#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩১
মীরাকে দেখেও অভ্র না দেখার ভাব করে অভ্র মিহিকে নিয়ে চলে গেলো। মীরা অভ্রের এমন কান্ড দেখে অবাক হচ্ছে। যে অভ্র মীরাকে এতো ভালোবাসতো সে কিনা বউ পেয়ে মীরাকে ভুলে গিয়েছে। ভুলে যাওয়াটা ও স্বাভাবিক কারণ মীরা যে ব্যবহারটা অভ্রের সাথে করেছে এতো মীরার উপর ঘৃণ্য দৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মীরা তো এভাবে হার মেনে নেবে না। অভ্রের পিছন পিছন দৌড়ে গেলো মীরা কিন্তু এর আগে ই মিহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে অভ্র। মীরার ডাকে অনেকবার কিন্তু এই ডাকে সারা দেয়নি অভ্র।
মীরা গাড়ি নিয়ে অভ্রের গাড়িকে ফলো করে।
অভ্র মিহির এক হাত ধরে আছে অন্য হাতে ড্রাইভ করছে। মিহি অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
–এভাবে তাকিয়ে থেকো না টিয়াপাখি, গাড়ি এক্সিডেন্ট করবে।
–এমন কথা কখনো বলতে হয় না। আমি আপনার দিকে তাকাবো না আর কখনো। আমি যখন মরে যাবো তখন বুঝবেন আমি না থাকলে কতোটা কষ্ট হয়।
–মিহি…
জোড়ে চিৎকার করে ডাকটা দিয়ে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দেয়। অভ্র মিহির হাত ধরে কাছে টেনে আনে। কপালে চুমু খেয়ে মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে।
–আমি দুষ্টুমি করছিলাম টিয়াপাখি। তুমি এটা কী বললে, তোমার কিছু হলে কী আমি বাচবো নাকি। আল্লাহ এর কাছে একটা ই চাওয়া মৃত্যু আসলে যেনো দুজনের একসাথে হয়।
–ছাড়ুন, লেইট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে এভাবে গাড়ি থামিয়ে রেখেছে অন্য গাড়ি যেতে ও প্রবলেম হচ্ছে।
অভ্র মিহিকে ছেড়ে আবার ড্রাইভ করতে শুরু করে। পাশ থেকে গাড়ির গ্লাস দিয়ে সব দেখে মীরা। ভেতরের রাগটা আরো বেড়ে উঠে।সহ্য হচ্ছে না মিহিকে অভ্রের পাশে দেখে। হয়তো অভ্রকে কষ্ট দিয়ে মীরা ভুল করেছে তাই বলে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত এতোটা কষ্ট পেয়ে করতে হয়ে তা জানা ছিলো না।
অভ্র মিহি মধ্যে পুরোপুরি ডুবে আছে হাজার চাইলে মীরা এখন অভ্রকে নিজের দিকে ফিরাতে পারবে না। তাই মিহিকে ই নিজের বশে আনতে হবে।
মীরা অভ্রের অফিসে ডুকলো।
অভ্র মিহিকে কেবিনে বসিয়ে একটা মিটিংয়ে এ চলে যায়। মিহি কেবিনে বসে বসে ফোনে ভিডিও দেখছে হঠাৎ মীরা প্রবেশ করে,
–কারো কেবিনে ডুকতে হলে অনুমতি নিয়ে ডুকতে হয় সামান্য ভদ্রতাটুকু ও দেখি আপনার মধ্যে নাই।
–এই মেয়ে তুই কী আমাকে ভদ্রতা শিখাবি, তোর মতো অনেক মেয়ে আমি শায়েস্তা করেছি আর এই পুচকি মেয়ে আমাকে ভদ্রতার কথা বলছে।
–জানেন তো শিক্ষা নিতে বা দিতে বড় ছোট নাই।
