#তুমি_নামক_ব্যাধি
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_১০
__________________
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
—‘আপনি?আমাদের বাসায়? কি মনে করে?’
—‘তোমাকে মনে করে।’
—‘হোয়াট?’
—‘তোমার ভাবীকে নিয়ে এসেছি। ভাইয়া যেতে পারছিল না বলে।এইবার বলো,তুমি তো আমাকে ফকির বানিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করার মতলবে আছো,তাই না?’
—‘হোয়াট?’
—‘আচ্ছা, তুমি কি এই হোয়াট হোয়াট ছাড়া আর কোনো শব্দ বলতে পারো না?নাকি তোমার ইংরেজির দৌঁড় হোয়াট পর্যন্তই!’
নিজের অজান্তেই চিল্লিয়ে বললাম,
—‘হোয়াট?’
তিহাম ভাইয়া এইবার শব্দ করে হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
—‘জানো,ইউ আর টু মাচ ফানি!বিশেষ করে যখন তুমি রেগে যাও তখন তো আরো ফানি লাগে।এখন বলো,তোমার জন্য আর কতগুলো সিম কিনতে হবে আমার?’
—‘আমাকে বিরক্ত করা বাদ দিলেই আর কিনতে হবে না।’
—‘ওইটা আমি এই জীবনে পারবো না।’
—‘বেশ,তাহলে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিন।’
—‘হা হা হা।আমার তাতে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই। তোমার জন্য ভিক্ষা করতে আমি এক পা ল্যাংড়া করেও ফেলতে পারি।কিন্তু কথা হচ্ছে, তখন তোমায় সবাই ভিক্ষুকের বউ বলবে।আর এইটা আমার গায়ে লাগবে বেশ।’
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
—‘ভিক্ষুকের বউ?দেখুন,আমার কাছে আসার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। চড়,একটা ঘুষিতেও যদি কিছু না হয় তবে এইবার আমি রড দিয়ে পিটিয়ে আপনার চরিত্রের ভবলীলা সাঙ্গ করে দিবো।হুহ।মাইন্ড ইট!’
বলেই রুম থেকে বের হতে নিলাম।তিহাম ভাইয়া একটু এগিয়ে এসে জোরে বলল,
—‘তোমার কাছে যাওয়ার চেষ্টা আমি ভুলে নয়,সুস্থ মস্তিষ্কে করবো।আর ও দু চারটা চড়ে আমার কিছুই হয় না।তুমি বরং আমাদের বিয়ের পর নিয়ম করে রোজ দুইটা তোমার নরম হাতের চড় দিবে।তবুও আমায় বিয়ে করো প্লিজ।কেমন?’
—‘লাইক সিরিয়েসলি? আপনি এখন তিথিকে রেখে আমাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখছেন?বাহ্!দারুণ। শোন,তুই আমার থেকে মিনিমাম ১০ মিটার দূরে থাকবি।আর আজকেই আমার বাসা ছাড়বি।ফাজিল।’
তিহাম ভাইয়া একদম কাছে এসে হেসে বললো,
—‘তো মিসেস তাজবীর আজমাইন তিহাম, ১০ মিটার দুরত্ব বলতে তোমার আর কতটা কাছে থাকতে হবে!আমি আবার অংকে বরাবরই কাঁচা।এই অংকের জন্য জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছি। ‘
সরে এসে টেবিল থেকে কলম টা হাতে নিয়ে ভেঙে ফেললাম।আমার রাগ উঠলে কলম ভাঙি।ভাঙতে অনেক জোর দিতে হয় আর বহুত টাইম লাগে।এতে একটু রাগ কমে।তিহাম ভাইয়া হাসতে হাসতে শেষ। কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।কিছু বলা আর না বলা সেইম।ক্রেজি ব্রাট!!
