যদি_জানতে পর্ব ১১

#যদি_জানতে
Part:11
Written by: Shawon

আহিন’কে এভাবে কান্না করতে দেখে সাদাফের প্রচন্ড রাগ হলো।ঐ ছেলেগুলোর একটা বললো….
-“এত হিরো না সেজে মেয়েটা কে আমাদের কাছে দিয়ে,ভালো ভালোই ভালোই এখান থেকে চলে যা।নয়তো…”
-“নয়তো?নয়তো কি?”
-“তোকে এখানেই জ্যান্ত পুতে ফেলবো।”
সাদাফ আহিন’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে,পা দিয়ে মাটিতে গোল বানালো।গোলের মাঝখানে আহিন’কে দাঁড় করিয়ে বললো….
-“এই গোল থেকে যদি তোরা ওকে বের করতে পারিস তাহলে আমি তোদের কথা মতো সবকাজ করবো।আর যদি না পারিস তাহলে তোদের সবকটাকে আমি এখানেই পরকাল দেখিয়ে দিবো।”
সাদাফের কথা শুনে এক এক করে সাদাফদের কাছে যেতে লাগলো।আহিনের হাতে হাত ধরতে যাবে ঠিক তখনই লাথি দিয়ে সবগুলোর উপরে ফেলে।পর পর যারা আসলো সবকটার অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেল।সবগুলো নিচে লুটাপুটি খাচ্ছে,সাদাফ একটা কলারে টেনে তুললো।তারপর আহিনের পায়ের কাছে ফেলে দিয়ে বললো….
-“ওর পা ধরে মাফ চা!!!বল আর কখনো ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাবি না,ওর দিকে কেন অন্য কোনো মেয়ের দিকেই না।”
-“আমাকে মাফ করে দাও বোন,আমি আর কখনো কোনো মেয়ের দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাবো না।”
আহিন একটু দূরে সরে গেল,আর সাদাফকে ইশারা করলো ওদের ছেড়ে দিতে।সাদাফ ধমকের সুরে ওদের পালিয়ে যেতে বললো।আহিনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো….
-“ওরা তোমাকে কোথাও পেল?আর তোমাকে তো তোমার বাড়ির কেউ একজন নিতে আসছিল তাহলে…?”
-“কেউ আসেনি!!”
-“মানে!!কেউ আসেনি তাহলে তুমি একা কেন বের হয়েছিলে আমাকে তো একটা বার বলতে পারতে,আমি নিজে তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসতাম।”
-“আপনি কেন দিয়ে আসবেন?যার প্রতি নিজের স্বামীরই কোনো চিন্তা নেই সেখানে আপনি অফিসের বসের এত চিন্তা কিসের?”

আহিনের কথা শুনে সাদাফ এক পা পিছু সরে গেল।ও এগুলো কি শুনচ্ছে?তার অনুভুতি বিবাহিত!!কিন্তু একবারও তে বলেনি তার স্বামী আছে,সংসার আছে।সাদাফের মনের মাঝে সাজানো রঙ্গিন বাক্সটা ঢ়েন এক মুহুর্তে শেষ হয়ে গেল,যাকে সে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছে সে অন্য কারো স্ত্রী।আহিনের কথাগুলো বলে চলে যাচ্ছে,মিস্টার সাদাফ দৌড়ে ওর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে…
-“এগুলো কি বলছো তুমি?তুমি বিবাহিত?”
-“হুম,আমি বিবাহিত।শুধু মাত্র সবাইকে দেখানোর জন্য!!!ওনি আমাকে ব্যবহার করছেন,আমিও আমার বাবা মা আর সমাজের মানুষের দিকে তাকিয়ে ওনার সাথে একই ছাদে একই রুমে আছি।”
-“তুমি কি বলছো এগুলো?আমি তোমার কোনো কথায় বুঝতে পারছি না।”
-“ওনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন,আমাকে ওনার স্ত্রী এর অধিকার কখনো দিতে পারবেন না।শুধু মাত্র ওনার বাবা মা’র কথা শুনে আমাকে বিয়ে করেছেন।ছয় মাস পর আমরা দুজন দু প্রান্তে চলে যাবো।যায় হোক আপনার এসব জেনে কোনো লাভ,আপনি আজকে অনেক বড় উপকার করেছেন সেজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।এখন আমি আসি!!”
সাদাফের আরো অনেককিছু জানার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু এখন সেসময় না বুঝতে পেরে আর কোনো প্রশ্ন করলো না।আহিনের হাত ধরে বলে….
-“তুমি আবারো একা যাবার কথা বলছো?একটু আগের কথা মনে নেই।এখন না হয় আমি বাঁচিয়ে নিলাম কিন্তু সামনে?সামনে যদি আরো কতগুলো বখাটে ছেলে তোমাকে তাড়া করে,তখন তুমি কি করে নিজেকে বাঁচাবে?”
সাদাফের কথা শুনে আহিন চুপ হয়ে গেল,কারন সাদাফের কথা ঠিক আছে।এ শহরে বখাটে ছেলের তো অভাব নেই,কখন কোথায় আত পেতে বসে থাকে কেউ বলতে পারে না।আহিন চুপ হয়ে যাওয়ায় সাদাফ বলে….
