#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-১৯
পুতুল গোসল শেষে সোজা নিচে নেমে আসে।সিড়ির কাছে দাড়িয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় বড় আম্মু স্থির দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।পুতুল এগিয়ে গিয়ে সোফায় বসে বলল,
-” বড় আম্মু ক্ষুধা পেয়েছে খেতে দাও তো।”
মিসেসে মধুমিতা পুতুলের কথায় একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন,
-” কী হয়েছে বলতো পুতুল, আজ এতো আগেই চলে আসলি কেন? অবাক কী আজ আবার ঝগড়া করেছে তোর সাথে?
-” না না বড় আম্মু কোন ঝগড়া করেনি, এমনিতেই চলে এসেছি।আসলে,,,,,”
বাকি কথা আর শেষ করতে পারেনি পুতুল, সে বিস্ময় ও মুগ্ধতা নিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে আসা মানুষটাকে দেখেছে।
ফর্সা গায়ে আর্মি ইউনিফর্ম চাপিয়ে চটপট পায়ে নিচে নামছে সূর্য।একহাতে ক্যাপ ধরে অন্যহাত দিয়ে ইউনিফর্মের হাতা গুটিয়ে দু’হাতের সাহায্যে ক্যাপটা পড়তে পড়তে সিড়ি বেয়ে নামছে।পুতুলের হঠাৎই মনে হলো পৃথিবীর আর কোনো দেশে কী এমন ভয়ংকর সুন্দর আর্মি আছে?এই যে কী ভয়ংকর স্টাইলে হাতাটা গুটাচ্ছে আবার কী ভয়ংকর এটিটিউটে ক্যাপটা মাথায় দিচ্ছে! আচ্ছা পৃথিবীর সব আর্মিরাই কী এমন ভয়ংকর স্টাইলে ক্যাপটা মাথায় দিতে পারে? উফফ,,,, তার অনুভূতিরা আবার আকুপাকু শুরু করেছে।ইসস,,,, হৃৎপিণ্ডটা মনে হয় বুক থেকে খসে পড়বে।তাই দ্রুত বুকে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে আবারও সূর্যর দিকে তাকালো পুতুল।
সূর্য দ্রুত পায়ে মায়ের সামনে গিয়ে ঝুঁকে মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,
-” আসছি মা।”
মিসেস মধুমিতা স্মিত হেসে বললেন,
-” সাবধানে যাস। আর পারলে একটু ফোন দিস।”
-” ঠিক আছে চেষ্টা করবো।”
বলে একটু হেসে পুতুলের সামনে দাড়িয়ে পুতুলের ঠোঁট জোড়া দু আঙুল দিয়ে বন্ধ করে ঝুকে ফিসফিস করে বলল,
-” তুমি চাইলে এবার এসে বিয়েটা করে সুখতারাকে নিয়ে আসবো,কেমন?” বলেই নিয়মমাফিক নাকটা টিপে বলল,
-” আসছি পিচ্চি, ভালো থেকো।”
বলেই দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায় সূর্য।আর পুতুল তার নাক ধরে বসে ভাবছে সেকি আসলেই বোকা!! নাকি সবাই তাকে বোকা বানিয়েছে।
চুপিচুপি পা টিপে টিপে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে পুতুল উদ্দেশ্য সূর্যের রুমে যাওয়া।নিজেকে কেমন চোর চোর মনে হচ্ছে তার, নিজের বাড়িতে এমন চোরের মতো চলার কোন ইচ্ছে ছিল না পুতুলের।কিন্তু কি করবে যদি কেউ বলে এতো রাতে সূর্যের রুমে কেন যাচ্ছে?ইসস,,,, তার তো ভীষণ লজ্জা লাগবে। দরজার সামনে এসে এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি দিয়ে টুপ করে রুমে ঢুকে যায় পুতুল।সূর্য গতকাল যাবার পর থেকে ভীষণ শূন্যতা অনুভব হচ্ছে পুতুলের, সকালে কলেজ যাবার সময় সূর্যের জায়গায় নতুন ড্রাইভারকে দেখে আরো বেশি মন খারাপ হয়ে যায়।কলেজে কোনো ক্লাসেই মন বসাতে পারেনি।টিফিন ব্রেকে ফোন হাতে নিতেই সূর্যের নাম্বার থেকে মেসেজের নোটিফিকেশন দেখে ভীষণ খুশি হয়ে মেসেজটা ওপেন করে পুতুল।
“মিস ইউ পিচ্চি,,,,আমার ক্লজেটের মাঝের সেল্ফে ড্রয়ারে তোমার একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে,নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিও।”
মেসেজ টা পড়েই পুতুল দ্রুত কল দেয় সূর্যকে।কিন্তু যন্ত্রমানবী মায়বী কন্ঠে ককর্শ কথাটা শুনিয়ে দিল পুতুলকে।আরো দুএকবার ফোন দিয়ে চুপচাপ বসে পুরো টিফিন টাইম মেসেজ টা পড়ে কাটালো।লাস্ট ক্লাসে পুতুল কিছু একটা ভেবে ফট করে ফোন টা নিয়ে সূর্যকে মেসেজ দেয়।
এসব ভাবতে ভাবতে মৃদু পায়ে সূর্যর ক্লজেটের দিকে এগিয়ে গেল পুতুল।ক্লজেটের মাঝের সেলফে ছোট দুটি ড্রয়ারের প্রথম টা খুলতে গেলেই বুঝতে পারে লক করা দ্বিতীয় টা টান দিতেই খুলে গেল।ড্রয়ারে চারকোণা আকারের রেড কালারের একটা বক্স দেখে হাতে তুলে নেয় পুতুল।বক্সটা খুলতেই পুতুল বিস্ময়ে মৃদু চিৎকার করে বলল
-” ওহ মাই গড।” বলেই একহাতে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়ে পুতুল।বক্স থেকে প্লাটিনামের সাথে সাদা পাথরের লোকেটযুক্ত চিকন চেইন টা বের করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুতুল।সে তো মাম্মার এই চেইন টা নিউইয়র্ক থাকাকালীনই হারিয়ে ফেলে ছিল। কিন্তু এটা সূর্য কোথায় পেল ভেবেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে পুতুল।
কালো হুডি পড়া লোকটা পুতুলকে জাপটে ধরে উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎই পুতুল ভীষণ জোর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় লোকটাকে।কিন্তু লোকটা ছিটকে পড়ে যাওয়ার সময় তার চোখ দেখে ঝট করে ঘুম থেকে উঠে বসে হাঁপাতে শুরু করে পুতুল।ভয়ে হাত-পা কাপছে, চোখ টা সূর্যের চোখ ছিল।সে সূর্যকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছে ভাবতেই চোখ ফেটে কান্না পাচ্ছে।ফোনের এলার্মে বাস্তবে ফিরে পুতুল।ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারে সে সূর্যের ঘরেই ঘুমিয়ে গেছিল।সাইড টেবিলের ফটো ফ্রেমের ভেতর টুকটুকি ভাইকে জাপটে ধরে গালে চুমু দিচ্ছে আর সূর্য তার বাঁকা দাঁতের অমায়িক হাসি দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে।পুতুলের হঠাৎই মনে হলো এই অসাধারণ চোখের ছেলেটাকে সে ভালবাসে, অনেকটা ভালবাসে।
______________________
আকাশটা অগণিত তারাতে ভর্তি থাকলেও চাঁদটা অনুপস্থিত।বর্ডারের পাশে থাকা বড় বড় ধান গাছ গুলো সো সো বাতাসের তোড়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দুলছে।সেই দোদুল্যমান ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে নিকোষ কালো অন্ধকার পেরিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে টিম “হিমালয়” এর সদস্যরা।কিছুদূর যেতেই কয়েকজন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড দেখতে পায় সূর্য।গার্ড গুলো তাদের দেখতেই সূর্য হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে আবারও নিরবে এগিয়ে যায় বর্ডারের পাশে থাকা ইটের দেয়ালের ছোট ঘরটার দিকে।
নামকরা টেরোরিস্ট ফয়সাল মারওয়া তার কার্যসিদ্ধর জন্য দুজন জার্নালিস্টকে আটক করে রেখেছে।সূর্য কল্লোলকে নিজের সাথে আসার ইশারা করে বাকিদের কে তাদের পজিশন দেখিয়ে নিরব পায়ে এগিয়ে যায়।এর আগেও এই ফয়সালের সাথে তাদের অনেকবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তির জন্য বারবারই মুক্তি পেয়ে গেছে ফয়সাল।তবে সূর্য এবার নিজের ক্ষতি করে হলেও এই বিষাক্ত টেরোরিস্টের ইনকাউন্টার করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
___________________
ভীষণ ভীষণ অস্থিরতা নিয়ে সূর্যের রুমের বিছানার উপর বসে আছে পুতুল।হঠাৎই তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।তার এখুনি সূর্যকে দেখতে ইচ্ছে করছে, ভীষণ ইচ্ছে করছে।কিন্তু কীভাবে দেখবে? ভেবেই ঠোঁট জোড়া অটোমেটিক কাঁপতে শুরু করে হয়তো কান্নার পূর্বাভাস দিচ্ছে।আজ তেরো দিন যাবত সূর্যের অনুপস্থিতিতে সে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সে ওই ইডিয়ট কেপ্টেন টাকে ভালবাসে, ভীষণ ভালবাসে।সে ওই ইডিয়ট কেপ্টেন টার রাগ,হুমকি, কেয়ার, ভালবাসা সবকিছুকে ভালবাসে, ভীষণ ভালবাসে।রোজকার মতো আজও ক্লজেট থেকে সূর্যর সাদা টিশার্ট বের করে গায়ে দিয়ে চুপচাপ সূর্যের বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়ে পুতুল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের রুমে আসতেই বিছানায় টুকটুকিকে বসে থাকতে দেখে একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায় পুতুল।পুতুলকে দেখতেই টুকটুকি স্বভাবতই লাফ দিয়ে তার সামনে এসে বলল,
-” আপু কোথায় ছিলে বলতো?”
টুকটুকির প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে যায় পুতুল।আমতা আমতা করে বলল,
-” ওই বাগানে গেছিলাম।”
পুতুলের কথায় টুকটুকি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-” আমি কেবলই মালি চাচার সাথে কথা বলে তোমার রুমে আসলাম, কই তোমাকে তো দেখলাম না।” একটু দম নিয়ে পুতুলের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল,
-” আপু তুমি কি ভাইয়ার টিশার্ট পড়েছো?”
টুকটুকির কথায় পুতুল নিজের দিকে তাকিয়ে মাথায় তাল পড়ার অনুভূতি হলো।তার এখন সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছে সূর্য একদম ঠিক বলে, সে আসলেই বলদ বড়ো আকারের বলদ।
#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-২০
মিসেস মধুমিতা খাবার ট্রে হাতে পুতুলের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।পুতুলকে নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি, এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের কখন কী হয় বোঝা মুশকিল।কিন্তু মেয়েটা ইদানিং বেশি চুপচাপ থাকে, জিজ্ঞেস করলেও মনমতো উত্তর পাওয়া যায় না।আজকে একটু বেশিই চুপচাপ হয়ে আছে পুতুল।দুপুরে কলেজ থেকে ফিরে না খেয়েই ঘুমিয়েছে।আবার ডিনারের সময় ছন্দ ডাকতে এসেও দেখে ঘুমচ্ছে। তাই এখন নিজেই যাচ্ছেন, মেয়েটা আবার অসুস্থ নয়তো ভেবেই দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন।
বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে পুতুল।হাতটা ভীষণ ব্যাথা করছে।দুপুরের কথা মনে পড়লে ভীষণ কান্না পাচ্ছে।তার জীবনে এতো কেন ঝামেলা?এসব ভাবতেই কপালে কারো ছোয়া পেতেই চোখ মেলে তাকায় পুতুল।মিসেস মধুমিতা পুতুলের কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করে বললেন,
-” মামনি, তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? নাকি কোন কারণে মন খারাপ?”
পুতুল বড় আম্মুর চিন্তিত মুখ দেখে মৃদু হেসে বড় আম্মুর কোলে মাথা রেখে কোমড় পেচিয়ে ধরে বলল,
-” কিছুই হয়নি বড় আম্মু এমনিতেই শুয়ে আছি।”
পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-” তাহলে দুপুরে লাঞ্চ করিস নি কেন? আবার ডিনারেও যাসনি? কি হয়েছে পুতুল? বড় আম্মুকে বল, বড় আম্মু সব ঠিক করে দিব।”
পুতুল চোখ বড় বড় করে বলল,
-” ডিনার!!কয়টা বাজে বড় আম্মু?রাত হয়ে গেছে?”
মিসেস মধুমিতা চিন্তিত হয়ে বললেন,
-” পুতুল আমাকে সত্যি কথা বল, তোর কি কিছু হয়েছে? কলেজে আবার কোন সমস্যা হয়নি তো?”
পুতুল উঠে বসে বড় আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” উফফ,,, বড় আম্মু বললাম তো কিছু হয়নি।চলো তো খেতে দেবে, ইসস,,,, রাত দশটা বাজে, আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে।”
-” কোথাও যেতে হবে না, আমি খাবার নিয়ে এসেছি।এখানে চুপচাপ বসে থাক আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
খাবার খেতে খেতে পুতুলের বার বার সূর্যের কথা জানতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু বড় আম্মুকে কীভাবে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছে না।অনেকক্ষণ উসখুস করে খাবার শেষে পুতুল ফট করে বলে উঠে,
-” বড় আম্মু, তোমার ঝগড়ুটে ছেলেটা কেমন আছে গো?”
মিসেস মধুমিতা পুতুলের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
-” কেন ঝগড়া হচ্ছে না বলে কি মন খারাপ তোর?”
-” আমি মোটেও ঝগড়া করিনা বড় আম্মু। তোমার ছেলেই,,, ”
-“হুম জানি তো, আমার ছেলেটা একদম ওর বাবার মতো ঝগড়ুটে হয়েছে বুঝলি?”
বড় আম্মুর কথায় পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকায়।মিসেস মধুমিতা সবকিছু গুছিয়ে যেতে যেতে বললেন,
-” অবাকের সাথে কথা হয়নি আমার।কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই জানি না।”
বলেই বেরিয়ে যান মিসেস মধুমিতা।আর পুতুল ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ বসে থেকে সূর্যকে এক দফা বকাঝকা করে।তারপর গুটি গুটি পায়ে সূর্যের রুমের দিকে যায়।
______________________________
প্রচন্ড গরমে আর খটখটে আওয়াজে নিজের ভারী চোখ জোড়া মেলে তাকায় সূর্য। টিনের সিলিং এ তিন পাখার ফ্যানটা খটখট শব্দে ঘুরছে।আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পায় পিয়াস তার পায়ের কাছে ঘেমে বেঘোরে ঘুমচ্ছে।বাইরে থেকে আওয়াজ পেয়ে সূর্য কোনরকম একহাতে ভর দিয়ে উঠে বসে।জানলা দিয়ে বাইরে তাকতেই দেখতে পায় সামির আর রক্তিম দুজনে গলা জোরাজোরি করে তাদের চিরচেনা হাঙ্গামা করছে।
কল্লোলকে দেখতে না পেয়ে হুরপার করে উঠে দাড়ায় সূর্য।তাড়াতাড়ি পিয়াসকে ডাকে,
-” পিয়াস, পিয়াস, ওই শালা ওঠ।”
সারারাত জেগে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে পিয়াস।কেউ তার নাম ধরে ডাকছে বুঝতে পারছে কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না।ঘুমের মাঝেই ডিসিশন নিচ্ছে এই বালের চাকরি আর করবোই না।বো**** রা যখন তখন নাক টেনে ধরে মিশনে পাঠায়।আজই বালের রেজিগনেশন লেটার জমা করে দিবো তারপর বছরখানেকের জন্য পিসফুল ঘুম দেব।কিন্তু তার আর পিসফুল ঘুমের স্বপ্ন পূরণ হলো না পায়ে সজোরে একটা লাথি খেয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসে পিয়াস।চোখ ডলে সামনে তাকাতেই সূর্যকে নাক কান লাল করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঝট করে উঠে দাড়িয়ে বলল,
-” সূর্য, তুই উঠে গেছিস? ওই শালা একা একা দাড়িয়েছিস কেন?শালা বুক থেকে আবার ব্লিডিং হচ্ছে। তুই চুপ করে বস আমি ডাক্তার টাকে ধরে নিয়ে আসি।”
বলেই হন্তদন্ত হয়ে বের হতে গেলে সূর্য হাত ধরে বলল,
-” পিয়াস, কল্লোল কোথায়? ও ঠিক আছে তো? ওর মাথায় লেগেছিল,,,,”
পিয়াস সূর্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
-” হাটতে পারবি তো? নাকি কোলে নিব?”
পিয়াসের কথায় সূর্য কিরমির করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিয়াস সূর্যকে সত্যি সত্যি কোলে তুলে বাইরে নিয়ে এসে বারান্দায় দাড় করিয়ে দেয়।সূর্য কটমটে চোখে তাকিয়ে বলল,
-” শালা,মজা,,,,,,,,,,, ”
পিয়াস সূর্যের মুখ ধরে সামনে ফিরিয়ে দিতেই দেখে, কিছুটা দূরে একটা গাছের নিচে চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে ফোন টা উঁচু করে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে নেটওয়ার্ক দেখার চেষ্টা করছে কল্লোল।সূর্য ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে কল্লোলের দিকে এগিয়ে যায়।
নেট কানেকশন পেতেই শ্রেয়ার ভিডিও কল দেখে ঝটপট রিসিভ করে কল্লোল বলল,
-” হ্যা শ্রেয়া, তো যা বলছিলাম।তোমার বলদ বন্ধুটা আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজেই ফয়সালের চাকুর ঘা খেয়ে এখন পড়ে আছে।”
শ্রেয়া দাঁত কটমট করে বলল,
-” আচ্ছা তাই নাকি?”
কল্লোল ভীষণ দুঃখী হয়ে বলল,
-” হ্যা গো, বুকে পিঠে আর ডান হাতে অনেক লেগেছে।অনেক ব্লিডিং হয়েছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে আল্লাহ সহায় ছিলেন তাই তো এখানে এক ভোটকা ডাক্তার পেয়ে গেছি।এখন বলদটা ভালো আছে, এখন ঘুমচ্ছে।”
শ্রেয়া কল্লোলের পেছনে সূর্যকে দেখে হেসে বলল,
-” হ্যা বলদটা আসলেই বলদ, নইলে তোমার মতো বলদের বন্ধু হবে কী করে বলো।”
বলেই খট করে লাইন টা কেটে দেয় শ্রেয়া।
-” যাহ বাবা এর আবার কী হলো?”
বলে পিছনে ঘুরে সূর্যকে দেখে ধম করে চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যায় কল্লোল।উঠে দাঁড়িয়ে ক্যাবলা হাসি দিয়ে বলল,
-” কিরে উঠে গেছিস? এখন কেমন লাগ,,,,।”
কথা শেষ হবার আগেই বা হাত দিয়ে ধুম করে একটা ঘুষি দিয়ে বলল,
-” বলদ কোথাকার!”
সূর্য সর্বোচ্চ বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।টিনের চালার থেকে কটকটে তাপ,ফ্যানের খটখটে আওয়াজ আর তার সামনে বসে বেন্ডেজ করা এই পেট মোটা ডক্টর সবকিছুতেই ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে। তারা এখন বর্ডার গার্ডদের জন্য তৈরি বিশ্রামাগারে আছে।গতকাল রাত থেকে তারা এখানেই আছে।জার্নালিস্ট দুজনকে উদ্ধার করতে পারলেও ফয়সাল পালিয়েছে। ডাক্তার বেন্ডেজ শেষে বললেন,
-” বুকের ক্ষতটা বেশ গভীর কেপ্টেন সাহেব।এখানে কিছু ঔষধের নাম লিখে দিয়েছি, ফিরে গিয়ে অবশ্যই ঔষধ গুলো নিয়ে নিবেন।”
উত্তরে সূর্য মৃদু হেসে মাথা নাড়লো।ডাক্তার উঠে দাড়িয়ে বললেন,
-” ভালো থাকবেন কেপ্টেন সাহেব।আপনারা ভালো থাকলেই তো আমরা ভালো থাকবো।”
বলে হেসে বের হয়ে গেলেন ডাক্তার।সূর্যের হঠাৎই মনে হলো এরকম সুন্দর হাসি দেখার জন্য হলেও সে দফায় দফায় এরকম চাকুর ক্ষত নিতে পারবে।
দুপুরে সবকিছু গুছিয়ে গাড়িতে উঠে বসে টিম হিমালয়। জার্নালিস্ট দুজনকে আগেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।এখন তারা সোজা হেড কোয়াটারে যাবে রিপোর্ট জমা দিতে।আর্মি জিপটা লোকালয়ে প্রবেশ করতেই সবার ফোনে টুংটাং ধ্বনি শোনা যায়।সূর্য সিটে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল।টুংটাং শব্দে আশেপাশে তাকাতেই দেখে সবাই চোখ ফুটিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে।রক্তিম ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামিরের চুল টেনে ধরে বলল,
-” শালা, ***,****, তুই তুষ্টিকে আবার আমার আর সোনিয়ার ফটো দিয়েছিস?”
সামির দাঁত কেলিয়ে বলল,
-” কেন সৃষ্টিকে আমার এক্সের ফটো দিয়েছিলি ভুলে গেছিস? এখন দুজনেই সিঙ্গেল ঘুরবো, আহ কী শান্তি রে রক্ত!”
বলেই দুজনের চিরচেনা হাঙ্গামা আবার শুরু করে।সূর্য বিরক্ত হয়ে বলল,
-” বোথ অফ ইউ স্টপ ইট,আদারওয়ায়িজ আই’ল পানিস ইউ ভেরি আর্লি।”
সূর্যের ধমকে দুজনেই সোজা হয়ে বসে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলল,
-” নাথিং সিরিয়াস বস, উই আর জাস্ট কিডিং।” বলেই দুজনে দুজনের কাধ ধরে বসে।এটা ওদের টিমের কমন ডায়ালগ,ওদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সবাই একসাথে শব্দ করে হেসে উঠে।
তারপর আবার যে যার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।সূর্য নিজের ফোনটা অন করতেই ভুকভুক কর মেসেজ টোন বাজতে শুরু করে।ইনবক্সে ডুকতেই কিবরিয়া ভাইয়ের মেসেজ দেখে সূর্যের নাক কান লাল হয়ে যায়।
চলবে
চলবে
“কারেন্ট আসলে বৃষ্টি চলে যায়”আসলেই সত্যি কথা😂😂। আজ সারাদিন কারেন্ট আর বৃষ্টি তার খেল দেখিয়েছে। আমি আপ্লুত।যাহোক ছোট হলে সরি,,,,, আজকের মতো এটুকুই পুড়ুন।