হৃদয়ের অন্তরালে তুমি পর্ব ১

রুমে ঢুকতেই মাহির দেখতে পেলো তার স্ত্রী অন্য একজন পুরুষের সাথে আপত্তি কর অবস্থায় রয়েছে । মাহিরের মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরলো । একি দেখছে সে ? নিমিশের মধ্যেই মাহিরের সম্পূর্ন পৃথিবী বদলে গেলো । কেনো জানি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারচ্ছে না যে সে যা দেখচ্ছে তা সত্যি । মহূয়া হলো তার স্ত্রী । দৃর্ঘ্য পাঁচ বছর রিলেশন করে মাহিরের সাথে বিয়ে হয় তার । যাই হোক মাহিরের উপস্থিতি মহূয়া বা ওই অন্য লোকটা কেউই বুঝতে পারলো না । আসলে বুঝে ওঠার জন্য একটা পর্যায় থাকা প্রয়োজন হয় । যা এই দুজনের মধ্যে ছিলো না । মাহিরের এই দৃশ্য দেখার পরে কেনো জানি ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো তার । মাহির দরজার এপার থেকে বাকরুদ্ধ হয়ে দারিয়ে থাকে । চোখ দিয়ে ঝরে পরচ্ছে কষ্টের নোনা জল । এক মুহূর্তে মাহিরের সমস্থ আশা , ভরসা , বিশ্বাস ভেঙে দিলো মহূয়া । মাহির পিছনের অতিতের কিছু কথা মনে করতেই শুনতে পেলো তার স্ত্রীর কথা । মহূয়া ওই লোকটিকে বললো

— উফফফফ তুমি আমার কথা কবে শুনবে উজ্জল ? এই লুকিয়ে লুকিয়ে আর পারচ্ছি না আমি

— কি করবো বলো সোনা ?

— ওই মাহিরকে অফিস থেকে তারিয়ে দাও প্লিজ । আর চলো আমরা দুজন এক হয়ে যাই ।

— অফিস থেকে না হয় তারিয়ে দিবো কিন্তু তোমার জিবন থেকে কি করে তারাবো ?

— এমনি তে যদি আমাকে মুক্তি দেয় তা হলে তো ভালো আর যদি না দেয় তবে ওকে পৃথিবী থেকে মুক্তি দিয়ে দিবো

— হাহাহাহাহাহা ওকে বেবি আমি দেখছি কি করা যায় । এখন মজা নিতে দাও প্লিজ । ওই সব নিয়ে পরে ভাববো !!!

— হুম সোনা নাও যত ইচ্ছে মজা নাও…………………….

** মাহিরের কানে কথা গুলো পৌঁচ্ছানোর সঙ্গে সঙ্গে মাহিরের বুকের ভিতর কেমন যেনো দুমরে উঠলো । যে মহূয়া মাহিরের জন্য পাগল ছিলো । মাহিরের কষ্ট হলে যে মহূয়া সব থেকে বেশি কষ্ট নিজে পেতো । আজ সেই মহূয়া মাহিরের মৃত্যু চায় ? সেই মহূয়া পরক্রিয়া করে ? আল্লাহ আজ কোনো সত্যির মুখোমুখি আমি ? মাহিরের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় । এতো বড় প্রতারনা তার সাথে ? এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা হলো ? মাহির ফ্লোর থেকে উঠে দারিয়ে চোখের পানি মুছে রুমের ভিতরে ঢুকলো । মাহির বললো

— বাহ বাহ বাহ মহূয়া বাহ অসাধারন

মাহিরের গলার শব্দ শুনে মহূয়ার হুস ফিরলো । মহূয়া ও উজ্জল দুজনের ভিষন অবাক হয়ে গেলো মাহিরকে দেখে । কারন এই সময় মাহিরের অফিসে থাকার কথা । কিন্তু মাহির এই সময় কি করে এখানে চলে এলো ? মহূয়া ভয়ে আর আতংঙ্কিত হয়ে মাহিরকে বললো

— তততুমি এখানে এখন………. ( তুতলে গিয়ে )

— ঠাসসসসসসসস , ঠাসসসসসসসসস চুপ কোনো কথা না ( মাহির )

— তোর সাহস হয় কি করে মহূয়ার গালে থাপ্পর মারার ? ( শার্টের কলার ধরে উজ্জল )

— তাই তো ? আগে তোর ব্যবস্থা করি তারপর ওর

মাহির নিজের কথা শেষ করতেই উজ্জল কে এক ধাঁক্কা দিলো । উজ্জল মুখ থুবরে পরে গেলো ফ্লোরে । মাহির ইচ্ছে মতো উজ্জল কে পেটাতে থাকলো । মহূয়া চুপ হয়ে দারিয়ে রইলো । এক পর্যায়ে মহূয়া চিৎকার করে বলে উঠলো

— স্টপ মাহির স্টপ । ওকে কেনো মারছিস তুই ? তোর কোনো মুরদ আছে আমার শখ , ইচ্ছে গুলো পূরন করার ? আমার সব শখ , সব ইচ্ছে উজ্জল পূরন করেছে । ওকে ধন্যবাদ না দিয়ে তুই ওকেই আঘাত করচ্ছিস ?