-“আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি,তুমি আমার সাথে চলো।যদি আমাকে বিশ্বাস করো তাহলে আমার সাথে আসতে পারো!”
সাদাফের প্রতি এই কয়েকদিনে এতটুকু বিশ্বাস আহিনের হয়ে গেছে।আয়র যায় হোক এমন কোনো বাজে কাজ ওনি করবেন না।আহিন মাথা নেড়ে সায় দিলো তারপর সাদাফ ওর গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিলে আহিন উঠে বসে।সাদাফও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
আহিনের দৃষ্টি বাহিরে,চোখ থেকে পানি বেয়ে পরছে।কারণ আজকে যদি সাদাফ ঠিক সময়ে না আসতো তাহলে ঠিক কি হতো আহিনের তা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।সাদাফ তার মিস অনুভূতি’র চোখের পানি সহ্য করতে পারছিল না,আহিনের দিকে রুমাল এগিয়ে দিয়ে বললো….
-“রুমাল দিয়ে চোখটা মুছে নাও,আর একটু আগের সবকিছু ভুলে যাও।মনে করে ছোটবেলা’র একটা দূর স্বপ্ন।”
আহিন রুমাল টা নিয়ে চোখ মুছে নিল।সাদাফ আবার বললো…..
-“তাহলে তোমরা আর পাঁচ টা সংসারের মতো সংসার করছো না?কিছু মনে করো না,আমি তোমার বিষয়ে একটু বেশীই জানতে চাচ্ছি?”
-“নাহ,আমি কিছু মনে করছিনা।আমিই তো আপনাকে প্রথমে বললাম নয়তো জানতেন কি করে।ওনার আর আমার মাঝে কিছুই স্বাভাবিক নয়।আমরা সবার সামনে এমন ভাবে অভিনয় করি যেন আমাদের মাঝে সব ঠিক আছে।কিন্তু রুমে এসে কেউ কারো সাথে কথা বলা তো দূরে ঠিক মতে তাকায়ও না।”
আহিনের কথা গুলো শুনে সাদাফ ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি,আর যতটুকু ওর জানার ছিল ততটুকু জানা হয়ে গেছে।
শাহরিয়ার’দের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো।আহিন গাড়ি থেকে নেমে বললো….
-“আপনাকে আবারো একবার ধন্যবাদ।”
-“তুমি আমাকে এভাবে ধন্যবাদ দিতে লাগলে,ধন্যবাদ জিনিসটা তার মূল্য হারিয়ে ফেলবে।এখন বাসায় যাও,গিয়ে মাথায় একটু ড্রেসিং করে নিও আমার গাড়িতে ফাস্ট এইট ছিলে না তাই করতে পারি নি।”
-“না,আমি করে নিতে পারবো।আচ্ছা এখন যান তাহলে অনেক রাত হয়ে গেছে।”
মিস্টার সাদাফ মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।আহিনও বাড়ির কলিংবেলে চাপ দিলো।কিছুক্ষণ পর ফারজু এসে দরজা খুলে দিলো।আহিনের কপালে ক্ষত দেখে ফারজু ভয় পেয়ে যায়।মাথাী চুল যেমন এলো মেলো ক্ষত থেকেও রক্ত হালকা হলকা বের হচ্ছে।সে আহিন’কে জিজ্ঞেস করে….
-“কি হয়েছে ভাবী?তোমার এই অবস্থা কেন?কিভাবে হলো এই অবস্থা।”
ফারজুর চিৎকার শুনে সবাই মেইন ডোরের দিকে তাকায়।আর আহিনের এই অবস্থা দেখে সবাই চমকে যায়,শাহরিয়ার কফি মগ নিয়ে নিচে নামছিল আহিন’কে এভাবে দেখে সিঁড়িতেই থেমে গেল।কাইফা কিচেন থেকে তরকারির বাটি নিয়ে বের হচ্ছিল আহিনের অবস্থা দেখে হাত থেকে তরকারির বাটি পরে যায়।শাহরিয়ারের মা আর ফারজু বার বার জিজ্ঞেস করলেও আহিন কোনো উত্তর দিল না চুপচাপ উপরে উঠে গেল।সিঁড়িতে আহিন শুধু একবার শাহরিয়ারের দিকে তাকালো,শাহরিয়ার পিছু পিছু রুমে গেল।তারপর আহিন’কে জিজ্ঞেস করলো….
-“আহিন,কি হয়েছে তোমার? তোমার এই অবস্থা কি করে হলো?
আহিন কোনো উত্তর দিচ্ছে না।সে তার নিজের মতো করে আলমারি থেকে কাপড় বের করছে।শাহরিয়ার আবারো জিজ্ঞেস করলো কিন্তু কিছু বললো না,এবার শাহরিয়ার রেগে গিয়ে আহিনের দু বাহু চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বললো….
-“কখন থেকে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি কিন্তু তুমি কোনো উত্তর দিচ্ছো না।কি হয়েছে বলবে তো আমাকে???”
