#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৪১
সময়ের স্রোতের সাথে সাথে সবাই নিজেকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বদলে নিতে জানে।সুমু আর আয়াজে ডির্ভোসটা শেষ পর্যন্ত সুন্দর ভাবে কমপ্লিট হয়ে যায়।
সুমুর করা অন্যায়ের জন্য দুটো মেয়ের খুশি ঝরা পাতার মতো ঝরে যায়।তবে অর্ণা নিজের খুশি গুলো ঠিকি কুড়িয়ে নিজের কাছে আনতে পেরেছে।
তবে রাইসার জন্য খুশি গুলো যোগাড় করা কষ্টের। কারণ একটা মেয়ের চরিত্রের উপর যদি একবার কেউ কালি লেপন করে তাহলে সেই কালির দাগ মুছতে মুছতে মেয়েটার জীবনটা শেষ হয়ে যায়।
রাইসা সুমুর দেওয়া মিথ্যা কলঙ্কের দাগ থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টায় আছে।
সবাই আয়াশ আর অর্ণাকে একসাথে সুখে দেখে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে সুমুর সব দেওয়া তথ্য গুলো হয়তো মিথ্যা ছিলো।এখন সেসব নিয়ে রাইসা আর চিন্তা করে না।সুমুর ভাইয়ের সাথে বিয়ে না হবার জন্য রাইসা আর আফসোস করে না।সে এখন চিন্তা করে আল্লাহ যা করেছে ভালোর জন্য করেছে।যদি সুমুর ভাই বিয়ের পর তাকে ধোঁকা দিতো তখন সে কি করতো?
বিয়ের আগেই সবটা জানাজানি হয়ে ভালোই হয়েছে।এখন যতোটা কষ্ট পেয়েছে বিয়ে হলে রাইসার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতে পারতো।তাই সে সব বিয়ের কথা চিন্তা করে আর আফসোস করে না রাইসা।
সে নিজেকে নিজের উপযোগী করতে ব্যস্ত।
এখন সে পর্দার সাথে জীবিকা নির্বাহ করতে চাইছে।পর্দার সাথে সে চাকুরী করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।অন্যের ভরসায় জীবটা কাটাতে চাইছে না।
করণ এসব কিছু জানার পর ও ছেলেদের মনে একটা কিন্তু থেকেই যায়।তাই রাইসা আর চাইছে না সে সব কিন্তু মাইন্ডে ছেলেদের জীবনসাথী করতে।
নিজের পরিবারের জন্য সুখের খোঁজে রাইসা বেড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে আয়াজ আর আজকাল সুমুর অপরাধের জন্য নিজেকে অপরাধী ভাবে না।কারণ সুমু যদি সত্য তাকে এতোটা ভালোবাসতো তাহলে কখনো রাইসার জীবন নষ্ট করতে যেতো না।আর যেই বাড়ির বউ হতে চাইছিল সে।সেই বাড়ির বড় ছেলের প্রতি এতোটা কঠোর হতে পারতো না।সে আয়াজ কে একটা ইস্যু বানিয়ে নিজের ঘৃণ্য মানুষিকতার পরিচয় দিয়েছে। নিজে একটা মেয়ে হয়ে দুইটা মেয়ের সাথে অন্যায় করার আগে একবার তাদের কথা চিন্তা করে নাই।আয়াজ এখন সুমুর ধোঁকাময় ভালোবাসার স্মৃতিগুলো বাক্সবন্দী করে নিজের মনের এক কোণায় রেখে নিজের পরিবারের সবার জন্য হাসতে শুরু করেছে।
এদিকে সময়ের সাথে সাথে আয়াশের প্রতি অর্ণার ভালোবাসার প্রকাশ দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে।আয়াশ সব সময় অর্ণাকে সার্পোট করে সব কিছুতে। সে অর্ণা কে চাকুরী করতে বলে।তবে অর্ণা চাকুরী করতে রাজী হয়নি। সে বলে,”আমি তোমার ভালোবাসার চাদরে বন্দী থাকতে চাই।তোমার সাথে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো স্বামীর অপেক্ষায় দিন কাটাতে চাই।”
বউয়ের এমন ভালোবাসা জড়িত আকুল আবেদনের সামনে আয়াশ আর জোড় করে না অর্ণাকে জব করার জন্য।আয়াশ ভাবে হয়তো নিজের বাবা মা ছিলো না।মামা মামীর কাছে বড় হয়েছে।এটা তার নিজের সংসার। এখানে সে নিজের জীবনের সব আকাঙ্ক্ষা গুলো পূরণ করতে চাইছে।দাদী শাশুড়ির সাথে টক মিষ্টি খুনশুটি। শ্বশুর শাশুড়ির সাথে টক ঝাল মিষ্টি সম্পর্কের সূচনা।অর্ণার কাছে কখনো আয়াশের বাবা মা সন্তানের মতো।তারাই তার বাবা মায়ের শূণ্যস্থান পূরণ করে আছে।