নিচে নেমে ভাবীকে দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেল।চোখদুটো নরম হয়ে আসল।ভাবীকে জড়িয়ে ধরলাম।অনেকটা অভিমানের সুরে বললাম,
—‘তুমি আজ আসবে আগে থেকে বললে না কেন?’
ভাবী হাসতে হাসতে বলল,
—‘আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাল অনেক রাতে।তিহাম কে বললাম ও ফ্রি আছে কিনা।ও তো সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল।আর ওর নাকি ঢাকাতেও যেতে হবে একটু।কাজ আছে নাকি।তাই ভোরবেলা রওনা দিয়ে দিয়েছি।ফোন দিয়ে বলতে চাইলাম, কিন্তু তিহাম বললো, আপু,চলো সারপ্রাইজ দিবো।তাই আর বলিনি।তা আমার ননদীনি কেমন আছে? ‘
—‘এতদিন ভালো ছিল না।এখন ভালো হয়ে গেছে সে।সত্যি ভাবী এতদিন এত বড় বাসায় কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।’
মা রান্নাঘর থেকে হেঁটে এসে বলল,
—‘তিহামকে ডাক দেতো আমান।দেখ ফ্রেশ হয়েছ কি না।খেয়ে নিক।শায়লা তুমিও বসো।’
আমান সোফায় বসে টিভি দেখতে ছিল।আস্তে করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।আমি ডাইনিং টেবিলে খাবার রেখে সোফায় বসে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেয়ে সামান্য চোখ তুলে তাকালাম।
তিহাম ভাইয়া গোসল সেরে ড্রেস পাল্টে নিয়েছে।এই ছেলে কি ব্যাগ ট্যাগ প্যাকিং করে থাকার সকল বন্দোবস্ত করে এসেছে? কতদিন থাকবে কে জানে!!তার পড়নে এখন কালো ট্রাউজার, আর কালো গেঞ্জি। মাথার চুল সব এলোমেলো ভাবে কপালে লেপ্টে রয়েছে। ঠোঁটের কোনে শয়তানের মতো বাঁকা হাসিতো একদম ফ্রি।চোখ নামিয়ে নিলাম।
ডাইনিং এ বসে সবাই আমায় ডাকা শুরু করলো।দুপুরে আমার খাওয়া হয়নি।বাধ্য হয়ে উঠে ভাবীর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
আমান একটু আগে খেয়েছে বলে আবার টিভি দেখা শুরু করলো।আমি, ভাবী আর তিহাম ভাইয়া খাচ্ছি। মা এমনি পাশের একটা চেয়ারে বসে গল্প গুজব করছে আর খাবার সার্ভ করছে।মা বললো,
—‘তোমরা তিথি কে নিয়ে আসলে না কেন?’
তিহাম ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,
—‘ওকে অনেক বার বলেছিলাম।কিন্তু ওর নাকি অনেক ক্লোজ একটা ফ্রেন্ডের কাল শুক্রবারে বিয়ে।তাই আসলো না।’
মা বলল,
—‘ওহ,আচ্ছা। ভালোয় ভালোয় দেশে ফিরেছো।এখন চার হাত এক হলেই বাঁচি আমরা।’
তিহাম ভাইয়া মাথা নেড়ে হঠাৎ অনেক সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
—‘আন্টি একটা কথা বলবো।কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, কিছু মনে করবেন না।আমি আবার একটু বেশি ফ্রি সবার সাথে! ‘
ভয়ে গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম হলো। তিহাম ভাইয়া মাকে কি বলবে?যদি আমার কথা বলে তাহলে তো সর্বনাশ।আমি কিছু একটা বলার আগেই মা বলল,
—‘বলো বাবা।এত লজ্জা পেতে হবে না।সমস্যা নেই। বলো।’
—‘ইয়ে মানে,মানে আমি কিন্তু কিছু দিন থাকবো এখানে।’
তিহাম ভাইয়ার কথা শুনে মা,ভাবী দু’জনে হেসে উঠলো।ঢোক গিলে বড় করে শ্বাস নিলাম।কি ফাজিল পোলা!আড়চোখে দেখলাম তিহাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিল।
বজ্জাত পোলা!আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এমন করা।ছি!