-“র‍্যাপ করেছে আমাকে।”
-“হুয়াট!!কি বলছো তুমি?তোমার মাথা ঠিক আছে।”
-“আমার মাথা এখন একদম ঠিক আছে,তখন ঠিক ছিলো না যখন আপনাকে আমাকে নিয়ে আসার কথা বলে ছিলাম।আমার মনেই ছিলো না আমার প্রতি তো আপনার কোনো দায়িত্ব ই নেই।আর দায়িত্ব থাকবেই কেন আমি তো আপনার কন্ট্রাক করা ছয় মাসের বউ।যে বউ শুধু পরিবারের সামনে নাটক করে বেড়াবে,যার কোনো নিরাপত্তা আপনাকে দিতে হবে না।”
আহিনের কথা শুনে মনে হলো,আজকে তো আহিন তাকে নিয়ে আসার কথা বলেছিলো।সে এতটা জ্ঞান হারা কি করে হলো বুঝতেই পারছে না।সে নিজের উপর নিজের রাগ সহ্য করতে না পেরে সোফায় লাথি মারে তারপর আহিন কে বলে….
-“আমার একদম মনে ছিলো না,সত্যি আমি ভুলে গিয়েছিলাম।আমার যদি মনে থাকতো তাহলে আমি সত্যি তোমাকে আনতে যেতাম।তাছাড়া আজকে আমারও কতগুলো কাজ পরে গেছিলো।কিন্তু তুমি এগুলো কি বলছো?র‍্যাপ হয়েছো তুমি?”
-“কেন হলে কি খুশি হতেন।তাহলে শোনে রাখুন পৃথিবীতে এখনো অনেক ভালে মানুষ বেঁচে আছে যারা আপনার মতো স্বার্থপর না,আল্লাহর রহমতে এবারের মতো বেঁচে গেছি।আজকে ঠিক সময় যদি…থাক আপনাকে এসব বলে কোনো লাভ হবে না।আপনি তো আপনার কাইফকে নিয়ে ভেবেই সময় পান না আমার কথা আর কি ভাববেন??”
-“দেখো এইখানে কাইফা’র নাম কোনো ভাবেই আসতে পারে না।”
-“হুম,আপনি আপনার কাইফা’র নামে কোনো কথা শুনতে পারনেন না,আর আজকে যাি আমার কোনো একটা কিছু হয়ে যেত তখন আমি সমাজে কি করে মুখ দেখাতাম বলতে পারেন?তখন আপনিও আমার দিকে তাকাতে আপনি ঘৃনা করতেন!!!আপনার মতো একটা স্বার্থপর আর দুটো দেখিনি,না ভুল।আপনি আর কাইফা দুজনই এক রকম।”
-“দেখো আমি আবারো বলছি ওকে নিয়ে কিছু বলবে না।”
-“হাজার বার বলবো আমি,আপনি আর কাইফা দুজনই স্বার্থপর,স্বার্থপর।”
আহিন কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।শাহরিয়ার রুম থেকে বের হয়ে গেল।আহিন ওয়াশরুমে শাওয়ার ছেড়ে কান্না করতে লাগলো।শাহরিয়ার ছাদে এসে লাগে দেয়ালে ঘুষি মারে,সে এতটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারে?আজকে আহিন নিজে বলেছিল অথচ সে তা ভুলে গেল।আজকে যদি আহিনের একটা কিছু হয়ে যেত তাহলে সে নিজেকে কি করে ক্ষনা করতো?কি জবাব দিতো আহিনের বাবা মা’র কাছে?এসব ভাবতেই রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
শাহরিয়ার ছাদে দাঁড়িয়ে আছে পিছন থেকে কেউ একজন তার কাঁধে হাত রাখলে পিছনে ফিরে দেখে কাইফা।কাইফা জিজ্ঞেস করে…..
-“আহিনের কি হয়েছে?”
-“আজকে ওর অফিসের একটা মিটিং আর পার্টি ছিলো,সেখান থেকে আমার নিয়ে আসার কথা ছিলো কিন্তু কাজের চাপের জন্য আমি ভুলে যায়।আর সে একা আসছিল তখন নাকি কতগুলো ছেলে ওর পিছু করে।”
-“ওর কোনো ক্ষতি করেনি তো?”
কাইফা নিজের অজান্তেই ভয় পেয়ে যায় আহিনের জন্য আর শাহরিয়ার কে এই প্রশ্ন করে।শাহরিয়ার বলে….
-“নাহ,কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।মনে হয় কেউ তাকে বাচিয়ে নেয়।”
-“তোমার এই কাজ করা ঠিক হয়নি,ও যখন বলেছিল তখন তোমার ওকে নিয়ে আসা উচিত ছিলো।”
-“আমি বলছি তো,আমার মনে ছিলো না।আমার যদি মনে থাকতো আমি ঠিকই নিয়ে আসতাম।”
-“আর আজকে যদি ওর কিছু হয়ে যেতো,আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করতে পারতাম না।”
কাইফা নিজের অজান্তেই কথাটা বলে ফেলল।শাহরিয়ার এই কথার মানে বুঝতে না পারলে তার দিকে তাকালে সে সেখান থেকে নিচে নেমে আসে।

#চলবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here