–তোর কাছ থেকে শিক্ষা নিতে আসেনি তুই আর কী দেখলে অভ্রের জীবন থেকে সরে যাবি বল।
— এটা অভ্রকে ই জিজ্ঞেস করুন।
–অভ্রকে কী জিজ্ঞেস করবো, তোর মতো মেয়েরা এগুলো ই করে বড়লোক ছেলেদের বিয়ে করে টাকার লোভে। লোভি চরিত্রহীন মেয়ে তুই।
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি মীরা গালে থাপ্পড় মারে।
–অনেক বলেছিস এখন যা। আমি বা আমার হাসবেন্ড এর আশেপাশে তোকে দেখলে খুন করবো।
থাপ্পড় এর ধাক্কা সামলাতে বা পেরে মীরা নিচে পড়ে যায়। এর মধ্যে অভ্র ভিতরে ডুকে, সাথে একজন মধ্যে বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলা।অভ্র মিহির কাছে যায়। হাতটা ধরে বলে,
–স্যরি মিহি আমার জন্য তোমার আজকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। উনারা মীরার মা বাবা । আমি কল দিয়ে আসতে বলেছি। আশা করবো আপনারা আমার কথা এবং আপনার মেয়ের কাজ কর্ম দেখে সব বুঝতে পেড়েছেন। মেয়েকে নিয়ে যান, আর যেনো আমাকে বা আমার স্ত্রীকে বিরক্ত না করে তা একটু খেয়াল রাখবেন।
–আমাদের মেয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি বাবা, আমরা বুঝতে পারিনি মীরা এমন কান্ড করবে।
–ঠিক আছে আপনারা এখন আসতে পারেন।
যাওয়ার আগে বলে যাই এই মীরাকে থাপ্পড় মারা আর মা বাবা ডেকে অপমান করা সব কিছু জন্য তোমার বউকে কষ্ট পেতে হবে। আমি এখন যতটুকু কষ্ট পেলাম তার ডাবল আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবো, প্রতিজ্ঞা করে এখান থেকে বের হলাম।
কথাটা বলে ই মীরা বের হয়ে গেলো। ওরা বের হতে ই অভ্র মিহিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
–ভয় পেয়ো না টিয়াপাখি সব ঠিক হয়ে যাবে।সব কিছুর পর এটা ই বলবো আই লাভ ইউ টিয়াপাখি। ভালোবাসি অনেক বেশি ভালোবাসি। যতটা ভালোবাসলে তোমাতে আসক্ত হওয়া যায় ঠিক ততটাই ভালোবাসি।
__________________
মিহি অভ্র বাসায় ডুকার পরপর ই মিনতি আর অনি এসে মিহিকে নিয়ে যায়। অপু এসে অভ্রকে নিয়ে যায়।
–কী হয়েছি বলবি তো।
–তোরা দুইজন কী অপরাধ করেছিস কে জানে। দাদিমা আবার বলেছে তোদের আলাদা করতে।
কথাটা শুনে মিহি গিয়ে বেডে বসে পরে। এই বুড়ি কী শান্তিতে থাকতে দিবে না নাকি।আবার কী ভুল করলাম তা ই তো বুঝলাম না।
–বিরবির করে কী বলছিস। যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
–যাবো না। ভালো লাগছে না।
–যে হবে ভাবি এটা দাদিমার আদেশ।
বলে ই অনি টেনে ওয়াশেরুমে দিয়ে আসে। মিহি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে। দেখে বেডের উপর সাজিয়ে রাখা অনেকগুলো শাড়ি আর জুয়েলারি। মিহি মিনতির দিকে তাকিয়ে বলে