এভাবে সবার সাথে দিন কাটছে অর্ণার নতুন জীবনের।
এদিকে অরিনের জীবনের গল্পটা কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেছে।অরিন আগে যখন যা ইচ্ছে করতে পারতো।এখন সে যখন যা ইচ্ছা করতে পারে না।
এমনটা নয় যে তাকে শ্বশুরবাড়ির কেউ নিষেধ করে।অরিনের যা ইচ্ছা সে করতে পারবে এমন অনুমিত আছে।তবে অরিনের নিজের কাছে কেমন জানি লাগে।অনুমিত থাকার পর ও আগের মতো বাচ্চামির ইচ্ছা গুলো কাজ করে না।এখন হাতে টাকা থাকার পর ও সে ইচ্ছা মতো খরচ করতে পারে না।তাকে প্রতিটা টাকা খরচ করার আগে দশবার ভাবতে হয়।যদিও রোহান কখনো অরিনের কাছে কোনো কিছুর হিসাব চাইতে আসে না।কিন্তু তারপর ও অযথা অপচয় করতে অরিনের আর ভালো লাগে নাঅরিনের কাছে এখন সব কিছুর মূল্য অনেক।সে মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ হয়ে বুঝতে পেরেছে এখানে সব কিছু টাকা দিয়ে কেনা যায় না।এখানে টাকা না থাকলেও সবাই মিলেমিশে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে।তব হ্যাঁ সুখে থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন তবে টাকার সাথে মনের শান্তির খুব দরকার। দুটোর একটার কমতি মানুষের জীবনটাকে বিভীষিকাময় করে দিতে পারে।
অরিনের যখন ভালো লাগে না তখন সে বাবার বাড়িতে বেড়াতে চলে যায়।যে কয়দিন ইচ্ছা সেখানে থাকতে পারে।বাবার বাড়িতে এসে অরিন বাবা মা কে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে।তাদের আলিঙ্গন করা দেখে আড়ালে দাড়িয়ে থেকে অর্ণা গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।আফসোস আজ যদি অর্ণার মা থাকতো তাহলে অর্ণা ছুটে গিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখতো।সংসারের সব সুখ দুঃখের কথা কিছুটা হলেও শেয়ার করে মনের কষ্ট হালকা করতে পারতো।
অরিনের কোনো সমস্যা হলেই সে তার মায়ের থেকে মাঝেমধ্যে পরামর্শ নেয় সিদ্ধান্ত নিতে।তবে অর্ণাকে এমন ভাবে সাহায্য করার কেউ নেই।স্বামী যতোই বন্ধুর মতো হোক না কেনো।বাবা মায়ের স্থান দুনিয়ার কেউ নিতে পারবে না।অর্ণার খুব ইচ্ছা করে তার মায়ের কাছে ছুটে যেতে।তার সুখের দিনের গল্প শোনাতে তবে আফসোস আপনজনরা তার কাছে নেই।এতিমের দুনিয়া আলোকিত হয়েও একদিকে অন্ধকার থাকে।
অর্ণা অরিনের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে না।আয়াশের সাথে অরিন কথা বলতে চাইলে ভাইবোনের মাঝে অর্ণা থাকে না। অর্ণার খুব ইচ্ছা করে অরিনের মতো সবাইকে একসাথে নিয়ে আনন্দের মাঝে থাকতে।আফসোস ওর আনন্দের মানুষেরা নেই যে।সত্যি অর্ণার মাঝে মধ্যেই খুব কান্না আসে মায়ের কথা মনে পড়লে।
আশেপাশে সবাই ঈদের সময় বাবার বাড়িতে যায়।কিন্তু অর্ণার সেই ভাগ্য নেই।মামা মামীর সাথে কথা বললেও কলিজায় শান্তি দেওয়ার মা জননী নেই যে।
রোজার সময় মমতা খান দিনে কতোবার মেয়ের কাছে ফোন দিয়ে খবর নেই।অর্ণার এমন খবর নেওয়ার কেউ নেই।সত্যি পৃথিবীতে মায়ের থেকে মধুর কেউ হয় না।
খারাপ হোক, ভালো হোক, পাগল হোক,চরিত্রের সমস্যা থাক,তবুও সে মা।মায়ের কোনো জাত ধর্ম হয় না।
মা তো মা।মা কে মা বলে ডাকার মতো শান্তি আর কোথায় নেই।
অর্ণা মনে প্রাণে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকে সে যেনো খুব তাড়াতাড়ি মা হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। মায়ের কাছে যা কিছু পায়নি।সে সব কিছু নিজের সন্তানের প্রতি উজাড় করে দিবে।নিজের সন্তানের সব কিছু সে মন প্রাণ দিয়ে করবে।তবে সেই সুখের খবরটা অনেকদিন ধরে আশা করেও প্রাপ্তির পাতায় হিসাবে শূন্য ফলাফল পাচ্ছে সে।
