#বলব_কবে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৪
#Marufa_Yasmin
দীপ্ত রেগে চর মারতে যায়।কিন্তু চর মারার আগেই আরু দীপ্তর হাতটা শক্ত করে ধরে নেয়।আরুর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে মা দুর্গা কালির রুপ ধরেছে।দীপ্ত আরুর রুপ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।আরু খুব জোরে দীপ্তর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল
” এই মিস্টার আরতি সেন কে চর মরার ভুল দুবার করবেন না। আমি মেয়ে । তা বলে কারোর অত্যাচার সহ্য করবো না।আপনি আমাকে চিন্তে ভুল করছেন।কার সাথে লাগতে আসছেন।আগে খোঁজখবর নিয়ে লাগতে আসবেন।এক মূহুর্তের জন্য আমি ভুলে যাবো আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।understand! ”
আরু চলে যেতে নেয়।হঠাত আবার থেমে পেছন ঘুরে বলল
”আর হ্যা মেয়েদের কে দূর্বল ভাববেন না।মেয়েরা দূর্বল না।তারা নরম মনের কিন্তু। যদি তার সাথে অন্যায় হয় তাহলে সে কালির রুপ ধরতে পারে।মেয়েরা যেমন মা লক্ষ্মী হতে পারে তারা রাগলে মা কালীর রুপ ও ধরতে পারে।আশা করি এই কথাটা আপনার অজানা নয়।ভুল করেও আপনি আমার সাথে লাগতে আসবেন না।”
দীপ্ত, এখনো হা করে আরুর যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।এমন মেয়ের সাথে আজ তার প্রথম দেখা।দীপ্ত নিজেকে ঘোর এর মধ্যে থেকে বের করে।রাগে হাতটা পাঁচিলে বারি মারে।মাথার চুল টানতে টানতে বলল
” এর বদলা আমি নেবো। ভেবেছিলাম তোমাকে কোনো কষ্ট দেবো না।তবে এই অপমান এর বদলা দীপ্ত চ্যাটার্জি নেবে।এখন শুধু দেখার জন্য প্রস্তুত হও তুমি। ”
___________________
28 January
আজ দীপ্ত আরু বিয়ে।কয়দিন থেকেই সব কাজে গেলে পরেছে। আরুর এসব ভালো লাগছে না বিরক্ত লাগছে তাও বাবা মা এর সম্মান এর জন্য সব সহ্য করছে।সকাল বেলা আরু কে ঘুম থেকে উঠিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দইখই খেতে দেয়।আরু কিছুতেই খাবে না। সকাল সকাল তার এসব খেতে ইচ্ছে করছে না।
”আমি এইসব খাবো না।”
”তুই খাবি না তোর বাপ খাবে তাড়াতাড়ি খা আবার জল আনতে পুকুর পাড়ে যেতে হবে।তারপর গায়ে হলুদ।”
”তাহলে আমার বাপ কে খাওয়াও আমি খাবো না।”
” সোনা মেয়ে আমার সারাদিন কিছু খেতে পাবি না সেই তার আটটায় লগ্ন বিয়ের আগে কিছু খেতে পাবি না খেয়ে নে। ”
” ঠিক আছে খাচ্ছি। ”
” এই তো লক্ষী মেয়ে আমার।আমি যাই অনেক কাজ বাকি। ”
মঙ্গলা দেবী হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আরুর রুমে তার খুড়তুতো পিসতুতো বোনেরা বসে আছে আর আরু কে নিয়ে মজা করছে।
আরুর এসব একদম ভালো লাগছে না।হঠাত আরুর ফোন বেজে উঠে।ফোনের স্কিন এ তাকিয়ে দেখে হৃদ নামটা ভাসছে।আরু ফোনটা তুলে বলল
” হ্যালো ”
” কি করছিস? ”
” কিসব খেতে দিয়েছে দেখ। আমি এইসব খেতে পারছি না ।”
” বিয়ের নিয়ম খেতেই হবে। ”
” তুই ও ! আচ্ছা কখন আসবি তুই? ”
” রাতে। ”
” না একটু পর আসবি গায়ে হলুদ এ তুই আমাকে হলুদ ছোঁয়াবি না নাকি ।”
” আচ্ছা যাবো। ”
” হুম । ”
” মন খারাপ তোর!”
” তুই বুঝলি কিভাবে ”
” তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আমি ।আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে শুনি তোকে? ”
” এই জন্যই তো তোকে এত ভালোবাসি ।”
” তুই আমাকে ভালোবাসিস ?”