–কীরে আমার কী আবার বিয়ে নাকি।
–হলে হতে ও পারে এতো কথা কেনো বলিস।
–কী পড়বো।
–শাড়ি।
–আমি শাড়ি পড়তে পারি না।
কথাটা বলার সাথে সাথে মিনতি বললো, শাড়ির বাকি জিনিসগুলো পড়েনে। আমি পড়ে দিচ্ছে।
মিনতি আমাকে রেড কালারের শাড়ি পড়িয়ে দিলো,শাড়িটা অবশ্যই বাঙ্গালী স্টাইলে পড়িয়েছে। হাতে কাঁচের চুড়ি। মাথা খোপা করা, খোপায় সাদা রঙের ফুল। পায়ে আলতা, হাতে ও আলতা দিয়ে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে।
কেমন যেনো একটা ফিল হচ্ছে। এমন করে কেনো সাজিয়ে দিচ্ছে বুঝলাম না।
–আচ্ছা অনি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান আছে নাকি।
–ভাবি তুমি কী অন্য কারো বিয়েতে এভাবে শাড়ি পড়ে যাবে।
–তাহলে কী আমার বিয়ে।
–তা জানি না।
–নিশ্চয় জানো কিন্তু আমাকে বলবা না।
–আমাদের দাদিমা বলেছে তোমাকে সাজিয়ে দিতে তাই দিচ্ছি, আর বাকি টুকু জানি না।
মিহি হাতে ফোন নিলো, অভ্রকে কল দিবে। এমন টাইমে মিনতি টান দিয়ে ফোন নিয়ে নিলো,
–আরে সমস্যা কী কল দিতে দিবি তো।
–দাদিমার নিষেধ আছে, কারো সাথে কথা বলা যাবে না।
হইছে বোন আর একটু শান্তিতে কাজ করতে দে তারপর তুই যেখানে ইচ্ছে যা। যাকে খুশি কল দে তা জানি।
রাত প্রায় দশটার মতো বাজে হঠাৎ মিনতি আর অনি আমাকে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটা দেখে আমার চোখ বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এতো সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখছি খুব সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিলো।
–পনেরো হাজার টাকা না দিলে রুমে ডুকতে পারবেন না অভ্র ভাইয়া।
হঠাৎ এমন কথায় পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখি মিনতি অপু অনি সবাই রুমে ডুকে দরজা লক করে দিয়ে। অভ্রকে এই কথা বলছে।
–এই আপনি একদম টাকা দিবেন না। মনে হয় শপিং এর টাকা কম পড়ছি ওদের তাই এমন করছে।
–মিহি চুপ কর। টাকা না দিলে আজকে অভ্র ভাইয়া রুমে ডুকতে পারবে না।
অভ্র দরজার ঐপাশ থেকে বললো,
–দরজা না খুললে টাকা দিবো কিভাবে।
ওরা দরজা খুলে অভ্র কয়েকটা টাকাট দূরে ফেলে দেয়। সবাই যখন টাকা নিতে যায় অভ্র রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভ্রের এমন কান্ড দেখে আমি হাসতেছি।
–ভাইয়া চিটিং করেছেন এইখানে মাত্র পাঁচহাজার।
–তোরা এই টাকা না নিলে দরজার নিচে দিয়ে আমাকে দিয়ে চলে যা।
এটা বলার সাথে সাথে সবাই চলে যায় টাকা নিয়ে। আমি দাড়িয়ে হাসতেছি, অভ্র পাঞ্জাবি পায়জামা পড়া।
–এভাবে তাকিয়ো না টিয়াপাখি হার্টবিট বেড়ে যায়।
বলে ই আমার দিকে এগোতে থাকে…..