* মহূয়ার কথা গুলো শুনে মাহির আবারও নিঃস্তব্দ হয়ে যায় । মাহির উজ্জল কে ছেরে মহূয়ার কাছে চলে যায় । মহূয়ার কাছে যেতেই মাহির মহূয়ার চুলের মুঠি ধরে ফেলে আর বলতে শুরু করে

— কি বললি তুই উজ্জল তোর সব ইচ্ছে পূরন করে ? আমি করি না ? কি অপূর্ন রেখেছি আমি ? যথেষ্ঠ চেষ্টা করি তোর সব ইচ্ছে পূরন করার । নিজের জিবনকে জিবন মনে করি নাই । সব সময় তোর খুশিটাই আমার কাছে জরুরি ছিলো । ভাবতেই অবাক লাগে তুই তোর ইচ্ছে পূরন করতে অন্যের বিছানায় যাবি । ছি কেনো জানি আজ নিজের উপর লজ্জা করচ্ছে যে তোর মতো কাউকে আমি ভালোবেসেছি । ছি

— আমার সত্যিটা তো জেনেই গেছিস তুই এখন এক কাজ কর আমাকে মুক্তি দে তুই । তোর সাথে আমি আর পারচ্ছি না । প্লিজ আমাকে রেহাই দে

* মাহির কোনো ভাবেই চায় না মহূয়াকে হারাতে । কারন মাহিরের সাত মাসের একটা বাচ্চা আছে মালিহা । যদি মহূয়া চলে যায় তবে মালিহা একা হয়ে যাবে । আর একজন বাচ্চা তার মা ছাড়া কোনো মতেই থাকতে পারে না । মাহির এবার একটু নরম গলায় বললো

— চলে যাবি তুই ? মুক্তি চাস ? আচ্ছা দেখ মালিহার দিকে দেখ । ওকে ছেড়ে যেতে পারবি তুই ? তোর কষ্ট হবে না ?

— যেখানে আমার সুখ নাই সেখানে সন্তান দিয়ে কি করবো আমি ? আর এই সন্তান আমার না ? তোর সন্তান ।

— হ্যা সত্যি বলেছিস সন্তান তো আমার তাই ওর দায়িত্বটাও আমার । মা জাতি না কি মহান জাতি । সত্যি বলতে সব মা মা না । ঠিক আছে চলে যখন যাবি তো যা আর আমি আটকাবো না । কিন্তু একটা কথা আর কখনও ফিরিস না । কারন ফেরার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে

— আর ফিরতেও চাই না আমি

— মহূয়া আচ্ছা আমি এইবারের মতো তোকে মাফ করে দিলাম । তবুও প্লিজ আমায় ছেড়ে যাস না । এই বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত্য পক্ষে থাক প্লিজ

— চলো উজ্জল দেরি হয়ে যাচ্ছে

✒ উজ্জলের হাত ধরে মহূয়া বেরিয়ে গেলো মাহিরের বাসা থেকে । মাহির নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো সোফায় । মাহির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মহূয়ার চলে যাওয়া দিকে । একটা মানুষ এতোটা বদলে যায় কি করে ? একটিবার ফিরেও তাকানোর প্রয়োজন মনে করলো না মহূয়া ? হায়রে আমি না হয় ওর ইচ্ছে পূরন করতে পারিনি , কোনো চাহিদাই হয়তো পূরন করা হয়নি আমার তবে তার জন্য অপরাধী আমি । আমার মেয়েটা তো কোনো দোষ করে নাই !!! মেয়েটার জন্য কী ওর একটুও দয়া নেই ? আমি হয়তো নিজের জিবন নতুন করে শুরু করতে পারবো । মহূয়া ও নিজের জিবন সাজিয়ে নিবে কিন্তু । কিন্তু আমার মেয়ে কি করবে ? অনাথ বাচ্চার মতো পথে পথে ঘুড়ে বেরাবে ? আমিও যদি মালিহাকে ছেড়ে চলে যাই তবে ও কোথায় যাবে ? ওর বয়স মাত্র সাত মাস