মা বললো,
—‘কোনো সমস্যা নেই তিহাম। তুমি যতদিন ইচ্ছে থাকো।আর এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ি মনে করবে।’
ভাবী বললো,
—‘তিহাম তুমি দোতলার গেস্ট রুমে থাকবে।খাওয়া শেষে একটু রেস্ট নাও।’
তিহাম ভাইয়া মাথা নেড়ে মাকে বললো,
—‘আন্টি, দিয়ানা এত লাজুক হয়েছে কেন?কথা বলতে চায় না খুব একটা।ছোটবেলায় তো এরকম ছিল না।’
মা ভাবী দুজনেই আবার শব্দ করে হেসে উঠলো।
ভাবী তাচ্ছিল্য করে বলল,
—‘হ্যাঁ,ভাই। দিয়ানা বড্ড লাজুক। লাজুক নাকি অন্য রকম তা খুব অল্প দিনে বুঝে যাবে।’
তিহাম ভাইয়ার আমার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস মুডে বললো,
—‘দিয়ানা,তুমি আমার সাথে কথা বলতে একদম লজ্জাবোধ করবে না।তুমি আমার ছোট বোনের মতো!’
গলায় খাবার আটকে হেঁচকি উঠে গেল।হা করে বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।এই পোলা বলে কি!কি সাংঘাতিক মানুষ রে বাবা!একা পেয়ে প্রোপোজ করে,বউ বউ করে,কিস করে জোর করে আর এদের সামনে কি ন্যাকা সাজছে!
আই কান্ট বিলিভ দিস! একেই বলে হয়তো দুমুখো কাল কেউটে।ভাবী পানি এগিয়ে দিল।এক নিঃশেষে খেয়ে নিঃশব্দে বাকি খাবার শেষ করে উঠে গেলাম।
_______________________
আজ শুক্রবার। বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠেছি।কাচ ঠেলে বেলকনিতে গেলাম।গাছের গোড়া শুকিয়ে গেছে। পানি দিতে হবে।গাছে পানি দেয়ার কাজটা আমি অনেক আনন্দের সাথে করি।
নিচু হয়ে অর্কিড গাছটায় হাত ছোঁয়ালাম।নতুন কলি এসেছে।গোলাপ ফুলগুলো কি সুন্দর হয়ে ফুটে আছে। আমার টিউলিপ ফুল গাছ লাগানোর অনেক ইচ্ছে।হলুদ ফুলগুলো দেখতে ভয়ংকর সুন্দর।
একটা চাইনিজ ড্রামায় দেখেছিলাম নায়কের টিউলিপ ফুলে ফোভিয়া থাকে।ভীষণ রকম ভয় পায় হলুদ ফুলগুলোকে।কি যেনো নাম ছিল ড্রামাটার?মনে পড়ছে না কিছুতেই।
দরজায় টোকার আঘাতে মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম।আমি সচরাচর দরজা লাগাই না।কিন্তু তিহাম নামের বজ্জাতটা বাসায় আছে বলে কাল অনেক ভালো করে দরজা লাগিয়েছি।ঘুমানোর আগে চার চার বার চেক করেছি।দরজার টোকার আঘাত বেড়ে যাচ্ছে। হালকা পায়ে হেঁটে দরজা খুলে দেখি………………………………..
(চলবে)
অনুমান করুন তো!দরজার ওপাশে কে?🥴
আর দিয়াাকে মনে মনে গালিগালাজ করবেন না প্লিজ।বেচারার দোষ নেই।জন্মের পর থেকে একটু রুড।সাথে তার প্রিয় মানুষের উড বি ফ্লার্ট করলে একটু রাগ তো হবেই!🤧
68/