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩২
লজ্জা শব্দটা আকড়ে ধরে আছে মিহিকে। অভ্রের সামনে যেতে ই দুচোখ বন্ধ হয়ে আসে।কালকে রাতের কথা মনে হলে নিজেকে এই চার দেওয়ালের ভিতরে ই লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়। ভালোবাসাময় রাতটা পাড়ি দিয়েছে। খুব ভালো লাগার মুহূর্ত ছিলো। অনেক্ষন যাবৎ মুখ ডেকে বসে আছে। অভ্র বার বার অনেক কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কোনো উওর ই মিহি দিচ্ছে না।
–স্যরি, মুখ ডেকে বসে আছো কেনো। কথা না বললে আবার রোমাঞ্চ করা শুরু করে দিবো কিন্তু। অনেক হয়েছে আর ভালো লাগছে না।
কথাটা শোনার সাথে সাথে মিহি মুখ খুলে জিজ্ঞেস করে,,,
—কী হয়েছে।
–কথা বলছো না কেনো।
–এমনি।
–নিচে চলো ডাকছে।
–আমি যাবো না।
–কোলে করে নিয়ে যেতে হবে ঐটা বলো
–এই না, না আমি যাচ্ছি।
আমি নিচে যাওয়ার জন্য শাড়ি ঠিক করছি, আয়নায় নিজেকে আবার দেখে নিলাম। বেডে বসে বসে অভ্র আমাকে দেখছে।।আমার কাছে এসে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
–গলার দাগটা দেখা যাচ্ছে টিয়াপাখি।
–তোর জন্য ই তো এই দাগ, আবার আদিক্ষেতা করতে এসেছিস।
–আমার পিঠে যে দাগগুলো আছে ঐগুলো কী হে।
–আমার সামনে থেকে সরে যা।
–রাগ করো না টিয়াপাখি, স্যরি।যেমন কষ্ট দিয়েছি তেমন ভালোবাসা দিয়ে সব পূর্ণ করে দিবো।
সকল লজ লজ্জা ভেঙ্গে নিচে গেলাম, দেখলাম সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।আমাকে দেখে ই মিনতি এগিয়ে।
–খাবার খেয়েছিস।
–না, ক্ষুধা লাগছে। খাইয়ে দে না।
মিহিকে সোফায় বসিয়ে মিনতি খাবার নিয়ে আসে। খাবার খাইয়ে দেয়।
রেনু বেগম দুই ছেলের বউকে ডেকেছে। মিহি মিনতি দুজন ই রেনু বেগমের সামনে বসে আছে,
–আম্মু কেনো ডেকেছো।
–আমার দিন শেষ হয়েছে, তোদের কে সব বুঝিয়ে দিতে পারলে ই আমি শান্তিতে মরতে ও পারবো।
–আম্মু এমন করে কেনো বলছো।
–মানুষ কে কদিন বাচবে তার কোনো ঠিক নাই। তাই তো আমার দায়িত্ব শেষ করতে চাচ্ছি।
বলে ই একটা বাক্স বের করলো, দুই ছেলের বউ আর মেয়েকে নিজের যা গহনা ছিলো সব ভাগ করে দিলো।
মিহি বললো,
–মা আমি এগুলো নিতে পারবো না। তোমার গহনা আপনার কাছে ই থাক।
–মিহি একটা কথা ও বলবা না, এগুলো আমার শাশুড়ী আমাকে দিয়েছিলো। আর আমি আমার দুই ছেলের বউ আর মেয়েকে দিয়ে যাচ্ছি। তোমরা তোমাদের ছেলের বউকে বা মেয়েকে দিয়ে বলো আমার কথা। আর আমার সংসারটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখো এতো ই আমার শান্তি।
________________________
দুই মাস পর,
মিহি আজকে খুব খুশি প্রেগ্যান্সি টেষ্ট করেছে, টেষ্ট এর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ভেবেছে অভ্রকে বলবে না। সারপ্রাইজ দিবে পরে।
অভ্র অফিস থেকে এসে মিহিকে খুজতেছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না, মিহিকে খুজে না পেয়ে পাগলের মতো লাগছো। মিনতির রুমে খুজলো, মায়ের রুমে খুজলো, দাদিমার রুমে খুজলো। পুরো বাড়ি খুজে শেষ করলো, এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে মিহিকে হারিয়ে ফেলেছে। কান্না পাচ্ছে খুব। তাও দৌড়ে ছাদে গেলো।
ছাদে গিয়ে দেখলো এককোণে চুপটি করে বসে আছে আর আমের আচার খাচ্ছে।
অভ্র দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো, জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।
–আরে কী হয়েছে।
–তুমি এখানে আর আমি সারা বাড়ি খুজতেছি।
–ছাদে, আচারগুলো রোদে দিলো তো তাই এইখানে ই বসে বসে খাচ্ছি, বেশ ভালো লাগছে।
–আরো ভালো লাগার খবর আছে টিয়াপাখি।
মিহি খুশি হয়ে অভ্রকে জিজ্ঞেস করলো,
–কী..
