#যদি_জানতে
Part:12
Written by: Shawon
পরেরদিন ভোর বেলা,আহিনের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে ফ্রেশ হয়ে বাগানে ফাটছে।সকালের এই নীরব পরিবেশটা ওর খুবই ভালো লাগে,পিছন থেকে কেউ একজন তার কাঁধে হাত রাখলো,তাকিয়ে দেখে ফারজু।
-“আরে ফারজু,তুমি এত সকালে?”
-“সেই প্রশ্ন আমিও তোমাকে করতে পারি।এত সকালে তুমি এখানে কি করছো?”
-“এইতো তেমন কিছুনা হাঁটছিলাম।”
-“ভাবী,তুমি কিন্তু আমাদেরকে এখনো বলোনি,কাল কি হয়েছিল?তোমার ঐ অবস্থা কি করে হলো?”
-“আব,,এক্সিডেন্ট।একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম।”
ফারজু আহিনের কথা শুনে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললো….
-“আর কত ভাবী?আর কত মিথ্যে বলবে?আর কত মিথ্যে অভিনয় করবে?”
-“মানে!তুমি এসব কি বলছো?কিসের মিথ্যে কিসের অভিনয়?”
-“আমার কাছে আর লুকিয়ে লাভ নেই,আমি সবটা জানি।তোমার আর ভাইয়ার মাঝে কিছুই ঠিক নেই।আমার ঐদিনই সন্দেহ হয়েছিল যেদিন খাবার টেবিলে ভাইয়া ঐ কথা বলে উঠে গেছিলো।আমি তোমাকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে কিছুই বলোনি।কিন্তু কি জানো,সত্য চায়লেই চাপা রাখা যায় না।একদিন না একদিন তা ঠিকই সবার সামনে উঠে আসে।তুমি আর ভাইয়া যখন কালরাতে কথা কাটাকাটি করছিলে তখন আমি সবটা শুনে ফেলি।আসলে আমি তোমার জমা ফাস্ট এইট বক্স নিয়ে আসছিলাম কিন্তু যখন এসব কথা বলছিলে তখন আমি আড়াল থেকে শুনি।”
ফারজুর কথা শুনে আহিন থমকে যায়।সে চুপচাপ ভিতরে চলে যেতে নিলে ফারজু ওর সামনে গিয়ে বলে….
-“আর কত পালাবে?আমার থেকে আমাদের থেকে পালিয়ে গেলেও কি তুমি তোমার নিজের কাছে পালাতে পারবে।আমি বুঝতে পারছি না তুমি এটা কি করে সহ্য করছো,নিজের স্বামীকে অন্য একটা মানুষের সাথে?আর কেনই বা সহ্য করছো?”
-“কারণ তোমার ভাইয়া চায়।তোমার ভাইয়া ওকে আর ও তোমার ভাইয়াকে ভালোবাসে তাই!”
-“আর তুমি?তুমি ভালোবাসো না ভাইয়া কে?”
ফারজুর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলো না আহিন,চুপ হয়ে গেল শুধু চোখ থেকে দু ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পরলো।ফারজু চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো…..
-“আমি জানি তুমিও ভাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করেছো।আর ভালোবাসা জিনিসটা খুবই দামি একটা জিনিস যা সবাই সহজে পায় না।আর যারা পায় তারা মূল্য দিতে জানে না।দেখো না ভাইয়া সহজেই তোমার ভালোবাসা পেয়ে আছে কিন্তু কোনো মূল্য দিচ্ছে না।তুমি তোমার স্বামী তোমার ভালোবাসার মানুষ টাকে কেন এভাবে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছো।কেন তুমি কাইফাকে এভাবে দিনের পর দিন মেনে নিচ্ছো?কেন নিজের ভালোবাসার মানুষটার থেকে দূরে রাখছো না??”
-“কারণ ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!”