এদিকে অরিনের বাচ্চা নেওয়ার আপাতত কোনো ইচ্ছা নেই।কারণ সে এখনো নিজেকে ঐ পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে ব্যস্ত। এসবের মাঝে নতুন কোনো প্রাণের আগমন চাইছে না।
দুইটা মেয়ের দুই রকমের ইচ্ছা।
আল্লাহ ভালো জানে কার মনের আশা পূরণ হবে।তবে অর্ণা যে ভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে তাতে আয়াশ মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে যায়।
আয়াশ রাগ করে মাঝেমধ্যে অর্ণা কে ঝাড়ি দিয়ে বলে,”বাচ্চার জন্য রিজিক লাগে।হয়তো সে আমাদের নসীবে এখন নেই।তার যেদিন আশার সময় হবে সে ঠিক আসবে।ততোদিন আল্লাহর নেওয়া পরিক্ষায় ধৈর্যশীলের পরিচয় দাও।”
আসলে মানুষের চাওয়াপাওয়ার শেষ নেই।কেউ টাকাকড়ি চাইছে,কেউ বা মনের শান্তি, কেউবা বাড়ি গাড়ি,কেউ সন্তান।।
আল্লাহ সবাইকে নানাভাবে পরিক্ষা করে।অর্ণার জন্য হয়তো এই পরিক্ষা ছিলো।অরিন চাইছে না অর্ণা চাইছে।আসলে সবাই সুখে থাকলেও পরিপূর্ণ সুখি এই দুনিয়ার বুকে কেউ না সবারি কোনো না কোনো একদিকে আফসোস থেকেই যায়।
এভাবে বেশকিছু দিন কেটে যায়।
‘
‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৪২
অর্ণার জীবনে বসন্তের শুরুতে হঠাৎ করে খুশিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।অর্ণার জীবনের এই বসন্তঋতু খুব আনন্দের।কারণ তার ইচ্ছা গুলো পূর্ণতা পেয়েছে আজ দুদিন হলো সে জানতে পেরেছে সে গর্ভবতী।
সে মা হবে।নিজের সন্তানের জননী হবে।খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে।খুশিতে অর্ণার চেহারা চকচক করছে।
আয়াশ খুব খুশি এটা ভেবেই যে অর্ণা খুশি।
এবং তাদের ঘর আলো করে কেউ একজন আসবে।তাদের ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্যোমণি হয়ে।
আয়াশ বাবা হবে সে কথা শুনে মরিয়ম খান গ্রামের বাড়ি থেকে আয়াজ কে সাথে করে চলে এসেছে।
অরিন রোহান ও এবাড়িতে বেড়াতে এসেছে।
অর্ণার নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে এটা ভেবে। যে সবাই ওর খুশির খবর শুনে এবাড়িতে চলে আসছে।মনে মনে আফসোস করছিল যদি আমার মামার বাড়ির সবাই আসতো তাহলে কতোটা যে ভালো লাগতো বলে বোঝাতে পারবো না।
এতো আনন্দের মাঝের অর্ণার মলিন মুখটা দেখে আয়াশের বুঝতে বাকি করইলো না কেনো তার বউয়ের হাসি মুখটা পানশে হয়ে আছে।
আয়াজ আসার সময় একগাদা ফল মিষ্টি, চকলেট বিস্কিট নিয়ে আসছে।
অরিন তার শাশুড়ি মা’র কাছে থেকে ভাবীর জন্য দুই তিন পদের আচার নিয়ে আসছে।
রোহান বলে,”বাহ কী মজা।আমি মামা হবো।”
অরিন লাফ দিয়ে উঠে বলে,”এই তুমি কোন দিক দিয়ে মামা হবে?আমি ফুফু হবো সেই হিসাবে ফুফা হবে।তাই মামা হবার চান্স নেই তোমার।”
রোহান বলে,”কেনো?আমি মামা হবো।ফুফু হতে পারবো না।ডাকটা কেমন কেমন জানি শোনাই। মনে হয়ে ফু দিয়ে ফেলে পা দিয়ে ঢলা দিবে। মামা খুব কাছে।মা মা দুই বার মা বলে ডাকবে সোনা বাচ্চা।”
অরিন ভ্রু কুঁচকে নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে।রোহানের এমন ফুফা নিয়ে মন্তব্য শুনে সবাই অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
রোহান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আচ্ছা আমি কি কোনে ভুল কথা বলেছি?যে সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন?”
