তুমি_নামক_ব্যাধি পর্ব ৯

#তুমি_নামক_ব্যাধি
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_০৯
_________________

আর তাকালাম না।কেবিনে চলে আসলাম। বড় ভাইয়া পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। তবুও মুখের দিকে তাকিয়ে কেন জানি মনে হলো ভাইয়ার মুখের কোথাও অতি সূক্ষ্ম কষ্টের ছাপ।কিছু একটা না পাওয়ার বেদনা ফুটে উঠেছে।

কিন্তু আমার যতদূর মনে হয় ভাইয়ার তো কোনো কিছুতে অভাব নেই।শুধুমাত্র ভাইয়ার কোনো বাচ্চা নেই।যদিও তাদের বিয়ের বহু বছর হয়ে গেছে।কিন্তু এটা নিয়ে ভাইয়াকে কখনো হা হুতাশ করতে দেখিনি।ভাবী মাঝে মধ্যে কিছু বললে,উল্টো ভাইয়া তাকে বকা দেয়।

ভাইয়ারো হয়তো কষ্ট হয় যেটা সে অতি যত্নে লুকিয়ে রাখে। তিথি বলেছিল রাতের বেলা মানুষের আসল সত্তাকে ধরে ফেলা সহজ।আমার এখন মনে হচ্ছে ঘুমন্ত মানুষের মুখ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেও অনেক কিছু বুঝে ফেলা যায়। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল।
.
.

রাত প্রায় এগারোটা বাজে।নিজের বিছানায় শুয়ে আছি। হাত-পা চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছি। কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। আহা!কতদিন পর মনে হচ্ছে নিজের বাসা,নিজের রুম,নিজের বিছানাতে শুয়ে আছি!মনের অতল সাগরে ডুব দিয়ে দেখলাম কোথায় যেনো এক ধরনের অস্থিরতা।

আমার এই অস্থিরতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কল্পনার রাজ্যে ভ্রমণ করতে হবে।কত দিন হলো গুছিয়ে বিচরণ করি না সেখানে।ড্রিম লাইটের নীল আলোয় চারপাশ ভরে আছে। নিজেকে মনে হচ্ছে নীল রঙে ডুবিয়ে রেখেছি।চোখ বন্ধ করলাম।আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে শব্দ হলো।

বিরক্তি নিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম।ফোনের লক খুলতেই সেই কালকের নাম্বার চোখে পড়ল।নিচের দিকে তাকাতেই নজরে এলো……

“দিয়ামনি, এইটা তুমি কি করলে?সত্যি সত্যি বাসায় চলে গেলে?যাওয়ার আগে আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজনও মনে করলে না?কেন? তোমার হাতে মার খেয়ে যতটুকু না কষ্ট পেয়েছিলাম তার চেয়ে হাজার গুণ কষ্ট বেশি পেয়েছি তুমি চলে গেছো বলে!ছাদের উপর থেকে লুকিয়ে তোমায় দেখতেছিলাম আর মনে মনে ভাবতেছিলাম, প্লিজ একবার ছাদের দিকে তাকাও।

কিন্তু তুমি তো তুমিই!!ছাদে তাকানো তো দূরের কথা একবার পেছন ফিরেও তাকালে না।তবুও এই তুমিটাকেই আমার দুনিয়া বানিয়েছি।এখন শোনো,আমার মতো কপাল পোড়া কেউ কি আছে, বলো তো?জীবনে প্রথম কাউকে ৯৯ টা গোলাপ দিয়ে প্রোপোজ করলাম, অথচ বিনিময়ে একটা থাপ্পড় খেলাম।সাথে একটা ঘুষি তো ফ্রি!

তোমার ঘুষিটা খেয়ে যে আমার নাক দিয়ে ব্লাড বের হয়ে গেছে তার খবর নিয়েছো?এই,তুমি কি খাও বলোতো!৫০ কেজি ওজনও তো হবে না,কিন্তু কি শক্তি রে বাবা!আমার জ্বর উঠে গেছে। আচ্ছা, ভালো থেকো।টাইপ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কেন জানি না।হয়তো জ্বরের জন্য। শুভরাত্রি বউ আমার।ভালোবাসি।ভালোবাসি।ভালোবাসি।আর হ্যাঁ,চিঠিটা পড়ো একটু।”

লাইক সিরিয়াসলি?এইটা তিহাম ভাইয়ার নাম্বার?দ্বিতীয় বার না ভেবে সুন্দর করে ব্লকলিস্টে ফেললাম। গাঁজাখুরির একটা লিমিট থাকে।তিথির জন্য খারাপ লাগছে।এই রকম চরিত্রের একটা মানুষের সাথে কিভাবে দিন অতিবাহিত করবে!ফোনটা সাইলেন্ট করে চোখ বন্ধ করলাম।

নিস্তব্ধপুরী তে আজ বৃষ্টি নেমেছে। ভয়ানক সুন্দর বৃষ্টি। মেঘ রাজপুত্রের সমস্ত অভিমান আজ জল হয়ে ঝরে পড়ছে।ইচ্ছে মতো সেই জলে গা ভিজালাম।দৌঁড়ে শিউলি গাছটার নিচে দাঁড়াতেই দেখলাম সেই টুনটুনি দুটো বাসার ভেতর দিয়ে মাথা উঁচু করে বৃষ্টি দেখছে।মুচকি হেসে বললাম,

—‘ওয়েলকাম, ওয়েলকাম মাই কিংডম!’