ফারজু একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকায় আহিন চিৎকার করে কথাটা বলে ফেলে।ফারজু অবাক হয়ে আহিনের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারজু এটা মোটেও জানতো না,সে আহিনের দিকে তাকিয়ে একটু নিচু সুরে বললো…
-“বেস্ট ফ্রেন্ড!!”
-“হুম বেস্ট ফ্রেন্ড,যদিও এখন আমাদের মাঝে অনেক বড় দেয়াল তৈরী হয়ে গেছে,(ওকে আগের সব কথা বললাম)তাও তাকে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মানি।ও শাহরিয়ারকে প্রচন্ডভাবে ভালেবাসে,আমি ওকে আর কষ্ট দিতে পারবো না।ওকে আমি কথা দিয়েছি ওদের দুজনকে আমি এক করে দিবোই,এটা আমার বন্ধুত্বের কসম!!!!”
-“বাহ ভাবী বাহ,নিজের কথা না ভেবে তুমি তোমার বন্ধুর কথা ভাবছো!!!একটা বার নিজের কথা ভাবো,নিজের মন,নিজের ভালোবাসার কথা ভাবো।”
-“ফারজু,সব সময় ভালোবাসার মানুষটাকে পেলেই ভালোবাসা পাওয়া হয়না,মাঝে মাঝে ত্যাগও দিতে হয়।ত্যাগই ভালেবাসা।”
-“সবসময় তুমিই কেন ত্যাগ করবে?তুমিই কেন পিছে সরে যাবে।আর ওদেরকে কেন স্বার্থপরের মতো বাঁচতে দিবে।আমার ভাইয়ার কথা ভেবেও ঘৃনা লাগছে,ও কি করে তোমার সাথে এই অন্যায় করতে পারে।বিয়ের আগে যা ছিল তা বিয়ের পরে কেন আনতে হলো।”
-“ফারজু এগুলো বাদ দাও প্লিজ,আর প্রমিস করো এগুলো তুমি আর কাউকে কোনোদিনও বলবে না।এমনকি আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও কাউকে কিছু বলবে না।”
-“ভাবী!!!”
-“হুম,আমাকে প্রমিস করো।”
ফারজু আহিন’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল,আহিনও কান্না করে দিলো।
-“ভাবী,তুমি সত্যি ই অনেক ভালো।”
-“এখন কান্না থামাও,যেকেউ আসলে সমস্যা হয়ে যাবে।ভাবো তুমি কিছু জানোয় না,সবকিছু স্বাভাবিক মতো করে নাও।আমি আসি ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে।”
ফারজু কে ছেড়ে নিজের চোখের জল মুছে ফারজুর টাও মুছে দিলো।তারপর একটু মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেল।আর এদিকে ফারজু মনে মনে ভাবছে…..
-“আমি তোমার সাথে এত বড় অন্যায় কখনো হতে দিবো না ভাবী।আমি তোমাদের দুজনকে এক করেই ছাড়বো,আমাকে যা করতে হয় আমি তাই করবো।প্রয়োজন হলে আমি কাইফকে সবার সামনে অপদস্থও করতে রাজি।ওরা তোমাকে যতটুকু কষ্ট দিয়েছে তাই অনেক,আজকের পর থেকে তোমার এই ননদ তোমার পাশে থাকবে।আমিও দেখতে চায় এই স্বামী স্ত্রী এর সম্পর্কে তৃতীয় জন কিভাবে প্রবেশ করে।”
সবাই ব্রেকফাস্ট করছে,শাহরিয়ারের বাবাও এখন একটু সুস্থ বলে ওনিও নিচে একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে।হঠাৎ করে ফারজু বলে…..
-“আমার একটা কথা ছিলো,কথা বললে ভুল হবে একটা গিফট আছে।”
ফারজুর কথা শুনে সবাই তারদিকে তাকায়, শাহরিয়ারের ভাই বলে….