অরিন বলে,”তোমার ফুফা শব্দের অর্থ শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে।”
রোহান বলে,”এখানে কি নিজের মনে কথা প্রকাশ করা যাবে না?আমি তো পাবলিক প্লেসে কিছু প্রকাশ করি নাই।যে জনগণ আমাকে রামধোলাই দিবে।”
রামধোলাই এর কথা শুনে সবাই অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে।
রোহান ও হাসতে শুরু করে।
এদিকে বাড়িতে এতো মানুষের রান্নাবাড়া সব মমতা খান একা নিজের হাতের করেছেন।সেই চাইছে না তার বউমা এমন অবস্থায় কোনো কাজ কুরুক। প্রথম কয়েকমাস তো রেস্ট নিতে হবে।শুরুর দিকে অনেক মেয়ের সমস্যা হয়।তারাও সন্তান জন্মদিয়েছে তাই অর্ণার মনের অবস্থা তারা বোঝে।
কয়েকদিন অরিন রোহান থাকার পর চলে যায়।আয়াজ যাবার সময় দাদীমা কে সঙ্গে যেতে বলে।কিন্তু মরিয়ম খান সাফ জানিয়ে দিয়েছে যতোদিন না নতুন অতিথি এবাড়িতে আসছে ততোদিন সে কোথাও যাবে না।
তাই আয়াজ কে একাই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়।আয়াজ সেখানে থেকে সব জমিজমা দেখাশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করে।
এদিকে সময় নিজ গতিতে চলছে।অর্ণার প্রতি বাড়ির সবাই একটু বেশি কেয়ার নিচ্ছে।কারণ তারা জানে অর্ণার বাবা মা নেই।তাই তারাই অর্ণার সব।
অর্ণার বেশ খুশিতে দিন কাটছে।রাতের বেলা আয়াশ ঘুমানোর আগে অর্ণাকে নবী রাসূলদের জীবনের গল্প শোনাই। তাকে নানারকম হাসিদের জ্ঞান দিতে চেষ্টা করে।সেই জন্য সে প্রচুর হাদিসের বই কিনে আনছে।ফজরের ওয়াক্তে নামাজ পড়ার পর সে অর্ণা কে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতে থাকে।
অর্ণা এই আয়াশ কে দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
যে ছেলেকে সে ফজরের নামাজের জন্য কতো কষ্টে ডাক দিয়ে ওঠাত। আবার নামাজ পড়া শেষে সোজা বিছানাতে গিয়ে কুমিরের মতো গড়াগড়ি করে ঘুম দিতো।সেই ছেলে এখন নিজে থেকে ভোর বেলা নামাজের জন্য জেগে যায়।নিজে আগে ওঠে সাথে অর্ণাকে জাগিয়ে দেয় ইবাদত করার জন্য।
এখন নামাজের পর অর্ণার জন্য ভোর বেলা কিছু খাবারের ব্যবস্থা আয়াশ নিজেই করে।
অর্ণা আয়াশ কে দেখে অবাক হয়ে যায়।
সত্যি সময় মানুষকে বদলে দিতে পারে।
এই আয়াশ আগের আয়াশের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ!বাড়ির কোনো কাজ অর্ণা কে কেউ করতে দেয় না।সারাদিন শুয়ে বসে থেকে অর্ণা মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে যায়।এখন আস্তে আস্তে অর্ণার পেট টা ফুলে উঠছে।এখন বোঝা যাচ্ছে তার মাঝে আরেকটা প্রাণ আছে।অর্ণা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই খুব লজ্জায় পড়ে যায়।
অর্ণার এই লজ্জা মাখা চেহারা দেখে আয়াশ নতুন করে বার বার অর্ণার প্রেমে পরে। অর্ণা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তোমার এমন অদ্ভুত সৌন্দর্যে তো রোজরোজ মুগ্ধ হয়ে মাতাল হয়ে যাচ্ছি। নিজের বউয়ের প্রেমে পড়ে পা পিছলে আলুরদোম না হয় কোন দিন আমি।”
আয়াশের এমন কথা শুনে অর্ণা লজ্জায় স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে বসে থাকে।আয়াশ বলে,”বাহ আমার বউ লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে থাকে এটা বেশ মজার।”