হঠাৎ করে চোখ গেল হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছেলেটার দিকে। আমার থেকে বেশ দূরেই আপনমনে বৃষ্টি বিলাস করছে।হা পা ছুড়ে ছুড়ে পানি দিয়ে খেলা করছে।আমার দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যার ফলে মুখটা দেখতে পাচ্ছি না কিছুতেই। জোরে হাঁটা ধরলাম।ছেলেটার মুখ আমি আজ দেখবই দেখবো।হাঁটছি তো হাঁটছি।পথ শেষ হচ্ছে না।হাঁটার বেগ বাড়ছে ধীরে ধীরে।তবু যেনো নাগাল পাচ্ছি না……….দুচোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করছে।আর ভাবতে পারছি না।হাঁটছি তো হাঁটছিই!!

____________________

দিনগুলো আগের মতোই কাটছে।তবুও অবচেতন মন বার বার জানান দেয় যে কোথায় যেনো সুর কেটে গেছে। কোথায় যেনো একটু হলেও উল্টে পাল্টে গেছে। কিন্তু কোথায় তা জানা নেই। ভাবী এখনো তার বাপের বাড়ি থেকে আসেনি।

তিহাম ভাইয়া নিয়ম করে বিভিন্ন নাম্বার থেকে এসএমএস, কল দিয়ে যাচ্ছে। এখন অবধি তার ১১ টা নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলেছি।আমি নিজেই ফেড আপ হয়ে গেছি।কিন্তু ওনি হচ্ছে না।আমার মনে হয় উনি চরম আনন্দের সাথে কাজটা করছে।

আমার রুমের বেলকনিতে বসে গাছ গুলোর ডালপালা ছেঁটে দিচ্ছি।আমান এসে বলল,

—‘আপু, মা খাওয়ার জন্য ডাকে।চলো।’

—‘তুই খেয়েছিস?’

—‘না।আচ্ছা, আপু।ভাইয়া ভাবীকে আনতে যাবে কবে?সেই কবে গেছে!আর ভাল্লাগছে না।’

—‘ভাইয়া অফিসের কাজের জন্য যেতে পারছে না।ম্যানজ হয়ে যাবে।তুই চিন্তা করিস না।যা, খেয়ে পড়তে বস।আমি একটু পর আসছি।’

আমান মন খারাপ করে চলে গেল।ওর মন খারাপের যথেষ্ট কারণ আছে।ও ভাবীকে পাগলের মতো ভালোবাসে।ভাবীও ওকে সন্তানের মতো ভালোবাসে।কারণ ভাবী এই বাসায় বিয়ে হয়ে আসার পর আমানের জন্ম অপ্রত্যাশিত ভাবে।ভাবী ওর দেখা শোনা বেশি করেছে ।জন্মটা অপ্রত্যাশিত হলেও সে আমাদের সবার চোখের মণি।বিকেল হয়ে গেছে প্রায়।দুপুরের খাবার আমি এখনো খাইনি।উঠে ওয়াশরুমে গেলাম।

গোসল সেরে একটা গোল জামা পরে মাথা মুছতে মুছতে বের হলাম।ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলাম। তিহাম ভাইয়া পা মেলে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। শরীরের মধ্যে হঠাৎ করে আলোর বেগে রক্ত চলাচল করা শুরু করলো।

আমি স্তব্ধ দাঁড়িয়ে গেলাম। তিহাম ভাইয়া বুকে হাত বেঁধে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আমি বেশ বুঝতে পারছি এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়।উনি আমার রুমে এই মুহূর্তে আসার প্রশ্নই উঠে না।

তবে কি আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে?? নাকি আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি?কারণ রোজ রাতে আমার প্রতিটা স্বপ্নে উনি বিচরণ করে।যেটা আমার অবচেতন মন, সচেতন মনকে বলতে ভয় পায়। স্বপ্নে হানা দেয়া না হয় ঠিক আছে। তাই বলে কি বাস্তবেও হানা দিতে হবে?

ধীরপায়ে গিয়ে সোফায় বসলাম।কি হতে চলেছে তা ভাবছি।হঠাৎ তিহাম ভাইয়া উঠে এসে আমার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে কন্ঠরুদ্ধ অবস্থায় প্রশ্ন করল,

—‘কেমন আছো দিয়ামনি?’

এতক্ষণ দেখতে পেলাম এখন কথা শুনছি।কৌতূহল নিয়ে নিজের বুড়ো আঙুলে দিলাম এক চিমটি।আউচ্ শব্দ করে উঠতেই বুঝতে পারলাম এটা সত্যি, স্বপ্ন নয়।মুহুর্তেই চোখটা ধক করে জ্বলে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—‘আপনি?আমাদের বাসায়? কি মনে করে?’

—‘তোমাকে মনে করে?’

—‘হোয়াট?’

(চলবে…….)

এই পর্বটা একদম ছোট হয়ে গেছে। 😪

এপ্রুভ হবে কি না জানি না!চারটা পর্ব হবে আজ।তারপরো এক দল আপু বলবে আজ আরেকটা পর্ব দাও আপু।🐸🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here