–সিলেট যাবো।
–কী, সত্যি।
–হুম।তুমি চেয়েছিলে সবার সাথে সিলেট যেতে কিন্তু আমি দেইনি। এখন সবাই বাসায় থাকবে, আমি তোমাকে নিয়ে সিলেট যাবো। এবং কালকে সকালে। তোমার কোনো চাওয়া আমি কখনো অপূর্ণ রাখবো না টিয়াপাখি। আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সব ইচ্ছে পূরণ করতে।
–হইছে, এবার একটু দূরে সরে বসো।
–অনি তুই যেকোনো সময় এন্ট্রি নেওয়া বন্ধ কর।
–এটা আমার ইচ্ছে, তা বউকে পেলে। নিজেও পাগল হইছো সারাবাসার সবাইকে পাগল বানিয়েছো। ডাকছে নিচে যাও এখন।
মিহি, অভ্র দুজনে ই নিচে নেমে এলো,সবাই সোফায় বসে আছে তাই অভ্র সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–আমি মিহিকে নিয়ে কালকে সকালে সিলেট যাচ্ছি।
দাদিমা বললো,
–একা ই যাবে।
–হে।
–একা যাওয়া যাবে না। মিহি কোনো কাজ করতে পারে না। পলা মানে কাজের মেয়েকে নিয়ে যাও।
–হে তা ঠিক বলেছেন, দাদিমা মিহি তো কোনো কাজ ই ভালো করে করতে পারে না। পলাকে নিয়ে গেলে, আমার জন্য ভালো হবে।
–হে, এজন্য ই বললাম।
–তাহলে ঐ কথা থাকলো, যাচ্ছি তাহলে কালকে সকালে।
___________
সকাল ছয়টা,
মিহি খুব এক্সাইটেড, এই প্রথম অভ্রের সাথে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে।
সামনে অভ্র আর কাজের মেয়েটা বসেছে, পিছনে অভ্র মিহি।
মিহি অভ্রের বাম হাতটা জড়িয়ে ধরেছে। অভ্র এ হাত দিয়ে মিহি আঙ্গুলের ফাকে অভ্রের আঙ্গুলগুলো দিয়ে রেখেছি। অভ্র আলতো করে কপালে চুমু খেয়ে নিলো।
পলা মেয়েটা কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। অভ্র পেছন থেকে তা লক্ষ করছে। বেশি দিন হয়নি কাজ করে মেয়েটা তাদের বাসায়। ছোট্ট একটা মেয়ে কী আর করবে তাই অভ্র ওর দিকে মন না দিয়ে মিহিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
———————–
পরের দিন সকালে,
মিহিরা সিলেট পৌঁছেতে প্রায় দশ ঘন্টা মতো সময় লাগে। তাই মিহি এসে ই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অভ্র সকাল সকাল উঠে, ফ্রেশ হয়। মিহিকে ডেকে তোলে।জাফলং এর পাশে একটা হোটেল এ উঠেছে তারা। দুইটা রুম নিয়েছে, একটাতে অভ্র মিহি অন্যটাতে পলা। আর ড্রাইভার গাড়িতে ই থাকে।অনেক বলা শর্তে ও উনি রুম নিতে রাজি হননি।
–রেডি হওয়া শেষ, চলেন।
মিহির দিকে কতোক্ষন তাকিয়ে থেকে অভ্র কানের কাছে ঠোট ছুয়ো বললো,
–টিয়াপাখি, এভাবে কেনো সাজুগুজু করো নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়।
মিহি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো, চলুন।
অভ্র মিহি দুজন ই গাড়িতে গিয়ে বসে, হোটেল থেকে কিছুটা দূরে জাফলং। গাড়ি যত এগোচ্ছে মিহির ততভালো লাগছে। রাস্তা পাশ দিয়ে কতো সুন্দর সবুজের সমারোহ। ঐযে দূরে দেখা যাচ্ছি পাহাড়।পাহাড় দেখতে তো বেশ ভালো লাগে।
–টিয়াপাখি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে আবার আমাকে ভুলে যেয়ো না।
মিহি কোনো কথা বলে না শুধু দেখতে থাকে।
জাফলং এসে গাড়ি পার্ক করে, গাড়ি থেকে নামে অভ্র মিহি।