” হ্যা । ”
” বলিসনি তো এতদিন ।”
” ভালোবাসি এটা কি বলার কথা নাকি। তুই আমার বেষ্টু তোকে ভালোবাসবো না তো কাকে ভালোবাসবো । ছোট থেকেই তুই আমার সঙ্গী। ”
” ওও এই ভালোবাসা ”
” কেনো হঠাত এমন বললি? ”
” কিছু না মা ডাকছে আমি যায়।। ও হ্যা তোর কি গিফট লাগবে বল? ”
” আমার …. একটা গোলাপ গাছ দিস। ফুল যেনো ধরে থাকে। ”
” গোলাপ গাছ নিয়ে কি করবি? ”
” তুই বুঝবি না। সবাই অনেক রকম এর গিফট দেয় আমি চাই তুই সবার থেকে আলাদা কিছু দিবি।যেটা সারাজীবন আমার কাছে থাকবে। ”
” যদি গাছটা মরে যায়? ”
” ফাট মরবে কেনো? ভালোবেসে কোনো জিনিস কে রাখলে মরে না আমি খুব যত্ন করে রাখবো। ”
” আচ্ছা রাখি আমি বাই । ”
” বাই। ”
__________________
সবাই গায়ে হলুদ এর আয়োজনে ব্যস্ত। আরু কে হলুদ লাল এ একটা শাড়ি পড়ানো হয়েছে গায়ে লাল গামছা ঝরানো খোলা চুল। না সেজে ও আরু কে খুব সুন্দর লাগছে।হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে বাগানে সেখানে সুন্দর করে একটা জায়গা করেছে সাজিয়েছে কলাপাতা দিয়ে ফুল দিয়ে। বিবাহিত মহিলারা আরু কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই আরুর গায়ে হলুদ ছোঁয়ায়।আরুর হৃদ কে খুঁজছে।হঠাত দরজায় চোখ পড়ে হৃদ আসছে।হলুদ পাঞ্জাবি পাত্রে চুলগুলো হাল্কা কপালে পরে আছে। পাঞ্জাবির হাত কবজি পর্যন্ত উঠানো। সাথে জিন্স পরে আছে । দেখতে হিরোর মতো লাগছে।
আরু হৃদ কে আসতে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। আরু মুখ গোমড়া করে বলল
” এই তোর আসার সময় হলো? ”
হৃদ কান ধরে বলল
” সরি একটু লেট হয়ে গেলো । ”
” ওকে ওকে এখন হলুদ ছোঁয়া। ”
হৃদ আরুর গালে হলুদ ছুঁয়ে দেয়। আরু হালকা হলুদ নিয়ে হৃদ এর গালে ছুয়ে দেয়।
হৃদ এর কষ্ট দ্বিগুন বেরে গেলো।এই বুঝি চোখ থেকে টপ করে জল পরে যাবে ।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছে।
আরু বায়না ধরলো সে হৃদ এর কাছে গান শুনবে
” হৃদ তোর কাছে একটা আবদার আছে। ”
” কি আবদার? ”
” একটা গান শোনা প্লিজ প্লিজ ।”
” এখন? ”
” হুম এখনি ।”
” আচ্ছা । ”
হৃদ গান ধরে
কেন আসে দিন, তোকে কাছে না পাওয়ার
কেন আসে দিন, তোকে চোখে হারাবার
কী উপায়, ফেরা যায় তোর স্বপ্নতে আবার
হৃদের চোখে চল কিন্তু আরুর কে লুকিয়ে মুছে নেয় ।
ওরে মন উদাসী, একা ফেলে পালালি কোথায়
ওরে প্রবাসী, ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়
হাসিতে হাসিতে ভুল ফুরিয়েছে আজ সব
চলে গেছে, ঢলে গেছে কালকের কলরব
কথা ছিল সাথে তোর, বলা হলো শেষ না
খালি খালি চারপাশ, এ আমার দেশ না
কী উপায়, ফেরা যায় তোর স্বপ্নতে আবার
ওরে মন উদাসী, একা ফেলে পালালি কোথায়
ওরে প্রবাসী, ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়
তোর সাথে এসে যেতো, ঝর্ণারা কথাদের
ঝরে গেল কেন আজ মরসুম পাতাদের
কত না বিকেল ঘুড়ি উড়িয়েছি দু’জনে
চলে আয় চলে আয়, আজ আবার উজানে
কী উপায়, ফেরা যায় তোর স্বপ্নতে আবার
ওরে মন উদাসী, একা ফেলে পালালি কোথায়
ওরে প্রবাসী, ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়
গানটা কেমন যেন আরুর বুকে তীরের মতো লাগলো। কেনো জেনো বুকের ভেতর একটা ব্যাথা অনুভব করছে আরু। এই ব্যাথা কিসের সেটা অজানা আরুর কাছে।সব মহিলারা হৃদ এর গান শুনে হাত তালি দিতে লাগল ।
________________
অন্য দিকে দীপ্তর গায়ে হলুদ আগেই হয়ে গেছে । দীপ্তর গায়ের হলুদ নিয়েই আরুর কে হলুদ মাখানো হয়েছে।দীপ্ত নিজের রুমে বসে আছে।
ফোনে কারো ছবি দেখছে।আর বুকে হাত দিয়ে আছে।
” তোমাকে ও শাস্তি পেতে হবে। ”
ঠোঁটে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে।দীপ্তর।
দীপ্তর মা এসে দীপ্ত কে একটা ধুতি পাঞ্জাবি দিয়ে গেলো রেডি হতে বলে।
দীপ্ত রেডি হয়ে নিচে যায়।তার সব বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। সবাই গাড়িতে গিয়ে বসে দীপ্ত কে তার মা আশীর্বাদ করে তারপর সবাই বের হয়।
________________
অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আরু কে লাল বেনারসী। মাথায় লাল ওড়না।ভাড়ি ভাড়ি গয়না।
লাল লিপস্টিক।হঠাত হৃদ রুমে ঢুকে একটা গোলাপ গাছ নিয়ে টবে লাগানো।গাছে তিনটা গোলাপ ফুটে আছে লাল রক্তের মতো রঙ্গ।
হৃদ গাছটা আরুর হাতে ধরিয়ে বলল
” তোর গিফট । ”
হঠাত আরুর চোখে পানি।আরু কাঁদতে কাঁদতে হৃদ কে …………………
বাকি
(অনেকে আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছেন গল্পের পার্ট ছোটর জন্য। আমার জুন মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা।গল্প লিখবো, না বলেছিলাম কিন্তু ইদানীং মনটা খারাপ থাকে।গল্প লিখে আপনাদের কমেন্ট দেখে মনটা বেশ ভালো হযে যায় ওই জন্যই গল্পটা শুরু করা গল্প ও লিখি আবার পরতেও হয় তাই পার্ট ছোট্ট হয়ে যায়।প্লিজ কেও রাগ করবেন না। আর কালকে আমাকে যারা সার্পোট করেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ )।