গল্প:রক্তিম রোদ
লেখনীতে:নিয়াজ মুকিত
পর্ব:অন্তিম পর্ব
হাতে গুলি নিয়ে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে আয়ান।তার হাতে গুলি দেখে আমি সহ সবাই প্রায় চমকে উঠি।নিহানতো রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছে।আমি বুঝতে পারছি না নিহান একটা ছেলে মানুষ হয়ে কিভাবে এত ভয় পাচ্ছে,যা আমি মেয়ে হয়েও পাচ্ছি না।নিহান এখন দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছে।আয়ান ভাই এসে আমাদের সামনে সোফায় বসে।তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে যে,তিনি আমাকে দেখে একটুও চমকেনি।হয়ত আগে থেকেই জানতো আমি এখানে আছি।আমার একরাশ ভাবনায় ফোরন কাটিয়ে আয়ান ভাই বলে ওঠে,
“আমার জন্য একগ্লাস পানি নিয়ে আসোতো নিরা!”
নিরা ধরফর করে উঠে রান্নাঘরে যায়।আমি এক দৃষ্টিতে আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।আয়ান ভাইয়া এবার নিহানকে ডেকে নিজের পাশে বসায়।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আয়ান ভাইয়ের মনটা ভালো নেই।তার মনের ভিতর খুব খারাপ কিছু ঘটছে?কেন মনে হলো জানিনা?আয়ান ভাই নিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কেমন আছো?”
নিহান ভয় নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,
“আল-হাম-দু-ল্লিল্লা-হ্ ভাই-য়া।আ-পনি।”আয়ান হালকা হেসে বলে,
“তোমাদের বদদোয়ায় ভালোই আছি”এবার আয়ান ভাই আমার দিকে তাকায়।ততক্ষনে নিরা পানি নিয়ে এসেছে।আয়ান ভাই নিরার হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক চুমুকেই খেয়ে ফেলে।তারপর আবার তার দৃষ্টিটা আমার দিকে নেয়।আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কেমন আছিস রাশু?”
আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে মুখ করে নেই।মনে হাজারো অভিমান রয়েছে তার প্রতি।আগে থেকে একটু ছিল,এখন অনেক।আয়ান ভাই আমার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে খানিকটা ব্যাথিত হয়।আমি লক্ষ করি তার চোখের কোণে পানি।সে এবার হাতে থাকা পিস্তলটা সামনের টেবিলে রাখে।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আজ তোমাদের একটা গোপন কথা জানাতে এসেছি।বিশেষ করে রাশু তোকে।এই কথা শোনার পর হয়তো তোর মধ্যে আমার প্রতি কোনো অভিমান থাকবে না আবার থাকতেও পারে।”
নিহান অবাক হয়ে বলে,
“কি কথা ভাইয়া?যা আপনি আমাদের বলতে এসেছেন।”
আয়ান নিহানের ঘাড়ে হাতটা রাখে।তার দীর্ঘ একটা শ্বাস নেয়।নিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমরা যে আমাকে খুনি ভাবো তার কথা বলছি”
সবাই খানিকটা আগ্রহ নিয়ে সামনে তাকাই।বলতে গেলে আয়ান ভাইয়ার দিকে।তিনি আবার একটা দীর্ঘশ্বাস নেন।তারপর বলতে শুরু করেন তিনি।তার কথা গুলো হলো,
“তোমাদের চোখে আমি একজন খুনি,আবার রাশুর চোখে মায়া-মমতাহীন একজন জামোয়ার মানুষ।তোমরা সবাই আমার নামে এসব ভাবছো।কিন্তু একবারো কি জানার চেষ্টা করেছো লোকটা কেন এরকম?”
তার কথাটা আমার কাছে যুক্তিসম্মত মনে হলো।তাই বলি,
“তো এখন বলো!”
আয়ান ভাই তার চোখের পানি লুকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে।তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অঝোর ধারায়।আমি তার চোখে পানি দেখে খানিকটা অবাক হই।আয়ান ভাই একটা টান দিয়ে তার শরিরের শার্টটা খুলে ফেলে।তার শরিরটা দেখে সবাই চমকে উঠি।সিক্স প্যাক নয়।তার শরির দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে প্রতিদিন মারে।সব জায়গা ফেটে গিয়েছে।রক্ত জমাট বেঁধেছে।মাঝে মাঝে কিছু জায়গা পোড়া। আয়ান ভাই কান্নামৃশ্রিত গলায় বলে,
“এই শরিরের দাগ গুলো দেখ।জানো এগুলো কিসের দাগ?সব গুলো আমার বাবা-মায়ের মারের দাগ।আল্লাহর দুনিয়ায় এমন কোনো দিন নেই যে,আমি মার খাইনি।প্রত্যকটা দিন মার খেয়েছি।রাশু তুই এইটুকু মার খেয়ে বাসা থেকে চলে এসেছিস।আর আমি প্রতিদিন মার খেয়েও কুকুরের মতো সেই বাড়িতে পড়ে আছি।কই যাবো আমি?এই কুকুরটার তো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।”এই বলে কাঁদতে শুরু করে আয়ান ভাই।নিহান তাকে শান্তনা দিচ্ছে।তার কথাগুলো শুনে আমার খুব কষ্ট লাগে।আয়ান ভাই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
“যারা আজ আমার বাবা-মা সেজে আছেন তারা আমার বাবা-মা নয়।তারা আমার নিজের বাবা-মা না।নিজের বাবা-মা হলে হয়তো নিজের সন্তানকে দিয়ে মানুষ খুন করাতো না।আজ আমি আমার নিজের বাবা-মায়ের খোঁজ পেয়েছি।”
আমি অবাক হয়ে জানতে চাই,
“কোথায় তারা?”
