# হৃদয়ের _ অন্তরালে _ তুমি ♥♥
# পর্ব : ০৪
# লেখক : আয়ান আহম্মেদ শুভ
** মাহির দেখলো তার পাশে শুয়ে আছে মালিহা । আর মালিহার পাশে শুয়ে আছে ইতি । মাহির ওই দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না । মাহির দুম করে বিছানা থেকে উঠে দারিয়ে পরলো । মাহির মনে মনে বললো
— আল্লাহ আমি কি স্বপ্ন দেখছি ? না কি সত্যি ? ইতি কি সত্যি সত্যি আমার পাশে শুয়ে আছে ? উফফফ হাতে চিমটি কেটে দেখি ইতি এখনও বিছানায় তার মানে সব সত্যি 😱 ।। এই ইতি আমাকে নিশ্চই কেস খাওয়াবে
* মাহির কথা শেষ করে তারাতারি ইতির কাছে এসে ইতিকে ডাকতে লাগলো ।
— ইতি ওই ইতি । ওরে আমার বজ্জাত ইতি উঠ ভাই প্লিজ উঠ কেউ দেখে ফেললে আমার মান সম্মান যেটুকু বেঁচে আছে তাও যাবে । ওই ( চিৎকার করে )
— কোন গাঁধায়রে এমন ভাবে চিৎকার করচ্ছে ? ( ঘুম ঘুম চোখে )
— কিহহহহ আমি গাঁধা 😠 ।। ওই ফাজিল মাইয়া উঠ বলছি 😬
— ওই কি হইছে তোর ? ওরকম ভাবে চিৎকার করছিস কেনো ? ( রাগি লুক নিয়ে )
— হাহাহাহা আমার কি হবে ? কিচ্ছু না তবে মিস এই রুমটা কার ?
— তোর
— শুয়ে আছিস কার বিছানায় ?
— অবশ্যই তোর
— ওই ফাজিল সবই যখন আমার তখন তুই উটকো ঝাঁমেলা এখানে কোনো ঝাঁমেলা পাকাতে এসেছিস
— ওহহহ তাই না , ঝাঁমেলা আমি পাকাচ্ছি না তুই পাকাচ্ছিস হ্যা ?
— আমি কিভাবে ঝাঁমেলা তৈরি করলাম ?
— এই যে আমার কাঁচা ঘুম ভেঙে দিলি । এটাকি কোনো ঝাঁমেলার থেকে কম
— শাট আপ । দেখ ইতি এরকম হুঁট হাঁট করে আমার রুমে আসবি না তুই । আশে পাশের লোকজন বাজে মন্তব্য করবে
— লোকে কি বললো তা শুনে আমাদের কি লাভ ?
— উফফফ তোর লাভ না থাকতে পারে তবে আমার আছে । কারন আমি এই সমাজে বাস করি বুঝলি
— হইছে হইছে আর জ্ঞান দিতে হবে না । এমনিতেই আমার কোনো ইচ্ছে নাই তোর রুমে আসার । কিন্তু মালিহার কথা ভেবে আসি বুঝলি
— ভাই বুঝলাম তো কিন্তু তাই বলে এতো সকালে ?
— হুম তুই তো চাকরি খুঁজতে যাবি তাই না । সেই জন্য তোকে তারাতারি ঘুম থেকে উঠতে হবে ? সেই সব ভেবেই এসেছিলাম আর কি । কিন্তু ওই যে আমার ঘুম বেশি সেই জন্য একটু চোখ লেগে গেছিলো
— ওকে তুই এখন মালিহাকে নিয়ে মা এর রুমে যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
— ওকে
* ইতি মালিহাকে কোলে নিয়ে মাহিরের রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায় মাহিরের মা এর রুমে । মাহির চলে যায় ফ্রেশ হতে
✒ ঐ দিকে মহূয়া উজ্জলের খোঁজ করতে থাকে কিন্তু কোনো খোঁজ পেলো না । যাই হোক মহূয়া নিজের মতো করে রাতটা পার করলো । সকাল বেলে মহূয়া উজ্জলের খবর পেলো । উজ্জল কাল সারা রাত ছিলো পতিতালয় । যাই হোক সকালে উজ্জল বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মহূয়া উজ্জলকে জ্বিগাসা করলো
— কাল রাতে কোথায় ছিলে তুমি ?