এভাবে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে অর্ণা আয়াশের সংসার চলছে।অর্ণা কে সময় মতো ডাক্তারে কাছে নিয়ে যাওয়া নিয়মিত মেডিসিন খাওয়া সব কিছুর দায়িত্ব আয়াশের।সে অর্ণার থেকে দূরে থাকলে সময় মতো ফোন করে অর্ণা কে মেডিসিন খাবার কথা মনে করিয়ে দেয়।
গর্ভবতী অবস্থায় আয়াশের এতোটা যত্নশীল ব্যবহার অর্ণার মনের মাঝে ভালোবাসার রং গাড়ো করে দিচ্ছে।
অর্ণার প্রতি তার শাশুড়ির ব্যবহার আগের থেকে অনেক বেশি ভালো।মমতা খান নিজের মেয়ের মতো যত্ন নিচ্ছে অর্ণার।কারণ সে মনে করে অর্ণার সাথে সে ভাল ব্যবহার করলে তার মেয়েও পরের বাড়িতে ভালো থাকবে।আমরা নিজেরা যা করবো আমাদের সন্তানদের উপে তার প্রভাব পড়বে।
এভাবে দেখতে দেখতে অর্ণার সাত মাস হয়ে গেছে।
সেই জন্য মমতা খান বাড়িতে নিজেদের একসাথে করতে ছোট একটা পারিবারিক অনুষ্ঠান করে।আয়াজ, অরিন, রোহান, অরিনের মামা মামী তাদের ছেলে মেয়ে চলে আসে।
আয়াশের মামাতো ভাই বলে,”বাহ কতো বছর পর আমাদের বাড়িতে ছোট একটা সদস্য আসবে।আমার ফুপিজান দাদীজান হয়ে যাবে ভাবা যায়!”
মমতা খান ভাইয়ের ছেলের কান মলা দিয়ে বলে,”ওরে আমার দুষ্টু ছেলেরে।”
সবাই মিলে খুব মজা করছিল। অর্ণার আজকে তার মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। আজ যদি ওর মা বেঁচে থাকতো তাহলে ঠিক সাত মাসে মেয়েকে নিতে চলে আসতো।বাকি কয়েকটা মাস মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখতো।এসময় যে প্রতিটা মেয়ের তার মা কে খুব বেশি দরকার হয়।আফসোস অর্ণার সেই কপাল নেই।
এসব ভেবে মাথা নিচু করে বিষণ্ণ মন নিয়ে বসে ছিলো।এমন সময় আয়াশ অর্ণা কে বলে,”অর্ণা মাথা উচুঁ করে একটি বার সামনে তাকিয়ে দেখো?”
অর্ণা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথাটা উচুঁ করে সামনে তাকিয়ে দেখতে ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।অর্ণা হাউমাউ করে কান্না করে সামনের মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে।
মেয়েরা খুব বেশি আবেগময়ী হয়।তারা নিজেদের আবেগ ইচ্ছা করলে সারা পৃথীবির কাছে থেকে লুকিয়ে রাখতে পারে।কিন্তু নিজের আপন মানুষের সামনে তারা অনেক সময় তা প্রকাশ করে দেয়।
অর্ণার সামনে তার মামুজান দাঁড়িয়ে ছিলো।এতোদিন পর এই প্রথমবার মামুজান তার শ্বশুরবাড়িতে এসেছে।এমন অবস্থায় মামুজান কে দেখে আবেগী হয়ে সে কান্না আর আটকে রাখতে পারছিল না।এটা যে তার মনের মাঝে জমে থাকা নিজের প্রতি নিজের অভিমানের কান্না ছিলো।
মামুজান অর্ণার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”আমার আম্মাজান এভাবে কান্না করছে কেনো?সে কি আমাকে তার সামনে দেখে খুশি হতে পারে নাই?”
অর্ণা কান্নারত অবস্থায় বলে,”মামুজান এমন কথা নয় গো।তোমাকে দেখে আবেগে কেঁদে দিয়েছি। এই কান্নার পেছনের কারণটা খুব আনন্দের। ”
মামুজান বলে,”থাক আম্মাজান আপনাকে আর এভাবে কান্না করতে হবে না!”
আয়াশ পাশে থেকে বলে,”আর এভাবে চেহারার উপর কালো মেঘের ছায়াও পড়তে দিতে হবে না।মাঝেমাঝে তোমার মুখটা আমাবস্যার আকাশের চাঁদের মতো হয়ে থাকে।”‘
অর্ণা আয়াশের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।
‘
‘
‘
চলবে…..
‘
চলবে……