মিহি দেখতে পায়, কিছুটা দূরে নীল একটু পানি। খুব বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। নীল পানিটা দেখিয়ে অভ্রকে বলে আমাকে নিয়ে যান, ঐখানে।
অভ্র হাসি মুখে উওর দিলো, চলো।
এমা এটা কী এতোগুলো সিড়ি কেনো নিচে নামার জন্য। গাড়ি থেকে নামার পর তো দেখা গিয়েছিলো একটু সামনে গেলেই বুঝি, পানিগুলোতে পা ভিজিয়ে রাখতে পারবো।
দুজন খুব আনন্দ নিয়ে নিচে নামলো। মিহি পাথরে বসে, দাড়িয়ে, নৌকায় বসে বিভিন্ন এঙ্গেলের পিক তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো, অভ্র শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।এই যে মিহির হাসিটা এটা দেখে মনে শান্তি লাগছে। ইচ্ছে করছে সময়টাকে এখানে থামিয়ে দিতে। এই হাসিটা সব সময় দেখার জন্য। দুঃখগুলোকে কারবদ্ধ করে রাখতে যেনো কখনো সুখটাকে মেরে ফেলতে না পারে।
দুজন ই ক্লান্ত হয়ে যায়। অনেকক্ষন ঘুরেছে ছবি তুলেছে, নৌকায় বসে পানিতে পা ডুবিয়ে রেখেছি। এখন চলে যাওয়ার পালা। কিন্তু এতোগুলো সিঁড়ি দিয়ে উঠবে কী করে।
পলা ও সাথে এসেছে, মিহির প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পলার কাছে দিয়ে রেখেছে।
সিড়িরগুলোর সামনে এসে মিহি দাড়িয়ে পড়ে।
–কী হয়েছে।
–কিছু না, তাহলে চলো।
মিহি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে হাঁপিয়ে গেলো, পরক্ষণেই মনে হলো অভ্রকে শাস্তি দেওয়া যাক।
–এই যে শোনছেন।
–হে বলো,
–আমাকে কোলে নিন। আর কয়েকটা সিড়ি ই আছে উপরে উঠার। এটা আপনার শাস্তি গতবার আমাকে আসতে না দেওয়ার জন্য।
অভ্র হাসি মুখে মিহিকে কোলে নিয়ে নিলো, চারপাশের মানুষজন তাকিয়ে আছে। কিছু ছেলে তো সিটি বাজাতে থাকে।
–এই তুমি এবার থেকে ডায়েট করবা।
উপরে উঠে কোল থেকে নামিয়ে অভ্র এই কথা বললো, মিহি রাগি চোখ দিয়ে তাকাতে ই অভ্র অন্য দিকে তাকিয়ে গেলো।ঘুরাঘুরি শেষ করে রাতে বাসায় ফিরলো। ক্লান্ত শরির নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো মিহি অভ্র দুজন ই।
_________________________
দুদিন পর সব ঘুরা শেষ করে বাসায় ফিরছে মিহি অভ্র। ছয় ঘন্টা যাবৎ গাড়িতে বসে আছে দুজন। হঠাৎ পলা বললো,
–ভাইজান আইসক্রিম কিনে দেন।
মিহি ও বলা শুরু করে , হে যান আমি ও খাবো।
অভ্র কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো,
–ড্রাইভার গাড়ি সাইড করেন তো, আমি না আসা পর্যন্ত গাড়ি থেকে কেউ নামবে না।
এটা বলে ই অভ্র আইসক্রিম আনতে গেলো,
অভ্রর কথা উপেক্ষা করে মিহি ও পিছন পিছন যেতে নিলে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মিহিকে ধাক্কা দেয়।
অভ্র পিছনে তাকিয়ে দেখে মিহির রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পড়ে আছে
চলবে,
[বলেছিলাম, শেষ করে দিবো আজ। কিন্তু সব কিছু গুছিয়ে কাল শেষ করে দিবো। স্যাড এন্ডিং দিলে কেমন হয়। গঠনমূলক মন্তব্য করুন ]
চলবে,
[ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]