** মাহির মালিহা মানে ওর মেয়ের কথা চিন্তা করছিলো । মাহির ভাবছিলো কি করবে সে ? মালিহাকে নিয়ে কোথায় যাবে ? মাহির যখন এসব ভাবছিলো ঠিক ওই মুহূর্তে মাহিরের কানে ভেসে এলো কাঁন্নার আওয়াজ । হুম মালিহা ( মাহিরের মেয়ে ) জেগে গেছে । মাহির সোফা থেকে উঠে মালিহার কাছে চলে গেলো । মালিহার নিঃপাপ মুখের দিকে তাকিয়ে মাহির নিজেকে কন্ট্রল করতে পারলো না । মালিহাকে বুকে জরিয়ে মাহির কাঁন্না করছে । সত্যি বলতে মাহিরের কষ্টের থেকে কয়েক গুন বেশি কষ্ট তার মেয়ে মালিহার । কারন এতো ছোট একটা বাচ্চার কাছে সব থেকে জরুরি হলো তার মা । মা এর আদর , সেহ্ন , ভালোবাসা । কিন্তু আজ মালিহা তার সেই মা কে চিরতরে হারিয়েছে । কিছুক্ষন পরে মাহির মালিহার দিকে তাকিয়ে বললো

— ভাবিস না মা তোর বাবা আছে এখনও বেঁচে । কখন তোকে তোর মা এর অপূর্নতা বুঝতে দিবো না আমি । শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত আগলে রাখবো তোকে । একজন মা তার সন্তানের বাবার অপূর্নতা পূরন করতে পারে তবে বাবা কখনও মা এর মতো সেহ্ন , আদর করতে পারে না । কিন্তু এই বার আমি এই কথাটা মিথ্যে প্রমান করবো । আমি তোকে মানুষ করবো । দেখে নিস তুই

✒ মাহির মালিহাকে বুকে জরিয়ে ধরে রাতটা পার করলো কোনো মতে । ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মাহির বিছানা থেকে উঠে পরলো । আজ আর ঘুম থেকে উঠে মহূয়ার মুখ দেখতে পেলো না মাহির । ঐ দিকে মালিহা কাঁন্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে । মাহির বিছানায় ঢেলান দিয়ে ভাবচ্ছে কি করবে এখন ? মহূয়ার সাথে সাথে মাহিরের জিবন থেকে হাসিটাও চলে গেছে । চাকরিও আর করবে না মাহির । কারন টা তো আপনাদের জানা । মাহিরের বাবা মা গ্রামে থাকে । মা বাবার অমতে মহূয়াকে বিয়ে করে ছিলো সে । চোখ বুঝে বিশ্বাস করতো মহূয়াকে কিন্তু মহূয়া সেই বিশ্বাসের সঠিক মূল্য দিলো না । যাই হোক খুব ভালোই চলছিলো মাহিরের জিবন । ভালোবাসায় পূর্ন ছিলো মাহিরের সংসার । কিন্তু মালিহার জন্মের পর থেকে মহূয়া বদলে যায় । শুরু হয় মহূয়ার অবহেলা । প্রথম প্রথম মাহির মুখ বুঝে সহ্য করতো সব । ভাবতো হয়তো মহূয়া একটা সময় বুঝবে । কিন্তু দিনের পর দিন এই অবহেলা কমার পরিবর্তে বাড়তে থাকে । একটা পর্যায় মাহিরের সন্দেহ হতে শুরু হয় । আর সেই সন্দেহ আজ সত্যি । মহূয়া মাহিরকে নয় উজ্জলকে চাইতো । যাই হোক পুরনো কথা বাদ । মাহির ভাবছে এই শহরে আর থাকবে না সে । চলে যাবে তার মা বাবার কাছে । নিজের জিবনের কথা না ভাবলেও মালিহার কথাটা তো তাকে ভাবতে হবে ।।

✒ মাহির চোখের পানি মুছে নিজের জামা – কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে । হঠাৎ মাহিরের চোখে পরলো টেবিলের উপর রাখা একটা কাগজের দিকে । মাহির কাগজটা হাতে তুলতেই ভিষন অবাক হয়ে গেলো । আসলে কাগজটা ছিলো……………………….

# চলবে …………………..

# হৃদয়ের _ অন্তরালে _ তুমি ♥♥

# সূচনা পর্ব

# লেখক : আয়ান আহম্মেদ শুভ

( সূচনা পর্ব দেখে ভিষন ছোট করে দিলাম । পরবর্তী পর্ব ইনশাল্লাহ বড় করে লিখবো । বেশি বেশি রিসপন্স করে পাশে থাকুন । আপনাদের লাইক , কমেন্টের উপর ভিক্তি করে ২য় পর্ব লেখা হবে )

# Happy Reding ♥♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here