এতক্ষণ গোলে যেতো ওদের দুঃখের কাহিনী শুনেই কিন্তু দিশা থেকে ওর মায়ের কাহিনী শুনে নিয়েছিলো আগের থেকেই তাই আর চিড়ে ভেজেনি। কিন্ত ওখানে থাকা বাকিরা রেগে গেছে এই কথায়। আর বেলার মা তো পুরো চমকে উঠেছে সাঁঝ এর কথা শুনে।
.
–“কি ভেবেছেন আপনি যে আপনার কু কীর্তি গুলো চাপা থাকবে। আপনি যে বেলা কে বিক্রি করে দিয়েছিলেন রনি মেহতার কাছে টাকার লোভে সেটা কি মনে করেছেন আমি জানি না। ওর বাড়িতে থেকেই ওর বাবার বিজনেস নিজের নামে করে নিয়ে ওকে আপনি কাজের লোকের মত ট্রিট করেছেন। তাহলে এখন কি করে ভাবলেন যে ও আপনাকে সাহায্য করবে। সাঁঝ জোরে গম্ভীর আওয়াজে বলে ওঠে।
.
–“যে নিজের স্বামীর এই অবস্থা করতে পারে সে কখনই একজন মা স্ত্রী হতে পারে না। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–” মানে কি বলতে চাইছ তুমি? বেলা চমকে গিয়ে বলে ওঠে।
.
–“তোমার বাবাই এর এই অবস্থার জন্য এই মহিলা দায়ী। তোমাদের বাড়িটা এই মহিলা বিক্রি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তোমার বাবাই বাঁধা দিতেই তোমার বাবা কে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয়। সোনু আমাকে ফোন করে সবটা জানায়। আমি এর তোমার বাবাই আলিয়া কে বারণ করেছিলাম যেনো এখন তোমাকে না জানানো হয়। তখন তুমি দিশার কথা গুলো নিয়ে অনেক ভেঙে পড়েছিলে তাই। সাঁঝ ধীর গলায় বেলা কে বুঝিয়ে বলে ওঠে।
.
. বেলা এই কথা গুলো শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। একটা মানুষ কিভাবে এতটা খারাপ নীচ মানসিকতা হতে পারে।
.
–“সাঁঝ কল দ্য পুলিশ। বেলা কঠিন গলায় বলে ওঠে।
.
. ওখানে থাকা বাকি সবাই প্রথমে বেলার কথায় অবাক হয়ে গেছিল। কিন্তু তারপরেই আবার ঠিক হয়ে গেছে। তারা এটা ভেবেই খুশি হয়েছে যে। বেলা এবার ঠিক ঠাক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
.
–” অফিসার ভিতরে আসুন। বেলার বলতে দেরি কিন্তু সাঁঝ কাজ করে দেখাতে দেরি নেই।
.
.বেলা অবাক চোখে সাঁঝ এর দিকে তাকাতেই সাঁঝ মুচকি হেসে বেলার নাক টেনে দিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আমি জানতাম তুমি পুরোটা শোনার পর এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে তাই আগেই থেকেই আমার কল করা ছিল। শুধু তোমার বলার অপেক্ষা ছিল।
.
. বেলা কোনো কথা বলে না চুপচাপ শুধু সাঁঝ এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভেবে যাচ্ছে সাঁঝ এর কথা। সে কিছু ভাবলে বা কখন কি করতে পারে সেটা সাঁঝ তার কিছু না বলাতে ও বুঝে ফেলে। তার মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়না তার আগেই কাজ হয়ে যায়।
.
–“বেলা আলিয়া সোনু আমি তোদের মা হই।তোরা এমনটা করতে পারিস না দেখ পুলিশ এসেছে। আলিয়া সোনু তোরা তো আমার নিজের সন্তান তোরা ও কি ওই বেলার মত করবি। বেলার মা আর্তনাদ করে বলে ওঠে।
.
–” আমাদের কোনো মা নেই। আজ থেকে আমরা এটাই জানবো। আলিয়া সোনু কে জড়িয়ে শক্ত ভাবে বলে ওঠে।
.
–” বেলা মা। আমি তো তোর মা হ…
.
–“আমার মা আমার ছোটো বেলায় মারা গেছে। আমার কোনো মা নেই। আর এতদিন যাকে মা বলে জেনেছি সে কখনই আমার মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আর কখনো হতেও পারে না। অফিসার এনাকে নিয়ে যান। আর দেখবেন যেনো পালাতে না পারে। পুরো কথা বলতে না দিয়ে বেলা বলে ওঠে।
.