আয়ান ভাইয়া তার চোখ দুটো উপরে তাকায়।আমার আর বুঝতে বাকি নেই যে তারা কোথায়?আয়ান ভাইয়ার কথা গুলো খুব খারাপ লাগছে।আমার জানতে ইচ্ছে হয় আয়ান ভাই কি আমার ব্যাগে এসব কাগজ দিয়েছিল?
আয়ান ভাই যেন আমার মনের কথা বুঝতে পারে।আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“রাশু তোর ব্যাগে ওই কাগজগুলো আমার নকল বাবা-মা দিয়েছে তোর ব্যাগে।আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করি,
“কিন্তু কেন?”
আয়ান ভাই ঝটফট উত্তর দেয় তোর সব সম্পত্তি নেয়ার জন্য।আমি ঘৃণায় মুখটা কুঁচকে ফেলি।আয়ান ভাই আবারও বলে আমি এই সব কাজ করেছি মারের ভয়ে।আমি যদি না করতাম তাহলে আমাকে আস্ত রাখতো না তারা।তাই সব করেছি।আমাকে মাফ করে দিস রাশু।
আয়ান ভাইয়ের কথা শুনে বুঝলাম তার কোনো দোষ নেই।সব দোষ সেই লোকগুলোর।তাই আমি আয়ান ভাইকে বলি,
“আমি তোমাকে মাফ করে দিছি”
আয়ান ভাই খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আয়ান ভাই যখন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল তখন নিহানের মুখটা কালো হয়ে যায়।আয়ান ভাইও সেটা লক্ষ করে।তিনি আবার পিস্তলটা হাতে নিয়ে বলেন,
“নিহান তোমাকে আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিতে চাই সারাজীবনের জন্য।”
নিহান অবাক হয়ে আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকায়।আয়ান ভাই পিস্তল হাতে নেয়।নিহান ভয়ে ভয়ে বলে,
“চেষ্টা করবো।”
আয়ান ভাই আমার হাতটা ধরে নিহানের হাতের উপর রাখে।তারপর বলে,
“আমি তোমাদের দুজনেরই মনের কথা বুঝি।তাই আজ এখনি তোমাদের বিয়ে দিতে চাই।কাজিও আছে আমার সাথে।তোমরা রেডি হয়ে আসো।আর রাজি না হলেতো জানো পিস্তলের কামাল।নিহান ভয়ে রেডি হতে যায় আর আমি খুশিতে।দেখতে দেখতে বিয়েটা হয়ে যায়।আর এখন আমি বাসরঘরে।
নিহান ভিতরে প্রবেশ করলে আমি তাকে সালাম করি।নিহান অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,
“আমি ভয়ে এই বিয়ে করে।কিন্তু তোমাকে বউ হিসেবে মানি না।”
আমি বিছানার নিচ থেকে আয়ান ভাইয়ার দেয়া পিস্তলটা বের করি।ওমা সাথে সাথে নিহান এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।তার কান্ড দেখে আমি শেষ।নিহান আমাকে ছাড়ছেই না।আমি নিহানকে উদ্দেশ্য করে বলি,
“একটা ছড়া বলি বর,”
নিহান বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ায়।আমি বলতে শুরু করি,
“আম পাতা জোড়া জোড়া,
বর আমার ভীতুর ঘোড়া,
এইটুকু বলার সাথে সাথে নিহান আমার ঠোট দুটো দখল করে নেয়।বাকিটা ইতিহাস।
সকাল বেলা উঠেই দেখি বাসায় আমার বাবা-মা।আমি জানি কখনো তাদের মাফ করতে পারবো না।কখনো না।তারা কখনো বাবা-মা হতে পারে না।আমি তাদের অপমান না করলেও আয়ান ভাইয়া করেছে।তারা বের হয়ে যায়।কিন্তু কারো চোখে পানি ছিল না।জানিনা কি কারন?
নিহান আমাকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়।তারপর বলে,
“আজ আমি একটা ….. নিতে চাই।”
তার কথাশুনে আমি লজ্জায় শেষ।নিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে।এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেন তার সমস্ত পৃথিবী জুড়েই আমি।
সমাপ্ত..
{আজকে বিয়ে।তাই শেষ করলাম।সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিজন ২ নিয়ে আসবো।সব কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে দিব।আয়ানের ব্যাপারটা বুঝতে হবে না।আর নিহানের……টাও।)আল্লাহ হাফেজ।