-“তোর মতো কিপ্টা কাকে কোনদিন কি গিফট করেছিলি বলে তো আমাদের মনে নেই।”
-“আম্মু তুমি ওর মুখ বন্ধ করাবে নাকি আমি বন্ধ করে দিবো কাটা চামচ দিয়ে”
চোখগুলো বড় বড় করে বললো,শাহরিয়ারের মা তার ভাইয়ের দিকে রাগী চোখে তাকালে ও আর কোনো কথা বলেনি।কাইফা আর আহিন এসব দেখে মিটিমিটি করে হাসছে।ফারজু আবার বলতে শুরু করলো….
-“গিফটটা হলো ভাইয়া ভাবী’র জন্য,আমি তো বিয়েতে থাকতে পারলাম না।তাই কোনো মজাও করতে পারিনি।যায়হোক,শুনেছি বিয়ের পর নাকি তোমরা কোথাও ঘুতেও যাওনি তাই আমি তোমাদের জন্য হানিমুন প্যাকেজ ওকে করে রেখেছি।”
ফারজুর কথা শুনে আহিন বিষম খেয়ে উঠে,ফারজু পানি এগিয়ে দেয়।আহিন,কাইফা আর শাহরিয়ার তিনজনই অনেকটা শকড হয়ে আছে।কাইফা শাহরিয়ারের দিকে তাকালে সে ইশারা করে সে এই ব্যাপারে কিছুই জানে না,আহিনের দিকে তাকালেও বোঝা যাচ্ছে আহিনও কিছু জানে না।ফারজুর এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে তার বাবা বলে….
-“বাহ,ভালোই সিদ্ধান্ত নিলি,আমিও মাঝে ভেবেছিলাম ওদেরকে একটু বাহিরে ঘুরতে পাঠাবো কিন্তু পরে আর সময় হয়নি।”
শাহরিয়ার আর আহিন একসাথে বলে…..
-“কিন্তু!!”
-“আমি কোনো কিন্তু শুনছি না,আমার এই গিফট তোমাদের নিতেই হবে।এই যে নাও টিকেট কাল সন্ধ্যায় তোমাদের ফ্লাইট,ঢাকা থেকে একদম সুইজারল্যান্ড।”
ফারজু খুব ভালো করেই জানতো আহিন বাঁধা দিতে চায়বেই তাই সে বাঁধা দেওয়ার আগেই টিকিট গুলো শাহরিয়ারের হাতে ধরিয় দিয়ে বলে ফেলল।তার সাথে তার মা ও বললো…..
-“এই ব্যাপারে আমি ফারজুর সাথে একদম,আজকে রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে শুরু করো,নয়তো পরে প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যেতে পারো।”
আহিন আর শাহরিয়ার কি বলবে বোঝতে পারছে না,তাদের কি বাধ্য হয়েই যেতে হবে।কাইফা খাবারে হাত বোলাচ্ছে সেও কিছু বলতে পারছে না।ফারজু ঠিকই কাইফার বিষয়টা লক্ষ্য করেছে।খাবার শেষ করে যে যার মতো করে চলে গেল।কাইফা এক প্রকার দৌড়েই চলে গেল,শাহরিয়ার ও তার পিছু পিছু গেল।আহিন আর ফারজু শুধু নিচে রইলো।আহিন ফারজুর কাছে গিয়ে বললো।….
-“এটা তুমি কি করলে??সবটা জেনে সবটা বোঝেও কেন তুমি এমন করলে??”
-“আমি সবটা জানি বলেই এমন করেছি।শুধু একটু বিশ্বাস রাখো,দেখবে কোনো কিছুই খারাপ হবে না।”
ফারজু আহিনকে হাগ করে চলে গেল।
#চলবে!!!
বিঃদ্রঃ আজকে আমার একটু প্রবলেম থাকায়,গল্প লিখার সময় পায়নি।আজকে ভেবেছিলাম আর দিবো না কিন্তু পরে আপনাদের কথা ভেবে ছোট করে লিখে ফেললাম।