. অফিসার নিয়ে চলে যেতেই বেলা ঘুরে দাঁড়িয়ে সাঁঝ এর বুকে মুখ গুঁজে কান্না করে ওঠে। ওদিকে সোনু ও আলিয়ার চোখের কোণে পানি ফুটে উঠেছে।
.
–“সাঁঝ বাবাই আর সোনু ও এখন থেকে আমাদের সঙ্গে থাকবে? বেলা জিজ্ঞেস করে ওঠে।
.
–” কখনই না। ওরা আমদের সাথে থাকতে পারবে না। সাঁঝ কঠিন গলায় বলে ওঠে।
.
–“সাঁঝ । বেলা চিৎকার করে ওঠে।
.
. বাকি সবাই ও অবাক হয়ে গেছে। তারা সাঁঝ কথা শুনে যেনো এটা বিশ্বাস করতে পারছে না যে সাঁঝ এই কথাটা বলতে পারে।
.
–“কি সাঁঝ কি? সাঁঝ চোখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে বেলা কে?
.
. বেলা অবাক হয়ে আছে সাঁঝ এর দিকে ।
.
–“তোমার বাবাই আর সোনু যদি এখানে থাকে তাহলে তোমাদের বাড়ি আর বিজনেস এর দায়িত্ব নেবে কে শুনি? সাঁঝ চোখ ঘুরিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
.
. বেলা অবাক চোখে একবার তাই বাবাই আর একবার সাঁঝ এর দিকে তাকায়। যে এখন হাসি মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। বাকিরা ও আরও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
.
–“আরে বাবা তোমার মায়ের থেকে আমি তোমার সব কিছু নিয়ে নিয়েছি। বাড়িটা আমি তোমার বাবাই আর সোনুর নামে ট্রান্সফার করেছি। পরে তোমার বাবার টা আলিয়ার নামে হয়ে যাবে। আর বিজনেস ও ফিফটি পার্সেন্ট সোনু শেয়ার দিয়েছি। তাই ওরা যদি আমাদের সাথে থাকে তাহলে ওরা ওগুলো দেখবে কি করে শুনি। হ্যাঁ ওরা আমাদের সাথে থাকতে পারে। যখন খুশি আসতে পারে যেতে পারে। বুঝলে কিছু। সাঁঝ হেসে বলে ওঠে।
.
–“সাঁঝ । বেলা চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আমি জানি জান তুমি কি বলতে চাইছ। আমি এটা পরে শুনব। এখন তুমি সবার সাথে আনন্দ করো আর তোমার বাবাই যতো দিন না সুস্থ হচ্ছে ততো দিন আমাদের সাথে থাকবে। এখন ঠিক আছে। আর হ্যাঁ একটা কথা তুমি ও তোমার ডান্স ও ইউনিভার্সিটি করে যদি চাও তো তুমি তোমার অফিসের দায়িত্ব নিতে পারো কারণ আফটার অল তুমি ওই কোম্পানী চেয়ারওম্যান। সাঁঝ বেলার গালে হাত রেখে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর কথা শুনে ওখানে থাকা প্রত্যেকে খুব খুশি হয়ে যায়। এতক্ষণ তাদের মনে থাকা অবাক কাটিয়ে ওঠে পরের কথা গুলো বুঝতে পারে সাঁঝ কেনো বলেছিলো। তাই সবাই এক সাথে থেকে আনন্দ তে মেতে ওঠে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করা হয়নি। সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। আর স্যরি কিছু ব্যস্ততার কারণে আর কিছু তিক্ত অনুভূতির জন্য আগের পার্টে আপনাদের কমেন্ট এর রিপ্লাই দিতে পারিনি ❤️ তার মানে এটা ভাবেন যে আমার অনেক ভাব। পড়ে জানান আপনাদের অনুভূতি জানান অপেক্ষায় আমি 😍❤️।
.
. 💝💝💝
.
. চলবে…
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করা হয়নি। সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊
(নাও দিশার চ্যাপ্টা ক্লোজ হয়ে গেছে। আশা করি সবার মনে ঈদ হচ্ছে এখন। তবে একটা প্রশ্ন আচ্ছা রোমান্টিক পার্ট নিয়ে কি অ্যালার্জি আছে নাকি। না আমি রোমান্টিক পার্ট লিখলে দেখেছি আপনাদের সাড়া কমে যায়। তাই এবার রোমান্টিক পার্ট পুরো বয়কট হলো। আর এই গল্প ও এখন শেষের দিকে। তাই এখন জানান আপনাদের অভিব্যক্তি #সাঁঝেরবেলা কে নিয়ে। অপেক্ষায় থাকলাম আপনাদের মন্তব্য এর। 😊 😊 😊)
#