— ছিলাম একটা জরুরি কাজে , কেনো ? কি হয়েছে ?
— তো কোথায় ছিলো তোমার জরুরি কাজ ?
— অফিসে
— নিশ্চই অফিসটা পতিতালয়
— ওয়াট ???
— চমকে উঠলে কেনো ? আমি কি মিথ্যে বললাম ?
–………………………….. ( নিশ্চুপ )
— উজ্জল কথা বলো ? আমি তোমার ভরসায় মাহির কে ছেড়েছি । ছেড়েছি নিজের পেটের মেয়েকে । আর সেই তুমিই আমাকে ঠকাচ্ছো
— মানুষকে কি করে ঠকাতে হয় তা তো তোমার কাছ থেকে শিক্ষেছি আমি
— ওহহহ তাই না । আচ্ছা এসব বাদ দেও কেনো তোমার ওই নোংরা জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন পরলো ?
— কেনো তোমার মাহিরকে ছেড়ে আমার কাছে আসার প্রয়োজন পরলো ?
— কথা ঘুরিয়ে যাচ্ছো তুমি
— মোটেও না । আমি সত্যিটা জানাচ্ছি । মাহিরকে ছেড়েছো বিলাসিতার জন্য । আর আমি তোমাকে ছেড়েছি যৌনতার চাহিদা পূরনের জন্য
— উজ্জল এসব কি বলছো তুমি ?
— যা সত্যি তাই বলছি । তোমার প্রয়োজন পরেছিলো অনেক লাক্সেরির আর আমার প্রয়োজন পরেছিলো তোমার দেহের । ওগো সোনা তোমার দেহের প্রতি আমার ভালোবাসা । যেমনটা আমার টাকার প্রতি তোমার দূর্বলতা
* উজ্জলের কথা শুনে মহূয়া আকাশ থেকে পরলো মনে হয় । মহূয়া হতবাক হয়ে যায় উজ্জলের কথা শুনে । মহূয়া নিশ্চুপ হয়ে ভাবচ্ছে এ কোন উজ্জল ? যে উজ্জল কথা দিয়েছিলো সব সময় পাশে থাকবে !! নাকি অন্য কেউ ? যাই হোক মহূয়ার নিরবতা দেখে উজ্জল ভিষন বিরক্ত হয়ে বললো
— এই সরো তো এখান থেকে আমি এখন ঘুমাবো । কাল সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারি নাই
* মহূয়াকে ধাঁক্কা দিয়ে সাইডে ফেলে উজ্জল ঢলতে ঢলতে নিজের রুমে চলে গেলো । মহূয়া বোকার মতো বসে বসে কাঁন্না করতে থাকলো । এই ভেবে যে সে কি কোনো ভূল করে ফেললো মাহির কে ছেড়ে ?
✒ মাহির ফ্রেশ হয়ে এসে নিজের জামা – কাপড় পরে একদম তৈরি হয়ে নিলো । ইতি এসে মাহিরকে বললো
— সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিস তো ?
— হুম রে কেনো ?
— না যদি কোনো কিছু ভূলে যাস তাই বললাম
— হাহাহাহাহা আমি নিজের কথা কখনও ভূলি না
— হুম কয়েক বছরে অনেকটা বদলে গেছিস তুই
— তাই না কি হুমমম
— হ্যা রে আগের মতো আর নেই তুই
— হুম সময়ের সাথে সাথে সবাইকেই বদলাতে হয় কিন্তু তুই এখনও সেই আগের মতনই আছিস
— হ্যা রে ঠিক সেই আগের ইতি যে তোকে নিজের চেয়েও বেশি ভালো……..
* ইতির সম্পূর্ন কথা বলার আগেই মালিহা কাঁন্না করা শুরু করে দেয় । মাহির তারাতারি মালিহাকে কোলে তুলে নিলো । মালিহা মাহিরের কোলে আসতেই একদম চুপ হয়ে গেলো । বাবা বলে কথা চুপ তো হতেই হয় । যাই হোক মাহির মালিহাকে কোলে নিয়ে ইতিকে বললো
— দেখছিস আমার মেয়ে আমার কোলে আসতেই কেমন চুপ হয়ে গেলো
— হুম তা তো দেখছিই একদম তোর মতন হয়েছে । কেউ না থাকলে আমার কোলে একদম চুপ হয়ে থাকে আর তোকে দেখলেই তোর কোলে যাওয়ার জন্য পাগল পায়
— হুম বাবা বলে কথা
— আমিও তো ওর মা
— মানে ???
— মানে মা এর মতনই তো
— হুম , আচ্ছা নে মালিহাকে আমি বের হবো
— হুম দে
** মাহির মালিহাকে ইতির কোলে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । মাহিরের মনের মধ্যে একটাই চিন্তা মালিহাকে নিয়ে । ইতি কেমন করে মালিহাকে দেখা শোনা করবে ? যদি আমার মালিহা আমাকে না পেয়ে কাঁন্না করে ? তবে ইতি তো নারী । মানে মা এর জাত । আমার থেকে অনেক বেশি ভালো রাখতে পারবে মালিহাকে । আমার মনে হয় । যাই হোক আমি বরং শহরের দিকে গিয়ে দেখি কোনো চাকরির ব্যবস্থা করা যায় কি না
✒ মাহির শহরে গিয়ে পৌঁচ্ছে অনেক জায়গায় ট্রেই করে একটা চাকরি জন্য । কিন্তু বার বারই ব্যর্থ হয় মাহির । কোনো ভাবেই একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলো না সে । এই দিকে চাকরি না পেয়ে নিজের ধৈর্য্য হারোনার পথে অন্য দিকে মালিহার জন্য বিভিন্ন চিন্তা সব মিলিয়ে মাহিরের অবস্থা ভিষন কঠিন । যাই হোক বিকেলের হবার আর আল্প সময় বাকি আছে । মাহির একটা অফিসের সামনে গেলো । অফিসের সামনে যেতেই মাহির দেখতে পেলো । কর্মী নিয়োগ চলছে । মাহির আর বিলম্ব না করে চলে গেলো অফিসের ভিতরে । ঘন্টা খানের পর মাহির অফিস থেকে বেরিয়ে এলো একটা হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে । মাহিরের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে মাহির চাকরিটা পেয়েছে । মাহির অফিস থেকে বেরিয়ে কিছু মিষ্টি কিনে বাসার দিকে রওনা দিলো । মাহিরের একটা চিন্তার অবসন হলো কিন্তু মালিহার চিন্তা রয়েই গেলো ।
✒ বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মাহির মালিহাকে খুঁজতে লাগলো । মাহির নিজের রুমে গিয়ে দেখলো ইতি পরম যত্ন সহ কারে মালিহার সাথে খেলা ধুলা করচ্ছে । মাহির দরজার পাশে দারিয়ে দেখচ্ছিলো তার মেয়েকে । আজ মালিহাকে দেখে মোটেও বোঝা যাচ্ছে না যে মালিহার মা নেই । মনে হচ্ছে মালিহা এখন তার মা এর কাছেই আছে । আচমকা ইতি পিছন ফিরেই দেখতে পেলো মাহির কে । মাহিরকে দারিয়ে থাকতে দেখে ইতি মাহিরকে বললো
— কিরে কখন এলি তুই ?
— এই তো কিছুক্ষন হলো
— ওহহহ , আমাকে ডাকিস নাই কেনো ? এই ভাবে সং এর মতো দারিয়ে আছিস
— ওই আমাকে দেখলেই কি তোর ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে ?
— হুম আমার তো আর কাজ নাই কোনো
— হুম আচ্ছা তুই এখন বাড়ি যা । এমনিতেই সন্ধ্যে হয়ে গেছে
— আরও কিছুক্ষন থাকি ??
— না আর দরকার নাই । আমি আছি তো মালিহার কাছে
— হুম
* ইতি মুখ মলিন করে মাহিরের রুম থেকে বের হবে ঠিক ওই মূহুর্তে মাহির……………………….
# চলবে……………………